হিবার পরিচয়, তার বিধান ও প্রত্যাবর্তন করে নেওয়ার বিধান স¤পর্কে বিস্তাবিরতভাবে লিখুন।

সমাজ সংস্কারে ও দারিদ্র বিমোচনে হিবা এর ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটা যেভাবে পার্থিব জগতে ভ্রাতৃত্ববোধ
এবং পার¯পরিক স¤পর্ক সুদৃঢ় করে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দেয়, অনুরূপভাবে পরকালীন জীবনে মুক্তির
বিরাট সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
ةᘘه) হিবা)-এর আভিধানিক অর্থ
হিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- দান করা। কাউকে কোন বিনিময় ছাড়া কিছু প্রদান করা। হিবা সাধারণ
সাদকা অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
ةᘘه) হিবা) এর পারিভাষিক অর্থ
কোন বিনিময় গ্রহণ না করে কাউকে ধন-সম্পদ বা অন্য কিছুর অধিকারী করে দেয়াকে হিবা বা দান বলা হয়।
ফিকহ এর পরিভাষায় দানকারীকে واهـب) ওয়াহিব), যাকে দান করা হয় তাকে موهـوب)মাওহুব) এবং
যে সম্পদ দান করা হয় তাকে له ب موهو) মাওহুব লাহু) বলা হয়।
(বিধান হিবার (حᜓم الهᘘة
হিবা করা সুন্নাত। কোন বস্তু কাউকে দান করার পর ঐ বস্তুুর উপর দানকৃত ব্যক্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে
যায়। তার জন্যে ঐ বস্তুুর সব ধরনের ব্যবহার করা নিজে ভোগ করা, বিক্রি করা এবং অন্যকে দান বৈধ। অন্যকে
হাদিয়া বা উপহার হিসেবে দিতে পারবে। হাদীসে এসেছে ـةᘌهد ولنـا صـدقة لـكে তামার জন্য
সাদাকা হলেও আমাদের জন্য তা হাদিয়া বা উপহার।
হিবা বা দান প্রত্যাহার করে নেয়ার বিধান
হিবা (দান) প্রত্যাহার করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ কি-না, এ ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ (র.)-এর মতে দানকৃত বস্তুপ্রত্যাহার করা হারাম (অবৈধ)। তাদের যুক্তি
হচেছ মহানবী (সা.) -এর হাদীস-
عن ابن عᘘاس ان النبى صلى الله علᘭه وسلم قال: العائد فى هبته ᛿الᝣلب
ᘌقئ ثم ᘌعوە فى قيئه -
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হিবা (দান) প্রত্যাহারকারী ব্যক্তি ঐ কুকুরের ন্যায়, যে বমি করে আবার তা খেয়ে
ফেলে।’ এ উক্তি দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে, একথা বর্ণনা করা যে, হিবাকৃত বস্তুু ফেরত লওয়া গর্হিত কাজ।
তবে পিতা যদি সন্তানকে ةᘘهদ) ান) করে তাহলে হিবা প্রত্যাহার করা বৈধ।
عن ابن عمـر أنـه قـال: يرجـع الواهـب فـى هبتـه الا الوالـد فᘭمـا يهـب لولـدە
.
হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘দানকৃত বস্তুু প্রত্যাহার করা অসমীচীন কিন্তুপিতা
যদি তার সন্তানকে কিছু দান করে, তবে ইচছা করলে তা প্রত্যাহার করে নিতে পারবে।’
ইমাম আবু হানিফার অভিমত
ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেন, رحـم ذي محـرم) রক্তের স¤পর্কে স¤পর্কিত ব্যক্তি) ব্যতীত
অন্যদেরকে দান করলে তা প্রত্যাহার করা অপছন্দনীয় কাজ তবে জায়েয। তার প্রমাণ হিসেবে নি¤েœাক্ত হাদীস
দু’টি উল্লেখ করেন-
عن ابن عمر رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله علᘭه وسلم قال.
الواهب أحق بهبته مالم ي᙭ب منها.
হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। মহানবী (সা.) বলেন ঃ ‘দানকারী ব্যক্তি দানকৃত বস্তুপ্রত্যাহার করে
নেয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রাপ্য। যদি সে দানকৃত বস্তুর পরিবর্তে কোন বিনিময় বা প্রতিদান গ্রহণ না করে।’
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম আবু হানিফার মতে কোন কোন অবস্থায় হিবা প্রত্যাহার করা অবৈধ
ইমাম আবু হানিফার মতে দানকৃত বস্তুু প্রত্যাহার করে নেয়া অপছন্দনীয়ভাবে বৈধ। তাঁর মতে বিশেষ কয়টি
অবস্থায় দান প্রত্যাহার করা অবৈধ, যা নি¤œরূপ১. দানকৃত বস্তুুতে দান গ্রহীতা যদি এমন কিছু মেশায় যা পৃথক করা যায় না। যেমন- দানকৃত আটার সাথে
তৈল মেশানোর পর তা প্রত্যাবর্তন করা যাবে না।
২. দানকারী ও দান গ্রহণকারী ব্যক্তিদ্বয়ের একজন মারা গেলে।
৩. দানকারী যদি দানের বিনিময় কিছু গ্রহণ করে।
৪. গ্রহীতার মালিকানা হতে দানকৃত মাল অন্যত্র চলে গেলে। যেমন- বিক্রি করে দিলে বা চুরি হয়ে গেলে।
৫. দাতা ও গ্রহীতার মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে।
৬. দাতা ও গ্রহীতার সাথে আত্মীয়তা ও রক্তের সম্পর্ক থাকলে যেমন- নবী (সা.)-এর বাণীفيها يرجع لم محرم رحم لذى ةᘘاله انت ᛿اذا.
‘রক্তের স¤পর্কের কাউকে যদি দান করা হয় তাহলে তা প্রত্যাবর্তন করা যাবে না।’
৭. দানকৃত বস্তু ধ্বংস হয়ে গেলে।
সন্তানদের বিশেষ কাউকে দান করা বা কাউকে বেশি দান করা
পিতা-মাতার কর্তব্য হচ্ছে সন্তানদের পরস্পরের মধ্যে সর্বতোভাবে সুবিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা ও পূর্ণ
নিরপেক্ষতা সহকারে প্রত্যেকের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা, প্রয়োজন পূরণ করা এবং তাদের মধ্যে সাম্য
.اعد لوا بين ابنا ئᜓم اعدلوا بين ابناء᛿م اعدلوا بين ابنائᜓمরনকেদ ইরশা.) সা (করীম লূরোস। করা াক্ষর ও য়মকো
‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সুবিচার করো, তোমরা তোমাদের সন্তানদের মাঝে ন্যায়পরায়ণতা স্থাপন
করো, তোমরা তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ রক্ষা করো।’ (আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ)
মহানবী (সা.) আরো বলেন
.عن النبي صلي الله علᘭه وسلم قال: اتقوا الله واعدلوا فى اولاد᛿م
‘আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সুবিচার কর।’
হাদীসে এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে:
নুমান ইবনে বাশীর (রা.) বলেন- তার পিতা তাকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলে করীম (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে
বললেনঃ
اني نحلت ابني هذا غلاما قال النبى صلى الله علᘭه و سلم اᝏل ولدك
.نحلته مثل هذا. فقال لا فقال فارجعه
‘আমি আমার এই পুত্রকে একটি ক্রীতদাস দান করেছি। তখন রাসূলে করীম (সা.) জিজ্ঞেস করলেন ঃ তোমার
সব ক’টি সন্তানকে কি এভাবে দান করেছ ? উত্তরে তিনি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ঃ এ দান
তুমি ফিরিয়ে নাও।’ (বুখারী, মুসলিম)
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেةᘭالعط فى م᛿لاد او بين سووا.
‘দানের ব্যাপারে তোমাদের সন্তানদের মধ্যে পূর্ণ সমতা রক্ষা করো।’ (বায়হাকী)
এসব হাদীসের ভিত্তিতে অনেকে বলেছেন যে, সন্তানদের দানের ব্যাপারে সমতা রক্ষা করা ওয়জিব। কেননা
রাসূলে করীম (সা.) সেজন্যে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন। যদি বিশেষ কোন কারণ না থাকে, তাহলে এ
সমতাকে কিছুতেই ভঙ্গ করা এবং দানের ক্ষেত্রে সস্তানদের মধ্যে তারতম্য করা উচিত হবে না, হ্যাঁ কোন এক
সন্তানকে সমুদয় স¤পদ দান করা বা বেশি দেওয়ার পর অন্য সন্তানরা যদি অনুমতি দান করে তাহলে এতে কোন
সমস্যা হবে না।। যদি কোন সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্তকরার উদ্দেশ্যে অপর সন্তানকে কিছু দান করা হয় তবে তা
গুরুতর অন্যায়।
আবার অনেকে রাসূলের এ আদেশকে ‘মুস্তাহাব’ বলে ধরে নিয়েছেন। যদি কেউ কোন সন্তানকে অপর সন্তান
অপেক্ষা বেশী কিছু দান করে, সে দান অবশই মাকরূহ ্ হবে। এ পর্যায়ে একদা রাসূলে করীম (সা.) জিজ্ঞেস
করেন‘তোমার সাথে তোমার সব সন্তান সমানভাবে ভাল ব্যবহার করুক, এতে কি তুমি খুশি হও না ? সাহাবী বললেন,
হ্যাঁ। তখন নবী করীম (সা.) বললেন- اذن فـلا .তাহলে কোন সন্তানকে অন্যদের তুলনায় বেশী দেয়ার
অনুমতি দেয়া যেতে পারে না।’ (মুসলিম)
এসব হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম শাওকানী উল্লেখ করেছেন:
قال النبى صلى الله علᘭه و سلم لᛞشر لا اشهد على جور فالحق ان
الᙬسᗫᖔة وان التفضᘭل محرم.
মহানবী (সা.) বশীরকে বলেন‘আমি অন্যায়ের সাক্ষ্য দেব না। সত্য কথা এই যে, সন্তানদের মধ্যে দানের ব্যাপারে সমতা রক্ষা করা ওয়াজিব,
আর বেশি-কম করা হারাম।’ (নাইলুল আওতার)
মনে রাখা আবশ্যক যে, এসব হাদীস মীরাস বণ্টন সম্পর্কে বলা হয়নি। কেননা মীরাস বণ্টন হবে পিতার মৃত্যুর
পরে, তার জীবদ্দশায় নয়। বরং এসব হাদীস পিতার জীবদ্দশায় সন্তানকে বিভিন্ন স¤পদ দান করার ব্যাপারেই
সমতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব, কোন পিতার পক্ষেই তার জীবদ্দশায় সন্তানদেরকে যা কিছু দান করবে
তাতে তারতম্য ও কম-বেশী করা আদৌ জায়িয নয়। কারণ এ জাতীয় দান করলে সন্তানদের মধ্যে মনোমালিন্য
ও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
হিবার প্রকারভেদ
হিবা দুই প্রকার। যেমন রোকবা ও ওমরা ।
رقبـى)ে রাকবা) হচ্ছে- কাউকে কোন জিনিস এ শর্তে দান করা যে, দানকারী যদি দানগ্রহীতার পূর্বেই মারা
যায়, তাহলে গ্রহীতা দানকৃত বস্তুর সম্পূর্ণ মালিক হয়ে যাবে। আর দান গ্রহণকারী আগে মারা গেলে বস্তুটির
মালিকানা দানকারীর কাছে ফিরে আসবে।
عمـرى) ওমরা) হচ্ছে- কাউকে এ শর্তে দান করা যে, সে যতদিন বাচঁবে ততদিন সে উহা হতে উপকৃত
হতে পারবে। আর হিবা গ্রহণকারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর হিবা প্রদানকারীর নিকট মালিকানা ফিরে যাবে।
অর্থাৎ এভাবে বলা যে, তুমি যতদিন বেচেঁ থাকবে ততদিনের জন্য আমি তোমাকে এ বস্তুটি দান করলাম।
তোমার মৃত্যুর পর এর মালিকানা আমার ও আমার ওয়ারিশগণের নিকট ফিরে আসবে।
রুকবা ও ওমরার বিধান
সাধারণ হিবার ন্যায় রুকবা ও ওমরার ক্ষেত্রে দানগ্রহণকারী ব্যক্তি দানকৃত বস্তুর সম্পূর্ণ মালিক হয়ে যাবে। মূল
মালিক বা তার ওয়ারিশের কাছে মালিকানা কখনও ফিরে যাবে না। দানগ্রহণকারী যদি আগে মারা যায় তাহলে ঐ
সম্পদের মালিক তার ওয়ারিশগণ হবে। হিবার ক্ষেত্রে কোন শর্ত গ্রহণ যোগ্য হবে না। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.)
বলেছেন ঃ
أمسكوا علᘭᜓم أموالᝣم ولا تفسدوها فانه من أعمر عمرى فهى للذى
اعمرها حᘭا وميتا ولعقᘘه.
‘তোমরা তোমাদের সম্পদকে রক্ষা কর উমরা হিবার মাধ্যমে এবং তা নিজেদের হাতছাড়া করো না। কেউ যদি
কাউকে কিছু দান করে তখন দানগ্রহীতা মৃত্যুবরণ করলে ঐ দান তার ওয়ারিসগণ পেয়ে যাবে। মূল মালিকের
কাছে ফিরে আসবে না।’ (মুসলিম)
এককথায় উত্তর দিন
১. কোন বিনিময় গ্রহণ না করে কাউকে কিছু দান করাকে কি বলে?
২. দানগ্রহীতার জন্য দানকৃত স¤পদের সব ধরনের ব্যবহার করা কি?
৩. দানকৃত বস্তু ফিরিয়ে নেওয়া কি?
৪. দানকৃত বস্তু হাতছাড়া হয়ে গেলে তা প্রত্যাবর্তন করা কি?
৫. সন্তানদের মধ্যে দানের ক্ষেত্রে সমতা বিধান করা পিতা-মাতার জন্য কি?
৬. সাধারণ হিবা ছাড়া আরও দুই ধরনের হিবা রয়েছে- সেগুলো কি কি?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. হিবার পরিচয় দিন।
২. হিবার বিধান কি? লিখুন।
৩. হিবা প্রত্যাবর্তন করার বিধান বর্ণনা করুন।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার মতে হিবা প্রত্যাবর্তন করা যায় না? লিখুন।
৫. সন্তানদের মধ্যে হিবা কিভাবে করতে হবে আলোচনা করুন।
৬. হিবার অন্য প্রকারভেদ লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. হিবার পরিচয়, তার বিধান ও প্রত্যাবর্তন করে নেওয়ার বিধান স¤পর্কে বিস্তাবিরতভাবে লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]