আত্মীয়-স্বজন বলতে কি বুঝায়? আত্মীয়-স্বজনের গুরুত্বও অধিকার স¤পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা করণন।

আত্মীয়-স্বজন
সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের স্বভাব। সমাজ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। এজন্যই বলা হয় মানুষ
সামাজিক জীব। সমাজের প্রাথমিক ইউনিট হল পরিবার। পরিবারের বাইরেও মানুষের অনেক হিতৈষী ও আত্মীয়-
স্বজন রয়েছে। যাদের সাথে মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। মানুষ সে সব আত্মীয় স্বজনের উপর নানাভাবে
নির্ভরশীল থাকে। এরা মানুষের খুবই কাছের লোক, আপনজন। যাদের সাথে জীবনের এক নিবিড় সম্পর্ক
রয়েছে। মাতা-পিতা, ভাই-বোন ও নিকটজনদের আত্মীয়-স্বজন বলা হয়। আত্মীয় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে আত্মা
থেকে। আত্মার সাথে তথা আপন সত্তার সাথে যারা সম্পর্কিত তারাই আত্মীয়-স্বজন। এরা খুবই কাছের মানুষ।
এরূপ সম্পর্কিত মানুষ যেমন রক্তের সম্পর্কের কারণে গড়ে উঠতে পারে। তেমনি গড়ে উঠতে পারে বৈবাহিক
সম্পর্ক গড়ে উঠার দিক দিয়ে। আবার অনেক সময় জীবন চলার পথে অনেক বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গড়ে উঠতে
পারে আত্মীয়তা। এরাই স্বজন। ইসলাম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ও বহির্ভুত এবং নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সকল প্রকারের
আত্মীয় স্বজনের সাথেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে বলে। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং উত্তম ও
সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আত্মীয়তার অধিকার আদায় করা ইসলামের নির্দেশ।
আত্মীয়তার অধিকার
পৃথিবীর মানুষ জন্মসূত্রে ও বৈবাহিক সূত্রে পরস্পরের আত্মীয়। মাতাপিতার অধিকারের ন্যায় আত্মীয়-স্বজনেরও
অধিকার রয়েছে। মাতা-পিতার অধিকার আদায় করার পর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে স¤প্রীতি ও সদ্ভাব
বজায় রাখা ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রত্যেক মু’মিনের কর্তব্য। ইসলামী জীবন বিধানে
আত্মীয়তার অধিকার আদায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
وَ آتِ ذَ ا ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ حَ قَّ هُ ঃ ছয়েহেদ ইরশা নকেুরআ পবিত্র
‘আত্মীয়দের অধিকার আদায় করবে।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৬)
আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য স¤পর্কে বলেন-
وَ آتَ ى ٱل᠔ مَ الَ عَ ل᠐ ىٰ حُ ᘘِّ هِ ذَ و᠒ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ .
‘আল্লাহ প্রেমে আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে।’ (সূরা আল-বাকারা : ১৭৭)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা ঈমানদারের ঈমানের দাবী। আত্মীয়তা ছিন্ন করা মুসলিম সমাজ তথা মুসলিম
ব্যক্তির জন্য অত্যন্তগর্হিত ও অপরাধমূলক কাজ। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন ঃ
لا ᘌحل لمسلم ان يهجر اخاە فوق ثلث فمن هجر فوق ثلث فمات دخل
النار.
‘কোন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের সাথে (রাগ করে) তিন দিনের বেশি সময় সাক্ষাৎ পরিত্যাগ করে থাকা বৈধ
নয়। কেউ যদি তিন দিনের বেশি তার ভাইয়ের সাথে রাগ করে সাক্ষাত ত্যাগ করে থাকা অবস্থায় মারা যায় তবে
সে জাহান্নামে যাবে।’
আল-কুরআনে আত্মীয়-স্বজনের অধিকার
আল কুরআনের ঘোষণাÑ
وَ ٱتَّ قُ وا᠔ ٱللᡐ هَ ٱلᡐ ذِ ى ᘻ َسَ ቯءَ ل᠑ ونَ ᗷ ِهِ وَ ٱلأَ رْ حَ امَ .
‘আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা পরস্পরের নিজেদের নিকট যাচঞ্চা কর।’ (সূরা আন-নিসা ঃ ১)
সমাজ জীবনে মানুষের যে সব অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে তার মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের অধিকার সবচেয়ে বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। এই অধিকার ও কর্তব্য পালন না করলে সমাজ-সভ্যতা ভেঙে যায় এবং অভিশপ্ত হয়ে উঠে জীবন ও
সমাজ। এ দিকে ইঙ্গিত করেই আল কুরআন ঘোষণা করেছে-
فَ هَ لْ عَ سَ ᚏ ْتُ مْ إِ ن تَ وَ لᡐ يْ تُ مْ أ᠐ ن تُ فْ سِ دُ وا᠔ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ وَ تُ قَ طِّ عُ وۤ ا᠔ أ᠐ رْ حَ امَ ᠑ᝣ مْ أ᠐ وْ ل᠐ ᅮ ٰئِ كَ ٱلᡐ ذِ ينَ
ل᠐ عَ نَ هُ مُ ٱللᡐ هُ .
‘তবে তোমরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অশান্তিসৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন
করবে, এ সব লোকের উপর আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।’ (সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩)
কুরআন মাজীদে আত্মীয়-স্বজনকে الارحـام ذوى) যাবিল আরহাম) বলে উল্লেখ করা হয়েছে ارحـام
(আরহাম) শব্দটি رحـم)ে রহম) শব্দের বহুবচন এবং الـرحمن) রাহমান) শব্দটি আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ
গুণবাচক নাম যা الـرحم صـلة এর সাথে সংশি- ষ্ট। সাধারণ অর্থে রক্ত সম্পর্কিত ব্যক্তিগণকেই আত্মীয়-
স্বজন বলা হয়। ইসলামী শরী’আতের দৃষ্টিতে পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং স্বামী-স্ত্রীর পরেই এই রক্ত সম্পর্কিত
আত্মীয়-স্বজনের স্থান।
যারা আত্মীয়-স্বজনের অধিকার ও কর্তব্য পালন করে না অথবা তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে না কিংবা এ সম্পর্ক যে
কোনভাবে ছিন্ন করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) তাদেরকে পছন্দ করেন না। কারণ, আত্মীয়-স্বজনকে উপেক্ষা
করলে মানুষের সমাজ জীবন এক অসহায় যান্ত্রিক জীবনে পরিণত হয় এবং পারস্পরিক সহানুভূতি, সমবেদনা,
সংবেদনশীলতা ইত্যাদি মানসিক ও মানবিক গুণগুলোর অস্তিত্ব রহিত হয়ে যায়। এতে এক মানুষের মনে তার
নিকটতম আত্মীয়ের জন্যও কোন হৃদয়ের অনুভূতি সঞ্চারিত হয় না ; বরং মানব জাতির সামাজিক বৈশিষ্ট্য
চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলে যে সমাজ অবশিষ্ট থাকে এবং তাতে যারা বাস করে তারা নি®প্রাণ উষার মরুতে
বসবাসকারীর মতই অসহায়ত্ব বোধ করে। কেননা, মানুষের পারস্পরিক যে সম্পর্ক ও মমতাবোধ এবং ¯েœহ,
ভালবাসা তা আল্লাহর অসীম দয়া ও রহমত। আর আত্মীয়তা সম্পর্কের মত এক বিরাট ও ব্যাপক সম্পর্ক সমাজে
না থাকলে সে সমাজ আল্লাহর দয়া ও রহমত থেকেও বঞ্চিত হয়। ফলত সে সমাজে কখনো কারো কল্যাণ বা
শান্তিহতে পারে না।
এতে কোন সন্দেহ নেই, যে ব্যক্তি বা সমাজের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক থাকে না, সে ব্যক্তি বা সমাজের উপর
আল্লাহর রহমত থাকে না। তেমনি তাদের কোন কল্যাণও হতে পারে না। এ স¤পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
قُ لْ مَ ቯ أ᠐ نْ فَ قْ تُ مْ مِّ نْ خَ يْ ر᠏ فَ لِ ل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ وَ ٱلأَ قْ ᖁ َᗖ ِينَ وَ ٱل᠔ ي تَ امَ ىٰ وَ ٱل᠔ مَ سَ اᜧ ِينَ .
‘আপনি বলুন, কল্যাণকর যে জিনিস তোমরা ব্যয় কর, তা তোমাদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও
দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করবে।’ (সূরা আল-বাকারা : ২১৫)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন
وَ ᢻ َᘌ أ᠔ تَ لِ أ᠑ وْ ل᠑ وا᠔ ٱل᠔ فَ ضْ لِ مِ نᜓ᠑ مْ وَ ٱلسَّ عَ ةِ أ᠐ ن يُ ؤْ تُ وۤ ا᠔ أ᠑ وْ لِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ .
‘তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদাসম্পন্ন এবং সচ্ছল ব্যক্তি, তারা যেন নিকট আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করবে না বলে
শপথ না করে।’ (সূরা আন-নূর : ২২)
অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজনের অধিকার রক্ষা করা একটি পারস্পরিক কর্তব্য ও দায়িত্ব। এমতাবস্থায় যদি কোন আত্মীয়
এ পবিত্র সম্পর্ক ছিন্ন করেও বসে, তবুও তার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে আত্মীয়তা বজায় রাখতে হবে। এ সম্পর্কে
নবী করীম (স.) ঘোষণা করেন- “কেবল সদ্ভাব রক্ষা করলেই কেউ আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কর্তব্য পালনকারী হয়
না। বরং কোন ব্যক্তির সাথে কেউ সম্পর্কচ্ছেদ করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলে, তবে সেই
হবে প্রকৃত অর্থে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী”
ইসলামী সমাজে প্রতিটি মানুষ আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত এবং
একে অপরের প্রতি কিছু না কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে।
আত্মীয়-স্বজনের পরিচয়
আত্মীয়-স্বজন বলতে তিন শ্রেণীর মানুষকে বোঝায়Ñ
ক. রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজন ঃ যথাÑ পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, চাচা, মামা, খালা, দাদা-দাদী,
নানা-নানী, ফুফু প্রমুখ।
খ. বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজন ঃ যথাÑ শ্বশুর-শাশুড়ি এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য আত্মীয়- স্বজন।
গ. বন্ধুত্বের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন ঃ নিকটস্থ বন্ধু-বান্ধব এবং তাদের পরিবার পরিজনকে বোঝায়।
সমাজ জীবনে মানুষের যত অধিকার ও কর্তব্য আছে, তার মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের অধিকার ও কর্তব্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেনÑ
انا الله تعالى انا الرحمن وهذە الرحم شققت لها اسما من اسمى فمن
وصلها وصلته ومن قطعها قطعته .
‘আমি স্বয়ং আল্লাহ এবং আমিই ‘রহমান’ করণাময়। আমিই ‘রেহ্ম’ (আত্মীয়তাকে) সৃষ্টি করেছি এবং আমার নিজ
নামের সাথে এর নামকরণ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি এর সাথে সম্পর্ক রাখে, আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখি।
আর যে ব্যক্তি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন করি।’ (আবু দাউদ)
অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে
من سرە ان يᛞسط له فى رزقه و ان ᛒسئله فى اثرە فلᘭصل رحمه
‘যে ব্যক্তি মনে করে যে, তার মৃত্যু বিলম্বিত হোক ও জীবিকা বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্কবজায়
রাখে।’ (বুখারী, মুসলিম)
মহানবী (স.) আরো ঘোষণা করেনÑ ‘যে স¤প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয়তার ছিন্নকারী লোক রয়েছে, সে স¤প্রদায়ের
প্রতি মহান প্রভুর রহমত বর্ষিত হয় না।’ (বায়হাকী)
তিনি আরো বলেনÑ . رحم قاطع الجنة دخلᘌ لا
‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারী, মুসলিম)
আত্মীয়-স্বজনের অধিকার
আত্মীয়ের প্রাপ্য আদায় করা ঃ আত্মীয়-স্বজনের অধিকার ও হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করার জন্য ইসলাম
নির্দেশ দেয়। আল-কুরআনে যে সকল আত্মীয়-স্বজনকে উত্তরাধীকারী হিসেবে স্থির করা হয়েছে, তাদের হক বা
অধিকার যথাযথভাবে দিয়ে দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। কুরআনের ঘোষণাÑ
وَ آتِ ذَ ا ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ حَ قَّ هُ
‘আত্মীয়-স্বজনের প্রাপ্য দিয়ে দাও।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৬) মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَ آتَ ى ٱل᠔ مَ الَ عَ ل᠐ ىٰ حُ ᘘِّ هِ ذَ و᠒ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ .
‘আল্লাহ প্রেমে আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে।’ (সূরা আল-বাকারা : ১৭৭)
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (স.) এর কাছে জিজ্ঞেস করল, কোন্ ব্যক্তি উত্তম ? তিনি বললেন, “যে আল্লাহকে বেশি
ভয় করে ও আত্মীয়তাকে বজায় রাখে।”
সদ্ব্যবহার করা ঃ ইসলাম আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দান করেছে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ
বলেন-
إِ نَّ ٱللᡐ هَ ᘌ َأ᠔ مُ رُ ᗷ ِٱل᠔ عَ دْ لِ وَ ٱلإحْ سَ انِ وَ ល ِيتَ ـቯءِ ذِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ .
‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন।’ (সূরা আন-নাহল : ৯০)
সু-সম্পর্ক বজায় রাখা ঃ ইসলাম সদা-সর্বদা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ করে।
তাদের সাথে ঝগড়া-ফাসাদ করা অন্যায় মনে করে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন ঃ ‘‘অন্তরে শত্রæতা পোষণ করে, এমন
আত্মীয়কে দান করা উত্তম।’’ এটা এমন যেমন বলা হয়েছে যে, তার সাথে স¤পর্ক স্থাপন কর যে তোমার থেকে
আলাদা থাকে, তাকে দাও যে তোমাকে বঞ্চিত করে এবং তাকে মার্জনা কর যে তোমার উপর যুলুম করে।”
কোন প্রকার বিরক্ত না করা ঃ আত্মীয়-স্বজনকে কোন ক্রমেই কষ্ট দেয়া ও বিরক্ত করা উচিত নয়। তারা যদি
কষ্টও দেয় তবুও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করে সদ্ভাব বজায় রাখা কর্তব্য। যদি কোন আত্মীয়-সম্পর্ক ছিন্ন
করে এবং দুর্ব্যবহার করে, তথাপি তার সাথে ভাল ব্যবহার করা উচিত। অত্যাচার করলে তাকে বাধা দান করা
উচিত, এটাই প্রকৃত আত্মীয়তার দাবি। কেননা যারা সদ্ভাব বজায় রাখে, তাদের সাথে তো ভাল সম্পর্ক বজায়
রাখা স্বাভাবিক কিন্তু যারা কষ্ট দেয়, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার মধ্যেই কৃতিত্ব। হযরত আবু যর (রা) বলেনঃ
আমার বন্ধু প্রিয়নবী (স.) আমাকে আদেশ করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, যদিও তোমাকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন
করা হয় এবং সত্যি কথা বল যদিও তিক্ত হয়।”
আত্মীয়-স্বজনের সেবা-যতœ করা ঃ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যারা পীড়িত, রোগাক্রান্ত, দুঃস্থ তাদের সেবা, শুশ্রæষা
করা একান্তকর্তব্য। হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেন- আমার কাছে আমার মা আসলে আমি
রাসূলুল্লাহ (স.) এর কাছে আরয করে বললাম ঃ আমার মা এসেছেন। তিনি এখনও মুশরিক। আমি তার সাথে
দেখা করব কি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম:- তাকে কিছু দিব কি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আত্মীয়তা
বজায় রাখ।” অপর এক হাদীসে আছে “ফকীর-মিসকীনকে দান করলে একটি সাদকা হয়। কিন্তু আত্মীয়কে কিছু
দান করলে তা দু’ই সাদকা হয়।”
কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ ও ভাষ্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম সম্পর্ক
ও সদ্ভাব বজায় থাকলে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবন সুখী ও শান্তিময় হয়। আত্মীয়-স্বজনদের
পারস্পরিক স¤প্রীতি ও ভালবাসার মাধ্যমে এক মনোরম ও আনন্দময় পরিবেশ গড়ে ওঠে।
সারকথা
সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের স্বভাব। সমাজ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। এজন্যই বলা হয় মানুষ
সামাজিক জীব। সমাজের প্রাথমিক ইউনিট হল পরিবার। পরিবারের বাইরেও মানুষের অনেক হিতৈষী ও আত্মীয়-
স্বজন রয়েছে। যাদের সাথে মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। মানুষ সে সব আত্মীয় স্বজনের উপর নানাভাবে
নির্ভরশীল থাকে। এরা মানুষের খুবই কাছের লোক আপন জন। যাদের সাথে জীবনের এক নিবিড় সম্পর্ক
রয়েছে। মাতা-পিতা, ভাই-বোন ও নিকট-জনদের আত্মীয়-স্বজন বলা হয়। আত্মীয় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে
আত্মা থেকে। আত্মার সাথে তথা আপন সত্তার সাথে যারা সম্পর্কিত তারাই আত্মীয়-স্বজন। এরা খুবই কাছের
মানুষ। এরূপ সম্পর্কিত মানুষ যেমন রক্তের সম্পর্কের কারণে গড়ে উঠতে পারে। তেমনি গড়ে উঠতে পারে
বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে উঠার দিক দিয়ে। আবার অনেক সময় জীবন চলার পথে অনেক বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গড়ে
উঠতে পারে আত্মীয়তা। এরাই স্বজন। ইসলাম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ও বহির্ভুত এবং নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সকল
প্রকারের আত্মীয় স্বজনের সাথেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে বলে। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং
উত্তম ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আত্মীয়তার অধিকার আদায় করা ইসলামের নির্দেশ।
১. উত্তর সঠিক হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
ক. ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের গুরুত্বদেওয়া হয়েছে।
খ. কোন মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে রাগ করে তিনদিনের বেশি সময় সাক্ষাৎ না করা বৈধ।
গ. আত্মীয়তার স¤পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি দোযখে প্রবেশ করবে।
ঘ. তিনভাবে আত্মীয়তার স¤পর্ক স্থাপিত হয়।
বহু নৈর্বাচনিক প্রশ্ন সঠিক উত্তরটি লিখুন
২. ‘আত্মীয়দের অধিকার আদায় কর’ -এটি কার নির্দেশ?
ক. মহান আল্লাহর
খ. মহানবী (স.)-এর
গ. সমাজ বিজ্ঞানীদের
ঘ. সরকারের।
৩. আত্মীয়-স্বজন কারা?
ক. যাদেরকে বিবাহ করা বৈধ নয় তারা
খ. রক্তের সাথে যাদের স¤পর্ক রয়েছে তারা
গ. আপন সত্তার সাথে যারা স¤পর্কিত তারা
ঘ. সব কয়টি উত্তরই সঠিক।
৪. কয়ভাবে আত্মীয়তার স¤পর্ক স্থাপিত হয়?
ক. দুইভাবে
খ. চারভাবে
গ. তিনভাবে
ঘ. পাঁচভাবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় দিন। আত্মীয়-স্বজনের প্রকারভেদ বর্ণনা করণন।
২. আল-কুরআনের আলোকে আত্মীয়তার অধিকার আদায়ের গুরুত্ববর্ণনা করণন।
৩. আত্মীয়-স্বজনের অধিকার বর্ণনা করণন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. আত্মীয়-স্বজন বলতে কি বুঝায়? আত্মীয়-স্বজনের গুরুত্বও অধিকার স¤পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা করণন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]