ইসলামী শরীআতে ব্যভিচারের শাস্তির বর্ণনা দিন এবং ব্যভিচারের শাস্তিকার্যকর হওযার শর্তাবলী লিখুন।

ব্যভিচারের ভয়াবহতা ও শাস্তির বিধান
ব্যভিচার একটি অশ্লীল কাজ ও সামাজিক অপরাধ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি জঘন্যতম পাপ। মানব জাতির স্থিতি,
মানব সমাজের সংহতি, মানবের যৌন সুস্থতা, নারীর নিরাপত্তা, মানব বংশ ধারার নিষ্কলুষতা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের
জন্যই ইসলাম ব্যভিচারকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানব ইতিহাসের সকল সভ্য সমাজ নারী-পুরুষের অবৈধ
যৌন সম্পর্ককে আবহমানকাল থেকে অপরাধ মনে করেছে। এ জন্য কঠিনতম শাস্তির বিধান রয়েছে। ইসলামী আইন
ব্যভিচারকে একটি দন্ডযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে। মানব জাতির স্থিতি ও সমাজের শৃংখলা রক্ষার
জন্য অপরিহার্য হল- নারী ও পুরুষের সম্পর্ক একমাত্র বৈধ, আইন সম্মত ও নির্ভরযোগ্য সম্বন্ধ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে।
কিন্তু অবাধ মিলনের সুযোগ দেওয়া হলে এ সম্পর্ককে পবিত্রতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। ইসলাম মানব সমাজকে
ব্যভিচারের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য শুধু আইনগত দন্ড-বিধানের উপরই নির্ভর করে না। বরং সে জন্য
ব্যাপকভাবে সংশোধনমূলক ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। যেমন-নারী-পুরুষের পর্দা করা, সংযত হয়ে চলা,
অবাধ মেলা-মেশা না করা, শালীন ও মার্জিত পোশাক পরা। বিবাহ ব্যবস্থার প্রচলন, অবিবাহিত থাকাকে নিরুৎসাহিত
করা, অন্যের ঘরে প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ ইত্যাদি।
আর এই আইনগত দন্ড কেবল শেষ ও চরম ব্যবস্থা হিসেবেই গ্রহণ করে। ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া এ দন্ডবিধান কার্যকর
করার অধিকার অপর কাউকে দেওয়া হয়নি। ইসলামের সকল দন্ডবিধিও শাস্তিদেয়ার অধিকার শুধু রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের।
ইসলামী আইন ব্যভিচারের শাস্তিকে রাষ্ট্রীয় আইনের একটি অংশ বলে ঘোষণা করেছে। যেহেতু ব্যভিচার একটি
মহাঅপরাধ এবং অনেক অপরাধের সমষ্টি, তাই ইসলামী আইনে এর শাস্তিও সবচাইতে গুরুতর বলা হয়েছে।
ইসলাম সব সময়ই এ কাজকে ঘৃণার চোখে দেখেছ। এর বীভৎসতা ও মারাত্মক প্রতিক্রিয়াকে অত্যন্তপ্রকট করে
দেখিয়েছে। এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে এবং তীব্র নিষেধাজ্ঞা উচ্চারণ করেছে। এর নিকটে
যেতেও কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছে। এ অপরাধের প্রতি উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে এমন সব কাজের আশেপাশে
ঘোরাফেরা করা এবং এ পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশংকা থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সর্বতোভাবে
নির্দেশ প্রদান করেছে-এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لاَ تَق ْرَ بُوا ْ ٱلزِّ نَىٰ إ ِنَّھُ كَانَ فَاحِ شَة ً وَ سَآءَ سَب ِیلا ً
“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।” (সূরা আল-ইসরা: ৩২) ‘কাছেও যেয়ো না’-দ্বারা
বোঝানো হয়েছে যে, যিনার প্রাককালীন কার্যাবলী এবং ব্যভিচার সহজ ও সম্ভব করে তোলে এমন সব কর্ম হতে দিও না
এবং তোমরা নিজেরাও তা করো না। এর ঘৃণ্যতা ও নিষিদ্ধতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে এ আয়াতে-
وَ ٱل َّذِ ینَ لاَ یَدْعُونَ مَعَ ٱلل َّھِ إ ِل َـٰھَا آخَرَ وَ لاَ یَقْتُل ُونَ ٱلنَّفْسَ ٱل َّتِى حَرَّ مَ ٱلل َّھُ إ ِلا َّ ب ِ ٱل ْحَقّ ِ
وَ لاَ یَزْ نُونَ
“তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তারা তাকে
হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না।” (সূরা আল-ফুরকান : ৬৮)
এখানে ব্যভিচারকে দুটি মহাপাপের সঙ্গে উল্লেখ করে ব্যভিচারের ভয়াবহতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ব্যভিচারের শাস্তিকার্যকারী হওয়ার শর্তাবলী
আমরা জানি, ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তিসর্বাধিক কঠোর। কোন ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্তকরার জন্য কেবল ‘সে
ব্যভিচার করেছে’, এতটুকুই যথেষ্ট নয়। বরং ব্যভিচারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্তকরার জন্য ইসলামী
আইন কতিপয় কঠোর শর্ত আরোপ করেছে। যাতে সামান্য ত্রট্টটি থাকলে অথবা সন্দেহ দেখা দিলে ব্যভিচারের চরম
শাস্তি‘হাদ্দ’ মওকুফ হয়ে যায়। শর্তগুলো নি¤œরূপ১। ইসলামী শরীআতের অন্যান্য বিষয়ে দুইজন সাক্ষী যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় কিন্তু ব্যভিচারের শাস্তিবা ‘হাদ্দ’
প্রয়োগ করার জন্যে চারজন সাক্ষীর চাক্ষুষ ও দ্ব্যর্থহীন সাক্ষ্য জরুরি। সূরা আল-নিসায়, এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে আরো যে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে, তা হচ্ছে-সাক্ষ্যদাতা যদি মিথ্যুক বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে
তাকে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত করে তার উপর ‘হাদ্দে কযফ’ বা ব্যভিচারের
মিথ্যা অপবাদের শাস্তিজারি করা হবে। অর্থাৎ এরূপ মিথ্যা সাক্ষীদাতাকে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হবে। ফলে
সামান্য সন্দেহ থাকলেও কোন ব্যক্তি এই সাক্ষ্যদানে অগ্রসর হবে না।
২। মুসলিম হতে হবে। অমুসলিমকে ব্যভিচারের শাস্তিদেয়া যাবে না।
৩। সরকারীভাবে ব্যভিচার মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ অপরাধের প্রতি উদ্ভূদ্ধ করে এমন সব নির্লজ্জতা বন্ধ
করতে হবে। ব্যভিচারকে সহজ ও সম্ভব করে এমন সব সুযোগ স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় ব্যভিচারের শাস্তি
প্রদান করা যাবে না।
৪। এ শাস্তিসরকারীভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ছাড়া অপর কাউকে ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে কোনরূপ
পদক্ষেপ গ্রহণ করার এবং শাস্তিদেওয়ার অধিকার দেয় না। ইসলামী আইন ব্যভিচারের শাস্তিকে রাষ্ট্রীয় আইনের
একটি অংশ বলে ঘোষণা করেছে। যদি ব্যভিচারের সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকে, কিন্তু পুরুষ-নারীর অবৈধ অবস্থা
পরিলক্ষিত হয়। তবে বিচারক তাদের অপরাধ অনুপাতে দন্ডমূলক শাস্তিবেত্রাঘাত ইত্যাদি জারি করতে পারেন।
অবিবাহিতের ব্যভিচারের শাস্তি
যে নারী বা পরুষ বিবাহিত নয়, যদি ব্যভিচারের অপরাধ করে, তাহলে তার শাস্তিহচ্ছে একশতটি বেত্রাঘাত। আল্লাহ
তাআলা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন-
ٱلزَّ انِیَة ُ وَ ٱلزَّ انِى فَٱجْلِدُوا ْ كُلَّ وَ احِ دٍ مِّنْھُمَا مِئَة َ جَل ْدَةٍ
‘ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী-তাদের প্রত্যেকে একশত কশাঘাত করবে।” (সূরা আন-নূর : ২)
বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তি
সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামী আইনে এর শাস্তিহচ্ছে প্রস্তরাঘাত করে হত্যা করা। কারণ বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারে
লিপ্ত হওয়া জঘন্যতম অপরাধ, তাই এর শাস্তিও কঠিন রাখা হয়েছে।
সারকথা
আমরা জানি-ব্যভিচার একটি জঘন্যতম দন্ডনীয় অপরাধ। মানব সমাজের সুস্থতার জন্যে ইসলাম ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ
করেছে এবং তা প্রতিরোধ করার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছে। বিবাহের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকা
সত্তে¡ও যারা এ জঘন্য পাপে লিপ্ত হয়, তা হলে এ শাস্তিউপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যকর হবে। অবিবাহিত নারী-পুরুষ
যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে এর শাস্তিএকশত বেত্রাঘাত। আর বিবাহিত হলে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদন্ড।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১. ব্যভিচার প্রমাণের জন্যে ক’জন সাক্ষীর প্রয়োজন?
ক. ৩ জন
খ. ৫ জন
গ. ৪ জন
ঘ. ২ জন
২. হাদ্দে কাযফ-এর শাস্তিকখন আরোপ করা হবে ?
ক. মিথ্যা কথা বললে
খ. ব্যভিচার করলে
গ. মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে
ঘ. কাউকে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দিলে।
৩. অবিবাহিতের ব্যভিচারের শাস্তিহচ্ছেক. ৮০ টি বেত্রাঘাত
খ. ১০০ টি বেত্রাঘাত ও দেশান্তর
গ. ১০০ টি বেত্রাঘাত
ঘ. পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা
৪. ব্যভিচারের শাস্তিকার্যকর করবেনক. মুফতীগণ
খ. স্থানীয় লোকজন
গ. সমাজপতিগণ
ঘ. রাষ্ট্রীয় প্রশাসন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর ঃ ১. গ, ২. ঘ, ৩. খ, ৪. ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. অবিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তির বর্ণনা দিন।
২. ব্যভিচারের শাস্তিকার্যকর হওয়ার শর্তাবলী লিখুন।
৩. বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তিবর্ণনা করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী শরীআতে ব্যভিচারের শাস্তির বর্ণনা দিন এবং ব্যভিচারের শাস্তিকার্যকর হওযার শর্তাবলী লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]