পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করুন।

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য স¤পর্কে আলোচনা করতে পারবেন।
মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব ও স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ
করেছেন। আর তাকে দিয়েছেন সুন্দরতম আকার-আকৃতি। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সর্বোত্তম পন্থায় জীবন
যাপনের পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে দান করেছেন পিতা-মাতা, স্ত্রী, স্বামী, সন্তান-সন্ততি এবং
অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন। সকলে মিলে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার জন্য তিনি তাদের দান করেছেন হাজারো
নিয়ামত, বিশেষ করে সন্তান-সন্ততি। পিতা-মাতার জন্য সন্তান-সন্ততি যেমন বড় নিয়ামত তেমনি সন্তানের জন্য
মাতা-পিতাও উত্তম নিয়ামত। তাই মুসলিম পরিবারে মাতা-পিতা ও সন্তানের সম্পর্ক হবে সুমধুর। আর এই মধুর
সম্পর্ক যথার্থভাবে বজায় রাখার জন্য সন্তানের প্রতি মাতাপিতার দায়িত্ব বা ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রত্যেক
মাতা-পিতাকে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে সন্তান তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত স্বরূপ। এ আমানত
যথার্থভাবে রক্ষা করার মাধ্যমেই মাতা-পিতা ও সন্তানের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। মাতা-পিতা ও সন্তানের মধ্যে
সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সন্তানকে যেমন মাতা-পিতার অকৃত্রিম ভালবাসা ও আদর-যতœ দিয়ে বড় করে তোলা
প্রয়োজন তেমনি মা-বাবার প্রতি সন্তানেরও সুস্পর্ক বজায় রাখা অবশ্য কর্তব্য। পিতা-মাতা ও সন্তানর স¤পর্ক
মানে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার করণীয় কি তা বুঝায়। নি¤েœ
তাদের দায়িত্ব ও স¤পর্ক স¤পর্কে আলোকপাত করা হল।
সন্তানের সাথে পিতা-মাতার সম্পর্ক
মায়ের উদরে সন্তানের আবির্ভাব হওয়ার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রী তাদের ভবিষ্যত সন্তান লাভের আশায় মাতৃগর্ভে
সন্তান যাতে সুস্থ থাকে সে ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করেন। সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হলে তার ডান কানে আযান ও বাম
কানে ইকামাত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সন্তানের ভাল নাম রাখেন। কথা বলা শিখার সময়ে তাকে প্রথমে কালিমা
তাইয়্যেবা শিক্ষা দেন। লেখাপড়া করার বয়সে তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে ইসলামী জ্ঞান
বিজ্ঞান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেন। মা-বাবা তাদেরকে মিথ্যা কথা বলা, প্রতারণা করা, কাউকে গালি দেওয়া ইত্যাদি
অসৎ আচরণ করা থেকে বিরত রাখেন। মা-বাবা সন্তানের সামনে রাগ করা, মিথ্যা বলা, গালি দেওয়া, প্রতারণা
করা প্রভৃতি কাজ থেকে বিরত থাকেন। তা ছাড়া সন্তানকে উত্তমরূপে লালন-পালন করে আদর-যতœ দিয়ে বড়
করে তুলেন, ফলে সন্তানও মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়; মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়া, কর্কশ আচার-আচরণ করা,
গালি-গালাজ করা প্রভৃতি খারাপ আচরণ থেকে বিরত থেকে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করার চেষ্টা করে। সন্তানসন্ততি হল কাঁদা মাটির ন্যায়। কাঁদা মাটিকে যেভাবে ইচ্ছা একজন মানুষ সেভাবেই তাকে আকৃতি দিতে পারে।
সন্তানকেও যেভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে তাকে যেভাবে লালন-পালন করবে সন্তানও ঠিক তেমনি আচারআচরণ মা-বাবার সাথে করবে।
সন্তানের ভাল নাম না রাখা, কুরআন ও ইসলামের শিক্ষা দান না করা এবং পূর্ণ বয়সের সময় তার বিবাহের ব্যবস্থা
না করা পিতা-মাতার জন্যে অপরাধের মধ্যে গণ্য। এসব কাজ না করলে পিতা-মাতার পারিবারিক দায়িত্ব পালিত
হতে পারে না। ফলে সন্তানরাও পিতা-মাতার সাথে সু¤পর্ক বজায় রাখে না। এ সম্পর্কে একটি উদাহরণ প্রদান
করা হলÑ একবার এক ব্যক্তি হযরত উমর ফারুক (র)-এর কাছে একটি ছেলেকে নিয়ে হাযির হয়ে বললÑ হুজুর
এ আমার ছেলে। কিন্তু সে আমার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তখন হযরত উমর (রা) ছেলেটিকে বললেনÑ
তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না ? পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বড় গুনাহের কাজ; তা কি জান না?
সন্তানের উপর পিতা-মাতার যে অনেক হক্ব আছে তা তুমি কিভাবে অস্বীকার করতে পার? ছেলেটি তখন বললÑ
আমীরুল মুমিনীন! পিতা-মাতার উপরও কি সন্তানের কোন হক আছে ? হযরত উমর বললেনÑ অবশ্যই। তখন
ছেলেটি বললÑ আল্লাহর শপথ, আমার এ পিতা আমার এ হক্বগুলোর একটিও পালন করেনি। তখন হযরত উমর
(রা) সেই লোকটিকে বললেনÑ তুমি বলছো, তোমার ছেলে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আসলে তুমিই
তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছ। পিতা-মাতা যদি সন্তানের সাথে সুসস্পর্ক বজায় রাখেন তা হলে সন্তানও তাঁদের
সাথে সুসম্পর্ক বজায়ে রাখতে চেষ্টা করবে।
পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক
আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের পরেই পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। পিতা-মাতা
সন্তানকে যেভাবে আদর-যতœ দিয়ে নিজে কষ্ট করে, নিজে না খেয়ে না পড়ে এক কথায় সকল সুখ-শান্তিবিসর্জন
দিয়ে সন্তানের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সন্তানের সাথে
উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখেন, সন্তানের জন্য এটা অপরিহার্য যে তারা তাদের পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা করবে, তাদের
বাসস্থান, আহার, চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনাদি পূরণ করবে। মাতা-পিতার সাথে কটু ও কর্কশ বাক্য বিনিময়
করবে না। পিতা-মাতার বৈধ আদেশ পালন করবে, তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করবে, তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করার
চেষ্টা করবে। এভাবে সন্তান-সন্ততি তাদের পিতা-মাতার সাথে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখবে। পিতা-মাতার সাথে
উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সন্তানের যে সকল কর্তব্য পালন করা অপরিহার্য তা নি¤েœউল্লেখ করা হল।
১. পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার ঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা নফল নামায, সাদাকা, উমরা এবং
আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়েও উত্তম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
ᢻ َتَ عْ ᘘ ُدُ ونَ إِ ᢻَّ ٱللᡐ هَ وَ ᗖ ِٱل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ إِ حْ سَ انا᠍ .
“আল্লাহ ছাড়া অপর কারো দাসত্ব করোনা এবং পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে।” (সূরা আল-বাকারা :৮৩)
২. বার্ধক্যে পিতা-মাতার সেবাযতœ করা ঃ পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের বিশেষভাবে সেবা যতœ
করা প্রয়োজন। তাঁদের সাথে রাগ করে কথা বলা, তাঁদের আচার-আচরণে বিরক্ত হওয়া কোন মতেই উচিত নয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন 
إِ مَّ ا يَ ᘘ ْل᠑ غَ نَّ عِ ندَ كَ ٱل᠔ ِ᜻ بَ رَ أ᠐ حَ دُ هُ مَ ا أ᠐ وْ ᛿ِ ᢿ َهُ مَ ا فَ ᢿ َتَ قُ ل لᡐ هُ مَ ቯ أ᠑ فٍّ وَ ᢻ َتَ نْ هَ رْ هُ مَ ا وَ قُ ل
لᡐ هُ مَ ا قَ وْ ᢻ ًك᠐ ᠒ᖁ ᗫما᠍ . وَ ٱخْ فِ ضْ ل᠐ هُ مَ ا جَ نَ احَ ٱلذُّ لِّ مِ نَ ٱلرَّ حْ مَ ةِ وَ قُ ل رَّ بِّ ٱرْ حَ مْ هُ مَ ا
᛿᠐ مَ ا رَ ᗖَّ ᘭ َانِ ى صَ غِ يرا᠍
‘তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তবে তাদের প্রতি উফ্ বলো না এবং
তাদের ধমক দিও না, তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনিমিত
করে দিও এবং বল, হে প্রভু! তাদের উপর রহম কর, যেমন শিশুকালে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’
(সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩-২৪)
তাফসীরকার মুজাহিদ (র.) এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন ঃ পিতা-মাতা তোমার সামনে বার্ধক্যে পৌঁছলে
তাঁদেরকে ময়লার মধ্যে ফেলে রাখবে না এবং যখন তাঁদের পায়খানা পেশাব পরিষ্কার করবে। কখনো তাদের
প্রতি কোনরূপ ক্ষোভ দেখাবে নাÑ অপমানকর কথা বলবে নাÑ যেমন করে তারা তোমার শৈশবকালে তোমার
পেশাব-পায়খানা পরিষ্কার করতÑ ঠিক তেমনি দরদ দিয়ে তোমরা তাদের সেবা করবে।”
৩. পিতা-মাতার ভরণপোষণ করা ঃ পিতা-মাতা দরিদ্র বা অসহায় হলে তাঁদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন
করতে হবে। বিশেষ করে বৃদ্ধাবস্থায় তাদের পূর্ণদায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনÑ قُ لْ مَ ቯ أ᠐ نْ فَ قْ تُ مْ مِّ نْ خَ يْ ر᠏ فَ لِ ل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ وَ ٱلأَ قْ ᖁ َᗖ ِينَ .
‘বলুন, তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, তা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় করবে।’ (সূরা আলবাকারা : ২১৫)
কুরআন ও হাদীসে যেভাবে মাতা-পিতার খিদমত, আনুগত্য এবং সুন্দর আচরণের গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে,
তেমনি মাতা-পিতার উপর খরচ না করে ধন-সম্পদ বাঁচানো সঠিক নয় বলেও তাকিদ দেওয়া হয়েছে। বরং
সর্বপ্রথম তাদের জন্য খরচ করতে হবে। যদি খিদমত ঠিকই করে কিন্তু অর্থ খরচ করতে কুণ্ঠাবোধ করে তাও
ঠিক নয়। যেভাবে সন্তানের উপর তাদের অধিকার আছে, তেমনি সন্তানের সম্পদের উপরও তাদের অধিকার
রয়েছে।
৪. সেবা-যতœ ঃ পিতা-মাতার অসুখ-বিসুখ হলে যতœ সহকারে সেবা-শুশ্রƒষা করা প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ (স)
বলেছেন ঃ
من سرە ان ᘌمد له فى عمرە و يزاد له فى رزقه فليبر والدᘌه ولᘭصل رحمه.
‘যদি কোন ব্যক্তি নিজের আয়ুবাড়াতে এবং জীবিকার প্রশস্ততা চায় তাহলে সে যেন নিজের পিতা-মাতার সাথে
সদাচরণ করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।’ (আহমদ)
মাতা-পিতার সেবা যতœ ও খিদমতের বিনিময়ে দীর্ঘ জীবন লাভ এবং সচ্ছলতা আল্লাহর এক বিরাট নিয়ামত।
মানুষ যাতে আরও কিছু ভালো কাজ করে নেকী বৃদ্ধি এবং মাতাপিতার খিদমত করে আল্লাহর রহমতের হকদার
হয়, তারই সুযোগ এ দুনিয়ায় করে দেওয়া হয়েছে।
৫. পিতা-মাতার আহŸানে সাড়াদান ঃ পিতা-মাতা ডাক দেওয়া মাত্র সাড়া দিতে হবে। সকলের আগে তাঁদের
কথা পালন করতে হবে। তাঁদের আহবানে বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। খুশী মনে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সেবার
মনোভাব নিয়ে ডাকে সাড়া দেবে।
৬. কর্কশ ভাষায় কথা না বলা ঃ তাঁদের সামনে অশালীন-অমর্যাদাকর ও বেফাঁস কথা-বার্তা বলা উচিত নয়।
পিতা-মাতার সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা, তাদেরকে গালমন্দ করা, অভিসম্পাত করা তা নিজে করুক বা
নিজের কারণে অপর কোন মানুষ দ্বারা করাক তা সবই হারাম বা কবীরাহ গুনাহ। হাদীসে এসেছে ঃ
ᛒسب اᗷا الرجلفᛳسب اᗷاە و ᛒسب امه فᛳسب امه .
‘কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির পিতাকে গালি দিলে সে যেন নিজের পিতাকেই গালি দিল। এমনিভাবে যদি কেউ
অপর ব্যক্তির মাকে গালাগাল করে তবে সে ব্যক্তি যেন এ প্রথম ব্যক্তির মাকেই গালি দেয়।’ (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক হাদীসে আছেÑ
ان من اᜧبر ال᜻ᘘائر ان ᘌلعن الرجل والدᘌه.
‘কারো নিজের বাপ-মায়ের ওপর অভিসম্পাত করা সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ।’ (বুখারী ও মুসলিম)
৭. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ঃ আল্লাহর পরে সন্তানের উপর সবচেয়ে বড় অধিকার হল পিতা-মাতার। তাই ইসলামে
আল্লাহর শোকর গুজারির সাথে সাথে মাতা-পিতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করা
হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ নি¤œরূপ-
و قَ ضَ ىٰ رَ ᗖُّ كَ أ᠐ ᢻَّ تَ عْ ᘘ ُدُ وۤ ا᠔ إِ ᢻَّ إِ ᘌَّ اەُ وَ ᗖ ِٱل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ إِ حْ سَ انا᠍ .
‘আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩)
৮. পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট রাখা ঃ পিতা-মাতা যাতে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারেন সন্তানের সেদিকে
সুদৃষ্টি রাখতে হবে। সন্তানের এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে পিতা-মাতার মনে আঘাত লাগে। কেননা,
হাদীসে আছে ঃ
رضا الله فى رضا الوالد و سخط الله فى سخط الوالد.
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত।’ (তিরমিযী, হাকিম)
মহানবী (স.) আরো বলেন ঃ نـارك و جنتـك همـا ‘মাতা-পিতা তোমার বেহেশত এবং দোযখ স্বরূপ’
অর্থাৎ পিতা-মাতার সেবা-যতœ করলে জান্নাত লাভ করা যাবে আর পিতা-মাতার অবাধ্য হলে জাহান্নামে যেতে
হবে।
বস্তুত কোন ব্যক্তি পিতা-মাতা থেকে মুখাপেক্ষিহীন হতে পারে না। সামাজিক জীবনে তাঁদের গুরুত্ব ছাড়াও
পরকালীন জীবনের মুক্তি ও সাফল্যের দিক থেকেও তাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং তাঁদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার
ও আনুগত্য করে এবং তাঁদেরকে সন্তুুষ্ট রেখে সন্তান জান্নাতের পথ সুগম করতে পারে। অপর দিকে তাঁদের
অধিকার পদদলিত করে অসন্তুুষ্টির কারণে জাহান্নামের ইন্ধন হতে পারে।
৯. পিতা-মাতার সেবা-যতœ করা ঃ সন্তানকে সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার খিদমতে নিয়োজিত থাকতে হবে।
সন্তানসুলভ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাদেঁর খিদমত করতে পেরে গৌরব অনুভব করা উচিত আর সাথে সাথে এ
খিদমতের সুযোগ লাভে আল্লাহর শোকর আদায় করা দরকার। মন-প্রাণ দিয়ে তাঁদের খিদমত করতে হবে ও এ
খিদমতকেই নিজের মুক্তির মাধ্যম মনে করতে হবে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই মহানবী (স.) বলেনرجلها عند الجنة فان ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।’ (নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য থেকে বুঝা যায়, সচ্ছল অবস্থায় সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে গরীব পিতামাতাকে আর্থিক
সাহায্য দান। আল্লামা শাওকানী বর্ণনা করেছেন ঃ ‘দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তপিতামাতার জন্য অর্থ ব্যয় করা
সচ্ছলাবস্থার সন্তানদের জন্য ওয়াজিব- এ সম্পর্কে শরী‘আতবিদদের ইজমা হয়েছে।’ (নাইলুল আওতার)
১০. ক্ষমা প্রার্থনা ও দু‘আ করা ঃ মাতা-পিতাকে অসহায় ও দুর্বল বয়সে এবং মৃত্যুর পরে নিজের শৈশবের কথা
স্মরণ করে ভালবাসা ও রহমতের আবেগে বারবার আল্লাহর দরবারে তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দু‘আ করতে
হবে এই বলে-
رَّ بِّ ٱرْ حَ مْ هُ مَ ا ᛿᠐ مَ ا رَ ᗖَّ ᘭ َانِ ى صَ غِ يرا᠍ .
‘হে আমার প্রভু! তাদের উপর রহম কর, যেমন শিশুকালে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিল।’ (সূরা বনী
ইসরাঈল : ২৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও শিখিয়ে দিয়েছেন ঃ
رَ ᗖَّ نَ ا ٱغْ فِ رْ لِ ى وَ لِ وَ الِ دَ ىَّ وَ لِ ل᠔ مُ ؤْ مِ نِ ينَ يَ وْ مَ ᘌ َقُ ومُ ٱل᠔ حِ سَ ابُ .
‘হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাকে ও আমার পিতামাতাকে এবং বিশ্বাসী নর-নারীকে হিসাব-নিকাশের দিন ক্ষমা
করে দিও।’ (সূরা ইবরাহীম : ৪১)
১১. ওয়াদা, ওসিয়ত ও ঋণ আদায় করা ঃ মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের দাফন-কাফনের পর তাঁদের
ওয়াদা-অসিয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করা সন্তানের কর্তব্য। হাদীসে আছে হযরত আবু উসাইদ (রা.)
বলেন- আমরা নবী (স.) এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! মাতাপিতার মৃত্যুর পরও কি এমন পদ্ধতি সম্ভব যে, আমি তাদের সাথে সুন্দর আচরণ অব্যাহত রাখতে পারি। মহানবী
(সা) বললেন- জী হ্যাঁ, চারটি পদ্ধতি রয়েছে ঃ মাতা-পিতার জন্য দো’আ ইসতিগফার, তাদের কৃত ওয়াদাসমূহ
এবং বৈধ ওসিয়াত পূরণ, পিতার বন্ধু-বান্ধব এবং মাতার বান্ধবীদের ইজ্জত ও সম্মান করা এবং তাদের সাথে
আতœীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও সুন্দর আচরণ করা যারা মাতাপিতার দিক থেকে তোমাদের আতœীয় হোন।”
(আদাবুল মুফরাদ)
১২. পিতা-মাতার আতœীয় ও বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার ঃ পিতা-মাতার অবর্তমানে পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব
ও আতœীয়-স্বজনের সাথে সুন্দর ব্যবহার করাও সন্তানদের কর্তব্য। কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে পিতামাতার সাথে
তো বটেই! তাঁদের বন্ধু-বান্ধব ও আতœীয় স্বজনের সাথেও ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ রয়েছে। বলা হয়েছে-
ان ابر البر ان ᘌصل الرجل ود ابᘭه.
‘পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে সদাচরণ করা অধিক নেকের কাজ।’ (সহীহ মুসলিম)
অপর এক হাদীসে আছে ঃ
اᜧرام صدᘌقهصا.
‘পিতামাতার বন্ধুদের সম্মান করাও উত্তম কাজ।’ (আবু দাউদ)
পরম করুণাময় আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তানের জন্য সেরা উপহার হলো পিতা-মাতা। পিতা-মাতা, সন্তানের
বেহেশত-দোযখ। তাই আল্লাহর পরেই তাঁদের স্থান। সুতরাং ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় পিতা-মাতার খিদমত,
সম্মান, মহব্বত করা এবং তাঁদের সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসার সাথে সাথে ইহ-পরকালীন
সৌভাগ্য হাসিল করা প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য।
সারকথা
সন্তানের কছে পিতা-মাতা যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট নিয়ামত পিতা-মাতার কাছে সন্তান ও আল্লাহর পক্ষ
থেকে এক বিরাট নিয়ামত। আল্লাহ তা‘আলার এ নিয়ামতকে ধরাপৃষ্ঠে সমুন্নত রাখার জন্য একে অপরের প্রতি
অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য কেউ অস্বীকার করতে পারে না। পিতা-মাতা তার ছোট্ট
শিশুটিকে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেমন ¯েœহ, মায়া-মমতা দিয়ে আন্তরিকতার সাথে লালন-পালন করেন
তেমনি সন্তানকে পিতা-মাতার প্রতি দয়াশীল হতে হবে। তাঁদের বৃদ্ধাবস্থায় সেবা-যতœ দ্বারা তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে
হবে। তাঁদের মনে কোন কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাঁদের জন্য চিকিৎসা, বাসস্থান ও জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা
সন্তানকে করতে হবে। পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন। পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা যাবে না।
পিতা-মাতার অবর্তমানে তাদের বন্ধুবান্ধবদের সেবা-যতœ করা ইসলামের বিধান। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের জন্য দু‘আ করা ইসলামের নির্দেশ।
বহু নৈর্বাচনিক প্রশ্ন
১. আশরাফুল মাখলুকাত শব্দের অর্থ হলক. প্রতিনিধি
খ. সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ
গ. উত্তম জীবন
ঘ. উত্তর কোনটিই ঠিক নয়।
২. আমিরুল মুমেনীন কার উপাধি ছিল?
ক. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর
খ. হযরত জিব্রাঈল (আ.) -এর
গ. হযরত উমর (রা)-এর
ঘ. হযরত ইমাম আবু হানীফা (র)-এর।
৩. ‘‘আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতের পরই মাতা-পিতার দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে’’ -এটি কার নির্দেশ?
ক. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা).-এর
খ. আল্লাহ তা‘আলার
গ. খুলাফায়ে রাশেদীনের
ঘ. হযরত আলী (রা)-এর।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. সন্তানের সাথে পিতা-মাতার স¤পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২. কোন কোন কাজ না করা পিতা-মাতার জন্য অপরাধের শামিল-উদাহরণসহ লিখুন।
৩. বার্ধক্যে পিতা-মাতার সেবা-যতœ স¤পর্কে ইসলামের বিধান সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৪. পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ স¤পর্কে ইসলামের বিধান কি লিখুন।
৫. পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত? বর্ণনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]