জীবনের নিরাপত্তা বিধানে ইসলামী সমাজে গৃহীত নীতিমালা উপস্থাপন করণন।

মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার গ্যারাণ্টি রয়েছে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায়। কেননা ইসলাম এমন একটি
সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে শান্তি, সুখ ও কল্যাণ এবং অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ যাবতীয় মৌলিক অধিকার
পূরণের নিশ্চয়তা রয়েছে। জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হয়েছে তা নি¤œরূপ:
মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা ঃ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সমাজের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা
বিধান করেছে। ইসলাম মানুষকে তার মন ও মতের স্বাধীনতা, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, ইজ্জত ও সম্মানের
নিরাপত্তা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বেঁচে থাকার অধিকার দান করেছে। ইসলামী সমাজে মানুষকে নির্যাতন, নিপীড়ন
ও দাবিয়ে রাখার বিধান নেই। এখানে প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে সুখ-শান্তিতে বসবাস করবে।
জীবনের নিরাপত্তা ঃ মানুষের জীবনের সর্বপ্রথম অধিকার হচেছ বাঁচার অধিকার, জীবন যাপনের অধিকার।
ইসলামী সমাজে যে কোন ব্যক্তি তার জীবনের পূর্ণ নিরাপত্তা পেয়ে থাকে। অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে হত্যা করলে
বিনিময়ে ‘কিসাস’ স্বরূপ হত্যাকারীকে হত্যা অথবা ‘দিয়াত’ তথা রক্তপণ দেয়ার বিধান দিয়েছে। যেমন কুরআন
ঘোষণা করেছে ঃ
وَ ᢻ َتَ قْ تُ ل᠑ وا᠔ ٱلنَّ فْ سَ ٱلᡐ تِ ى حَ رَّ مَ ٱللᡐ هُ إِ ᢻَّ ᗷ ِٱلحَ قِّ .
‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থকারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করো না।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৩)
مَ ن قَ تَ لَ نَ فْ سا᠍ ᗷ ِغَ يْ ر᠒ نَ فْ س᠏ أ᠐ وْ فَ سَ ادٍ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ فَ ᠐ᝣ أ᠐ نَّ مَ ا قَ تَ لَ ٱلنَّ اسَ جَ مِ ᘭعا᠍ .
‘নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল
মানুষকেই হত্যা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা : ৩২)
এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যাবে না এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে
না। এভাবে ইসলাম মানুষকে জীবনের পূর্ণ নিরাপত্তা দান করেছে।
শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপনের নিরাপত্তা ঃ সমাজে মানুষকে একত্রে বসবাস করতে হয়। পারস্পরিক সহানুভূতি
ও সহযোগিতা ছাড়া সমাজে বাস করা যায় না। এ কারণে মানুষ যাতে সমাজে শান্তিতে সহাবস্থান করতে পারে,
সে জন্য কেউ যেন কাউকে উৎপীড়ন না করে, কষ্ট না দেয়, সে ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। মহানবী (স.)
বলেন ঃ
لا ᘌدخل الجنة من لا ᘌأمن جارە بوائقه –
‘যার উৎপীড়ন হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ মুসলিম)
মহানবী (স.) আরো বলেছেন ঃ ‘যার অনিষ্ট থেকে পাড়া-প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে মুমিন নয়।’ (বুখারী ও
মুসলিম)
নিরাপত্তামূলক বাসস্থান ঃ সমাজে মানুষ নিরাপত্তা ও শান্তির সাথে নিজ গৃহে বসবাস করতে চায়। কোন উৎপীড়ন
ও অশান্তিযেন ঘিরে না বসে এজন্য ইসলাম এক প্রতিবেশীর প্রতি অপর প্রতিবেশীর দায়িত্ব নির্ধারণ করে
দিয়েছে। বিনা অনুমতিতে কারো বাড়িতে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। পর্দা প্রথা মেনে চলার আদেশ
করেছে। কোন বাড়িতে আলো-বাতাস প্রতিরোধমূলক কোন কাজ করতে নিষেধ করেছে।
সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ঃ আইনের শাসন ও সুবিচার না থাকলে সমাজের মানুষের জীবনে নেমে আসে
অশান্তির অমানিশা এবং মানুষের জীবন হয়ে উঠে বিপন্ন।
সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় ন্যায়
বিচারের সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আইনের চোখে আপন-পর, ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, বিদ্বান-মূর্খ, সবল-দুর্বল
এবং স্বজাতি-বিজাতি সকলেই সমান। ন্যায় বিচারের নির্দেশ দিয়ে ইসলাম ঘোষণা করেছেÑ
وَ ល ِذَ ا حَ ᜓ᠐ مْ تُ مْ بَ يْ نَ ٱلنَّ اس᠒ أ᠐ ن تَ حْ ᜓ᠑ مُ وا᠔ ᗷ ِٱل᠔ عَ دْ لِ .
‘আর তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়বিচার করবে।’ (সূরা আন-নিসা : ৫৮)
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহপাকের আরো নির্দেশ হচ্ছেÑ
إِ نَّ ٱللᡐ هَ ᘌ َأ᠔ مُ رُ ᗷ ِٱل᠔ عَ دْ لِ وَ ٱلإحْ سَ انِ .
‘আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়বিচার ও সদাচরণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।’ (সূরা আন-নাহল : ৯০)
বস্তুত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিঘœকারী কর্মকান্ড সংঘটিত হতে পারে
না।
মান-সম্মানের নিরাপত্তা ঃ সমাজে মানুষ তার আত্মসম্মান, ইজ্জত-আবরু ইত্যাদি নিয়ে গৌরবের সাথে বসবাস
করতে চায়। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষকে আত্মসম্মান নিয়ে গৌরবের সাথে জীবন যাপনের নিরাপত্তা বিধান
করে।
এ মর্মে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন ঃ
وَ ᢻ َتَ ل᠔ مِ زُ وۤ ا᠔ أ᠐ نفُ سَ ᜓ᠑ مْ وَ ᢻ َتَ نَ ابَ زُ وا᠔ ᗷ ِٱلأَ ل᠔ قَ ابِ
‘তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না।’ (সূরা আলহুজুরাত : ১১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
وَ ᢻ َتَ جَ سَّ سُ وا᠔ وَ ᢻ َᘌ َغْ تَ ب ᗷَّ عْ ضُ ᜓ᠑ م ᗷ َعْ ضا᠍ .
‘তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং অপরের পেছনে নিন্দা করো না।’ (সূরা আল-হুজুরাত
ঃ ১২)
মহানবী (স.) বলেছেন-
الغيᘘة اشد من الزنا-
‘গীবত ব্যভিচার অপেক্ষাও জঘন্য।’ (মিশকাত)
এভাবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের মান-সম্মানের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে।
স্বাধীন মতামত পেশ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ঃ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষকে তার স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও
ধর্মীয় জীবনের স্বাধীনতা দিয়েছে। যে যার ধর্ম পালন করবে। আল্লাহ বলেন-
ᢻ َإِ ᠔ᜧ رَ اەَ فِ ى ٱلدِّ ين᠒
‘দীনের ব্যাপারে জোর-জবরদস্তিনেই।’ (সূরা আল-বাকারা : ২৫৬)
কিন্তু স্বেচ্ছায় ধর্ম গ্রহণ করার পর তার কোন বিধান লংঘন করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয় না। বাক-
স্বাধীনতার ব্যাপারে মহানবী বলেছেন ঃ “অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা শ্রেষ্ঠ জিহাদ।”
অধিকার প্রদানে সাম্য ঃ ইসলামের চোখে সমাজের সকল মানুষই সমান। মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে
ইসলাম সকলের প্রতি সমান ব্যবহার করে থাকে। তাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় কোন লোক তার অধিকার থেকে
বঞ্চিত হয় না, কেউ কোনভাবে নিগ্রহের শিকার হয় না। ফলে সমাজ জীবন শান্তিময় হয়ে ওঠে।
অপরাধমূলক কার্যকলাপ দমন ঃ ইসলাম মানব সমাজকে সর্বপ্রকার নৈতিক অধঃপতন, অবক্ষয়, পাপ ও
অপবিত্রতার পঙ্কিলতা হতে সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ ও পবিত্র রাখতে চায়। সেজন্য মদ্যপান হারাম করা হয়েছে। চুরি-
ডাকাতি, ব্যভিচার, জুয়া, মিথ্যাচার, হত্যা, নির্যাতনকে অপরাধ ও কঠিন পাপ বলে ঘোষণা করেছে।
তেমনিভাবে অনাচার, উচ্ছৃঙ্খলতা-পর্দাহীনতা, নাচ-গান, বিচিত্রানুষ্ঠান, মেলা প্রভৃতি অশ- ীলতা ইসলামী
সমাজে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ সমস্তকার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নৈতিক শিক্ষা ঃ অপরদিকে নৈতিক মান উন্নত করার জন্য ইসলামে সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেননা শিক্ষা
মানুষকে তাদের নৈতিকমান উন্নত ও উৎকর্ষ সাধনে সহায়তা করতে পারে। নৈতিক মান উন্নয়নের মাধ্যমেই
ইসলামী সমাজে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। একজন উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ দ্বারা
কখনো অপরের অনিষ্ট হতে পারে না। তাই ইসলাম মানুষের নৈতিক চরিত্র উন্নত করার মাধ্যমে আদর্শ সমাজ জীবন গড়ে তুলতে চায়।
১. শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে পূরু করণন।
ক. মানুষের ............... ও .............. নিরাপত্তার গ্যারাণ্টি রয়েছে .............. ব্যবস্থায়। কেননা ইসলাম এমন
একটি .............. প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে শান্তি, সুখ ও কল্যাণ এবং অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থানসহ যাবতীয়
.............. অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা দেয়।
খ. মানুষের জীবনের সর্বপ্রথম মৌলিক অধিকার হল ..................... জীবন-যাপনের অধিকার। ইসলামী সমাজে
যে কোন ব্যক্তি তার জীবনের .................. পেয়ে থাকে। অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে ..................... অথবা
...................... তথা রক্তপণ দেওয়ার বিধান দিয়েছে।
গ. সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলার ..................... হচ্ছে আইনের শাসন ............. বিচার প্রতিষ্ঠা। এখানে
আইনের চোখে আপন-পর, ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, বিদ্বান-মূর্খ, সবল-দুর্বল এবং স্বজাতি-বিজাতি
সকলেই......................... ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানে ইসলামী সমাজের গৃহীত নীতি কী?
২. জীবনের নিরাপত্তা বিধানে ইসলামী সমাজের গৃহীত নীতি উল্লেখ করণন।
৩. সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিধান লিখুন।
৪. মান-সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে ইসলামের গৃহীত পদক্ষেপ বর্ণনা করণন।
৫. অপরাধমূলক কার্যকলাপ দমনে ইসলামী সমাজ কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে?
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. জীবনের নিরাপত্তা বিধানে ইসলামী সমাজে গৃহীত নীতিমালা উপস্থাপন করণন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]