তা’যীর ও হাদ্দ বলতে কী বুঝায়? হাদ্দ ও তা’যীরের শাস্তির বিধান বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

 হাদ্দ কী তা বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
ب ِ سْمِ الل َّھِ ٱلرَّ حْمـٰنِ ٱلرَّ حِ یمِ
পরম দয়ালু ও মেহেরবান আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
سُورَ ةٌ أ َنزَ لْنَاھَا وَ فَرَ ضْنَاھَا وَ أ َنزَ لْنَا فِیھَآ آیَاتٍ بَیِّنَاتٍ ل َّع َل َّكُمْ تَذَكَّ رُ ونَ .১
এটি একটি সূরা, যা আমি নাযিল করেছি এবং যার বিধানকে আমি অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছি। এতে আমি নাযিল
করেছি সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী; যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
ٱلزَّ انِیَة ُ وَ ٱلزَّ انِى فَٱجْلِدُوا ْ كُلَّ وَ احِ دٍ مِّنْھُمَا مِئَة َ جَلْدَةٍ وَ لاَ تَأ ْخُذ ْكُمْ ب ِ ھِمَا رَ أ ْفَة ٌ فِى .২
دِینِ ٱ لل َّھِ إ ِن كُنتُمْ تُؤْ مِنُونَ ب ِٱلل َّھِ وَ ٱلْیَوْ مِ ٱلآخِ رِ وَ لْیَشْھَدْ عَذَابَھُمَا طَآئِفَة ٌ مِّنَ
ٱلْمُؤْ مِنِینَ
ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী-তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করবে। আর আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি
দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে। যদি তোমরা আল্লাহে ও পরকালের প্রতি ঈমান এনে থাক। আর মুমিনদের
একটি দল যেন তাদের শাস্তিপ্রত্যক্ষ করে। ।
ٱلزَّ انِى لاَ یَنكِحُ إ ِلا َّ زَ انِیَة ً أ َوْ مُشْرِ كَة ً وَ ٱلزَّ انِیَة ُ لاَ یَنكِحُھَآ إ ِلا َّ زَ انٍ أ َوْ مُشْرِ كٌ .৩
وَ حُرِّ مَ ذٰ لِكَ عَل َ ى ٱلْمُؤْ مِنِینَ
ব্যভিচারী ব্যাভিচারিনীকে অথবা মুশরিক নারীকে ব্যতীত বিবাহ করবে না এবং ব্যভিচারিনী- তাকে ব্যভিচারী অথবা
মুশরিক ব্যতীত কেউ বিবাহ করবে না, মুমিনদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
وَ ٱل َّذِینَ یَرْ مُونَ ٱلْمُحْصَنَاتِ ث ُمَّ ل َمْ یَأ ْتُوا ْ ب ِأ َرْ بَع َةِ شُھَدَآءَ فَٱجْلِدُوھُمْ ث َمَانِینَ جَلْدَةً .৪
وَ لاَ تَقْبَل ُوا ْ ل َھُمْ شَھَادَةً أ َبَدا ً وَ أ ُوْ ل َـٰئِكَ ھُمُ ٱلْفَاسِق ُونَ
“যারা সাধবী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত
করবে এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো সত্যত্যাগী।”
إ ِلا َّ ٱل َّذِینَ تَابُوا ْ مِن بَعْدِ ذٰ لِكَ وَ أ َصْل َحُوا ْ فَإ ِنَّ ٱلل َّھَ غَفُورٌ رَّ حِ یمٌ .৫
তবে যারা এরপর তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
وَ ٱل َّذِینَ یَرْ مُونَ أ َزْ وَ اجَھُمْ وَ ل َمْ یَكُنْ ل َّ ھُمْ شُھَدَآءُ إ ِلا َّ أ َنفُسُھُمْ فَشَھَادَةُ أ َحَدِھِمْ أ َرْ بَعُ .৬
شَھَادَاتٍ ب ِٱلل َّھِ إ ِنَّھُ ل َمِنَ ٱلصَّادِقِینَ
আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ছাড়া তাদের কোন সাক্ষী নেই, তাদের
প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হবে যে, সে আল্লাহ্র নামে চারবার শপথ করে বলবে, সে অবশ্যই সত্যবাদী।
وَ ٱل ْخَامِسَة ُ أ َنَّ ل َعْنَة َ ٱلل َّھِ عَل َیْھِ إ ِن كَانَ مِنَ ٱلْكَاذِب ِینَ .৭
আর পঞ্চমবার বলবে, সে মিথ্যাবাদী হলে তার উপর নেমে আসবে আল্লাহর লা‘নত।
وَ یَدْرَ ؤُا ْ عَنْھَا ٱلْع َذَابَ أ َن تَشْھَدَ أ َرْ بَعَ شَھَادَاتٍ ب ِٱلل َّ ھِ إ ِنَّھُ ل َمِنَ ٱلْكَاذِب ِینَ .৮
তবে স্ত্রীর শাস্তিরহিত হবে যদি সে যদি চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাবাদী।
وَ ٱل ْخَامِسَة َ أ َنَّ غَضَبَ ٱلل َّھِ عَل َیْھَآ إ ِن كَانَ مِنَ ٱلصَّادِقِینَ .৯
আর পঞ্চমবারে বলবে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর নেমে আসবে আল্লাহর গযব।
وَ ل َوْ لاَ فَضْلُ ٱلل َّھِ عَل َیْكُمْ وَ رَ حْمَتُھُ وَ أ َنَّ ٱلل َّھَ تَوَّ ابٌ حَكِیمٌ .১০
আর তোমাদের উপর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না। আর আল্লাহ
তাওবা গ্রহণকারী, প্রজ্ঞাময়।
শব্দার্থ ও টীকা
سور، سورات নবেহুবচ, একবচন -سورة
আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বেশ কয়েকটি অর্থ রয়েছে১. পার্থক্য করা, পৃথক করা বা ভিন্ন করা। যেহেতু প্রতিটি সূরা অন্য সূরা থেকে পৃথক তাই একে সূরা বলা হয়।
২. উচ্চতা অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেহেতু পবিত্র কুরআনের পাঠকের মর্যাদা প্রতিটি সূরা পাঠ শেষে উঁচু হয় ও
বৃদ্ধি পায়, তাই একে সূরা বলা হয়।
৩. খন্ড, অংশ, টুকরা। এ অর্থে আল-কুরআনের প্রতিটি সূরা কুরআনের এক একটি অংশ বা খন্ডস্বরূপ। যেমন-সূরা
আল-বাকারায় এসেছে- مثلھ من بسورة فأتوا
“তোমরা এর অনুরূপ কোন সূরা নিয়ে এসো।” এখানে সূরা অর্থ আল-কুরআনের একটি খন্ড বা অংশ।
৪. আরবীতে ‘সূর’ দুর্গকেও বলা হয়। একটি দুর্গ কয়েকটি মহল ও ঘরকে ঘিরে রাখে। এ হিসেবে আল-কুরআনের
অধ্যায়সমূহকে সূরা বলার তাৎপর্য এই যে, প্রতিটি সূরা কতগুলো আয়াতকে যেন দুর্গের ন্যায় ঘিরে রেখেছে, তাই
একে সূরা বলা হয়।
৫. সূরা অর্থ বিধান সম্বলিত বাক্য। যেমন- أنزلنھا سورة অর্থাৎ আমি বিধান সম্বলিত এই বাণী নাযিল করেছি।
৬. পুস্তকের অধ্যায়, পরিচ্ছেদ। আল-কুরআনের পরিভাষায় প্রতিটি সূরা কুরআন মাজীদের এক একটি অধ্যায়ের
নাম।
انزلنا আমি নাযিল করেছি, নাযিল করেছি। فرضنا আমি এর বিধানাবলীকে ফরয করেছি, অবশ্য পালনীয়
করেছি।
أیة- এর একাধিক অর্থ রয়েছে১. চিহ্ন বা নির্দশন। যেমন আল্লাহ বলেন, ملكھ ایة ان) তাঁর রাজত্বের নিদর্শন হল)
২. মোজিযা বা অলৌকিকত্ব। যথা আল্লাহ বলেন- بأتنا موسى ھم جاء فلما “অতঃপর মূসা যখন আমার
পক্ষ থেকে তাদের কাছে মোজিযা নিয়ে আসল।”
৩. উপদেশ বা শিক্ষা। যেমন- সূরা মারইয়ামে বর্ণিত হয়েছে- للناس ایة ولنجعلھ “আমরা এটাকে মানুষের
শিক্ষা বা উপদেশ স্বরূপ গ্রহণ করি।”
৪. আয়াত অর্থ আল-কিতাব তথা আল-কুরআন - যেমন সূরা আল-জাসিয়াতে বর্ণিত হয়েছে - ایات یسمع
علیھ تتلى اللھ “তিনি তার উপর তিলাওয়াতকৃত আল্লাহর আয়াতসমূহ তথা আল-কুরআন শুনেন।”
৫. আদেশ-নিষেধ অর্থেআয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন- সূরা আল-বাকারায় আল্লাহ বলেন اللھ یبین كذلك
ایاتھ “অনুরূপভাবে আল্লাহ তার আদেশ-নিষেধগুলো বর্ণনা করেন।”
৬. আল-কুরআনের প্রবচন (আয়াত) অর্থেও আয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন- সূরা আলে-ইমরানে বর্ণিত হয়েছে-
ھُوَ ٱل َّذِيۤ أ َنزَ لَ عَ ل َیْكَ ٱلْكِتَابَ مِنْھُ آیَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ
“তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন যার কতক আয়াত মুহকাম।” (সূরা আলে ইমরান : ৭)
আয়াত-এর পারিভাষিক অর্থ
আয়াত বলতে সেই বাক্যকে বুঝায় যার একটি শুরু এবং একটি সমাপ্তি আছে এবং আল-কুরআনের কোন সূরার মধ্যে
তা বিদ্যমান। অন্য একটি সংজ্ঞানুযায়ী আয়াত কুরআনের ঐ অংশ যার প্রারম্ভ পূর্ববর্তী হতে এবং সমাপ্তি পরবর্তী হতে
বিচ্ছিন্ন। আল-কুরআনের আয়াতগুলো ছেদ চিহ্ন দ্বারা পরস্পর বিযুক্ত হয়ে থাকে।
فاجلدواে - তামরা বেত্রাঘাত কর, কশাঘাত কর, دین - জীবন ব্যবস্থা, জীবন বিধান, জীবন যাত্রা প্রণালী, অভ্যাস,
পরিণাম, আনুগত্য, এখানে اللھ دین - বলতে আল্লাহ পাকের বিধানকে বুঝানো হয়েছে, تؤمنون كنتمে - তামরা
ঈমান এনে থাক বা বিশ্বাস কর, ولیشھد - প্রত্যক্ষ করা উচিত, উপস্থিত থাকা উচিত, طائفةদ - ল, কোন কিছুর
অংশ বিশেষ, খন্ড, এক মত ও এক ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী।
ینكح لاে - স বিবাহ করে না حرم - নিষিদ্ধ করা হয়েছে, یرمون - অপবাদ আরোপ করে, দোষারোপ করে,
মিথ্যা অপবাদ রটায়, محصنات - সতী-সাধ্বী নারীরা, یأتوا لم - তারা উপস্থিত করতে পারে না। شھداء
সাক্ষীসমূহ, ثمانین - আশি شھادة- সাক্ষ্য।
تابوا - তারা তাওবা করল, প্রত্যাবর্তন করল, اصلحوا - তারা সংশোধন হল, ভাল হল, غفورক্ষ - মাশীল,
ازواج¿̄ - ীগণ, انفسھم - নিজেরাই, صادقین - সত্যবাদীগণ, প্রত্যয়ীগণ।
اللھ لعنة - আল্লাহ্র লা‘নত, আল্লাহ্র অভিসম্পাত, علیھ- তার উপর, كاذبین - মিথ্যাবাদী।
یدرؤاূদ - রীভূত করা হবে, অব্যাহতি দেওয়া যাবে, اللھ غضب - আল্লাহ্র গযব, ক্রোধ, ঘৃণা ও অভিসম্পাত,
لولا যদি না, فضل অনুগ্রহ, رحمة - রহমত, করুণা, অনুগ্রহ, দয়া ইত্যাদি।
تواب - অধিক তাওবা গ্রহণকারী, حكیم- অতীব প্রজ্ঞাময়, বিজ্ঞানময়, সুবিজ্ঞ, কুশলী, মহাবিজ্ঞানী।
মিথ্যা অপবাদ ও শাস্তিসম্পর্কিত কতিপয় ইসলামী পরিভাষা
(মুলা‘আনা/লি‘আন (ملاعنة/لعان
‘লিআন’ একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে- একে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও বদদোয়া করা। ইসলামী শরীআতের
পরিভাষায় স্বামী-স্ত্রী উভয় বিশেষ পদ্ধতিতে কয়েকবার শপথ করা এবং সব শেষে মিথ্যুক হলে নিজেকে অভিশাপ
দেওয়ার নাম লি‘আন। যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগ আরোপ করে অথবা তার প্রসবকৃত সন্তান
সম্পর্কে বলে যে, সে আমার ঔরসজাত নয়, অপরদিকে স্ত্রী স্বামীকে মিথ্যাবাদী অভিহিত করে এবং মিথ্যা অপবাদের
শাস্তিদাবি করে, তখন স্বামীকে তার দাবির সপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে বলা হবে। সে যদি যথা নিয়মে
চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে, তখন তার স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের ‘শাস্তি’ প্রয়োগ করা হবে।
لعان) লি‘আন) এর পদ্ধতি
প্রথমে স্বামীকে বলা হবে, সে যেন তার দাবির অনুকূলে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করে। আর সে যদি যথানিয়মে সাক্ষী
উপস্থিত করতে না পারে তখন নিজেকে সত্যাবাদী প্রমাণ করার জন্য চারবার শপথ করবে এবং পঞ্চমবার বলবে- ‘সে
যদি মিথ্যাবাদী হয়, তা হলে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক’। স্বামী যদি এসব শপথ করা থেকে বিরত
থাকে, তবে সে যে পর্যন্তনিজের মিথ্যাবাদী হওয়ার কথা স্বীকার না করে অথবা উক্ত ভাষায় পাঁচবার শপথ ও নিজেকে
লা‘নত না করে, সে পর্যন্ততাকে আটক রাখা হবে। যদি সে মিথ্যাবাদী হওয়ার কথা স্বীকার করে তবে তার উপর
অপবাদের দন্ড প্রয়োগ করা হবে।
পক্ষান্তরে স্বামী যদি কুরআনে বর্ণিত নিয়মে চারবার শপথ করে ও পঞ্চমবার লা‘নত করে, তবে স্ত্রীর কাছ থেকেও
কুরআনে বর্ণিত নিয়মে চারবার শপথ ও পঞ্চমবার লা‘নত করতে বলা হবে। যদি সে শপথ করতে অস্বীকার করে তবে
যে পর্যন্তসে স্বামীর অভিযোগ স্বীকার না করে এবং নিজের ব্যভিচারের অপরাধ স্বীকার না করে, সে পর্যন্ততাকে আটক
রাখা হবে। যদি সে অপরাধ স্বীকার করে, তবে তার উপর ব্যভিচারের শাস্তিপ্রয়োগ করা হবে।
আর যদি উক্ত ভাষায় শপথ করতে সম্মত হয় এবং শপথ করে তবে লি‘আন পূর্ণতা লাভ করবে এবং ফলশ্রæতিতে
পার্থিব শাস্তিথেকে উভয়ই বেঁচে যাবে। আর তাদের মধ্যে লি‘আনের পূর্ণতার কারণে একে অপরের জন্য চিরতরে
হারাম হয়ে যাবে। তখন স্বামীর উচিত হবে তাকে তালাক দিয়ে মুক্ত করে দেওয়া। তারপর তাদের মধ্যে পুনর্বিবাহ
আর কখনও হতে পারবে না।
(তা’যীর (تعزیر
এটি একটি আরবী শব্দ। ইসলামে যে সব অপরাধের কোন সুনির্দিষ্ট শাস্তিবা কাফফারার ব্যবস্থা নির্ধারিত নেই, সে সব
অপরাধের ক্ষেত্রে বিচারপতি বা আইনসভা কর্তৃক আরোপিত শাস্তিকে তা‘যীর বলে। মিথ্যা সাক্ষ্যদান, ঘুষ গ্রহণ, সুদী
কারবার বা লেনদেন করা, আমানতের খিয়ানত করা, পণ্য- দ্রব্যে বা ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতারণা করা, অপরাধীদের গোপনে
সাহায্য করা, কারো প্রতি যিনা ছাড়া অন্যকোন অপরাধের মিথ্যা অভিযোগ করা, সালাত, সাওম, যাকাত প্রভৃতি ফরয
কাজ ত্যাগ করা, স্বামী-স্ত্রী বা মাহরাম (যাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা বৈধ নয়) ছাড়া কোন পুরুষ ও মহিলা
নিবিড় স্থানে বসে গল্প গুজব করা বা ঘোরাফেরা করা প্রভৃতি অপরাধের জন্য অনির্ধারিত শাস্তিপ্রয়োগকে তা’যীর বলে।
তা’যীর বিভিন্ন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে
প্রথমত : সরকারীভাবে কঠোর ভর্ৎসনা, ভীতি-প্রদর্শন আধুনিক ভাষায় মুচলেকা দান ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত : বড়-বড় অপরাধের জন্য বিভিন্ন শাস্তি। যেমন - বেত্রাঘাত, আটক, আর্থিক জরিমানা, চাকরিচ্যুতি বা
সাময়িক বরখাস্ত, দেশ থেকে নির্বাসন এবং অপরাধী সম্পর্কে প্রচার চালানো এগুলো অনির্ধারিত শাস্তি। বিচারক অপরাধ
অনুসারে তার শাস্তিপ্রদান করবেন।
(হাদ্দ (حد
হাদ্দ একটি আরবী শব্দ। আল-কুরআ্ন ও মুতাওয়াতির হাদীস সাতটি অপরাধের শাস্তিও তার পন্থা নির্ধারণ করেছে
এবং কোন বিচারক ও শাসন-কর্তার মতামতের উপর ন্যস্তকরেনি। এসব নির্দিষ্ট শাস্তিকে ইসলামী আইনের পরিভাষায়
‘হাদ্দ’ বলা হয়। এগুলো ছাড়া অবশিষ্ট অপরাধসমূহের শাস্তিএভাবে নির্ধারিত হয়নি, বরং শাসন কর্তা বা বিচারক
অপরাধীর অবস্থা, অপরাধের ধরণ, পরিবেশ ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে যে পরিমাণ শাস্তিকে অপরাধ দমনের জন্যে
যথেষ্ট মনে করেন, সেই পরিমাণ শাস্তিদিতে পারেন, যাকে শরীআতের ভাষায় তা’যীর বলে।
ইসলামে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
যে সব অপরাধের জন্য শাস্তিনির্ধারিত রয়েছে তা মোট সাতটি - (১) চুরি (২) কোন সতী সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ
আরোপ (৩) মদ্যপান (৪) সন্ত্রাস বা ডাকাতি (৫) হত্যা (৬) ইসলাম ধর্মত্যাগ (৭) ব্যভিচার।
এগুলোর মধ্যে প্রত্যেক অপরাধ স্ব-স্ব স্থানে গুরুতর ও ভয়াবহ। জগতের শান্তি-শৃংখলার জন্যে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ
এবং অনেক অপরাধের সমষ্টি। কিন্তু সবগুলোর মধ্যে ব্যভিচারের অশুভ পরিণতি মানব সমাজ ব্যবস্থাকে যেমন আঘাত
হানে তেমনটি বোধ হয় অন্য কোন অপরাধের ক্ষেত্রে ঘটে না।
এ পাঠের শিক্ষা
১. ব্যভিচার সামাজিক স¤প্রীতি ও শৃংখলা ধ্বংসকারী একটি জঘন্য অপরাধ, যা সমাজে নৈতিক বিপর্যয়, পরিবারের
ভাঙ্গন এবং বিবাহের প্রতি নারী পুরুষের মধ্যে তীব্র অনীহা সৃষ্টি করে।
২. ব্যভিচার নৈতিকতার দিক থেকে পাশবিক, ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহাপাপ এবং একটি জঘন্য সামাজিক অপরাধ। সূরা
আল-নূরে এটাকে ফৌজদারী অপরাধরূপে গণ্য করে এর শাস্তির বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছে।
৩. ইসলামে বিবাহিত নর-নারীকে ব্যভিচারের অপরাধে ‘রাজম’ অর্থাৎ প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যার বিধান নির্ধারিত
রয়েছে।
৪. ইসলামী আইন সরকার ছাড়া আর কাউকে ব্যভিচারের শাস্তির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষমতা দেয় না।
একমাত্র আদালতই পারে কাউকে ব্যভিচারের শাস্তিপ্রদান করতে। জনগণকে এ শাস্তিপ্রদানের ক্ষমতা দেওয়া
হয়নি, বরং আয়াতে শাসকবৃন্দ ও বিচারপতিগণকে সম্বোধন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সকল ফকীহ ঐকমত্য
পোষণ করেছেন।
৫. ব্যভিচারী নারী-পুরুষের সঙ্গে সতী নারী-পুরুষের বিবাহ নিষিদ্ধ করে সামাজিকভাবে তাদেরকে বয়কট করার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তাওবা ও নৈতিক সংশোধন করার পর সে ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হবে না। এ দোষ
হতে সে পবিত্র হয়ে যাবে।
৬. কোন ব্যক্তির উপর ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা জঘন্য অপরাধ। এ মিথ্যা অপরাধ প্রমাণের জন্য
চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। যদি চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে, তবে এ অপবাদের শাস্তি হিসেবে অপবাদদাতাকে শাস্তিভোগ করতে হবে।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১. লি‘আন শব্দের অর্থ হচ্ছেক. সরকারীভাবে বিচার করা
খ. কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া
গ. স্বামী স্ত্রী একে অপরের প্রতি অভিশম্পাত করা
ঘ. অন্যায় করা
২. তা‘যীর বলতে বুঝায়ক. অপরাধীকে বেত্রাঘাত করা
খ. অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া
গ. অপরাধ যাচাই করা
ঘ. অপরাধের জন্য অনির্ধারিত শাস্তি
৩. যে সব অপরাধের শাস্তিশরীআতে নির্ধারিত রয়েছে তাদের সংখ্যা
ক. ৪ টি
খ. ৫ টি
গ. ৩ টি
ঘ. ৭ টি
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর ঃ ১. গ, ২. ঘ, ৩. ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ব্যভিচারের শাস্তিও এর আনুসঙ্গিক বিষয়সমূহ বর্ণনা করুন।
২. লি‘আন কাকে বলে? এর পদ্ধতি বর্ণনা করুন।
৩. তা’যীর কাকে বলে? লিখুন।
৪. হাদ্দ কাকে বলে? ইসলামী শরীআতে কোন কোন অপরাধের জন্য শাস্তিনির্ধারিত হয়েছে তা লিখুন।
سورة، أیات، محصنات، لعان، تعزیر، حد .লিখুন টীকা. ৫
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. সূরা আল-নূরের ১-৫ পর্যন্তআয়াতের সরল অনুবাদ করুন।
২. সূরা আল-নূরের ৫-১০ পর্যন্তআয়াতের সরল অনুবাদ করুন।
৩. লি‘আন কাকে বলে? লি‘আনের পদ্ধতি বর্ণনা করুন।
৪. তা’যীর ও হাদ্দ বলতে কী বুঝায়? হাদ্দ ও তা’যীরের শাস্তির বিধান বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]