প্রতিবেশী কারা? প্রতিবেশীর দায়িত্ব ও কর্তব্য স¤পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ রচনা লিখুন।

প্রতিবেশীর পরিচয়
সামাজিক শান্তিও নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে সহাবস্থান করা একান্তপ্রয়োজন।
প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ হতে থাকলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। একটি আদর্শ সমাজের বৈশিষ্ট্য হলো
সেখানকার লোকেরা পরস্পর প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, একে অন্যের কল্যাণ কামনা করে, আপদে-
বিপদে পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতা এবং সুখ-দুঃখের ভাগী হয়। পাশাপাশি বসবাস করতে গেলে অনেক সময়
প্রতিবেশীর সাথে ভুলত্রæটি হয়ে গেলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তার সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে হয়।
প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য স¤পর্ক স¤পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন
وَ ٱعْ ᘘ ُدُ وا᠔ ٱل لᡐ هَ وَ ᢻ َᘻ ُشْ ر᠒ك᠑ وا᠔ ᗷ ِهِ شَ ᚏ ْئا᠍ وَ ᗖ ِٱل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ إِ حْ سَ انا᠍ وَ ᗖ ِذِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ وَ ٱل᠔ ي تَ امَ ىٰ
وَ ٱل᠔ مَ سَ اᜧ ِين᠒ وَ ٱل᠔ جَ ار᠒ ذِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ وَ ٱل᠔ جَ ار᠒ ٱل᠔ جُ نُ بِ وَ ٱلصَّ احِ بِ ᗷ ِٱلجَ نْ بِ وَ ٱبْ ن᠒
ٱلسَّ ᙫ ِᘭلِ وَ مَ ا مَ ل᠐᜻ ᠐ تْ أ᠐ ᘌ ْمَ انُ ᠑ᝣ مْ إِ نَّ ٱللᡐ هَ ᢻ َᘌ ُحِ بُّ مَ ن ᛿᠐ انَ مُ خْ تَ اᢻ ًفَ خُ ورا᠍ .
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন,
ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-
দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-অহংকারীকে।’ (সূরা আন-নিসা : ৩৬)
এ আয়াতে পিতামাতাসহ আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিজকে বড় ও প্রতিবেশীকে ছোট মনে করলে এবং প্রতিবেশীর স্বার্থ অপেক্ষা নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখলে
প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এ জন্য দাম্ভিকতা ও অহংকার পরিত্যাগ করে প্রতিবেশীর সাথে
ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেনআল্লাহর শপথ, সে মু’মিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মু’মিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মু’মিন নয়। জিজ্ঞেস করা
হলো, হে আল্লাহর রাসুল ! কে সেই ব্যক্তি ? রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ
নয়।
সাধারণ অর্থে প্রতিবেশী বলতে আশেপাশে বসবাসকারীকে বুঝায়। ইসলামী সমাজ দর্শনে প্রতিবেশীর সংজ্ঞা
আরো ব্যাপক। মহানবী (স.) এর সংজ্ঞায় বলেন, “আশেপাশে চল্লিশ বাড়ি পর্যন্তসকলেই প্রতিবেশী।” এ
হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম যুহরী বলেনÑ
ارᗖعين دار ا امامه وارᗖعين خلفه وارᗖعين عن ᘌمينه وارᗖعين عن ᛒسار ە.
‘নিজ ঘরের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিকের চল্লিশ বাড়ি পর্যন্তপ্রতিবেশী বলে বিবেচিত হবে।’ মূলত স্থায়ী বা
অস্থায়ীভাবে পাশাপাশি বসবাসকারী কিংবা সাময়িকভাবে আশেপাশে অবস্থানকারী তথা চলার পথের সহযাত্রীরাও
প্রতিবেশী বলে গণ্য হবে। যেমন, যারা একত্রে লেখাপড়া করে, চাকরি করে, বাস-রিক্সা, জাহাজ-লঞ্চ-স্টীমার,
বিমান-রেলওয়েতে যাতায়াতের সময় পাশাপাশি অবস্থান করে, যারা যে কোন উপায়ে একই সঙ্গে পথ চলে,
একত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, একই মিল-কারখানায় কিংবা প্রতিষ্ঠানে পাশাপাশি কাজ করে তারা সকলেই একে
অপরের প্রতিবেশী। কাজেই ইসলামী সমাজ দর্শনে প্রতিবেশীত্বেব্যাপকতা বহুদূর পর্যন্তবিস্তৃত।
রাসূল (স.) সমাজতত্তে¡র দৃষ্টিতে বিষয়টির ব্যাখ্যা-বিশে- ষণ করেছেন। মানুষের বসতি পরস্পর সন্নিহিত
থাকে। তাদের পারষ্পরিক অধিকারের ওপরই উপরোক্ত গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। পরস্পর সন্নিহিত সে বসতির
পরিধি বা সীমারেখারই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাই আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে।
প্রতিবেশীর প্রকারভেদ
হক বা স্বত্ব তথা অধিকারের বিভিন্নতার দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিবেশীকে মহানবী (স.) নি¤েœাক্ত শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
(ক) অমুসলিম প্রতিবেশী ঃ হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য ধর্মের লোক, অর্থাৎ যারা যারা মুসলিম নয়। প্রতিবেশী
হিসেবে তাদের মাত্র একটি অধিকার রয়েছে। আর তা হল প্রতিবেশী হিসেবে প্রাপ্য অধিকার।
(খ) অনাত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশী ঃ এ শ্রেণীর প্রতিবেশীর মধ্যে সকল মুসলমান অন্তর্ভুক্ত। এদের হক তথা
অধিকার দু’টি। যথাÑ মুসলিম হিসেবে একটি ও প্রতিবেশী হিসেবে একটি অধিকার রয়েছে।
(গ) আত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশী ঃ এরা নিকটতম প্রতিবেশী। এ শ্রেণীর প্রতিবেশীর মধ্যে শুধু সে সব মুসলমান
অন্তর্ভুক্ত যারা আত্মীয়। এদের অধিকার তিনটি। মুসলিম হিসেবে একটি, আত্মীয় হিসেবে একটি এবং প্রতিবেশী
হিসেবে একটি।
(ঘ) পার্শ্ব সাথী ঃ আরো এক শ্রেণীর প্রতিবেশীর অস্তিত্বও ইসলামে স্বীকৃত। এ পর্যায়ে রয়েছে সে সব লোক, যারা
সফরসঙ্গী কিংবা রাস্তা-ঘাটে চলার পথের সাথী। মসজিদে পাশাপাশি বসলে সেও প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য এবং
তারও একটি হক রয়েছে, যা আদায় করতে হবে। নি¤েœর আয়াতে এর প্রমাণ মেলে।
وَ ٱل᠔ جَ ار᠒ ذِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ وَ ٱل᠔ جَ ار᠒ ٱل᠔ جُ نُ بِ وَ ٱلصَّ احِ بِ ᗷ ِٱلجَ نْ بِ
‘সদাচরণ কর নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী ও সংগী-সাথীদের সাথে।’ (সূর আন-নিসা : ৩৬)
প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা
ইসলাম মানব কল্যাণের ধর্ম। তাই ইসলাম স্বীয় অনুসারীদেরকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা, অঞ্চল নির্বিশেষে
সকলের অধিকার ও কর্তব্য সানন্দে পালন করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিবেশীর অধিকার ও কর্তব্য ইসলামী সমাজ
ব্যবস্থায় অত্যন্তব্যাপক। নি¤েœপ্রতিবেশীর অধিকার ও কর্তব্য স¤পর্কে আলোচনা করা হলসদাচরণ পাওয়ার অধিকার
প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ ও ভাল ব্যবহার করা একজন মুসলিমের অন্যতম কর্তব্য। কখনও প্রতিবেশীর মনে
আঘাত বা কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না। ইসলামে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরেই প্রতিবেশীর এ
অধিকার স্বীকৃত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে-
وَ ٱعْ ᘘ ُدُ وا᠔ ٱل لᡐ هَ وَ ᢻ َᘻ ُشْ ر᠒ك᠑ وا᠔ ᗷ ِهِ شَ ᚏ ْئا᠍ وَ ᗖ ِٱل᠔ وَ الِ دَ يْ ن᠒ إِ حْ سَ انا᠍ وَ ᗖ ِذِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ وَ ٱل᠔ ي تَ امَ ىٰ
وَ ٱل᠔ مَ سَ اᜧ ِين᠒ وَ ٱل᠔ جَ ار᠒ ذِ ى ٱل᠔ قُ رْ بَ ىٰ وَ ٱل᠔ جَ ار᠒ ٱل᠔ جُ نُ بِ وَ ٱلصَّ احِ بِ ᗷ ِٱلجَ نْ بِ .
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন শিরক করো না। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম,
অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী ও সংগী-সাথীদের সাথে সদাচরণ কর।’ (সূর আন-নিসা : ৩৬)
এ আয়াতে আল্লাহর অধিকার এর কথা বলার সাথে সাথে তাঁর বান্দাদের পারস্পরিক যে অধিকার রয়েছে তা-ও
বলা হয়েছে।
এ থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ যেমন নিজের হক বান্দার নিকট থেকে যথারীতি ও পুরোপুরি আদায়
করার পক্ষপাতী, তেমনি বান্দাদের পারস্পরিক হকও যেন যথারীতি আদায় হতে পারে তারও পক্ষপাতী। কাজেই
উক্ত আয়াতে পারস্পরিক সংস্পর্শে আসা লোকদের পরস্পরের ওপর যেসব হক ধার্য হয় তার কথা ও এখানে স্পষ্ট
করে বলা হয়েছে।
তিরমিযী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে মহানবী (স) ঘোষণা করেনÑ
خير الجيران عند الله خيرهم لجارە.
‘আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশীই উত্তম যে তার নিজ প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।’
বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ও সুফী সাধক ইমাম গাযালী (র.) উল্লেখ করেনÑ
احسن مجاورة من جارك تكن مسلما.
‘যদি তুমি প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার কর তবেই তুমি প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে।’ (এহইয়াই-উলুমুদ্দীন)
মহানবী (স.) বিভিন্নভাবে পারস্পরিক এ অধিকারের কথা বলিষ্ঠ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। এ সম্পর্কে মহানবী
(স.) বলেন ঃ
من ᛿ان يؤمن ᗷالله واليوم الاخر فلᘭحسن الى جارە.
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে তার কর্তব্য হলো প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করা।’ (সহীহ
বুখারী)
প্রতিবেশীর প্রতি ভাল আচরণ এবং তার কল্যাণ করার কাজটি ঈমানের মৌলিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত করা
হয়েছে এ হাদীসটিতে। এর অর্থ, ঈমান থাকলে প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই করা হবে। আর
যদি সে ভাল ব্যবহার না করে হয় তাহলে যথাযথ ঈমান আছে একথা মনে করা যাবে না। অনুরূপ আর একটি
হাদীস হলো ঃ
من ᛿ان يؤ من ᗷالله واليوم الاخر فلا يؤ ذ جارە .
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যার ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (সহীহ বুখারী)
এ দুটো হাদীসে বিষয়টি ইতিবাচক ভঙ্গিতে বলা হয়েছে। নেতিবাচক ভঙ্গিতে বলা একটি হাদীসে রাসূলে করীম
(স.) পরপর তিনবার বলেলেনÑ يؤمن لا والله ‘আল্লাহর কসম, সে মু’মিন নয়।’
রাসূলের (স.) মুখে একথাটি তিনবার শুনে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি কার কথা
বলছেন ? জবাবে তিনি বললেন ঃ بوائقـه جـارە ـأمنᘌ لا الـذى ‘আমি সেই ব্যক্তির কথা বলছি, যার
নিপীড়ন ও জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপত্তা পায় না।’ (বুখারী, মুসলিম)
ইসলামে প্রতিবেশীর হকের উপর অত্যন্তবেশী গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
রাসূলে করীম (স.) বলেছেন ঃ
ما زال جبرᗫل يوصينى ᗷالجار حتى ظننت انه سيورثه
‘জিবরাঈল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এমনভাবে অসিয়ত করছিলেন যে, আমি ধারণা করতে লাগলাম, সম্ভবত
প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেয়া হবে।’ (বুখারী, মুসলিম)
প্রতিবেশীর অধিকার আমানতস্বরূপ
প্রতিবেশীর অধিকার আমানতস্বরূপ। তারা এই আমানত আপ্রাণ প্রচেষ্টায় রক্ষা করবে এবং কোন অবস্থাতেই কেউ
কারো অনিষ্টের কারণ হবে না, বরং একে অপরের কল্যাণে এগিয়ে আসবে এবং অপরের আমানত হিফাযত
করবে। প্রতিবেশী যে কেউই হোক কিংবা যেমনই হোক জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলেই প্রতিবেশীর
সমমর্যাদা পাবে এবং তাদের সাথে মানবিক ও ইসলাম আরোপিত কর্তব্য পালন করতে হবে। কাউকে কোনরূপ
উত্ত্যক্ত করা, উৎপীড়ন বা কষ্ট দেয়া ঈমানের পরিপন্থী কাজ। অর্থাৎ তাদের হক এই আমানত নষ্ট করা ঈমান
বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং যে প্রতিবেশীর হক নষ্ট করবে, সে ‘জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’
প্রতিবেশীর নিরাপত্তা দান করা
এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দান করবে। প্রতিবেশী যাতে সব সময় নিরাপদে ও
নিশ্চিন্তেবসবাস করতে পারে, কোনরূপ কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স.)
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেনÑ
لا ᘌدخل الجنة من لا ᘌأمن جارە بوائقه .
‘যে ব্যক্তির প্রতিবেশী তার অন্যায় আচরণ ও অত্যাচার হতে নিরাপদ থাকে না, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
না।’ (সহীহ মুসলিম)
মহানবী (স.) তিনবার শপথ করে ঘোষণা দেন ঃ
والله لايؤمن الذي لا ᘌأمن جارە بوائقه .
‘আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তির অত্যাচার হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে মুমিন নয়।’ (বুখারী, মুসলিম)
বিপদে-আপদে এগিয়ে আসা
প্রতিবেশীর বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে খোঁজ-খবর নেয়া এবং যথাসম্ভব তার প্রতিকার করা
ইসলামের নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স.) ঘোষণা করেনÑ
لᛳس المؤمن الذى ᛒشبع وجارە جائع الى جنᘘه.
‘যে ব্যক্তি নিজে পেট পুরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী তার পাশে অভুক্ত থাকে, সে ব্যক্তি মুমিন নয়।’
মহানবী (স.) আরো বলেন ঃ
ما امن بى من ᗷات شᘘعانا و جارە جائع و هو ᘌعلم
‘যে ব্যক্তি পেট ভরে খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে রাত্রি যাপন করল এবং সে জানলো যে, তার প্রতিবেশী না খেয়ে ক্ষুধার্ত
অবস্থায় রয়েছে, সে আমার প্রতি ঈমান আনেনি।’ (বাযযার)
অর্থাৎ একই বসতির পাশাপাশি অবস্থানকারী দু’জন লোকের একজন ক্ষুধায় কাতর হয়ে রাত্রি যাপন করবে আর
অপরজন পেট ভরে খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে রাত্রি যাপন করবে, তা ঈমানদার লোকদের কাজ হতে পারে না। না
জানতে পারলে ভিন্ন কথা। কিন্তুযখন জানবে যে, প্রতিবেশীর ঘরে খাবার নেই, আর বিশেষ করে রাত্রি বেলা
যখন কোন জায়গা থেকে খাবার যোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এ অবস্থায় অপরজন খেয়ে পরিতৃপ্ত হবে, তার
অংশ প্রতিবেশীকে দেবে না বা নিজের খাবার তার সাথে ভাগাভাগি করে খাবে না, ঈমানদার লোকদের ব্যাপারে
একথা চিন্তাই করা যায় না।
নবী করীম (স.) একদা আবু যার (রা)-কে এ বলে সতর্কতামূলক উপদেশ দিলেন যে, ‘হে আবু যার ! যখন
তোমার ঘরে গোশত রান্না হয় তখন এতে পানি বাড়িয়ে দেবে এবং এর দ্বারা প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেবে।”
(মুসলিম)
অর্থাৎ, উপাদেয় খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিবেশীকে দেয়ার সামর্থ্য না থাকলে কিংবা তার পরিমাণ যথেষ্ট না হলে
তার সামান্য অংশও যেন প্রতিবেশীকে দেয়া যায় তার ব্যবস্থা করা উচিত।
প্রতিবেশীর প্রতি সামগ্রিক দায়িত্ব
প্রতিবেশীর প্রতি পারস্পরিক কি কি হক বা দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তার ব্যাখ্যাও নবী করীম (স.) দিয়েছেন বিভিন্ন
হাদীসে। একটি হাদীসে তিনি বলেছেনÑ شـفعتهᚽ احـق والجـار ‘প্রতিবেশী তার ‘শুফ্‘আ’ পাওয়ার
ক্ষেত্রে অধিক হকদার।’
‘শুফ্‘আ’ হলো কেউ যদি তার জমি-খেত বিক্রয় করার সিদ্ধান্তগ্রহণ করে, তা হলে তা ক্রয় করার ব্যাপারে তার
প্রতিবেশীই তুলনামূলকভাবে বেশী অধিকারসম্পন্ন। কেননা সে জমি কোন দূরবর্তী লোক ক্রয় করলে নিকট
প্রতিবেশীর জন্য তা অনেক কষ্টের কারণ হতে পারে। অপর এক হাদীসে প্রতিবেশীর প্রতি সামগ্রিক কর্তব্য
সম্পর্কে বলতে গিয়ে নবী করীম (স.) বলেনÑ
حق الجار ان مرض عدته و ان مات شᘭعته و ان افتقر اقرضته و ان اعور
سترته و ان اصاᗷه خير هناته و ان اصابته مصᘘᚏة عᗫᖂته ولا ترفع بناءك
فوق بنائه فᙬسد علᘭه الᖁ ᗫــح ولا تؤ ذە بᗫᖁـــح قدرك الا ان تغرف له منها.
(الطبرانى)
‘প্রতিবেশীর হক হল, সে যদি রোগাক্রান্তহয় তাহলে তুমি তার সেবাযতœ করবে, সে মরে গেলে তার লাশের সঙ্গে
কবরস্থান পর্যন্তযাবে, কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করবে। সে যদি অর্থাভাবে পড়ে, তাহলে তুমি তাকে ঋণ দেবে।
সে যদি নগ্নহয়ে পড়ে, তাহলে তুমি তার লজ্জা আবৃত করবে। তার যদি কোন কল্যাণ হয় তাহলে তুমি তাকে
মুবারকবাদ দেবে। সে যদি কোন বিপদে পতিত হয় তাহলে তুমি তার দুঃখের ভাগ নেবে, সহানুভূতি জানাবে।
তোমার ঘর তার ঘর থেকে উঁচু বানিয়ে তাকে মুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত করবে না। তোমার রান্নার পাত্রের বাতাস
দিয়েও তাকে কষ্ট দেবে না। যদি তেমন অবস্থা হয়-ই তাহলে তাকে এক চামচ হলেও খাবার পাঠিয়ে দেবে।’ (তাবারানী)
প্রয়োজনীয় ছোটখাট দ্রব্য-সামগ্রী বা কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করাও প্রতিবেশীর পারস্পরিক কর্তব্য। প্রয়োজনে
প্রতিবেশীকে নিজের জায়গা ব্যবহারের সুযোগ দেয়া, প্রতিবেশীর বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে সাধ্যমত
সহযোগিতা করা, এমন কি প্রতিবেশীর পার্শ্ববর্তী কোন জায়গা জমি বিক্রি করতে হলেও জানানো দরকার। সে
নিতে চাইলে অন্যকে না দেয়াই মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহর রাসূল (স.) বলেনÑ
لا ᘌمنعن احد᛿م جارە ان ᘌضع خشᘘة فى جدارە.
‘তোমাদের কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে তার আঙিনায় কাঠ বা লাকড়ি জাতীয় কোন প্রয়োজনীয় কিছু রাখতে বারণ না করে।’ (বুখারী, মুসলিম)
এমন কি প্রতিবেশীকে প্রথমে সালাম দেয়া এবং খানাপিনায় শরীক করাও প্রতিবেশীর কর্তব্যের আওতাভুক্ত। যেমন নবী করীম (স.) বলেছেন ঃ
افضل الا سلام افشاء السلام واطعام الطعام.
‘উত্তম ইসলাম হল, বেশি বেশি সালাম দেয়া এবং মানুষকে খাবার খাওয়ানো।’
পরস্পর পরস্পরকে উপহার-উপঢৌকন দিয়ে পারস্পরিক হৃদ্যতা বাড়ানোর কথাও ইসলাম বলেছে। মহানবী
(স.) বলেছেন ঃ تحـابوا تهـادوا ‘তোমরা উপঢৌকন আদান-প্রদান কর তাহলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক
হৃদ্যতা বজায় থাকবে।’
মুসলিম মহিলারাও প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য পালনে বাধ্য। মহিলাদের সম্বোধন করে মহানবী (স.) বলেন-
ᘌاᙏساء المسلمات لا تحقرن جارة لجارتها.
‘হে মুসলিম নারী সমাজ! কোন মহিলা প্রতিবেশী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশীকে হীন ও নগণ্য জ্ঞান না করে।’
(বুখারী, মুসলিম)
প্রতিবেশীকে কোনরূপ ঘৃণা করা ও হীন মনে করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়।
প্রখ্যাত মনীষী ইবনে খালদুন বলেন, এক সাথে মিলে মিশে থাকা মানুষের জন্য অপরিহার্য। এ সত্যটিকেই জ্ঞানী
ও পন্ডিতগণ এভাবে বিবৃত করে থাকেন যে, ‘জন্মগতভাবেই মানুষ সামাজিক জীব।’ বস্তুত সমাজবদ্ধ হয়ে পাড়াপ্রতিবেশীর সাথে মিলেমিশে বসবাস করা মানুষের আজন্ম স্বভাব। ‘সমাজ’ সংগঠনটি গড়ে ওঠেছে মানুষের এই
পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই। মানুষ সমাজকেন্দ্রিক জীবনে বাধ্য। সমাজহীন মানবজীবন অকল্পনীয়, বরং
তা নিতান্তই পাশবিক জীবনধারা। আর সমাজের প্রাথমিক ইউনিট হচ্ছে পরিবার। মানুষের পরিবার পরস্পর
বিচ্ছিন্ন নয়। একটি পরিবারের সাথে অন্য পরিবারের নৈকট্য ভিত্তিক সম্পর্ক অনিবার্য। নিকটবর্তী জীবনই
মানুষের সামাজিক জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়। ঘরের পাশে ঘর, বাড়ির পাশে বাড়ি। একটি পরিবারের পাশে আর
একটি পরিবারের অবস্থিতির মাধ্যমেই পাড়া ও মহল্লা গড়ে ওঠে। আর এভাবে যারা কাছাকাছি বাস করে, তারা
পরস্পরের প্রতিবেশী। মানুষের সামাজিক জীবনের অনিবার্যতার ফলই হচ্ছে প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য।
ইসলাম মানবিক জীবন বিধান। ‘মানুষ’ শব্দটির অন্তর্নিহিত অর্থেই রয়েছে অন্য মানুষের প্রতি আন্তরিকতা পোষণ।
ফলে একটি পারিবারিক পরিবেষ্টনীর মধ্যে অবস্থানকারী মানুষের মধ্যে যেমন পারস্পরিক সহৃদয়তা ও মহানুভবতা
অত্যন্তস্বাভাবিক, তেমনি একই পাড়া-মহল্লায় অবস্থানকারীদের মধ্যেও অনুরূপ সহৃদয়তা-আন্তরিকতা গড়ে তোলা
মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্তপছন্দনীয়। এ কারণেই মানুষের জন্য তাঁর প্রদত্ত জীবন বিধানে এক আল্লাহর দাসত্ব
স্বীকার করার নির্দেশদানের পর পরই পিতামাতা ও নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি
দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে।
বলা বাহুল্য, ইসলামী জীবনদর্শনে মানবের প্রতি দুটো কর্তব্য আরোপ করা হয়েছে- তাহলো اللـه حـق
(হাক্কুল্লাহÑআল্লাহর হক) ও ـادᘘالع حـق) হাক্কুল ইবাদÑবান্দার হক)। প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য পালন হাক্কুল
ইবাদ -এরই অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিবেশীর অধিকার আমানতস্বরূপ। তারা এই আমানত রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং কোন অবস্থাতেই কেউ
কারো অনিষ্টের কারণ হবে না, বরং প্রাণপণে একে অপরের কল্যাণে এগিয়ে আসবে এবং অপরের আমানত
হিফাযত করবে। প্রতিবেশী যে কেউই হোক কিংবা যেমনই হোক জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলেই
প্রতিবেশীর সমমর্যাদা পাবে এবং তাদের সাথে মানবিক ও ইসলাম আরোপিত কর্তব্য পালন করতে হবে। কাউকে
কোনরূপ উত্ত্যক্ত করা, উৎপীড়ন বা কষ্ট দেয়া ঈমানের পরিপন্থী কাজ। অর্থাৎ তাদের হক আমানত নষ্ট করা
ঈমান বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং যে প্রতিবেশীর হক নষ্ট করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
উত্তর সঠিক হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. সাধারণ অর্থে প্রতিবেশী বলতে সমাজের সকল লোককে বুঝায়।
২. সহপাঠী, সহকর্মী, একত্রে ভ্রমণকারী সকলেই প্রতিবেশী।
৩. অধিকারের বিভিন্নতার দিকে লক্ষ্য করে প্রতিবেশীকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
৪. অমুসলিম প্রতিবেশীর প্রতি মুসলিমের জন্য ২টি অধিকার রয়েছে।
৫. প্রতিবেশীর অধিকার নষ্টকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।
বহু নৈর্বাচনিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি খাতায় লিখুন
১. প্রতিবেশী কারা?
ক. রক্ত স¤পর্কীয় আত্মীয়-স্বজন
খ. মুসলমানগণ
গ. আশপাশের সকল ব্যক্তি
ঘ. আশপাশের ৪০ বাড়ি পর্যন্ত।
২. প্রতিবেশী কয়ভাগে বিভক্ত?
ক. তিন ভাগে
খ. পাঁচভাগে
গ. চারভাগে
ঘ. দুইভাগে।
৩. ‘আল্লাহর নিকট সেই উত্তম যে তার নিজ প্রতিবেশীর নিকট উত্তম’ -এটি কার বাণী?
ক. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর
খ. আল-কুরআনের
গ. হযরত আলী (রা)-এর
ঘ. ইমাম গাযালী (র.)-এর।
৪. প্রতিবেশীর অধিকারকে কিসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
ক. ঈমানের সাথে
খ. আমানতের সাথে
গ. ধন স¤পদের সাথে
ঘ. কোন উত্তরই ঠিক নয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. প্রতিবেশী কারা? সংক্ষেপে আলোচনা করণন।
২. প্রতিবেশীর প্রকারভেদ স¤পর্কে লিখুন।
৩. ‘প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ করা প্রতিবেশীর কর্তব্য’ -আল কুরআনের আলোকে বর্ণনা করণন।
৪. ‘প্রতিবেশীর জীবন ও স¤পদের নিরাপত্তা দানকরা কর্তব্য’ আল কুরআনের আলোকে লিখুন।
৫. প্রতিবেশীর কর্তব্য স¤পর্কে ইবনে খালদুনের মতবাদটি লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. প্রতিবেশী কারা? প্রতিবেশীর দায়িত্ব ও কর্তব্য স¤পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ রচনা লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]