স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মীমাংসা পদ্ধতি তালাক দানের পদ্ধতি স¤পর্কে বিভিন্ন প্রকার তালাক স¤পর্কে বর্ণনা করুন।

তালাক বা বিচ্ছেদ কখন বৈধ
দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তিইসলামের একান্তকাম্য। তদুপরি দাম্পত্য জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে তখন
ইসলাম বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেয়। মানুষের একান্তপ্রয়োজনে ইসলাম যেমন তালাকের বিধান প্রবর্তন
করেছে, তদ্রƒপ বিনা প্রয়োজনে তালাকের মাধ্যমে নারী জাতির দুর্ভোগ সৃষ্টি করাকেও অন্যায় বলে চিহ্নিত
করেছে। এজন্যই রাসূল (স) বলেছেনÑ
“আল্লাহর নিকট ঘৃণ্যতম হালাল বা বৈধ বিষয় হল তালাক বা বিচ্ছেদ”। ফিকহবিদদের মতেও তালাক মূলত
নিষিদ্ধ। তবে তালাক না দিয়ে যদি কোন উপায়ই না থাকে তাহলে তা অবশ্যই বৈধ।
স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মীমাংসা
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটু কিছু হলেই তালাক প্রদান করা, উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করা ইসলাম সমর্থন করে না।
তালাক হচ্ছে সকল উপায়ের শেষ উপায়। সর্ব প্রথম তাদের পারস্পরিক বিরোধ ও কলহ মীমাংসার পথ অবলম্বন
করতে হবে। নিম্নেতাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ ও কলহ মীমাংসার পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
বিরোধ মীমাংসার পন্থা
ইসলাম সর্ব প্রথম দাম্পত্য জীবনের সম্ভাব্য সকল প্রকার বিরোধ ও মনোমালিন্য শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার
ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নিম্নলিখিত উপায়ে বিরোধসমূহের মীমাংসা করা সম্ভব:
দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ স¤পন্ন হওয়া
ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই উভয়ের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধসম্পন্ন হতে
নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলে করীমের এ মহামূল্য বাণীটি বারংবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে:
ألا ᛿لᝣم راع و ᛿لᝣم مسئول عن رعيته.
‘সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’
و الرجل راع على أهله و هو مسئول عن رعيته.
‘পুরুষ তার পরিবারবর্গের জন্যে দায়িত্বশীল। আর আল্লাহর কাছে (সে এজন্য) জবাবদিহি করতে বাধ্য।’
و المراة راعᘭة على بᛳت زوجها وهى مسئولة عن رعيتها.
‘স্ত্রীও অনুরূপভাবে তার স্বামীর ঘরবাড়ি ও যাবতীয় আসবাবপত্রের জন্যে দায়িত্বশীল এবং সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে
জিজ্ঞাসিত হবে।’
বস্তুত এ দায়িত্ববোধ উভয়ের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় জাগ্রত থাকলে পারিবারিক জীবনে কখনো ভাঙ্গন বা বিপর্যয় আসতে
পারবে না, কখনো তালাকের প্রয়োজন দেখা দেবে না।
ধৈর্যশীল হওয়া
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখনই কোন প্রকার বিবাদ-বিরাগ বা মনোমালিন্য দেখা দেয়, তখনই তাদের
উভয়ের জন্যে এ উপদেশ রয়েছে যে, প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে সহ্য শক্তি বৃদ্ধি করে।
অপরের কোন কিছু অপছন্দনীয় হলে বা ঘৃণার্হ হলেও সে যেন দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য রক্ষার স্বার্থে তা অকপটে
সহ্য করতে চেষ্টা করে। কেননা এ কথা সর্বজনবিদিত যে, পুরুষ ও স্ত্রী স্বভাব-প্রকৃতি, মন-মেজাজ ও আলাপ
ব্যবহার ইত্যাদির দিক দিয়ে পুরামাত্রায় সমান হতে পারে না। কাজেই অপরের অসহনীয় ব্যাপার সহ্য করে
নেয়ার জন্যে নিজের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করা কর্তব্য।
নিকট আÍীয়দের ভ‚মিকা
দাম্পত্য জীবন সংরক্ষণের এ ব্যবস্থা যদি ব্যর্থ হয়ে যায়, বিরোধ বিরাগ ও মনোমালিন্যের মাত্রা যদি ক্রমশ বৃদ্ধি
পেতেই থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে চূড়ান্তমীমাংসার জন্যে উভয়ের নিকটাত্মীয়দের সাগ্রহে এগিয়ে আসা কর্তব্য।
স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন এবং স্বামীর পক্ষ থেকে একজন পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ বিধানের জন্যে ঐকান্তিক
নিষ্ঠাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে চেষ্টা চালাবে। এ যেন পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার আদালত এবং এ আদালতের
বিচারপতি হচ্ছে এ দু’জনই। তারা উভয়ের মনোমালিন্যের বিষয় ও তার মূল কারণ সর্তকতার সঙ্গে অনুসন্ধান
করবে। আর তার সংশোধন করে স্থায়ী মিলমিশ ও প্রেম ভালবাসা পুনর্বহালের জন্যে চেষ্টা করবে। বস্তুত স্বামী-স্ত্রী
যদি বাস্তবিকই মিলে মিশে একত্র জীবন যাপনে ইচ্ছুক এবং সচেষ্ট হয় তাহলে সাময়িক ছোটখাট বিবাদ নিজেরাই
মীমাংসা করে নিতে পারে। আর বড় কোন ব্যাপার হলেও তা এ পারিবারিক সালিশী আদালত দ্বারা মীমাংসা
করিয়ে নেয়া খুবই সহজ। কুরআন মজীদে নি¤েœাক্ত আয়াতে এ ব্যবস্থারই নির্দেশ করা হয়েছে ঃ
وَ ល ِنْ خِ فْ تُ مْ شِ قَ اقَ بَ ᚏ ْنِ هِ مَ ا فَ ٱᗷ ْعَ ثُ وا᠔ حَ ᜓ᠐ ما᠍ مِّ نْ أ᠐ هْ لِ هِ وَ حَ ᜓ᠐ ما᠍ مِّ نْ أ᠐ هْ لِ هَ ቯ إِ ن
يُ ᠒ᖁ ᗫدَ آ إِ صْ ᢿ َحا᠍ يُ وَ فِّ قِ ٱللᡐ هُ بَ ᚏ ْنَ هُ مَ ቯ .
‘যদি তোমরা তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা কর, তাহলে তোমরা তার পরিবার থেকে একজন বিচারক
এবং তার (স্ত্রীর) পরিবার থেকে একজন বিচারক নিযুক্ত করবে। তারা দু’জন যদি সংশোধন করতে চায়, তাহলে
আল্লাহ তাদের সে জন্যে তাওফীক দান করবেন।’ (সূরা আন-নিসা : ৩৫)
এ আয়াতের মূল বক্তব্য হচেছ- তোমাদের মনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে যদি কোন প্রকারের সন্দেহের
উদ্রেক হয়Ñ সম্পর্ক মধুর নেই বলে ধারণা জন্মে, তাহলে তখন প্রকৃত ব্যাপার তদন্তকরা এবং অবস্থার
সংশোধনের জন্যে চেষ্টা করা অবশ্য কর্তব্য। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে দাম্পত্য জীবনে ভাঙ্গন আসতে
পারে এবং তা কিছুতেই কারো কাম্য হতে পারে নাÑ ইসলামও তা পছন্দ করে না। আর এ চেষ্টার পদ্ধতি
হিসেবে বলা হয়েছে, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক এমন দু’জন ব্যক্তিকে মধ্যস্থতাকারী ও সালিশ
হিসেবে নিয়োগ করতে হবে, যারা কোন কথা বলে উভয়কে মানাতে পারবে। এ দু’জনকে এদের নিকটাত্মীয়দের
মধ্য থেকেই হতে হবে। কেননা, নিকটাত্মীয়রাই প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অধিক ওয়াকিফহাল এবং তারা অবশ্যই
উভয়ের মধ্যে মিলমিশ করার জন্যে সর্বাধিক আগ্রহী। (তাফসীরে বায়যাবী)
বাইরের লোক এ মীমাংসার কাজে নিয়োগ না করে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই আপন জন নিয়োগের নির্দেশ দেয়ার কারণ
কি, তা আল্লামা আবূ বকর আল-জাসসাস-এর নি¤েœাক্ত কথা থেকে জানা যায়। তিনি এর কারণ দর্শাতে গিয়ে
লিখেছেন ঃ
বাইরের অনাত্মীয় লোক বিচারে বসলে তাদের কোন এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে ; কিন্তু
উভয়েরই আপন আত্মীয় যদি এ মীমাংসার ভার গ্রহণ করে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ পক্ষের কথা বলে, তাহলে
এ ধারণার অবকাশ থাকে নাÑ এজন্যেই আত্মীয় ও আপন লোককে এ বিরোধ মীমাংসার ভার দিতে বলা হয়েছে।
বিচারকদের দায়িত্ব হল, তারা দু’জন মিলে একত্রে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকতে চাইলে তার ব্যবস্থা করে দেয়া। আর
যদি মনে করে যে, তারা উভয়েই বিচ্ছিন্ন হতে চায়, তাহলে পরস্পরকে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মিতভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
বিচারকদ্বয় সব কথা শুনে, সব অবস্থা জেনে বুঝে একটি চূড়ান্তফয়সালা দেবে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়কে তা মানবার
জন্যে বলবে। কিন্তু যদি তারা উভয় বা একজন তা মানতে রাযী না হয়, তাহলে তাকে ফয়সালা মেনে নেয়ার
জন্যে নির্দেশ দিবে। কেননা আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ দ্বারা বুঝা যায়, এ দু’জন প্রথমত এক এক পক্ষ থেকে উকীল
হিসেবে নিয়োজিত আর উকীলের কাজ হল শুধু বলা। কিন্তু সে বলায় যদি স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের চূড়ান্তঅবসান না
হয়, তাহলে তারা দু’জনে বিচারকর্তার মর্যাদা নিয়ে রায় মেনে নেয়ার জন্যে নির্দেশ দেবে। এ নির্দেশ মেনে নিতে
উভয়েই বাধ্য। কেননা কুরআন মজীদে তাদের বলা হয়েছে ‘হাকাম’, বিচারক বা ফয়সালাকারী।
তালাক বা বিবাহ বিচেছদের পদ্ধতি
এ ধরনের যাবতীয় চেষ্টা চালানোর পরও যদি মিলেমিশে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকবার কোন উপায় না বের হয়, বরং
উভয় পক্ষই চূড়ান্তবিচ্ছেদ ঘটানোর জন্যে অনমনীয় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ইসলাম তাদের দাম্পত্য জীবনের
চূড়ান্তঅবসান ঘটাবার তথা তালাক দেয়ার অবকাশ দিয়েছে।
ইসলামে এ তালাক দানের একটা নিয়মও বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং তা হচ্ছে, স্বামী তার স্ত্রীকে ‘তুহর’ (ঋতুবতী
না থাকা) অবস্থায় একবার এক তালাক দেবে। এ তালাক লাভের পর স্ত্রী স্বামীর ঘরেই ‘ইদ্দত’ পালন করবে। কিন্তু
স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক রাখবে না।
এরূপ তালাক প্রদান ও ইদ্দত পালনের নিয়ম করার কারণ হলÑ এতে করে উভয়েরই অধিক সুবিবেচক হয়ে
ওঠার সুযোগ হবে। চূড়ান্তবিচ্ছেদের যে কি মারাত্মক পরিণাম তা তারা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারবে।
স্পষ্টভাবে বুঝতে সক্ষম হবে যে, তালাকের পর তাদের সন্তান-সন্ততি ও ঘর-সংসারের কি মর্মান্তিক দুর্দশা হতে
পারে। ফলে তারা উভয়ই অথবা যে পক্ষ তালাকের জন্যে অধিক পীড়াপীড়ি করেছেÑঝগড়া-বিবাদ ও বিরোধমনোমালিন্য সম্পূর্ণ পরিহার করে আবার নতুনভাবে মিলিত জীবন যাপন করতে রাজি হতে পারে। এ সাময়িক
বিচ্ছেদ তাদের মধ্যে প্রেম-ভালবাসার তীব্র আকর্ষণও জাগিয়ে দিতে পারে এবং তাদের মধ্যে মিলন ঘটতে পারে।
যদি এভাবে তালাক প্রদান করা হয়, তাহলে এ তালাককে ‘এক তালাকে রাজয়ী’ বা ‘ফিরে পাওয়ার অবকাশ পূর্ণ
তালাক’ বলা হবে। তিন মাস ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই উভয়ের পুনর্মিলন সাধন করতে হবে। এতে নতুন করে
বিয়ে পড়াতে হবে না (যদিও ইমাম শাফে’ঈর মতে মুখে অন্তত ফিরিয়ে নেয়ার কথা উচ্চারণ করতে হবে।)
কিন্তু যদি এভাবে তালাক দেয়ার পর তিন মাসের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নেয়া হয়, তাহলে এ তালাক এক বায়েন
তালাক হয়ে যাবে। তখন যদি ফিরিয়ে নিতে হয়, তাহলে পুনরায় বিয়ে পড়াতে হবে ও নতুন করে দেন-মাহর
ধার্য করতে হবে। এমতাবস্থায় স্ত্রী স্বাধীন, সে ইচ্ছা করলে প্রথম স্বামীকে পুনরায় গ্রহণ করতেও পারে, আর ইচ্ছা
না হলে সে অপর কোন ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে বরণ করে নিতে পারে। প্রথম স্বামী এ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে
কোনরূপ জবরদস্তিবা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না এবং তার অপর স্বামী গ্রহণের পথে বাধ সাধতেও পারবে না।
এক তালাকের পর ইদ্দতের মধ্যেই স্ত্রীকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয়, আর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবন যাপন শুরু করার
পর আবার যদি বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে প্রথমবারের ন্যায় আবার পারিবারিক আদালতের সাহায্যে মীমাংসার
জন্যে চেষ্টা করতে হবে। এবারও যদি মীমাংসা না হয় তাহলে স্বামী তখন আর এক তালাক প্রয়োগ করবে।
তখনও প্রথম তালাকের নিয়ম অনুযায়ীই কাজ হবে। অর্থাৎ ইদ্দতের মধ্যে যদি তাদের মধ্যে মিলন ঘটে তাহলে
এ দুইতালাককে “দুই তালাকে রাজয়ী” বলে। আর যদি ইদ্দতের মধ্যে মিলন না ঘটে তাহলে এ দুই তালাক,
“দুই তালাকে বায়েন” হিসেবে গণ্য হবে। যদি পুনরায় ফিরিয়ে নিতে হয় তাহলে নতুন বিয়ে পড়াতে হবে এবং
নতুন করে মাহর ধার্য করতে হবে।
দ্বিতীয়বার তালাক দেয়ার পর যদি স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয় আর তারপর বিরোধ দেখা দেয়, তখনো প্রথম
দুবারের ন্যায় মীমাংসার চেষ্টা করতে হবে। আর তা কার্যকর না হলে স্বামী তৃতীয়বার তালাক প্রয়োগ করতে
পারে। আর এই হচ্ছে তার তালাক প্রদানের ব্যাপারে চূড়ান্তও সর্বশেষ ক্ষমতা। অতঃপর স্ত্রী তার জন্যে হারাম
এবং সেও তার স্ত্রীর জন্যে চিরদিনের জন্যে হারাম হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
ٱلطَّ ᢿ َقُ مَ رَّ تَ انِ فَ إِ مْ سَ اكٌ ᗷ ِمَ عْ رُ وفٍ أ᠐ وْ ᘻ َسْ ر᠒ ᗫــحٌ ب ឝ ِحْ سَ انٍ .
‘তালাক দু’বার। তার পরে হয় ভালভাবে স্ত্রীকে রেখে দিবে অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দিবে।’ (সূরা আলবাকারা : ২২৯)
এ ‘বিদায় করে দেয়া হবে’ বাক্য থেকেই তৃতীয় তালাক প্রমাণিত হল।
নবী করীম (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ঃ আয়াতে তো মাত্র দুবার তালাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে,
তাহলে তৃতীয় তালাক কোথায় গেল ? তখন রাসূলে করীম (স.) বললেন ঃ
احسـانᗷ ــحᗫسـرᘻ أو ‘কিংবা ভালভাবে বিদায় করে দেয়া হবে’ বাক্যেই তৃতীয় তালাকের কথা নিহিত রয়েছে। (আবূ দাউদ)
উপরোক্ত পদ্ধতিতে তালাক প্রদানকে সর্বোত্তম তালাক (الطلاق أحسن (অথবা উত্তম তালাক
(الطلاق حسن (বা সুন্নাত তালাক বলা হয়।
الطلاق أحسن বা সর্বোত্তম পন্থায় তালাক
আহাসানুত্ তালাক বলতে বুঝায় সর্বোত্তম তালাক। তথা স্বামী তার স্ত্রীকে এমন তুহুরে (ঋতুস্রাব শেষে
পবিত্রতাবস্থায়) এক তালাক প্রদান করা যে তুহুরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলন হয়নি এবং তালাক প্রদানের পর
ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্তস্ত্রীর সঙ্গে পূনর্মিলনও ঘটেনি (তালাকের পর স্ত্রী যে সময় কাল পর্যন্তঅপেক্ষা করে তাকে
ইদ্দত বলে।)
الطلاق حسن বা উত্তম পন্থায় তালাক
হাসানুত্ তালাক বলতে বুঝায় স্ত্রীকে পৃথক পৃথকভাবে তিন তুহুরে (পবিত্রাবস্থায়) তিন তালাক প্রদান করা।
যেহেতু উপরোক্ত দু পদ্ধতিতে স্বামীর জন্য তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়া নেয়ার সুযোগ রয়েছে এবং স্ত্রীর ও স্বামীর
অনুশোচনার সুযোগ রয়েছে তাই এ দুটো পদ্ধতিতে তালাক প্রদান করাকে সর্বোত্তম বা উত্তম তালাক বলে।
তালাকে বেদয়ী বা সুন্নাত পরিপন্থী তালাক
এমনভাবে তালাক দেয়া, যার ফলে স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে পুনরায় আবার ফিরিয়ে নেয়ার বা তাদের উভয়ের
অনুশোচনা করার অবকাশ না থাকে তাকে তালাকে বেদয়ী বা সুন্নাতের পরিপন্থী পদ্ধতির তালাক বলে। যথা
স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক প্রদান করা। এছাড়া ঋতুস্রাব অবস্থায় তালাক প্রদান করাও সুন্নাত পরিপন্থী তালাক
কারণ এতে ইদ্দত গণনার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনুরূপভাবে যে পবিত্রতার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন
হয়েছে সে পবিত্রতায়ও তালাক দেওয়া সুন্নাত পরিপন্থী। কারণ এ যৌনমিলনের ফলে স্ত্রী-গর্ভধারণ করতে পারে।
আর এ অবস্থায় তালাক দেওয়া অনুচিত।
তালাক দানের কয়েকটি পন্থা
স্বামী-স্ত্রী বিয়ে-সূত্রের অধিকারী। এ সূত্র ছিন্ন করার কিংবা রাখার ব্যাপারে তাদের অধিকারই স্বীকৃত। এ অধিকার
অনুযায়ী বিয়ে সূত্রকে ছিন্ন করে দেয়ার নামই হল শরী‘আতের পরিভাষায় তালাক। এ তালাক কয়েক প্রকারে হতে পারে।
তালাক রাজয়ী
তালাক দেয়ার পরও নতুন বিয়ে-অনুষ্ঠান ব্যতিরেকেই যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে রাখার অধিকার থাকে তবে তা হবে
রাজ্য়ী তালাক। আর যদি সে অধিকার না থাকে, তবে তাকে বলা হবে বায়েন তালাক।
এক/দুই তালাকে বায়েন
যার পর স্বামী তার তালাক দেয়া স্ত্রীকে নতুন বিয়ে অনুষ্ঠান না করে ফিরিয়ে নিতে পারে না। বরং উক্ত স্ত্রীকে
পুনরায় গ্রহণ করতে হলে নতুন করে বিয়ের আক্দ হতে হবে।
তিন তালাকে বায়েন
এমন তালাক যার পর স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে না। পারে কেবল একটি অবস্থায়। আর তা হচ্ছে এই
যে, স্ত্রীলোকটি সঠিক ও স্বাভাবিক পন্থায় অপর এক স্বামী গ্রহণ করবে এবং সে তার সাথে প্রকৃতভাবেই যৌন
সম্পর্ক স্থাপন করবে। এরপর তাদের মাঝে কোন কারণে বিচ্ছেদ হবে কিংবা সেই দ্বিতীয় স্বামী তাকে রেখে মারা
যাবে এবং তার পর ইদ্দত পালিত হবে আর তখনই প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করা বৈধ।
বিভিন্ন প্রকারের তালাক কেন
তালাক ব্যবস্থায় এরূপ বিভিন্ন পন্থার অবকাশ রাখার মূলে ইসলামী শরী‘আতের এক বিশেষ কল্যাণময় উদ্দেশ্যে
নিহিত রযেছে। তা হচ্ছে, শরী‘আতের বিধানদাতার একমাত্র কামনা হল পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের
অক্ষুণœতা ও স্থায়িত্ব বিধান অর্থাৎ স্বামী যদি কোন জটিল মুহূর্তে বা বিশেষ কারণে তালাক দিতে বাধ্য হয়, তাহলে
সে যেন ঠিক সেই পন্থায়ই তালাক দেয়, যে পন্থায় তালাক দিলে পরে তার স্ত্রীকে পুর্নবহাল করার শরী‘আতসম্মত
ও সম্মানজনক উপায় বর্তমান থাকে। হয় এমন অবস্থা হবে যে, ইদ্দতের মধ্যেই তাকে অবাধে ও সহজভাবে
ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। আর তা রাজয়ী ও বায়েন তালাকে সম্ভব। এ দু’ ধরনের তালাকে ১/২ তালাকের পর স্ত্রী
সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যায় না। রাগের বশবর্তী হয়ে কিংবা স্ত্রীকে শাসন করার উদ্দেশ্যে কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে
তালাক দিতেই চায় তাহলে সে যেন এ পর্যায়ের তালাক প্রদান করে। এক সঙ্গে তিন তালাক প্রদান না করে।
১. আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতম বৈধকাজ কোনটি?
ক. তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়া খ. বিবাহের আক্দ নবায়ন করা
গ. তালাক দেওয়া ঘ. স্ত্রীর উপর অত্যাচার করা।
২. তালাক প্রদান করা কখন বৈধ?
ক. দা¤পত্য জীবনে স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে খ. দা¤পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়লে
গ. স্ত্রী সন্তান জন্ম না দিলে ঘ. স্ত্রী মাহর দাবি করলে।
৩. কেউ তার স্ত্রীকে এক তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতগণনাকালীন অবস্থায়
ক. আর তাকে ফিরিয়ে নিতে পারবে না খ. ইদ্দতের পর ফিরিয়ে নিতে পারবে
গ. ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিতে পারবে ঘ. কোনটিই সঠিক নয়।
একথায় উত্তর দিন
১. এক তালাক প্রদান করার পর ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে ঐ তালাককে কি বলে?
২. এক তালাক প্রদান করার পর ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নিলে ঐ তালাককে কি বলে?
৩. কেউ এক তালাক বা দুই তালাক বায়েন এর পর যদি স্ত্রীকে আবার গ্রহণ করতে চায় তাহলে কি করতে হয়?
৪. স্ত্রীকে তিন তহুরে (পবিত্রাবস্থায়) এক এক করে তিন তালাক দেওয়াকে শরী‘আতের পরিভাষায় কি বলে?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. তালাক কখন বৈধ? লিখুন।
২. স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মীমাংসার পন্থা কী? লিখুন।
৩. তালাক প্রদানের সঠিক পদ্ধতি লিখুন।
৪. সর্বোত্তম তালাক কাকে বলে? লিখুন।
৫. উত্তম তালাক কাকে বলে লিখুন।
৬. সুন্নাত পরিপন্থী তালাক কাকে বলে? লিখুন।
৭. তালাকে রাজয়ী বায়েন কাকে বলে? লিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মীমাংসা পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে লিখুন।
২. তালাক দানের পদ্ধতি স¤পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করুন।
৩. বিভিন্ন প্রকার তালাক স¤পর্কে বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]