ইসলামী রাষ্ট্রে নির্বাচনের নীতিমালা স¤পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা
ইসলামী রাষ্ট্র পরামর্শ বা শূরা ভিত্তিক রাষ্ট্র। এখানে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, বিবেক-বুদ্ধি স¤পন্ন
মুসলিম নাগরিকই সকল গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় ব্যাপারে রায় জানার অধিকার রাখেন। ইসলামী রাষ্ট্রের
রাষ্ট্রপ্রধানকে সকল প্রকার নীতি-নির্ধারণের ব্যাপারে নাগরিকের সাথে পরামর্শ করা, তাদের রায় ও
মতামত জানা একান্ত অপরিহার্য। তাই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী
রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শদান ও রাষ্ট্রীয় কাজে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্যই মজলিসে শূরা গঠন
করা অত্যাবশ্যক। মজলিসে শূরা রাষ্ট্রের মুসলিম জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত
হবে। তবে কেউ এ পদের জন্য প্রার্থী হতে পারবে না। কেননা ইসলামী গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে
যোগ্যতম ব্যক্তিকে নেতৃত্বে বসাতে হবে। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন পদ্ধতির সরকার রয়েছে, ইসলামী
সরকার পদ্ধতি এ সকল পদ্ধতি থেকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ইসলামী রাজনীতিতে রাষ্ট্রের
সার্বভৌমত্ব ও সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, আর অন্যান্য পদ্ধতিতে সরকার হচেছ
সার্বভৌমত্বের মালিক। এখানেই হল ইসলামী রাজনৈতিক পদ্ধতির সাথে অন্যান্য পদ্ধতির পার্থক্য।
ইসলামী সরকার পদ্ধতি ও সমকালীন অন্যান্য সরকার পদ্ধতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ইসলামী
রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে মুসলমান, পুরুষ, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, বোধশক্তি স¤পন্ন , আমানাতদার, বিচক্ষণ,
প্রজ্ঞাবান ও আল্লাহভীরু, পদলোভী, অর্থলোভী না হওয়া প্রভৃতি গুণের অধিকারী হতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধানকে সকল জনকল্যাণকর কাজ করতে হবে।ইসলামী রাষ্ট্রে নির্বাচন
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী রাষ্ট্র পরামর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র। এখানে প্রত্যেক
বয়স্ক, সুস্থ, বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মুসলিম নাগরিকই সকল গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ব্যাপারে মত ও রায় প্রদানের
অধিকারী। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে সকল প্রকার নীতি-নির্ধারণীর ব্যাপারে নাগরিকের সাথে পরামর্শ করা,
তাদের রায় ও মতামত জানা একান্ত অপরিহার্য। মুসলিম জনগণের মত বা ভোট না নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের
রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কারো অধিকার নেই। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্বাচন অপরিহার্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচকের গুণাবলী
ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচকের গুণাবলী আলোচনার পূর্বে নির্বাচক কারা সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করা যেতে
পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচক দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। যেমন১. প্রত্যক্ষ নির্বাচক
২. পরোক্ষ নির্বাচক
প্রত্যক্ষ নির্বাচক ঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচক হচ্ছেন দেশের জনগণ। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের আত্মপ্রকাশ, তাঁর
নির্দেশিত শরীআত জনগণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু জনগণের উপর এ দায়িত্ব থাকলেও তারা সরাসরি
পালন করতে পারে না। তাই তারা সকল কাজের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য
তারা একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যিনি হন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান। আইন প্রণয়ন করার জন্য তারা
বহুসংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচন করে ; যারা আইন সভার বা মজলিসে শুরার সদস্য নামে পরিচিত। যেহেতু
ইসলামী রাষ্ট্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এ জন্য জনগণ বলতে মুসলিম জনগণকে বুঝায়। তবে
অমুসলিম জনগণ যারা আল্লাহকে স্বীকার করে করে না, তারা সকলেই এ পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া নিয়ামত
ভোগ করে এবং ইসলামও তাদের জান, মাল ও মান-সম্মানের অধিকার স্বীকার করে। ইসলামী চিন্তাবিদদের
অনেকেই সংখ্যালঘু চুক্তিবদ্ধ নাগরিকদের সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক অধিকার স্বীকার করেন। কিন্তু তাদের
রাজনৈতিক অধিকার স্বীকার করেন না। এ জন্য চুক্তিবদ্ধ নাগরিকদের ভোট বা রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে
তাদের অধিকার আছে বলে মনে করেন না। তাদের মতে চুক্তিবদ্ধ নাগরিক রাজনৈতিক ভাবে মুসলমানদের
অধীন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুরোপুরি ভোগ করলেও রাজনৈতিক অধিকার না
থাকার কারণে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য। কোন কোন ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, অমুসলিম
নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক অধিকারও স্বীকৃত। তারা বলেন, মদীনার-সনদের ভিত্তিতে
মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে একটি জাতি বা উম্মাহ গঠিত হয়। মদীনা-সনদে মুহাজির, আনসার, পৌত্তলিক ও
ইয়াহূদী সমন্বয়ে একটি উম্মাহ গঠিত হলেও মদীনার নগর রাষ্ট্র ছিল বিশ্বনবী (সা)-এর নেতৃত্বে একটি ইসলামী
রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রে ইসলামী আইনেরই প্রাধান্য ছিল। এ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মদীনার ১২টি গোত্র বারজন প্রতিনিধি
রাস‚লুল্লাহ (সা)-এর সমীপে প্রেরণ করে বলে জানা যায়। অথচ এ বারটি গোত্রের অনেকগুলোই ইয়াহূদী গোত্র।
এদ্বারা এটি প্রতীয়মান হয় যে, অমুসলিম নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার ইসলাম স্বীকার করে। অতএব
ইসলামী আইনের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রেখেও অমুসলিম নাগরিকদেরকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়া যেতে পারে।
মোটকথা জনগণ আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী পরামর্শের জন্য মজলিসের শূরার সদস্যগণকে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন
করতে পারে। তবে খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে মজলিসে শূরার সদস্যগণ জনগণ দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হননি
বরং খলীফা জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে মজলিসে শূরার গঠন করেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ)-
এর যুগে মজলিস তিন ধরনের ছিল।
১. মজলিসে শূরা (পরামর্শ সভা);
২. মজলিসে আম (সাধারণ সভা);
৩. মজলিসে খাস (বিশেষ সভা)।
পরোক্ষ নির্বাচক ঃ পরোক্ষ নির্বাচক হচ্ছে তিন শ্রেণীর লোক যা নি¤œরূপক. রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান,
খ. মজলিসে শূরা,
গ. আহলুল-হাল্লিফ ওয়াল-আকদ (والعقد الحل أهل (
নির্বাচকমণ্ডলীর গুণাবলী
ক. রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের গুণাবলী ঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের গুণাবলী সামনে আলোচিত হবে।
খ. মজলিসে শূরার সদস্যদের গুণাবলী ঃ মজলিসে শূরার সদস্যদের গুণাবলী সামনে আলোচিত হবে।
মজলিসে শূরা বা পরামর্শ সভা সদস্যদের গুণাবলী নি¤œরূপ ঃ
১. তাঁরা ইসলামী রাষ্ট্রর নাগরিক হবেন।
২. তাঁরা প্রাপ্ত বয়স্ক ও বিবেক বৃদ্ধি স¤পন্ন হবেন (পাগল হবেন না)।
৩. তাঁরা আদালত কর্তৃক নাগরিক হিসেবে অযোগ্য ঘোষিত হবেন না।
৪. তাঁরা আদালত কর্তৃক মজলিসে শূরার সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষিত হবেন না।
৫. তাঁদের বিরুদ্ধে ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধিতা, আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধিতা, ইসলামী ধ্যান-ধারণা বিরোধী
সমালোচনা, প্রচার অভিযান চালানো এবং নাশকতাম‚লক কাজে লিপ্ত থাকার প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য অভিযোগ থাকবে না।
আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ-এর গুণাবলী ঃ
এদেরকে আহলুল ইমামাহ (الإمامة أهل (বা আহলুল ইখতিয়ার (الاختيار اهل (ও বলা যায়। أهل
والعقد الحل) আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ) এর অর্থ হচ্ছে ভাংগা গড়ার দল। এর অপর এক অর্থ হচ্ছে,
সুশিক্ষিত ও নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পন্ন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গ। ব্যবহারিক দিক দিয়ে এর অর্থ হচ্ছে, এমন এক শ্রেণীর
ব্যক্তি যারা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং য^াঁদেরকে সর্বসাধারণ অনুসরণ করে।
ইসলামী চিন্তাবিদগণের মতে রাষ্ট্রপ্রধানের পরোক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচনী বোর্ড হিসেবে আহলুল-হাল্লি
ওয়াল-আকদ (والعقد الحل أهل (এর উৎপত্তি। এরা এমন একটি দল যাদের জনগণের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব
থাকতে হবে। এ দলের যোগ্যতা সম্পর্কে আল্লামা মাওয়ার্দীর অনুসরণে ডঃ আব্দুল করিম যায়দান তিনটি গুণের
কথা উল্লেখ করেছেন যা নি¤œরূপ১. পূর্ণাঙ্গ আদালত স¤পন্ন তথা ন্যায়বান ও সত্যবাদী এবং বিশ্বস্ত হওয়া।
২. শরীয়তের নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে জাতির মাঝে কোন লোকটি রাষ্ট্রপ্রধান বা সমাজের ইমাম হওয়ার যোগ্য
তা জানা ও বুঝার জ্ঞান ও ইলম থাকা ।
৩. সার্বিক জনকল্যাণের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার অধিক যোগ্য ব্যক্তি চেনার ও বাছাই করার মত বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্বা থাকা।
আল্লামা রশীদ রেজা তাফছীরুল মানারে আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ (والعقد الحل أهل (এর গুণাবলী সম্পর্কে লিখেছেন-
والحكماء والعلماء ورؤساء الجند و سائر الرؤساء والزعماء الذين يرجع اليهم
الناس فى الحاجات والمصالح العامة
আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ হল সেসব, শাসকবর্গ, বিজ্ঞজন, সেনাবাহিনী প্রধানগণ এবং নেতৃবর্গ যাদের কাছে
জনসাধারণ বিভিন্ন প্রয়োজনে ও সমস্যায়, দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে এবং জনকল্যাণমূলক কাজে আসা-যাওয়া
করেন। এদেরকে ঊলুল আমরও বলে।
আল্লামা রশীদ রেজার উক্তি থেকে বুঝা যায়, আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ নন
বরং তাঁরা হলেন দেশের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ।
ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন
মাওলানা আব্দুর রহীম-এর মতে, ভোটাধিকার লাভ হয় ইসলামী চেতনার ভিত্তিতে। এ ছাড়া ইসলামী রাষ্ট্রে ভোটাধিকার লাভ করা যাবে না।
নির্বাচনের নীতি
ইসলামের দৃষ্টিতে কেউ নিজে কোন পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হতে পারবে না। সুন্নাহ অনুসারে কোন ব্যক্তি
কোন পদ প্রার্থী হতে পারবে না, যে পদপ্রার্থী হবে সে তার অযোগ্যতা প্রমাণ করবে। হযরত আবু মূসা
আশআরী (রাঃ)-এর সাথে দু’জন সাহাবী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে পদ প্রার্থনা
করলেন। তিনি তখন দাঁত পরিষ্কার করছিলেন। একথা শুনে তাঁর দাঁত মাজা থেমে গেল। তিনি হযরত আবু
মূসা আশআরী (রাঃ)-কে ঐ দুই ব্যক্তির সঙ্গে দেখে ক্রোধ প্রকাশ করলেন। হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ)
বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন, এ লোক দুটোর
মনের খবর আমি জানতাম না। তারা যে পদপ্রার্থী তাও জানতাম না। বিশ্বনবী (সাঃ) বললেন-
واالله لا نولى على هذا العمل أحدا سأله و لا أحدا حرص عليه
“আল্লাহর শপথ, এই কাজে আমি এমন কাউকে নিযুক্ত করব না যে তা প্রার্থনা করে এবং তাকেও না যে এজন্য
আগ্রহী হয় ও লোভ করে।’’
এজন্য ইসলামী রাষ্ট্রের নির্বাচনে কেউ প্রার্থী হতে পারে না। নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নিজের যোগ্যতা প্রদর্শন,
পোস্টার, হ্যান্ডবিল ও প্রচার পত্র ছাপানো এবং তা দেয়ালে দেয়ালে লাগানো তো প্রশ্নই উঠে না। মিথ্যা
প্রোপাগান্ডা, বিরোধী প্রার্থীর চরিত্র হরণ, তার অযোগ্যতা প্রমাণ করা ইত্যাদি কাজ ইসলামী দৃষ্টিতে অতি
জঘন্য। ভোট আদায়ের জন্য অর্থ বন্টন, ওয়াদা করা ইত্যাদি ইসলাম বৈধ মনে করে না।
তাহলে নির্বাচন কিভাবে স¤পন্ন হবে ? এ প্রশ্নের জওয়াবে মাওলানা আব্দুর রহীম (র) বলেন, “ইসলামী আদর্শ
অনুযায়ী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কার্য সম্পন্ন হবে সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে। নির্বাচন গ্রহণের সহজ এবং
কার্যকর পন্থা এ হতে পারে যে, নির্দিষ্ট তারিখে ভোট কেন্দ্রে প্রত্যেক ভোটদাতা উপস্থিত হয়ে নিজ নিজ
এলাকার লোকদের মধ্য হতে সবচেয়ে খাঁটি ও আদর্শবাদী ব্যক্তিকে নিজের ইচ্ছা ও বিবেচনা অনুসারে ভোট
দিয়ে আসবে।”
কেউ প্রার্থী না হলে নির্বাচন কিভাবে হবে এ প্রশ্নে ডঃ আব্দুল করিম যায়দানের মতামত উল্লেখযোগ্য। তাঁর মতে
নিজে প্রার্থী হওয়া শরীঅতে অবৈধ এ কথা ঠিক। একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবেই তা অনুকরণ করা যায়। তবে
যদি তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয় এবং শরীঅতের দৃষ্টিতে তা অকল্যাণকর মনে না হয়, তবে তা আর অবৈধ হতে
পারে না। জনসাধারণকে ভালভাবে জানতে হবে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি কে। তা না জানলে সে নির্বাচন করতে
পারে না। কিন্তু তার পক্ষে এরূপ জানা সম্ভব নাও হতে পারে। আবার জানা থাকলে এবং ভোট দিয়ে নির্বাচিত
করলে নির্বাচিত ব্যক্তি কাজ করতে অস্বীকারও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন অনর্থক হবে, এমতাবস্থায়
কোন পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নিজেকে জনগণের সামনে পেশ করা এবং কি ধরনের লোককে নির্বাচিত
করতে হবে তা বুঝিয়ে দেয়া দরকার। এ প্রসঙ্গে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বাণী স্মরণ করা যেতে পারে।
“আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর দায়িত্ব দিন। আমি উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ।” (সূরা ইউসুফ : ৫৫)
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মনে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লোভ ছিল এ কথা কেউ বলতে পারে না। তিনি শুধু অবস্থার প্রেক্ষিতে কথাটা বলেছিলেন।
যা হোক বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায়ও নিজে ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হওয়ার দরকার করে না ; দলীয় ব্যবস্থায় নিজে
প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজন নেই। দলই সঠিক আদর্শবাদী ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে জনগণের সম্মুখে দাঁড়
করাবে। এতে পদপ্রার্থী হওয়ার লোভ সংক্রান্ত সুন্নাহর নিষেধাজ্ঞা এড়ান যাবে। জনগণ প্রার্থীদের সম্পর্কে
অবহিত হয়ে যোগ্যতম প্রার্থীকে ভোট দেবে।
ডঃ আবদুল করিম যায়দান বলেন: “বর্তমান সময়ে যেমন প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজন তীব্র হয়ে দেখা দিতে
পারে, তেমনি নিছক ব্যক্তিগত প্রার্থী হওয়ার পথ থেকে দূরে থাকাও সম্ভব হতে পরে। তার উপায় হল দলীয়
ভিত্তিতে প্রার্থী দাঁড় করানোর নীতি অনুসরণ। এতে করে যেমন ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে রাসূলে
করীম (সাঃ)-এর নিষেধকে মান্য করা যায়, তেমনি হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর আদর্শও অনুসৃত হতে পারে।”
ত্রিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা নির্বাচন
আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে, হযরত ওমর (রাঃ)-এর আমলে মজলিসে শূরা, মজলিসে আম এবং
মজলিসে খাস নামে তিনটি পরামর্শ সভা ছিল। বর্তমান যুগেও একটি ইসলামী রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা
এবং একটি মন্ত্রী পরিষদ থাকতে পারে। দ্বিকক্ষের এক কক্ষ হবে মজলিসে শূরা, অপর কক্ষ হবে মজলিসে
আম। এছাড়া সরকার প্রধানের একটি মন্ত্রী সভা থাকবে, যাকে মজলিসে খাস বলা যায়।
মজলিসে শূরার নির্বাচন
মজলিসে শূরার সদস্যগণের গুণাবলীর বিষয় পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। নির্ধারিত গুণবিশিষ্ট দলীয়
মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদেরকে মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটারগণ নির্বাচিত করবেন। বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীর পদে
যোগ্যতার বিষয়বস্তু জনগণকে জানিয়ে দেয়া, এর বেশী কিছু নয়। জনগণ ইচ্ছা মাফিক যে কোন প্রার্থীকে ভোট
দেবে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, মজলিসে শূরার সদস্যদের জন্য যে বিশেষ গুণাবলীর কথা বিশ্ব নবী (স)
বলেছেন এসব গুণাবলী বর্তমান নেই এমন কোন প্রার্থীকে কোন দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে পারবে না এবং
জনগণও এমন প্রার্থীকে ভোট দেবে না। মজলিসে শূরার নির্বাচনে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা থাকবে। মজলিসে আম-এর নির্বাচন
মজলিসে আম-এর নির্বাচন ইসলামী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং এই মজলিসে আমের
সদস্য মুসলিম অমুসলিম সকলের মধ্য থেকে হবে। এখানেও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা থাকবে। তবে
প্রয়োজনবোধে যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থাও চালু করা যায়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্তে¡ও মজলিসে আম-এর
নির্বাচনে যদি মুসলিমদের সংখ্যা লঘিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে যুক্ত নির্বাচনের পরিবর্তে পৃথক নির্বাচন
ব্যবস্থাই যুক্তিযুক্ত। অমুসলিমগণ ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করবে এবং শরীআত বিরোধী কোন
কথা বলবে না। মজলিসে আমে শরীআত সংক্রান্ত কোন আইন প্রণীত হবে না বা তা আলোচনায়ও আসবে না।
এ ধরনের আইন প্রণয়নের অধিকার মজলিসে শূরারই থাকবে। তবে প্রণীত আইনে কারও কোন অধিকারে
হস্তক্ষেপ করা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য মজলিসে শূরার খসড়া বিলটি মতামতের জন্য মজলিসে আমে প্রেরণ
করা যাবে।
শরীআতের সাথে প্রত্যক্ষ স¤পর্ক নেই এমন আইন প্রণয়ন এবং এ বিষয় পরামর্শদানই হবে মজলিসে খাসের
দায়িত্ব। প্রয়োজন বোধে মজলিসে আম থেকে বা বাইরের থেকে মজলিসে খাসের সদস্য নির্বাচন করা যায়।
মজলিসে খাসের সদস্যগণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন। তাদের পরামর্শের জন্য মজলিসে
শূরা সরকার প্রধানের কাছে দায়ী থাকবেন।
ব্যবহারিক অর্থে রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসন কর্তৃত্ব যার হাতে ন্যস্ত তিনিই সরকার প্রধান। প্রকৃত শাসন ক্ষমতা কার
হাতে ন্যস্ত করা হবে এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির কথা উল্লেখ করা গেলেও প্রধানমন্ত্রী যে এ ক্ষমতা লাভ করতে পারেন না এরূপ কথা ইসলামে নেই।
এককথায় উত্তর দিন১. প্রত্যক্ষ নির্বাচক কারা?
২. রাষ্ট্র প্রধান, মজলিশে শূরা অথবা আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ কোন প্রকার নির্বাচক?
৩. মদীনা সনদের ভিত্তিতে কি গঠিত হয়?
৪. মদীনার নগর রাষ্ট্রটি কোন ধরনের রাষ্ট্র ছিল?
৫. ইসলামী রাষ্ট্রে যারা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচচ অধিকারী এবং যাদেরকে অন্য লোকেরা অনুসরণ
করে তারা কারা?
৬. ‘‘আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর দায়িত্ব দিন’’- এ উক্তিটি কার?
৭. কার আমলে মজলিশে শূরা, মজলিসে আম ও মজলিসে খাস নামে তিনটি পরামর্শ সভা ছিল?
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ নির্বাচক স¤পর্কে লিখুন।
২. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরোক্ষ নির্বাচক স¤পর্কে লিখুন।
৩. মজলিসের শূরার সদস্যদের গুণাবলী উল্লেখ করুন।
৪. আহলুল-হাল্লি ওয়াল-আকদ-এর পরিচয় দিন এবং তাদের গুণাবলী লিখুন।
বিশদ উত্তর প্রশ্ন
১. ইসলামী রাষ্ট্রে নির্বাচনের নীতিমালা স¤পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]