ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ বৈধ ও অবৈধ হওয়ার যুক্তি তুলে ধরুন।

জন্মনিয়ন্ত্রণ
জন্মনিয়ন্ত্রণ হচ্ছে মানব বংশ বৃদ্ধি রোধ। ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ সাধারণভাবে বৈধ নয়। তবে ক্ষেত্র
বিশেষে ইসলামী চিন্তাবিদগণ শর্ত সাপেক্ষে বৈধ ঘোষণা করেন। জন্মনিয়ন্ত্রণকে পরিবার পরিকল্পনা বলে চালিয়ে
দিলেও এটি প্রকৃত পক্ষেই জন্ম নিরোধ। পরিবারের কল্যাণ করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয় না। কেননা জন্ম নিরোধ
শুধু গর্ভ সঞ্চার রোধ করার প্রতিই গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সীমিত রাখা এবং সীমিত
সদস্যের মধ্যে সম্পদ বেশি পরিমাণে ভাগ করে দেওয়াই জন্মনিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের সূচনা
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইউরোপে প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের সূচনা হয়। ধারণা করা হয় যে, ইংল্যান্ডের
বিশিষ্ট পন্ডিত অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসই-এর ভিত্তি রচনা করেন। সে সময় ইংল্যান্ডবাসীর প্রাচুর্যময় জীবন-যাপনের
ফলে জনসংখ্যা দ্রæত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার দেখে ম্যালথাস হিসাব করতে শুরু
করেন যে, পৃথিবীর আবাদযোগ্য জমি ও অর্থনৈতিক উপায় উপকরণ সীমিত। কিন্তু বংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমাহীন।
যদি স্বাভাবিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় সংকীর্ণ হয়ে যাবে অর্থনৈতিক
উপকরণাদি। তখন মানুষের জীবন যাত্রার মান নি¤œগামী হয়ে যাবে। সুতরাং মানব জাতির স্বচ্ছন্দ, আরামআয়েশ, কল্যাণ ও শান্তির জন্যে মানব বংশ বৃদ্ধির সাথে আয়কে সঙ্গতি রক্ষা করে চলতে হবে। জনসংখ্যা যেন
কখনো অর্থনৈতিক উপাদানের উর্ধ্বে যেতে না পারে। এতদুদ্দেশ্যে তিনি ব্রহ্মচার্যের প্রাচীন প্রথাকে পুনরুজ্জীবিত
করার পরামর্শ দিয়েছেন। অধিক বয়সে বিয়ে করা এবং স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনে যথেষ্ট সংযম অবলম্বন করার প্রতি
অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এরপর ফ্রান্সিস প- ্যাস ফরাসী দেশে একই উদ্দেশ্যে জনসংখ্যা রোধ করার প্রতি
জোর দেন। এ উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্যে তিনি ঔষধ ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে গর্ভনিরোধ করার প্রস্তাব
দেন। আমেরিকার বিখ্যাত চিকিৎসক চার্লস জেনটন ১৮৩৩ সালে এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থনসূচক ইঙ্গিত দান
করেন। তাঁর রচিত “দর্শনের ফলাফল’’ নামক পুস্তকেই সম্ভবত সর্বপ্রথম গর্ভনিরোধের চিকিৎসা শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
এবং উপকারিতার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ
ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কেন উদার দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তে ভিন্ন দৃষ্টি পোষণ করে এ সম্পর্কে এখানে আলোচনা
হওয়া দরকার। আমরা জানি, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামী জীবন দর্শনে রিযকের মালিক
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি মানুষসহ সকল প্রাণির রিযকের ব্যবস্থা করে থাকেন। ইসলামী বিশ্বাস মতে,
মানুষ কখনো খাদ্যের অভাব করবে না। পৃথিবীতে যে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় তা সুষম বন্টনের অভাবেই হয়ে
থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, ইসলাম প্রচলিত অর্থে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় কোন অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্ম নয়।
বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ধর্মনিরপেক্ষ কর্মজীবন ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। যে সব জাতি
আজ চিন্তার ক্ষেত্রে দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা ধর্মকে কর্ম জীবন থেকে পৃথক করে নিয়েছে। তাদের সমগ্র
কর্মজীবন ধর্ম, আল্লাহ, রাসূল এবং আখিরাত ইত্যাদির প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ধর্ম সেখানে নিতান্তই কর্মহীন
বিশ্বাস ও অর্থহীন অনুষ্ঠান মাত্র। ইসলাম একটি জীবন দর্শন ও জীবন বিধান। কতকগুলো বিশেষ আকীদা বিশ্বাস
এর প্রধান ও প্রথম ভিত্তি। এ সব বিশ্বাসের ভিত্তিতে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ইসলামের এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি
রয়েছে। তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, সুন্দর-অসুন্দর ইত্যাদি সম্পর্কে
ইসলামের এক নিজস্ব মূল্যবোধ ও মূল্যমান রয়েছে। আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ শুধু কতকগুলো বিশ্বাস ও
মূল্যবোধই দান করেনি, জীবনের প্রত্যেক বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় আইন কানুনও দিয়েছে; আবার সে সব
আইন কানুনকে সঠিকভাবে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলবার জন্যও জোর তাকীদ
দিয়েছে।
তাই একজন মুসলিম ও একজন বস্তুবাদী ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক কারণেই পৃথক হতে বাধ্য। কোন কিছুকে
গ্রহণ ও বর্জন করার ব্যাপারে একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম যখন বিচার বিবেচনা করবে, তখন সে দেখবে যে বিবেচ্য
বিষয়টি বাহ্যত এবং পরিণামে ইসলামের আকিদা মূল্যবোধ ও সামগ্রিক জীবন বিধানের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে
কিনা। কিন্তু একজন জড়বাদী শুধু আশু বস্তগত লাভলোকসানের ভিত্তিতেই গ্রহণ ও বর্জনের সিদ্ধান্তগ্রহণ করে।
ধর্মীয় মুল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবতার দিক দিয়ে এর পরিণাম মারাতœক কিনা, তা বস্তুবাদী ব্যক্তি বিবেচনার
বিষয় বলেই মনে করে না। ইসলাম তার আকীদা- বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে বস্তুবাদী ধর্মনিরপেক্ষ বা
ধর্মহীনদের ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করতে পারে না।
জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নিয়াতের গুরুত্ব
اتᘭالنᗷ الاعمال انما ‘নিশ্চয় প্রত্যেক কাজ নিয়ত দ্বারাই বিচার্য।’
এ বিখ্যাত হাদীসটির কষ্টিপাথরেই আল্লাহ পাক মানুষের প্রত্যেক কাজের বিচার করে থাকেন। এমন কি, একটি
বাহ্যত মহান কাজও খারাপ নিয়াতের ফলে আল্লাহর নিকট শাস্তিযোগ্য। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের বেলায়ও নিয়াতের
প্রশ্নটি অত্যন্তমৌলিক। জন্মনিয়ন্ত্রণের যে আন্দোলন আজ দুনিয়াময় চালু হয়েছে তা কোন উদ্দেশ্যে বা নিয়াতে?
“দুনিয়ায় খাদ্যের অভাব। মানুষ জ্যমিতিক হিসাবে বাড়ছে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্য গাণিতিক হিসাবে উৎপন্ন হয়। তাই
মানুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ করা ব্যতীত উপায় নেই” -এ হল জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রধান যুক্তি। তা ছাড়া আরো একটি যুক্তি
দেখানো হয়, ‘‘যে হারে দুনিয়ায় মানব বংশ বেড়ে চলেছে, তাতে কয়েকশ বছর পর নাকি দুনিয়ায় দাঁড়াবার
স্থানও পাওয়া যাবে না।’’ তাই এখন থেকেই মানব সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, যাতে দুনিয়া এত বড় সমস্যার
সম্মুখীনই না হয়। কিন্তু এ উদ্দেশ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ ইসলামের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য কিনা তা-ই বিচার্য্য বিষয়। আলকুরআনে বর্ণিত হয়েছেم ᠑ᝏا َّᘌ ِល َوْ مُ هُ قُ زْ رَ نُ نْ ح نٍَّ لاقْ مِ إَ ة ᘭ ْشَ خْ م ᠑ᝏ َلادْ و ᠐أ ᠔اۤ و ᠑لُ تْ قَ تَ ᢻ َو.
‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না। আমিই তোমাদের রিযক দিয়ে থাকি এবং
তাদেরকেও।’ (সূরা বনী ইসরাইল : ৩১)
আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দ্বারা সন্তান হত্যা করা হয় না মনে করে যারা একে জায়িয বলতে চান তারা এর
নিয়াতের দিকটা একেবারেই ভুলে যান। আল্লাহ পাক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, অর্থনৈতিক কারণে (অভাবের
ভয়ে) সন্তান হত্যা করো না। নিয়াতের দিক দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রধান উদ্দেশ্যই হল অর্থনৈতিক।
প্রাচীনকাল থেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থনৈতিক কারণে মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন
করতো। গ্রীকদের মধ্যে গর্ভপাতের রীতি প্রচলিত ছিল। হযরত মুহাম্মদ (সা) -এর সময় আরবদের মধ্যে
দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যার প্রথা বিদ্যমান ছিল। সেকালে সন্তান পেটে আসার বা জন্ম নেয়ার পূর্বে মেরে ফেলা
কঠিন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সন্তানকে মায়ের পেটে পৌঁছবার পূর্বেই মেরে ফেলার পন্থা আবিষ্কার হয়েছে। গর্ভস্থ
সন্তান হত্যা করাতো বর্তমানে একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরবের জাহেলিয়াতপন্থীরা যে নিয়াতে
সন্ত্না হত্যা করতো, আধুনিক জাহেলিয়াতেও সে নিয়াতেই জন্মনিয়ন্ত্রণ চলছে। শুধু পন্থা ভিন্ন হওয়া দ্বারা কোন
কাজ বিচার্য নয়। ইসলামে সব কাজকে নিয়াত দ্বারাই বিচার করা হয়। লাঠি দিয়ে খুন করতে ২/৩ হাত দূরে
থেকে আঘাত করতে হয়। কিন্তু এখন ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ৪/৫ শত মাইল দূর থেকেই আঘাত হানা যায়। খুন
করার প্রাচীন ও আধুনিক পন্থা ভিন্ন হলেও নিয়াতের দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ইসলাম
খাদ্যের ভয়ে জন্মনিরোধ, ভ্রƒণ হত্যা বা গর্ভনিরোধ করাকে মানব হত্যার সমান অপরাধ বলে মনে করে।
খাদ্যাভাবের যুক্তি দেখিয়ে যারা গর্ভনিরোধ, ভ্রƒণ হত্যা বা গর্ভপাতকে বৈধ মনে করেন তাদের যুক্তিকে অসার
. وَ مَ ا مِ ن دَ آᗷَّ ةٍ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ إِ ᢻَّ عَ ل᠐ ى ٱللᡐ هِ ر᠒ زْ قُ هَ اছয়েহে ঘাষিত নেকেুরআ-আল রকে প্রতিপন্ন
‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই।’ (সূরা হুদ : ৬)
উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী মহান আল্লাহ শুধু মানুষের রিযকই নয়, সমস্তপ্রাণির যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের
জিনিসপত্রই সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আল্লাহকে রাযযাক বলে বিশ্বাস করার অর্থই এই যে, তিনি প্রত্যেকের রিযক
নিশ্চয়ই তৈরি করেছেন। তবু যদি অভাব থেকে যায় তা হলে বুঝতে হবে যে, কোন কৃত্রিম কারণ কোথাও
রয়েছে। যেমন- উপার্জনে চেষ্টার অভাব, সমাজে সম্পদ বন্টনের ভ্রান্তনীতি, আন্তর্জাতিক বিনিময়ের বেইনসাফী
ইত্যাদি। আল্লাহর রায্যাক হওয়ায় বিশ্বাসী যারা, তাদের পক্ষে অভাবের ঐসব কারণ দূর করতে সচেষ্ট হতে
হবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের অবিশ্বাসীরা তাদেরই সৃষ্ট অভাবের মূল কারণ দূর না করে মানুষ কমাবার পরিকল্পনা
দিয়েছে এবং অন্যান্যরা তাদের অন্ধ অনুসরণ করে চলছে।
এ প্রসঙ্গে কুরআন পাকের আরও কয়েকটি আয়াত অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ঃ
وَ ᠐ᝏ أ᠐ يِّ ن مِّ ن دَ آᗷَّ ةٍ ᢻَّ تَ حْ مِ لُ ر᠒ زْ قَ هَ ا ٱللᡐ هُ يَ رْ زُ قُ هَ ا وَ ល ِᘌَّ ا᠑ᝏ مْ .
‘এমন কত প্রাণি রয়েছে যারা নিজেদের খাদ্য মজুদ রাখে না। আল্লাহই তাদের ও তোমাদের রিযক দান করেন।’
(সূরা আল- আনকাবুত : ৬০)
ل᠐ هُ مَ قَ الِ ᘭدُ ٱلسَّ مَ اوَ اتِ وَ ٱلأَ رْ ض᠒ يَ ᛞ ْسُ طُ ٱلرِّ زْ قَ لِ مَ ن ᛒ َشَ ቯءُ وَ ᗫ َقْ دِ رُ .
‘আসমান ও যমীনের কুঞ্জি তাঁরই নিকট। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিযক বাড়িয়ে দেন এবং সংকুচিত করেন।’ (সূরা
আশ-শুরা : ১২)
মহান আল্লাহ শুধু মানুষ কেন, যাবতীয় বস্তুুর প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা সৃষ্টির মধ্যেই করে রেখেছেন। তিনি
বলেন ঃ
إِ نَّ ا ᛿᠑ لَّ شَ يْ ءٍ خَ ل᠐ قْ نَ اەُ ᗷ ِقَ دَ ر᠏ .
‘আমি প্রতিটি বস্তু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।’ (সূরা আল-কামার : ৪৯)
وَ ល ِن مِّ ن شَ يْ ءٍ إِ ᢻَّ عِ ندَ نَ ا خَ زَ ائِ نُ هُ وَ مَ ا نُ نَ زِّ ل᠑ هُ إِ ᢻَّ ᗷ ِقَ دَ ر᠏ مَّ عْ ل᠑ ومٍ .
‘আমার নিকট সব জিনিসেরই ভান্ডার রয়েছে এবং আমি তা নির্দিষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি।’ (সূরা আলহিজর : ২১)
وَ مَ ا ك᠑ نَّ ا عَ ن᠒ ٱل᠔ خَ ل᠔ قِ غَ افِ لِ ينَ .
‘আমি সৃষ্টি স¤পর্কে অমনোযোগী নই।’ (সূরা আল-মুনিনূন : ১৭)
কুরআন মাজীদের উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, তিনি যত মানুষ সৃষ্টি করেন
প্রয়োজনানুপাতিক হারে তাদের রিযকও সৃষ্টি করেন। তিনি দুনিয়ায় মানুষ পাঠিয়ে দেন, আর তাদের রিযক বা
খাদ্য পাঠান না-একথা যারা ধারণা করেন, তাদের ধারণা যে আল্লাহ তাদের মতোই অমনোযোগী ও দায়িত্বহীন
জন্মনিয়ন্ত্রণের বৈধ পদ্ধতি
মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষা করার উদ্দেশ্যে শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বৈধ বলে মুসলিম পন্ডিতগণ মতামত পোষণ করে
থাকেন। তা সত্তে¡ও মুসলিম সমাজের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন মত । নিম্নেএ বিষয়ে ধারণা দেওয়া হলো১। কতক লোক জন্মনিয়ন্ত্রণ করা সকল অবস্থায়ই পাপ বলে মনে করেন এবং স্বাস্থ্যগত কারণেও বৈধ মনে করেন
না।
২। অনেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম যোগাড় করতে লজ্জাবোধ করেন। দোকানে যেয়ে দাঁড়ি টুপী পরিহিত দীনদার
লোকের পক্ষে জন্মনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম চাওয়াতে লজ্জাবোধ করা অস্বাভাবিক নয়।
৩। গর্ভ সঞ্চার হওয়া সম্পূর্ণআল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে বলে এ পদ্ধতি কেউ কেউ অর্থহীন মনে করেন।
কিন্তুু রোগ হওয়া ও আরোগ্য লাভ করা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর বলে বিশ্বাস থাকা সত্তে¡ও যেমন চিকিৎসা করা
কেউ অবৈধ মনে করে না, তেমনি নিছক চিকিৎসার প্রয়োজনে স্ত্রীকে কোন পুরুষ ডাক্তার দেখাতে যেমন লজ্জাকে
উপেক্ষা করতে হয়, তেমনি জন্মনিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম যোগাড় করতে লজ্জা ত্যাগ করা প্রয়োজন।
আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি এমন এক জ্ঞান যা পূর্বে জানা ছিল না। এখন জানা থাকার কারণে এ পদ্ধতি
চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহার করা মোটেই দোষণীয় হতে পারে না। পদ্ধতিটি নিজে মন্দ নয়। মন্দ উদ্দেশ্যে তা
ব্যবহার করা অবশ্যই দোষণীয়।
ইসলাম মানুষকে সমস্যায় ডুবিয়ে মেরে ফেলতে চায় না। সমস্যার সমাধান অবশ্যই দেয়। কোন নারীর যদি এমন
কোন অসহনীয় রোগ থাকে যা আরোগ্য হবার আশা করা যায় না বা যা সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা
আছে বলে কোন দীনদার ডাক্তার নিশ্চয়তা সহকারে বলেন, তাহলে ঐ মহিলা স্থায়ীভাবে বন্ধ্যা হবার উদ্দেশ্যে
লাইগেশন করালে আল্লাহ পাক মাফ করবেন বলে আশা করা যায়। এমনকি কোন গর্ভবতী নারীর জীবন রক্ষার
প্রয়োজনে যদি অভিজ্ঞ ডাক্তার ভ্রƒণ হত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই বলে মনে করেন তাহলে তাও বৈধ বলে
মুসলিম পন্ডিতগণ মত পোষণ করেন। সুতরাং হালাল ও হারাম এবং জায়িয ও না-জায়িযের বিধানের মধ্যে
সীমারেখা টানা রয়েছে। এক অবস্থায় যা না-জায়িয, তা অন্য অবস্থায় তা জায়িয হতে পারে।
আমাদের দেশে দেখা যায়, বহু ধার্মিক দম্পতির পারিবারিক জীবনে স্ত্রীর ঘন ঘন সন্তান পয়দা হওয়ার কারণে স্ত্রীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। সন্তান মায়ের দুধ ও যতœ থেকে বঞ্চিত হয় এবং স্বামীও স্ত্রীর খেদমত এবং সান্নিধ্য পায় না।
তখন গোটা পরিবার অশান্তিতে ডুবে যায়।
ঘন ঘন সন্তান হওয়ার ফলে স্ত্রী মরণাপন্ন ও দুধের শিশু স্বাস্থ্যহীন হওয়ায় তারা পেরেশান হয়ে আল্লাহকে দোষী
সাব্যস্তকরে বসে। যদি তারা জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি অবলম্বন করে তাহলে দেখা যাবে যে স্ত্রীর গর্ভসঞ্চার না হওয়ায়
ক্রমে স্ত্রীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়ে পরিবারে শান্তিফিরে আসছে। এতে করে স্বামী-স্ত্রী সুখী জীবন যাপন করার এবং
সন্তানেরা মায়ের সেবা-যতœ পাওয়ার সুযোগ লাভ করে।
আমাদের সমাজে গর্ভবতী স্ত্রী ও দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়েদের একটি সন্তান হলেই অনেক সময় স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে।
প্রসবের পর যে সেবা যতœ দরকার, তা তারা পায় না। যে সব খাবার খেলে শিশু মায়ের দুধ বেশি পেতে পারে তা
খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয় না। মা আবার অল্প দিনের মধ্যেই গর্ভবতী হয়ে পড়ে। যতদিন শিশু মায়ের দুধ প্রচুর
পায় ততদিন সাধারনত গর্ভসঞ্চার হয় না। আর এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা মোটেই দ্বীনদারীর পরিপন্থী নয়।
তাই মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুর পুষ্টি, স্বামীর সুখ ও পরিবারের শান্তির স্বার্থে যাতে ঘন ঘন সন্তান না হয় সে উদ্দেশ্যে
সাময়িকভাবে জন্মরোধ করার চেষ্টা করা কোন দিক দিয়েই দোষণীয় নয়। আর এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা মোটেই
অবৈধ ও অনৈসলামিক নয়।
রোগের চিকিৎসার বেলায় যেমন নিশ্চিত বলা যায়না যে রুগী আরোগ্য হবেই, তেমনী জন্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সব সময়
সফল নাও হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহারে অসাবধানতা বা সরঞ্জামের কোন ত্রæটির দরুন উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
সবশেষে একথা বলা যায় যে, আল্লাহ পাক মনের খবর রাখেন। তাই কে কি নিয়াতে ও কোন কারণে
জন্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তা আল্লাহর নিকট গোপন থাকবে না।
অর্থনৈতিক কারণে যদি কেউ তা করেন তাহলে এর জন্য তিনি নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দোষী সাব্যস্তহবেন।
১ জন্মনিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝায়ক. মানব বংশ সাময়িকভাবে রোধ করা
খ. মানব বংশ স্থায়ীভাবে রোধ করা
গ. মানব বংশ বৃদ্ধি রোধ করা
ঘ. লাইগেশন করা।
২. ‘‘দর্শনের ফলাফল’’ পুস্তকের লেখক কে?
ক. চার্লস ডারউইন
খ. ম্যালথাস
গ. চার্লস জেনটন
ঘ. ফ্রান্সিস পাস।
৩. ‘‘তোমরা অভাবের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না’’-এ টি কার নির্দেশ?
ক. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর
খ. আল্লাহ তা‘আলার
গ. হযরত ইমাম আবু হানিফা (র.) -এর
ঘ. হযরত আলী (রা.)-এর।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. জন্মনিয়ন্ত্রণ বলতে কী বুঝায়? জন্মনিয়ন্ত্রণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখুন।
২. ‘ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ সাধারণত বৈধ নয়’’ - ব্যাখ্যা করুন।
৩. জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নিয়াতের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
৪. খাদ্যাভাবের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করার ইসলামী বিধান লিপিবদ্ধ করুন।
৫. কখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বৈধ সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ বৈধ ও অবৈধ হওয়ার যুক্তি তুলে ধরুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]