সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নৈতিক শিক্ষা ভ্রাতৃত্ব বলতে কী বুঝেন? ভ্রাতৃত্ব কতপ্রকার ও কি কি? ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করণন।

ইসলাম সাম্য, মৈত্রী, সত্য সুন্দর, ন্যায়-ইনসাফপূর্ণ মানবতার ধর্ম। ইসলাম মানুষে মানুষে কোন ভেদ-বৈষম্য
স্বীকার করে না। বরং একই পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া(আ) থেকে মানব জাতির যাত্রা শুরু হয়েছে বলে ঘোষণা
করেছে। ইসলাম মানব সমাজে সকলের মধ্যে আইনগত ও নৈতিক ভাবে সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়-নীতি
প্রতিষ্ঠাকল্পে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নৈতিক শিক্ষা
সমাজে সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামে প্রথমত মানসিক পরিবর্তনের জন্য নৈতিক
শিক্ষা দান করে। ইসলাম ঘোষণা করেছেসকল মানব একই উৎস থেকে উৎসারিত
আদি পিতা হযরত আদম ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ) এর সন্তান হিসেবে বিশ্বের সকল মানুষই পরস্পর
ভাই ভাই। ধর্ম, কর্ম, ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল, বংশ নির্বিশেষে সকল মানুষই সমান। এ কথাই মহান আল্লাহর ঘোষণা
থেকে পাওয়া যায়,
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ـا ٱلنَّ ـاسُ إِ نَّ ـا خَ ل᠐ قْ نَ ـ ـا᠑ᝏ م مِّ ـن ذَ ᠐ᜧ ـر᠏ وَ أ᠑ نْ ثَ ـىٰ وَ جَ عَ ل᠔ نَ ـا᠑ᝏ مْ شُ ـعُ ᗖᖔا᠍ و قَ ᘘ َቯئِ ـلَ لِ تَ عَ ـارَ فُ وۤ ا᠔ إِ نَّ
أ᠐ ᠔ᜧ رَ مَ ᠑ᝣ مْ عِ ندَ ٱللᡐ هِ أ᠐ تْ قَ ا᠑ᝏ مْ
‘হে মানব! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন নর ও একজন নারী থেকে আর তোমাদেরকে বিভিন্ন দল ও
গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই
ব্যক্তি অধিকতর মর্যাদার অধিকারী যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩)
মহানবী (স) এ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেন ঃ
᛿لᝣم من ادم و ادم من تراب-
‘তোমরা সকলেই আদম (আ.) হতে উৎসারিত আর আদম (আ) হলেন মাটির তৈরী।’ কাজেই ইসলামের এ
দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষে মানুষে পরম সাম্য ও মৈত্রীর কথাই প্রতিভাত হয়ে ওঠে। কোন বিভেদ বা শ্রেণীভেদের লেশমাত্র পাওয়া যায় না।
আদল ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ
সুষ্ঠু সমাজ তথা ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সমাজের প্রতিটি লোকের মধ্যে সাম্য-মৈত্রী জাগরিত
করার জন্য আদল বা ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। আদল বা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে সে সমাজে
সকলেই সাম্য-মৈত্রীর সুনিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। এর অভাবে পরস্পরের বৈষম্য, পার্থক্য, শ্রেণী-সংগ্রাম,
প্রতিহিংসা দানা বেঁধে উঠে এবং সাম্য-মৈত্রী বিনষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে একটা চরম পরিণতি অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ
জন্যই মহান আল্লাহ পাক আদলের সাথে কাজ করার নির্দেশ করেছেন ঃ
إِ نَّ ٱللᡐ هَ ᘌ َأ᠔ مُ رُ ᗷ ِٱل᠔ عَ دْ لِ .
‘নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিচ্ছেন।’ (সূরা আন-নাহল : ৯০)
অধিকার প্রতিষ্ঠা
সমাজে সাম্য ও মৈত্রী এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রকৃষ্ট উপায় হচ্ছে সকলের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
আর এ ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্তবাস্তবানুগ। সত্যি আমরা যাতে দুর্বলের উপর অত্যাচার ও যুলুম করতে
না পারি, অন্যের সম্পদ যাতে জোর পূর্বক ভোগ-দখল করে নিতে না পারি, সকলেই যেন পূর্ণ মর্যাদা ও মৌলিক
অধিকার নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেজন্য ইসলাম বলিষ্ঠভাবে আইনের শাসন কায়েম করতে
বলে। মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে ঘোষণা করেন ঃ
وَ ល ِذَ ا حَ ᜓ᠐ مْ تُ مْ بَ يْ نَ ٱلنَّ اس᠒ أ᠐ ن تَ حْ ᜓ᠑ مُ وا᠔ ᗷ ِٱل᠔ عَ دْ لِ
‘আর তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার-ফায়সালা কর তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে।’ (সূরা আননিসা : ৫৮)
নিরপেক্ষ প্রশাসন
সমাজে সাম্য-মৈত্রী ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম কেবল মৌলিকভাবে উপদেশ দান করেই ক্ষান্তহয়নি।
বরং নিরপেক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা কায়েম করারও নির্দেশ দান করেছে। সামাজিক শৃঙ্খলা নির্ভর করে সুষ্ঠু প্রশাসন
ব্যবস্থার উপর। নিরপেক্ষ প্রশাসন ব্যতীত সমাজে সাম্য-মৈত্রী আশা করা যায় না। মহান আল্লাহ বলেনÑ
فَ ٱحْ ᜓ᠑ م بَ ᚏ ْنَ هُ م ᗷ ِمَ ቯ أ᠐ نزَ لَ ٱللᡐ هُ وَ ᢻ َتَ ᙬَّ بِ عْ أ᠐ هْ وَ آءَ هُ مْ عَ مَّ ا جَ ቯءَ كَ مِ نَ ٱل᠔ حَ قِّ .
‘সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অনুসরণ করে বিচার ফয়সালা করবে এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে
তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে না।’ (সূরা আল-মায়িদা : ৪৮)
আল্লাহর দেওয়া আইন অনুযায়ী বিচার কার্যে এবং সাক্ষ্য প্রদানে শত্রæ-মিত্র, বন্ধু-বান্ধব, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা,
আপন-পর, উচু-নীচু, ইতর-ভদ্র তথা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নিরপেক্ষভাবে সকলের প্রতি সমান ব্যবস্থা গ্রহণ
করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।
পারস্পরিক ইহসান প্রতিষ্ঠা
মানুষ পরস্পরের প্রতি ইহসান প্রদর্শনের মাধ্যমে ¯েœহ, ভালবাসা, দয়া-মায়া, শ্রদ্ধা-ভক্তি সৃষ্টি করতে পারে। এর
মাধ্যমে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং হিংসা-দ্বেষ, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা দূর হয়। ফলে সমাজে
পরস্পরের সাম্য, মৈত্রী-শান্তি, স¤প্রীতি, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ পাক বলেন ঃ
وَ أ᠐ حْ سِ ن ᛿᠐ مَ ቯ أ᠐ حْ سَ نَ ٱللᡐ هُ إِ ل᠐ ᘭ ْكَ .
‘তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।’ (সূরা আল-কাসাস : ৭৭)
অর্থনৈতিক স্বচছতা প্রতিষ্ঠা
মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে সাধুতা তথা ব্যবসায়-বাণিজ্য, লেন-দেন ইত্যাদিতে ইসলামী বাণিজ্য নীতি অনুসৃত
হলে সমাজে সাম্য-মৈত্রী ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কেননা, ব্যবসায়িক অসাধুতা সুষ্ঠু অর্থ ব্যবস্থার পরিপন্থী
এবং তা মানুষে মানুষে অশান্তিও বৈষম্য সৃষ্টি করে সমাজকে অশান্তিতে ভরে দেয়। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন ঃ
وَ أ᠐ وْ فُ وا᠔ ٱل᠔᜻ ᠐ ᘭ ْلَ وَ ٱل᠔ مِ يزَ انَ ᗷ ِٱل᠔ قِ سْ طِ .
‘তোমরা পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দিবে।’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫২)
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, মানব সমাজে সাম্য ও মৈত্রী স্থাপনের এবং ন্যায় বিচার
প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলাম যে বাস্তবানুগ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তার তুলনা মানব রচিত কোন মতবাদ বা আদর্শে দেখা যায় না। ভ্রাতৃত্ব
মানুষ পরস্পর ভাই ভাই। আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (আ) হতে সকলের উৎপত্তি। কিন্তু কালক্রমে মানুষ
এ বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে ফাটল ধরিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন জাতি, বংশ, গোত্র ও বর্ণের ভিত্তিতে। অথচ মানবতার
আকাক্সক্ষা হচ্ছে বিশ্ব জোড়া প্রেম, ভালবাসা, স¤প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে-শান্তিতে
বসবাস করা।
সুতরাং বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স¤প্রীতির লক্ষ্যে জাতি-ধর্ম, বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষের উচিত বিশ্ব
ভ্রাতৃত্বের অধীনে সংঘবদ্ধ হয়ে কল্যাণের পথে অগ্রসর হওয়া। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের তাৎপর্যও তাই।
‘উখুওয়াত’ (اخوة (শব্দের আভিধানিক অর্থÑভাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যমূলক নিবিড় সম্বন্ধ বা বন্ধনকে উখুওয়াত
বলা হয়।
উখুওয়াতের প্রকারভেদ ঃ উখুওয়াত প্রধানত নি¤œরূপ
ক. ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব ঃ ঔরসজাত দু’সহোদর ভ্রাতার মধ্যে যে হৃদ্যতা, বন্ধুত্ব ও স¤প্রীতি এবং ঐকান্তিকতা
বিরাজমান তা ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব। উখুওয়াতের উৎপত্তি এখান থেকেই।
খ. কৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব ঃ কোন নির্দিষ্ট বংশ, বর্ণ বা অঞ্চলে যাদের জন্ম ও বসবাস, তাদের মধ্যে একটি কৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব
গড়ে ওঠে।
গ. মূলগত ভ্রাতৃত্ব ঃ বিশ্বের সমগ্র মানব একই মূল হতে উৎসারিত। আদি পিতা আদম (আ) ও আদি মাতা
হাওয়া (আ) হতেই সকলের উৎপত্তি। এ হিসেবে সকল মানুষের মধ্যে রয়েছে মূলগত ভ্রতৃত্বের বন্ধন। আর এ
থেকেই সকল মানুষ ভাই-ভাই হিসেবে স্বীকৃত।
ঘ. আদর্শগত ভ্রাতৃত্ব ঃ যখন কোন একটি জনসমষ্টি কোন একটি বিশেষ আদর্শের অনুসারী হয় তখন সৃষ্টি হয়
আদর্শগত ভ্রাতৃত্বের। এ আদর্শগত ভ্রাতৃত্ব বন্ধন যখন ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে হয় তখন ইসলামী উখুওয়াত বা
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব হিসেবে পরিগণিত হয়।
ব্যবহারিক দিক দিয়ে উখুওয়াত দুই প্রকার ঃ (১) বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও (২) ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।
বিশ্বভ্রাতৃত্ব
আদি পিতা হযরত আদম (আ) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ)-এর সন্তান হিসবে বিশ্বের সকল মানুষই
পরস্পর ভাই ভাই। ধর্ম-কর্ম, ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল-বংশ নির্বিশেষে সকল মানুষের এ ভ্রাতৃত্বকে বিশ্বভ্রাতৃত্ব বলা
হয়। কেননা এরা সকলেই এক আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে পরস্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ। বিশ্বভ্রাতৃত্বের এরূপ অনুপম
মন্ত্রে দীক্ষিত সকল মানুষই সমান। এরই প্রতিধ্বনি শোনা যায় মহান আল্লাহর বাণীতেÑ
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ اسُ إِ نَّ ا خَ ل᠐ قْ نَ ا᠑ᝏ م مِّ ن ذَ ᠐ᜧ ر᠏ وَ أ᠑ نْ ثَ ىٰ .
‘হে মানব! আমি তোমাদেরকে একজন নর ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আল-হুজুরাত :১৩)
এ বিশ্বভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে মহানবী (স.) ঘোষণা করেছেনÑ
᛿لᝣم من ادم و ادم من تراب.
‘তোমরা সকলেই আদম (আ) হতে উৎসারিত আর আদম হলেন মাটির তৈরি।’
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব
একক মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিন মাত্রই একে অপরের ভাই। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তাওহীদ বা
একত্ববাদের মর্মবাণী মুখে উচ্চারু করত অন্তরে অটল বিশ্বাস রেখে তারা যে কোন স্থানের যে কোন ভাষার, বর্ণের,
অঞ্চলের, গোত্রের, বংশের হোক না কেন একই দীনসূত্রে গ্রথিত ও বিশ্বাসী হওয়ায় পরস্পর ভাই ভাই। মহান
আল্লাহ এ ভ্রাতৃত্ববোধের মূলমন্ত্র ঘোষণা করে বলেছেন-
إِ نَّ مَ ا ٱل᠔ مُ ؤْ مِ نُ ونَ إِ خْ وَ ةٌ .
‘নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই’। (সূরা আল-হুজুরাত:১০)
মুসলিম ভ্রাতৃত্বের গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করে মানব হিতৈষী বিশ্বনবী (স.) ঘোষণা করেনالمسلم اخو المسلم
‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই।’
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের রূপরেখা
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করে ঃ ইসলামী ভ্রাতৃত্ব একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামী ভ্রাতৃত্ব মহান
আল্লাহর তাওহীদ ও মহানবী (স.)-এর রিসালাতের যোগসূত্রে গ্রথিত। আর তার প্রতিষ্ঠার জন্যই ভ্রাতৃত্বের সৃষ্টি।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ঐক্য গড়ে তোলে ঃ ইসলাম শুধু বিধানগত ঐক্যকেই ঐক্য বলে মনে করে না, বরং বাহ্যিক
ঐক্যের বুনিয়াদকে মানব হৃদয়ে স্থাপন করে। যার ভিত্তি হচ্ছে ঈমান ও মতবাদের ঐক্য, আশা-আকাক্সক্ষার
ঐক্য, সংকল্প ও লক্ষ্যের ঐক্য এবং হৃদয় ও মনের ঐক্য। এ সকল উপাদানের মাধ্যমেই ইসলামী ভ্রাতৃত্ব
সুদৃঢ়ভাবে গড়ে উঠে।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব স্বার্থপরতার মূলোৎপাটন করে ঃ একই আদর্শে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত হয়ে যে সম্পর্ক গড়ে
ওঠে তা ক্ষণস্থায়ী ঠুনকো বা ক্ষণভদ্ভুর নয় ; বরং সীসাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো। একই আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে
উঠা ইসলামী ভ্রাতৃত্ব তাই সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত ও এককেন্দ্রিক। যেমনÑ মহান আল্লাহর বাণীÑ
᛿ أ᠐ نَّ هُ م بُ  ْ ᘭ َانٌ مَّ رْ صُ وصٌ
‘এরা যেন সীসাঢালা প্রাচীর।’ (সূরা আস-সাফ : ৪)
তাই এ ভ্রাতৃত্বের মধ্যে কোন স্বার্থপরতা ও কৃত্রিমতার স্থান নেই।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব পরস্পরের জন্য উৎসর্গীত ঃ ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ প্রতিটি মুমিন পরস্পরের জন্য
উৎসর্গীতকৃত ও নিবেদিত প্রাণ। নিজের চেয়ে এরা অপর ভাইকে সর্বদা অগ্রাধিকার প্রদান করে থাকে। পরস্পর
এরা দয়াবান। এ মর্মে মহান আল্লাহর ঘোষণাÑ
رُ حَ مَ ቯءُ بَ ᚏ ْنَ هُ مْ
‘এরা পরস্পর সহানুভূতিশীল।’ (সূরা আল-ফাতাহ : ২৯)
এ ধর্মের মূলমন্ত্র হল একজনের বিপদে আপদে অপর জন এগিয়ে আসবে এবং সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ঈমানের দাবি ঃ মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পরস্পরের এ গভীর স্থিতিশীল
ও প্রেমের আবেগময় বন্ধন মুসলিম জাতির জন্য এতখানি গুরুত্বপূর্ণ যে, এর বিকৃতিকে এবং পার¯পরিক
স¤পর্কচ্ছেদকারীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই মুমিনদের মধ্যে গড়ে ওঠা ভ্রাতৃত্ব অটুট
রাখা ঈমানের দাবী। ভ্রাতৃত্ব বজায় না থাকলে ঈমানেরও ঘাটতি হয়।
বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রসার ঃ বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত মুসলিমগণকে ভ্রাতৃত্বের
বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ সংগঠন শক্তিশালী তখনই হবে যখন পরস্পর পরস্পরের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত
হয়ে কাজ করবে। মহান আল্লাহর ঘোষণা এ রকমই
وَ ٱعْ تَ صِ مُ وا᠔ ᗷ ِحَ ᘘ ْلِ ٱللᡐ هِ جَ مِ ᘭعا᠍ وَ ᢻ َتَ فَ رَّ قُ وا᠔ .
‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সংঘবদ্ধভাবে ধারণ করবে এবং তোমরা পর¯পর বিচ্ছিন্ন হবে না।’
(সূরা আলে ইমরান :১০৩)
পারস্পরিক সহযোগিতা ঃ পরস্পরে বিরোধ, সংঘর্ষ ও প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহযোগিতা, সহানুভূতি ও
পৃষ্ঠপোষকতার ভাবধারা গড়ে তোলার জন্যই ইসলামী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা একান্তপ্রয়োজন। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা
ফিরিয়ে আনার জন্য পার¯পরিক সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। আর এতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হয়।
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ঃ দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির জন্যই ইসলামী ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব কেবল দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং আখিরাতে যখন মানুষ পরস্পর শত্রæতে পরিণত হবে
তখনও একমাত্র ইসলামী উখুওয়াতে স¤পৃক্ত ব্যক্তিরাই পরস্পরের বন্ধুরূপে এগিয়ে আসবে।
মন্দ থেকে বিরত থাকা ঃ ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অনুসারীগণ অনধিকার হস্তক্ষেপ, না-হক রক্তপাত, কটুভাষণ,
গালাগাল, গীবত, চোগলখুরী, অপরের ক্ষতি সাধন, অপরকে কষ্ট দেয়া, হিংসা-দ্বেষ পোষণ প্রভৃতি মন্দ কাজ
হতে বিরত থাকে। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অনুসারীরা তার ভাইকে নিরাপত্তা দিতে সহায়তা করেও সহাবস্থানের নীতি
অনুসরণ করে।
পারস্পরিক কল্যাণ কামনা ঃ ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অনুসারীগণের পরস্পরের মান-ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান, দুঃখকষ্টে অংশগ্রহণ, গঠনমূলক সমালোচনা ও উপদেশ-নসিহত, রুগ্ন ভাইয়ের সেবা, সালাম, সাক্ষাত, মুসাফাহা,
উপহার-উপঢৌকন, কৃতজ্ঞতা, একত্রে বসবাস করা, খাওয়া, পরস্পরের জন্য দু‘আ প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনা
ইত্যাদি নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ। এরূপ অনুপম ভ্রাতৃত্ব একান্তই কাম্য। পৃথিবীতে অন্য কোন জাতির মধ্যে এরূপ
পার¯পরিক কল্যাণ কামনার ধারণা খুঁজে পাওয়া কঠিন। ইসলামী ভ্রাতৃত্ব তাই সকল মানুষ ও জাতির জন্য এক চমৎকার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
সহাবস্থান ও স¤প্রীতি
সমাজে বসবাসকরী মানুষের সাথে সহাবস্থান করে পরস্পর স¤প্রীতি বজায় রাখার জন্য সকলের সাথে সমঝোতা ও
সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেন ঃ
ᢻَّ خَ يْ ـرَ فِ ــى ك᠐ ثِ يــر᠏ مِّ ـ ـن نَّ جْ ــوَ اهُ مْ إِ ᢻَّ مَ ــنْ أ᠐ مَ ــرَ ᗷِصَ ــدَ قَ ةٍ أ᠐ وْ مَ عْ ــرُ وفٍ أ᠐ وْ إِ صْ ــᢿ َح᠏ بَ ــيْ نَ
ٱلنَّ اس᠒ وَ مَ ن ᘌ َفْ عَ لْ ذ ٰ لِ كَ ٱبْ تَ غَ ቯءَ مَ رْ ضَ اتِ ٱللᡐ هِ فَ سَ وْ فَ نُ ؤْ تِ ᘭهِ أ᠐ جْ را᠍ عَ ظِ ᘭما᠍ .
‘তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ
ও মানুষের মধ্যে শান্তিস্থাপনের জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাক্সক্ষায় কেউ তা করলে তাকে অবশ্যই আমি
মহাপুরস্কার দিব।’ (সূরা আন-নিসা: ১১৪)
এ আয়াতে তিনটি কাজকে উত্তম বলে অভিহিত করা হয়েছে। (১) দান খয়রাত, (২) সৎ কাজ, (৩)
পারস্পরিক শান্তিস্থাপন। শেষোক্তটি আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। মানুষের সাথে ভাল সম্পর্ক না থাকলে
সমাজে শান্তিতে বসবাস করা যায় না। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শান্তিস্থাপনের বিষয়টি ‘আমর বিল মারূফ’-এর
অন্তর্ভুক্ত হলেও গুরুত্ব বুঝাবার জন্য একে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহাবস্থান ও স¤প্রীতি বজায় রাখার
জন্য যারা চেষ্টা তদবীর করবে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট রয়েছে বিরাট পুরস্কার। এ প্রসঙ্গে রাসূলে
করীম (স.) বলেন- ‘‘তোমরা মুসলিমগণকে পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা এবং হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি
দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। দেহের কোন অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তা হলে অপর অঙ্গগুলোও জ্বর ও
নিদ্রাহীনতাসহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে।’’
এরূপ সম্পর্ক মুসলিম সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দুনিয়ার যে কোন স্থানের ও যে কোন বর্ণের মুসলমানদের মধ্যে
পারস্পরিক সহানুভূতি ও একত্ববোধ বিরাজমান থাকা বাঞ্ছনীয়। মুসলমান যদি বিছিন্ন থাকে তবে তারা দুর্বল হয়ে
পড়বে এবং শত্রæ তাদের উপর সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। মোটকথা পারস্পরিক দৃঢ় সম্পর্ক ও
একত্ববোধের মধ্যে মুসলমানদের শক্তি নিহিত রয়েছে।
সামাজিক সহাবস্থান
মুসলিম সমাজের প্রতিটি সদস্যকে একে অন্যের সাথে সদ্ভাব ও স¤প্রীতি বজায় রাখতে হয়। হযরত আবদুল্লাহ
ইবন উমর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না
এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে তার ভাইয়ের অভাব পূরু করবে আল্লাহ তা‘আলা তার অভাব
পূরু করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কোন বিপদ দূর করবে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার
বিপদসমূহের মধ্য থেকে কোন বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন করবে
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করে রাখবেন।
এই হাদীসে মুসলিম সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এক মুসলমানের সাথে
অপর মুসলমানের সম্পর্ক হবে এক ভাইয়ের সাথে অন্য ভাইয়ের সম্পর্কের মত। একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের
প্রয়োজন পূরু করবে। বিপদে-আপদে সাহায্য করবে এবং কেউ কারো প্রতি যুলুম নির্যাতন করবে না। এভাবে
মুসলমানকে অন্য মুসলমানদের সাথে স¤প্রীতি স্থাপন করে সহাবস্থান করার জন্য নবী করীম (স.) নির্দেশ দিয়েছেন।
উত্তর সঠিক হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. সমাজে সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম প্রথমত নৈতিক শিক্ষা দান করে।
২. আদল শব্দের অর্থ সামাজিক-শৃঙ্খলা রক্ষা।
৩. সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি প্রদর্শন করা ইসলামের নীতি।
৪. আদল ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়।
৫. ইসলামী ভ্রাতৃত্ব তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করে।
প্রতিটি প্রশ্নের ৪টি উত্তর দেওয়া আছে সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. সকল মানুষ একই উৎস থেকে সৃষ্টি- এটি কার কথা?
ক. ডারউইনের
খ. ওয়েলেসের
গ. বেদগ্রন্থের
ঘ. আল-কুরআনের
২. ভ্রাতৃত্ব প্রধানত কত প্রকার?
ক. তিন প্রকার
খ. দুই প্রকার
গ. চার প্রকার
ঘ. কোন উত্তরই ঠিক নয়।
৩. বিশ্ব ভ্রাভৃত্বের ধারণা জন্মে-
ক. আল-কুরআনের মাধ্যমে
খ. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে
গ. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) -এর মাধ্যমে
ঘ. সকল উত্তরই সঠিক।
৪. ইসলামী ভ্রাতৃত্বের উৎসমূল কি?
ক. আল-হাদীস
খ. আল-কুরআন ও আল-হাদীস
গ. সমাজ বিজ্ঞানীদের অভিমত
ঘ. গ্রিক দর্শন।
৫. সূরা নিসার ১১৪ নং আয়াতে কয়টি কাজকে উত্তম বলা হয়েছে?
ক. ৪টি
খ. ৩টি
গ. ২টি
ঘ. ৭টি।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নৈতিক শিক্ষা সংক্ষেপে আলোচনা করণন।
২. ভ্রাতৃত্বের সংজ্ঞা দিন। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রকারভেদ সংক্ষেপে লিখুন।
৩. ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করণন।
৪. সামাজিক সহাবস্থানে ইসলামের ভ‚মিকা সংক্ষেপে লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নৈতিক শিক্ষা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করণন।
২. ভ্রাতৃত্ব বলতে কী বুঝেন? ভ্রাতৃত্ব কতপ্রকার ও কি কি? ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করণন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]