হালাল ও হারামের পরিচয়সহ এর মূলনীতিসমূহ বর্ণনা করুন।

হালাল-হারাম
হালাল-হারাম ইসলামী শরীআতের অতীব গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয়। শরীআতের এমন কোন বিষয় নেই
যার সঙ্গে হালাল ও হারাম (বৈধ ও অবৈধ)-এর সম্পর্ক নেই। তাই আমাদেরকে হালাল ও হারামের
পরিচয়, এর মূলনীতি এবং হালাল-হারাম বস্তুসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যক। এ ইউনিটে এ সব বিষয়ই আলোচিত হয়েছে।হালাল ও হারাম (বৈধ ও অবৈধ)
ইসলামী শরীআতে হালাল ও হারাম বিষয় দু’টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সকল আসমানী গ্রন্থে হালাল ও হারাম
সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। بین الحرام و بین الحلال “হালাল বিষয়গুলো সুস্পষ্ট আর হারাম
বিষয়গুলোও সুস্পষ্ট (মুসলিম)।” হালাল-হারামের বিষয়টি শরীআত কর্তৃক বর্ণিত ও নির্ধারিত।
কুরআনও ও হাদীসে যে সব বিষয়কে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে শরীআতের পরিভাষায় তা হালাল।
আর কুরআন ও হাদীসে যে সব বিষয়কে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে শরীয়তের পরিভাষায় তা
হারাম।
হালাল-হারাম এর বিধান জারি করার উদ্দেশ্য
হালাল ও হারাম শুধু পানাহারের মধ্যে সীমিত নয় বরং সব কাজকর্ম, কথা-বার্তা, লেনদেন, খাদ্য-দ্রব্য
তথা মানুষের সকল দিক ও বিষয় এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
হালাল ও হারামের বিধান জারি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানব জাতির কল্যাণ সাধন করা এবং অকল্যাণ ও
ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। এ বিধান পালনেই নিহিত রয়েছে মানুষের আত্মার প্রশান্তিও দেহের কল্যাণ
এবং বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা। হালাল গ্রহণের ফলে আত্মা ও সমগ্র শরীর সুস্থ থাকে ও ভাল কাজ করতে সক্ষম হয় আর হারাম গ্রহণের ফলে আত্মা ও সমগ্র দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ভাল কাজ করতে সক্ষম হয় না। হাদীসে এসেছে-
اذا صلحت صلح الجسد كلھ و اذافسدت فسد الجسد كلھ.
“আত্মা যখন সুস্থ থাকে তখন সমগ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সুস্থ থাকে। আর (হারাম গ্রহণের ফলে) আত্মা যখন
অসুস্থ হয়ে পড়ে ফলে সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মন্দ কাজে অভ্যস্তহয়ে পড়ে (মুসলিম শরীফ)।” এ বিধান
দীন-ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর থেকে সকল প্রকার কঠোরতা তুলে
নিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “ইসলামে কোন কঠোরতা ও জটিলতা নেই।” কোন কিছুই নিষিদ্ধ নয়
এ নীতিহীনতা থেকেও তিনি আমাদের মুক্ত করেছেন। কোন কোন গোষ্ঠী কৃচ্ছতাসাধন করতে গিয়ে
সকল প্রকার হালাল বস্তুকে নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছে। ইসলামের হালাল ও হারামের বিধান
মানুষকে এ গর্হিত নীতি থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে। ইসলামী বিধান কঠোরতা ও শিথিলতা এ দুই এর
মাঝামাঝি একটি গ্রহণযোগ্য ও সহজসাধ্য বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ٱل َّذِینَ یَتَّب ِعُونَ ٱلرَّ سُولَ ٱلنَّب ِىَّ ٱلأ ُمِّىَّ ٱل َّذِى یَجِ دُونَھُ مَكْتُوبا ً عِندَھُمْ فِى
ٱلتَّوْ رَ اةِ وَ ٱلإِ نْجِ یلِ یَأ ْمُرُ ھُم ب ِٱلْمَعْرُ وفِ وَ یَنْھَاھُمْ عَنِ ٱلْمُنْكَرِ وَ یُحِ لُّ ل َھُمُ
ٱلطَّیِّبَاتِ وَ یُحَرِّ مُ عَل َیْھِمُ ٱل ْخَبَآئِثَ وَ یَ ضَعُ عَنْھُمْ إ ِصْرَ ھُمْ وَ ٱلأ َغْلاَلَ ٱل َّتِى
كَانَتْ عَل َیْھِمْ
“যারা অনুসরণ করে বার্তবাহক উম্মী নবীর, যার উল্লেখ ও বর্ণনা রয়েছে তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত
ও ইঞ্জীলে। যিনি তাদেরকে সংকাজের নির্দেশ দেন ও অসৎকাজে বাধা দেন। যিনি তাদের জন্য পবিত্র
বস্তু বৈধ করেন ও অপবিত্র বস্তু অবৈধ করেন এবং তিনি তাদের মুক্ত করেন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া
গুরুভার থেকে ও শৃংখল থেকে।” (সূরা আল-আরাফ : ১৫৭)
হালাল ও হারামের মূলনীতি
ক. কোনটি হালাল এবং কোনটি হারাম তা নির্ধারণে মানুষের কোন ইখতিয়ার নেই। হালাল ও হারাম
কুরআন ও হাদীসে যে সব বিষয়কে বৈধ বলে
ঘোষণা করা হয়েছে শরীআতের পরিভাষায় তা
হালাল। আর কুরআন ও হাদীসে যে সব বিষয়কে
অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে শরীয়তের পরিভাষায় তা হারাম।
হালাল ও হারাম নির্ধারণের সর্বময় ক্ষমতা
আল্লাহর। কোনটি হালাল আর কোনটি হারাম তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
নির্ধারণের একমাত্র সর্বময় ক্ষমতা আল্লাহর। কোনটি হালাল আর কোনটি হারাম তা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের পক্ষ থেকে নির্ধারিত। কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক ঘোষিত হালালকে হারাম
অথবা হারামকে হালাল সাব্যস্তকরে তবে সে কাফির বলে গণ্য হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَ قَدْ فَصَّلَ ل َكُمْ مَّا حَرَّ مَ عَل َیْكُمْ
“যা তোমাদের জন্য তিনি (আল্লাহ) হারাম করেছেন তা তিনি বিশদভাবেই তোমাদের নিকট বর্ণনা
করেছেন।” (সূরা আল-আনআম : ১১৯)
খ. সকল প্রকার হারাম বস্তুই ক্ষতিকর
শরীআতের সকল বিধানই মানুষের জন্য কল্যাণকর। সেসব বস্তু অপবিত্র, নিকৃষ্ট এবং মানুষের
জন্য ক্ষতিকর আল্লাহ তা’আলা সেগুলো হারাম করে দিয়েছেন, তিনি ইরশাদ করেন-
یَسْأ َل ُونَكَ عَنِ ٱل ْخَمْرِ وَ ٱلْمَیْسِرِ ق ُلْ فِیھِمَآ إ ِث ْمٌ كَب ِیرٌ وَ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ
وَ إ ِث ْمُھُمَآ أ َكْبَرُ مِن نَّفْعِھِمَا
“লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, উভয়ের মধ্যে রয়েছে বড় ধরনের
পাপ ও অপকারিতা, তবে এতে মানুষের জন্য উপকারও রয়েছে। কিন্তুএগুলোর পাপ ও
অপকারিতা উপকার অপেক্ষা অধিক।” (সূরা আল-বাকারা : ২১৯)
গ. যে সকল উপকরণ হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার কারণ হিসেবে প্রমাণিত শরীআত সেগুলোকেও
হারাম করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মূলনীতি হচ্ছে حرام فھو الحرام الى أدى ما “যা কিছু
হারামের দিকে ধাবিত করে তাও হারাম।”
যেমন- ব্যভিচার হারাম, যে সব কাজ ব্যভিচারের পথে মানুষকে ধাবিত করে, ব্যভিচারের প্রতি
উৎসাহিত করে শরীআত সেগুলোকেও হারাম করেছে। যেমন- চরিত্র ধ্বংসকারী বই এবং
পত্রপত্রিকা, নগ্ন ছবি, যৌন উত্তেজক গান-বাজনা ইত্যাদি।
ঘ. হারাম কাজ করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করাও হারাম। হারামকে হালাল করার অপকৌশল
অবলম্বন করাও হারাম। এটা শয়তানের প্ররোচনা। শয়তান যুগে যুগে মানুষকে বিভিন্ন ধরনের
অপকৌশল অবলম্বনে হারামকে হালাল করার জন্য উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা
ইয়াহূদীদেরকে শনিবার দিন মাছ ধরতে নিষেধ করেন। তারা কৌশল অবলম্বন করে শুক্রবারে গর্ত
খুঁড়ে রাখতো, শনিবারে তাতে এসে মাছ জমা হতো, আর রোববার দিন তা তারা ধরত। আল্লাহ
তা‘আলা এজন্য তাদের শাস্তিপ্রদান করেন।
ঙ. কোনো হারাম জিনিসের নাম বা তার বাহ্যিক আকৃতি পরিবর্তন করলে এবং তাতে তার মূল
অবস্থার কোন পরিবর্তন না ঘটলে সে জিনিস হালাল হবে না বরং হারামই থেকে যাবে। যেমন,
মদকে পানীয় এবং সুদকে মুনাফা নামে অভিহিত করলে তা হালাল হবে না। রাসূলুল্লাহ (স)
বলেন- “আমার উম্মাতের একদল লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তাকে হালাল মনে করবে।”
নবী করীম (স) আরও বলেন- “এমন এক যুগ আসবে যখন মানুষ সুদকে ক্রয়-বিক্রয়ের নামে
অভিহিত করে তা হালাল মনে করবে।”
চ. অপবিত্র খাদ্য ও পানীয় এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম। এছাড়া পানীয় দ্রব্যে হারাম মিশলে তা
হারাম হয়ে যায়।
ছ. দাঁত দিয়ে শিকারকারী সকল হিংস্র জন্তু এবং নখ দিয়ে শিকার কারী সকল পাখি হারাম।
জ. যে সব বস্তু হারাম তা বিক্রি করে অর্থ ব্যবহার করাও হারাম। যেমন- মদ। তবে কিছু কিছু বস্তু শরীআত হালাল করে দিয়েছে। যে সকল উপকরণ হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার
কারণ হিসেবে প্রমাণিত শরীআত সেগুলোকেও
হারাম করে দিয়েছে। কোনো হারাম জিনিসের
নাম বা তার বাহ্যিক আকৃতি পরিবর্তন করলে
এবং তাতে তার মূল অবস্থার কোন পরিবর্তন
না ঘটলে সে জিনিস হালাল হবে না বরং হারামই থেকে যাবে।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. হালাল হচ্ছেক. কুরআন ও হাদীস যে সব বিষয় ও বস্তুকে বৈধ ঘোষণা করেছে;
খ. সরকার যে সব বিষয় ও বস্তুকে বৈধ বলেছে;
গ. মানুষ যে সব বিষয় ও বস্তুকে বৈধ করেছে;
ঘ. মানুষের মন যে সব বিষয় ও বস্তুকে বৈধ মনে করে।
২. হারাম হচ্ছেক. মানুষের অপছন্দনীয় বিষয়সমূহ; খ.সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ;
গ. সমাজ কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ; ঘ.কুরআন ও হাদীস কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় ও বস্তুসমূহ।
৩. হালাল-হারামের বিধান জারি করা হয়েছেক. শুধু মানব জাতির কল্যাণ সাধন করার জন্য; খ.মানব জাতিকে বিপদে ফেলার জন্য;
গ. মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য; ঘ.মানব জাতির কল্যাণসাধন করা ও অকল্যাণ থেকে
তাকে রক্ষা করার জন্য।
৪. হালাল-হারাম নির্ধারণের ইখতিয়ারক. একমাত্র আল্লাহর; খ.আল্লাহ ও বান্দার উভয়ের ;
গ. সমাজের; ঘ.সরকারের।
৫. কেউ যদি আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত হালাল-হারাম বস্তুকে হারাম ও হালাল মনে করেক. সে পূর্ণ মুমিন নয়; খ.সে পাপী;
গ. সে কাফির; ঘ.সে বিদআতী।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. হালাল ও হারাম কাকে বলে? আলোচনা করুন।
২. হালাল ও হারাম নির্ধারণের ইখতিয়ার কার? বর্ণনা করুন।
৩. যে কৌশল অবলম্বন হারামের প্রতি উৎসাহিত করে তার বিধান কী? লিখুন।
৪. যে কাজ মানুষকে হারামের প্রতি উৎসাহিত করে তার বিধান লিখুন।
৫. কোনো হারাম বস্তুর নাম পরিবর্তন করলে তা হালালে পরিণত হয় কিনা? লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. হালাল ও হারামের পরিচয়সহ এর মূলনীতিসমূহ বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]