অযুর পরিচয়
অযু আরবি শব্দ। এর অর্থ সুন্দর, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। শরীআতের পরিভাষায় নির্ধারিত নিয়মে নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করাকে অযু বলা হয়।
পবিত্র কুরআন এসেছে-
یَا أ َیُّھَا ٱل َّذِ ینَ آمَنُوا ْ إ ِذَا ق ُمْتُمْ إ ِل َى ٱلصَّلاةِ فٱغْسِل ُوا ْ وُ جُوھَكُمْ وَ أ َیْدِیَكُمْ إ ِل َى ٱل ْمَرَ افِقِ
وَ ٱمْسَحُوا ْ ب ِرُ ؤُوسِكُمْ وَ أ َرْ جُل َكُمْ إ ِل َى ٱل ْكَعْبَینِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে তখন তোমরা নিজেদের মুখমÐল ও হাত
কনুই পর্যন্তধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্তধৌত করবে।” (সূরা আল-মায়িদা
: ৬)
অযুর ফরযসমূহ
অযুর মধ্যে কতিপয় কাজ আছে যা অবশ্য করণীয়। এগুলোকে অযুর ফরয বলে।
অযুর ফরয চারটি। এ চারটির মধ্য থেকে কোন একটি বাদ গেলে অযু পূর্ণ হবে না। ফরযগুলো হলো১. সমস্তমুখমÐল একবার ধোয়া। অর্থাৎ মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্তএবং এক
কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্তপুরো মুখমÐল ধোয়া।
২. উভয় হাত কনুইসহ একবার করে ধোয়া।
৩. মাথার চারভাগের এক ভাগ একবার মাসেহ করা।
৪. উভয় পা গ্রন্থিসহ একবার করে ধোয়া।
অযুর সুন্নাতসমূহ
অযুর মধ্যে কতিপয় কাজ আছে যা করলে সাওয়াব হবে, না করলে কোন পাপ হবে না এবং অযুরও কোন ক্ষতি
হবে না। যেমন১. বিস্মিল্লাহির রহমানির রাহীম বলে অযু আরম্ভ করা।
২. প্রথমে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্তধোয়া।
৩. ভালভাবে মিসওয়াক করা।
৪. উত্তমরূপে তিনবার (রোযাদার হলে সাবধানে) কুলি করা।
৫. তিনবার নাকে পানি দেওয়া।
৬. ঘন দাড়ি ভালভাবে খিলাল করা।
৭. হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা।
৮. অযুর প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া।
৯. সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসেহ করা।
১০. উভয় কান মাসেহ করা।
১১. অযুর প্রত্যেক অঙ্গ উত্তমরূপে ধোয়া।
অযু আরবি শব্দ। এর অর্থ
সুন্দর, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ।
শরীআতের পরিভাষায়
নির্ধারিত নিয়মে নির্দিষ্ট
কিছু অঙ্গ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করাকে
অযু বলা হয়।
অযুর মধ্যে কতিপয় কাজ
আছে যা করলে সাওয়াব
হবে, না করলে কোন
পাপ হবে না এবং অযুরও
কোন ক্ষতি হবে না।
১২. অঙ্গসমূহ ক্রমানুসারে ধোয়া। অর্থাৎ প্রথমে মুখ, তারপর হাত ধোয়া, এরপর মাথা মাসেহ করা এবং
সব শেষে পা ধোয়া।
১৩. অযুকরার পূর্বে নিয়্যাত করা।
১৪. এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধোয়া।
১৫. ডান অঙ্গ আগে ধোয়া, অতঃপর বাম অঙ্গ ধোয়া।
১৬. হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে ধোয়া আরম্ভ করা।
১৭. মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে মাসেহ আরম্ভ করা।
১৮. ঘাড় মাসেহ করা।
অযুর মুস্তাহাবসমূহ
অযু করার সময় এমন কতিপয় কাজ আছে যেগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা উত্তম। এগুলোকে অযুর
মুস্তাহাব বলে।
১. অযুকরার সময় উঁচুস্থানে বসে অযু করা, যাতে পানির ছিটা গায়ে না পড়ে।
২. কাবার দিকে মুখ করে অযু করা।
৩. অযুর সময় (বিনা প্রয়োজনে) অন্যের সাহায্য না নেওয়া।
৪. অযুর সময় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলা।
৫. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়া।
৬. মাসেহ করার সময় কনিষ্ঠাঙ্গুলী কানের ছিদ্রে ঢুকান।
৭. হাত ধোয়ার সময় আংটি পরিষ্কার করে নেওয়া।
৮. কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার সময় ডান হাত ব্যবহার করা।
৯. বাম হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
১০. অসুস্থ না হলে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে অযু করা।
১২. অযু শেষ করার পর কালিমায়ে শাহাদাত
।করা পাঠ أشھد أن لاالھ الا اللھ وحده لا شریك لھ وأشھد أن محمدا عبده ورسو لھ
১৩. সবশেষে অযুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা এবং এ দুআ পড়া
اللھم اجعلنى من التو ابین واجعلنى من المتطھر ین
অযু করার নিয়ম
অযুকারী ব্যক্তি প্রথমে এ নিয়্যাত করবে যে, সে পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায় এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের
উদ্দেশ্য অযু করছে।
তারপর কিবলা মুখী হয়ে কিছুটা উঁচু স্থানে বসবে, যাতে অযুর পানির ছিটা শরীরে বা কাপড়ে না পড়ে। তারপর
‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বলে অযুআরম্ভ করবে। এরপর প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত
তিনবার ধুয়ে নিবে। মিসওয়াক শেষে ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করবে। রোযাদার না হলে তিনবার
গড়গড়া করে কুলি করবে। তারপর তিনবার এমনভাবে নাকে পানি দিবে যেন নাকের নরম মাংস পর্যন্ততা পৌঁছে
যায়। অবশ্য রোযাদার ব্যক্তি হলে এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবে। বাম হাতে আঙ্গুল দিয়ে নাক পরিষ্কার
করবে। প্রত্যেকবার নাকে নতুন পানি দিবে। তারপর দু’হাতের তালুভরে পানি নিয়ে তিনবার সম্পূর্ণ মুখমÐল
এমনভাবে ধুয়ে নিবে যেন চুল পরিমাণ স্থানও শুকনা না থাকে। দাড়ি ঘন হলে তা খিলাল করবে। তারপর দু’হাত
কনুইসহ ভালোভাবে ধুয়ে নিবে। প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত তিনবার করে ধুবে। হাতে আংটি থাকলে
এবং মেয়েলোকের হাতে চুড়ি-গয়না থাকলে তা নাড়াচাড়া করে নিবে, যেন সর্বত্র ভালোভাবে পানি পৌঁছে।
তারপর দু’হাত ভিজিয়ে সম্পূর্ণ মাথা এবং কান মাসেহ করবে। মাসেহ করার পর দু’পা গোড়ালিসহ তিনবার
ভালভাবে ধুয়ে নিবে। ডান হাত দিয়ে পানি ঢালবে এবং বাম হাত দিয়ে ঘষবে। বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে
খিলাল করবে। ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে খিলাল শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলীতে শেষ করবে। বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল
থেকে শুরু করে কনিষ্ঠাঙ্গুলে শেষ করবে।
যে সব কারণে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়
নিম্নের যে কোন একটি কারণে অযু ভঙ্গ হয় হয়ে যায়১. পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে।
২. মেয়েলোক সন্তান প্রসব করলে।
৩. শরীরের যে কোন স্থান থেকে যে কোন অপবিত্র বস্তু বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে। যেমন-রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি।
৪. বমির সাথে রক্ত, পুঁজ বের হলে অথবা মুখ ভরে বমি হলে।
৫. থুথুর সাথে রক্ত এলে এবং রক্তের পরিমাণ থুথুর চেয়ে বেশি বা সমান হলে তবে কফ বের হলে অযু
নষ্ট হয় না।
৬. চিত বা কাত হয়ে অথবা ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।
৭. বেহুঁশ অথবা অচেতন হয়ে পড়লে।
৮. পাগল, মাতাল বা নেশাগ্রস্তহলে।
৯. স্বামী-স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গ কোন অন্তরায় ব্যতীত একত্র হলে বীর্যপাত ছাড়াও অযু নষ্ট হবে।
গোসল
গোসল আরবী শব্দ। অর্থ শরীর বা অন্য কিছু ধোয়া। শরীআতের পরিভাষায় পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য
লাভের উদ্দেশ্য পবিত্র পানি দ্বারা সমস্তশরীর ধোয়াকে গোসল বলা হয়।
গোসলের প্রকারভেদ : গোসল প্রধানত তিন প্রকার। যথা-ফরয গোসল, সুন্নাত গোসল ও
মুস্তাহাব গোসল।
ফরয গোসল
যে গোসল অত্যাবশ্যক তাকে ফরয গোসল বলে। ১. জানাবাতের (অপবিত্র হওয়া) পরের গোসল, ২. হায়েয তথা
মাসিক বন্ধ হওয়ার পরের গোসল ৩. নেফাসের (সন্তান প্রসবজনিত) রক্ত বন্ধ হওয়ার পরের গোসল।
সুন্নাত গোসল
যে গোসল অত্যাবশ্যক নয় তবে করলে সাওয়াব হয়, না করলে কোন অসুবিধা নেই তাকে সুন্নাত গোসল বলে।
যেমন-জুমুআর দিন জুমুআর নামাযের জন্য গোসল, দু’ঈদের নামাযের জন্য গোসল, হজ্জ অথবা উমরার ইহরামের
জন্য গোসল। হাজীদের জন্য আরাফার দিন দুপুরের পর গোসল।
মুস্তাহাব গোসল
যে গোসল উত্তম যেমন- ইসলাম গ্রহণের জন্য গোসল, বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর গোসল। বালিগ হওয়ার
লক্ষণ পাওয়া না গেলে ছেলে মেয়েদের বয়স পনের হওয়ার পর গোসল, মস্তিস্ক বিকৃতি ও সংজ্ঞাহীনতা দূর হওয়ার
পর গোসল, শিঙ্গা লাগানোর পর গোসল, লাশ গোসল করানোর পর গোসল, মক্কা ও মদীনা শরীফে প্রবেশকালে
গোসল, তাওয়াফে যিয়ারতের জন্য গোসল, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নামাযের জন্য গোসল, ইস্তিস্কার নামাযের জন্য,
ভয়ের নামাযের জন্য, দিনে অস্বাভাবিক অন্ধকার বা প্রচÐ ঝড়ের জন্য এবং তাওবার নামাযের জন্য গোসল
ইত্যাদি।
গোসলের আহকাম (বিধানাবলি)
গোসলের ফরয : গোসলের ফরয তিনটি-১. গরগরার সাথে কুলি করা, ২. নাকে পানি দেওয়া এবং ৩. সমস্তশরীর
ধোয়া, যেন চুল পরিমাণ স্থানও শুকনা না থাকে।
গোসলের সুন্নাত : ‘বিস্মিল্লহির রাহমানির রাহীম’ বলে শুরু করা, গোসলের নিয়্যাত করা, উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত
ধোয়া। শরীর থেকে অপবিত্র বস্তু পৃথকভাবে ধুয়ে নেওয়া, লজ্জাস্থান পৃথকভাবে ধোয়া, অযু করা, মিসওয়াক করা
এবং সম্পূর্ণ শরীরে তিনবার পানি দিয়ে ধোয়া।
গোসলের মুস্তাহাব
গোসলের মুস্তাহাব নিয়ম হল, প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্তধোয়া। তারপর লজ্জাস্থান
বিশেষভাবে ধোয়া। তারপর শরীরের কোথাও অপবিত্র বস্তু থাকলে তা বিশেষভাবে পরিষ্কার করা। এরপর দু’হাত
ভালো করে ধুয়ে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করা। ভাল করে কুলি করা এবং নাকের ভেতর ভালো করে পানি
পৌঁছানো। গোসল যদি ফরয হয়, তাহলে ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যতীত অন্য কোন দুআ পড়া। অযুর পর মাাথার উপর এবং
সমস্তশরীরের উপর পানি ঢালা। নিয়ম হল প্রথমে ডান কাঁধের উপর, তারপর বাম কাঁধের উপর তিনবার করে
পানি ঢালা। তারপর মাথা ও সমস্তশরীরে উপর তিনবার পানি ঢালা। সবশেষে গোসলের স্থান থেকে সরে গিয়ে
উভয় পা ধোয়া।
গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহ
১. স্ত্রী সহবাস বা অন্য কোন কারণে বীর্য বের হলে গোসল করা ওয়াজিব।
২. স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনের ফলে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের উপর গোসল করা ওয়াজিব। বীর্যপাত হোক বা
> না হোক।
৩. হায়িয বা ঋতুস্রাব বন্ধ হলে।
৪. নিফাস বা সন্তান প্রসব জনিত রক্ত বন্ধ হলে।
তায়াম্মুমের বিবরণ
‘তায়াম্মুম’ -এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা করা। শরীআতের পরিভাষায় পবিত্র মাটি দ্বারা পাক হওয়ার নিয়্যাতে
মুখমÐল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করাকে ‘তায়াম্মুম’ বলা হয়। অযু ও গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম
করা যায়। তায়াম্মুম এর অনুমতি মুহাম্মদ (স)-এর উম্মতের জন্য আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ দান। বস্তুত
পবিত্রতা অর্জন করার আসল উপায় হল পানি, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ
করে রেখেছেন। তথাপি এমন অবস্থারও সৃষ্টি হতে পারে যে, কোনো স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না অথবা পাওয়া
গেলেও পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা কারো পক্ষে অসম্ভব অথবা পানি ব্যবহারে রোগবৃদ্ধি অথবা প্রাণ নাশের
আশংকা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করার অনুমতি দিয়েছেন। তার
পদ্ধতিও বাতলিয়ে দিয়েছেন, যাতে বান্দা দীনের উপর আমল করতে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।
শরীআতের পরিভাষায়
পবিত্রতা অর্জন ও
আল্লাহর নৈকট্য লাভের
উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি
দ্বারা সমস্তশরীর ধোয়াকে
গোসল বলা হয়।
সুন্নাত গোসল: যে গোসল
অত্যাবশ্যক নয় তবে
করলে সাওয়াব হয়, না
করলে কোন অসুবিধা
নেই তাকে সুন্নাত গোসল
বলে।
পবিত্র মাটি দ্বারা পাক
হওয়ার নিয়্যাতে মুখমÐল
ও উভয় হাত কনুইসহ
মাসেহ করাকে ‘তায়াম্মুম’
বলা হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
فَل َمْ تَجِ دُوا ْ مَآءً فَتَیَمَّمُوا ْ صَعِیدا ً طَیِّبا ً فَٱمْسَحُوا ْ ب ِوُ جُوھِكُمْ وَ أ َیْدِیكُمْ مِّنْھُ مَا یُرِ یدُ ٱلل َّھُ
لِیَجْع َلَ عَل َیْكُم مِّنْ حَرَ ج ٍ وَ ل َـٰكِن یُرِ یدُ لِیُطَھِّرَ كُمْ وَ لِیُتِمَّ نِعْمَتَھُ عَل َیْكُمْ ل َع َل َّكُمْ تَشْكُرُ ونَ
“এবং তোমরা যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করবে। এ মাটি দ্বারা তোমাদের মুখমÐল ও
হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান ও তোমাদের
প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা আল-মায়িদা : ৬)
যে সকল অবস্থায় তায়াম্মুম করা যায়
পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি না পাওয়া গেলে অথবা পানি ব্যবহারে অপারগ হলে তায়াম্মুম করা
জায়েয। অপারগতা মানে পানি আছে কিন্তু ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে অথবা স্বাস্থ্যের উপর
বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমতাবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয। অথবা পানি আছে তবে তার কাছে
শত্রæ অথবা হিংস্রপ্রাণির কারণে যাওয়া যাচ্ছে না।
সফরে পানি সঙ্গে আছে; কিন্তু সামনে কোথাও পানি পাওয়া না যেতে পারে অথবা অযু বা গোসল
করলে সামান্য পানি শেষ হয়ে গেলে খাবার পানি না পাওয়ার আশংকা থাকলে।
তায়াম্মুমের নিয়মাবলি
তায়াম্মুমের ফরয ৩টি
১. তায়াম্মুমের পূর্বে পবিত্রতা অর্জনের নিয়্যাত করা
২. উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে সমস্তমুখমÐল মাসেহ করা এবং
৩. তারপর উভয় হাত আবার পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা।
তায়াম্মুমের সুন্নাত ৭টি
১. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তায়াম্মুম আরম্ভ করা।
২. উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে সামনের দিকে এগিয়ে দেওয়া।
৩. তারপর পিছনের দিকে নিয়ে আসা।
৪. হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা।
৫. মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা।
৬. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমÐল, তারপর উভয় হাত মাসেহ করা।
৭. বিরতিহীনভাবে তায়াম্মুম করা অর্থাৎ দু’টি অঙ্গের মাসেহের মধ্যে বিলম্ব না করা।
তায়াম্মুমের মুস্তাহাব
যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস করে যে, শেষ সময়ে পানি পাওয়া যাবে-এমন ব্যক্তির জন্য শেষ সময় পর্যন্তঅপেক্ষা করা
মুস্তাহাব। আর যদি পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে,তাহলে তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব সময়ে নামায আদায় করে
নেবে।
তায়াম্মুমের পদ্ধতি
প্রথমে নিয়্যাত করবে, তারপর ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়ে তায়াম্মুম আরম্ভ করবে। এরপর দু’হাতের
তালুএকটু প্রসারিত করে পাক মাটির উপর মেরে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। তারপর পিছনের দিক আনবে।
হাতে বেশি ধুলাবালি লেগে গেলে ঝেড়ে নিয়ে অথবা ফুঁ দিয়ে তা ফেলে দেবে। অতঃপর উভয় হাত দিয়ে এভাবে
সমস্তমুখমÐল মাসেহ করা, যাতে চুল পরিমাণ স্থান বাদ না পড়ে। দ্বিতীয়বার এমনভাবে মাটির উপর হাত মেরে
এবং হাত ঝেড়ে নিয়ে বাম হাতের তিন আঙ্গুলের মাথার নিম্নভাগ দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুলের পিঠের দিক থেকে
শুরু করে কনুইসহ মাসেহ করবে। এরপর বাম হাতের তালুসহ বৃদ্ধাঙ্গুলী ও শাহাদত আঙ্গুলী দিয়ে কনুই থেকে
আঙ্গুলী পর্যন্তভিতরের অংশ মাসেহ করবে এবং আঙ্গুলগুলো খিলাল করে নেবে। অনুরূপভাবে ডান হাত দিয়ে বাম
হাত মাসেহ করবে। হাতে ঘড়ি বা আংটি থাকলে তা সরিয়ে তার নিচেও মাসেহ করা জরুরী।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
যেসব কারণে অযু নষ্ট হয় সেসব কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়ে যায়। যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়,
সে সব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। যদি পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে,
তাহলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কোন ওযর অথবা রোগের কারণে যদি
তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে, সে ওযর বা রোগ দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।
যেসব কারণে অযু নষ্ট হয়
সেসব কারণে তায়াম্মুমও
নষ্ট হয়ে যায়। যেসব
কারণে গোসল ওয়াজিব
হয় সে সব কারণে
তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. কোনটি অযুর ফরয?
ক. মাথা মাসেহ করা;
খ. মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা;
গ. কান ও ঘাড় মাসেহ করা;
ঘ. কুলি করা।
২. কোনটি অযু ভঙ্গের কারণ?
ক. হেলান দিয়ে নিদ্্রা যাওয়া;
খ. অযুকরার পর বেশি বেশি কাঁদা;
গ. শরীরের কোথাও থেকে রক্ত বের হয়ে যথাস্থানে থেকে যাওয়া;
ঘ. থুথুর সঙ্গে রক্ত এলে রক্তের পরিমাণ থুথু থেকে কম হওয়া।
৩. অযুকরার সময় সর্বপ্রথম
ক. কুলি করতে হয়;
খ. মিসওয়াক করতে হয়;
গ. দু-হাতের কব্জি পর্যন্তধুয়ে নিতে হয়;
ঘ. মুখমÐল ধুয়ে নিতে হয়;
৪. কোনো জায়গায় পানি উঠিয়ে গোসল করলে, শেষ কাজটি হলক. অযু করা;
খ. দোয়া পড়া;
গ. কুলি করা;
ঘ. গোসলের জায়গা থেকে সরে পা গুলো পুনরায় ধোয়া।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. অযু কাকে বলে? অযুর ফরয ক’টি ও কী কী? বর্ণনা করুন।
২. অযুর সুন্নাতসমূহ লিখুন।
৩. অযু করার পদ্ধতি বর্ণনা করুন।
৪. অযু ভঙ্গের কারণগুলো বর্ণনা করুন।
৫. গোসল কাকে বলে, গোসল কত প্রকার ও কী কী? আলোচনা করুন।
৬. গোসলের ফরয, সুন্নাত ও মুস্তাহাবগুলো বর্ণনা করুন।
৭. গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণগুলো লিখুন।
৮. তায়াম্মুম কাকে বলে? তায়াম্মুম করার কারণ ও অবস্থাসমূহ আলোচনা করুন।
৯. তায়াম্মুমের ফরয, সুন্নাত ও মুস্তাহাবগুলো লিখুন।
১০. তায়াম্মুমের পদ্ধতি বর্ণনা করুন এবং তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ উল্লেখ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. অযু কাকে বলে? অযুর বিধানাবলি বিস্তারিত আলোচনা করুন।
২. গোসল কাকে বলে? গোসলের প্রকারভেদ ও বিধানাবলি বিস্তারিতভাবে লিখুন।
৩. তায়াম্মুম কাকে বলে? তায়াম্মুমের বিধানাবলি বিশদ আকারে বর্ণনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত