ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের শাস্তিবিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন।

মিথ্যা অপবাদের ভয়াবহতা
কোন লোককে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করাকে ইসলামী পরিভাষায় কাযফ বলে। ঠাট্টাচ্ছলে বা বিদ্রƒপ
করে কেউ যদি কাউকে বলে, হে ব্যভিচারী ! অথবা বলে, আমি অমুককে ব্যভিচার করতে দেখেছি। ইসলামী আইনের
দৃষ্টিতে এই কথাগুলো ‘মিথ্যা অপবাদ’ পর্যায়ে গণ্য। বস্তুত ইসলামী সমাজে নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী নির্দোষ কোন
পুরুষ কিংবা নারীর বিরুদ্ধে যদি কেউ ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, একমাত্র তখনই এ আইন প্রযোজ্য হবে। কারণ
একজন চরিত্রবান মুমিন পুরুষ বা মহিলার নামে এরূপ উক্তি খুব সাধারণ এবং নগণ্য ব্যাপার নয়। যে ব্যক্তির উপর
এরূপ অপবাদ দেওয়া হয়, এ অপবাদ তার উপর এবং সাথে সাথে গোটা সমাজের উপর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ফলে জনগণের সন্মুখে সে অত্যন্তজঘন্য চরিত্রে চিত্রিত হয়। তার লজ্জা ও লাঞ্ছনার কোন সীমা-পরিসীমা থাকে না।
হাসি ঠাট্টাচ্ছলে বলা হলেও এ ধরণের কথার জন্য সমাজে জঘন্য ও কুৎসিত চরিত্রের কালো ছায়াপাত ঘটে। সন্দেহ,
সংশয়, অবিশ্বাস, অনাস্থা, অভক্তি এবং দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর বিষস্রোত গোটা সমাজকে পংকিল ও বিষে জর্জরিত করে তোলে।
স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। স্ত্রী তার স্বামীর চরিত্রের প্রতি আস্থা ও ভক্তি অবিচল রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
অনুরূপভাবে পিতা-মাতা তাদের পুত্র বা কন্যার প্রতি এবং পুত্র-কন্যা তাদের পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে।
তখন প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের জন্মের বৈধতা ও পবিত্রতা সম্পর্কে সাংঘাতিকভাবে সন্দিহান হয়ে পড়ে। এই কারণে
ইসলাম এই ধরণের দায়িত্বহীন কথা-বার্তা বলাকে চিরদিনের জন্য অকাট্যভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। শুধু তা-ই নয়,
যে এরূপ কাজ করে, তার উপর অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। তাকে বিশ্বাস অযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে। দুনিয়া ও
আখিরাতে তার কঠিনতম আযাবে পরিবেষ্টিত হওয়ার ভয়ও দেখান হয়েছে। এ পর্যায়ে আল্লাহ্র ঘোষণা অত্যন্ত
ভীতিপ্রদ-
إ ِنَّ ٱل َّذِینَ یَرْ مُونَ ٱلْمُحْصَنَاتِ ٱلْغَافِلاَتِ ٱلْمُؤْ مِناتِ ل ُعِنُوا ْ فِى ٱلدُّنْیَا وَ ٱلآخِ رَ ةِ وَ ل َھُمْ
عَذَابٌ عَظِ یمٌ
“যারা সাধবী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের
জন্য আছে মহাশাস্তি।” (সূরা আল-নূর : ২৩)
اجتنبوا السبع المو بقات قالو یا رسول اللھ وما ھن ؟ قال الشرك باللھ والسحرলনবে.) সা (মহানবী
وقتل النفس التى حرم اللھ إلا بالحق واكل الربوا واكل مال الیتیم و التولى یوم
الزحف وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات (بخارى)
“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে দূরে সরে থাকবে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে সাতটি
ধ্বংসকারী কাজ কী কী? তিনি বললেন: (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা, (৩) আইনের ভিত্তি ছাড়া মানুষ
হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের ধনসম্পদ হরণ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা (৭)
চরিত্রবতী সহজ-সরল মুমিন মহিলাদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।” (বুখারী ও মুসলিম)
পাঠ-মিথ্যা অপবাদের শাস্তি
যে ব্যক্তি তার অপবাদের সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না তার শাস্তির ব্যাপারে কুরআন তিনটি নির্দেশ প্রদান
করেছে।
এক. তাকে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হবে
দুই. তার সাক্ষ্য কখনও গৃহীত হবে না
তিন. সে ফাসেক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
وَ ٱل َّذِینَ یَرْ مُون َ ٱلْمُحْصَنَاتِ ث ُمَّ ل َمْ یَأ ْتُوا ْ ب ِأ َرْ بَع َةِ شُھَدَآءَ فَٱجْلِدُوھُمْ ث َمَانِینَ جَلْدَةً وَ لاَ
تَقْبَل ُوا ْ ل َھُمْ شَھَادَةً أ َبَدا ً وَ أ ُوْ ل َـٰئِكَ ھُمُ ٱلْفَاسِق ُونَ
“যারা সাধবী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত
করবে এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো সত্যত্যাগী।” (সূরা আন-নূর : ৪)
কাযফের শাস্তিপ্রয়োগের জন্য শর্তাবলী
কাযফ বা ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের শাস্তিপ্রয়োগ করার জন্যে কতিপয় শর্ত রয়েছে। তা হল১. দোষারোপকারী প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এ অপরাধ করলে তাকে অন্য কোন শাস্তিদেওয়া যেতে
পারে। কিন্তু ইসলামী শরীআতের নির্ধারিত এ শাস্তিতার উপর প্রয়োগ করা যাবে না।
২. দোষারোপকারী সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হবে। কোন পাগল বা মস্তিস্ক বিকৃত লোকের উপর এ ধরণের শাস্তি
প্রয়োগ করা যাবে না। অনুরূপভাবে হারাম নেশা ছাড়া অন্য কোন বস্তুর মাধ্যমে নেশা গ্রস্ত(ক্লোরোফরম) ব্যক্তিকে
অপরাধী মনে করা যাবে না।
৩. কারো পীড়াপীড়িতে কাউকে এরূপ অপবাদ দিলে তাকে এর জন্য অপরাধী সাব্যস্তকরা যাবে না। এ অপবাদ
তাকে স্বেচ্ছায় দিতে হবে।
৪. হানাফী ফিকহ মতে দোষারোপকারীকে বাক-শক্তি সম্পন্ন হতে হবে। বোবা ব্যক্তি যদি ইশারা-ইংগিতে অপবাদ
দেয়। তবে তার উপর কাযাফের শাস্তিপ্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু ইমাম শাফেঈ (র) এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ
করে বলেন, বোবা ব্যক্তির ইশারা-ইংগিত যদি সুস্পষ্ট অর্থজ্ঞাপক হয়- যা দেখে সে কি বলে, তা প্রত্যেকেই
বুঝতে পারে, তবে তাকে দোষী সাব্যস্তকরা যাবে।
৫. অপবাদদাতা ব্যভিচার প্রমাণ করার জন্যে স্বচক্ষে দেখেছে এমন চারজন সাক্ষী এক সঙ্গে আদালতে উপস্থিত
করতে হবে। অন্যথায় তাকে কাযাফ-এর শাস্তিপ্রদান করা হবে।
৬. যার উপর অপবাদ দেওয়া হয়েছে, তাকে সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হবে।
৭. তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
৮. তাকে মুসলমান হতে হবে।
৯. তাকে স্বাধীন হতে হবে, ক্রীতদাস হলে চলবে না।
এ শাস্তিকার্যকর করার তাৎপর্য
ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগের ‘দন্ড’ কার্যকর করার তাৎপর্য এই যে, ব্যভিচারের অভিযোগ তোলা আসলেই জঘন্যতম
অপরাধ। এর পরিণতি ও প্রতিক্রিয়া সমাজে খুব ভয়াবহ হয়ে দেখা দেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি জনগণের আস্থা থেকে
চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হয়ে যায়। তাকে সারাটা জীবন কলংকের বোঝা বহন করতে হয়। এই অবস্থা আরও মর্মান্তিক
হয়ে দেখা দেয়-যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন মহিলা হয়। এই কলংক শুধু তাকেই ক্ষতি করে না, তার গর্ভজাত সন্তানের
মুখকেও কালিমালিপ্ত করে। আর অবিবাহিতা হলে তো তার পক্ষে বিবাহিতা হওয়ার আশা চিরতরে খতম করে দেয়। এ
জন্য ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগকারীর উপর কঠোর শাস্তিআরোপ করা হয়েছে। এভাবে নারী নির্যাতনের পথকে
ইসলাম রুদ্ধ করে দিয়েছে।
সারকথা
কোন নারী-পুরুষের প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ উত্থাপনকে ইসলাম ফৌজদারী অপরাধ
হিসেবে গণ্য করে। একে শরীআতের পরিভাষায় কাযাফ বলে। কারো প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা
অপবাদ দেওয়ার প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে খুবই ভয়াবহ। তাই এর প্রতিরোধের
জন্য ইসলামের দন্ড বিধান হল-আনীত অভিযোগের উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে অভিযোগকারীকে আশিটি বেত্রাঘাতের দন্ড দিতে হবে এবং তাকে আজীবন সাক্ষীর অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১. কাযাফ বল হয়ক. ব্যভিচারকারীকে
খ. ব্যভিচারের শাস্তিকে
গ. ইসলামী আইন প্রয়োগ করাকে
ঘ. ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদকে।
২. ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদদাতার বিরুদ্ধে কাযাফ-এর শাস্তিপ্রয়োগ করা হবে- এটি কার নির্দেশ?
ক. ইমাম আবু হানীফা (র)-এর নির্দেশ
খ. ইমাম বুখারী (র)-এর নির্দেশ
গ. কুরআন-এর নির্দেশ
ঘ. হাদীস-এর নির্দেশ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর ঃ ১. ঘ, ২. গ
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ব্যভিচারের মিথ্যা দোষারোপ বলতে কী বুঝায়? বর্ণনা করুন।
২. ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৩. ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দানকারীকে শাস্তিপ্রদানের জন্য কী কী শর্ত রয়েছে ? লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদের শাস্তিবিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]