বিবাহের পরিচয়, উদ্দেশ্য, মূলভিত্তি ও শর্তসমূহ বিস্তারিত লিখুন। বিবাহের বিভিন্ন প্রকার, সংজ্ঞা ও বিধান স¤পর্কে বর্ণনা করুন।

ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে স¤পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচেছ একমাত্র বৈধ উপায়, একমাত্র বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা।
বিয়ে ছাড়া অন্য কোনভাবে নারী-পুরুষের স¤পর্ক স্থাপন ও যৌনমিলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুষের
মধ্যে সামাজিক পরিবেশে ও সমর্থনে শরী‘আত মুতাবিক অনুষ্ঠিত এমন স¤পর্ক স্থাপন যার ফলে দুজনের একত্র
বসবাস ও পরস্পরে যৌন-স¤পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায়। যার দরুন পরস্পরের উপর অধিকার
আরোপিত হয় এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।
বস্তুত বিয়েই হচেছ ইসলামী সমাজে পরিবার গঠনের প্রথম স্তর। একজন পুরুষ ও এক বা একাধিক স্ত্রী যখন
বিধিসম্মতভাবে বিবাহিত হয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস ও স্থায়ী যৌন স¤পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্তকরে,
তখনই একটি পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত হয়; হয় পারিবারিক জীবন যাপনের শুভ সূচনা।
ইসলাম শুধু বিয়ের প্রতি উৎসাহ দিয়েই ক্ষান্তহয়নি বরং নারীদের অধিকার রক্ষার্থে পুরুষদের উপর মাহর
প্রদানকে আবশ্যক করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে স্বামী-স্ত্রীর দা¤পত্য জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে তখন ইসলামে
বিবাহ বিচেছদ-এর অনুমতিও প্রদান করেছে, যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় তালাক বলে।
বিয়ে, মাহর ও তালাক বিষয়ে এ ইউনিটে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিবাহই হচ্ছে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র উপায়। বিবাহ
ছাড়া অন্য কোন উপায় বা পথে নারী-পুরুষের মিলন ও সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ বলেন-
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ ا سُ ٱتَّ قُ وا᠔ رَ ᗖَّ ᠑ᝣ مُ ٱلᡐ ذِ ى خَ ل᠐ قَ ᠑ᝣ مْ مِّ ن نَّ فْ س᠏ وَ احِ دَ ةٍ وَ خَ ل᠐ قَ مِ نْ هَ ا زَ وْ جَ هَ ا
وَ ᗖ َثَّ مِ نْ هُ مَ ا ر᠒جَ اᢻ ًك᠐ ثِ يرا᠍ وَ ᙏ ِسَ ቯءً .
‘হে মানুষ ! তোমরা ভয় কর তোমাদের সেই প্রভুকে যিনি তোমাদেরকে একব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তা
থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নারী-পুরুষ ছড়িয়েছেন।’ (সূরা আন-নিসা : ১)
বস্তুত এ মহাবাণীর মধ্যেই বিবাহের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। কেননা মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত জৈবিক চাহিদা
পূরণের শরী‘আত সম্মত পন্থা হল নিকাহ (বিবাহ)।
বিবাহ হচ্ছে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সামাজিক পরিবেশে শরী‘আত সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত এমন এক সম্পর্ক, যার
ফলে একত্রে দু-জনের বসবাস এবং পারস্পরিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণভাবে বৈধ হয়ে যায়।
নিকাহ্’র শাব্দিক অর্থ
নিকাহ’ (ـاحᜓن (আরবী শব্দ যার অর্থ বিবাহ। “নিকাহ” শব্দটি আরবী ভাষায় একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয় যা
নি¤œরূপÑ
 কোন বস্তুকে কোন বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া  একত্রিত করা  যৌন চাহিদা মেটানো  চুক্তি ও বন্ধন 
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া এবং  মাহর (বিয়ের সময় স্বামীর উপর যে অর্থ ধার্য করা হয়)। একটু চিন্তা করলে একথাটি
স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উপরে বর্ণিত শব্দার্থগুলো কোন না কোনক্রমে নিকাহ (বিবাহ)-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
নিকাহ’র পারিভাষিক অর্থ
বিভিন্ন মনীষী বিবাহের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁদের সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে শাব্দিক কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল
অর্থেতেমন কোন মতবিরোধ নেই।
এসব সংজ্ঞাগুলোর সারসংক্ষেপ হলÑ
النᜓاح هو عقد اجتماعى بين الرجل والمرأة على طᗫᖁق معترف شرعى
ᛒستحل ᗷه استمتاع الأحد من الآخر.
‘বিবাহ হল, নারী ও পুরুষের মধ্যে শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিতে এমন এক সামাজিক চুক্তি ও বন্ধন, যা দ্বারা
পারস্পরিক যৌন চাহিদা মেটানো বৈধতা লাভ করে।’
বিবাহের উদ্দেশ্য
ইসলামী শরী‘আত বেশ কতিপয় মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিবাহের বিধান চালু করেছে। সংক্ষেপে
এখানে বিবাহের কতিপয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হলঃ
১. স্বামী-স্ত্রীর নৈতিক চরিত্র পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত রাখা।
২. স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আত্মিক প্রশান্তি ও স্থিতিলাভ।
৩. যৌনাচার-ব্যভিচার বন্ধ করা, গোপন বন্ধুত্বের নামে যৌন তৃপ্তি লাভ রহিত করা, সর্বোপরি সামাজিক
স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
৪. বিবাহের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র রক্ষার জন্য পরিবার নামীয় এক দুর্জয় দুর্গ রচনা করা।
৫. পারিবারিক জীবন যাপন করে সন্তান জন্মদান এবং তাদেরকে লালন-পালন করে ভবিষ্যৎ সমাজের জন্য
মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
যে সব শব্দ দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয়
নারী ও পুরুষের মধ্যে নিকাহ (বিবাহ) বন্ধন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য বেশ কতিপয় শব্দের কথা ফিকহবিদগণ
উল্লেখ করেছেন। তবে যে কয়টি শব্দের ব্যাপারে তাঁরা সবাই একমত এবং আমাদের সমাজেও প্রচলিত তা
নি¤œরূপÑ
১. নিকাহ্ -বিয়ে করা;
২. তাযবীজ-বিয়ে দেওয়া।
ইমাম শাফেয়ী (র.) বলেন, বিবাহ সংঘটিত হওয়ার জন্য স্পষ্ট অর্থ প্রদানকারী শব্দ ব্যবহৃত হওয়া প্রয়োজন।
আর উপরোক্ত শব্দ দু’টি বিবাহের স্পষ্ট অর্থ প্রদান করে। কুরআন মাজীদে এ দু’টি শব্দেরই উল্লেখ রয়েছে।
نَُّ ـوهُ حِ نكَ ت ن ᠐أْ م ᠑ᝣ ْᘭـ ᠐لَ عَ ـاحَ نُ جَ ᢻ َو ‘তাদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য অন্যায় নয়’। (সূরা
মুমতাহানা :১০)
কুরআনে আরও এসেছে ـاَ ه ᠐ᜧاَ نْ ج وََّ ز ‘আমি আপনার জন্য তাকে বিয়ে করার ব্যবস্থা করে দিলাম’। (সূরা আলআহযাব : ৩৭)
এ দু’টি শব্দ ‘নিজেকে অন্যের কাছে বিয়ে দেয়া ও অন্যকে বিয়ে করা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
নিকাহ (বিবাহ)-এর রুকন (মূল ভিত্তি)
বিবাহের রুক্ন বা মূল ভিত্তি হচেছ দু’টি। এ দু’টি ভিত্তি না পাওয়া গেলে বা দু’টির মধ্যে যে কোন একটি না
পাওয়া গেলে বিবাহ সংঘটিত হবে না। ভিত্তি দু’টি হলÑ
১. ইজাব-প্রস্তাব পেশ করা;
২. কবুল-প্রস্তাব গ্রহণ করা।
ইজাব ঃ ইজাব মানে প্রস্তাব দেওয়া। বিবাহ বন্ধনে আগ্রহী নারী-পুরুষের মধ্য থেকে প্রথম জনের প্রস্তাবকে ইজাব
বলে। প্রস্তাবকারী নারীও হতে পারে এবং পুরুষও হতে পারে। অন্যকে বিয়ে করার জন্য যেই প্রথমে কথা বলবে
সেই ইজাব বা প্রস্তাবকারী।
কবুল ঃ কবুল মানে গ্রহণ করা। প্রথম জনের প্রস্তাবের পর দ্বিতীয় জনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবের প্রতি স্বীকৃতি
প্রদানকে কবুল বলা হয়। এ প্রস্তাব গ্রহণকারী নারীও হতে পারে আবার পুরুষ ও হতে পারে।
ইজাব ও কবুল-এর জন্য ব্যবহৃত শব্দদ্বয় কেমন হবে
বিবাহ সংঘটিত হওয়ার জন্য ঈজাব ও কবুলের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত নির্ধারিত শব্দদ্বয় অতীত কালের রূপ হিসেবে
ব্যবহৃত হবে। যেমনÑ ঈজাব (প্রস্তাবকারী) বলবেÑ আমি নিজেকে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম। قبـول) প্রস্তাব
গ্রহণকারী) বলবে, আমি বিয়ে করলাম। অথবা প্রস্তাবকারীর শব্দটি অনুরোধ সূচক ক্রিয়ার রূপ হবে এবং
গ্রহণকারীর শব্দটি অতীতকালের ক্রিয়ার রূপ হবে। যেমন ঃ প্রস্তাবকারী বলবে, তোমাকে আমার কাছে বিয়ে দাও;
প্রস্তাব গ্রহণকারী বলবে, আমি নিজেকে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম।
ইজাব কবুলের ধরন
যেহেতু প্রস্তাবকারী এবং প্রস্তাবগ্রহণকারী নারী-পুরুষ নিজেরাও হতে পারে অথবা তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত
ব্যক্তি (উকীল) হতে পারে অথবা শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত অভিভাবকও হতে পারে। তাই ইজাব- কবুল কয়েক
ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ
১. পুরুষ নিজেই প্রস্তাবকারী হবে আর নারী নিজেই গ্রহণকারী হবে।
২. নারী নিজেই প্রস্তাবকারী হবে আর পুরুষ নিজেই গ্রহণকারী হবে।
৩. পুরুষের পক্ষ থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি (উকীল) প্রস্তাবকারী হবে আর নারী নিজেই তা গ্রহণকারী হবে।
৪. নারীর পক্ষ থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি (উকিল) প্রস্তাবকারী হবে এবং পুরুষ নিজেই গ্রহণকারী হবে।
৫. কোন এক পক্ষের অভিভাবক প্রস্তাবকারী হবে। আর অন্য পক্ষের অভিভাবক গ্রহণকারী হবে। (অপ্রাপ্ত
বয়স্কদের ক্ষেত্রে)
৬. পুরুষের পক্ষের অভিভাবক প্রস্তাবকারী হবে (অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে) এবং নারী নিজেই গ্রহণকারী হবে।
৭. নারীর পক্ষের অভিভাবক প্রস্তাবকারী হবে (অপ্রাপ্ত বয়স্কের ক্ষেত্রে) এবং পুরুষ নিজেই গ্রহণকারী হবে।
তবে আমাদের দেশীয় আইনে ১৮ বছরের নিচে কোন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ।
নিকাহ (বিবাহ) এর শর্তসমূহ
বিবাহ বন্ধন বৈধ হওয়ার জন্য দু’ ধরনের শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো পালিত না হলে বিবাহ বৈধ হবে না। শর্ত
দু’টো হলÑ
সাধারণ শর্ত ঃ স্বামী-স্ত্রী বা পাত্র-পাত্রী এমন হতে হবে যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইসলামী শরী‘আতের পক্ষ
থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যেমনÑ পাত্রী এমন হওয়া যাকে বিয়ে করা অবৈধ। অথবা স্ত্রীর বর্তমানে তার
সহোদর বোনকে বিবাহ করা, পাত্র-পাত্রীর একজন কাফির বা মুশরিক হওয়া এবং অন্য জন মুসলিম হওয়া
ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
حُ رِّ مَ تْ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مْ أ᠑ مَّ هَ اتُ ᠑ᝣ مْ وَ ᗖ نَ اتُ ᠑ᝣ مْ وَ أ᠐ خَ وَ اتُ ᠑ᝣ مْ وَ عَ مَّ اتُ ᠑ᝣ مْ وَ خَ اᢻ َتُ ᠑ᝣ مْ وَ ᗖ َنَ اتُ ٱلأَ خ᠒
و َ ᗖ نَ اتُ ٱلأُ خْ تِ وَ أ᠑ مَّ هَ اتُ ᠑ᝣ مُ الᢿَّ تِ ى أ᠐ رْ ضَ عْ نَ ᠑ᝣ مْ وَ أ᠐ خَ وَ اتُ ᠑ᝣ م مِّ نَ ٱلرَّ ضَ اعَ ةِ وَ أ᠑ مَّ هَ اتُ
ᙏِسَ ቯئِ ᜓ᠑ مْ وَ رَ ᗖ َائِ ᘘ ُ᠑ᝣ مُ ٱلᢿَّ تِ ى فِ ى حُ جُ ور᠒᛿᠑ مْ مِّ ن ᙏِّ سَ ቯئِ ᜓ᠑ مُ ٱلᢿَّ تِ ى دَ خَ ل᠔ تُ مْ بِ هِ نَّ فَ إِ ن لᡐ مْ
تَ ᜻᠑ ونُ وا᠔ دَ خَ ل᠔ تُ مْ بِ هِ نَّ فَ ᢿ َجُ نَ احَ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مْ وَ حَ ᢿ َئِ لُ أ᠐ بْ نَ ائِ ᜓ᠑ مُ ٱلᡐ ذِ ينَ مِ نْ أ᠐ صْ ᢿ َᗷᜓ ِ᠑ مْ وَ أ᠐ ن
تَ جْ مَ عُ وا᠔ بَ يْ نَ ٱلاخْ تَ يْ ن᠒ إ᠐ ᢻَّ مَ ا قَ دْ سَ ل᠐ فَ إِ نَّ ٱللᡐ هَ ᛿᠐ انَ غَ فُ ورا᠍ رَّ حِ ᘭما
‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, ভাগিনেয়ী, দুগ্ধ-
মাতা, দুগ্ধ-ভগিনী, শাশুড়ী ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়ে তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার
গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, তবে যদি তাদের সাথে সংগত না হয়ে থাক, তাতে
তোমাদের কোন অপরাধ নেই। এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী ও দুই ভগ্নীকে একত্র
করা, পূর্বে যা হয়েছে, হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আন-নিসা :২৩)
ᢻ َهُ نَّ حِ لٌّ لᡐ هُ مْ وَ ᢻ َهُ مْ ᘌ َحِ لᡑ ونَ ل᠐ هُ نَّ .
‘মুসলিম মেয়েদেরকে কাফিরদের বিয়ে করা অবৈধ, অনুরূপভাবে মুসলিম পুরুষরাও কাফির নারীদের জন্য বৈধ
নয়।’ (সূরা আল-মুমতাহানা : ১০)
وَ ᢻ َتَ نْ ᜻ِ حُ وا᠔ ٱل᠔ مُ شْ ر᠒᛿᠐ اتِ حَ تَّ ىٰ يُ ؤْ مِ نَّ .
‘মুশরিক নারীকে ঈমান না আনা পর্যন্ততোমরা বিয়ে করো না।’ (সূরা আল-বাকারা : ২২১)
বিশেষ শর্ত
বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য বিশেষ শর্ত হলÑ
১. পাত্র-পত্রী একে অপরের প্রতি প্রস্তাব করা ও প্রস্তাব গ্রহণ-এর উক্তি শুনতে হবে।
২. পাত্র-পাত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সময় দু’জন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু’জন নারী উপস্থিত
থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেনÑ
وَ ٱسْ ᙬ َشْ هِ دُ وا᠔ شَ هِ ᘭدَ يْ ن᠒ مِّ ن رِّ جَ الِ ᠑ᝣ مْ فَ إِ ن لᡐ مْ ᘌ᜻ َ᠑ ونَ ا رَ جُ ل᠐ يْ ن᠒ فَ رَ جُ لٌ وَ ٱمْ رَ أ᠐ تَ انِ مِ مَّ ن
تَ رْ ضَ وْ نَ مِ نَ ٱلشُّ هَ دَ آءِ
‘সাক্ষীদের মধ্যে যাদের উপর তোমরা রাযী তাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ সাক্ষী রাখবে, যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া
যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন নারীকে সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ কর।’ (সূরা আল-বাকারা : ২৮২)
এ ছাড়া সাক্ষীদের মাঝে নি¤েœাক্ত গুণগুলো থাকতে হবে-
 প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে  জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে তথা পাগল হলে চলবে না  মুসলিম হতে হবে  পাত্রপাত্রী উভয়ের প্রস্তাব ও গ্রহণ সাক্ষীদ্বয় একই সঙ্গে শুনতে হবে।
বিবাহের প্রকারভেদ
বিবাহ তিন প্রকার। ১. বৈধ বিবাহ, ২. ফাসিদ বিবাহ, ৩. বাতিল বিবাহ।
বৈধ বিবাহ
যে বিবাহে বিবাহের রুকন (মূল ভিত্তি) শর্তাবলী পাওয়া যায় এবং সংঘটিত হতে শরী‘আতের কোন বাধা -নিষেধ
থাকে না তাকে বৈধ বিবাহ বলে।
ফাসিদ বিবাহ
বিবাহ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিবাহের রুকন ও শর্তাবলীর কোন একটি অপূর্ণ থাকলে উক্ত বিবাহ ফাসিদ বিবাহ
হিসেবে গণ্য হয়। যেমন-সাক্ষীহীন বিবাহ। ফাসিদ বিবাহের ত্রæটি সংশোধন করে নিলে তা সহীহ বিবাহে
রূপান্তরিত হতে পারে। যেমন সাক্ষীহীন বিবাহের ক্ষেত্রে বিবাহ-পরবর্তীকালে সাক্ষী নিয়োগ করা হলে উক্ত বিবাহ
সহীহ বিবাহে পরিণত হয়।
বাতিল বিবাহ
বিবাহ অনুষ্ঠানকালে যদি বিবাহের এমন কোন শর্ত বাদ পড়ে যা পরে সংশোধনযোগ্য নয়, সেইরূপ বিবাহকে
বাতিল বিবাহ বলে। যেমন দুই মাহরাম আত্মীয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিবাহ।
কতিপয় বাতিল বিবাহ
মুতা বিবাহ
কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে সাময়িকভাবে উপভোগ করার উদ্দেশ্যে স্বল্প মেয়াদের জন্য বিবাহ করাকে মুতা বিবাহ
বলে। যেমন- ১দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন বা ১ মাস ইত্যাদি মেয়াদের জন্য বিবাহ করা, এ বিবাহকে সাময়িক
বিবাহও বলে। এ বিবাহ জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল, ইসলাম এ বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এটি একটি বাতিল
বিবাহ।
বদলী বিবাহ
বদলী বিবাহ বলতে বুঝায়Ñ কোন ব্যক্তির নিজের কন্যাকে অন্যের কাছে এ শর্তে বিয়ে দেয়া যে ঐ ব্যক্তি তার
কন্যাকে প্রথম ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেবে এবং এর জন্য কাউকে মাহরানা দিতে হবে না।
হাদীসে এ প্রকার বিয়েকে ‘সেগার বিবাহ’ বলে। এ পদ্ধতিটি জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায়
এ জাতীয় বিবাহ বৈধ নয়।
হুকুমের দিক থেকে বিবাহের প্রকারভেদ
বিবাহের হুকুম নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অবস্থার উপর। তাই বিবাহের হুকুম সকলের
ক্ষেত্রে একই রকম নয়। বরং বিবাহ ব্যক্তি ভেদে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, হারাম, মাকরুহ ও মুবাহ
বলে বিবেচিত।
ফরয
বিবাহ করা ফরয হয় চার শর্তে, ১. যদি কেউ বিয়ে না করলে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে বলে নিশ্চিত আশংকা থাকে;
২. ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য রোযা রাখতেও সে অক্ষম; ৩. বাঁদী গ্রহণেরও সুযোগ নেই এবং ৪. সে বৈধ পন্থায়
স্ত্রীর মাহর ও ভরণ-পোষণ করতেও সক্ষম-এমন ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা ফরয।
ওয়াজিব
বিবাহের প্রতি প্রবল আকর্ষণ আছে, ব্যভিচারে আক্রান্তহওয়ারও ভয় আছে কিন্তু ব্যভিচারে পড়েই যাবে এমন
আশংকা নেই, অধিকন্তু হালাল অর্থে স্ত্রীর মাহর ও ভরণ-পোষণ করতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির বিবাহ করা ওয়াজিব।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা
বিবাহের প্রতি আকর্ষণ আছে, তবে এ কারণে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই এমন ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
হারাম
যদি বদ্ধমূল বিশ্বাস থাকে যে, বিবাহ করলে তাতে অন্যায়ভাবে অন্যের প্রতি যুলুম ও নিপীড়ন করে জীবিকা
নির্বাহ করতে হবে তাহলে এ ক্ষেত্রে বিবাহ করা হারাম। কেননা বিবাহের উদ্দেশ্য হল রিপুকে পাপ থেকে বাঁচিয়ে
রাখা ও পুণ্য অর্জন করা।
মাকরূহ
যদি বিবাহের কারণে অন্যের প্রতি যুলুম অত্যাচার করবে বলে ভয় হয় তাহলে বিবাহ করা মাকরূহে তাহরীমী।
মুবাহ
বিবাহের প্রতি ঝোঁক আছে, তবে না করলে ব্যভিচারী হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কা নেই এটাই মুবাহ। এক্ষেত্রে যদি
নিজেকে পাপমুক্ত রাখা কিংবা মানব বংশ বৃদ্ধির নিয়াত করে তাহলে বিবাহ করা সুন্নাত বলে বিবেচিত হবে।
এখানে মুবাহ ও সুন্নাতের পার্থক্য নি‘য়াতের উপর নির্ভরশীল।
সারকথা
বিবাহ হচ্ছে শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় পাত্র-পাত্রীর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক বন্ধন। নারী-পুরুষের
নৈতিক চরিত্র রক্ষা, অপকর্ম রোধ, আত্মিক প্রশান্তিলাভ, বংশধারা অব্যাহত রাখা এবং পারিবারিক জীবন
যাপনের মাধ্যমে সামাজিক শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করাই বিবাহের অন্যতম লক্ষ্য। সাধারণত স্পষ্টভাবে বিবাহের অর্থ
প্রদান করে এমন শব্দ দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয়।
ইজাব (প্রস্তাব করা) এবং কবূুল (প্রস্তাব গ্রহণ করা) বিবাহের মূলভিত্তি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে শরী‘আতের
কোন বাধা নিষেধ না থাকা বিবাহের অন্যতম শর্ত। বিবাহের প্রস্তাব ও তা গ্রহণের উক্তি পাত্র-পাত্রী উভয়কে
শুনতে হবে এবং দু’জন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু’জন নারীর উপস্থিতি এবং বিবাহের প্রস্তাব ও গ্রহণের উক্তি শুনা এর বিশেষ শর্ত।
১. বিবাহ হচ্ছেÑ নারী-পুরুষের মধ্যে-
ক. সম্পর্ক স্থাপনের উপায়। খ. বৈধ সম্পর্ক স্থাপনের উপায়।
গ. বৈধ সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র উপায়। ঘ. সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের উপায়।
২. বিবাহের উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে একটি হলÑ
ক. গোপন স¤পর্ক স্থাপন করা। খ. স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আর্থিক প্রশান্তিও স্থিতিলাভ
গ. স্বামীর ঘর সংরক্ষণ করা। ঘ. স্বামীর ছেলে-মেয়ে লালন-পালন করা।
৩. ‘‘বিবাহ সংঘটিত হওয়ার জন্য স্পষ্ট অর্থ প্রদানকারী শব্দ হওয়া প্রয়োজন’’- এটি কার উক্তি?
ক. ইমাম আবু হানীফা (র)-এর। খ. ইমাম শাফেঈ (র)-এর।
গ. আল-হাদীসের ঘ. আল-কুরআনের
৪. কে বিবাহের প্রস্তাবকারী?
ক. স্বামী খ. স্ত্রী
গ. যিনি প্রথমে বিবাহের প্রস্তাব অন্যের কাছে দিয়ে থাকেন ঘ. দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
৫. বিবাহের স্বাক্ষীর বয়স কেমন হতে হবে?
ক. প্রাপ্ত বয়স্ক ও জ্ঞান-বুদ্ধি স¤পন্ন হতে হবে খ. অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলেও চলবে
গ. প্রাপ্ত বয়স্ক পাগল হলে চলবে। ঘ. শুনতে পায়না এমন বয়স্ক ব্যক্তি হলেও চলবে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. বিবাহের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ বর্ণনা করুন।
২. বিবাহের উদ্দেশ্যগুলো লিখুন।
৩. কি কি শব্দ দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয় লিখুন।
৪. বিবাহের রুকন (ম‚লভিত্তি) কি কি বিস্তারিত লিখুন।
৫. বিবাহ সংঘটিত হওয়ার শর্তসমূহ বর্ণনা করুন।
৬. বিবাহের প্রকারভেদ, সংজ্ঞা ও বিধানসমূহ লিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. বিবাহের পরিচয়, উদ্দেশ্য, মূলভিত্তি ও শর্তসমূহ বিস্তারিত লিখুন।
২. বিবাহের বিভিন্ন প্রকার, সংজ্ঞা ও বিধান স¤পর্কে বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]