ইসলামী সমাজের পরিচয় দিন এবং ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য . ইসলামী সমাজের গুরুত্বতুলে ধরুন।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করা মানব প্রকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। তাই আবহমানকাল ধরে মানুষ
সমাজবদ্ধভাবে মিলেমিশে বসবাস করছে। ধর্মীয় নীতিমালা, সমাজ বিজ্ঞানী, পন্ডিত ও মনীষীগণ সমাজবদ্ধ জীবন
যাপনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে আসছেন। অপরদিকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনও একই মত পোষণ করে। মানব
সমাজ স¤পর্কে ইসলামের মূলনীতি হচেছ ‘‘পৃথিবীতে সকল মানুষই সমান, মানুষ হিসেবে মানুষে মানুষে কোন
ভেদাভেদ নেই। সকল মানুষ হযরত আদম (আ.)-এর সন্তান এবং আদম (আ.) মাটি হতে সৃষ্টি।
ইসলামী সমাজের ভিত্তি স¤পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন নারী ও
একজন পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি। যেন তোমরা
পর¯পরের পরিচয় জানতে পার। অবশ্যই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ যে, তোমাদের মধ্যে
সবচেয়ে বেশী নীতিপরায়ণ ও আল্লাহভীরু।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সকল মানুষ সমান এবং ভাই ভাই। জাতি, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতার কারণে
মানব সমাজকে ইসলাম বিভক্ত করে না। বরং ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ দুটো সমাজে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর
একটি ইসলামী সমাজ আর অপরটি হচ্ছে অনৈসলামিক সমাজ।
ধর্মের ভিত্তিতে মানব সমাজ বিভক্ত হলেও মূলত মানব সমাজের উৎপত্তি একই মূল থেকে উৎসারিত। তাই
ইসলাম সকল মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে এবং মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে উন্নীত করে।
মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে ইসলাম জাতি, ধর্ম, ভাষা ও বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের স¤পদেরও নিরাপত্তা
বিধান করেছে। কারো স¤পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করাকে ইসলাম অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে।
ইসলাম সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ প্রদান করে। সামাজিক
অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলাকে কঠোর হস্তেদমন করে। সামাজিক অখন্ডতা বজায় রাখার জন্য ইসলাম আত্মীয়-স্বজনের
সাথে স¤পর্ক অক্ষুন্ন ও অটুট রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর অধিকার
আদায়ের প্রতি ইসলাম বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেছে। তাছাড়া সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মালিক-শ্রমিকের
স¤পর্ক ও তাদের অধিকার স¤পর্কে ইসলাম বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছে। মোট কথা মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন
যাপনের জন্য যা কিছুই প্রয়োজন ইসলাম সকল বিষয়ের প্রতিই সমান গুরুত্বপ্রদান করেছে। মানুষ সামাজিকভাবে
ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে এবং মানুষ সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। ইসলামী সমাজের গুরুত্বআলোচনা করতে পারবেন।
মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সামাজিক জীব। একসাথে মিলে মিশে থাকা মানুষের জন্য অপরিহার্য। এ মন্তব্য যেমন
সমাজ বিজ্ঞানী ও পন্ডিত-মনীষীদের; তেমনি পবিত্র গ্রন্থ কুরআনও একই মত পোষণ করে। মানব সমাজ সম্পর্কে
ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে দুনিয়াতে সমস্তমানুষই এক আদমের সন্তান। আর আদম মাটি হতে সৃষ্টি। ইসলামী
সমাজের ভিত্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনÑ
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ اسُ إِ نَّ ا خَ ل᠐ قْ نَ ا᠑ᝏ م مِّ ن ذَ ᠐ᜧ ر᠏ وَ أ᠑ نْ ثَ ىٰ وَ جَ عَ ل᠔ نَ ا᠑ᝏ مْ شُ عُ ᗖᖔا᠍ و قَ ᘘ َቯئِلَ لِ تَ عَ ارَ فُ وۤ ا᠔ إِ نَّ
أ᠐ ᠔ᜧ رَ مَ ᠑ᝣ مْ عِ ندَ ٱللᡐ هِ أ᠐ تْ قَ ا᠑ᝏ مْ إِ نَّ ٱللᡐ هَ عَ لِ ᘭمٌ خَ بِ يرٌ .
‘হে মানব ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন
জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হতে পার। অবশ্যই আল্লাহর নিকট
তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু
জানেন এবং সবকিছুর ব্যাপারে খবর রাখেন।’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩)
কাজেই সকল মানুষ সমানভাবে পরস্পর ভাই ভাই। জাতি, অঞ্চল, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতার কারণে
মানব সমাজকে ইসলাম বিভক্ত করে না বরং ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ দুটো সমাজে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর একটি
ইসলামী সমাজ আর অপরটি অনৈসলামী সমাজ। মানুষ মূলত প্রথমে একই সমাজভুক্ত এবং একই জাতিভুক্ত
ছিল। মানুষের জীবনের গতিধারা মৌলিক চাহিদা ও হৃদয়ের অনুভূতি এক ও অভিন্ন। মানুষ পৃথিবীর যে কোন
অঞ্চলের অধিবাসী হোক না কেন তাদের সবকিছুতেই যেন একটা মিল ও ঐকতান রয়েছে। তাই পৃথিবীর সকল
মানুষই ছিল একটি সমাজভ্ক্তু। কিন্তু তারা নানা জাগতিক মোহে এবং শয়তানের প্ররোচনায় নিজেদেরকে আলাদা
আলাদা স¤প্রদায় ও সমাজে বিভক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে নিজ নিজ সমাজ ব্যবস্থা। আর গড়ে তুলেছে
মানুষে মানুষে শত্রæতা ও সমাজে সমাজে বিভেদ। একথাই আল-কুরআনে এসেছে এভাবেÑ
وَ مَ ا ᛿᠐ انَ ٱلنَّ اسُ إِ ᢻَّ أ᠑ مَّ ةً وَ احِ دَ ةً فَ ٱخْ تَ ل᠐ فُ وا᠔ .
‘মানুষ ছিল একই উম্মাত। পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করে।’ (সূরা ইউনুস : ১৯)
ইসলামী সমাজব্যবস্থা
সমাজ ব্যবস্থা বলতে বুঝায় কোন বিশেষ রীতি-নীতি, আইন-কানুন ও একটি অবকাঠামো যা দ্বারা সমাজ
পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। ইসলামী রীতি-নীতি, আইন-কাঠামো ও বিধি-বিধান দ্বারা যে সমাজ পরিচালিত ও
নিয়ন্ত্রিত হয় তাই ইসলামী সমাজ। অপর কথায় যে সমাজের প্রতিটি মানুষের অধিকার, চাহিদা, দায়-দায়িত্ব
ইসলামের অনুশাসন দ্বারা নির্ধারিত হয়, সেটাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা। ইসলামী সমাজে মানুষের সকল কর্মকান্ড
শুধুমাত্র আল্লাহর বিধান অনুসারে চলবে। ইসলামী সমাজের প্রত্যেক সদস্যের ঘোষণা নি¤œরূপ হতে হবে-
قُ لْ إِ نَّ صَ ᢿ َتِ ى وَ ᙏ ُسُ كِ ى وَ مَ حْ ᘭ َاىَ وَ مَ مَ اتِ ى لِ لᡐ هِ رَ بِّ ٱل᠔ عَ ال᠐ مِ ينَ .
পাঠ ঃ ১
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
পৃষ্ঠা-১৫৩
‘বলুন, আমার নামায, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই
উদ্দেশ্যে’। (সূরা আল-আনআম : ১৬২)
মহানবী (স.) ইসলামী সমাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন ঃ
من احب لله و اᗷغض لله و اعطى لله و منع لله فقد استᜓمل الاᘌمان.
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য শত্রæতা করে, আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য নিষেধ করে, সে ব্যক্তি ঈমানে পূর্ণতা লাভ করেছে।’ (সহীহ বুখারী)
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্যই ইসলামী সমাজের সকল কর্মকান্ড চলবে। আল-কুরআনের ভাষায়-
. رَ ᗖَّ نَ ـቯ آتِ نَ ا فِ ى ٱلدُّ نْ ᘭ َا حَ سَ نَ ةً وَ فِ ى ٱلآخِ رَ ةِ حَ سَ نَ ةً
‘হে আমাদের প্রভু ! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতে কল্যাণ দান কর।’ (সূরা আলবাকারা : ২০১)
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেনÑ
الدين النصᘭحة قال ثلا ثا. قلنا لمن؟ قال لله و لرسوله و ل᜻تاᗷه ولائمة
المسلمين و عامتهم .
‘কল্যাণ কামনাই দ্বীনের মূলকথা। একথা তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ বললেন, কল্যাণ কামনা কার জন্য?
রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, মুসলমানদের নেতা এবং জনসাধারণের জন্য।’
(সহীহ মুসলিম)
ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ ইসলামী সমাজের অন্যতম উদ্দেশ্য। আল কুরআনের ঘোষণাÑ
ك᠑ نْ تُ مْ خَ يْ رَ أ᠑ مَّ ةٍ أ᠑ خْ ر᠒ جَ تْ لِ لنَّ اس᠒ تَ أ᠔ مُ رُ ونَ ᗷ ِٱل᠔ مَ عْ رُ وفِ و تَ نْ هَ وْ نَ عَ ن᠒ ٱل᠔ مُ نْ ᜻᠐ ر᠒
وَ تُ ؤْ مِ نُ ونَ ᗷ ِٱللᡐ هِ
‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের নির্দেশ
দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে মানুষকে ফিরিয়ে রাখবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে।’ (সূরা আলে-ইমরান :
১১০)
মহানবী (স.) বলেছেনÑ
لتأمرون ᗷالمعروف و لتنهون عن المنكر او لᛳسلطن الله علᘭᜓم شرار᛿م
فᘭدعو خᘭار᛿م فلا ᛒستجاب لهم .
‘তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের
উপর নিকৃষ্টতম লোককে তোমাদের শাসক করে দেবেন। আর সৎ লোকেরা দোয়া করতে থাকবে, কিন্তু তা কবুল করা হবে না।’ (তাবারানী)
মানব জীবনকে সার্বিকভাবে সৎ, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুখময় করার জন্য ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাই একমাত্র সর্বোত্তম
আদর্শ ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে। নি¤েœইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলতাওহীদের বিশ্বাসে বলীয়ান ঃ ইসলামী সমাজের যাবতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তাওহীদ বা আল্লাহর
একত্ববাদ। ইসলামী সমাজ তাওহীদের বিশ্বাসে উজ্জীবিত ও বলীয়ান। সকল ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের উৎস একমাত্র আল্লাহকে মেনে নিয়ে সমাজের সমস্তকর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
রাসূলের নেতৃত্ব ঃ ইসলামী সমাজ হযরত মুহাম্মদ (স)-কে বিশ্ব নবী এবং দুনিয়ার সর্বশেষ নবী হিসেবে মেনে
নেয়। আর সকল কাজে তাঁরই আদর্শ ও নেতৃত্ব মেনে অনুসরণীয় নেতা হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স.) ছাড়া আর
কারও নেতৃত্ব ও আদর্শ গ্রহণ করে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন ঃ
لᡐ قَ دْ ᛿᠐ انَ ل᠐ ᠑ᝣ مْ فِ ى رَ سُ ولِ ٱللᡐ هِ أ᠑ سْ وَ ةٌ حَ سَ نَ ةٌ .
‘অবশ্যই রাসূলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহযাব : ২১)
আল-কুরআনে আরও ঘোষিত হয়েছে ঃ
أ᠐ طِ ᘭعُ وا᠔ ٱللᡐ هَ وَ أ᠐ طِ ᘭعُ وا᠔ ٱلرَّ سُ ولَ .
‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের অনুকরণ কর।’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)
কুরআন ও সুন্নাহ আদর্শের মাপকাঠি ঃ ইসলামী সমাজে সকল কাজে কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহর অনুসরণ করা
হয়। এ দুয়ের বিপরীত সব কিছুকে বর্জন করা হয়। বিদায় হাজ্জের ভাষণে মহানবী (স.) বলেছেন ঃ ‘আমি
তোমাদের কাছে দুটো বিষয় রেখে যাচ্ছি এগুলোর অনুসরণ করলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল
আল্লাহর বাণী কুরআন এবং আমার সুন্নাহ।’
মহান আল্লাহ বলেন ঃ
وَ مَ ቯ آتَ ا᠑ᝏ مُ ٱلرَّ سُ ولُ فَ خُ ذُ وەُ وَ مَ ا نَ هَ ا᠑ᝏ مْ عَ نْ هُ فَ ٱنتَ هُ و ا᠔ .
‘রাসূল যা তোমাদের জন্য এনেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা বর্জন কর।’ (সূরা আল-হাশর:
৭)
ঈমান ও আমলের সমন্বয় ঃ ইসলামী সমাজ বিশ্বাস ও কর্ম অর্থাৎ ঈমান ও আমলের সমন্বয়ে গঠিত। এ সমাজ
তাওহীদ ও রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করে সে অনুসারে জীবন যাপন করে। বিশ্বাস ও কর্মকে আলাদা করে দেখে
না। ইসলামে কর্মই ধর্মের পরিচায়ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ঃ
وَ ٱل᠔ عَ صْ ر᠒ . إِ نَّ ٱلإِ ᙏسَ انَ ل᠐ فِ ى خُ سْ ر᠏ . إِ ᢻَّ ٱلᡐ ذِ ينَ آمَ نُ وا᠔ وَ عَ مِ ل᠑ وا᠔ ٱلصَّ الِ حَ اتِ .
‘মহাকালের শপথ, অবশ্যই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্মকরেছে।’
(সূরা আল-আসর : ১-৩)
বিধি-বিধান আল্লাহ প্রদত্ত ঃ ইসলামী সমাজে আল্লাহ প্রদত্ত আইন-কানুন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়।
আল্লাহ বলেছেন ঃ ِه ᡐلِ ل َّᢻ ِإُ م ᠔ᜓ ُح ᠔ٱلِ نِ إ ‘কর্তৃত্বএকমাত্র আল্লাহরই।’ (সূরা আল-আন‘আম : ৫৭)
মানবতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন ঃ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক সাম্য, অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্ব মানবতার
ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত উন্নত আদর্শসমাজ ব্যবস্থার ফলে প্রচলিত অন্ধ আভিজাত্যের গৌরব ও বংশ মর্যাদার মূলে
কুঠারাঘাত করা হয়। মানুষে মানুষে সকল প্রকার অসাম্য ও ভেদাভেদ দূরীভূত করে মানবতার অত্যুজ্জ্বল আদর্শে
ইসলামী সমাজ গঠিত।
ইসলামী সমাজে শ্রেণী বৈষম্যতা নেই ঃ ইসলামী সমাজে নিছক জন্মগত, বংশগত কিংবা ভাষাগত বা
আঞ্চলিকতার বিচারে কোন মানুষের মর্যাদা ও প্রাধান্য স্বীকার করা হয় না। মহানবী (স.) বলেন, ‘সকল মানুষ
সমান। মানুষের মধ্যে উৎকৃষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর প্রতি সর্বাধিক অনুগত এবং মানুষের সর্বাধিক
কল্যাণকামী।’
ইসলামী সমাজ সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শে উজ্জীবিত ঃ ইসলামী সমাজ সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নীতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাওহীদের এই বৈপ্লবিক ঘোষণা মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ চূর্ণ করে এক
সমাজ, এক জাতিতে পরিুত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনÑ
وَ مَ ا ᛿᠐ انَ ٱلنَّ اسُ إِ ᢻَّ أ᠑ مَّ ةً وَ احِ دَ ةً .
‘মানুষ ছিল একই উম্মাত।’ (সূরা ইউনুস : ১৯)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন ঃ
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ اسُ إِ نَّ ا خَ ل᠐ قْ نَ ا᠑ᝏ م مِّ ن ذَ ᠐ᜧ ر᠏ وَ أ᠑ نْ ثَ ىٰ وَ جَ عَ ل᠔ نَ ا᠑ᝏ مْ شُ عُ ᗖᖔا᠍ و قَ ᘘ َቯئِ لَ لِ تَ عَ ارَ فُ وۤ ا᠔ إِ نَّ
أ᠐ ᠔ᜧ رَ مَ ᠑ᝣ مْ عِ ندَ ٱللᡐ هِ أ᠐ تْ قَ ا᠑ᝏ مْ .
‘হে মানব! আমি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি এবং পরে তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও
গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে
তারাই উত্তম যারা অধিক মুত্তাকী।’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩)
সকলের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারিত ঃ ইসলামী সমাজে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের অধিকার ও দায়িত্ব
নির্ধারিত রয়েছে। সমাজের কোন সদস্যই দায়িত্বমুক্ত নয়। মহানবী (স.) বলেছেনÑ
᛿لᝣم را ع و᛿لᝣم مسئول عن رعيته .
‘সাবধান ! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদেরকে আপন দায়িত্ব পালনে জবাবদিহি করতে হবে।’
(বুখারী, মুসলিম)
একে অপরের কল্যাণকামী ঃ ইসলামী সমাজে পরস্পর পরস্পরের কল্যাণকামী, সহযোগী। মহানবী (স.) বলেন

حةᘭالنصـ الـدين ‘কল্যাণকামীতাই দীন।’ মহানবী (স.) আরও বলেন ঃ ينفـع مـن النـاس خيـر
الناس ‘যে ব্যক্তি মানুষের উপকার করে, সেই ব্যক্তিই উত্তম।’
ন্যায়ের পতাকাবাহী ঃ ইসলামী সমাজের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ন্যায়নীতি ভিত্তিক। সামাজিক বা অর্থনৈতিক
কোন ব্যাপারেই কেউ কারও ওপর যুলম বা অত্যাচার করতে পারে না। ইসলামী সমাজ তাই ন্যায়ের
পতাকাবাহী। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলামী সমাজ।
ইহকাল ও পরকলের সমন্বয়ে গঠিত ঃ ইসলামী সমাজ ইহকাল ও পরকালের সমন্বয়ে গঠিত। ইসলামী সমাজ
যেমন পার্থিব সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে তেমনিভাবে ইসলামী সমাজ পারলৌকিক কল্যাণের পথও
সুগম করে।
ইসলামী সমাজ ব্যাপক ও সার্বজনীন ঃ ইসলামী সমাজ অঞ্চল, গোত্র, বর্ণ, ভাষা-নির্বিশেষে একটি ব্যাপক ও
সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থার কথা বলে। যারাই ইসলামে বিশ্বাস করেন এবং ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলতে চান
তারাই এই সমাজের সদস্য। আল্লাহ তা’আলা বলেনÑ ًةَ ـدِ احَ وً ـة مَّ ᠑أُ ـاس ٱلنََّ ـان ᠐᛿ ‘মানুষ ছিল একই
উম্মাত।’ (সূরা আল-বাকারা : ২১৩)
শ্রেষ্ঠ সমাজ ঃ ইসলামী সমাজ শ্রেষ্ঠসমাজ। এ সমাজ মানবতার কল্যাণকামী। এ সমাজে বিশ্বাসী বান্দাগণ সৃষ্টির
সেরা জীব। বিশ্বাসী জাতি শ্রেষ্ঠ জাতি। আল্লাহ বলেন ঃ ٍـة مَّ ᠑أَ ـرْ يَ خْ مُ ـتْ ن ᠑ك ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি।’ (সূরা
আলে ইমরান : ১১০)
ইসলামী সমাজের গুরুত্বঃ ইসলামী সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤েœইসলামী সমাজের গুরুত্ব আলোচনা করা
হল।
ইসলামের পূর্ণ বাস্তবায়ন ঃ ইসলামী সমাজ না হলে, ইসলামের পূর্ণ রূপায়ণ এবং ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়ন
সম্ভব নয়। এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই মহানবী (স.) জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গিয়ে আনসার ও
মুহাজিরদের সমন্বয়ে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেন বরং সেখানে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার এক পূর্ণাঙ্গ
চিত্র তুলে ধরেন।
ইসলামের সামগ্রিক রূপায়ণে ঃ জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের সামগ্রিক বিধি-বিধান রূপায়ণের জন্য ইসলামী
সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা সে উদ্দেশ্য
বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত। ইসলামী সমাজেই ইসলামের আর্থ-সামাজিক নীতিমালা ও আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব।
সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য পালনে ঃ ইসলামী সমাজের সামাজিক বন্ধন অত্যন্তসুদৃঢ়।
রাসূল (স.) বলেছেনÑ
المسلم كجسد واحد
‘মুসলমান একটি দেহের মত।’
তিনি আরও বলেছেন, انᘭ الب ᛿المؤمنون انما ‘মুমিনগণ অট্টালিকা স্বরূপ।’ (সহীহ বুখারী)
ইসলামী সমাজে পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আল্লাহর ইবাদাতের মতই বান্দার হক বা
অধিকার প্রদানের গুরুত্ব রয়েছে। সমাজে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী সকলের প্রতিই কর্তব্য পালন করতে হয়।
মানব জীবনের অপরিহার্য সংগঠনঃ মানব জীবনের অপরিহার্য সংগঠন হচ্ছে সমাজ। সমাজ ছাড়া মানব জীবন
কল্পনা করা যায় না। আল্লাহর বিধান পালন করতে হলে সমাজ অনিবার্য। আল্লাহর নির্দেশÑ
وَ ٱعْ تَ صِ مُ وا᠔ ᗷ ِحَ ᘘ ْلِ ٱللᡐ هِ جَ مِ ᘭعا᠍ وَ ᢻ َتَ فَ رَّ قُ وا᠔ .
‘তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং বিচিছন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)
মহানবী (স.) এ ব্যাপারে বলেন ঃ
علᘭᜓم ᗷالجماعة و اᘌاᝏم والفرقة.
‘জামা‘আতকে ভালভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পৃথক হয়ে থেকো না।’ (তিরমিযী)
মহানবী (স.) সমাজ জীবনের অপরিহার্য কয়েকটি দিকের প্রতি নির্দেশ করে ঘোষণা করেন ঃ
امر᛿م ᗷخمس ᗷالجماعة والسمع والطاعة والهجرة والجهاد فى سᘭᙫل الله.
‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি তা হলÑ জামাআতবদ্ধ জীবনযাপন করা, নেতার নির্দেশ শ্রবণ
করা, তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, হিজরত করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ (তিরমিযী)
ইসলামী সমাজ থেকে বিচ্যুত হলে সে ঈমান ও ইসলাম থেকেও বিচ্যুত হয়ে যায়। যেমন নবী (স.) বলেন ঃ
انه من خᖁج من الجماعة شبر ا فقد خلع رᗖقة الاسلام من عنقه.
‘যে ব্যক্তি ইসলামী দল থেকে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে যায়, নিঃসন্দেহে সে যেন ইসলামের জোয়াল তার
গলদেশ থেকে নামিয়ে ফেলেছে।’
মহানবী (স.) বলেন ঃ
ᘌد الله على الجماعة.
‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত (সাহায্য) রয়েছে।’
তাই প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর রহমত তথা করণণা লাভের জন্য এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভের আশায়
সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে।
সারসংক্ষেপ
বস্তুত ইসলামী সমাজ একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা। ইসলামী সমাজ মানব সভ্যতার একটি অনিবার্য গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। ইসলামী সমাজে মানুষ ও মানবতার বিকাশ উন্নয়ন সাধিত হয়। এ সমাজব্যবস্থা তাই মানবতার জন্য অপরিহার্য।
১. সমাজে এক সাথে মিলেমিশে থাকা মানুষের জন্য-
ক. অপরিহার্য
খ. আবশ্যক
গ. বিপজ্জনক
ঘ. আরামদায়ক।
২. মানব সমাজ স¤পর্কে ইসলামের মূলনীতি হচেছ-দুনিয়াতে সম¯ মানুষইক. এক আল্লাহর বান্দা
খ. এক আদমের সন্তান নয়
গ. রাসূলের উম্মত
ঘ. শয়তানের প্রতিচ্ছবি।
৩. ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ কয়টি সমাজে বিভক্ত হয়ে পড়েছে?
ক. ১টি
খ. ৭০টি
গ. ২টি
ঘ. ৪টি।
৪. ইসলামী সমাজে মানুষের সকল কর্মকান্ড কিসের ভিত্তিতে চলবে ?
ক. আল্লাহর বিধানের
খ. সমাজের কল্যাণের
গ. গণতান্ত্রিক নিয়মের
ঘ. খলিফার হুকুমের।
৫. ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ ইসলামী সমাজেরক. অন্যতম উদ্দেশ্য
খ. শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য
গ. সকলের কর্তব্য
ঘ. কাম্য বিষয়।
৬. ইসলামী সমাজে আদর্শের মাপকাঠি কী?
ক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
খ. সাহাবাগণ
গ. বুযুর্গানে দীন
ঘ. কুরআন ও সুন্নাহ।
৭. ইসলামে কর্মই ধর্মেরক. পরিচায়ক
খ. নিয়ামক
গ. বিষয়বস্তু
ঘ. পূর্ণাঙ্গরূপ।
৮. ইসলামী সমাজ কোন নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত?
ক. প্রকৃতির
খ. সাম্যের
গ. কল্যাণের
ঘ. সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের।
৯. ইসলামী সমাজ মানব সভ্যতার জন্য একটিক. অনিবার্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
খ. একটি অপরিহার্য বস্তু
গ. অপরিহার্য সত্য
ঘ. সকল উত্তরই সঠিক।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী সমাজের পরিচয় দিন।
২. বিশ্বের সকল মানুষ একই সমাজভুক্ত-প্রমাণ করণন।
৩. ইসলামী সমাজের শিক্ষা লিখুন।
৪. ইসলামী সমাজের গুরুত্ব বর্ণনা করণন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী সমাজের পরিচয় দিন এবং ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করণন।
২. ইসলামী সমাজের গুরুত্বতুলে ধরুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]