. আদর্শ সমাজগঠনে মসজিদের ভ‚মিকা কী? তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

আদর্শ সমাজ গঠনে মসজিদের ভ‚মিকা
মসজিদ ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র এবং একটি পবিত্রতম স্থান। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মসজিদ একাধারে
ইবাদাত-বন্দেগীর স্থান, সামাজিক ও ধর্মীয় মিলনায়তন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিচার, নেতৃত্ব ও আনুগত্যের
সুতিকাগার।
সমাজ জীবনে মসজিদের গুরুত্ব ও ভূমিকা অসামান্য। মসজিদ শুধু ইবাদত উপাসনার স্থান নয় বরং তা
মুসলমানদের যাবতীয় কর্মকান্ডের প্রাণকেন্দ্রও বটে। এটা ইসলামী সমাজের সাংস্কৃতিক ও ঐক্য-সংহতির
কেন্দ্রবিন্দু। মুসলিম মিল্লাতের ঈমান-আকীদা, ইবাদত-বন্দেগী হতে আরম্ভ করে তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানচর্চা,
শাসন-সংস্কার, রাষ্ট্রপরিচালনা, সমরনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বাণিজ্যনীতি, বিচারব্যবস্থা,
চিকিৎসা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের আলোচনা, পর্যালোচনা, গবেষণা, সমস্যা নির্ণয়,
সমাধানচিন্তা, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সঠিক কর্মপন্থা গ্রহণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং কার্যকরী করার কেন্দ্ররূপে এ
মসজিদ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিæে মসজিদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলোÑ
১. আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্র ঃ মহান আল্লাহর ইবাদতের ঘর হল মসজিদ। একাগ্রচিত্তে করুণাময় আল্লাহ
তা’আলার নিকট প্রার্থনা, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকার উপযুক্ত
স্থান। এতে ইবাদত বন্দেগীতে অধিক সওয়াব হাসিল হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেনÑ
وَ أ᠐ نَّ ٱل᠔ مَ سَ اجِ دَ لِ لᡐ هِ فَ ᢿ َتَ دْ عُ وا᠔ مَ عَ ٱللᡐ هِ أ᠐ حَ دا᠍ .
‘এবং নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে অপর কাউকে ডেকো না।’ (সূরা জিন : ১৮)
মহানবী (সা.) বলেন ঃ
خير المجالس المسجد.
‘উৎকৃষ্টতর বসবার স্থান হলো মসজিদ।’ (তাবারানী)
মসজিদ হচ্ছে মুসলিম জাতির ইবাদত এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের স্থান। কাজেই জামাআতে ফরয সালাত
কায়েমের জন্য মসজিদে গমন করা অত্যন্তপ্রশংসনীয় কাজ।
২. সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিলনায়তন হিসেবে ঃ মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনায়তন হলো
মসজিদ। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আমীর-ফকীর, কালো-ধলো নির্বিশেষে সকল
মুসলমান মসজিদে সমবেত হয়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করার সাথে সাথে সেখানে ধর্মীয় আলাপ-আলোচনা,
ওয়াজ-নসীহত এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতির জন্যও মিলিত হয়। মসজিদে ধর্মীয় আইন কানুন,
মাস’আলা-মাসায়িল ও খুতবা শোনার মাধ্যমে মুসলমানগণ জ্ঞানের প্রসারতা লাভ করে থাকে। মসজিদ সাহিত্য-
সংস্কৃতি চর্চারও উপযুক্ত স্থান। এতে যুদ্ধের বিজয়গাঁথা গাওয়া হত। হযরত হাস্সান ইবন সাবিত (রা) মসজিদে
নববীতে কবিতা আবৃত্তি করতেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নিষেধ করেননি। মসজিদ মুসলমানদের সামাজিক
কার্যক্রমের কেন্দ্র। এতে মুসলিমগণ একে অপরের সাথে মিলিত হয়। ফলে মসজিদ মিলন কেন্দ্রের কাজ করে।
সমাজের অন্যান্য মিলন কেন্দ্রের মত মসজিদ একই ভূমিকা পালন করে। মসজিদ ঈদোৎসব এবং বিভিন্ন দীনী ও
ধর্মীয় উৎসব পালন কেন্দ্র হিসেবেও ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানও মসজিদে করা মুস্তাহাব।
৩. ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণে ঃ মসজিদে একটি সমাজের মুসলমানগণ সমবেত হয় কেবল আল্লাহর নির্দেশে। তারা
পরস্পরকে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তোলে। হিংসা-দ্বেষ ভুলে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বসুলভ
আচরণ সৃষ্টিতে মসজিদের ভূমিকা অসাধারণ। মসজিদে এসে একই সাথে সালাত আদায়, আলাপ-পরিচয়, দেখাসাক্ষাৎ ও মত-বিনিময়ের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা এবং ভ্রাতৃত্বভাব জাগ্রত হয়। একে
অপরের বিপদে আপদে ভ্রাতৃত্ব-দরদ নিয়ে এগিয়ে আসে। অতএব, ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের ক্ষেত্রে মসজিদের
ভূমিকা অতুলনীয়।
একটি সমাজের মুসলমানগণ দৈনিক পাঁচবার মসজিদে মিলিত হয়ে আমীর-ফকীর, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু সবাই
এক কাতারে একই ইমামের পেছনে একত্র হয়ে সকল ভেদাভেদ ও বৈষম্য ভুলে গিয়ে অপূর্ব সাম্যের নিদর্শন
স্থাপন করে। কাজেই মানুষের মধ্যে ইসলামী সাম্য-স¤প্রীতি সৃষ্টিতে মসজিদের ভূমিকা অনবদ্য।
মানুষ কর্মব্যস্ততার মধ্যে নিমগ্ন থাকার কারণে অনেক সময় সমাজের মানুষের খোঁজ-খবর নিতে পারে না।
মসজিদে বিভিন্ন শ্রেণীর লোক একত্রে সালাত পড়তে সমবেত হয়। আর এ সুবাদেই পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজখবর, পারস্পরিক পরিচিতি ও জানাজানির সুযোগ পায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও মসজিদের ভূমিকা অনন্য।
মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান পরস্পরের সাথে মিলিত হয়। পরস্পর কথাবার্তা, কুশল বিনিময় ও আদর, শ্রদ্ধা, সম্ভাষণ এবং সালাম বিনিময় হয়। ফলে তাদের পরস্পরের মধ্যে
আন্তরিকতা, ¯েœহ, শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও স¤প্রীতি গড়ে ওঠে। একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। কাজেই
পারস্পরিক সহানুভূতিশীল হবার ব্যাপারেও মসজিদের ভূমিকা যথেষ্ট।
৪. শান্তিও শৃঙ্খলাবোধ জাগরণে ঃ মুসলমানগণ আল্লাহর নির্দেশ পালন করণার্থে মসজিদে সমবেত হয়, তখন
স্বভাবতই সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহর ভয়, ভালবাসা ও সন্তুষ্টি পাবার আশায় সকলে শান্তিশৃঙ্খলা বজায়
রাখে। অত্যন্তনীরবতা সহকারে ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ইমামের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অতীব শৃঙ্খলার
সাথে সালাতের সব করণীয় আদায় করে। সুতরাং শান্তিও শৃঙ্খলাবোধ জাগরণে মসজিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মুসলমানগণ মসজিদে এসে যোগ্যতম ব্যক্তিকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে তাঁরই ইমামতি বা নেতৃত্বে সালাত আদায়
করে। ইমামের নির্দেশ মুতাবিক মুকতাদীরা সালাতের সবগুলো কাজ সমাধা করে। আর এর মাধ্যমে তাদের
নেতার নেতৃত্ব ও আনুগত্যের শিক্ষা লাভ হয়। সুতরাং নেতা নির্বাচন এবং নেতৃত্বের আনুগত্যের প্রতি সচেতনতা
শিক্ষাদানে মসজিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মসজিদ মানুষকে নিয়মানুবর্তিতাও শিক্ষা দেয়। একই নিয়মে দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায়, আযান, ইকামাত
এবং ইমামের পেছনে বাঁধাধরা নিয়মমাফিক সব কিছু করার মাধ্যমে সবাই নিয়মানুবর্তী হয়ে গড়ে ওঠে।
মসজিদ মানুষকে সময়ানুবর্তিতাও শিক্ষা দান করে। নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে
মানুষকে সময়ানুবর্তী ও দায়িত্বজ্ঞান এবং কর্তব্যবোধ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে মসজিদের ভূমিকা বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তা‘আলা সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনÑ
إِ نَّ ٱلصَّ ᢿ َةَ ᛿᠐ انَ تْ عَ ل᠐ ى ٱل᠔ مُ ؤْ مِ نِ ينَ كِ تَ اᗷا᠍ مَّ وْ قُ وتا᠍ .
‘নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ (সূরা আন-নিসা : ১০৩)
এমনিভাবে সালাত আদায় হয়ে গেলে মসজিদে অলসভাবে বসে থাকতে ও উৎসাহিত করা হয়নি বরং পৃথিবীময়
ছড়িয়ে পড়ে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করতে বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহর বাণীÑ
فَ إِ ذَ ا قُ ضِ ᛳَ تِ ٱلصَّ ᢿ َةُ فَ ٱنᙬ َشِ رُ وا᠔ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ وَ ٱبْ تَ غُ وا᠔ مِ ن فَ ضْ لِ ٱللᡐ هِ .
‘যখন সালাত আদায় হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান কর।’ (সূরা
আল-জুমু‘আ : ১০)
৫. পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে ঃ পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে মসজিদের গুরুত্ব সীমাহীন। মসজিদ আল্লাহর ঘর বলে
সেখানে সর্বদা পাক-পবিত্র অবস্থায় প্রবেশ করতে হয়। আল্লাহ পাক পবিত্রতা রক্ষার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ
করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেনÑ
ᘌ َابَ نِ يۤ آدَ مَ خُ ذُ وا᠔ ز᠒ ᗫ َ تَ ᠑ᝣ مْ عِ ندَ ᛿᠑ لِّ مَ سْ جِ دٍ .
‘হে আদম সন্তান ! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক পরিধান করবে।’ (সূরা আল-আ’রাফ : ৩১)
কাজেই আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদ পবিত্রতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত। আর সমাজের সর্বত্র এ পবিত্র ভাবের
বিস্তার ঘটাতে মসজিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৬. জনকল্যাণমূলক কার্যাবলীর ক্ষেত্রে ঃ মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সমাজের সর্ব প্রকার জনকল্যাণমূলক
কার্যাবলী পরিচালনার কেন্দ্রস্থল হচ্ছে মসজিদ। জনহিতকর সকল কাজকর্ম পরামর্শের ভিত্তিতে মসজিদ থেকেই
করা উচিত। মসজিদে নববীতে সর্বপ্রকার কাজই নবী করীম (সা.) করতেন। আল্লাহর এই ঘর কেবল সালাতের
ঘরই নয়। বস্তুত এটা فـلاح বা মানব কল্যাণ কেন্দ্র। তাই মুয়াজ্জিন পাঁচবার মুসলিমদের শুধু সালাতের জন্যই
নয়, ফালাহ বা কল্যাণের জন্যও আল্লাহর ঘরের দিকে আহব্বান করে থাকেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারের পরেই মসজিদ হচ্ছে ইসলামী সমাজের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এটাকে মুসলিম
সমাজের সামষ্টিক কেন্দ্রও বলা যেতে পারে। মসজিদ থেকেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে দিক নির্দেশনা
দিতে হবে। তাই মসজিদকে বহুমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে। মসজিদকে তার আকাঙ্খিত ভূমিকা প্রয়োগ ও
কর্মসূচি পালন থেকে বিরত রাখলে তা প্রাণহীন হয়ে পড়তে বাধ্য। ফলে গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র এর কল্যাণ থেকে
বঞ্চিত হবে।
আল্লাহর ঘর মসজিদ শুধু সালাতের ঘরই নয়। এটা ফালাহ বা মানব কল্যাণ কেন্দ্র। তাই মুয়াজ্জিন পাঁচ বেলা
মুসল্লীদেরকে শুধু সালাতের জন্য নয়, ফালাহ বা কল্যাণের জন্যও আল্লাহর ঘরের দিকে আহŸান করে থাকে।
সমাজ ও জীবনকে মসজিদ মুখি এবং মসজিদ কেন্দ্রিক করে গড়ে তুলতে পারলে সমাজের সব সমস্যার সমাধান
এখান থেকেই হবে। মসজিদ-এর মাধ্যমে সমাজকে প্রাণবন্ত, জীবন্তও কর্মমুখর করে তুলতে হবে। মসজিদ
কেন্দ্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে জীবনের দৈনন্দিন চাহিদা যত বেশি সম্ভব মেটাতে হবে। মসজিদকে শুধু নামায ও
কুরআন তেলাওয়াতের গৃহরূপে সীমিত রাখলে মসজিদ নিস্তেজ হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন শুধু পাঁচ বেলা নামায নয়, প্রতিটি কর্মেই মসজিদের
প্রভাব থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের হাজার চাহিদা আল্লাহর ঘর কেন্দ্রিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে সরবরাহ করা
সম্ভব হলে কৃতজ্ঞতায় মাথা স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহর সামনে সিজদায় নত হবে। তখন আমাদের সকল শোকরমুনাজাত প্রার্থনা হৃদয়ের উৎস মূল হতে উৎসারিত হবে। আর তখনই আল্লাহ তা কবুল করবেন।
৭. শিক্ষা বিস্তারে ঃ মসজিদে পাঠাগার স্থাপন, শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা, সহীহভাবে কুরআন-হাদীস
মোতাবেক সামাজিক সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারে মসজিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিরক্ষরতা দূরীকরণার্থে
মসজিদকে ব্যবহার করা খুবই শ্রেয়। মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ছিল ইসলামের প্রথম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
এ মসজিদ থেকেই প্রখ্যাত উলামায়ে কিরাম, যুগ্রস্রষ্টা মনীষী, ফকীহ, মুহাদ্দিস, বিচারক, রাষ্ট্রনায়ক, ইমাম ও
পথ প্রদর্শকগণ শিক্ষা লাভ করেছেন এবং বিশ্ববাসীকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ
(সা.) ছিলেন মাসজিদে নববীর মহান শিক্ষক ও মানবতার পথ প্রদর্শক। মসজিদে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা প্রসঙ্গে নবী
করীম (সা.) বলেন ঃ
مااجتمع قوم فى بᛳت من بيوت الله يتلون كتاب الله ,يتدارسونه بᚏنه
مالإنزلت عليهم السكينة وغشᚏتهم الرحمة وحفتهم الملائكة وذكرهم الله
في من عندە.
‘কোন স¤প্রদায় যদি আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে কুরআন পাঠ করে ও নিজেরা পরস্পরকে শিক্ষাদান করে, তাহলে
তাদের ওপর শান্তিনাযিল হয় এবং আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে। ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে
এবং মহান আল্লাহ তাঁর নিকট উপস্থিত ফেরেশতাদের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।’ (মুসলিম)
মহানবী (সা.) আরো বলেছেনÑ
من دخل مسجدنا هذا ليتعلم خيرا اولᘭعلمه ᛿انت ᛿المجاهد فى سᘭᙫل
الله و من دخله لᘭغير ذلك ᛿ان ᛿الناظير إلى ما لᛳس له.
‘যে ব্যক্তি আমাদের এ মসজিদে কিছু ভাল জিনিস শেখতে কিংবা শিখাতে আসে সে যেন আল্লাহর পথের
মুজাহিদ। আর যে এটা ব্যতীত মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন এমন জিনিসের দর্শক যা তার জন্য নেই।’
বস্তুত ইসলামী সমজে মসজিদের ভূমিকা হচ্ছে উন্মুক্ত বা গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মত। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, দেশীবিদেশী সকলেই এতে সমানভাবে শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পাবে।
৭. রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ঃ মহানবী (সা.) এর যুগে মসজিদে নববী যেমন সকল রাজনৈতিক
ও সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রভূমি ছিল, তেমনিভাবে মসজিদে সামাজিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক
সমস্যাবলী সম্বন্ধে আলোচনা করে একটি ইসলামী-সুখী ও সমৃদ্ধশালী সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।
বিশ্বের সমগ্র মুসলমান মসজিদে গমন করে আল্লাহর ইবাদত করার সাথে সাথে তাঁদের চরিত্র গঠন, সামাজিক
সংস্কার, জিহাদের প্রেরণা এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসারের অনুপ্রেরণা লাভ করে। সুতরাং আমাদের ব্যক্তিগত,
সামাজিক, রাষ্ট্রীয় তথা রাজনৈতিক জীবনে মসজিদের ভূমিকা অবর্ণনীয়। এ কারণেই মসজিদ নির্মাণে উৎসাহ দান
ও এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনÑ
إِ نَّ مَ ا ᘌ َعْ مُ رُ مَ سَ اجِ دَ ٱللᡐ هِ مَ نْ آمَ نَ ᗷ ِٱللᡐ هِ وَ ٱل᠔ يَ وْ مِ ٱلآخِ ر᠒ و أ᠐ قَ امَ ٱلصَّ ᢿ َةَ وَ آتَ ىٰ
ٱلزَّ ᠐ᜧ واةَ وَ ل᠐ مْ ᘌ َخْ شَ إِ ᢻَّ ٱللᡐ هَ .
‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও আখিরাতে এবং আল্লাহ ব্যতীত
অপর কাউকে ভয় করে না।’ (সূরা আত-তাওবা : ১৮)
৮. মসজিদের সামরিক ভূমিকা ঃ মহানবী (সা.) এর সময়ে মসজিদ ছিল মুসলমানের সামরিক শিক্ষা কেন্দ্রও।
কেননা তখন মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার মতো তেমন কোন স্থান বা সভাস্থল ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.)
মসজিদে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন, সৈন্যদেরকে একত্রে সমবেত করতেন এবং বিভিন্ন অভিযানে পাঠাতেন।
তাছাড়া ইসলাম গ্রহণেচ্ছুদেরকে মসজিদেই স্বাগত জানাতেন। যুদ্ধবন্দীদেরকে মসজিদে রাখতেন। রাসূলুল্লাহ
(সা.) মসজিদের চত্বরে সেনাবাহিনীর সমাবেশ এবং তাদের সেনাপতি মনোনয়ন ও হিদায়াত দিতেন।
সালাতে সারিবদ্ধ হয়ে কাতার সোজা করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়াতে হয়। কাতার সোজা না হলে
গুনাহ হয় এবং সালাত অসম্পূর্ণ থাকে। তাই মহানবী (সা.) বলেছেন ঃ
‘তোমরা কাতার সোজা করে দাঁড়াও, কাতার সোজা করার মাধ্যমে সালাত পরিপূর্ণ হয়।’
এটা মু’মিনের ব্যবহারিক জীবনের এক বিরাট প্রশিক্ষণ।
৯. মসজিদের অর্থনৈতিক ভূমিকা ঃ মহানবী (সা.) মসজিদে নববীতে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের
নির্দেশনা দিতেন। অর্থনৈতিক ব্যাপারেও তিনি নীতিমালা ঘোষণা করেছেন।
মসজিদে নববীতে গণীমতের মাল এবং যাকাত ও সাদকার মাল জমা হত। মসজিদ থেকেই তা প্রাপকদের মাঝে
বিলি-বণ্টন করা হত। এ দৃষ্টিতে মসজিদ যেন ধনাগার ও বিতরণ কেন্দ্র। পরবর্তীকালে প্রত্যেকটি মসজিদেরই
নিজস্ব বিরাট তহবিল গড়ে উঠেছিল। সেই তহবিল থেকে দান ও যাবতীয় সমাজকল্যাণমূলক কাজ করা হত।
সারকথা
মসজিদ ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র। মসজিদকে বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম সমাজ কল্পনাতীত। ইসলামী সমাজ
ব্যবস্থায় মসজিদ একাধারে ইবাদাত গৃহ, শিক্ষাকেন্দ্র, মিলনায়তন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়
কর্মকান্ড পরিচালনা কেন্দ্র। প্রখ্যাত পÐিত আলী তানতাভী মসজিদের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন ঃ ‘মসজিদ কেন্দ্রিক
জীবন হতে বিচ্যুত হয়েই মুসলিমগণ ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন এবং যাবতীয় সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এ
শোচনীয় অবস্থা হতে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ‘মসজিদে নববীর’ মত পুনরায় মসজিদগুলোকে আবাদ
করা। তা হলে একবিংশ শতকেও আমরা সামাজিক সুখ, শান্তিও সমৃদ্ধির মুখ দেখতে পাব।’
একথায় উত্তর দিন
১. ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মসজিদ সাধারণত কী কী ভ‚মিকা পালন করে?
২. ইবাদাত ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের প্রকৃত স্থান কোথায়?
৩. মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কোথায়?
৪. মানুষে মানুষে সাম্য- স¤প্রীতি স্থাপনে মসজিদ কিভাবে ভ‚মিকা পালন করে?
৫. সমাজের নেতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মসজিদের ভ‚মিকা কী?
৬. মসজিদ মানুষকে কিভাবে নিয়মানুবর্তীতা শিক্ষা দেয়?
৭. মসজিদকে কেন গণকল্যাণ কেন্দ্র বলা হয়?
৮. শিক্ষা বিস্তারে মসজিদের কোনও ভ‚মিকা আছে কী?
৯. কোন মসজিদ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রভ‚মি ছিল?
১০. মসজিদের কি কোন অর্থনৈতিক ভ‚মিকা রয়েছে?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আদর্শ সমাজ গঠনে মসজিদের ভ‚মিকা সংক্ষেপে লিখুন।
২. ইসলামী সমাজে আল্লাহর ইবাদত পালনের কেন্দ্র হিসেবে মসজিদের গুরুত্বতুলে ধরুন।
৩. সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিলনায়তন হিসেবে মসজিদের ভ‚মিকা নিরূপন করুন।
৪. ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণে মসজিদের গুরুত্ববর্ণনা করুন।
৫. সামাজিক শান্তিও শৃঙ্খলা বিধানে মসজিদের অবদান বিশ্লেষণ করুন।
৬. জনকল্যাণমূলক কার্যাবলী স¤পাদনে মসজিদের ভ‚মিকার বিবরণ দিন।
৭. শিক্ষা বিস্তারে মসজিদের কি কোন ভ‚মিকা আছে? লিখুন।
৮. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় মসজিদের ভ‚মিকা নিরূপণ করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. আদর্শ সমাজগঠনে মসজিদের ভ‚মিকা কী? তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]