ইসলামী রাষ্ট্রের উপাদানগুলো বিস্তারিত লিখুন।

যে কোন বস্তুর অস্তিত্ব লাভ করার জন্য যেমনিভাবে কতিপয় উপাদানের প্রয়োজন হয় অনুরূপভাবে একটি রাষ্ট্র
গঠিত হওয়ার জন্যও কিছু উপাদানের প্রয়োজন পড়ে।
এ প্রসঙ্গে ড. আবদুল করীম যায়দান বলেন ঃ রাষ্ট্রের যে সংজ্ঞাই দেয়া হোক না কেন একটি রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার
জন্য পাঁচটি বিষয় অপরিাহর্য ঃ
১. সুসংবদ্ধ জনগোষ্ঠী
২. একটি ব্যাপক ব্যবস্থাপনার অনুসরণ
৩. একটি সুনির্দিষ্ট ভ‚খন্ড
৪. সার্বভৌমত্ব
৫. আর তার থাকবে ভাবগত স্বাতন্ত্র্য।
নবী করীম (স) মদীনায় যে রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন তাতে রাষ্ট্রের এ সব কয়টি উপাদানই
যথাযথভাবে বর্তমান ছিল।
মদীনা রাষ্ট্রের নাগরিক বা জনসমাজ ছিল মুহাজির, আনসার ও মদীনার অমুসলিম অধিবাসী ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান।
তারা যে সামগ্রিক ব্যবস্থা মেনে চলতো তা ছিল ইসলামী শরী’আতের আইন বিধান। আর মদীনা ছিল ঐ রাষ্ট্রের
ভ‚-খন্ড। সার্বভৌম ক্ষমতা ছিল একমাত্র আল্লাহর। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নবী করীম (স) জনগণের কল্যাণে
নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। সমাজের বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব ছিল সুস্পষ্ট। নবী করীম (স) রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যে
সব চুক্তি সম্পন্ন করতেন তা পালন ও রক্ষা করে চলা জনগণের সকলের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য ছিল।
জনগোষ্ঠী
সকল রাষ্ট্রের ন্যায় ইসলামী রাষ্ট্রেরও জনগোষ্ঠী থাকা অপরিহার্য উপাদান। জনগোষ্ঠীই যদি না থাকে তবে রাষ্ট্রের
প্রয়োজন না। তাছাড়া জনগোষ্ঠী হতে হবে সুসংবদ্ধ। কোন বিশাল সমবেত জনগোষ্ঠী মিলে রাষ্ট্র হয় না। যেমন
হজ্জের সমবেত জনতা মিলে একটি রাষ্ট্র হয় না। অনুরূপভাবে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে কোন জনগোষ্ঠী
নেই ; তাই সেখানে রাষ্ট্রও নেই, অথচ সেখানে ভূখন্ড আছে। একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কত হবে তার কোন
নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। ইসলামী রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশকে অবশ্যই ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শের অনুসারী
হতে হবে। অমুসলিম জনগণও ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়ম-শৃংখলা মেনে এর নাগরিক হতে পারে।
ভ‚-খন্ড
সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীই রাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট নয়-এর জন প্রয়োজন একটি ভ‚-খন্ড । তবে ভ‚-খন্ড নির্দিষ্ট হতে হবে। যে
কোন স্থানে যে কোন রাষ্ট্র হতে পারে না। আবার ভূ-খন্ড স্থায়ী হতে হবে। যাযাবররা এখানে সেখান ঘুরে বেড়ায়
বলে তাদের রাষ্ট্র ও সরকার নেই। ভূ-খন্ড বলতে স্থল ভাগকে বুঝায়। ভূ-খন্ড স্থল ভাগ হলেও স্থলভাগ সংলগ্ন
নির্দিষ্ট সামুদ্রিক অঞ্চল ও আকাশ সীমা ভূ-খন্ডের অন্তর্ভুক্ত। জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার
নিমিত্তে নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের প্রয়োজন। ভূ-খন্ডের আয়তনের কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। ক্ষুদ্র ও হতে পারে আবার
বিশাল-বি¯তৃতও হতে পারে, তবে ভৌগোলিক সীমারেখা থাকতে হবে।
সরকার
রাষ্ট্র গঠনের তৃতীয় উপাদান হচ্ছে সরকার। সরকারের মাধ্যমেই দেশের জনগণের ইচ্ছা আকাঙক্ষা প্রতিফলিত
হয়। আবার জনগণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দরকার। আর সে প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সরকার।
সরকারই রাষ্ট্রের ভেতরে- বাইরে শান্তি ও শৃংখলা রক্ষা করে। সরকার ব্যতীত আইন শৃংখলা বজায় রাখা সম্ভব
নয়। তাই রাষ্ট্রের জন্য সরকার থাকা অপরিহার্য। একটি নির্দিষ্ট ভ‚-খন্ডে শুধু মুসলমান সংখ্যাধিক্য হলেই
ইসলামী সরকার কায়েম হয় না। সরকার মুসলমানদের দ্বারাই নির্বাচিত ও গঠিত হতে হবে। রাষ্ট্রের সরকার
গঠিত হবে ঈমানদার, সৎ, যোগ্য ও খোদাভীরু লোকদের সমন্বয়ে, যাদের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন
ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সরকার হবে মুসলমানদের জন্য “উলিল আমর (নির্দেশ দাতা)” এ প্রকার সরকারের
আনুগত্য করা জনগণের উপর ফরয। এটি একটি অপরিহার্য ইবাদাতও বটে।
ইসলামী সরকারের আদেশ লংঘন করা কঠিন পাপ এবং এ জন্য পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। গণতান্ত্রিক
শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক অর্থে সরকার বলতে জনগণকে বোঝায়। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকার বলতে
বুঝায় আল্লাহর বিধি-বিধান প্রয়োগ ও বাস্তবায়নকারী একটি সংগঠন এবং আল্লাহর খিলাফত তথা প্রতিনিধিত্বের
প্রতীক।
সার্বভৌমত্ব
সার্বভৌমত্বই রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি। অনৈসলামিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ব্যক্তি, গোত্র, শ্রেণী অথবা বিশেষ জনগোষ্ঠী
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সাধারণ রাষ্ট্রে সার্বভৌম ক্ষমতার দুটো দিক আছে। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ
সার্বভৌমত্ব অপরটি হচ্ছে বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের কারণে রাষ্ট্র তার অধীনস্থ জনগোষ্ঠী ও
সংগঠনগুলোর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের কারণে একটি রাষ্ট্র অন্য সকল রাষ্ট্রের
নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে। অতএব সার্বভৌমত্ব হচ্ছে হস্তান্তরযোগ্যহীন চরম ক্ষমতা।
ইসলামী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের উক্ত ব্যাখ্যা অচল। ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার নিরঙ্কুশ মালিক
হলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা। রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষ আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি মাত্র। মহান আল্লাহর
প্রতিনিধি হিসেবে সরকার ইসলামী আইন-কানুন অনুযায়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করবে। সরকার
স্বয়ংসম্পূর্ণ কোন আইন রচনার অধিকারী নয়। এ মর্মে আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা- নভোমন্ডল ও ভ‚মন্ডলে যা আছে সবই তাঁরই অনুগত। (সূরা আলে-ইমরান : ৮৩)
শাসন ক্ষমতা ও আইন রচনা এবং প্রভুত্বে নিরংকুশ অধিকার একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। কোন ব্যক্তি মানুষ,
পার্লামেন্ট বা কোন রাজশক্তিও এই দিক দিয়ে তাঁর অংশীদার হতে পারে না। অর্থাৎ আল্লাহর এই সৃষ্টি রাজ্যের
একমাত্র মালিক তিনিই, এই ব্যাপারে কেউই তাঁর শরীক নয়।
“তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করেন।’’ (সূরা আল-বুরূজ : ১৬)
তিনি মহান। মহানত্ব তাঁর একটি বিশেষ গুণ। এই গুণ বিশেষভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। বস্তুত তাঁর
সার্বভৌমত্ব সর্বাত্মক ও অবিভাজ্য। এটাই হচ্ছে তাওহীদের মূল কথা। একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে এক এক
ভাগের জন্য এক একজনকে সার্বভৌমত্বের মালিক মনে করা পরিস্কার শিরক। সার্বভৌমত্ব আল্লাহর জন্যই
বিশেষভাবে নির্দিষ্ট -এর অন্তর্নিহিত ভাবধারা প্রকাশের জন্য কুরআন মজীদে বলা হয়েছে-
“অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যাঁর হাতে প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব।” (সূরা ইয়াসীন : ৮৩)
এ থেকেই ইসলামী রাষ্ট্রের ব্যবস্থার সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা মেলে।
ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ‘মালাক‚ত’ এর পরিবর্তে সুলতান (سـلطان (শব্দ ব্যবহার করেছেন। কুরআনের
পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে, আধিপত্য ও সার্বভৌমত্ব। ইমাম রাগিব ইসফাহানী (র) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন-
التمكن من القهر
“প্রবল পরাক্রম আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।”
অন্যত্র লিখেছেন ঃ
هو التصرف بالأمر والنهى فى الجمهور
“জনগণের মধ্যে আদেশ ও নিষেধের বিধান প্রয়োগ করার প্রশাসনিক ক্ষমতা।”
আল্লামা আলুসীর মতে ঃ সর্বাধিক ক্ষমতাশালী সত্তাই সার্বভৌম। আর ‘মালাক‚ত’ অর্থ قـاهر سـلطان^̄) ীয়
প্রবল পরাক্রমে প্রতিষ্ঠিত শক্তি)।
তবে এ প্রসংগে মনে রাখতে হবে, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নবীগণের মাধ্যমে প্রয়োগ হতো। পৃথিবীতে কোন নবী
আর আসবেন না। এ জন্য সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী হচ্ছেন খলীফাগণ অর্থাৎ খিলাফতের অধিকারী
শাসকবর্গ। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ থাকবে। কিন্তু এ বিভাগগুলো আল্লাহর
সার্বভৌমত্ব বহনকারী পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ তথা শরীআতের বাইরে কোন কাজ করতে পারবে না।
তাই খলীফা ও শাসকবর্গ যদি আল্লাহর শরীআতের বিপরীত কোন আইন প্রণয়ন করে বা তাঁর বিপরীত কোনো
অর্ডিনেন্স জারী করে অথবা জাতির প্রতিনিধিরা তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা হলে এ উভয় অবস্থায়ই
সে কাজটি শরীআতের সনদবিহীন বলে গণ্য হবে এবং সার্বভৌমত্বের নির্দিষ্ট সীমালংঘন করার কারণে তা
বাতিল হয়ে যবে। কেননা জাতির প্রতিনিধিদের বা শাসকদের সার্বভৌমত্ব হলো বাস্তবায়নের সার্বভৌমত্ব
(ঊীবপঁঃরড়হম ংড়াবৎবমহঃু), তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হচ্ছে আল্লাহর শরী‘আতকে কার্যকর করার মধ্যে। কোন
নতুন শরীআত বা শরীআত বিরোধী আইন রচনা করে তা জারী করার তার কোন অধিকার নেই। এটাই হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব।
১. ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক
ক. শুধু মুসলিম হতে হবে; খ. শুধু আহলে কিতাব হতে হবে;
গ. মুসলিম-অমুসলিম সবাই হতে পারবে; ঘ. কোনটিই ঠিক নয়।
২.জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজন তাহলক. রাজনৈতিক দল; খ. সরকার;
গ. রাষ্ট্র; ঘ. অর্থনীতিবিদগণ।
৩. ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অধিকারীক. সরকার; খ. পরামর্শ সভা বা মজলিসে শূরা;
গ. সর্বশক্তিমান আল্লাহ; ঘ. জনসাধারণ।
৪. ইসলামী সরকারের কোন আদেশ অমান্য করাক. কঠিন পাপ; খ. বৈধ;
গ. ইচ্ছা করলে অমান্য করা যায়; ঘ. কখনও কখনও অমান্য করা যায়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী রাষ্ট্রের উপাদান ক’য়টি ও কি কি লিখুন।
২. ইসলামী রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীর ব্যাখ্যা দিন।
৩. ইসলামী রাষ্ট্রের ভ‚খন্ডের পরিচয় দিন।
৪. ইসলামী রাষ্ট্রে সরকার বলতে কী বুঝেন, এ সরকারের কাজ কি?
৫. প্রমাণসহ ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বভৌমত্বের ব্যাখ্যা দিন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী রাষ্ট্রের উপাদানগুলো বিস্তারিত লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]