ইসলামী সরকার ও আধুনিক সরকার ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করুন।

ইসলামী সরকার একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার যা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। বর্তমান বিশ্বে যে সব সরকার ব্যবস্থা
প্রচলিত রয়েছে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা তার মধ্যে সবচেয়ে কল্যাণমুখী। তাই আধুনিক ধনতান্ত্রিক ও
সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার সাথে এর বহুবিধ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নি¤েœ ইসলামী সরকারের সাথে
আধুনিক সরকারের তুলনামূলক আলোচনা লিপিবদ্ধ করা হল।
ইসলামী সরকার ও আধুনিক সরকারের পার্থক্যসমূহ
সংজ্ঞাগত পার্থক্য
যে সরকার আল্লাহর বিধি-বিধান তথা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাকে ইসলামী সরকার
বলে। অপরদিকে যে সরকার মানবরচিত আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাকে আধুনিক সরকার বলা
হয়। আধুনিক সরকার পদ্ধতির মধ্যে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতন্ত্র বা একনায়কতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি অন্যতম।
দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য
ইসলামী সরকার উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে। কোন নির্দিষ্ট ভ‚খন্ড, শ্রেণী, স¤প্রদায় বা গোত্রভিত্তিক সরকার
নয়, সবার স্বার্থ নিয়ে এ সরকার কথা বলে। পক্ষান্তরে আধুনিক সরকার নির্দিষ্ট দেশ, জাতি, শ্রেণী, স¤প্রদায় বা
গোত্রভিত্তিক সরকার। এ সরকার নির্দিষ্ট একটি জাতি, স¤প্রদায় বা গোত্রের স্বার্থ নিয়ে ভাবে।
ক্ষমতার উৎসগত পার্থক্য
ইসলামী সরকারের ক্ষমতার উৎস কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, এখানে সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ। ইসলামী
সরকার আল্লাহর আইনকে কার্যকর করার জন্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। অপরদিকে আধুনিক সরকার
ব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার উৎস হল জনগণ। যেমন- সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সর্বহারা শ্রমিক-কৃষকদের
সংগঠনকে ক্ষমতার উৎস বলা হয় এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার উৎস মনে করা হয়
জনগণকে।
নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্থক্য
ইসলামী সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান পদের জন্য প্রার্থী হতে পারে না। এখানে রাষ্ট্রপ্রধান মুসলিম জনগণের
মতামত ও আস্থার ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচিত হন অথবা জনপ্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কিন্তু
আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান হবার জন্য যে কোন যোগ্য নাগরিক নিজের যোগ্যতা দাবি করে উক্ত পদের প্রার্থী হতে পারেন।
রাষ্ট্রপ্রধানের যোগ্যতার ক্ষেত্রে পার্থক্য
ইসলামী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান ও মজলিসে শূরার সদস্যবৃন্দকে মুসলিম, সৎ, খোদাভীরূ শারীরিক ও
জ্ঞানগতভাবে যোগ্য হতে হয়।
‘‘তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন।’’ (সূরা আল-বাকারা : ২৪৭)
অন্যথায় জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করবে। অপরদিকে আধুনিক সরকারপ্রধান ও আইনসভার সদস্যদের জন্য
ধর্মীয় ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ নেই জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তিনিই এপদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন,
জ্ঞান বা শারীরিক যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা এতে নেই।
কাঠামোগত পার্থক্য
ইসলামী সরকারে মহিলাদের দেশরক্ষা, প্রশাসন ও অন্যান্য কঠিন দায়িত্বে নিয়োগ না করার বিধান আছে। দেশ
ও ধর্ম রক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষগণ অসমর্থ হলে মহিলাদের কথা বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আধুনিক সরকারের সকল
পর্যায়ে মহিলাদের নিয়োগদানে কোন সমস্যা নেই।
ধর্ম ও রাজনীতির ব্যাপারে
ইসলামী সরকার ধর্ম ও রাজনীতিকে পরস্পর সম্পূরক হিসেবে গ্রহণ করে। আর আধুনিক সরকারের মতে, ধর্ম
ও রাজনীতি এক নয়। রাজনীতি থেকে তারা ধর্মকে পৃথক করে রাখে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পার্থক্য
ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার দেশের অক্ষম, দরিদ্র, অনাথ, বৃদ্ধ এবং শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জীবন ও
জীবিকার দায়িত্ব পালনে বাধ্য। ব্যক্তির পুঁজি বিনিয়োগের স্বাধীনতা থাকলেও এখানে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব
করার সুযোগ নেই। কিন্তু আধুনিক ধনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পুঁজির শোষণ
বিদ্যমান। এরা খোলাবাজার অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দুর্বল শ্রেণীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসে
লিপ্ত। আর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভাত-কাপড়ের কথিত নিশ্চয়তা প্রদান করে। কিন্তু স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে
দাসত্বের শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলে।
বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে পার্থক্য
ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থায় কুরআন ও হাদীসের আইন অনুযায়ী দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার
ফয়সালা করা হয়। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থায় মানব রচিত তথা নিজস্ব রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা অপরাধের বিচার করা হয়।
জবাবদিহিতা
ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারকে সৎ, ধর্মভীরু ও পরকালে বিশ্বাসী, সর্বোপরি আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার অনুভূতি
নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু আধুনিক সরকারব্যবস্থায় এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
সংবিধান পরিবর্তনের দিক থেকে পার্থক্য
ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধানের কোনরূপ পরিবর্তন করা যায় না। এমনকি মজলিসে শূরার সকল সদস্য একত্র
হয়েও সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। কেননা এই সংবিধানের রচয়িতা মহান আল্লাহর ও তাঁর প্রিয়
রাসূল (স)। অপরদিকে আধুনিক রাষ্ট্রের সরকার পদ্ধতিতে এমনটি নেই। সেখানে আইনসভার অধিকাংশ সদস্য
ইচ্ছে করলেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেন।
সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে
ইসলামী রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর। এখানে জনগণের ক্ষমতা সীমিত। সরকারপ্রধানকে আল্লাহর
নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকার পরিচালনা করতে হয়। অন্যদিকে আধুনিক রাষ্ট্রের সরকার
ব্যবস্থায় সার্বভৌমত্ব জনগণের এবং জনগণই ক্ষমতার একমাত্র উৎস।
আইনসভার অধিকার
ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার পদ্ধতিতে আইনসভা বা মজলিসে শূরা নতুন কোন আইন প্রণয়ন করতে পারে না। বরং
শরীআতের সাথে সম্পর্কিত আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ উপযোগিতা নির্ণয় করতে পারে মাত্র। এখানে
সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতের ভিত্তিতে শরীয়তবিরোধী কোন আইন গঠিত হতে পারে না। অপরদিকে আধুনিক
রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা আইনসভার সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারে।
সরকারপ্রধানের ক্ষমতা
ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারপ্রধান শরীয়া বিরোধী যে কোন বিলে ভেটো প্রদান করতে পারেন। তবে শরীয়াতসম্মত
জনকল্যাণমূলক কোন বিলে তিনি ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারব্যবস্থায়
সরকারপ্রধান নিজস্ব বিবেচনায় যে কোন বিলে ভেটো প্রয়োগ করতে পারেন।
আইনের উৎস
ইসলামী রাষ্ট্রে আইনের উৎস হল ইসলামী শরীয়া বা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। এখানে মানব রচিত
মতবাদের কোন স্থান নেই। সংসদে শূরার সদস্যগণ শরীয়ার ভিত্তিতেই আইন প্রণয়ন করে থাকেন। আর
আধুনিক সরকারব্যবস্থা যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন সেজন্য তাদের রচিত আইন হল আইনের উৎস।
সারকথাঃ বর্তমান পৃথিবীতে যেসব সরকারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তন্মধ্যে ইসলামী সরকার ব্যবস্থাই সর্বাধিক
যুগোপযোগী ও জনগণের জন্য অধিক কল্যাণকর। তাই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধন করতে হলে ইসলামী সরকারের কোন বিকল্প নেই।
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে
ক. আল্লাহর বিধি-বিধান মোতাবেক; খ. কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালনা করে;
গ. মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘ. ক ও খ উত্তর সঠিক।
পরিচালনা করে;
২. ইসলামী সরকারক. স¤প্রদায় ভিত্তিক সরকার; খ. নির্দিষ্ট দেশ ভিত্তিক সরকার;
গ. শ্রেণী ভিত্তিক সরকার; ঘ. কোনটিই ঠিক নয়।
৩. ইসলামী সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানক. যে কোন লোক হতে পারেন; খ. শুধু মুসলিম হলেই চলে;
গ. অমুসলিম যোগ্য ও সৎ হলেও চলে; ঘ. মুসলিম, সৎ ও যোগ্য হতে হয়।
৪. আইন সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়ক. আধুনিক সরকার ব্যবস্থায়; খ. ইসলামী সরকার ব্যবস্থায়;
গ. উভয় ব্যবস্থায়; ঘ. শুধু ধনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায়।
৫. কোন সরকার ব্যবস্থায় সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার মালিক জনগণক. ইসলামী সরকার ব্যবস্থায়; খ. পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায়;
গ. সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায়; ঘ. খ ও গ উভয় উত্তর সঠিক।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে লিখুন।
২. আধুনিক সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
৩. ইসলামী সরকার ব্যবস্থায় আইনের উৎস কয়টি ও কি কি?
৪. ইসলামী সরকার ও আধুনিক সরকারব্যবস্থার মধ্যে নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্থক্যগুলো লিখুন।
৫. ইসলামী ও আধুনিক সরকার ব্যবস্থার মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য লিখুন।
বিশদ উত্তরপ্রশ্ন
১. ইসলামী সরকার ও আধুনিক সরকার ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]