ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা কুরআন-হাদীসের আলোকে গৃহ-পরিচারক ও পরিচারিকার সাথে গৃহ-কর্তার আচরণ স¤পর্কে একটি প্রবন্ধ

পৃথিবীতে কোন মানুষ তার সকল কাজ একা স¤পন্ন করতে পারে না, বিশেষত এই জটিল শিল্পায়নের যুগে জীবন
ধারণের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। বিভিন্ন স্তরে এক ব্যক্তির অধীনে একাধিক
ব্যক্তিবর্গ কাজকর্ম আঞ্জাম দিয়ে থাকে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সকল দায়িত্বশীল ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতি
নির্দেশ রয়েছে যেন প্রত্যেকে নিজ নিজ অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং তাদের উপর কোন প্রকার জুলুমঅত্যাচার না করে।
ইসলামী জীবন বিধানে মর্যাদার পার্থক্য হয় কেবল মাত্র তাকওয়ার ভিত্তিতে। তাই উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা নি¤œ
পদস্থদের প্রতি কোন প্রকার জুলুম ও বেইনসাফী করতে পারবে না।
আজকের সমাজে ক্রীতদাস প্রথা নেই সত্য, তবে অধীনস্থদের সাথে আজ মনিবরা কৃতদাসের মতোই আচরণ
করছে। তাই নবী করীম (স.)-এর নির্দেশ এ যুগের সকল প্রকার শ্রমিক ও অধীনস্থদের বেলায়ও একইভাবে
প্রযোজ্য হবে।
ইসলাম গৃহপরিচারক ও গৃহকর্তার মধ্যে সুস্পর্ক বজায় রাখার জন্যে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছে। শহরে বন্দরে
প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দু’একজন গৃহপরিচারক বা গৃহপরিচারিকা রয়েছে। ইসলামী পরিবারের উপর এক বিরাট
দায়িত্ব হচ্ছে এদের প্রতি সদাচার ও সুবিচার করা। এদেরকে মুসলমান হিসেবে দীনী ভাই ও বোন মনে করা।
এদের প্রতি যতœবান হওয়া, দয়া প্রদর্শন করা, এদের কাজ-কর্মের ভুল-ত্রæটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা ইসলামী
পরিবারের ধর্মীয় দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
(স.) বলেন 
هم اخوانᜓم جعلهم الله تحت اᘌدᘌᜓم فمن جعل الله اخاە تحت ᘌدᘌه
فلᘭطعمه مما ᘌأᝏل و لᘭلᛞسه مما ᘌلᛞس ولا ᘌᜓلفه من العمل ما ᘌغلᘘه فان ᛿لفه
ما ᘌغلᘘه فلᘭعن علᘭه .
‘তোমাদের চাকর-চাকরাণী ও দাস-দাসীরা তোমাদেরই ভাই ও বোন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের
অধীনস্থকরেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যার ভাই বা বোনকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছেন, সে যেন তাদের
তা-ই খেতে দেয়, যা সে নিজে খায়, তাদেরকে তা-ই পরিধান করায়, যা সে নিজে পরিধান করে। আর তার
সাধ্যের বাইরে কোন কাজ যেন তার উপর চাপিয়ে না দেয়। একান্তযদি চাপিয়ে দেয়া হয় তখন যেন তাকে
সাহায্য করো।’ (বুখারী ও মুসলিম)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর খাদেম হযরত আনাস (রা.)-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘আমি দীর্ঘ
দশ বছর রাসূলুল্লাহ (স.)-এর খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনো ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্তবলেননি এবং
কোন দিন বলেননি, এটা করো নি কেন ? ওটা করোনি কেন ? আমার বহু কাজ তিনি নিজে করে দিতেন।’ (মিশকাত)
হযরত উমর (রা.) জেরুজালেম সফরে নিজের ও ভৃত্যের মধ্যে পালাক্রম ঠিক করে উটে চড়া এবং উট টেনে
নেয়ার ব্যাপারে সাম্য ও মানবতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর নযীর ইতিহাসে বিরল।
একজন ভৃত্যকে দৈনিক কয়বার ক্ষমা করা যেতে পারে ? এ প্রশ্নের জবাবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ঘোষণা
করেছিলেন ঃ مرة عينᘘس يوم ل ᛿فى ‘প্রত্যহ সত্তর বার।’
মহানবী (স.) আরো বলেন, ‘যখন তোমাদের চাকর-চাকরাণী তোমাদের জন্য খাবার তৈরী করে সামনে হাযির
করে, তখন তাকে নিজেদের সাথে বসিয়ে খাবার খাওয়াবে। কেননা, সে ধোঁয়া ও তাপ সহ্য করে খাবার তৈরি
করেছে। আর কোন খাবার যদি পরিমাণে কম হয় তবে অন্তত কিছুটা তার হাতে তুলে দেবে।’ (সহীহ মুসলিম)
চাকর-চাকরানী- গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা
গৃহ মালিক বা যে কোন মালিকের অধীনস্থ চাকর-চাকরানী বিবাহের ব্যবস্থা করা ইসলামের বিধান।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছেÑ
وَ أ᠐ نْ ᜻ِ حُ وا᠔ ٱلأَ ᘌ َامَ ىٰ مِ نْ ᠑ᝣ مْ وَ ٱلصَّ الِ حِ ينَ مِ نْ عِ ᘘ َادِ ᛿᠑ مْ وَ ល ِمائِᜓ᠑ مْ .
‘আর তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সচ্চরিত্রবান তোমরা তাদের
বিবাহ সম্পাদন করে দাও।’ (সূরা আন-নূর : ৩২)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেনÑ
وَ ᢻ َتُ ᜻᠔ ر᠒ هُ وا᠔ فَ تَ ᘭ َاتِ ᜓ᠑ مْ عَ ل᠐ ى ٱل᠔ ᘘ ِغَ ቯءِ إِ نْ أ᠐ رَ دْ نَ تَ حَ صُّ نا᠍ لᡒ تَ ᙫ ْتَ غُ وا᠔ عَ رَ ضَ ٱل᠔ حَ ᘭ َاةِ ٱلدُّ نْ ᘭ َا.
‘তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদের ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো
না’। (সূরা আন-নূর : ৩৩)
উপরে বর্ণিত কুরআন-হাদীসের আলোচনা হতে গৃহপরিচারক ও গৃহ পরিচারিকাদের সম্পর্কে নি¤েœাক্ত বিষয়ে
সুস্পষ্ট নির্দেশনা লাভ করা যায়।
১. চাকর-চাকরাণী বা গৃহপরিচারক-পরিচারিকাদেরকে ভাই-বোনের মর্যাদা দিতে হবে। তাদের সাথে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভরে আচার-আচরণ করা যাবে না। গৃহপরিচারক-পরিচারিকা হিসেবে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা
যাবেনা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতোই তাদেরকে সুন্দর নামে ডাকতে হবে। কথায়-কথায় গালি দেওয়া,
চোখ রাঙ্গানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. পরিবারের সদস্যরা যা খাবেন তাদেরও তা-ই খেতে দিতে হবে। নিজেদেরকে উচ্চ বংশীয় মনে করে উত্তম
খাবার-দাবার পরিবেশন ও গৃহপরিচারক-গৃহপরিচারিকাদের জন্য নামে মাত্র নি¤œশ্রেণীর খাবার পরিবেশন করা
ইসলামের বিধান নয়। যখন যা খাবার তৈরী হবে পরিবারের সদস্য হিসেবে তাদেরকেও তা খেতে দিতে হবে।
চাকর-চাকরাণীরা কষ্ট করে উত্তম খাবার রান্না করে দেবে আর গৃহকর্তা তার পরিবার-পরিজনসহ সব খেয়ে
ফেলবে এটা সঠিক নয়। ইসলাম সকল মানুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখে এবং মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য করে না।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার জন্যে গৃহপরিচারক ও পরিচারিকাকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে, কোন
ভেদাভেদ করা যাবে না।
৩. পরিবারের সদস্যদের ন্যায় তাদেরকেও একই ধরণের পোষাক-পরিচ্ছদ দিতে হবে। গৃহ পরিচারক ও
পরিচারিকা হওয়ার কারণে সে জীর্ণ-শীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করবে আর গৃহকর্তার ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন
দামী ও উত্তম জামা-কাপড় ব্যাবহার করবে ইসলাম এ ধরনের পার্থক্য করার অনুমতি প্রদান করে না। ইসলামের
বিধান হল গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকা গরীব হওয়ার কারণেই বিত্তবানদের ঘরে কাজ করে। তাই, তাদের
পোশাক -আশাকে চাকর-চাকরাণীর ছাপ থাকবে তা হতে পারে না। তাদেরও ইচ্ছা হয় ভাল পোষাক পড়তে,
ভাল সাজ- গোঁজ করবে। তাই, তাদেরকে ভাল জামা-কাপড় ক্রয় করে দিয়ে ইসলামের বিধান পালন করা
প্রতিটি গৃহকর্তার জন্য অপরিহার্য।
৪. গৃহপরিচারক ও পরিচারিকার উপর তার শক্তি-সামর্থের বাইরে কোন কাজ চাপিয়ে দেওয়া যাবেনা। একান্তযদি
অসাধ্য কোন কাজ তাকে করতে হয় তবে সে কাজে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। তাদের মাধ্যমে
কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে
কাজ-কর্ম করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। তারা শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে তাদের বিশ্রাম ও চিকিৎসার
ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ শরীর নিয়ে বিনা চিকিৎসায় তাদেরকে কাজের মধ্যে ঠেলে দেওয়া যাবে না। চাকরচাকরাণীরা যদি রমজান মাসের রোযা রাখার কারণে ও তারাবিহর সালাত আদায়ের জন্য শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে
পড়ে তবে তাদের উপর কঠোর হওয়া উচিত নয়। কোন গৃহপরিচারক ও পরিচারিকা যদি কাজের সময়ে সালাত
আদায় করতে চায় তবে তাকে সালাত আদায়ের অনুমতি ও সুযোগ দিতে হবে। দুই ঈদের দিনে ও অন্যান্য
আনন্দ উৎসবের দিনে তাদেরকে কাজ-কর্ম করার জন্য বাধ্য করা যাবে না। তাছাড়াও সে তার অসুস্থ পিতামাতাকে দেখতে যেতে চাইলে তার উপর কঠোরতা অবলম্বন করা যাবে না।
৫. গৃহপরিচারক ও পরিচারিকাকে সাথে নিয়ে একত্রে বসে তাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করা ইসলামী মূল্যবোধের
অংশ। তাতে মানুষে মানুষে পার্থক্য কমে আসে এবং চাকর ও মনিবের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় না। একত্রে বসে
খাবার গ্রহণ করলে উভয়ের মধ্যে মায়া-মমতার সৃষ্টি হয় এবং মনিব চাকরকে আপন করে নিতে শিখে। মনিবের
মধ্যে আমিত্ববোধ বিনষ্ট হয়ে মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। গৃহপরিচারক ও পরিচারিকার মনে যে
হীনমন্যতা ও নীচুতা বিরাজ করে তা লোপ পায় এবং তারা মনিবের আনুগত্য হতে সচেষ্ট হয় এবং মনিবকে
ভালবাসতে শিখে।
৬. গৃহপরিচারক ও পরিচারিকার কোন কাজ-কর্মে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা ইসলামী মূল্যবোধের
পরিপন্থী কাজ। চাকর-বাকর ও গৃহ পরিচারক-পরিচারিকারা অশিক্ষিত ও মূর্খ-ই বেশী থাকে। তাদের মধ্যে
শিষ্টাচারবোধ কম থাকে। তা ছাড়া তাদের দায়িত্ববোধটাও কম হয়। সে কারণে তাদের দ্বারা অনেক অন্যায়
কাজ-কর্মহয়ে যাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। তাদের সকল আচার-আচরণকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা
প্রতিটি গৃহকর্তার কর্তব্য।
৭. তাদের কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করা, উপযুক্ত বেতনের ব্যবস্থা করা প্রতিটি গৃহকর্তার জন্য আবশ্যক। তারা
রাত-দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও যদি বেতন না পায় তা হলে এটাও নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত। যদি তাদেরকে
মাসিক বেতনে রাখা হয় তবে মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের বেতন দিয়ে দেওয়া ইসলামী শিষ্টাচারের
অন্তর্গত। ঈদের সময় তাদেরকে সুন্দর ও নতুন জামা-জুতা ক্রয় করে দেওয়াসহ সকল ধরনের সুন্দর আচরণের
মাধ্যমে তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখা উচিত। মহানবী (স.) হতে বর্ণিত হয়েছে-
ما عاب رسول الله صلى الله علᘭه و سلم طعاما قط.
‘রাসূলুল্লাহ (স.) কখনো তৈরী খাবারের দোষত্রæটি বের করতেন না।’
৮. গৃহপরিচারক ও পরিচারিকার বয়স হলে বিবাহের ব্যবস্থা করা। কোন গৃহকর্তার বাড়ীতে যদি ছোটকাল থেকে
কোন চাকর বা চাকরাণী কাজ করতে থাকে তা হলে সেই ছেলে বা মেয়েটি যখন বিবাহের উপযুক্ত হয় এবং তার
বিবাহ করার কোন সাধ্য না থাকে তবে গৃহকর্তা এমতাবস্থায় তার বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। চাকরাণী বা
গৃহপরিচারিকাকে বিবাহ দেওয়ার সময় স্বামীর ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাধ্যমত উপঢৌকন দেওয়াও গৃহকর্তার
জন্য আবশ্যক।
৯. গৃহকর্তার বাড়ীতে যে সকল চাকরাণী বা গৃহপরিচারিকা থাকে তাদের সাথে কোন অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক রাখা
যাবে না। এমনকি তাদেরকে বৈষয়িক স্বার্থে পতিতাবৃত্তিতেও নিয়োগ করা যাবে না। এ ধরনের কাজ জঘণ্য
অপরাধের শামিল। যদি কোন ব্যক্তি সমাজে নারীদের বা চাকরাণীদের ব্যভিচার বা বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করে এবং
তার উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করে তবে তা হবে অমানবিক ও অবৈধ। ইসলাম এরূপ পন্থায় অর্থ উপার্জনকে
কঠোরভাবে নিষেধ করেছে এবং সমাজ থেকে ব্যভিচার ও বেশ্যাবৃত্তি কঠোরভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসলাম শুধু চাকর-বাকর, গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকার স্বার্থেই কথা বলেনি। শ্রমিক-মজুরের স্বার্থেও বিধান
করে দিয়েছে। ইসলাম শ্রমিক মজুরকে সম্মানের আসন দিয়েছে। মহানবী (স.) বলেছেনÑ
“শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।”
ইসলাম শ্রমিক-মজুরের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দিয়েছে যা অন্য কোন মতবাদ বা ধর্মে খুঁজে পাওয়া কঠিন। মহানবী
(স.) বলেন “যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য শ্রম দেয় ও দিনমজুরের কাজ করে এবং সে যদি অবিবাহিত হয় এবং
বিবাহ করার ইচ্ছা পোষণ করে কিন্তু সামর্থ না থাকায় বিবাহ হচ্ছে না তবে তাকে তোমরা বিয়ে কর, যার থাকার
ঘর-দরজা নেই তাকে ঘর তৈরী করে দাও।” মহানবী (স.) এ উক্তি শ্রমিক ও মজুরের প্রতি সহনশীল ও উদার
হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে। যা একজন শ্রমিকের লাভ করা প্রয়োজন। একবার হযরত উমর (রা) রাস্তা দিয়ে
যাচ্ছিলেন এমন সময় তিনি দেখতে পান যে এক ব্যক্তি খাচ্ছে আর তার খাদেম পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এ ঘটনা
দেখে হযরত উমর (রা) রাগান্বিত হয়ে তার কাছে গেলেন এবং মালিককে বললেনÑ
“মানুষের কি হয়েছে যে- মালিক তার শ্রমিকের বা খাদেমের উপর নিজকে প্রাধান্য দেয়। অতঃপর হযরত উমর
(রা) খাদেমকে বললেন-মাথা উঠাও এবং তুমি তোমার মালিকের সাথে একত্রে খাবার খাও।”
যদি আমরা অন্তরের বিদ্বেষ এবং নফসের দোষ-ত্রæটি দূর করে মানুষের অন্তর নিংড়ানো ভালবাসা, দয়া, বন্ধুত্ব ও
নৈকট্য লাভ করতে চাই তাহলে আমাদেরকে নবী করীম (সা)-এর মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। তা
ছাড়া সাহাবীগণের কর্মপদ্ধতির অনুসরণ করতে হবে। দরিদ্র, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সাথে হযরত রাসূলুল্লাহ
(স) ও তাঁর পূতঃ পবিত্র সাহাবা কিরাম যে আচরণ করেছেন তার অনুকরণ করতে হবে।
একবার হযরত ‘উমর (রা) হাতেম বিন আবুবুরতাআর চাকরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, যে গোলাম এক ব্যক্তির
উট চুরি করে তা ভক্ষণ করার কথা স্বীকার করেছিল। হযরত উমর (রা) আবদুর রহমান বিন হাতেমকে বললেন
“আল্লাহর শপথ ! তোমরা তাদের দ্বারা কাজ করিয়ে নাও এবং তাদেরকে উপোষ রাখ। যদি তারা আল্লাহ
তা‘আলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তু ভক্ষণ করে তবে তা প্রয়োজনের কারণে তাদের জন্য বৈধ হবে। সুতরাং আমি এ
অপরাধের জন্য তার হাত কর্তন করব না। আর আমি এ কাজ করার পরিবর্তে তোমাদের উপর কঠিন জরিমানা
আরোপ করব। যাও, তুমি ঐ ব্যক্তিকে তার উটের দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করে দাও। এই উটের মূল্য চারশত
দিরহাম ছিল এখন তুমি উটের মালিককে আটশত দিরহাম ক্ষতিপূরণ দিয়ে দাও।”
সারকথা
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামকে শুধু আনুষ্ঠানিক ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়।
ইসলামের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ইসলামের সকল দিক ও সকল ক্ষেত্রে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
তা হলে গরীব, দুঃখী, কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে, নাবিক, গাড়ী চালক, দিন মজুর, চাকর-চাকরাণী,
গৃহভৃত্য ও গৃহপরিচারিকা প্রত্যেকেই ইসলামের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলামী মূল্যবোধ অনুসারে জীবন যাপন
করতে অভ্যস্তহবে। ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উদারতার
মাধ্যমে। তাই কাউকে অবজ্ঞা, অবহেলা, ঘৃণা না করে প্রতিটি মানুষকে আপন করে নেওয়া ইসলামের বিধান।
বহু নৈর্বাচনিক প্রশ্ন
১. ইসলামী জীবন-বিধানে মানুষের মর্যাদার মানদÐ নিরূপণ করা হয়ক. অর্থ স¤পদের মাধ্যমে
খ. তাকওয়ার মাধ্যমে
গ. শিক্ষার মাধ্যমে
ঘ. আন্তর্জাতিক স¤পর্কের মাধ্যমে।
২. ইসলামে চাকর-চাকরানীকে কিসের সাথে তুলনা করা হয়েছে ?
ক. দাস-দাসীর সাথে
খ. মা-বাবার সাথে
গ. আত্মীয়-স্বজনের সাথে
ঘ. ভাই-বোনের সাথে
৩. কোন সাহাবী মহানবী (স.)-এর খিতমতে ১০ বছর ছিলেন?
ক. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)
খ. হযরত আবু তালহা (রা.)
গ. হযরত আনাস (রা.)
ঘ. হযরত মু‘আবিয়া (রা.)।
৪. “দাস-দাসীদেরকে বৈষয়িক স্বার্থে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না” এ কথাটি বলেন
ক. আল্লাহ তা‘আলা
খ. হযরত মুহাম্মদ (স.)
গ. হযরত উমর (রা)
ঘ. হযরম আবু হুরায়রা (রা.)।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. “গৃহপরিচারক-পরিচারিকাদের আদর-যতœ করা তাদের দোষত্রæটি ক্ষমা করা গৃহ-কর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য”হাদীসের আলোকে তা ব্যাখ্যা করুন।
২. ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা স¤পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. কুরআন-হাদীসের আলোকে গৃহ-পরিচারক ও পরিচারিকার সাথে গৃহ-কর্তার আচরণ স¤পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]