মাহরের শাব্দিক ও পরিভাষিক অর্থ কি? মাহরের বিধান কি? এর পরিমাণ স¤পর্কে প্রমাণসহ বিস্তারিত লিখুন।

বিবাহ একটি সামাজিক বন্ধন যা বর-কনের সম্মতিতে সম্পাদিত হয়। তবে এক্ষেত্রে নারীকে কিছু প্রদান করা
ইসলামী শরিআত পুরুষের উপর আবশ্যক করে দিয়েছে যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় মাহর বলা হয়। এ মাহর
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার। নিম্নেমাহর এর সংজ্ঞা, পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোমাহর এর শাব্দিক অর্থ ঃ মাহর শব্দের অর্থ দান, প্রতিদান, স্ত্রীর নির্ধারিত প্রাপ্য।
মাহরের পারিভাষিক অর্থ
মাহর বলতে এমন অর্থ-সম্পদকে বোঝায়, যা বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীর উপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের
বিনিময়ে স্বামীকে অবশ্যই আদায় করতে হয়। বিয়ের সময়ই তা ধার্য হয়ে থাকে অথবা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর
তা আদায় করা স্বামীর উপর ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
বিয়ের ক্ষেত্রে মাহর আদায় করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন
فَ ቯتُ وهُ نَّ أ᠑ جُ ورَ هُ نَّ فَ ᠒ᖁ ᗫضَ ةً
‘তাদের নির্ধারিত ‘মাহর’ আদায় করবে।’ (সূরা আন-নিসা : ২৪)
অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে
. وَ عَ اشِ رُ وهُ نَّ ᗷ ِٱل᠔ مَ عْ رُ وفِ
‘এবং তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে।’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)
এ আয়াতদ্বয়ে বিয়ের ক্ষেত্রে নারীদেরকে মাহর দেয়ার স্পষ্ট নির্দেশ ঘোষিত হয়েছে। এজন্য ‘মাহর’ হচ্ছে বিয়ে
শুদ্ধ হওয়ার আবশ্যক শর্ত। শুধু তাই নয়, ‘দেন মাহর’ আদায় করতে হবে অন্তরের সন্তুষ্টি ও সদিচ্ছা সহকারে
এবং মেয়েদের জন্যে আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহ মনে করে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে 
وَ آتُ وا᠔ ٱل ِّ سَ ቯءَ صَ دُ قَ اتِ هِ نَّ نِ حْ ل᠐ ةً .
‘এবং তোমরা স্ত্রীদের ‘মাহর’ স্বতঃ প্রবৃত্ত হয়ে আদায় করবে।’ (সূরা আন-নিসা : ৪)
আয়াতে উদ্ধৃত نحلـة শব্দের অর্থ ব্যাপক। এর একটি অর্থ হচ্ছে কোন বিনিময় ও বদ্লা ব্যতিরেকেই কিছু
দিয়ে দেয়া।
আয়াতের আর একটি অর্থ হচ্ছে
‘মাহর’ দিয়ে মনকে পবিত্র ও নিষ্কলুষ করে নাও, মাহরানা দেওয়ার ব্যাপারে মনের কুণ্ঠা-কৃপণতা দূর করে দাও।
আর এর তৃতীয় অর্থ হচ্ছে ঃ আল্লাহর তরফ থেকে একটি বিশেষ দান।
কেননা জাহিলিয়াত যুগে মাহরানা ছাড়াই মেয়েদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যেত, অথবা মাহরানা বাবদ যা কিছু প্রদান
করা হত তা সবই মেয়েদের পিতা বা অভিভাবকরাই খেয়ে ফেলত। মেয়েরা বঞ্চিত থেকে যেত। এজন্যে ইসলামে
যেমন মাহরানা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনি এটি কে একমাত্র মেয়েদেরই প্রাপ্য ও তাদের একচেটিয়া
অধিকারের বস্তুু বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এতে পিতা বা অভিভাবকদের কোন অধিকার নেই বলে জানিয়ে
দেয়া হয়েছে। বস্তুুত মাহরানা মেয়েদের জন্যে আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ এবং তা আদায় করা স্বামীর উপর
ফরয। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বামীর উপর স্ত্রীর নির্ধারিত অধিকার।
মাহর
মাহর না দিয়ে স্ত্রীর নিকট গমন করাই অবাঞ্চনীয়। হযরত ইবন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী
(রা.) যখন হযরত ফাতিমাকে বিয়ে করলেন তখন নবী করীম (স.) তাঁকে বললেন ঃ
. اعطها شᚏئا
‘তুমি ওকে কিছু একটা দাও।’ (আবু দাউদ)
. لاᘌحل لمسلم أن ᘌدخل على امراته حتى ᘌقدم اليها ما قل أو كثرর্তবণি ক.) থেরো (উমর নইেব হযরত
‘মাহর বাবদ কম বা বেশী কিছু অগ্রিম না দিয়ে কোন মুসলমানের জন্য তার স্ত্রীর নিকট গমন করা বৈধ নয়।’
. لا ᘌدخل حتى ᘌقدم شᚏئا من صداقها سواء فرض لها او لم ᘌكن فرضর্তবণি ক.) থেরে (আনাস নইেব মালিক
‘স্ত্রীকে তার মাহরের কিছু না দিয়ে স্বামী যেন তার নিকট গমন না করে। বিয়ের সময় এর পরিমাণ নির্দিষ্ট হোক
আর নাই-হোক, তাতে কিছু আসে যায় না।’ (মা‘আলেমুস্ সুনান, পৃ. ২১৫)
মাহরের পরিমাণ
মাহরের পরিমাণ কি হওয়া উচিত, ইসলামী শরী‘আতে এ সম্পর্কে কোন অকাট্য নির্দেশ দেয়া হয়নি, নির্দিষ্টভাবে
কোন পরিমাণও ঠিক করে বলা হয়নি। তবে একথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীর-ই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য
ও স্ত্রীর মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর
মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাযী হয়ে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে শরী‘আত উভয় পক্ষকে পূর্ণ স্বাধীনতা
দিয়েছে। এ বিষয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহ্লভী বলেছেন
নবী করীম (স.) মাহরের কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেননি এ কারণে যে, এ ব্যাপারে লোকদের আগ্রহ-উৎসাহ ও
ঔদার্য প্রকাশ করার মান কখনো এক হতে পারে না। বরং বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন স্তরের লোকদের আর্থিক অবস্থা
এবং লোকদের রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি ও উদারতার বিভিন্ন কারণে এর পরিমাণের ক্ষেত্রেও পার্থক্য হয়ে থাকে।
বর্তমানেও এ পার্থক্য বিদ্যমান। এ জন্য কাল-যুগ,সমাজ ও মানুষ, অর্থনৈতিক অবস্থা ও রুচি বোধের পার্থক্যের
কারণে একটি পরিমাণ স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়া বাস্তব দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অসম্ভব। যেমন করে কোন রুচিপূর্ণ
দ্রব্যের মূল্য সর্বকালের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া যায় না, নির্দিষ্ট করে দেওয়াটা অবৈজ্ঞানিক ও হাস্যকরও বটে।
কাজেই এর পরিমাণ সমাজ, লোক ও আর্থিক মানের পার্থক্যের কারণে বেশীও হতে পারে, কমও হতে পারে।
তবে শুধু-শুধু এবং পারিবারিক আভিজাত্যের দোহাই দিয়ে এর পরিমাণ নির্ধারণে বাড়াবাড়ি ও দর কষাকষি করাও
আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। তার পরিমাণ এমন সামান্য ও নগণ্যও হওয়া উচিত নয় যা স্বামীর মনের উপর কোন
প্রভাবই বিস্তার করতে পারে না। যা দেখে মনেও হবে না যে, মাহরানা আদায় করতে গিয়ে স্বামীকে কিছু মাত্র
ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। আর সেজন্য তাকে কোন ত্যাগও স্বীকার করতে হয়নি।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর মতে, মাহরের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত, যা আদায় করা স্বামীর পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়
এবং সেজন্যে সে রীতিমত চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে তার পরিমাণ এমনও হওয়া উচিত নয়, যা
আদায় করা স্বামীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়ে। এজন্য নবী করীম (স.) একদিকে দরিদ্র সাহাবীকে বললেন
‘কিছু-না-কিছু দিতে চেষ্টা কর। আর যদি কিছু না পার, মাহর বাবদ অন্তত লোহার একটি আংটি হলেও দেওয়ার
চেষ্টা কর।’ (বুখারী)
আর যে নিঃস্ব দরিদ্র সাহাবী তাও দিতে সক্ষম নন, তাঁকে তিনি বলেছেনঃ
. قد زوجتك ᗷما معك من القرآن
‘কুরআন মাজীদের যা কিছু তোমার জানা আছে, তার বিনিময়ে আমি তোমার নিকট একে বিয়ে দিলাম।’
(মুসনাদে আহম
এ ধরনের মাহর সম্পর্কে ফিকহবিশারদ মকহুল বলেছেন ঃ
. لᛳس ذلك لأحد ᗷعد رسول الله صلى الله علᘭه وسلم
‘এ ধরনের মাহর হিসেবে ধার্য করার ইখতিয়ার রাসুলে করীম (স.) -এর পরে আর কারো নেই।’ (আহকামুল
কুরআন, জাসসাস)
ইবন জাওযী (র.) বলেছেন ঃ ইসলামের প্রথম যুগে স্বাভাবিক দারিদ্র্যের কারণে প্রয়োজনবশতই এ ধরনের মাহর
নির্দিষ্ট করা জায়েয ছিল। কিন্তুু এখন তা জায়েয নয়।
একটি হাদীস থেকে জানা যায়, এক জোড়া জুতার বিনিময়ে অনুষ্ঠিত বিয়েকেও রাসূল করীম (স.) বৈধ বলে
ঘোষণা করেছিলেন। তিনি মেয়েলোকটিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি মাহর বাবদ যা পেয়েছ, তাতে বিয়ে
করতে কি তুমি রাযী আছ ? সে বলল ‘হ্যাঁ’। তখন রাসূলে করীম (স.) সে বিয়েতে অনুমতি দান করেছিলেন।
অপরদিকে কুরআন মজীদে এই মাহর সম্পর্কেবলা হয়েছে ঃ
. وَ آتَ ᚏ ْتُ مْ إِ حْ دَ اهُ نَّ قِ نْ طَ ارا᠍ فَ ᢿ َتَ أ᠔ خُ ذُ وا᠔ مِ نْ هُ شَ ᚏ ْئا᠍
‘এবং তাদের একজনকে ‘বিপুল পরিমাণ’ ধন-সম্পদ দিয়ে থাকলেও তা থেকে তোমরা কিছু নিবে না।’ (সূরা
আন-নিসা : ২০)
এ আয়াতের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ মাহর বাবদ দেয়া জায়েয প্রমাণিত হচ্ছে। হযরত ওমর (রা) উম্মে
কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন এবং মাহর বাবদ দিয়েছিলেন চল্লিশ হাজার দিরহাম। চল্লিশ হাজার দিরহাম
তদানীন্তন সমাজে বিরাট সম্পদ। নবী করীম (স.) স্বয়ং হযরত উম্মে হাবীবাকে মাহর দিয়েছিলেন চারশত
স্বর্ণমুদ্রা। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, তাঁর মাহরের পরিমান ছিল আটশ’ দীনার। (আহকামুল কুরআন-জাসসাস)
এ আলোচনা থেকে একদিকে যেমন জানা যায় মাহরানার সর্বনি¤œপরিমাণ, অপর দিকে জানা যায় সর্বোচচ
পরিমাণ। ইসলামী শরী‘আতে এ দু‘ধরনের পরিমাণই জায়েয।
নবী (স.) বলেছেন
‘সবচেয়ে উত্তম মাহর হচ্ছে তা, যা আদায় করা সহজসাধ্য।’
এজন্য একান্তপ্রয়োজন হচ্ছে অবস্থাভেদে সর্বনিম্নও সর্বোচ্চ পরিমাণের মধ্যে সহজসাধ্য মাধ্যম হিসেবে একটা
পরিমাণ বেঁধে দেয়া এবং এ ব্যাপারে কোন পক্ষ থেকে অকারণে বাড়াবাড়ি করা বাঞ্চনীয় নয়।
মাহর ধার্য করার মান মধ্যম পর্যায়ে আনার প্রচেষ্টা রাসূলে করীম (স.)-এর সময় থেকেই শুরু হয়েছে। হযরত
উমর ফারূক (রা.) এ সম্পর্কে বিশেষ যতœবান ছিলেন। তিনি একদা মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে লোকদের নসীহত
করছিলেন এবং মাহর সম্পর্কে বিশেষভাবে বলেছিলেন
সাবধান হে লোকেরা, স্ত্রীদের মাহর নির্ধারিত করতে গিয়ে মোটেও বাড়াবাড়ি করো না। মনে রেখো, মাহরানা
যদি দুনিয়ায় মান-সম্মান বাড়াতো কিংবা আল্লাহর নিকট তাকওয়ার প্রমাণ হতো, তাহলে অতিরিক্ত মাহরানা
নির্ধারিত করার জন্যে রাসূল করীমই ছিলেন তোমাদের অপেক্ষা বেশী অধিকারী ও যোগ্য। অথচ তিনি তাঁর
স্ত্রীদের ও কন্যাদের মধ্যে কারো মাহরানাই বারো ‘আউকিয়া’ (চার শ’ আশি দিরহাম-এর বেশী) ধার্য করেননি।
মনে রাখা আবশ্যক যে, এক-একজন লোক তার স্ত্রীকে প্রদত্ত মাহরের দরুন বড় বিপদে পড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত
সে নিজের স্ত্রীকে শত্রæ বলে মনে করতে শুরু করে।
এমনি এক ভাষণ শুনে উপস্থিতদের মধ্য থেকে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে বললেন-
ᘌعطينا الله وتحرمنا أنت نهᘭت الناس ان يᗫᖂدوا فى مهر ال ساء على أرᗖـع
مائة درهم أما سمعت الله ᘌقول واتᚏتم احدا هن قنطارا.
‘আল্লাহ তো আমাদের দিচ্ছেন, আর তুমি হারাম করে দিচ্ছ ? তুমি লোকদেরকে মহিলাদের মাহরের পরিমাণ
চারশ’ দিরহামের বেশি নির্ধারিত করতে নিষেধ করেছো? তুমি কি শোননি, আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন ‘তোমরা
তোমাদের এক এক স্ত্রীকে মাহর দিয়েছ বিপুল পরিমাণে।’
তখন হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন ঃ
امراة أصاᗷت وأمير أخطأ .
‘একজন মেয়েলোক ঠিক কথা বলল ; কিন্তুভুল করল একজন রাষ্ট্রনায়ক।’
আসলে বিয়েতে মাহরের ব্যবস্থা করা হয়েছে কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে একটা কিছু নির্ধারিত করে দেয়ার উদ্দেশ্যে
নয়। বরং যা কিছু ধার্য করা হবে তা একদিকে যেমন স্ত্রীর প্রাপ্য আল্লাহর দেয়া অধিকার, অপরদিকে স্বামীর
শ্রেষ্ঠত্ব ও ব্যক্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ স্ত্রীকে স্বামীর জন্য বৈধ করার একটি পুরস্কার ও বটে। অতএব তা ধার্য করতে
হবে তাকে ঠিক ঠিকভাবে ও যথাসময়ে স্ত্রীর নিকট আদায় করে দেয়ার উদ্দেশ্যে। স্ত্রীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
বিধানও এর একটা বিশেষ লক্ষ্য। কিন্তুু শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে যদি একটা বিরাট পরিমাণ অর্থ বেঁধেও দেয়া হয়
কিংবা স্বামীকে তা স্বীকার করে নিতে বাধ্যও করা হয়, অথচ তা যদি সঠিকভাবে আদায় না করা হয়, তাহলে স্ত্রীর
কার্যত কোন উপকারই তাতে হয় না। আর পরিমাণ যদি এত বড় হয় যে, তা আদায় করা স্বামীর পক্ষে কিছুতেই
সম্ভব নয়, তাহলে তার পরিমাণ পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে মারাতœক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। স্বামী যদি
বিয়ের উদ্দেশ্যে মেয়ে পক্ষের অসম্ভব দাবির নিকট নতি স্বীকার করে তাদের মর্জি মত বড় পরিমাণের মাহর
স্বীকার করে নেয়, আর মনে মনে চিন্তা ও সিদ্ধান্তকরে রাখে যে, কার্যত সে তার কিছুই আদায় করবে না,
তাহলেও ব্যাপারটি একটি বড় রকমের প্রতারণার পর্যায়ে পড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে আদায় করার নিয়ত না থাকা
সত্তে¡ও একটা বড় পরিমাণের মাহর মুখে স্বীকার করে নেয়া যে কত বড় পাপ তা রাসূলে করীম (স.)-এর বাণী
থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। তিনি ঘোষণা করেন-
أᘌما رجل تزوج امراة علي أقل من المهر أو أᜧثر ولᛳس في نفسه أداؤە إليها
لقي الله يوم القᘭامة وهو زان.
‘যে লোক কোন নারীকে কম বা বেশী পরিমাণের মাহর দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করে অথচ তার মনে স্ত্রীর সে হক
আদায় করার ইচ্ছা থাকে না, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে ব্যভিচারীরূপে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’
কখন পূর্ণ মাহর আবশ্যক হয়
নি¤েœাক্ত তিনটি অবস্থায় স্ত্রীকে পূর্ণ মাহর দিতে হয়।
১. মাহরের পরিমাণ ধার্য করার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলন সংঘটিত হলে।
২. মাহরের পরিমাণ ধার্য করার পর উভয়ের মধ্যে যদি যৌনমিলন সংঘটিত না হয় কিন্তু তাদের মধ্যে
নির্জনে একত্রিত হওয়ার সুযোগ হয়।
৩. যদি স্বামী-স্ত্রীর কোন একজন মৃত্যুবরণ করে। স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী স্বামীর স¤পদ হতে তার প্রাপ্য মাহর
নিয়ে নিবে। আর স্ত্রীর মৃত্যু হলে তার ওয়ারিশগণ স্বামীর কাছ থেকে মাহর আদায় করে নেবে।
(মুসনাদ আহমদ)
কখন অর্ধ মাহর ওয়াজিব হয়
যদি মাহরের পরিমাণ ধার্য করা হয়। কিন্তুু স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন বা নির্জনে একত্রিত হওয়া ছাড়াই উভয়ের মধ্যে
বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে অর্ধ মাহর দিতে হয়।
সমতুল্য মাহর কখন দিতে হয়
যদি মাহরের পরিমাণ ধার্য করা না হয় কিন্তুু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলন সাধিত হয়, বা নির্জনে তারা একত্রিত হয়
তাহলে স্বামীকে مثـل مهـر) সমতুল্য) মাহর দিতে হয়। যদি মাহরের পরিমাণ ধার্য করা ছাড়া বিবাহ অনুষ্ঠিত
হয় কিন্তু উভয়ের মধ্যে যৌন মিলন বা নির্জনে একত্রিত হওয়া ছাড়া বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে অর্ধ সমতুল্য মাহর দিতে হয়। সমতুল্য মাহর
শরী‘আতের পরিভাষায় যে ক্ষেত্রে বিবাহের সময় মাহর নির্ধারিত হয় না ; বরং স্ত্রীর আর্থিক অবস্থা পারিবারিক
মর্যাদা এবং স্ত্রীর বোন বা ফুফু কিংবা অনুরূপ নিকটাতœীয়ের মাহর অনুসারে স্বামীকে মাহর প্রদান করতে হয়, সেই
মাহরকে সমতুল্য مثل مهر মাহর বলা হয়।
কাদের সামঞ্জস্যতায় মাহরে মিছল (সমতুল্য মাহর) সাব্যস্তহয়
পিতৃকূলের দিক বিচারেই স্ত্রীলোকদের মাহরে মিছল সাব্যস্তহয়। কেননা হাদীসে আছে, হযরত ইবন মাসউদ
(রা) এর কাছ থেকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো, যে সে মাহর নির্ধারণ করা ছাড়া বিয়ে করেছে এবং যৌন
মিলনের পূর্বেই মারা গেছে। উত্তরে ইবন মাসউদ (রা) বললেনولاشطط وكس لا سائهاᙏ صداق مثل لها .
‘ঐ লোকটির স্ত্রীকে সমপর্যায়ের অন্য মহিলাদেরকে প্রদত্ত মাহর-এর অনুরূপ মাহর প্রদান করতে হবে, তার চেয়ে
কমও নয়; বেশীও নয়।’
যে সকল বিষয়ে সামঞ্জস্য বিবেচ্য
মাহরে মিছল বা সমতুল্য মাহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়ে সামঞ্জস্যতা বিবেচনা করতে হবে১. বয়সের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য অর্থাৎ পিতৃকূল থেকে সমান বয়সের মেয়ের সাথে তুলনা করে মাহর নির্ধারণ
করা হবে।
২. সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য অর্থাৎ পিতৃকূল থেকে তার ন্যায় সুন্দরী মহিলার মাহরের সাথে তুলনা করতে
হবে।
৩. অর্থ সম্পদের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য অর্থাৎ এ মহিলার সমান অর্থ সম্পদের অধিকারী মহিলার সাথে তার
মাহরের তুলনা করা হবে।
৪. জ্ঞান বুদ্ধি ও চরিত্রের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য অর্থাৎ জ্ঞান, বুদ্ধি, চরিত্র ইত্যাদি বিষয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
৫. দ্বীন শরী‘আতের দিক দিয়ে সামঞ্জস্যতা অর্থাৎ পিতৃকূলের আরেক ধর্মপরায়ণ মহিলার সাথে তার মাহরের
তুলনা করতে হবে।
৬. আবাসস্থলের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য অর্থাৎ বিবাহিত মেয়েটি শহরের বা গ্রামের হলে পিতৃকূলের অনুরূপ শহর
বা গ্রামের মেয়ের সাথে তার মাহরের তুলনা করা হবে।
৭. সময়ের দিক দিয়ে সামঞ্জস্য অর্থাৎ একই সময়কালের অন্য মেয়ের সাথে তুলনা করা হবে।
৮. কুমারী ও পূর্ব বিবাহিতা হওয়ার দিক দিয়ে সামঞ্জস্য। অর্থাৎ বিবাহিত মেয়েটি কুমারী বা পূর্ব বিবাহিতা যাই
হোক তার পিতৃকূলের অনুরূপ মহিলার সাথে তার মাহরের তুলনা করতে হবে।
জেহায বা উপহার
মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে পিতা-মাতার পক্ষ থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় যে সব প্রয়োজনীয় গৃহ-সামগ্রী প্রদান
করা হয় তাকে উপহার বা জেহায বলে। উপহার বা জেহাজ দেয়ার প্রশ্নটিও ইসলামে কম গুরুত্বপুর্ণ নয়। দান-
জেহাজ-এর রেওয়াজ যে ইসলামে রয়েছে এবং শরী‘আত কর্তৃক তা সমর্থিত, তাতে কোন সন্দেহ নেই। হাদীস
গ্রন্থসমূহে এ সম্পর্কে এক স্বতন্ত্র অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে।
হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায়, উপহার বা জেহায দেয়ার রেওয়াজ রাসূলে করীম (স.) এর যুগেও বর্তমান ছিল
এবং নবী করীম (স.) নিজে তাঁর কন্যাদের বিয়ের সময় জেহায বা উপটোকন দিয়েছেন। হযরত আলী (রা)
বলেছেন ঃ
جهز رسول الله صلى الله علᘭه وسلم فاطمة في خمᘭل وقᗖᖁة ووسادة أدم
حشوها لᘭف الاذخر.
‘রাসূলে করীম (স.) ফাতিমাকে উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছিলেন একটি পাড়ওয়ালা কাপড়, একটি পানির পাত্র,
আর একটি চামড়ার তৈরি বালিশ-যার মধ্যে সুগন্ধিযুক্ত ইযখির খড় ভর্তি ছিল।’
হযরত আলী (র.) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীস থেকে জানা যায়, নবী করীম (স.) এই কয়টি জিনিস ছাড়াও
দু’টি যাতা এবং পাকা মাটির একটি পাত্র ফাতিমা (র.)-কে জেহায বা উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছিলেন।
এসব হাদীসের ভিত্তিতে আল্লামা আহমাদুল বান্না লিখেছেন:
এ পর্যায়ের যাবতীয় হাদীস প্রমাণ করে যে, জেহাজ বা উপঢৌকনের ব্যাপারে মধ্যম নীতি অবলম্বন করা এবং
তাতে প্রাচুর্য না করা বরং প্রত্যেক যুগের দৃষ্টিতে নিতান্তপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়াকেই যথেষ্ট মনে করা
আবশ্যক।
বস্তুত জেহায দেয়া কনের পিতা বা অভিভাবকের কর্তব্য। কিন্তু তাতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, প্রাচুর্য ও আতিশয্য
করা ইসলামী আদর্শের সম্পুর্ণ বিপরীত। বিশেষত এ ব্যাপারে শুধু নাম ডাক আর খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রাচুর্য
দেখানো জায়েজ নয়।
এছাড়া ছেলের পক্ষ কিছুতেই যৌতুক দাবী করতে পারবে না। মেয়ের পিত-মাতা ইচছা করে তাদের ক্ষমতা
অনুসারে তাদের মেয়েকে কিছু একটা প্রদান করা তাদের কর্তব্য এবং এটি সুন্নাতও। ছেলের বিয়ের সময় ছেলের
পক্ষ বা ছেলে নিজেই শ্বশুরের কাছ থেকে নিজের জন্য কিছু দাবী করা শরী‘আতে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং এটা অবৈধ ও গর্হিত কাজ।
এক কথায় উত্তর দিন
১. বিয়ে বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীর উপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্ত্রীকে স্বামী যে স¤পদ প্রদান করে
তাকে কি বলে?
২. স্ত্রীদের মাহর আদায় করা স্বামীদের উপর কি?
৩. মাহরের পরিমাণ কি রকম হওয়া উচিৎ? ইসলামী শরী‘আতে এ ব্যাপারে কি কোন অকাট্য নির্দেশ
আছে?
৪. ‘‘সবচেয়ে উত্তম মাহর হচেছ তা-যা আদায় করা সহজসাধ্য’’ এটি কার বাণী?
৫. মাহরের সর্বোত্তম পরিমাণ কি?
৬. মাহরের পরিমাণ ধার্য করার পর স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন সাধিত হলে কি পরিমাণ মাহর পরিশোধ করতে
হবে?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মাহর কাকে বলে লিখুন।
২. মাহরের পরিমাণ স¤পর্কে লিখুন
৩. কখন পূর্ণ মাহর প্রদান করতে হয়?
৪. কখন অর্ধমোহর আদায় করতে হয়?
৫. সমতুল্য মাহর কী?
৬. কখন সমতুল্য মাহর প্রদান করতে হয়?
৭. কাদের সামঞ্জস্যতায় সমতুল্য মাহর সাব্যস্তহয়?
৮. সমতুল্য মাহর আদায়ে কোন কোন বিষয়ে সামঞ্জস্যতা বিবেচ্য?
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. মাহরের শাব্দিক ও পরিভাষিক অর্থ কি? মাহরের বিধান কি? এর পরিমাণ স¤পর্কে প্রমাণসহ বিস্তারিত লিখুন।
২. কখন পূর্ণ মাহর, কখন অর্ধমোহর এবং কখন সমতুল্য মাহর আবশ্যক হয়? কাদের সামঞ্জস্যে সমতুল্য মাহর নির্ধারিত হয় এবং কি কি বিষয়ের সামঞ্জস্য বিবেচ্য? বিস্তারিতভাবে লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]