পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় কোন সময় নামায পড়া নিষিদ্ধ এবং কোন সময় মাকরূহ বর্ণনা করু

সালাত
সালাত আরবি শব্দ। এর অর্থ নামায, প্রার্থনা। সালাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
ঈমানের পরেই সালাতের স্থান। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রতি বান্দার পরম আনুগত্য প্রকাশ পায়,
আল্লাহ্র সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। বান্দা তার প্রভুর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন সালাত
আদায়ের রয়েছে নির্ধারিত সময়, কিছু ফরয, ওয়াজিব এবং নির্দিষ্ট নিয়মাবলি, যা অবশ্য পালনীয়। এমন কিছু কাজ রয়েছে যা করলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। সালাতের সময়সমূহ
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচবার নামায আদায় করা ফরয। কুরআনে এসেছে
إ ِنَّ ٱلصَّلاَةَ كَانَتْ عَل َى ٱلْمُؤْ مِنِینَ كِتَابا ً مَّوْ ق ُوتا ً
“নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা আন-নিসা : ১০৩)
অন্য আয়াতে এসেছে :
أ َقِمِ ٱلصَّلاَةَ لِدُل ُوكِ ٱلشَّمْسِ إ ِل َىٰ غَسَقِ ٱلْل َّیْلِ وَ ق ُرْ آنَ ٱلْفَجْرِ
“সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্তসালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে
ফজরের সালাত।” (সূরা বনী-ইসরাইল : ৭৮)
আল্লাহ্ তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করার পর হযরত জিবরাইল (আ)-এর মাধ্যমে নবী করীম
(স)-কে নামায আদায়ের সময় এবং পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স) বলেন, হযরত জিবরাইল (আ) কাবা
শরীফের পাশে দু’বার নামাযের ইমামতি করেন। প্রথম দিন তিনি সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পর
এবং প্রতিটি বস্তুর ছায়া কিঞ্চিৎ দেখা যাওয়ার পর যুহরের নামায আদায় করেন। আর আসরের নামায
আদায় করেন, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হয়ে যায়। মাগরিবের নামায এমন সময়
আদায় করেন, যখন সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। আর এশার নামায এমন সময় আদায় করেন, যখন
পশ্চিমাকাশে লালিমা দূরীভ‚ত হয়ে যায়। ফজরের নামায সুবহে সাদিকের সময় আদায় করেন। দ্বিতীয়
দিন তিনি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে এবং প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হয়ে যাওয়ার পর যুহরের
নামায আদায় করেন। যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হয়ে পড়ে, তখন আসর আদায় করেন।
আর মাগরিব আদায় করেন প্রথম দিনের মতো এমন সময় যখন সূর্য ডুবে যায়। এশার নামায এমন
সময় আদায় করেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ শেষ হয়ে যায়। ফজরের নামায এমন সময় আদায়
করেন, যখন ফর্সা হয়ে যায়। এরপর হযরত জিবরাঈল (আ.) আমার দিকে তাকিয়ে বললেন: হে
মুহাম্মদ! এটাই আপনার নামায আদায় করার নির্ধারিত সময়। আর আপনার পূর্ববর্তী নবীগণের নামায
আদায় করার সময়ও এটাই ছিল। আপনার জন্যে নির্ধারিত ওয়াক্ত হলো এ দু’সময়ের মধ্যবর্তীসময়।
নিম্নে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময়সীমা বর্ণনা করা হলোফজরের নামায
সুবহে সাদিক শুরু হলেই ফজরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্য উদয়ের পূর্ব মুহ‚র্ত পর্যন্তফজর
নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
যুহরের নামাযের সময়
সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথেই যুহরের নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। প্রতিটি বস্তুর মূল ছায়ার
(যা দুপুরের সময় দেখা যায়) দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্তযুহর নামাযের সময় বাকী থাকে। গরমের সময় যুহরের
নামায বিলম্বে এবং শীতের মৌসুমে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব।
উল্লেখ্য যে, ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় সমতল ভ‚মিতে কোন বস্তুর যে ছায়া থাকে, তাকেই ‘ছায়ায়ে আসলী’
বলে। ছায়ায়ে আসলী থেকে ছায়া বাড়তে থাকলে যুহর নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়।
আসর নামাযের সময়
যুহরের নামাযের সময় শেষ হওয়র পর আসরের নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। সূর্যাস্তের পূর্ব মুহ‚র্ত পর্যন্ত
আল্লাহ্ তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করার পর হযরত জিবরাইল (আ)-এর মাধ্যমে নবী করীম (স)-কে নামায আদায়ের সময় এবং পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন।
আসরের নামাযের ওয়াক্ত চলতে থাকে। সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্বে আসরের নামায আদায় করা
মুস্তাহাব।
মাগরিবের নামাযের সময়
সূর্যাস্তের পরপরই মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। পশ্চিমাকাশে লালিমা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত
মাগরিবের নামাযের সময় বাকী থাকে। সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে মাগরিবের নামায আদায় করা
মুস্তাহাব।
ইশার নামাযের সময়
পশ্চিমাকাশে লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর পশ্চিম দিগন্তেযে সাদা আভা চোখে পড়ে তা বিলুপ্ত হওয়ার পর
ইশার নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্তএর সময় থাকে। ইশার নামায বিলম্ব করে
রাতের এক-তৃতীয়াংশের পূর্বে আদায় করা মুস্তাহাব। ইশার নামায আদায়ের পরই বিতরের সময় শুরু
হয়। ফজর নামাযের পূর্ব পর্যন্তএর সময় থাকে। তাহাজ্জুদ নামাযে অভ্যস্তব্যক্তির বিতর-এর নামায
দেরি করে শেষ রাতে আদায় করা মুস্তাহাব। শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে
ঘুমানোর পূর্বেই বিতর-এর নামায আদায় করা উত্তম।
যে সময় নামায আদায় করা নিষিদ্ধ
তিন সময় নামায পড়া নিষিদ্ধ : (১) সূর্যোদয়ের সময়, (২) ঠিক দুপুরের সময় এবং (৩) সূর্যাস্তের
সময়। হাদীসে এসেছেÑ হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(স)
আমাদেরকে নির্ধারিত তিন সময়ে নামায আদায় করতে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন :
(১) সূর্যোদয়ের সময় থেকে সূর্য একটু উপরে ওঠা পর্যন্ত, এ সময়টি প্রায় ২৩ মিনিট, (২) ঠিক দুপুরের
সময়। অর্থাৎ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সময় পর্যন্তএবং (৩) সূর্য অস্তযায় যায় অবস্থা থেকে অস্ত
যাওয়া পর্যন্ত(এ সময় প্রায় ২০ মিনিট)। উল্লিখিত তিনটি সময় ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল যে কোন
ধরনের নামায আদায় করা নিষিদ্ধ। এমনকি সিজদায়ে তিলাওয়াতও নিষিদ্ধ।
যে যে সময় নামায আদায় করা মাকরূহ
১. পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন দেখা দিলে বা বায়ু নিঃসরণের প্রয়োজন হলে;
২. পানাহার উপস্থিত থাকা অবস্থায় ক্ষুধার্তের জন্য পানাহারের আগে নামায আদায় করা।
এসব প্রয়োজনগুলো সেরে তবেই নামাযে মনোনিবেশ করতে হয়, যাতে করে নিবিষ্ট মনে নামায আদায় করা
যায়।
যে যে সময় শুধু নফল নামায আদায় করা মাকরূহ
১. জুমু’আ, দু’ঈদের নামায, বিয়ে বা হাজ্জের খুৎবা দেওয়ার জন্য ইমাম নিজের জায়গায় ওঠে দাঁড়ালে;
২. ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় হয়ে আলো ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত;
৩. আসর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তপর্যন্ত;
৪. ফজরের সময় ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন নফল আদায় করা;
৫. জামা’আত আরম্ভ হয়ে গেলে;
৬. ঈদের নামাযের পূর্বে ঘরে বা মাঠে নফল আমায আদায় করা;
৭. ঈদের নামাযের পর ঈদের ময়দানে নফল নামায আদায় করা;
৮. আরাফাতের ময়দানে যুহর-আসরের মাঝে এবং আসরের পরে নফল নামায আদায় করা;
৯. মুযদালিফায় মাগরিব-ইশার মাঝে ও পরে নফল নামায আদায় করা;
১০. মাগরিব নামাযের পূর্বে নফল নামায আদায় করা।
তিন সময় নামায পড়া
নিষিদ্ধ :
(১) সূর্যোদয়ের সময়,
(২) ঠিক দুপুরের সময়
এবং (৩) সূর্যাস্তের সময়।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. সময় মত নামায পড়াÑ
ক. ফরয;
খ. খুব গুরুত্বপূর্ণ;
গ. প্রয়োজনীয়;
ঘ. ওয়াজিব।
২. মাগরিবের নামাযের শেষ সময়Ñ
ক. পশ্চিম দিগন্তেলালিমা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত;
খ. রাত সাতটা পর্যন্ত;
গ. পশ্চিম দিগন্তেসাদা আভা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত;
ঘ. সূর্য অস্তযাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।
৩. যে যে সময় নামায আদায় করা নিষিদ্ধ সেগুলোর একটি হলÑ
ক. রাত বারটা;
খ. ঠিক দুপুরের একটু আগে;
গ. সূর্যোদয়ের সময়;
ঘ. সূবহে সাদিকের সময়।
৪. পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন দেখা দিলেÑ
ক. নামায পড়া নিষেধ;
খ. মাকরূহ তাহরীমা;
গ. মাকরূহ;
ঘ. কোন অসুবিধা নেই।
৫. ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্তনফল নামায পড়াক. উত্তম;
খ. মাকরূহ;
গ. হারাম;
ঘ. অবৈধ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. হযরত জিবরীল (আ) কোন কোন সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন? তা বর্ণনা করুন।
২. ফজরের নামাযের ওয়াক্ত লিখুন।
৩. যুহর ও আসরের নামাযের সময় আলোচনা করুন।
৪. মাগরিবের নামাযের সময় উল্লেখ করুন।
৫. ইশা ও বিতরের নামাযের সময় বর্ণনা করুন।
৬. কোন কোন সময় নামায পড়া নিষিদ্ধ? লিখুন।
৭. কোন সময় নফল নামায আদায় করা মাকরূহ? লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় বিস্তারিতভাবে লিখুন।
২. কোন সময় নামায পড়া নিষিদ্ধ এবং কোন সময় মাকরূহ বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]