ইসলামে সমাজবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব আলোচনা করণন।

মাতৃক্রোড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে যেমন শিশুর ধারণা করা যায় না, অনুরূপভাবে সমাজক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন
মানবজীবনের ধারণা করাও অসম্ভব। মানবেতিহাসে এমন একটি অধ্যায়ও পাওয়া যাবে না যখন মানুষ সমাজের
সামান্য মুখাপেক্ষীও ছিল না। কাজেই ইতিহাসের অস্পষ্ট এলাকায়ও তার চিহ্ন অদৃশ্য নয়। যখন “তামাদ্দুনের”
ভিত্তি প্রস্তরই স্থাপিত হয়নি, যখন মানুষ গুহার বাইরেও আসতে পারেনি, যখন সে শস্য উৎপাদন ও বস্ত্র বুননের
কথা চিন্তাও করেনি, যখন বৃক্ষপত্র ও ফলমূল এবং বৃক্ষের ছায়া তার জীবনীশক্তি যোগাতো, তখনো সে
পরিবারবদ্ধভাবে মিলেমিশে বসবাস করত এবং সমাজবদ্ধতাকে সে নিজের জীবনক্ষেত্র মনে করত। তারপর তার
সাংস্কৃতিক রুচিবোধ যত বেশী পরিপুষ্টি লাভ করতে থাকে এবং ব্যাপকতর সমাজবদ্ধতার পথে প্রতিবন্ধক দূর
হতে থাকে, ততই তার সমাজপ্রীতি উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে। পারিবারিক একক গোত্রীয়
এককে, অত:পর গোত্রীয় এককসমূহ জাতীয় সমাজে পরিবর্তিত হয়ে যায়। বর্তমানে এ জাতীয় সমাজসমূহ একটি
সামগ্রিক পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে এবং একটি আন্তর্জাতিক পরিবারে রূপান্তরিত হবার জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছে।
মানুষের এই ধারাবাহিক কর্মধারার কারণ কি ? প্রথম দিন থেকেই সে সমাজের সন্ধানে ফিরেছে কেন ? যুগের
গতিধারার সাথে তার এ সন্ধানী মনোবৃত্তি শক্তিশালী ও স্পষ্টতর হয়েছে কেন ?
এ প্রশ্নগুলোর জবাবে একবাক্যে একথাই বলা হবে যে, অবশ্যই এমন প্রবল শক্তিধর কার্যকারণ আছে যা তাকে
নিজের জাতির অন্যান্য লোকদের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবার অনুমতি দেয় না। যা ভেতরে ভেতরেই তাকে
স্বজাতীয়দের সাথে মিলেমিশে থাকতে এবং পৃথকভাবেও নির্জনে বসবাস করার পরিবর্তে সমাজবদ্ধভাবে জীবন
যাপন করতে বাধ্য করে। গভীর দৃষ্টিতে দেখলে আমরা এর দু’টো কার্যকারণ দেখতে পাই ঃ
এক. স্বজাতির প্রতি আকর্ষণ।
দুই. সহযোগিতার প্রয়োজন।
“স্ব-জাতির প্রতি আকর্ষণের” অর্থ হলো এই যে মনস্তাত্তি¡ক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই স্ব-জাতির প্রতি
বিশেষ অনুরাগের অধিকারী। তার জন্য সে নিজের মধ্যে গভীর আকর্ষণ অনুভব করে। তার সঙ্গ-সুখে সে আত্মিক
ও মানসিক শক্তি লাভ করে, স্ব-জাতির সাথে পূর্ণ সম্পর্কচ্যুতি তার মনে অস্থিরতার সৃষ্টি করে এবং নিরবচ্ছিন্ন
দীর্ঘকালীন নির্জনতা তাকে আতংকিত করে।
“সহযোগিতার প্রয়োজনের”Ñ অর্থ হলো এই যে, একদিকে তার একক ও ব্যক্তিগত শক্তি সামর্থ নিতান্তসীমাবদ্ধ
আর অপর দিকে তার তুলনায় তার পার্থিব প্রয়োজন বিরাট বিপুল ও অত্যন্তব্যাপক। তাই ঐ প্রয়োজন পূরণের
ব্যাপারে এই শক্তি কখনো যথেষ্ট হতে পারে না এবং কেবল নিজের ব্যক্তিগত শক্তির জোরে সে কোনোক্রমে এই
প্রয়োজন পূরু করতে পারে না। এমন কি যে সব প্রয়োজনকে মৌলিক ও অপরিহার্য বলা হয়, সেগুলো পূরু করাও
তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্তসম্ভব নয়, যতক্ষণ আরো অনেক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাকে সাহায্য না করে।
এভাবে বিচার করলে দেখা যায় সমাজবদ্ধ জীবন মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা এবং প্রয়োজনের তাগিদেই গড়ে
ওঠে। এটি এমন একটি স্বীকৃত সত্য যে, বিদ্যা ও জ্ঞানের কোন যুগেও এ সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা যায় না।
প্রাচীন যুগের প্রখ্যাত গ্রীক ও দার্শনিক এরিস্টটল মানুষের সংজ্ঞা নির্ণয় প্রসঙ্গে বলেনঃ
‘মানুষ জন্মগত ভাবেই একটি রাজনৈতিক জীব’। (এরিস্টটলের রাজনীতি)
বলাবাহুল্য রাজনীতি সমাজবদ্ধতার সর্বশেষরূপের নাম। কাজেই রাজনৈতিক জীব শব্দের অর্থ হলো-যে জীব চরম
এবং পূর্ণভাবে সামাজিকতার অনুসারী। মধ্যযুগের প্রখ্যাত পন্ডিত ও সমাজ বিজ্ঞানী আল্লামা ইবন খালদুন বলেনঃ
‘একসাথে মিলেমিশে থাকা মানুষের জন্য অপরিহার্য। এ সত্যটিকেই জ্ঞানী ও পন্ডিতগণ এভাবে বিবৃত করে
থাকেন যে, জন্মগতভাবেই মানুষ সামাজিক জীব।’ (মুকাদ্দামা ইবন খালদুন)
বর্তমান যুগের পন্ডিত ও দার্শনিকদের নিকট এটি এমন একটি স্বীকৃত সত্য যে, এ সম্পর্কে কোন প্রকার আলোচনা
বা প্রমান প্রদর্শনের প্রয়োজনই তাঁরা মনে করেন না।
পবিত্র কুরআন মাজীদ কোন জীববিদ্যা বা সমাজবিদ্যার গ্রন্থনয়। তাতে মানুষের সমাজ প্রিয়তা সম্পর্কে সরাসরি
কোন আলোচনার অবকাশও নেই। কিন্তুু তা সত্তে¡ও বিশেষ আলোচনার পরিসরে সেখানে যা কিছু বলা হয় তার
পিছনে যেহেতু আরো অনেক তাত্তি¡ক সত্যের ন্যায় মানুষের মনস্তত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের দিকেও দৃষ্টি রাখতে
হয়, সেহেতু আলোচনা প্রসঙ্গে সেখানে ঐসব সত্যের দিকেও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে। কুরআনের ইঙ্গিতসমূহ
পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, কুরআন মাজীদও মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে সমাজপ্রিয় বলে গণ্য করে।
উদাহরণ স্বরূপ যখন কুরআন বলে যে, পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে তাদের সৃষ্টিকর্তা পারষ্পরিক ভালবাসা ও দয়া
(২১ : রূম-আর রাূস (وَ جَ عَ لَ بَ ᚏ ْنَ ᠑ᝣ م مَّ وَ دَّ ةً وَ رَ حْ مَ ةً ছনÑরেকে ষ্টিৃস
তখন পরোক্ষভাবে যেন সে এ কথাই বলে যে, মানুষকে মূলগতভাবে সামাজিক জীব হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
ইসলামে সমাজবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব
সাধারণভাবে কুরআন ও সুন্নাহ পর্যালোচনা করলে একথাই প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী চিন্তা ও কর্মব্যবস্থা সমাজবদ্ধ
জীবনের কর্তৃত্বশূন্য নয়। বরং সেখানে তার গুরুত্ব ও দাবীসমূহের দ্ব্যর্থহীন স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আর এ
পর্যালোচনা যদি আরো ব্যাপক হয়, তাহলে এ বিষয়টি সম্পর্কে আর কোন সন্দেহই থাকে না। তখন দেখা যাবে
যে, এই ব্যবস্থায় সমাজবদ্ধ জীবন এমন অস্বাভাবিক গুরুত্ব অর্জন করেছে যার সম্ভবত কোন নযীর পাওয়া যাবে
না। সম্ভাব্য সকল দিক দিয়েই এ গুরুত্বের ব্যাখ্যা ও নির্দেশ দান করা হয়েছে। সামাজিক কার্য-পদ্ধতি কার্যকর
করার যতটুকু সুযোগ থাকতে পারে তার সবটুকুতেই ইসলাম একে কার্যকরী করার নির্দেশ দিয়েছে।
এ দাবীর স্বপক্ষে আমরা যে সব প্রমাণ পেশ করতে পারি তা নি¤œরূপ১. ইসলাম সমাজবদ্ধ জীবনের ধারণা দিয়েছে অর্থাৎ মানুষের যে অবস্থানকে তার সত্যিকার সামাজিক
অবস্থান বলে স্বীকার করে নেওয়া হয় ইসলাম তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
২. শরী‘আতের যে সব বিধান মুসলমানদের দলীয় সংগঠন ও জাতীয় ঐক্য সম্পর্কে বিধৃত তার স্বীকৃতি
দিয়েছে।
৩. ইসলামের যে সব বিধানের মধ্যে জীবনের সাধারণ বিষয়াবলীকেও কোন না কোন প্রকার সামাজিক
সংগঠনের সাথে সম্পাদন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৪. সমাজ জীবনের যেসব অনুষ্ঠানকে ফরয ইবাদাতের আওতায় আবশ্যিক গণ্য করা হয়েছে। এগুলোকে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলে তা পাওয়া যায়। নি¤েœএ সকল বিষয়ে বি¯তৃত আলোচনা করা হল।
এক ঃ সামাজিক ধারণা
কোন ধর্ম যখন তার অনুসারীদেরকে সম্বোধন করে তখন তার মনোজগতে মানুষের আসল মর্যাদা সম্পর্কে একটি
নির্দিষ্ট ধারণা থাকে এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখেই সে তার শিক্ষা বিস্তারের সূচনা করে। যে সব বিষয়ে
মানুষের আলাদা মর্যাদা ও তার প্রাকৃতিক অবস্থানের নির্দেশের প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে সমাজনীতি অন্যতম। এ
জন্য ইসলাম তার শরিআতের উপর সমাজ জীবনের গভীর ছাপ রেখেছে। তার বিধান ও নির্দেশাবলীর একটি
বিপুল-বিরাট অংশ মানুষের সামাজিক জীবনের সাথে সম্পৃর্ক্ত করে দিয়েছে। আর এগুলোর আনুগত্যকেও সে
অন্যগুলোর ন্যায় অপরিহার্য গণ্য করেছে। তাই ইসলাম কেবল ইবাদাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেই ক্ষান্তহয়নি, বরং
সামাজিক জীবন যাপন করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য ব্যবস্থাও দান করেছে। নৈতিক, সামাজিক,
তামাদ্দুনিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, নাগরিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক তথা মানব জীবনের এমন
কোন বিভাগ নেই যে সম্পর্কে তার কোন বিধান নেই।
বস্তুুত ইসলামে এ সামাজিকতার ধারণা এতই স্পষ্ট যে, মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও বিভাগে তার সুস্পষ্ট
নির্দেশনাই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।
দুই ঃ ইসলামে সামাজিক সংগঠনের বিধান
ইসলাম নিঃসন্দেহে ব্যক্তিকে বিরাট ও মৌলিক গুরুত্ব দান করেছে। তার প্রাথমিক ও আসল বাণী ব্যক্তির
উদ্দেশ্যেই। ব্যক্তি যেমন একা জন্মগ্রহণ করেছে, তেমনি আল্লাহর বিধান ও ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন যাপন করে
নিজের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করাও তার ব্যক্তিগত দায়িত্ব। ভবিষ্যতে আল্লাহর সামনে নিজের কার্যাবলীর
জবাবদিহি করার জন্য তাকে একাই হাজির হতে হবে। কিন্তুু এই সংঙ্গে ইসলাম একথাও বলে- যে পথ মানুষকে
সাফল্যের মঞ্জিলে পৌছায় তা সমাজকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়নি বরং একটি সংগঠিত সমাজ জীবনের মধ্য
থেকে বের হয়ে অগ্রসর হয়েছে। এ পথের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে গিয়ে কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে।
وَ ٱعْ تَ صِ مُ وا᠔ ᗷ ِحَ ᘘ ْلِ ٱللᡐ هِ جَ مِ ᘭعا᠍ وَ ᢻ َتَ فَ رَّ قُ وا᠔
‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে সংঘবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর পৃথক হয়ে থেকো না।’ (সূরা আলে
ইমরান : ১০৩)
পৃথক হয়ে থেকো না অর্থাৎ পরস্পরে সংশি- ষ্ট ও সম্পর্ক যুক্ত হয়ে থেকো। এ কথার ব্যাখ্যায় মহানবী (স.)
বলেনঃ
علᘭᜓم ᗷالجماعة واᘌاᝏم والفرقة.
‘জামা‘আতকে ভালভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে দূরে থেকো না।’ (তিরমিযী)
মহানবী (স.) অন্যত্র বলেন-
اناامر᛿م ᗷخمس والله امرنى بهن الجماعة والسمع والطاعة والهجرة والجهاد فى
سᘭᙫل الله
‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছিঃ
ক. জামা‘আতবদ্ধ জীবন
খ. শ্রবণ (অর্থাৎ নেতার নির্দেশ শ্রবণ করা)
গ. আনুগত্য (অর্থাৎ তার নির্দেশ মেনে চলা)
ঘ. হিজরত করা
ঙ. আল্লাহর পথে জিহাদ। (আহমাদ, তিরমিজী)
এ হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে, ইসলাম যে সমাজ জীবনের নির্দেশ দেয় তা কোন ঢিলে ঢালা সমাজ জীবন
নয়। নিছক নৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে তার কাঠামো তৈরি হয়নি। বরং ইসলাম সমাজ জীবনকে ঐক্য সংগঠন ও
সংবদ্ধতার ভিত্তিতে শ্রবণ ও আনুগত্যের লৌহতারের সাহায্যে কঠিনভাবে বেঁধে দিয়েছে। জামা‘আতকে মজবুত
করে আঁকড়ে ধরা এবং সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করা নিছক একটি নির্দেশ নয় বরং এমন একটি অপরিহার্য নির্দেশ
যে, তার বিরুদ্ধাচরণ করলে ঈমান ও ইসলাম থেকে সম্পর্কচ্যুতি ঘটতে পারে। কাজেই মহানবী (স.) এ সম্পর্কে
বলেনঃ
انه من خᖁج من الجماعة شبر ا فقد خلع رᗖقة الاسلام من عنقه.
‘যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘৎ পরিমাণ পৃথক হয়, নিঃসন্দেহে সে ইসলামের জোয়াল তার গলা থেকে
নামিয়ে দিয়েছে।’
من خᖁج من الطاعة وفارق الجماعة فمات ميتة جاهلᘭة.
‘যে ব্যক্তি মুসলিম নেতার আনুগত্য পরিহার করে এবং মুসলিমদের জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যায়, সে
জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে।’
জামা‘আতবদ্ধ জীবন থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা যেমন মুসলমানদের জন্য ঈমান পরিপন্থী কাজ, অনুরূপভাবে
সামাজিক শৃঙ্খলার সাথে সম্পর্কযুক্ত না হওয়াও দীনের দিক থেকে ভয়াবহ ব্যাপার।
من مات و لᛳس فى عنقه بᘭعة مات ميتة جاهلᘭة.
‘যে ব্যক্তি মরে যায় কিন্তু তার গলায় (মুসলিম নেতার) বাই‘আতনামা (আনুগত্যের শপথ) থাকে না, সে
জাহিলিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করবে।’ (মুসলিম)
যে জামা‘আত এই বিপুল মর্যাদা সম্পন্ন এবং যে সামাজিক শৃঙ্খলা থেকে সম্পর্কচ্যুতি মুসলিমকে জাহিলিয়াতের
সীমান্তেপৌঁছে দেয়, নিঃসন্দেহে তার বিরোধিতা করা অথবা তার পথে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টাকে
ইসলাম মুহূর্তকালের জন্যও সহ্য করতে পারে না- এ ব্যাপারে মহানবীর (স.) ঘোষণা ঃ
من اراد ان ᘌفرق امر هذە الجماعة و هى جماعة و هى جميع فاضرᗖوە
ᗷالسᘭف ᛿ائنا من ᛿ان.
“কোন জামা‘আত যখন ঐক্যবদ্ধ থাকে, তখন যে ব্যক্তি তাকে ছিন্ন ভিন্ন করতে চায় তাকে তলোয়ার দিয়ে
আঘাত করো, সে যে-ই হোক না কেন।” (মুসলিম)
বস্তুত ইসলাম তার অনুসারীদেরকে সামাজিক শৃঙ্খলা ও জাতীয় ঐক্য বিধানের জন্য যে সব নির্দেশ দিয়েছে,
এগুলো তারই সংক্ষিপ্ত সার। কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে মুসলিমদের একটি বিশেষ সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকা,
বিচ্ছিন্নতা থেকে দূরে থাকা, কতখানি জরুরী ব্যাপার তা সহজেই অনুমেয়।
সাধারণ সামাজিক বিধান
সমাজ জীবন ও সামাজিক জীবনব্যবস্থা এই শব্দগুলোর মাধ্যমে সাধারণত যে উচ্চতর ও ব্যাপকতর অর্থ গ্রহণ করা
হয়ে থাকে, সাধারণ সমাজ সীমায় এটিকেই সমাজ জীবনের উন্নত মান ও চরম পূর্ণতা মনে করা হয়। আর রাষ্ট্রের
কর্মসীমা ও প্রভাব বহির্ভূত অবশিষ্ট জীবনকে সমাজ জীবনের আওতা বহির্ভূত ও তার সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কহীন
মনে করা হয়। কিন্তু ইসলাম এই সাধারণ দৃষ্টিকোণের সাথে একমত না হয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়। ইসলাম নিজের
অনুসারীদেরকে রাষ্ট্রের কর্ম ও প্রভাবসীমা বহির্ভূত জীবনেও কোন না কোন প্রকার সামগ্রিক শৃংখলার মাধ্যমে
অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেয়। যেমন১. ‘কোন জনশূন্য এলাকায় তিন ব্যক্তি কেবলমাত্র নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেই
অবস্থান করতে পারে।’ (মুনতাকা, ৩৩০)
২. ‘তোমাদের মধ্য থেকে তিনজন যখন কোন সফরে বের হয়, তখন একজনকে নিজেদের নেতা হিসেবে
গ্রহণ করো।’ (আবূ দাউদ, ১ম খন্ড, ৩৫১)
বস্তুত স্বাভাবিক অবস্থা ও সফর অবস্থা সম্পর্কিত এসব ইসলামী বিধান ইসলামী চিন্তা ও কার্য ব্যবস্থার মধ্যে
সমাজ জীবনের প্রয়োজন ও গুরুত্বকে বিপুল মর্যাদা দান করেছে।
ইবাদাতের সামষ্টিক অনুষ্ঠানাদি
মানব জীবনের যে বিভাগটিকে সাধারণ প্রচলিত ধারার পরিপ্রেক্ষিতে ইবাদাতের বিভাগ বলা উচিত, সেটি এমন
একটি বিভাগ যেখানে সমাজবদ্ধতার ধারণার অনুপ্রবেশ বড়ই কঠিন। আল্লাহর ইবাদাতের নাম নেবার সাথে
সাথেই নির্জনতা ও নিরিবিলি অবস্থানের চিত্র ভেসে উঠে। মনে হতে থাকে যে, ইবাদাত একটি নির্ভেজাল ধর্মীয়
ও পারলৌকিক কাজ, কোন দিক দিয়েও এটা কোন পার্থিব কাজ নয়। অত:পর তাকে প্রকাশ্য স্থানের বিষয়বস্তুতে
পরিুত করা কেমন করে সম্ভব ? কিন্তু না, আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমেও সামগ্রিকতা ও সামষ্টিকতার চেতনা
তীব্রভাবে অনুভূত হয়। ইসলাম ইবাদাতের মধ্যে কতিপয় সামগ্রিক অনুষ্ঠানকে অপরিহার্য করে দিয়ে সামগ্রিকতা
ও সমাজবদ্ধতাকে গুরুত্বদানের চূড়ান্তপদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইসলামের প্রতিটি ইবাদাত যেমন-সালাত, সাওম, যাকাত, হাজ্জ প্রভৃতি ইবাদাত অনুষ্ঠান একা বা এককভাবে
করার নির্দেশ নেই। বরং সব কয়টি মৌলিক ইবাদাত সামষ্টিকভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের
এই ইবাদাতসমূহ যে সমষ্টিবাদের প্রাণ বস্তুতে ভরপুর, তাতে ইসলামের সমাজবদ্ধতার দিকটির গুরুত্ব আরো
চরমভাবে উপলব্ধি করা যায়। এসব আলোচনা হতে একথা বলা অত্ত্যুক্তি হবে না যে, ইসলামে সমষ্টিবাদকে যে
উন্নত মর্যাদা দান করা হয়েছে তার নযীর অন্য ধর্মে তো দূরের কথা, কোন জীবন ব্যবস্থায়ও পাওয়া যায় না।
একথায় উত্তর দিন
১. মানবেতিহাসে এমন কোন অধ্যায় আছে কী -যখন মানুষ সমাজের মুখাপেক্ষী ছিল না?
২. বর্তমান সমাজসমূহ কিসে রূপান্তরিত হবার প্রস্তুতি চালাচ্ছে?
৩. সমাজবদ্ধতা মানুষের কেমন চাহিদা?
৪. গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল মানুষের সংজ্ঞা নির্ণয় প্রসঙ্গে কী বলেন?
৫. ‘এক সাথে মিলেমিশে থাকা মানুষের জন্য অপরিহার্য’- এটা কার উক্তি।
৬. ইসলাম কি ইবাদতের পদ্ধতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
৭. ‘সমাজকে আঁকড়ে ধরার জন্য মহানবী (স.) কী বলেছেন?
৮. সমাজবদ্ধ বা জামা‘আতবদ্ধ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে মহানবী (স.) কী বলেছেন?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মানুষকে সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করতে কীসে বাধ্য করে?
২. মানব প্রকৃতিতে সমাজবদ্ধতার অপরিহার্যতা প্রমাণ করণন।
৩. ইসলামে সমাজবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব বিশে- ষণ করণন।
৪. ইসলামী সামাজিক সংগঠনের বিধান উল্লেখ করণন।
৫. সাধারণ সামাজিক বিধানে সমাজবদ্ধতার গুরুত্বতুলে ধরুন।
৬. ‘ইসলামের ইবাদাত অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সমাজবদ্ধতার চেতনা তীব্রভাবে নিহিত- প্রমাণ করণন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামে সমাজবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব আলোচনা করণন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]