সমাজ জীবন মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য-ব্যাখ্যা করুন। . সমাজ জীবনের মূলনীতি বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতিসমূহ লিখুন।

ইসলাম মানব জাতিকে সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করার নির্দেশ প্রদানকরেই ক্ষান্তহয়নি। সাথে সাথে সমাজ
প্রতিষ্ঠার নীতিমালাও প্রদান কেেছ। ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য হল এ সমাজে মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য নেই।
উঁচু-নিচু কোন বর্ণ বৈষম্য এখানে নেই। এ সমাজে মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা হয় তার আচার-আচরণ,
শরী‘আতের অনুশাসন অনুশীলন প্রভৃতির মাধ্যমে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় অমুসলিম জাতি ও স¤প্রদায়ের সাথে
কোন বৈষম্য আরোপ করা হয় না। সমাজের একজন সদস্য এবং প্রতিবেশী হিসেবে ইসলাম তাদের অধিকার
সংরক্ষণ ও হিফাযত করে। ইসলামী সমাজে মুসলিম, অমুসলিম একে অপরের সাহায্য সহযোগিতায় পর¯পর
মিলে-মিশে শান্তিতে বসবাস করে। সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখাকে ইসলামে গুরুত্বারোপ করেছে। সামাজিক
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়েও জঘণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সর্বোপরি ইসলাম আদর্শ ও কল্যাণমুখী
সমাজ প্রতিষ্ঠার সকল ন্যায়-নীতি উপহার দিয়েছে। একজন সাধারণ মানুষের প্রতিও ইসলামী সমাজে বেইনসাফী
করা হয় না। তাছাড়া, সমাজের প্রতিটি মানুষের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায়
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা মসজিদভিত্তিক হওয়ায় এর কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত।
আলোচ্য ইউনিটে ইসলামে সমাজ জীবনের গুরুত্ব, কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভ‚মিকা, সামাজিক
অনাচার প্রতিরোধে ইসলামের আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা, অপরাধ দমনে শাস্তির বিধান এবং আদর্শ সমাজ গঠনে মসজিদের ভ‚মিকা প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে। সমাজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব
মাছ যেমন পানির প্রত্যাশা করে, ইসলামও ঠিক তেমনি সমষ্টি বা সমাজের প্রত্যাশী। ইসলাম সমষ্টিকে অধিক
গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় প্রধান পরিচালকের আনুগত্যকে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য এবং তাঁর
নাফরমানিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর নিগূঢ় তাৎপর্য আমরা দেখতে পাই
ইসলামের দ্বিতীয় উৎস আল-হাদীসে রাসূল (সা) বলেনةᘭالقاص الغنم من الذئب لᝏ أᘌ فانما الجماعةᗷ مᜓᘭعل.
‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকো। কেননা নেকড়ে বাঘ সেই বকরী খেয়ে ফেলে যে দলছাড়া হয়ে দূরে চলে যায়।’ (আবূ
দাউদ)
.الشᘭطان ذئب الاᙏسان كذئب الغنم ᘌأخذ الشاذة والقاصᘭة والناصᘭةলনবে রাআে.) সা (মহানবী
‘বকরীর জন্য যেমন নেকড়ে বাঘ, তেমনি শয়তান মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘ। এ নেকড়ে বাঘ সেই বকরী ধরে,
যে দলছাড়া হয় ও দূরে চলে যায় অথবা পৃথক হয়ে কোন দিকে চলে যায়।’ (মুসনাদ আহমাদ)
দলবদ্ধভাবে জীবন যাপনের গুরুত্বস¤পর্কে মহানবী (সা.) বলেন-
علᘭᜓم ᗷالجماعة و اᘌاᝏم والفرقة فان الشᘭطان مع الواحد وهو من الاثنين
اᗷعد.
‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকো এবং ঐক্য বিনষ্ট করার নিকটবর্তীও হয়ো না। কেননা শয়তান এক ব্যক্তির সহযোগী হয়
আর দুই ব্যক্তি থেকে দূরে সরে যায়।’ (তিরমিযী)
অর্থাৎ সমাজের সমষ্টির সাথে নিজকে এজন্য জড়িয়ে রাখতে হবে যে, একমাত্র এভাবেই ঈমানী জীবন ব্যবস্থার
যথাযথ সংরক্ষণ সম্ভবপর। এ সামষ্টিকতার অনুপস্থিতিতে মুসলমানদের দীন ও ঈমানের নিরাপত্তা অসম্ভব।
কেননা, সমষ্টি থেকে পৃথক হলেই সে শয়তানের কর্তৃত্বাধীন এলাকায় চলে যায়। বিপরীত পক্ষে ইসলামী সমাজ
এমন একটি লৌহ নির্মিত আশ্রয়স্থল যার মধ্যে প্রবেশ করে কোন ঈমানদারকে শিকার করা শয়তানের জন্য
চাট্টিখানি কথা নয়।
ইসলাম যে সমাজ চায়, তা যদি অস্তিত্ব লাভ না করে, তাহলে মুসলমানের দীন, ঈমান কঠিন বিপদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়।
ইসলামী সমাজ ছাড়া মুমিনের জীবন কঠিন
ইসলামের সামাজিক আদর্শ বা পরিবেশ গড়ে তোলা ও সৎকর্ম প্রতিপালনের জন্য ইসলামী সমাজ অধিকতর
উপযোগী, পক্ষান্তরে বাতিল সমাজ-সৎচিন্তা, সৎকর্ম ও মূল্যবোধের জন্য অনুপযোগী। তাই মুসলমানের জন্য সেই
বাতিল সমাজে বাস করা কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এ জন্য ইসলামী সমাজ গঠন করা
খুবই জরুরি।
পাঠ ঃ কল্যাণ সমাজের অনুপস্থিতিতে মুসলমানগণের পক্ষে ইসলামের অনেক মৌলিক বিধান অনুশীলন অসম্ভব হয়ে
পড়ে। সে আল্লাহর অধিকারসমূহ পুরোপুরি আদায় করতে পারে না। সালাত, সাওম, যাকাত ও হাজ্জের মত
মৌলিক ইবাদাতসমূহ সে সঠিক মানসম্পন্নভাবে পালন করতে সক্ষম হয় না। তারপর সে বান্দার অধিকারও
আদায় করতে সক্ষম হয় না। গরীব-দুঃখীর সাহায্য, অসহায়ের সহায়তা, মজলুমের সাহায্য, রোগীর সেবা,
জানাযায় অংশগ্রহণ, ঈদের সালাত জামা‘আতে আদায়, ঈদুল আযহায় গরু কুরবানী করা তথা সাধারণভাবে
কোন মুসলমানের ওপর আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের যে সব অধিকার থাকে, সমাজ জীবন ছাড়া সেগুলো আদায়
করার পূর্ণ সুযোগ কোন ক্রমেই পাওয়া যায় না। তা ছাড়া সমাজ ব্যতীত চারিত্রিক বিষয়াবলীও পূর্ণ বিকাশ লাভ
করতে পারে না। যেখানে অসামাজিক জীবন চূড়ান্তরূপ গ্রহণ করে, সেখানে সততা, আমানতদারী, পবিত্রতা,
লজ্জা, ওয়াদাপূরণ, দয়া, মমতা, মঙ্গলাকাঙ্খা, ত্যাগ, তথা মানবিক, ইসলামী ও ঈমানী গুণাবলী এবং চারিত্রিক
আদর্শ কার্যত স্থবির চিন্তায় পরিণত হয়।
তাছাড়া মুসলিমের সাধারণ তামাদ্দুনিক ও সমাজ জীবনের ওপর পরিস্থিতির অত্যন্তগভীর ও অস্বাভাবিক বিরূপ
প্রভাব পড়ে। কেননা, এ অবস্থায় তার জীবনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ইসলাম বিদায় গ্রহণ করে এবং এর সঙ্গে
সেখানে ইসলামের স্থলে কুফরের আগমন ঘটে।
অসামাজিক জীবনের আরেকটি বিপদ হলো এই যে, দীনি অনুভূতি ও ঈমানী চেতনার উপর বাতিল মতবাদ
অনবরত আঘাত হানতে থাকে। এমন কি অবশেষে তাদেরকে সংজ্ঞাহীন করে দেয়। ইসলামী সমাজ জীবন থেকে
বঞ্চিত মুসলমানের উপর বাতিল মতবাদ কর্তৃত্ব লাভের এই সূবর্ণ সুযোগ লাভ করে। আর ক্রমশ ইসলামী
মূল্যবোধ ও চেতনার অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। আর এটা ইসলাম বিহীন জীবনের সবচেয়ে বড় কুফল।
সমাজ জীবন মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য
সমাজবিহীন জীবন দীন ও ঈমানের জন্য বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং মুসলিমকে শয়তানের সহজ শিকারে
পরিণত করে। কিন্তু সমাজবদ্ধ জীবন তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় লাভে সহায়তা দান করে। মহানবী
(সা.) বলেন-
ᘌد الله على الجماعة.
‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হস্ত(সাহায্য) থাকে।’ অর্থাৎ সমাজবদ্ধ জীবনেই মুসলমান সত্যিকারভাবে আল্লাহর
দান ও সাহায্য লাভ করার অধিকারী হয়। এটা এজন্যই যে, যে সমাজ ইসলামের প্রত্যাশিত সামাজিক আদর্শ শূন্য
থাকে সে যদি ভ্রান্তপথ ও কর্মের বিকাশ সাধন করে এবং সৎ চিন্তা ও কর্মকে বিশুষ্ক করার জন্য প্রচেষ্টারত থাকে,
যার ফলে মুসলমানের জন্য সততা ও আল্লাহর পথ কঠিনতর হয়ে পড়ে। তা হলে ইসলামের সামাজিক আদর্শে
পরিপূর্ণ সমাজ অবশ্যই একটি ভিন্নতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, সৎচিন্তা ও কর্মের বিকাশ সাধন করে। বাতিল চিন্তা
ও কর্মের পথ রুদ্ধ করে, সৎপথ অবলম্বনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে। এর ফলে মানুষ স্বেচ্ছাকৃতভাবে
সততা ও দ্বীনদারীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অনুরূপভাবে তার মনোজগতে দীনি অনুভূতি ও ঈমানী
আত্মমর্যাদা বিকাশ লাভ করতে থাকে। সার কথা-সমাজবদ্ধ জীবনের মাধ্যমেই মুসলমান তার প্রভূর আনুগত্যের
ও বন্দেগীর পূর্ণ পরিবেশ পায়। কাজেই বুঝা গেল যে, সঠিক সমাজ জীবনেই দীন ও ঈমানের পরিপূর্ণ বিকাশ
সম্ভব এবং মুসলমানের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ এরই মধ্যে সংরক্ষিত।
সমাজ জীবনের মূলনীতি
ইসলাম আমাদের সামগ্রিক জীবনকে যে সব নিয়ম-পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে, সংক্ষেপে তা নিæে প্রদত্ত হলঃ
 ‘তোমরা সৎ এবং তাকওয়ামূলক কাজে পার¯পরিক সহযোগিতা করো, পাপ ও অন্যায় অনুষ্ঠানে কোন
প্রকার সাহায্য করো না।’ (আল-কুরআন)
 ‘তোমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রæতা সবই আল্লাহর উদ্দেশ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। দান করবে এ জন্য যে, দান করা
আল্লাহ পাক ভালবাসেন। আর কাউকে কিছু দেয়া বন্ধ করলে তা এজন্য করবে যে, তাকে কিছু দেয়া
আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (আল-হাদীস)
 ‘তোমরা এক অতীব উৎকৃষ্ট জাতি। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
পূণ্যের আদেশ করা এবং অন্যায় কাজের নিষেধ করাই তোমাদের জীবনের কাজ।’ (আল-কুরআন)
 ‘পরস্পরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। অপর জনের কাজ-কারবারের খুঁত বের করতে চেষ্টা
করো না। পার¯পরিক হিংসা-বিদ্ধেষ হতে দূরে থাকবে। কারো শত্রæতা করো না। আল্লাহ পাকের
প্রকৃত বান্দা এবং পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থেকো।’ (আল-হাদীস)
 ‘কোন যালিমের সাহায্য করো না।’ (আল-হাদীস)
 ‘অন্যায় কাজে নিজ জাতির সাহায্য করার উদাহরণ এই যে, তোমার উট ক‚পে পড়ে যাচ্ছিল, আর তার
লেজ ধরে তুমিও তার সঙ্গে কূপে পড়ে গেলে।’ (আল-হাদীস)
 ‘তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো অপরের জন্যও ঠিক তাই পছন্দ করবে।’ (আল-হাদীস)
এক কথায় উত্তর দিন
১. সমাজ জীবন কেন প্রয়োজন?
২. কেন সমাজবদ্ধ থাকতে হবে? না থাকলে কী ক্ষতি হয়?
৩. দলবদ্ধ জীবনের গুরুত্বস¤পর্কে তিরমিযী শরীফে উল্লিখিত হাদীসটি বলুন।
৪. ঈমানী জীবনের যথাযথ সংরক্ষণ কীভাবে সম্ভব?
৫. দীন ও ঈমানের নিরাপত্তার জন্য সামাজিক জীবন কী জরুরি?
৬. ইসলামী সমাজ না থাকলে মুসলমানগণ কি কি বিধান পালন করতে পারে না?
৭. সমাজবিহীন জীবনের সবচেয়ে বড় কুফল কী?
৮. কীসের মাধ্যমে মুসলমান তার প্রভুর আনুগত্য ও বন্দেগী পূর্ণ পরিবেশ পায়?
৯. সমাজ জীবনের একটি মূলনীতি কুরআন থেকে উদ্ধৃত করুন।
১০. সমাজ জীবনের মূলনীতি বিষয়ক একটি হাদীস উল্লেখ করুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সমাজ জীবনের গুরুত্ববর্ণনা করূন।
২. ইসলামী সমাজ ছাড়া মুমিনের জীবন কঠিন-বিশ্লেষণ করুন।
৩. সমাজ জীবন মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য-ব্যাখ্যা করুন।
৪. সমাজ জীবনের মূলনীতি বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতিসমূহ লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ইসলামী সমাজের গুরুত্বআলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]