মজলিসে শূরা কী ? মজলিসে শূরার গঠন ও কার্যাবলী সংসদীয় গণতন্ত্র ও মজলিসে শূরার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো তুলে ধরুন।

মজলিসে শূরার পরিচয়
মজলিস মানে সভা, সংস্থা আর ‘শূরা’ মানে পরামর্শ। সুতরাং মজলিসে শূরা মানে পরামর্শ সভা বা পার্লামেন্ট।
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় মজলিসে শূরা একটি একাত্মক পার্লামেন্ট (টহরঃধৎু চধৎষরধসবহঃ)। ইসলামী
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মজলিসে শূরা এমন একটি নির্বাচিত সংস্থার নাম যে সংস্থার সদস্যগণ রাষ্ট্র পরিচালনার
যাবতীয় কর্মকান্ডে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেন। মজলিসে শূরা নির্বাচিত হয় রাষ্ট্রের মুসলিম জনগণের
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে। অর্থাৎ ইসলামী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত মুসলিম জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ,
সর্বোত্তম, জ্ঞানী-গুণী ও ইসলামী রাজনীতিতে সুবিজ্ঞ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা পরামর্শ সভার নাম মজলিসে
শূরা। খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে মজলিসে শূরার সদস্যরা খলীফা তথা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক মনোনীত ছিলেন।
তবে সর্বসাধারণের কাছে তাঁরা গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।
এ সংস্থার প্রত্যেক সদস্যই স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকারী এবং ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারী
ছিলেন। এ ধরনের মজলিসে শূরায় কোন দলাদলি থাকতে পারে না। মেজরিটি ও মাইনরিটি তথা সরকারি দল
ও বিরোধী দলের কোন সুযোগ এতে নেই।
মজলিসে শূরার সদস্যগণ ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান সামনে রেখে সকল ব্যাপারে নিজ নিজ স্বাধীন মতামত
প্রকাশ করবে। সঠিক মতের সমর্থন ও পক্ষ অবলম্বন এবং ভুল মতের প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করাই হল প্রত্যেক
সদস্যের জাতীয় ও ধর্মীয় কর্তব্য।
ইসলামী গণতন্ত্রে শূরার গঠন
ইসলামের প্রথম যুগে মজলিসে শূরার সদস্যগণ খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক মনোনীত হতেন। তবে মজলিসে
শূরা জনগণের অবাধ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেও গঠিত হতে পারে। সদস্যগণকে অধিকাংশ নারী-পুরুষের
রায়ের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। সবচেয়ে খোদাভীরু, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে হবে।
পদলোভী ও অযোগ্যদেরকে এ পদে নির্বাচন করা যাবে না।
ইসলামী গণতন্ত্রে শূরার ধর্মীয় মর্যাদা
ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শদান ও রাষ্ট্রীয় কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্যই মজলিসে শূরা গঠন
করা ইসলামী রাজনীতির একটি অপরিহার্য কাজ। এ মর্মে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন ঃ “তাদের সকল
কাজ পরামর্শভিত্তিক পরিচালিত হয়।’’ (সূরা আশ-শূরা-৩৮)
তিনি আরও বলেন ঃ “তুমি কাজে-কর্মে তাদের পরামর্শ কর।” (সূরা-আল-ইমরান-১৫৯)
এজন্যই ইসলামী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মজলিসে শূরা গঠন অপরিহার্য করা হয়েছে। কেননা এটাই হচ্ছে ইসলামী
গণতন্ত্রের ভিত্তি।
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। রাষ্ট্র ও সরকার এ জীবন ব্যবস্থার দু’টি অবিচ্ছেদ্য
অংশ। ইসলামী রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মজলিসে শূরা। আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রের সাথে এর
রয়েছে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যমূলক সম্পর্ক। নি¤েœ এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো -
সংসদীয় গণতন্ত্র কী
সংসদীয় গণতন্ত্র হলো জবাবদিহিমূলক সরকার। যেখানে শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিসভা শাসন সংক্রান্ত কর্মকান্ডের
জন্য সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। এ ধরনের সরকারে একজন রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন।
প্রকৃতপক্ষে শাসন ক্ষমতা থাকে মন্ত্রী পরিষদের ওপর। মন্ত্রী পরিষদের একজন প্রধানমন্ত্রী থাকেন। তাকে
সরকার প্রধান বলা হয়।
মজলিসে শূরা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা
বর্তমান সংসদীয় গণতন্ত্র ও মজলিসে শূরার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের সম্পর্ক বিদ্যমান। কিছু কিছু বিষয়ে
সংসদীয় গণতন্ত্রের সাথে মজলিসে শূরার মিল রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মজলিসে শূরার সাথে সংসদীয়
গণতন্ত্রের নীতিগত পার্থক্য রয়েছে। নি¤েœ মজলিসে শূরা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা
করা হলো।
সাদৃশ্যমূলক সম্পর্ক
১. সরকার গঠন পদ্ধতি ঃ সংসদীয় পদ্ধতিতে আইনসভার সদস্যরা মন্ত্রিসভার সদস্য হন, যাঁদেরকে নিয়ে
সরকার গঠিত হয়। শূরাভিত্তিক সরকারেও সাধারণত শূরার সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।
২. আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক ঃ আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রে আইন বিভাগ ও শাসন
বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত। শূরাভিত্তিক সরকারেও মজলিসে শূরা এবং শাসন বিভাগের মধ্যে
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
খিলাফতে রাশেদার সময়ে মজলিসে শূরা ও শাসন বিভাগের মধ্যে কোন রূপ মেরুকরণ ছিল না। মজলিসে
শূরার সদস্যরাই শাসন বিভাগের সদস্য হতে পারতেন।
৩. জবাবদিহিতা ঃ সংসদীয় পদ্ধতিতে মন্ত্রি সভার সদস্যগণ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে সংসদের নিকট
জবাবদিহি করতে বাধ্য। শূরাভিত্তিক সরকারেও রাষ্ট্রপ্রধান প্রত্যক্ষভাবে শূরার নিকট এবং পরোক্ষভাবে
জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন।
৪. পরামর্শভিত্তিক শাসন কার্যক্রম ঃ আধুনিক সংসদীয় সরকারকে পরামর্শভিত্তিক সরকার বলা হয়। অর্থাৎ
সরকার পরামর্শের মাধ্যমে শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। শূরাভিত্তিক সরকারেও রাষ্ট্রপ্রধান মজলিসে
শূরার সাথে পরামর্শ করে শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
৫. রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন ঃ সংসদীয় গণতন্ত্রে সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন। শূরাভিত্তিক সরকারেও
মজলিসে শূরার সদস্যদের পরামর্শে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন।
বৈসাদৃশ্যের সম্পর্ক
সার্বভৌম ক্ষমতা
আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে শূরাভিত্তিক
সরকারে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকেই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে গণ্য করা হয়।
“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও আদেশ তারই”। (সূরা আল-আ’রাফ : ৫৪)
নির্বাহী ক্ষমতা
সংসদীয় গণতন্ত্রে নামেমাত্র একজন রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। যিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনরূপ দায়-দায়িত্ব বহন করেন
না ; বরং প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হন। কিন্তু শূরাভিত্তিক সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাহী ক্ষমতার
অধিকারী।
বিরোধী দল
সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের অস্তিত্ব আছে। পক্ষান্তরে মজলিসে শূরা একটি একাত্মক পার্লামেন্ট (টহরঃধৎু
চধৎষরধসবহঃ), যার ফলে এখানে সরকারি দল-বিরোধী দল অথবা মেজরিটি মাইনরিটির কোন অস্তিত্ব নেই।
জবাবদিহিতা
সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে মন্ত্রীগণ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন।
পক্ষান্তরে শূরাভিত্তিক সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান সমগ্র জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন।
এসএসএইচএল বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
পৃষ্ঠা-২৯
আইন প্রণয়ন ঃ
সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সদস্যগণ আইন প্রণয়নে ভূমিকা পালন করেন। পক্ষান্তরে শূরাভিত্তিক সরকারে আইন
প্রণয়নের দায়িত্ব মজলিসে শূরার নয়। বরং আইন প্রণীত হয় কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী শরীআত অনুযায়ী।
“আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয়না, তারাই কাফির”। (সূরা আল-মায়েদা : ৪৪)
সারকথা ঃ ইসলামী গণতন্ত্রে মজলিসে শূরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এর কোন সদস্যই বংশীয় আভিজাত্য বা
আর্থিক প্রাচুয্যের কারণে নির্বাচিত হন না। এ শূরার প্রত্যেক সদস্যই স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকারী। এ
শূরায় কোন দলাদলি, মেজরিটি ও মাইনরিটির দোহাই দিয়ে কোন আইন পাস হয় না। সদস্যগণ ইসলামের
বিধান সামনে রেখে স্বাধীনভাবে মতামত পেশ করবেন। সত্য হলে মানবেন, অসত্য হলে প্রতিবাদ করবেন।
সরকার পরিচালনায় এ শূরার ভূমিকা খুবই ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
বহু নৈর্বাচনিক উত্তর-প্রশ্ন
১. মজলিসে শূরা অর্থ হচেছক. ইসলামী গণতন্ত্র; খ. সংসদীয় গণতন্ত্রের অনুরূপ;
গ. পরামর্শ সভা; ঘ. উচ্চ আদালত।
২. মজলিসে শূরা গঠিত হয়ক. জনগণের ভোটের মাধ্যমে; খ. রাজনৈতিকভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে;
গ. রাষ্ট্রের মুসলিম জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে; ঘ. জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধির
মতামতের মাধ্যমে।
৩. মজলিসে শূরা কয়ভাগে বিভক্ত?
ক. তিনভাগে; খ. দুইভাগে;
গ. চারভাগে; ঘ. পাঁচভাগে।
৪. শূরা ভিত্তিক সরকারে জবাবদিহিত কার?
ক. প্রেসিডেন্টের; খ. প্রধানমন্ত্রীর;
গ. মন্ত্রীপরিষদের; ঘ. শূরার সদস্যদের।
৫. ইসলামী রাষ্ট্রে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেনক. মজলিসে শূরা; খ. পার্লামেন্ট;
গ. প্রধানমন্ত্রী; ঘ. আল্লাহ তাআলা
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মজলিসে শূরা বলতে কী বুঝায়? লিখুন।
২. মজলিসে শূরার গঠন প্রণালী আলোচনা করুন।
৩. সংসদীয় গণতন্ত্র কী? লিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. মজলিসে শূরা কী ? মজলিসে শূরার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করুন।
২. সংসদীয় গণতন্ত্র ও মজলিসে শূরার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো তুলে ধরুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]