ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি ও আধুনিক রাজনৈতিক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।

ইসলাম একটি চিরন্তন শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে রয়েছে মানব জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক,
সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সকল সমস্যার সুষ্ঠ‚ সমাধান। ইসলাম মানুষের জীবনযাত্রার
বিভিন্ন দিক পরিচালনার যে সুন্দরতম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, তা অনন্য ও সর্বজনীন। এ সকল পদ্ধতির মধ্যে
নিহিত রয়েছে মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। নি¤েœ ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি ও আধুনিক
রাজনৈতিক পদ্ধতির সাথে তার তুলনামূলক আলোচনা করা হলো।
ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি
ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি একটি অনন্য রাজনৈতিক পদ্ধতি। সমগ্র বিশ্বে বহুবিধ রাজনৈতিক পদ্ধতি প্রচলিত
রয়েছে। বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন রাজনৈতিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি কোন
মানুষের চিন্তা বা গবেষণার ফসল নয়। বরং তা নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহর রাব্বুল
আলামীনের দেওয়া পদ্ধতি। আল্লাহ যেভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন, ইসলামী
রাজনৈতিক পদ্ধতিতে তাই বাস্তবায়ন করা হয়। ইসলামী রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র
আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ থাকে।
“বিধান দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।” (সূরা-ইউসুফ : ৪০)
আল্লাহর দেওয়া দিকনির্দেশনার আলোকে মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। ইসলামী জীবন
পদ্ধতিতে অনৈসলামিক বা মানব রচিত কোন আদর্শবাদ স্থান পাবে না। সম্পূর্ণ ইসলামের আলোকে পরিচালিত
যে রাজনৈতিক পদ্ধতি, তাই-ই-হলো ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি।
“তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।” (সূরা আল-বাকারা : ২০৮)
ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি ও আধুনিক রাজনৈতিক পদ্ধতির তুলনামুলক আলোচনা
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, যার সাথে ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতির কোথাও
কোথাও মিল রয়েছে আবার কোথাও কোথাও রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। নি¤েœ উল্লেখযোগ্য দিকগুলো আলোচনা
করা হলোএকনায়কতন্ত্র ও ইসলাম
আধুনিক রাজনৈতিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একনায়কতন্ত্র একটি অন্যতম পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রনায়কের
হাতেই সর্বময় ক্ষমতা নিবদ্ধ থাকে। জনগণের অধিকার ও বক্তব্য সেখানে অবহেলিত। কিন্তু ইসলামের
রাজনৈতিক পদ্ধতি একনায়ক কেন্দ্রিক নয়। সমাজের যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে যে পরামর্শ সভা গঠিত হয়, তার
সাথে পরামর্শের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কুরআনে ঘোষিত হয়েছে ঃ
‘‘কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর, অত:পর তুমি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবে।’’ (সূরা
আলে-ইমরান : ১৫৯)
আর এ পদ্ধতিতেই রাজনীতি গণমুখী হবে এবং জনগণ স্বতঃস্ফ র্তভাবে তা গ্রহণ করবে।
রাজতন্ত্র ও ইসলাম
বর্তমান বিশ্বের বহু দেশে রাজতন্ত্র চালু রয়েছে। এ পদ্ধতিতে কোন বিশেষ পরিবার বা গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা
কুক্ষিগত থাকে। একজন রাষ্ট্রনায়কের পর তার পরবর্তী রাষ্ট্রনায়ক উক্ত পরিবার বা গোষ্ঠী থেকেই মনোনীত হয়,
চাই সে যোগ্য হোক বা না হোক। যদি অন্য কোন ব্যক্তি তার চেয়ে যোগ্যও হয় তবুও তাকে রাষ্ট্রনায়ক না করে
রাজপরিবারের বা রাজবংশের একজনকেই রাষ্ট্রনায়ক করা হয়। আর সে রাজবংশের মর্জি মোতাবেকই
রাজনীতি পরিচালিত হয়। কিন্তু ইসলাম এ পদ্ধতি সমর্থন করে না। যোগ্যতা ও তাকওয়ার ভিত্তিতে যে ব্যক্তি
উপযুক্ত বিবেচিত হবে, তাকেই শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হবে। আর সকলকে তার প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। তাকে রাজবংশের হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। সে অতি নগণ্য পরিবারেরও
যদি হয়, তবুও যোগ্যতার ভিত্তিতে সে-ই শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (স) হাদীসে
ঘোষণা করেন ঃ “যদি নাক কাটা হাবশী তার যোগ্যতার ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তবুও
তোমরা কোন বংশ মর্যাদার প্রশ্ন না করে তার আনুগত্য করবে।” তাই দেখা যায়, রাজতন্ত্রের চেয়ে ইসলামের
রাজনৈতিক পদ্ধতি অনেক উন্নত এবং কজনকল্যাণমূলক।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম
বর্তমান বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ রাজনৈতিক পদ্ধতিও প্রচলিত রয়েছে। এ পদ্ধতিতে আইনগতভাবে
সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ
করছে। সংখ্যালঘুরা আইনের অধিকারে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে চায় ; কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাতে বাধা
প্রদান করে। ফলে গৃহযুদ্ধের স‚ত্রপাত হয়। কিন্তু ইসলামের যে রাজনৈতিক পদ্ধতি রয়েছে তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ
আর সংখ্যালঘিষ্ঠের কোন প্রশ্ন নেই। সকলেরই ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। সংখ্যালঘুদের জান-মাল ইসলামী
রাষ্ট্রের আমানতস্বরূপ। ইসলাম ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করার কোন সুযোগ দেয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে সকলেরই
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকার সমান।
সমাজতন্ত্র ও ইসলাম
সমাজতন্ত্র স্বাধীন মানুষের আত্মার বন্দীশালা। সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষের স্বাধীন সত্তা থাকে না।
জনসাধারণকে শ্রমিক শ্রেণীতে পরিণত করা হয়। আর কর্তা ব্যক্তিরা তাদেরকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে থাকে।
সেখানে কোন ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকে না । থাকে না ন্যায্য কথা বলার কোন অধিকার। ব্যক্তি মালিকানা ও
পারিবারিক পদ্ধতিকে বাজেয়াপ্ত করে সবকিছুকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয় এবং কর্তা ব্যক্তিরা তা ব্যবহার করে।
সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের কেবল শ্রমের অধিকার রয়েছে। স্বাধীনভাবে তা ভোগ করার অধিকার নেই।
কিন্তু ইসলাম ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীনভাবে নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার দেয়। ব্যক্তি ও
পরিবারের স্বীকৃতি দিয়ে সুখী সমৃদ্ধ সুখময় সমাজ গড়ার সুযোগ করে দেয়। আল্লামা ইকবাল বলেছেন,
‘‘সমাজতন্ত্র সে তো মানবাÍার বন্দীশালা’’।
পাশ্চাত্য গণতন্ত্র ও ইসলাম
ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে মিল থাকলেও বর্তমানে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
পশ্চিমা গণতন্ত্রে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণের সমর্থনই বিবেচ্য। জনগণ একজন অযোগ্য
লোককেও নির্বাচিত করলে সেই রাষ্ট্রপ্রধান হবে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান মনোনয়নের
ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল যোগ্যতার পাশাপাশি তাকওয়া বা খোদাভীতিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপ্রধানের পদের জন্য
মনোনয়ন দেয় এবং জনগণ তাকে ভোট প্রদান করে তার প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করে। পশ্চিমা গণতন্ত্রে সরকার
জাতীয় পরিষদের মতানুযায়ী যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে ; কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতিতে জাতীয়
পরিষদ কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী কোন মত প্রকাশ করলে তা গৃহীত হবে না।
সারকথাঃ ইসলাম মানুষের সার্বিক জীবনের যে সুন্দর সমাধান দিয়েছে, তা আর কোন জীবনব্যবস্থা দিতে
পারেনি। ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি অন্য সকল রাজনৈতিক পদ্ধতি থেকে উন্নত ও বাস্তবমুখী। এর মাধ্যমে
সকল রাজনৈতিক সমস্যার সুন্দর সমাধান সম্ভব। ইসলাম একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে
স¤পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। সমাজতন্ত্র ও পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের চেয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা উত্তম।
১. ইসলামী রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সার্বভৌম ক্ষমতাক. একমাত্র আল্লাহর হাতে; খ. মানুষের হাতে;
গ. কিছু আল্লাহর হাতে কিছু মানুষের হাতে; ঘ. সরকারের হাতে।
২. কোন রাজনৈতিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রনায়কের কাছে সর্বময় ক্ষমতার চাবিকাঠিক. গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে; খ. সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে;
গ. ধর্মনিরপেক্ষ পদ্ধতিতে; গ. একনায়কতন্ত্র পদ্ধতিতে।
৩. কোন রাজনৈতিক পদ্ধতিতে পরামর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হয়?
ক. গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে; খ. ধর্মনিরপেক্ষ পদ্ধতিতে;
গ. ইসলামিক পদ্ধতিতে; ঘ. কোন উত্তরই সঠিক নয়।
৪. কোন মতবাদ স্বাধীন মানুষের আত্মার বন্দীশালা
ক. একনায়কতান্ত্রিক মতবাদ; খ. সমাজতান্ত্রিক মতবাদ;
গ. ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ; ঘ. ইসলামী জীবনাদর্শ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. একনায়কতন্ত্র ও ইসলাম এর মধ্যে তুলনা করুন।
২. রাজতন্ত্র ও ইসলাম এর মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করুন।
৩. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম এর মধ্যে তুলনা করুন।
৪. সমাজতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য নিরূপন করুন।
৫. গণতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য লিপিবদ্ধ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি ও আধুনিক রাজনৈতিক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]