ওসিয়াতের পরিচয় ও এর শর্তসমূহ ওসিয়াতের বিধান, তা ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান এবং ওয়ারিশ ও হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত করার বিধান

ওসিয়াত ইসলাম প্রবর্তিত একটি সমাজ কল্যাণমূলক বিধান ও মহৎ অন্তিম ইচ্ছা। এর মাধ্যমে অসহায়দের আর্থিক
সমস্যা বিদুরিত হয় এবং পরকালে ওসিয়াতকারীর আত্মা সওয়াব লাভ করবে। তবে এ ওসিয়াতের ক্ষেত্রে
শরী‘আত কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ওসিয়াতের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা অবশ্যই পালন করতে হবে।
ওসিয়াতের অর্থ -
ওসিয়াত-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে উপদেশ প্রদান, আবশ্যক করে দেওয়া, কোন নির্দেশ প্রদান, মিলিয়ে নেওয়া,
অন্তিম ইচ্ছা বা অন্তিম উপদেশ।
পারিভাষিক অর্থ
শরী‘আতের পরিভাষায় কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর থেকে অন্য কাউকে নিজ সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়াকে
ওসিয়াত বলে। (অর্থাৎ যা মৃত্যুর পর থেকে কার্যকর হবে)
ওসিয়াতের শর্তসমুহ
১. ওসিয়াতকারী ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। (অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগল ব্যক্তির ওসিয়াত

২. ওসিয়াতকারী স্বেচ্ছায় ওসিয়াত করতে হবে (চাপের মুখে নয়)।
৩. ওসিয়াতকারী এমন ঋণী না হওয়া, যা পরিশোধ করতে তার সমুদয় সম্পদ লেগে যায়।
৪. যার জন্য ওসিয়াত করা হচ্ছে সে ওসিয়াতকারীর ওয়ারিশ হতে পারবেনা।
৫. ওসিয়াতকৃত ব্যক্তি বর্তমান থাকতে হবে। মাতৃগর্ভের শিশুর জন্য ওসিয়াত করা যাবে না।
৬. ওসিয়াতকৃত ব্যক্তি ওসিয়াতকারীর হত্যাকারী হতে পারবে না।
৭. ওসিয়াতকৃত সম্পদ হালাল সম্পদ হতে হবে এবং নিজ মালিকানায় থাকতে হবে। ডাকাতির মাধ্যমে
অর্জিত সম্পদ ওসিয়াত করা যাবেনা।
৮. ওসিয়াতকৃত সম্পদ মূল সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশী হবে না।
ওসিয়াতের পরিমাণ
ইসলামী শরী‘আত ওসিয়াতের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে, আর তা হল- মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক
অংশ বা এর চেয়েও কম। এর চেয়ে বেশী স¤পদের ওসিয়াত করা অবৈধ। মহানবী (সা.) বলেছেন- তিন ভাগের
এক অংশ ওসিয়াত করা যাবে, এর চেয়ে বেশী নয়। আর তিন ভাগের এক অংশও একেবারে কম নয়।
এক ব্যক্তি তার সমুদয় সম্পদ ওসিয়াত করতে চাইলে মহানবী (সা.) তাকে নিষেধ করে বললেন ঃ
.انك أن تذر ورثتك أغنᘭاء خيرمن أن تذرهم عالة يتكففون الناس
‘তুমি তোমার সন্তানদের স¤পদশালী হিসেবে রেখে যাওয়া উত্তম এমন অভাবী করে রেখে যাওয়ার চেয়ে যার ফলে
তারা লোকদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হবে।’
রাসূল (সা.)-এর বাণীর মর্মার্থ হচ্ছে-নিশ্চয় তোমার পরিবার-পরিজনকে সচ্ছল রেখে যাওয়া ভাল, অসহায় করে
রাখার চেয়ে।
এই বাক্য দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছেলে সন্তান ও স্বীয় ওয়ারিশদেরকে অভাবী অবস্থায় রেখে যাওয়া ভাল কাজ
নয়। তার মৃত্যুর পর তারা যেন স্বচ্ছল অবস্থায় চলতে পারে, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিজের
উপার্জিত অর্থ খরচ না করে তাদের জন্য কিছু জমা রাখতে হবে। কেননা দারিদ্রএমন এক অভিশাপ, যা
মানুষকে অন্যায়, জুলুম ও অবিচারপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য করে। কেননা দারিদ্র মানুষকে কুফুরীর দিকে ঠেলে
দেয়।
আবার নিজে ব্যয় না করে বা যাকাত-সদকা না দিয়ে সব মাল ছেলে-সন্তানদের জন্য জমা করে রাখার ব্যাপারেও ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে।
ওসিয়াতের হুকুম (বিধান)
ওসিয়াত করা একটি বৈধ কাজ, তবে ওয়ারিসগণ দরিদ্র-অভাবী হলে অন্য কারো জন্যে ওসিয়াত না করাই
উত্তম। ওসিয়াতকারীর মৃত্যুর পর ওসিয়াতকৃত সম্পদের মধ্যে যার জন্য ওসিয়াত করা হয়েছে তার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।
ওসিয়াত করা ফরয না মুস্তাহাব
মীরাস বণ্টনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ওয়ারিশদের জন্য ওসিয়াত করা ফরয ছিল। মহান আল্লাহ বলেন-
ك᠑ تِ بَ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مْ إِ ذَ ا حَ ضَ رَ أ᠐ حَ دَ ᛿᠑ مُ ٱل᠔ مَ وْ تُ إِ ن تَ رَ كَ خَ يْ را᠍ ٱل᠔ وَ صِ ᘭَّ ةُ لِ ل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒
وَ ٱلأَ قْ ᖁ َᗖ ِينَ ᗷ ِٱل᠔ مَ عْ رُ وفِ .
‘তোমাদের মধ্যকার কেউ যদি মৃত্যু মুখে পতিত হয় এবং তার সম্পদও থাকে তখন তার উপর আবশ্যক, সে যেন
তার পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়দের জন্যে ওসিয়াত করে যায়।’ (সূরা আল-বাকারা : ১৮০)
মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ওসিয়াত করা উত্তম কাজে পরিণত হয়, তবে ওয়ারিসদের জন্য কোন
ওসিয়াত করা যাবে না। কেউ কারও জন্য ওসিয়াত করতে চাইলে সাথে সাথে তা লিখে রাখার নির্দেশ এসেছে।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন-
ماحق امرء مسلم له شى يᗫᖁد أن يوصى فᘭه أن يᘭᙫت لᘭلتين إلا وصᚏتة
مكتᗖᖔة عندە.
‘কোন ব্যক্তি কিছুওসিয়াত করতে চাইলে তার জন্য উচিত হবে না ওসিয়াতকে অলিখিত রেখে এক বা দুই রাত
অতিবাহিত করা।’ (মুসলিম)
ওসিয়াত ফিরিয়ে নেয়ার বিধান
ওসিয়াত কোন বাধ্যতামুলক বিধান নয়। বরং এটা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তাই ওসিয়াতকারীর জন্য
ঘোষণা দিয়ে ওসিয়াত প্রত্যাহার করা বৈধ। তবে তা একটি ঘৃণীত বৈধ কাজ। এটি হিবা বা দানের ন্যায়। আর
দান প্রত্যাহার করে নেয়াকে নবী (সা.) যেমন কুকুরের বমি ভক্ষণ করার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এছাড়া যেহেতু ওসিয়াতকারীর মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়াতকৃত সম্পদ তার অধীনেই থাকে এবং তা ভোগ করার বৈধ
অধিকার তারই। তাই মৃত্যুর পূর্বে তার জন্য ওসিয়াতকৃত সম্পদ প্রত্যাহার করে নেয়াও বৈধ। আর কেউ যদি
কৃত ওসিয়াতকে অস্বীকার করে তাহলে তা ঘোষণা দিয়ে ওসিয়াত প্রত্যাহার করার মত গণ্য করা হবে।
ওসিয়াতকারীর ওয়ারিস ও হত্যাকরীর জন্য ওসিয়াতের বিধান
ওসিয়াতকারীর ওয়ারিস এবং হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত করার অবকাশ শরী‘আতের বিধানে নেই, যদিও
বাস্তবতার কারণে এ ব্যাপারে কোন কোন ফিকহবিদ নমনীয়তা প্রকাশ করেছেন।
ওসিয়াত করা জনকল্যাণমূলক এবং সওয়াবের কাজ হলেও তাতে শরী‘আত অনুসৃত নীতিমালা অনুসরণ
অপরিহার্য। হত্যাকারী ও উত্তরাধিকারীর জন্য ওসিয়াত করার ব্যাপারে ইসলামী শরী‘আত নেতিবাচক অবস্থান
গ্রহণ করেছে। এ সম্পর্কে ফকীহগণের মতামত উপস্থাপন করা হলো।
হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত করার হুকুম
হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত প্রযোজ্য হবে কিনা, এ ব্যাপারে ফিকহবিদগণের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মদ (সা.) এর মতে, হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত জায়েয নেই, চাই সে ইচ্ছাকৃত হত্যা
করুক কিংবা ভুলবশত হত্যা করুক। এমনকি ওসিয়াতের পর ওসিয়াতকৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়াতকারীকে হত্যা
করে তাহলে ওসিয়াত বাতিল হয়ে যাবে।
. قال علᘭه السلام لا وصᘭة للقاتل
নবী (সা.) বলেন, ‘ওসিয়াতকারীর হত্যাকারীর জন্য কোন ওসিয়াত নেই।’ হত্যার কারণে হত্যাকারী যেভাবে
উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তদ্রুপ ওসিয়াত থেকেও বঞ্চিত হবে। হত্যাকারী আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের
পূর্বে উহা লাভ করার তৎপরতা দেখিয়েছে বিধায় সে তা পাবে না।
ইমাম আবু ইউসুফ (র.) এর মতে, কোন অবস্থাতেই হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত জায়েয হবে না। কেউ যদি
হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত করে এবং ওসিয়াতকারীর ওয়ারিশগণ তা অনুমোদন দেয়, তবুও জায়েয হবে না।
কেননা হত্যার ক্ষতিপুরণ বাকি থেকে যায়।
ওয়ারিশদের জন্য ওসিয়াত করার বিধান ঃ ওয়ারিশদের জন্য ওসিয়াত করা বৈধ কি-না, এ ব্যাপারে ইমামদের
মাঝে মতবিরোধ বিদ্যমান। অধিকাংশ ফিকহবিদদের মতে, ওয়ারিশদের জন্য ওসিয়াত করা বৈধ নয়। দলিল
. ان الله اعطى ᛿ل ذى حق حقه فلا وصᘭة لوارثছনরেকে ঘাষণা.) সো (লূরাস. ক
‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক অংশীদারকে তার অংশ দিয়ে দিয়েছেন। ফলে ওয়ারিসদের জন্য কোন ওসিয়াত বৈধ
নয়।’
খ. কোন ওয়ারিশের জন্য বিশেষভাবে ওসিয়াত করলে অন্যান্য ওয়ারিশগণ মনে কষ্ট পাবে। ফলে আত্মীয়তার
সম্পর্ক বিনষ্ট হবে।
গ. আল্লাহ প্রত্যেক অধিকারীকে তার অধিকার দিয়েছেন তাই ওয়ারিশের জন্য কোন ওসিয়াত নেই।
হানাফীদের অভিমত
হানাফীদের মতে, আত্মীয়দের জন্য ওসিয়াত করা জায়েয নয়। এরপরও যদি কেউ ওসিয়াত করে এবং অন্য ওয়ারিশগণ অনুমোদন দেয় তাহলে জায়েয হবে।
১. কতটুকু ওসিয়াত করার বিধান রয়েছেক. সমুদয় স¤পদ
খ. স¤পদের দুই ভাগের এক অংশ
গ. স¤পদের তিন ভাগের দুই অংশ
ঘ. স¤পদের তিন ভাগের এক অংশ
২. কোন বয়সের লোক ওসিয়াত করতে পারে?
ক. প্রাপ্ত বয়স্ক
খ. যে কোন বয়সে
গ. বার্ধক্য বয়সে
ঘ. ৪০ বছর বয়সে।
৩. ওয়ারিসদের ওসিয়াত করা কি?
ক. মুস্তাহাব
খ. সুন্নাত
গ. অবৈধ
ঘ. ফরয।
৪. ওসিয়াত ফিরিয়ে নেওয়া কি?
ক. বৈধ
খ. অবৈধ
গ. পাপ
ঘ. ঘৃণীত বৈধ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. ওসিয়াতের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ লিখুন।
২. ওসিয়াতের শর্তসমূহ উল্লেখ করুন।
৩. ওসিয়াতের বিধান কি?
৪. ওসিয়াত ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান কি?
৫. ওয়ারিস বা ওসিয়াতকারীর হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত করা কি বৈধ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ওসিয়াতের পরিচয় ও এর শর্তসমূহ বিস্তারিতভাবে লিখুন।
২. ওসিয়াতের বিধান, তা ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান এবং ওয়ারিশ ও হত্যাকারীর জন্য ওসিয়াত করার বিধান সবিস্তারে লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]