বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

ইসলামে নারীর মর্যাদা স¤পর্কে আলোকপাত করতে পারবেন।
মানুষ হিসেবে পুরুষ ও নারী মর্যাদায় সমান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ اسُ ٱتَّ قُ وا᠔ رَ ᗖَّ ᠑ᝣ مُ ٱلᡐ ذِ ى خَ ل᠐ قَ ᠑ᝣ مْ مِّ ن نَّ فْ س᠏ وَ احِ دَ ةٍ وَ خَ ل᠐ قَ مِ نْ هَ ا زَ وْ جَ هَ ا
وَ ᗖ َثَّ مِ نْ هُ مَ ا ر᠒جَ اᢻ ًك᠐ ثِ يرا᠍ وَ ᙏ ِسَ ቯءً .
‘হে মানুষ ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার
থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জুড়ি, আর এ উভয় থেকেই অসংখ্য পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন’। (সুরা আন-নিসা
: ১)
সুতরাং, নারী ও পুরুষ উভয় মিলে মানবতার এক অবিভাজ্য সত্তা।
মহান আল্লাহ আরো বলেন-
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ اسُ إِ نَّ ا خَ ل᠐ قْ نَ ا᠑ᝏ م مِّ ن ذَ ᠐ᜧ ر᠏ وَ أ᠑ نْ ثَ ىٰ .
‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি’। (সুরা আল- হুজুরাত ঃ ১৩)
কাজেই সৃষ্টিগতভাবে পুরুষ নারী কেউই কারো ওপর কোনরূপ মৌলিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে না এবং
কেউই অপর কাউকে জন্মগত কারণে হীন, নীচ ও ক্ষুদ্র বলে ঘৃণা করতে পারে না। মানব দেহের সংগঠনে
পুরুষের সঙ্গে নারীর যথেষ্ট অংশ ও শামিল রয়েছে। বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নারীর অংশই বেশি থাকে
প্রত্যেকটি মানব শিশুর দেহ সৃষ্টিতে।
নারী ও পুরুষ প্রত্যেকেই যে প্রত্যেকের জন্য একান্তঅপরিহার্য, কেউ কাউকে ছাড়া নয়, হতে পারে না, তা
স্পষ্টভাবে জানা যায় নি¤েœাক্ত আয়াতে-
أ᠐ نِّ ى ᢻ َأ᠑ ضِ يعُ عَ مَ لَ عَ امِ لٍ مِّ نْ ᠑ᝣ مْ مِّ نْ ذَ ᠐ᜧ ر᠏ أ᠐ وْ أ᠑ نْ ثَ ىٰ ᗷ َعْ ضُ ᜓ᠑ م مِّ نْ ᗷ َعْ ض᠏
‘নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্য থেকে কোন আমলকারীর আমলকে নষ্ট করে দেই না, সে পুরুষই হোক আর নারীই
হোক, তোমরা পরস্পর পরস্পর থেকে’। (সুরা আলে-ইমরান ঃ ১৯৫)
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ একই জীবন সত্তা থেকে সৃষ্ট, একই বংশ থেকে উদ্ভূত। দুনিয়ার এই বিপুল
সংখ্যক পুরুষ-নারীও সেই একই সত্তা থেকে উদ্ভূত। মৌলিকতার দিক থেকে মানুষ হিসেবে এ দু'য়ের মাঝে কোন
পার্থক্য নেই। যেমন- কুরআন বলেছেউপরোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, নর ও নারী প্রত্যেকেই সৃষ্টির দিক দিয়ে এবং দ্বীনের ক্ষেত্রেও সমান, সেই
অনুযায়ী আমল করার দায়িত্বও দু’জনের সমান এবং তার প্রতিফলও সমানভাবেই তারা লাভ করবে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন-
هُ نَّ لِ ᘘ َاسٌ لᡐ ᠑ᝣ مْ وَ أ᠐ نْ تُ مْ لِ ᘘ َاسٌ لᡐ هُ نَّ .
‘তারা তোমাদের ভূষণ আর তোমরা তাদের ভূষণ।’ (সুরা আল-বাকারা ঃ ১৮৭)
বস্তুত ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ যেন একটি বৃক্ষের দু’টো শাখা। মহানবী (সা.) বলেছেনالرجال شقائق ساء ال انما- ‘নারীরা পুরুষদের অংশ’।
বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে নারী
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মূল্যায়ন করার প্রারম্ভে বিশ্বের অন্যান্য ধর্ম ও সমাজের মধ্যে নারীদের অবস্থান ও
মর্যাদা জানা প্রয়োজন।
মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম বা সমাজে নারীর
উপযুক্ত মর্যাদা স্বীকৃত হয়নি। সর্বত্রই সে পুরুষের দাসী ও বিলাসিতার সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সমস্ত
প্রাচীন ধর্ম ও আইনে নারী পুরোহিত, স্বামী ও অভিভাবকের চিরন্তন অধীন বলে চিত্রিত হয়েছে। তাদের সকলের
মতেই পুরুষকে সন্তুষ্ট করা ও তার তাবেদারী করার জন্যই রমণীর সৃষ্টি। রমণ করা যায় বলেই নারীর নাম রমণী।
সুতরাং রমণী মানেই পরাধীনতা ও পরনির্ভরতার করুণ ইতিহাস। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মমতে নারীদের অবস্থান
সম্পর্কে নি¤েœআলোচনা করা হল।
হিন্দু ধর্মে নারী
হিন্দু ধর্মে নারীর কোন মর্যাদা ও অধিকার স্বীকৃত ছিল না। প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘‘মৃত্যু,
নরক, বিষ, সর্প, আগুন-এর কোনটিই নারী অপেক্ষা খারাপ ও মারাত্মক নয়। যুবতী নারীকে দেবতার উদ্দেশ্যে
দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কিংবা বৃষ্টি অথবা ধন-দৌলত লাভের জন্য বলিদান করা হত। একটি বিশেষ গাছের সামনে
এভাবে নারীকে পেশ করা ছিল তদানীন্তন হিন্দুসমাজের স্থায়ী রীতি।
এছাড়া স্বামীর মৃত্যু হলে তাকে চির বৈধব্যে জীবন যাপন করতে হত অথবা সহমৃত্যু বরণ করতে হত। স্ত্রীকে
আলাদা কোন সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হত না। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জীবন্তচিতার আগুনে পোড়ানো হত।
বৌদ্ধ ধর্মে নারী
বৌদ্ধ ধর্মেও নারীর অবস্থান ছিল নিতান্তহীন। এ ধর্মে নারীই সকল পাপের জন্য দায়ী। এ ধর্মেও নারীর ধর্ম-কর্ম
করার অধিকার ছিল না। বুদ্ধ বলতেন ঃ “নারী মোহের বাস্তব স্বরূপ মানবতার নির্বাণ লাভে বিঘœস্বরূপ।”
ইয়াহূদী ধর্মে নারী
ইয়াহূদীদের চোখে নারী ছিল সকল পাপের মূল। কাজেই নারী উপেক্ষার পাত্রী। তারা বলত, “মেয়েদের গুণের
চাইতে পুরুষের দোষও ভাল।” ইয়াহূদী সমাজে শুধু পুত্র না থাকলেই কন্যা সম্পত্তি পেতো। পিতা, পুত্র, ভ্রাতা,
স্বামী কারো সম্পদেই নারীর কোন অধিকার ছিল না। এ ধর্মে নারীকে পুরুষের প্রতারক বলে অভিহিত করা
হয়েছে। ওল্ড টেস্টামেন্ট (আদি পুস্তক)-এ হযরত আদম ও হাওয়ার জান্নাত থেকে বহি®কৃত হওয়ার কাহিনীটি
যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তাতেই এর প্রমাণ মেলে।
বস্তুত ইয়াহূদী সমাজে নারীকে ক্রীতদাসীর পর্যায়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
খ্রিস্ট ধর্মে নারী
খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা নারীকে ‘নরকের দ্বার’ ও ‘মানবের সমস্তদুঃখ-দুর্দশার হেতু’ বলে গণ্য করত। এজন্যই তাদের
ভাষায় নারীকে ডড়সধহ [ডড়ব-ঃড়-সধহ] মানুষের দুঃখের কারণ বলে নাম রাখা হয়েছে। নারী আদপেই
‘মানুষ কি-না এবং তার আত্মা আছে কিনা’- এ নিয়ে তারা সন্দিগ্ধ। এক পাদ্রী বলেছে ঃ
‘নারী সকল অন্যায়ের মূল, তার থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।’ নারী হচ্ছে পুরুষের মনে লালসা উদ্রেককারী। ঘরে
ও সমাজে যত অশান্তির সৃষ্টি হয় তা সবই তার কারণে। যাজকরা নারীর শিক্ষা লাভ করার অধিকার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল।
গ্রীক ধর্মে নারী
প্রাচীন গ্রীসে নারীদেরকে শয়তানের প্রতিভূ বলা হত। তাদের মান-সম্মান বলতে কিছুই ছিল না। তারা নারীকে
পরিত্যক্ত দ্রব্য-সামগ্রীর মত মনে করত। হাটে-বাজারে প্রকাশ্যভাবে নারী বেচাকেনা হত। ঘরের কাজকর্ম করা
এবং সন্তান প্রসব ও লালন-পালন ছাড়া অন্য কোন মানবীয় অধিকারই তাদের ছিল না।
প্রাচীন আরবে নারীর অবস্থান
আরবেও নারীদের কোন মর্যাদা স্বীকৃত ছিল না। ইসলাম পূর্বযুগে কন্যা সন্তান জন্ম দানকে তারা লজ্জার বস্তু মনে
করে হত্যা করত। এবং কখনো কখনো জীবন্তকবর দিত। তাদেরকে ভোগ্যপণ্যের মতই গণ্য করত। পশুর মত
বিক্রি করত। সে সমাজে নারীদের অধিকার স্বীকৃত ছিল না।
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারী
বর্তমান পাশ্চাত্যে শিল্প বিল্পবের পর নারীরা অর্থনৈতিক স্বীকৃতি লাভ করলেও সেখানে অবাধ যৌনাচারের যূপকাষ্ঠে বলি দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত নারীর ইজ্জত-আবরু ও মর্যাদাকে।
ইংল্যান্ডে ১৮৯৫ সন পর্যন্তআইন ছিল যে, পুরুষ তার স্ত্রীকে বিক্রয় করতে পারবে। ইউরোপে এক শতাব্দীকাল
পূর্বের পুরুষগণ নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো। নারী নিজে উপার্জন করলেও তা ব্যয় করার জন্য
তাদের কোন অধিকার ছিল না। নিজেদের পছন্দসই বিয়ে করার অধিকারও তাদের ছিল না।
আধুনিক সভ্যতা নারীকে প্রাচীনকালের লাঞ্ছনার গহŸর থেকে উদ্ধার করে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির নামে
অপর এক গভীর গহŸরে নিক্ষেপ করেছে। লাগামহীন নারী স্বাধীনতার নামে তাকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে।
আজ সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিল্পের নামে নারীর লজ্জা-শরম, ইজ্জত-আবরু ও নৈতিক পবিত্রতার মহামূল্যবান
সম্পদ প্রকাশ্য বাজারে ভোগ্য পণ্যের মত ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছে। পুরুষরা চিন্তার আধুনিকতা উচ্ছ¡খলতা এবং
শিল্পের অগ্রগতি ও বিকাশ সাধনের মোহনীয় নামে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে ঘরের বাইরে নিয়ে এসেছে এবং
ক্লাবে, নাচের আসরে, অভিনয় মঞ্চে পৌঁছিয়ে নিজেদের পাশবিক লালসার ইন্ধন বানিয়ে নিয়েছে। বস্তুত আধুনিক
সভ্যতা নারীর সতীত্বের সমাধির ওপর লালসা চরিতার্থের সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করেছে। এ সভ্যতা প্রকৃতপক্ষে
নারীকে দেয়নি কিছুই, যদিও তার সব অমূল্য সম্পদ-ই সে হরণ করে নিয়েছে নির্মমভাবে।
ইসলামে নারীর মর্যাদা
নারী জাতিকে এহেন শোচনীয় ও অমর্যাদাকর গহীন গহŸর থেকে তুলে এনেছে ইসলাম। ইসলামই নারীকে যুগ
যুগ সঞ্চিত অপমান-লাঞ্ছনা ও হীনতা-নীচতার পুঞ্জীভূত জঞ্জালস্তূপ থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি দান করেছে এবং
তাকে যথোপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুছে দিয়েছে তার ললাটস্থ সহস্র শতাব্দীকালের কলঙ্করেখা।
ইসলাম নারীকে তার সঠিক মূল্য দান করেছে। নারীর স্বাভাবিক সুকুমার বৃত্তি ও সহজাত গুণাবলির বিকাশ
সাধনই ইসলামের লক্ষ্য। এজন্য ইসলাম নারীকে ঘরের বাইরে, মাঠে-ময়দানে, হাটে-বাজারে, অফিসে,
দোকানে, কলকারখানায়, পরিষদে, সম্মেলনে, মঞ্চে, নৃত্যশালায়, অভিনয়ে টেনে নেয়ার পক্ষপাতী নয়। ইসলাম
নারীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলাম নারীর স্বাভাবিক যোগ্যতার সঠিক মূল্য
দিয়েছে, দিয়েছে তা ব্যবহার করে তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি ব্যবস্থা।
মৌলিক অধিকারে সমতা
ইসলাম নারীকে মৌলিক অধিকার ভোগ ও ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছে। শুধু নির্দেশ
দিয়েই নয়, বরং আইন, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠা দেখিয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন-
ᘌ َاآدَ مُ ٱسْ ك᠑ نْ أ᠐ نْ تَ وَ زَ وْ جُ كَ ٱل᠔ جَ نَّ ةَ وَ ᠑ᝏ ᢿ َمِ نْ هَ ا رَ غَ دا᠍ حَ ᘭ ْثُ شِ ᚊ ْتُ مَ ا.
‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর।’ (সুরা আল-বাকারা :
৩৫) মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন ঃ
وَ مَ ا ᛿᠐ ا نَ لِ مُ ؤْ مِ ن᠏ وَ ᢻ َمُ ؤْ مِ نَ ةٍ إِ ذَ ا قَ ضَ ى ٱللᡐ هُ وَ رَ سُ ول᠑ هُ أ᠐ مْ را᠍ أ᠐ ن ᘌ᜻ َ᠑ ونَ ل᠐ هُ مُ ٱل᠔ خِ يَ رَ ةُ
مِ نْ أ᠐ مْ ر᠒ هِ مْ .
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও মুমিন স্ত্রীলোকের জন্য সে ব্যাপারে
ভিন্ন সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার থাকবে না।’ (সুরা আল- আহযাব : ৩৬)
কুরআন ঘোষণা করছে ঃ
وَ مَ ن ᘌ َعْ مَ لْ مِ نَ ٱلصَّ الِ حَ اتِ مِ ن ذَ ᠐ᜧ ر᠏ أ᠐ وْ أ᠑ نْ ثَ ىٰ وَ هُ وَ مُ ؤْ مِ نٌ فَ أ᠑ وْ ل᠐ ᅮ ٰئِ كَ ᘌ َدْ خُ ل᠑ ونَ
ٱل᠔ جَ نَّ ةَ وَ ᢻ َᘌ ُظ᠔ ل᠐ مُ ونَ نَ قِ يرا᠍ .
‘পুরুষ বা নারী যে লোকই নেক আমল করবে এবং সে ঈমানদার হলে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের
প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আন-নিসা : ১২৪)
বস্তুত ইসলামী শরী‘আত পুরুষ-নারী উভয়কেই সমান সামাজিক মর্যাদা এবং মৌলিক অধিকারে সমতা দিয়েছে।
ব্যক্তি স্বাধীনতা
ইসলাম নারীকে ব্যক্তিস্বাধীনতা দান করেছে। ইসলামই সর্ব প্রথম নারীর ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে, আর সামগ্রিক
বিষয়াবলিতে তাকে মতামত প্রকাশের অধিকার দান করেছে। তাকে স্বাক্ষ্যদানের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে,
স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকারও তার রয়েছে।
রাজনৈতিক মর্যাদা
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই রাজনৈতিক অধিকার ও মর্যাদা স্বীকৃত। যেমন-নারীর বাক-স্বাধীনতা, ভোটাধিকার
ও সমালোচনার অধিকার রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলা পুরুষের ন্যায়ই ভোটাধিকার লাভ
করবে। ইসলাম নারীকে নাগরিক অধিকার দান করে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
অর্থনৈতিক মর্যাদা
ইসলামই নারীকে সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক মর্যাদা ও অধিকার দান করেছে। যেমন ঃ আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছেمفروضـا اᘘᚏنصـ ‘নারীদের রয়েছে নির্ধারিত অংশ।’ আল-কুরআনের এ ঘোষণার আলোকে অর্থনৈতিক
ক্ষেত্রে নারীদের নি¤œলিখিত অধিকারগুলোর স্বীকৃত রয়েছে।
ক. উত্তরাধিকার
নারী তাঁর পিতা, মাতা, নিকটাত্মীয় ও স্বামীর পক্ষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে স¤পদ পেয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ
এ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেন-
لᡒ لرِّ جَ الِ نَ صᛳِ بٌ مِّ مَّ ا تَ رَ كَ ٱل᠔ وَ الِ دَ انِ وَ ٱلأَ قْ ᖁ َᗖ ُونَ وَ لِ ل ِّ سَ ቯءِ نَ صِ ᛳبٌ مِّ مَّ ا تَ رَ كَ
ٱل᠔ وَ الِ دَ انِ وَ ٱلأَ قْ ᖁ َᗖ ُونَ مِ مَّ ا قَ لَّ مِ نْ هُ أ᠐ وْ ك᠐ ثُ رَ نَ صِ ᘘᚏا᠍ مَّ فْ رُ وضا᠍ .
‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত স¤পত্তিতে পুরুষদের অংশ রয়েছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-
স্বজনদের স¤পত্তিতে নারীদেরও অংশ রয়েছে। তা অল্পই হোক অথবা বেশিই হোক। এক নির্ধারিত অংশ।’ (সুরা
আন-নিসা : ৭)
খ. মাহরের অধিকার
নারী তাঁর স্বামীর নিকট থেকে নির্ধারিত ও সম্মানসূচক অতিরিক্ত আর্থিক নিশ্চয়তা স্বরূপ মোহরানার অধিকার
পাবেন। এই মোহরানা স্বামী অবশ্যই স্ত্রীকে প্রদান করবেন। এ মর্মে আল্লাহ পাকের নির্দেশ হচেছ-
وَ آتُ وا᠔ ٱل ِّ سَ ቯءَ صَ دُ قَ اتِ هِ نَّ نِ حْ ل᠐ ةً فَ إِ ن طِ بْ نَ ل᠐ ᠑ᝣ مْ عَ ن شَ يْ ءٍ مِّ نْ هُ نَ فْ سا᠍
فَ ᝣ ل᠑ وەُ هَ نِ ᚏئا᠍ مَّ ᠒ᖁ ᗫئا᠍ .
‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মাহর স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে দিয়ে দাও। আর যদি তারা সন্তুষ্ট চিত্তে মাহরের কিছুঅংশ
ছেড়ে দেয়, তা হলে তোমরা তা সানন্দে ভোগ কর।’ (সুরা আন-নিসা : ৪)
গ. ভরণ-পোষণ
নারী বিয়ের পূর্বে অভিভাবক ও বিয়ের পরে স্বামীর নিকট থেকে নিশ্চিতভাবেই ভরণ-পোষণের অধিকার লাভ করে
থাকে। মহানবী (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘তুমি যখন খাবে স্ত্রীকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে স্ত্রীকেও
পরাবে।’ (আবু দাউদ)
ঘ. ব্যক্তিগত সম্পদ
নারীর ব্যক্তিগত সম্পদ যথা ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োগকৃত অর্থ অথবা নিজ পরিশ্রমের অর্থ ও উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্ত যাবতীয় অর্থ তারই একান্তমালিকানাধীন। স্ত্রী যদি তার ধন-সম্পদ ব্যয় করতে বা দান করতে চায় কেউ
তাকে বাধা দিতে পারবে না। এ মর্মে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
لᡒ لرِّ جَ الِ نَ صِ ᛳبٌ مِّ مَّ ا ٱ᠔ᜧ ᙬ َسَ بُ وا᠔ وَ لِ ل ِّ سَ ቯءِ نَ صِ ᛳبٌ مِّ مَّ ا ٱ᠔ᜧ ᙬ َسَ بْ نَ .
‘পুরুষগণ যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য আর নারীরা যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য।’ (সুরা আন- নিসা:
৩২)
মহান আল্লাহ বলেন-
أ᠐ سْ كِ نُ وهُ نَّ مِ نْ حَ ᘭ ْثُ سَ ك᠐ نتُ م مِّ ن وُ جْ دِ ᛿᠑ مْ وَ ᢻ َتُ ضَ ቯرُّ وهُ نَّ لِ تُ ضَ ᘭِّ قُ وا᠔ عَ ل᠐ يْ هِ نَّ .
‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্যানুযায়ী যে স্থানে বাস কর, তাদেরকে বসবাস করার জন্য সেরূপ গৃহ দাও, আর
তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না’। (সুরা আত-তালাক : ৬)
لِ يُ نفِ قْ ذُ و سَ عَ ةٍ مِّ ن سَ عَ تِهِ وَ مَ ن قُ دِ رَ عَ ل᠐ ᘭ ْهِ ر᠒ زْ قُ هُ فَ ل᠔ يُ نفِ قْ مِ مَّ ቯ آتَ اەُ ٱللᡐ هُ
‘যে লোককে সচ্ছলতা দান করা হয়েছে তার কর্তব্য সে হিসেবেই তার স্ত্রী-পরিজনের জন্য ব্যয় করা। আর যার
আয় স্বল্প তার সেভাবেই আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে খরচ করা কর্তব্য।’ (সুরা আত-তালাক : ৭)
৫. ধর্মীয় মর্যাদা
ইসলাম পুরুষের ন্যায় নারীকেও সমানভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক উন্নতি-উৎকর্ষ সাধনের
অধিকার দিয়েছে। ধর্মীয় বিধি-বিধান পালন করা যেমন পুরুষের কর্তব্য, তেমনি নারীরও। এ কর্তব্য পালন ও
ফল লাভের অধিকারও উভয়ের সম্পূর্ণ সমান। ইসলামে এ ব্যাপারে নারী-পুরুষের কোনরূপ পার্থক্য করা হয়নি।
যেমন আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
وَ مَ ن ᘌ َعْ مَ لْ مِ نَ ٱلصَّ الِ حَ اتِ مِ ن ذَ ᠐ᜧ ر᠏ أ᠐ وْ أ᠑ نْ ثَ ىٰ وَ هُ وَ مُ ؤْ مِ نٌ فَ أ᠑ وْ ل᠐ ᅮ ٰئِ كَ ᘌ َدْ خُ ل᠑ ونَ
ٱل᠔ جَ نَّ ةَ وَ ᢻ َᘌ ُظ᠔ ل᠐ مُ ونَ نَ قِ يرا᠍ .
‘পুরুষ বা নারী যে লোকই নেক আমল করবে এবং সে ঈমানদার হলে তারা জান্নাতে দাখিল হবে এবং তাদের
প্রতি অণু পরিমাণ যুলম করা হবে না।’ (সুরা আন-নিসা : ১২৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন-
أ᠐ نِّ ى ᢻ َأ᠑ ضِ يعُ عَ مَ لَ عَ امِ لٍ مِّ نْ ᠑ᝣ مْ مِّ نْ ذَ ᠐ᜧ ر᠏ أ᠐ وْ أ᠑ نْ ثَ ىٰ ᗷ َعْ ضُ ᜓ᠑ م مِّ نْ ᗷ َعْ ض᠏ .
‘নিশ্চয় আমি নষ্ট করে দেই না তোমাদের মধ্য থেকে কোন আমলকারীর আমলকে, সে পুরুষই হোক আর নারীই
হোক, তোমরা একে অপরের অংশ।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৯৫)
তামাদ্দুনিক মর্যাদা
ইসলাম নারীকে তামাদ্দুনিক ক্ষেত্রেও পুরুষের সমান মর্যাদা দান করেছে। যেমনক. স্বামী নির্বাচন ঃ স্বামী নির্বাচনের অধিকার ইসলাম নারীকে দিয়েছে। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়াকে
মহানবী (স.) নিরুৎসাহিত করেছেন। ইসলামী শরী‘আতে উপযুক্ত বয়সের নারী-পুরুষকে অন্যান্য কাজের ন্যায়
বিয়ের ব্যাপারেও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারী -পুরুষের বিয়ে তাদের স্পষ্ট
মত ছাড়া সম্পন্ন হতেই পারে না। এ ব্যাপারেও নবী করীম (স) দ্ব্যার্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন-
لا تنكح الاᘌم حتى ᘻستأمر ولا تنكح الᘘكر حتى ᘻستأذن قالوا ᘌارسول الله
و كᘭف اذنها قال ان ᘻسكت.
‘পূর্বে বিবাহিত এবং জুড়িহীন নারীর বিয়ে হতে পারে না, যতক্ষণ না তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট সম্মতি পাওয়া যাবে
এবং অবিবাহিত কুমারী মেয়ের বিয়ে হতে পারে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যাবে।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! তার অনুমতি কীভাবে পাওয়া যাবে ? তখন তিনি বললেন ঃ
জিজ্ঞেস করার পর তার চুপ থাকাই তার অনুমতি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
উপরোক্ত হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ইমাম আবু হানীফার অভিমত হচ্ছে ঃ
ان الولى لا ᘌجبر الثᘭب ولا الᘘكر على النᜓاح فالثᘭب ᘻستأمر والᘘكر
ᘻستاذن.
‘অভিভাবক পূর্ব বিবাহিতা ও অবিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারবে না। অতএব পূর্বে বিবাহিতা
নারীর কাছ থেকে বিয়ের জন্য রীতিমত সম্মতি পেতে হবে এবং অবিবাহিতা বালেগ মেয়ের কাছ থেকে যথারীতি
অনুমতি নিতে হবে।’ (বুখারী শরীফের ভাষ্য গ্রন্থ, ২য় খন্ড, পৃ. ১২৮)
খ. বিবাহ বিচ্ছেদ ঃ একজন অত্যাচারী, অকর্মন্য স্বামী থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার ইসলাম নারীকে
দিয়েছে। ইসলাম অন্যান্য সমাজ ব্যবস্থার মত কারো অধীনে আজীবন নিগৃহীত হতে বলেনি। ইসলাম নারীকে
তার অধিকার রক্ষার ক্ষমতা দান করেছে।
গ. সদাচরণ পাবার অধিকার ঃ ইসলাম নারীকে স্বামীর তরফ থেকে সদাচরণ পাবার আইনগত অধিকার দান
করেছে। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে ঃ ِوفُ رْ عَ م ᠔ٱلِ ᗷ نَُّ وهُ رِ اشَ عَ و
‘তোমরা তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।’ (সুরা আন-নিসা : ১৯)
ঘ. পুনর্বিবাহ ঃ কখনো বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা হলে রমণীর পুনরায় নিজের ইচ্ছামত বিবাহ করার আইনগত
মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত রয়েছে।
জীবনের নিরাপত্তা
ইসলাম নারীকে তার জীবন, সম্পদ, ইজ্জত-আবরু, মান-সম্মান ইত্যাদি নিয়ে বেঁচে থাকার পূর্ণ নিরাপত্তা
দিয়েছে। কেউ নারীকে উত্ত্যক্ত করতে পারবে না। যারা নারীদের মান-সম্মান বিনষ্ট করতে উদ্যত হয় তারা
আইনের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত হবে।
শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা
ধর্মীয় ও বৈষয়িক বিষয়ে শিক্ষা লাভ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করার অধিকার পুরুষের মত নারীরও রয়েছে।
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন ঃ
طلب العلم فᗫᖁضة على ᛿ل مسلم
‘জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয।’
সামরিক ক্ষেত্রে
ইসলাম নারীকে সামরিক জ্ঞান অর্জন করতে উৎসাহিত করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে নারীরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে মহানবী (স) নারীদেরকে সেবার কাজে নিয়োজিত করার জন্য নিয়ে যেতেন। রুবাই বিনতে
মুআব্বিয (রা) বলেন ঃ
كنا نغزوا مع النبى صلى الله علᘭه و سلم ف سقى القوم و نخدمهم و نرد و
الجرحى والقتلى الى المدينة.
‘আমরা মহিলারা রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধে গমন করেছি। আমরা সেখানে লোকদের পানি পান করানো, খিদমত ও
সেবা-শুশ্রƒষা এবং নিহত ও আহতদের মদীনায় নিয়ে আসার কাজ করতাম।’ (বুখারী)
সামাজিক ক্ষেত্রে মর্যাদা
সামাজিক ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীর যথোপযুক্ত মর্যাদা দান করেছে। যেমন ঃ
(ক) কন্যারূপে নারীঃ কন্যা সন্তানকে সকল সমাজেই কুলক্ষণে বলা হয়েছে। অথচ ইসলাম কন্যাকে সৌভাগ্যের
প্রতীকরূপে ঘোষণা করেছে। কন্যা সন্তানের সাথে যাবতীয় পার্থক্যমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ
দিয়েছে।
ইসলাম নারীর প্রতি মানবতাবিরোধী আচরণের প্রতিবাদ করেছে। কন্যা সন্তানকে হত্যা ও ঘৃণা করতে নিষেধ
করেছে এবং পুরুষ সন্তানের মতই বাঁচার অধিকার দিয়েছে। কন্যা সন্তানকে যে পিতা হত্যা করেছে কিয়ামতের
দিন তাকে কঠোর ভাষায় জিজ্ঞেস করা হবে,
وَ ល ِذَ ا ٱل᠔ مَ وْ ءُ ودَ ةُ سُ ئِ ل᠐ تْ ᗷ ِأ᠐ ىِّ ذَ نبٍ قُ تِ ل᠐ تْ .
‘যখন জীবন্তপ্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন্ অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল’ ? (সুরা আততাকবীর : ৮-৯)
এ কারণে নবী করীম (সা.) বলেছেন ঃ যে লোকের কোন কন্যা সন্তান রয়েছে এবং সে তাকে জীবন্তপ্রোথিত
করেনি এবং ঘৃণার চোখেও দেখেনি, তার ওপর নিজের পুত্র সন্তানকে অগ্রাধিকার দেয়নি, তাকে আল্লাহ পাক
জান্নাত দান করবেন। (আবু দাউদ, কিতাবুল আদব)
আল-কুরআন কন্যাকেও পুরুষ-এর মতই স¤পদের অংশীদার করে দিয়েছে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে ঃ
يُ وصِ ᘭᜓ᠑ مُ ٱللᡐ هُ فِ يۤ أ᠐ وْ ᢻ َدِ ᛿᠑ مْ لِ لذَّ ك᠐ ر᠒ مِ ثْ لُ حَ ظᡒ ٱلأُ نْ ᙭ َيَ يْ ن᠒ فَ إِ ن ك᠑ نَّ ᙏِسَ ቯءً فَ وْ قَ ٱثْ  َ تَ يْ ن᠒
فَ ل᠐ هُ نَّ ثُ ل᠑ ثَ ا مَ ا تَ رَ كَ وَ ល ِن ᛿᠐ انَ تْ وَ احِ دَ ةً فَ ل᠐ هَ ا ٱلنِّ صْ فُ .
‘আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন : এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান; কিন্তুকেবল
কন্যা সন্তান দু’জন বা ততোধিক হলে তারা পরিত্যক্ত সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি মাত্র একজন
কন্যা হয় তাহলে তার জন্য অর্ধাংশ।’ (সুরা আন-নিসা : ১১)
পিতা জীবিত থাকতে ছেলে সন্তানের বালিগ হওয়া পর্যন্তলালন-পালন করা যেমন কর্তব্য, মেয়ের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত
তার জন্যও পিতার অনুরূপ কর্তব্য রয়েছে। উপরন্তুছেলে বড় হলে পিতা তাকে উপার্জনের জন্য বাধ্য করতে
পারে, কিন্তু কন্যা সন্তানকে তা পারে না।
(খ) স্ত্রীরূপে নারী ঃ ইসলাম ধর্মে নারীকে স্ত্রীরূপে, স্বামীরগৃহ রাজ্যের সম্রাজ্ঞীরূপে, স্বামীর সহধর্মিনী ও
অর্ধাঙ্গিনীরূপে ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ ل᠐ هُ نَّ مِ ثْ لُ ٱلᡐ ذِ ى عَ ل᠐ يْ هِ نَّ ᗷ ِٱل᠔ مَ عْ رُ وفِ .
‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে যেমন স্বামীদের রয়েছে তাদের উপর।’ (সুরা আল-বাকারা : ২২৮)
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
পৃষ্ঠা- ৪৩
অর্থাৎ স্ত্রী ও স্বামী উভয়েই আল্লাহর নিকট সমান। তাদের অধিকারও অভিন্ন এবং দু’য়ের মাঝে এ ক্ষেত্রে কোনই
পার্থক্য করা যেতে পারে না। মৌল অধিকারের দিক দিয়ে কেউ কম নয়, কেউ বেশী নয়।
নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে ইসলাম নারীকে মুক্তি দিয়েছে। ইসলাম তীব্র ভাষায় এর প্রতিবাদ করে বলেছে ঃ
وَ ᢻ َتَ عْ ضُ ل᠑ وهُ نَّ ُلِ تَ ذْ هَ بُ وا᠔ بِ ᘘ َعْ ض᠒ مَ ቯ آتَ ᚏ ْتُ مُ وهُ نَّ .
‘তোমরা স্ত্রীদের বেঁধে আটকে রাখবে না এ উদ্দেশ্যে যে, তাদের নিকট থেকে তোমাদের দেয়া ধন-সম্পদের কিছু
অংশ কেড়ে নেবে।’ (সুরা আন-নিসা : ১৯)
মহান আল্লাহ স্ত্রীকে পুরুষের ভূষণ বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহতা‘আলা বলেছেন-
هُ نَّ لِ ᘘ َاسٌ لᡐ ᠑ᝣ مْ وَ أ᠐ نْ تُ مْ لِ ᘘ َاسٌ لᡐ هُ نَّ .
‘তারা তোমাদের ভূষণ আর তোমরা তাদের ভূষণ।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৮৭)
মহানবী (সা.) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে ঘোষণা করেছেন -
فاتقوا الله فى ال ساء فانᜓم اخذ تموهن ᗷامان الله واستحللتم.
‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ
আল্লাহর নামে এবং এভাবে তাদের হালাল মনে করেই তোমরা তাদের উপভোগ করছ।’ (মুসলিম)
বস্তুত এভাবে নারীকে স্ত্রীরূপে সুউচ্চ মর্যাদা দান করেছে ইসলাম, যার নজীর কোথাও নেই।
মাতা রূপে
ইসলামে মা হিসেবে নারীকে যে উঁচু মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হয়েছে, দুনিয়ার অপর কোন সম্মানের সাথেই তার
তুলনা হতে পারে না।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ ٱعْ ᘘ ُدُ وا᠔ ٱللᡐ هَ وَ ᢻ َᘻ ُشْ ر᠒ك᠑ وا᠔ ᗷ ِهِ شَ ᚏ ْئا᠍ وَ ᗖ ِٱل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ إِ حْ سَ انا᠍ .
‘আর তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুশরীক করো না, আর মাতা-পিতার সাথে
সদাচরণ করবে।’ (সুরা আন-নিসা : ৩৬)
নবী করীম (সা.) ঘোষণা করেছেন-
الجنة تحت اقدام الامهات.
‘মায়েদের পদতলে সন্তানের বেহেশত’।
অর্থাৎ মাকে যথাযথ সম্মান দিলে, তাঁর উপযুক্ত খিদমত করলে, তাঁর হক আদায় করলে, সন্তান জান্নাত লাভ
করতে পারে। অন্য কথায়, সন্তানের জান্নাত লাভ মায়ের খিদমতের ওপর নির্ভরশীল। মায়ের খিদমত না করলে,
মা’র সাথে কোনরূপ খারাপ ব্যবহার করলে, মাকে কষ্ট ও দুঃখ দিলে, সন্তান যত ইবাদত-বন্দেগী আর নেক
কাজই করুক না কেন, তার পক্ষে জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না।
সারকথা
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীও পুরুষের মতো একই জীবন সত্তা হতে সৃষ্ট, একই বংশ থেকে উদ্ভ‚ত অর্থাৎ পৃথিবীর
সকল নারী-পুরুষ একই আদমের সন্তান। মৌলিকতার দিক দিয়ে ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করে
না। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ মর্যাদার পাত্র আর নারীরা অবহেলিত, এমনটি নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নারীরা পুরুষ
থেকে বেশী মর্যাদাবান ও সম্মানিত। তা সত্তে¡ও পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে নারীদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হচেছ
না। সমস্তপ্রাচীন ধর্ম ও আইনে নারীকে, স্বামী ও অভিভাবকের চিরন্তন অধীন করে দেওয়া হয়েছে। সর্বত্রই
নারীরা পুরুষের দাসী ও বিলাসিতার সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মে নারীর কোন মর্যাদা ও
অধিকার স্বীকৃত ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীকেও চিতায় জীবন্তজ্বালানো হত। বৌদ্ধ ধর্মে নারীকে সকল
পাপের মূল হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। তাদের ধর্ম-কর্ম করার কোন অধিকার ছিল না। ইয়াহুদী ধর্মে নারীকে
পুরুষের প্রতারক বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের ভাষায় মেয়েদের গুণের চাইতে পুরুষের দোষ ভাল বলে
স্বীকৃত ছিল। খ্রিস্টান ধর্মে নারীকে নরকের দ্বার ও মানুষের দুঃখ কষ্টের কারণ হিসেবে গণ্য করা হত। প্রাচীন
আরবে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াকে অপমান মনে করা হত। সে সমাজে কন্যা সন্তানকে জীবন্তকবর দেওয়া হত।
আধুনিক সভ্যতায় নারীদের মান-সম্ভ্রম কোন কিছুই রক্ষিত নয়। তারা আজ সভ্যতার নামে অবাধ যৌনাচারের
যুপকাষ্ঠে বলি দিচেছ প্রতিনিয়ত নিজেদের মান-সম্মান, নৈতিকতা ও মর্যাদাকে। ইসলাম নারী জাতিকে যে
মর্যাদার আসনে বসিয়েছে তা একবার ভেবে দেখা দরকার। বর্তমানে নারী ঘটিত যে অপরাধ সমাজে বিস্তার লাভ
করছে ইসলামী অনুশাসনই তা থেকে নারী জাতিকে মুক্তি দিতে পারে। ইসলাম নারীদেরকে শালীনতার ভেতরে
থেকে সকল বৈষয়িক কাজ-কর্ম করার অনুমতি দিয়েছে। সবশেষে একথা বলা যায় যে, ইসলাম নারীদেরকে
মর্যাদার রাজ সিংহাসনে বসিয়েছে।
আজকের বিশ্ব সমাজ ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা ও অধিকারকে উপেক্ষা করে নারী মুক্তির সস্তা শ্লোগান তুলছে। অথচ
তারা নিগৃহীত নির্যাতিত হচ্ছে সর্বত্র। সুতরাং নৈতিক, আত্মিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক তথা জীবনের সামগ্রিক
ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যেই তাঁকে খুঁজতে হবে সত্যিকারের মুক্তির আবেহায়াত।
১. নারী-পুরুষের স¤পর্ক কি?
ক. দুই’টি ভিন্ন জীব খ. মানবতার একক ও অবিভাজ্য সত্তা
গ. পুরুষ উৎকৃষ্ট আর নারীরা নিকৃষ্ট ঘ. কোন উত্তরই সঠিক নয়।
২. নারীরা মৃত্যু, নরক, বিষ, আগুন থেকে খারাপ-এটি কোন ধর্মে স্বীকৃতক. বৌদ্ধ ধর্মে খ. খ্রিস্ট ধর্মে
গ. ইয়াহূদী ধর্মে ঘ. হিন্দু ধর্মে।
৩. বৌদ্ধ ধর্মে নারীর স্থান ছিলক. উচচ মর্যাদায় আসীন খ. অবহেলিত
গ. অধিকার বঞ্চিত ঘ. খ ও গ নং উত্তর সঠিক।
৪. কোন ধর্ম নারীর স্বাভাবিক সুকুমার বৃত্তি ও গুণাবলির বিকাশ লালন করে?
ক. বৌদ্ধ ধর্ম খ. পারসিক ধর্ম
গ. ইসলাম ধর্ম ঘ. কোন ধর্মই নয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. “মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান”-ব্যাখ্যা করুন।
২. হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা উল্লেখ করুন।
৩. আধুনিক সভ্যতায় নারীর অবস্থান নির্ণয় করুন।
৪. নারীর মৌলিক অধিকারের সমতার বিধান আল-কুরআনের আলোকে উল্লেখ করুন।
৫. নারীর তামাদ্দুনিক মর্যাদা স¤পর্কে আলোচনা করুন।
৬. সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর অধিকার স¤পর্কে বর্ণনা দিন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের বিবরণ দিন।
২. ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার স¤পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]