অন্যায়-অনাচার দূর করার জন্য ইসলামের বাস্তব পদক্ষেপগুলো কী কী? উল্লেখ করুন।

অনাচার দূর করার আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ
ইসলাম একটি সামগ্রিক এবং পরিপূর্ণ জীবন দর্শন। এটা মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রের জন্য পথনির্দেশ। আল্লাহ
পাক পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেছেন,
وَ ن َ زَّ ل᠔ نَ ا عَ ل᠐ ᘭ ْكَ ٱل᠔ ِ᜻ تَ ابَ تِ ᙫ ْᘭ َانا᠍ لᡒ ᠑ᝣ لِّ شَ يْ ءٍ وَ هُ دً ى وَ رَ حْ مَ ةً وَ ᚛ُ شْ رَ ىٰ لِ ل᠔ مُ سْ لِ مِ ينَ
‘আমি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদ স্বরূপ তোমার
প্রতি কিতাব নাযিল করেছি।’ (সূরা আন-নাহল : ৮৯)
জীবনের প্রত্যেকটি মৌলিক সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত এবং আলোচনা আল-কুরআনে আছে। আর ইসলাম সুস্পষ্ট
ভাষায় সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার, সমাজবিরোধী কার্যকলাপ ও নৈতিক চরিত্রের বিরুদ্ধে আপোসহীন যুদ্ধ
ঘোষণা করেছে। ইসলামের সেই বিধানসমূহ বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার মাধ্যমে সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়অবিচার ও দুর্নীতি সমূলে উচ্ছেদ করা যায়। নি¤েœঅনাচার দূর করার আত্ম রক্ষামূলক পদক্ষেপ স¤পর্কে ধারণা
দেওয়া হলঅন্যায় কাজের প্রতিরোধ ঃ সমাজে যে কোন অন্যায়-অবিচার ও গর্হিত কাজ হতে দেখলে ইসলাম তাঁর
প্রতিরোধ করতে আদেশ দেয়। মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন-
من ر أى منᜓم منكرا فلᘭغيرە بᘭدە فان لم ᛒستطع فᘘلسانه فإن لم ᛒستطع
فᘘقلᘘه وذلك أضعف الإ ᘌمان.
‘তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় ও গর্হিত কাজ করতে দেখলে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে। এতে সক্ষম না
হলে যেন মুখের দ্বারা প্রতিবিধান করে, তাতেও সক্ষম না হলে যেন অন্তর দ্বারা যেন চেষ্টা করে। আর এটা হল
দুর্বলতম ঈমানের লক্ষণ।’
অন্যায়-অবিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া মুসলিম উম্মাহর উপর অর্পিত এক অপরিহার্য দায়িত্ব। মহান আল্লাহ এ
প্রসঙ্গে ঘোষণা করেন-
ك᠑ نْ تُ مْ خَ يْ رَ أ᠑ مَّ ةٍ أ᠑ خْ ر᠒ جَ تْ لِ لنَّ اس᠒ تَ أ᠔ مُ رُ ونَ ᗷ ِٱل᠔ مَ عْ رُ وفِ و تَ نْ هَ وْ نَ عَ ن᠒ ٱل᠔ مُ نْ ᜻᠐ ر᠒ .
‘তোমরাই উত্তম জাতি- তোমাদেরকে মানবতার কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ
দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)
ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন ঃ এ মহান ও কঠিন দায়িত্ব সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উপর অর্পিত হলেও মহান
আল্লাহ এটা পালন করবার জন্য এমন সহজ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে মুসলিম
উম্মাহ সর্বকালের জন্য কর্তব্য সচেতন থাকতে পারে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ শাশ্বত নীতি নির্ধারণ করে
ঘোষণা দিয়েছেন-
وَ ل᠔ تَ ᜻᠑ نْ مِّ نْ ᠑ᝣ مْ أ᠑ مَّ ةٌ ᘌ َدْ عُ ونَ إِ ل᠐ ى ٱل᠔ خَ يْ ر᠒ وَ ᗫ َأ᠔ مُ رُ ونَ ᗷ ِٱل᠔ مَ عْ رُ وفِ وَ ᗫ َنْ هَ وْ نَ عَ ن᠒ ٱل᠔ مُ نْ ᜻᠐ ر᠒
وَ أ᠑ وْ ل᠐ ᅮ ٰئِ كَ هُ مُ ٱل᠔ مُ فْ لِ حُ ونَ .
‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হওয়া উচিত, যারা লোকদেরকে কল্যাণের দিকে আহŸান করবে আর সৎ
কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর এরাই সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)
অর্থাৎ, মৌলিকভাবে সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করার জন্য প্রয়োজন একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা
করা। এ মূলনীতির আলোকে মহানবী (সা.) স্বয়ং মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন এবং তাঁর
অর্ন্তধানের পর খুলাফা-ই-রাশিদুন তাঁর পদাংক অনুসরণ করে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা কায়েম করে সমাজ থেকে
যাবতীয় অন্যায়-অবিচার দূর করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সদুপদেশ দান ঃ যাবতীয় সামাজিক অনাচার ও অবিচার প্রতিরোধ করে সমাজকে কলুষমুক্ত করার কঠিন দায়িত্ব
পালন করতে হলে প্রথমেই দরকার মানুষকে সদুপদেশ ও সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা
করেন ঃ
ٱدْ عُ إِ لِ ىٰ سَ ᙫ ِᘭلِ رَ ᗖِّ كَ ᗷ ِٱل᠔ حِ ᜓ᠔ مَ ةِ وَ ٱل᠔ مَ وْ عِ ظ᠐ ةِ ٱل᠔ حَ سَ نَ ةِ وَ جَ ادِ ل᠔ هُ م ᗷ ِٱلᡐ تِ ى هِ ىَ
أ᠐ حْ سَ نُ .
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে প্রজ্ঞার সাথে এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আহŸান কর এবং তাদের
সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ (সূরা আন-নাহল : ১২৫)
অন্যায়-অবিচার দূর করার বাস্তব পদক্ষেপ
ইবাদত অনুষ্ঠান চালু ঃ সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়-অবিচার দূর করার জন্য প্রয়োজন একদল ভাল মানুষের।
যারা কোন মানুষের বা শাসকের বা শাসনদন্ডের ভয়ে নয় বরং মহান আল্লাহর ভয় ও ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে
যাবতীয় অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকবে। মহান আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে সে লক্ষ্যে গড়ে তোলার জন্য
তাদের উপর মৌলিক কতগুলো ইবাদত অনুষ্ঠান যেমনÑ সালাত, সাওম, হজ্ব ও যাকাত বাধ্যতামূলক করে
দিয়েছেন। এ ইবাদত অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতপক্ষেই আদর্শ মানুষে পরিণত হয়। যেমনÑ মহান
আল্লাহর ঘোষণাÑ
إِ نَّ ٱلصَّ لو ا᠐ ةَ تَ نْ هَ ىٰ عَ ن᠒ ٱل᠔ فَ حْ شَ ቯءِ وَ ٱل᠔ مُ نْ ᜻᠐ ر᠒ .
‘নিশ্চয় সালাত যাবতীয় অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে।’ (সূরা আল-আনকাবুত : ৪৫)
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ــا ٱلᡐ ــذِ ينَ آمَ نُ ــوا᠔ ك᠑ تِ ــبَ عَ ل᠐ ــᘭ ْᝣ ᠑ مُ ٱلصِّ ــᘭ َامُ ᛿᠐ مَ ــا ك᠑ تِ ــبَ عَ ل᠐ ــى ٱلᡐ ــذِ ينَ مِ ــن قَ ــᘘ ْلِ ᠑ᝣ مْ ل᠐ عَ لᡐ ᠑ᝣ ــمْ
تَ تَّ قُ ونَ
‘হে মুমনিগণ! তোমাদের উপর সাওম ফরয করা হয়েছে যে রূপ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর,
যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।’ (সূরা আল-বাকারা : ১৮৩)
মহানবী (সা.) বলেন, جنة الصوم “সাওম হল ঢাল স্বরূপ”।
কাজেই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ইসলামের ইবাদত অনুষ্ঠান পালন করার মাধ্যমে অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত
থাকার মানসিকতা গড়ে তোলা যায়।
যাবতীয় অন্যায় অবিচারকে অবৈধ ঘোষণা ঃ ইসলাম যাবতীয় সামাজিক অপরাধ, অন্যায়-অবিচারকে অবৈধ
ঘোষণা করে তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আর অন্যায়-অবিচারমূলক কাজ করলে সে জন্য
ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মানুষ যদি সে সকল ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে তবে
কেউই অন্যায়-অবিচারের পথে পা বাড়াতে পারে না। ইসলাম কেবল মানুষকে সদুপদেশ দান করেই ক্ষান্তহয়নি।
বরং যাবতীয় অন্যায়-অবিচারকে চিরতরে নিষিদ্ধ করেছে। যেমনÑ
ক. চুরি-ডাকাতি ঃ চুরি-ডাকাতি এটা সামাজিক ও নৈতিক অপরাধ। ইসলাম এ সকল কাজকে চিরতরে হারাম
ঘোষণা করে এর পার্থিব শাস্তিও ঘোষণা করেছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনÑ
وَ ٱلسَّ ار᠒ قُ وَ ٱلسَّ ار᠒ قَ ةُ فَ ٱقْ طَ عُ وۤ ا᠔ أ᠐ ᘌ ْدِ يَ هُ مَ ا جَ زَ ᕧءً ᗷِمَ ا ك᠐ سَ ᘘ َا نَ ᠐ᝣ اᢻ ًمِّ نَ ٱللᡐ هِ .
‘চোর পুরুষ হোক বা নারী হোক তাদের হাত কেটে দাও। এ হচ্ছে তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর পক্ষ
থেকে আদর্শ দন্ড।’ (সূরা মায়িদা : ৩৮) ডাকাতির শাস্তিআরো ভয়ানক।
খ. অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ করা হারাম ঃ এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর ঘোষণাÑ
ᘌ َا أ᠐ يُّ هَ ا ٱلᡐ ذِ ينَ آمَ نُ وا᠔ ᢻ َتَ أ᠔ ᝏ ل᠑ وۤ ا᠔ أ᠐ مْ وَ ال᠐ ᠑ᝣ مْ بَ ᚏ ْنَ ᠑ᝣ مْ ᗷ ِٱل᠔ ᘘ َاطِ لِ .
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের অর্থ-সম্পদ বাতিল ও অবৈধ পন্থায় ভক্ষণ করো না।’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)
গ. মজুতদারী হারামঃ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মজুতদারী এক মারাত্মক অপরাধ। মজুতদারীর ফলে সমাজে
দুর্ভিক্ষ ও অনাচার দেখা দেয়। এ জন্য ইসলাম মজুতদারীকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করে। আর মজুতদার
ব্যক্তিকে একজন অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছে।
ঘ. সুদ প্রথা হারামঃ সমাজ জীবনে কুসীদ প্রথা বা সুদ একটি গুরুতর অপরাধ। ইহা লোভ-লালসা ও জুলুমের
সমষ্টি। সুদ লোভের পর্যায়ভুক্ত। আর তাই সে চায় সমাজের সকল সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখতে। কারো
উপকারে সুদের টাকা ব্যয়িত হয় না, তাই এটা কৃপণতার নামান্তর। তাই সুদকে ইসলাম চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা
করেছে। মহান আল্লাহ সুদ স¤পর্কে বলেন-
وَ أ᠐ حَ لَّ ٱللᡐ هُ ٱل᠔ بَ يْ عَ وَ حَ رَّ مَ ٱلᖁِّ ᗖ َا.
‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন।’ (সূরা আল বাকারা : ২৭৫)
ঙ. মদ্যপন ও জুয়া নিষিদ্ধ ঃ মদ্যপান ও জুয়া সামাজিক অনাচর ও অপরাধের মধ্যে অন্যতম। মানুষ বহু
প্রাচীনকাল থেকেই এ দু’টো পাপাচার ও পাপানুষ্ঠানে আসক্ত হয়ে আসছে। সমাজের বহু অন্যায়ও এ দ’ুটো
পাপাচার থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্যই ইসলাম এ দ’ুটোকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
চ. যিনা-ব্যভিচার জঘন্য অপরাধ ঃ বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতীত নারী-পুরুষের অবৈধ যৌন সম্পর্ককে যিনা ও
ব্যভিচার বলে। সমাজ জীবনে ইহা একটি কদর্য পাপাচার। এর ন্যায় জঘন্য ঘৃণীত পাপ সমাজে আর নেই। এটা
মানুষকে পশুত্বে পরিণত করে এবং সমাজে আল্লাহর গযব ডেকে আনে। এজন্য মহান আল্লাহ বলেন-
وَ ᢻ َتَ قْ ᖁ َᗖ ُوا᠔ ٱلزِّ نَ ىٰ إِ نَّ هُ ᛿᠐ انَ فَ احِ شَ ةً وَ سَ ቯءَ سَ ᙫ ِᢿᘭ . ً
‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিঃসন্দেহে এটা একটি বড়ই খারাপ কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা
বনী ইসরাঈল : ৩২)
এ কাজে লিপ্ত হওয়া ফৌজদারী অপরাধ। এর শাস্তিও কঠোর। যেমন- মহান আল্লাহর ঘোষণা-
ٱلزَّ انِ ᘭ َةُ وَ ٱلزَّ انِ ى فَ ٱجْ لِ دُ وا᠔᛿ ᠑ لَّ وَ احِ دٍ مِّ نْ هُ مَ ا مِ ئ ةَ جَ ل᠔ دَ ةٍ .
‘ব্যভিচারী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ উভয়ের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা আন-নূর : ২)
ছ. কলহ-বিবাদ ঃ কলহ-বিবাদ, ঝগড়া-ফাসাদ সমাজে অশান্তিডেকে আনে। এজন্য ইসলামে কলহ-বিবাদকে
জঘন্য অপরাধ বলা হয়েছে। যেমন-আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ِـلْ تَ ق ᠔ٱلَ ـنِ م ـدَُّ ش ᠐أُ ـةَ نْ تِ ف ᠔ٱلَ و ‘ফিতনাফাসাদ হত্যা হতেও মারাতœক।’ (সূরা আল-বাকারা : ১৯১) কাজেই কোন অবস্থাতেই সমাজে কলহ-বিবাদ ও
বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। এগুলো কঠোর হস্তেদমন করতে হবে।
জ. রাহাজানি ও চোরাচালানী ঃ সমাজে যে সকল অনাচার ও পাপাচার আছে তন্মধ্যে রাহাজানি, ছিনতাই ও
চোরাচালানী অন্যতম। রাহাজানি চুরি হতে মারাতœক, এটা কবীরাহ গুনাহ। এ সকল পাপাচারের ফলে সমাজ
থেকে শান্তি, নিরাপত্তা চলে যায়। এজন্য ইসলাম এগুলোকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
ঝ. মিথ্যাচার ঃ ‘কিযব’ অর্থ মিথ্যা, প্রকৃত অবস্থা বা বাস্তবতাকে অস্বীকার করা কিংবা সত্য ঘটনাকে বিকৃত
করাকেও কিযব তথা মিথ্যা বলা হয়। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তাকে ‘কাযিব’ তথা মিথ্যাবাদী বলা হয়। এটা
মুনাফিকের অন্যতম লক্ষণ এবং অত্যন্তনিন্দনীয় আচরণ।
কিযব জঘন্য অপরাধ ও সমস্তঅপকর্মের উৎস। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেনیھلك الكذب ‘মিথ্যা মানুষকে ধবংস করে।’
মহানবী (সা.) মিথ্যার ভয়াবহতা বুঝাতে গিয়ে বলেন- ‘যখন কোন বান্দা মিথ্যা বলে, তখন তার দুর্গন্ধের কারণে
ফেরেশতারা পর্যন্ততার থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।’
কাজেই মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম খুবই তাগিদ করেছে।
ঞ. প্রতারণা ঃ অসচ্চরিত্রের মধ্যে প্রতারণা একটি মারাত্মক দোষ। প্রতারণা ইসলামের দৃষ্টিতে মানবতা বিরোধী
অত্যন্তঘৃণিত ও গর্হিত কাজ। এটি একটি সমাজদ্রোহী পাপ। প্রতারণার প্রভাবে সমাজ-সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়।
প্রতারণা মানে ঠকানো বা ফাঁকি, দেওয়া। বিশ্বাস ভঙ্গ করা, ভেজাল দেওয়া, পণ্য দ্রব্যের দোষ গোপন করা, জাল
মুদ্রা চালিয়ে দেওয়া, মাপে-ওযনে কম দেওয়া, বেশী দামের জিনিসের সাথে কম দামের জিনিস মিশিয়ে দেয়া,
গাভী বিক্রির আগে স্তনে দুধ জমা করে বেশী বুঝানো, মিথ্যা শপথ করে অন্যের হক নষ্ট করা-এসবই প্রতারণার
শামিল। ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও মানুষ অন্যান্য আর্থ-সামাজিক কাজেও প্রতারণা করে থাকে।
একটি সুস্থ, সুন্দর, শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনে প্রতারণা বর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, প্রতারণা
ইসলামের দৃষ্টিতে মানবতা বিরোধী গর্হিত কাজ। প্রতারণা মিথ্যারই নামান্তর। মিথ্যা যেমন ঘৃণ্য, প্রতারণাও
তেমনি ঘৃণ্য। এটি সমাজদ্রোহী মহাপাপ। তাই মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন- منـا سᛳفلـ غش من‘যে
ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে-জীবনে যা কিছু করবে তার
মধ্যে ফাঁকি ও প্রতারণার স্থান নেই। ইসলাম সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণকে সমর্থন দেয় না। আল্লাহর ঘোষণা-
وَ ᢻ َتَ ل᠔ ᛞ ِسُ وا᠔ ٱل᠔ حَ قَّ ᗷ ِٱل᠔ ᘘ َاطِ لِ و تَ ᜻᠔ تُ مُ و ا᠔ ٱل᠔ حَ قَّ وَ أ᠐ نْ تُ مْ تَ عْ ل᠐ مُ ونَ .
‘তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিও না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না।’ (সূরা আল-বাকারা : ৪২)
ট. ঘুষ ঃ ঘুষ একটি মারাত্মক সামাজিক অনাচার। ইসলাম এটাকে হারাম ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিক পাওনার
পরেও অসদুপায়ে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাই ঘুষ বা উৎকোচ। কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর উপর অর্পিত কাজের
জন্য নিয়মিত বেতন-ভাতা পাওয়া সত্তে¡ও বাড়তি কিছু গ্রহণ করাকে ঘুষ বা উৎকোচ বলে। ঘুষ দাতা ও ঘুষ
গ্রহীতা উভয়ে দোষী। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন-
الراشى والمرᘻشى ᛿لاهما فى النار.
‘ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহণকারী উভয়ই জাহান্নামী।’ (তাবারানী)
ঠ. ধূমপান ঃ ধূমপান বিষপানের সমতুল্য। এটা ব্যক্তিগত কাজ হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব সমাজের বৃহত্তর
অঙ্গনে সংক্রামিত হয়। তাই ইসলাম ধূমপানকে নিষিদ্ধ করেছে।
ড. মাদকাসক্তি ঃ ইসলাম মানবতার রক্ষাকবচ। ইসলাম মানব স্বভাব বিরুদ্ধ যাবতীয় বিষয়কে অবৈধ ঘোষণা
করেছে। মাদকাসক্তি যা মানব প্রকৃতি ও স্বভাব বিরুদ্ধ; যা মানুষের দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, আর্থ-
সামাজিক ও নৈতিক তথা সর্বদিক দিয়েই অনিবার্য ধবংসকারী- তা থেকে ইসলাম মানুষকে বিরত থাকার আহŸান
জানিয়েছে এবং উহার উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।
ঢ. অসৎ সঙ্গ ঃ কথায় বলে- ‘‘সৎ সঙ্গ স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গ সর্বনাশ।’’ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে চলতে হলে
বহু মানুষের সহযোগিতা ও সাহচর্য প্রয়োজন। মানুষ সঙ্গীহীন, নিঃসঙ্গ একাকী থাকতে পারে না। তার চাই বন্ধু,
সঙ্গী,সহকর্মী, সহযাত্রী, সাথী ও জীবন সঙ্গী। তবে এই বন্ধু ও সঙ্গী-সাথী হতে হবে সৎ মানুষ। বন্ধু ভাল না হলে
জীবন-জগৎ ও পরকাল সবই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই ইসলাম বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।
মহানবী (সা.) বলেন- لهᘭخل دين على المرء ‘মানুষ তার বন্ধুর স্বভাব চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়।’
ণ. সন্ত্রাস ঃ ভীত ও আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে সন্ত্রাস বলে। সন্ত্রাস সমাজের স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে নষ্ট করে
এবং এতে জনজীবন বিপন্ন হয়। সমাজ অশান্তিতে ভবে যায়। ইসলাম সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদকে মোটেই পছন্দ করে
না। ইসলাম সন্ত্রাসকে নিষিদ্ধ করে এবং এর জন্য মারাত্মক শাস্তির ব্যবস্থা করে।
ত. হত্যা ঃ সমাজে যত রকম অনাচার আছে তার মধ্যে হত্যা একটি মারাতœক অপরাধ। মানুষ হত্যা মহাপাপ। ক্ষমার অযোগ্য মহা অপরাধ। ইসলাম অন্যায়ভাবে হত্যা করাকে হারাম ঘোষণা করেছে।
সারকথা
উপরোক্ত যে সকল সামাজিক অনাচার ও অন্যায়ের কথা আলোচিত হল ইসলাম এগুলোকে সমাজ থেকে চিরতরে
উচ্ছেদ করার জন্য কার্যকর ভূমিকা ঘোষণা করেছে। ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা হলেই কেবল এগুলো সমূলে উচ্ছেদ
করা সম্ভব। সুতরাং ইসলামের বিধানসমূহ বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়-অবিচার দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক কথায় উত্তর দিন
১. জীবনের প্রত্যেকটি মৌলিক সমস্যার সমাধানের নির্দেশনা কোথায় দেওয়া হয়েছে?
২. কীভাবে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও দুর্নীতি সমূলে উচ্ছেদ করা যায়?
৩. সমাজে অন্যায়-অনাচার হতে দেখলে ইসলাম এ ব্যাপারে কী বলে?
৪. মৌলিকভাবে সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর করার জন্য প্রয়োজন কী?
৫. মহানবী (সা.) কোন মূলনীতির ভিত্তিতে অন্যায়-অবিচার উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন?
৬. খুলাফায়ে রাশিদুন কীভাবে সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করেছিলেন?
৭. সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করার জন্য প্রথমে কোন কাজ করতে হয়?
৮. অন্যায়-অবিচার দূর করার জন্য ইসলাম কী শুধু উপদেশের উপর নির্ভর করেছে?
৯. চুরি-ডাকাতি কেমন অপরাধ?
১০. মজুদদারীকে ইসলাম কোন দৃষ্টিতে দেখেছে?
১১. সুদ কেমন অপরাধ?
১২. প্রাচীন দুটো অপরাধের উল্লেখ করুন।
১৩. কোন অপরাধ মানুষকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে আনে?
১৪. রাহাজানি কেমন অপরাধ?
১৫. সস্ত্রাসবাদের ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা কী?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. সামাজিক অন্যায়-অনাচার দূর করার জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ কী কী?
২. অন্যায়-অনাচার দূর করার জন্য ইসলামের বাস্তব পদক্ষেপগুলো কী কী? উল্লেখ করুন।
৩. সামাজিক অন্যায়-অনাচারের একটি তালিকা লিখুন।
৪. সামাজিক অনাচার প্রতিরোধের জন্য ইসলামের বিধান কী? উল্লেখ করুন।
৫. অন্যায়-অনাচার দূর করার ক্ষেত্রে ইবাদতের ভ‚মিকা লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. সামাজিক অন্যায় অনাচার প্রতিরোধে ইসলামের বাস্তব পদক্ষেপগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]