শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে মহানবী (স) -এর অবদান আলোচনা করুন। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে খুলাফায়ে-রাশেদূনের অবদান বর্ণনা করুন।

যে শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ হিসেবে প্রতিভাত করে তাই ইসলামী শিক্ষা। মধ্যযুগে
ইসলামের অভ্যুদয় মানব ইতিহাসে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। এ যুগের শিক্ষা মুসলমাদের অবদানে উজ্জ্বল।
বর্তমানকালের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতিও তাঁদের অবদানের ফসল। তাই বলা হয়ে থাকে যে, আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান মুসলমানদের নিকট ঋণী।
মধ্যযুগে মুসলমানদের অবদানের একটি বিশিষ্ট দিক হল যে, তাঁরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে মৌলিক অবদানের পাশাপাশি
প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে ছিলেন। তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এমনকি ভারতবর্ষ থেকেও
অমূল্য গ্রন্থ সংগ্রহ করে অনুবাদের মাধ্যমে ঐ সব অম‚ল্য স¤পদ সংরক্ষণ করেন।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্বঃ পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের উৎস কুরআন হল মুসলিম বিশ্বের মূল শিক্ষাগ্রন্থ। এ গ্রন্থের
বিধান থেকে শিক্ষা বাদ যায়নি। বরং এ গ্রন্থের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় শিক্ষার দু’টি মাধ্যমের উল্লেখ করে।
তা হল পড়া ও লেখা।
মহান আল্লাহর বাণী-‘‘(হে নবী) পড়ুন, আপনার প্রতিপলকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষকে সৃষ্টি
করেছেন জমাট বাধা রক্ত পিণ্ড থেকে। পড়ুন, আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা
দিয়েছেন।’’ (সূরা আল-আলাক ১-৪)
বিদ্বান ও বিদ্বাহীনদের স¤পর্কে কুরআনের বাণী হলÑ ‘‘হে নবী! আপনি বলে দিন, যারা ইলম শিক্ষা করেছে
আর যারা ইলম শিক্ষা করে নি, এ উভয় দল কি সমান হতে পারে ?’’ (সূরা আয-যুমার:৯) বিদ্বাহীন ব্যক্তি পশুর
সমান। আর বিদ্বান ব্যক্তি সমাজের আলোকবর্তিকা। বিদ্বান ও মূর্খের পার্থক্য আলো ও অন্ধকারতুল্য।
শিক্ষা বিস্তারে মহানবী (স.) যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হলো
নবীগৃহকে শিক্ষাগারে পরিণত করা
হযরত মুহাম্মাদ (স.) নবুওয়াত লাভের পর থেকে তাঁর গৃহকে শিক্ষাগার হিসেবে প্রস্তুত করেন। নবী করীম
(স.) নিজে লোকদের শিক্ষা দিতেন। তাঁর স্ত্রী খাদীজা (রা.) আজীবন শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাঁর ইনতিকালের
পর মদীনায় তাঁর স্ত্রীদের গৃহ নারীদের শিক্ষা দানের জন্য ছিল উন্মুক্ত। হযরত আয়িশা (রা.), হাফসা (রা.) ও
উম্মে সালামা (রা.) নারীদের মাঝে শিক্ষাদান কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
দারুল আরকামে শিক্ষা গ্রহণ
নবুওয়াত লাভের প্রাথমিক পর্যায় মক্কায় নিরিবিলি স্থানে অবস্থিত হযরত আরকাম (রা.)-এর বাড়ি (দারুল
আরকাম)-কে একটি শিক্ষায়তনে পরিণত করেন। এখানে মুসলিমগণ একত্র হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। যারা
নতুন মুসলমান হতেন, তারা গোপনে এসে এখানে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। দারুল আরকাম হল ইসলামের
ইতিহাসে সর্বপ্রথম শিক্ষায়তন।
গোত্রে গোত্রে শিক্ষায়তন স্থাপন
নতুন কোন গোত্রের লোক ইসলাম গ্রহণ করলে, তাদের শিক্ষাদানের জন্য অভিজ্ঞ সাহাবীদেরকে শিক্ষক হিসেবে
প্রেরণ করা হতো। এভাবে গোত্রে গোত্রে বিভিন্ন সাহাবীর তত্ত¡াবধানে শিক্ষায়তন গড়ে উঠতে থাকে।
শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র স্থাপন
হিজরতের পর মসজিদে নববীকে শিক্ষার প্রধানকেন্দ্র হিসেবে রূপ দেয়া হয়। মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে আসহাবে
সুফ্ফার জন্য একটি আবাসিক শিক্ষায়তন গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের বহু মানুষ এখানে শিক্ষা গ্রহণের
জন্য আসতেন। অনেক সাহাবী এ শিক্ষালয়ের আজীবন আবাসিক ছাত্র-শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন। তাঁদের
খাওয়ার ব্যবস্থা মুসলমানদের দানে ও বায়তুলমালের থেকে দেয়া হতো। কুফা, বসরা, সিরিয়া, মিসর, রোম,
পারস্য প্রভৃতি স্থান থেকে আগত শিক্ষার্থীরা মদীনায় এসে ভীড় জমাতেন।
মুক্তিপণ হিসেবে শিক্ষা
মহানবী (স.) নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারে এত গুরুত্ব দিতেন যে, বদরের শিক্ষিত যুদ্ধ বন্দীদের
মুক্তিপণ নির্ধারণ করেছিলেন, কয়েকজন নিরক্ষর মুসলিমকে শিক্ষা দান করার মাধ্যমে।
শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি
শিক্ষার প্রতি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে মানুষকে আগ্রহান্বিত করে তোলার জন্য রাসূলুল্লাহ(স.) অগণিত হাদীসে ইহ
ও পরকালীন কল্যাণের শুভ সংবাদ ও সফলতার কথা উল্লেখ করেন।
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ
খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলের শিক্ষা ঃ
আল-কুরআনের বাণীর আলোকে মহানবী (স.) যে শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেন, তাঁর সাহাবীদের এবং পরবর্তী
খলীফাদের হাতে ঐ শিক্ষা ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করে। মহানবী (স.)-এর ইন্তিকালের পর যে গণতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থা কায়েম হয় তাকে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল বলা হয়। এ আমলের চারজন খলীফা হলেন হযরত
আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলী (রা.)। খোলাফায়ে রাশেদীনের
আমলে নতুন রাজ্য বিজিত হয়। বিজয়ী মুসলমানগণ ভিন্নতর শিক্ষা ব্যবস্থার সং¯পর্শে আসেন এবং নতুন
সমস্যার মুখোমুখি হন। রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পায়। কাজেই শিক্ষিত ব্যক্তির প্রয়োজন অধিক হারে
অনুভ‚ত হয়। তাই ধর্মীয় জ্ঞান অনুশীলন ও কুরআন হাদীসের নির্দেশ পালন ছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যসূচী
ব্যাপক ভিত্তিক করা হয়। বিজিত অঞ্চলে নতুন নতুন মসজিদ নির্মিত হয় এবং মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা চালু হয়।
তাই বলা যায় যে, প্রয়োজনের তাগিদ এবং মহানবী (স.)-এর স¤পাদিত প্রতিটি কাজ দেখাশুনার পবিত্র দায়িত্ব
পালনকল্পে খলীফাগণ শিক্ষা ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছিলেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে হযরত আবু বকর (রা.)-এর অবদান
হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলীফা। তাঁর খেলাফতকাল ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৬৩৪ খ্রীষ্টাব্দ
পর্যন্ত ব্যাপৃত ছিল। তিনি কুরআন ও হাদীসের অসাধারণ জ্ঞান ও পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি মক্কার
বিদ্বানদের অন্যতম ছিলেন।
ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করলে তিনি হযরত উমর (রা.)-এর পরামর্শে যায়দ
ইবনে সাবিত (রা.)-এর নেতৃত্বে মাধ্যমে কুরআন সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। হযরত আবু
বকর (রা.)-এর উদ্যোগে মহান কাজ ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা রক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
হযরত আবু বকর (রা.) নতুন নতুন মসজিদ স্থাপন করেন এবং রাজ্যের বিভিন্ন মসজিদে জ্ঞান বিস্তারের জন্য
অনেক আলেমকে নিয়োগদান করেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উপর অবতীর্ণ আল্লাহর বাণী পাথর, কাপড়,
কাঠ, চামড়া ও পাতায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় লিপিবদ্ধ ছিল। হযরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথমে এগুলোকে একত্র
করে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি প্রথম ইজতিহাদ বিষয়ক নীতি নির্ধারণ করেন এবং ফিকাহ স¤পর্কে অনেক কঠিন প্রশ্নোত্তর এবং স্বপ্নের
সর্বাপেক্ষা নির্ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। তিনি নামাযের ইমামতি করার সময় খোতবায় শিক্ষামূলক আলোচনা
করতেন এবং কুরআন শুদ্ধ করে পঠনের জন্য কারী নিয়োগ করেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁর আমলে আরো প্রসার লাভ করে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে হযরত উমর (রা.)-এর অবদান
খলীফা হযরত ওমর (রা.) (৬৩৪-৪৪ খ্রীঃ) প্রায় দশ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেন। তাঁর আমলে শিক্ষা
ব্যবস্থা ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক। মসজিদ ভিত্তিক মক্তব ও মাদ্রাসা তাঁর আমলেই প্রসার লাভ করে। তিনি
শিক্ষকগণকে বায়তুলমাল থেকে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং শিক্ষিত ব্যক্তিদেরকে সেনানায়ক
নিয়োগ করে শিক্ষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
তখন মক্তবে কুরআন শিক্ষার সাথে সাথে লিখন ও সাধারণ অংক শিক্ষা দেয়া হতো। লিখন ও অশ্ব চালনা
শেখানো বাধ্যতাম‚লক করা হয়। বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ এবং আরবী সাহিত্য পাঠের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হতো।
শিক্ষকগণকে ভাষায় সুপন্ডিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। শুদ্ধভাবে কুরআন পাঠের জন্য আরবি
ভাষায় দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন বিধায় তিনি ভাষা শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ব্যবস্থা নেন। হাদীস শিক্ষা প্রসারের
জন্য তিনি কয়েকজন সাহাবীকে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান। হযরত উমর (রা.)-এর আমলে রাজ্যের বড়
বড় শহরগুলোতে শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে উঠে। মক্কা, মদীনা ছাড়াও কুফা, বসরা, দামেস্ক, ফুস্তাত প্রভৃতি স্থান
শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে।
একজন বিশিষ্ট ফকীহ হিসেবে তিনি ফতোয়া দিতেন। ফিকাহ ও ইসলামী আইন-কানুন শেখানোর জন্য তিনি
বিভিন্ন স্থানে নামকরা শিক্ষক প্রেরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। হযরত উমর (রা.) শুক্রবারের খোতবায়
ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতেন। তিনি বেদুঈনদের শিক্ষারও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সুশাসক হযরত উমর (রা.) বুঝতে পেরেছিলেন যে, জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ছাড়া ইসলামের ভিত্তি সুদৃঢ়
হবে না। তাই তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র শিক্ষা প্রসারে ব্রতী হন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে হযরত উসমান (রা.)-এর অবদান
হযরত উসমান (রা.) (৬৪৪-৬৫৬ খ্রীঃ) ইসলামের তৃতীয় খলীফা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (স.)-এর আমলে তিনি
অন্যতম ওহী লেখক ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় কুরআনের নির্ভুল ও ধারাবাহিক সংকলন প্রথম প্রকাশিত হয়।
কুরআনের বিভিন্ন উপভাষায় লিপিবদ্ধ কপি পুড়ে ফেলা হয়।
হযরত উসমান (রা.) রাজ্যের বিখ্যাত মসজিদগুলোতে বক্তৃতার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখেন। কুরআনহাদীস শিক্ষাদানের সাথে সাথে অংক, কাব্য চর্চা ও কবিতা পাঠের আসর বসত। তিনি মদীনা মসজিদের সংস্কার
ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেন।
শিক্ষায় হযরত আলী (রা.)-এর অবদান
খলীফা হযরত আলী (৬৫৬-৬৬১ খ্রীঃ) বলেন, বিত্তের চেয়ে বিদ্যা উত্তম, বিত্তকে তুমি পাহারা দাও, কিন্তু বিদ্যা
তোমাকে পাহারা দেয়, বিত্ত খরচে কমে যায়, বিদ্যা বিতরণে বেড়ে যায়। তিনি ইসলামের চতুর্থ ও সর্বশেষ
খলীফা। যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তিনি আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) উপাধিতে ভূষিত হন। অন্য দিকে হযরত আলী
(রা.) অসাধারণ পান্ডিত্য, স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞান গরিমার অধিকারী ছিলেন। সুশিক্ষিত হযরত আলী (রা.) একজন
ওহী লেখকও ছিলেন। তাঁর আরবী ব্যাকরণ ও ন্যায় শাস্ত্রে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর রচিত ‘দীওয়ানে আলী’
আরবী সাহিত্যের এক বিশেষ স¤পদ। তিনি কুরআনের প্রতিটি শব্দ, বাক্য ও সূরার ব্যাখ্যাদানে দক্ষ ছিলেন।
তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় আরবি ব্যাকরণ রচিত হয়। তাঁর আমলে কুফার জামে মসজিদ জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্ররূপে
গড়ে উঠে। তিনি নিজেই এখানে শিক্ষার্থীদের কুরআন-হাদীস শিক্ষা দিতেন।
হযরত আলী (রা.) সর্বপ্রথম হাদীস লিখতে আরম্ভ করেন। তাঁর হাদীস গ্রন্থ সহীফা নামে পরিচিত। তিনি
একজন স্বভাব কবি ছিলেন। যুদ্ধ বিষয়ের উপর তাঁর বহু কবিতা রয়েছে। তিনি প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে
জোরদার করেন। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাদানের জন্য দুই হাজারেরও বেশী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করেন।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ইসলামী গণতন্ত্রের যুগ। এ যুগ ইসলামের সোনালী যুগ। এ
যুগ মসজিদ ভিত্তিক, মক্তব ভিত্তিক শিক্ষার যুগ। এ আমলেই ইজমা, কিয়াস ও ইজতিহাদের সূত্রপাত হয়।
আরবি ব্যাকরণ রচিত হয়। কুরআনের শুদ্ধ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রবর্তিত হয়। এ
সব মিলিয়ে শিক্ষার পথ সুগম হয় এবং পরবর্তী শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত হয়।
উমাইয়া আমলে শিক্ষা ব্যবস্থা
উমাইয়া শাসন আমল ৬৬১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাপৃত ছিল। উমাইয়া বংশের ১৪ জন খলীফার
মধ্যে খলীফা আবদুল মালেক, প্রথম ওয়ালীদ ও উমর ইবনে আবদুল আযীযের শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উমাইয়া বংশের খলীফাগণ রাজ্য বিজয় এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে ব্যস্ত থাকা সত্তে¡ও
শিক্ষা বিস্তারের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন।
উমাইয়া বংশের প্রথম খলীফা আমীর মুআবিয়া (রা.) ইতিহাসের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে
খলীফা আবদুল মালেকের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি আরবি ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দান
করেন। তাঁর অন্য অবদান হল আরবি বর্ণমালার লিখন ও উচ্চারণ পদ্ধতির উন্নতি সাধন। আরবির সহজতর
পঠন ও লিখনের জন্য তিনি হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ এর সহযোগিতায় আরবী বর্ণমালায় হরকত ও নোকতা
প্রবর্তন করেন। এর ফলে আরবী ভাষা ব্যাপক প্রসার লাভ করে।
উমাইয়া খলীফাদের মধ্যে হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয (র.) শিক্ষার একজন একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
তিনি ছাত্রদের বৃত্তি এবং শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণে উদারনীতি গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকদের
শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের নির্দেশ দেন। একজন শাসককে তিনি লিখেছিলেন ঃ ছাত্রদের জন্য বৃত্তি নির্ধারিত করে
দাও, যাতে তারা আর্থিক দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে শিক্ষালাভে মনোযোগী হতে পারে। হাদীস সংগ্রহ করে তা লিপিবদ্ধ
করা তাঁর শাসন আমলের একটি স্বর্ণোজ্জ্বল কীর্তি। তিনি মদীনার গভর্নরকে লিখে পাঠান, ‘‘মহানবী (স) -এর
হাদীসগুলো একত্রকরণে ব্যবস্থা করুন। আমি জ্ঞানী ও জ্ঞান নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ভয় করছি।’’ তিনি এ চিঠির
কপি রাজ্যের সর্বত্রই পাঠিয়ে দেন। এমনকি বর্ণিত আছে, তিনি এ চিঠিতে সাহাবা ও তাবেঈদের জ্ঞান
স¤পর্কিত মতামত ও বাণীও গ্রন্থায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরই আগ্রহ ও আনুক‚ল্যে একজন বিখ্যাত
চিকিৎসকের মূল্যবান গ্রন্থ আরবি ভাষায় অন‚দিত হয়।
উমাইয়া যুগে সাম্রাজ্যের মসজিদগুলো ছিল শিক্ষা বিস্তারের প্রাণকেন্দ্র এবং কুরআন-হাদীসকে ভিত্তি করে এই
শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠে। এ সময় মক্কা, মদীনা, কুফা, বসরা এবং মিসর প্রধান প্রধান শিক্ষা কেন্দ্র রূপে গড়ে
উঠে। তখন তীর চালনা, সাঁতার কাটা এবং আরবি পড়তে ও লিখতে জানলেই তাকে শিক্ষিত বলা হতো।
কুরআন পাঠকারীগণ (কারীগণ) ছিলেন ইসলামের আদি শিক্ষক। খলীফা আব্দুল মালেকের সময় গৃহশিক্ষক
নিযুক্ত করার প্রথা শুরু হয়। আবদুল মালেক ও ওয়ালীদ সাম্রাজ্যে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন।
উমাইয়া আমলে আরবি ইতিহাস ও বিভিন্ন বিষয়ে কবিতা রচনা শুরু হয়। গ্রীক ও কপটিক ভাষায় লিখিত
রসায়নশাস্ত্র, চিকিৎসা ও ফলিত জ্যোর্তিবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থাবলী আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। মুতাযিলাদের
যুক্তিবাদী আন্দোলন এ আমলে শুরু হয়। এ যুগে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির ফলে সারা দেশে হাসপাতাল
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মোটকথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন যা আব্বাসীয় আমলে সম্ভব হয়েছিল তার বীজ
উমাইয়া আমলে বপণ করা হয়।
আব্বাসীয় আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা
আব্বাসীয় খিলাফত ৭৫০ হতে ১২৫৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এ বংশে মোট ৩৫/৩৭ জন খলীফা ছিলেন।
আব্বাসীয়গণ সুদীর্ঘ ৫০৯ বছরের রাজত্বকালে পূর্বেকার ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন
সাধন করেন। রাষ্ট্রীয় নীতিতে আব্বাসীয়গণ উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন। তাঁরা উমাইয়াদের আরব
পৃষ্ঠপোষকতা নীতির পরিবর্তে সকল শ্রেণীর মুসলমানের সমান অধিকারের সুযোগ দেন। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক
হিট্টির উক্তি
আব্বাসীয়দের উদার মনোভাবের প্রতিফলন শিক্ষা ক্ষেত্রেও পরিদৃপ্তমান ছিল। তাঁরা গ্রীক, রোমান, পারসিক
এমনকি ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে শিক্ষণীয় বিষয় গ্রহণে পিছ পা হননি। বলা হয়ে থাকে যে, উমাইয়া যুগ
ছিল রাজ্য জয়ের যুগ আর আব্বাসীয় যুগ ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। এ যুগে মুসলমানদের কৃষ্টি, সভ্যতা ও
জ্ঞানানুশীলন বিশ্ব সভ্যতার শীর্ষে উন্নীত হয়েছিল।
আব্বাসীয় বংশের প্রথম দিকের তিনজন খলীফা হলেন মনসুর, হারুন এবং মামুন। তাঁরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের
একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। আব্বাসীয় খলীফাগণের আমলে কাব্য, ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত¡, ভূগোল, ইতিহাস,
দর্শন, হাদীস, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, উদ্ভিদবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভ‚তত্ত¡বিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র
প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে বহু নতুন আবিষ্কার দ্বারা মুসলমান পন্ডিতগণ মানব জ্ঞানের পরিধি প্রশস্ত
করেছিলেন। এ কারণে ঐতিহাসিকগণ এ যুগকে স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আব্বাসীয় খলীফা মনসুর, হারুন এবং মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় বহু গ্রীক, সিরীয়, পারসিক, সংস্কৃতি প্রভৃতি
ভাষায় লিখিত মূল্যবান গ্রন্থ আরবি ভাষায় অনূদিত হওয়ায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়।
খলীফা মনসুর জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারকল্পে স্কুল-কলেজ স্থাপনের পাশাপাশি অনুবাদ কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁর
আমলে সংস্কৃত ভাষায় লিখিত জ্যোতির্বিদ্যা স¤পর্কিত গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ হয়। খলীফার আদেশক্রমে
ভারতীয় গল্পগ্রন্থ হিতোপদেশ আরবি ভাষায় অনূদিত হয়। এ ছাড়া গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল, ইউক্লিড, টলেমী
প্রমুখ গ্রীক দার্শনিক ও গণিতজ্ঞগণের সারগর্ভ গ্রন্থরাজি অন দিত হয়ে মুসলিম জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে।
খলীফা আল-মনসুরের আমলে স‚চিত এ অনুবাদ কার্যক্রম হারুনের আমলেও অব্যাহত থাকে যার চরম উৎকর্ষ
সাধিত হয় খলীফা মামুনের আমলে বায়তুল হিকমা (বিজ্ঞানাগার) স্থাপনের মাধ্যমে।
আব্বাসীয় খলীফাগণ শিক্ষাকে সর্বজনীন করার জন্য সাম্রাজ্যের সর্বত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একাডেমী স্থাপন
করেন। খলীফা মামুন বাগদাদে একটি কলেজ নির্মাণ করেন। এরপর নিজামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপ
হতে আগত বহু শিক্ষানবীশ এখানে অধ্যয়ন করতো।
আব্বাসীয় আমলে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এক নবযুগের সৃষ্টি হয়। আরব ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস রচনার
গতানুগতিক রীতি পরিত্যাগ করে সমালোচনা ও তুলনার মাধ্যমে এর বৈজ্ঞানিক রূপদান করেন। এ সময়ে
চিকিৎসাশাস্ত্রেও মুসলমানগণ অতুলনীয় সাফল্য অর্জন করেছিলেন। এ আমলের বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনকারী
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হলেন, আল-রাজী ও ইবনে-সিনা। গণিত শাস্ত্র, ভ‚গোল শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন,
দর্শনশাস্ত্র অর্থাৎ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে আব্বাসীয়গণ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
আব্বাসীয় যুগে শিক্ষার দু’টি স্তর ছিল-প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক বিদ্যালয় মসজিদ বা ব্যক্তিগত
গৃহে গড়ে উঠে। গঠন, লিখন, ব্যাকরণ, হাদীস, প্রাথমিক গণিত, কবিতা প্রভৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য
তালিকাভুক্ত ছিল। এ সমস্ত বিষয় মুখস্থ করার উপর বেশী জোর দেয়া হতো। উচ্চ শ্রেণীর ছাত্ররা কুরআনের
ব্যাখ্যা ও গবেষণামূলক সমালোচনা, আইনশাস্ত্র, ধর্মতত্ত¡, ছন্দ ও সাহিত্য পাঠ করতো। উচ্চ স্তরের শিক্ষার্থীগণ
জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন ও সঙ্গীত বিদ্যা অধ্যয়ন করতো।
আব্বাসীয় যুগে গৃহেই শিশুদের শিক্ষা শুরু হতো। ছয় বছর বয়সে বালক-বালিকারা স্কুলে ভর্তি হতো।
আব্বাসীয় আমলে গৃহ শিক্ষক প্রথাও চালু ছিল। সে যুগে শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। আব্বাসীয়
আমলে শিক্ষকগণ যথেষ্ট সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তখন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণকে মুয়াল্লিম
বা ফকীহ বলা হতো। দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষকগণ মুয়াদ্দিব নামে অভিহিত ছিলেন। উচ্চ শিক্ষাদানে নিযুক্ত
শিক্ষকগণকে উস্তাদ বলা হতো। উস্তাদবৃন্দ নিজ নিজ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাঁরা বেতনভোগী ছিলেন।
পল্লী অঞ্চলে প্রাথমিক জ্ঞান লাভের পর পনর বছরের যুবকরা সাধারণত উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরে আসতো।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আব্বাসীয় খলিফাগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁদের
অনেকে সুপন্ডিতও ছিলেন। ফলে উমাইয়া আমলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার যে বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল তা
আব্বাসীয় আমলে মহীরুহে পরিণত হয়ে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ সুগম করেছে।
তাই বর্তমান সভ্যতা মুসলমানদের নিকট ঋণী।
ইসলামী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সাধারণত জাতীয় আদর্শ, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, সমকালীন চাহিদা ইত্যাদি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে
সহায়ক। ইসলামী জাতীয়তাবাদের মূল বক্তব্য এক আল্লাহতে বিশ্বাস এবং কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার
আলোকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উন্নতি সাধন। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আর এ পূর্ণাঙ্গ জীবন
বিধানের মূল উৎস আল-কুরআন ও আল-হাদীস। তাই ইসলামী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারিত হবে কুরআন
ও হাদীসের শিক্ষার আলোকে। খোলাফায়ে রাশেদীনের খিলাফতকাল থেকে শুরু করে আব্বাসীয় আমল পর্যন্ত
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নির্ধারিত হয়েছিল। ইসলাম বাস্তবতা বিবর্জিত ধর্ম নয়।
ইসলামে বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই। ইসলামের সাথে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের বিশেষ কোন বিরোধ নেই।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নি¤œরূপ।
১। এক আল্লাহ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি বিশ্বাস।
২। আল-কুরআন ও আস-সুন্নাহর আলোকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন।
৩। ইসলামী আদর্শবাদে বিশ্বাস ও তদনুযায়ী জীবন গঠনে সাহায্য করা।
৪। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শকে নিজ জীবনে প্রতিফলিত করা, সার্থক উম্মত হিসেবে নিজকে গড়ে
তোলা এবং অন্যকে উক্ত আদর্শ অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করা।
৫। মানব কল্যাণে ব্রতী হওয়া।
৬। বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবোধ সৃষ্টি করা।
৭। ইসলামের আলোকে নবতর সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান দেয়ার জন্য ইজতিহাদ বা গবেষণার যোগ্যতা সৃষ্টি
করা।
৮। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার পরিহার করা।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, আল্লাহ প্রদত্ত বাণী ও রসূল (স.) প্রদর্শিত পন্থা অনুযায়ী জীবন যাপন করে আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনই ইসলামী শিক্ষার ম‚ল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
ইসলামী শিক্ষার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য
ইসলামী শিক্ষা সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিকভাবে কল্যাণকর। ইসলামী শিক্ষার রূপকার স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা।
মানব রচিত অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। নিæে ইসলামী শিক্ষা
ব্যবস্থার স্বরূপ ও প্রকৃতি তথা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলতাওহীদ ভিত্তিক শিক্ষা
ইসলামী শিক্ষা স¤পূর্ণরূপে মহান আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রত্যয়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত।
আল্লাহকে বাদ দিয়ে কোন শিক্ষাই ইসলামী হতে পারে না।
ধর্ম ও বৈষয়িক শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয়
ইসলামী শিক্ষা এককভাবে বৈষয়িক কিংবা কোন ধর্মীয় শিক্ষা নয়। বরং মানব জাতির গোটা জীবনব্যবস্থা তথা
পার্থিব ও বৈষয়িক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করা অপরিহার্য, সে শিক্ষাকে যদি ইসলামী
মূল্যবোধের আলোকে পরিবেশন করা হয়, তা হলেই সেটা ইসলামী শিক্ষা। ইসলামী শিক্ষা একটি সমন্বিত শিক্ষা। ওহী ভিত্তিক শিক্ষা
ইসলামী শিক্ষা পুরোপুরি ওহীভিত্তিক।
“পড়, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’’ (সূরা আল-আলাক : ১)
সুতরাং ইসলামের সমস্ত শিক্ষাই ওহীর আলোকে রচিত।
কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষা
ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষাই কুরআন ও হাদীসের আলোকে রচিত। তাই মানুষের পার্থিব জীবনে যে সব শিক্ষার
প্রয়োজন হয়, তা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তৈরি করলে তাই ইসলামী শিক্ষায় পরিণত হয়। আল্লাহ বলেন ঃ
“রাসূল যা নিয়ে এসেছেন, তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা বর্জন কর।”
রাসূল (স) বলেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটো বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা এদুটো বস্তু অবলম্বন করলে কখনো
পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।”
আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের উপযোগী শিক্ষা
মানুষ পৃথিবেিত আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলীফা।
‘‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো।’’ (সূরা আল-বাকারা : ৩০)
খিলাফতের মহান দায়িত্ব পালন করার জন্য যোগ্যতা প্রয়োজন। এ প্রয়োজন পূরণে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই।
পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধকারী
ইসলামী শিক্ষা মানুষকে সকল প্রকার অন্যায়-অসত্য ও কলুষ থেকে পূত:পবিত্র করে। মানুষের চিন্তা-বিশ্বাস,
চেতনা ও চরিত্রকে পরিশোধিত করে।
‘‘তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মাঝে নবী পাঠিয়েছেন, তাদেরকে কুরআনের আয়াত পাঠ করে শুনানোর
জন্য এবং তাদেরকে পুত:পবিত্রকরণের জন্য।’’ (সূরা আল-জুমুআ : ২)
আদর্শিক ভাবধারা পুষ্ট
ইসলামী শিক্ষা একটি মহান আদর্শের ধারক-বাহক। এ শিক্ষাই মানুষকে আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও জাগ্রত
করে। তাই শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার জন্য ইসলামী শিক্ষা অপরিহার্য।
সর্বজনীন শিক্ষা
ইসলামে শিক্ষার দ্বার জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ পৃথিবীর সব রকমের মানুষই ইসলামের
শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। মানুষ এক জাতি-এ সত্যকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে একমাত্র শিক্ষা।
ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষার এ সর্বজনীন রূপ বিপর্যস্ত মানব জাতির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে সক্ষম।
নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত ঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে ইসলাম নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের উপর
বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা মানুষকে পবিত্রভাবে বাঁচতে ও চিন্তা করতে শেখায়। মহানবী (স.)
বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা দান করার জন্য পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছি।”
আধ্যাত্মিক ও জাগতিক প্রয়োজনে শিক্ষা দরকার। কুরআন ও হাদীসে মানুষের এই উভয়বিধ জীবনের কল্যাণের
জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য আধ্যাÍিক জীবনের শিক্ষার
সাথে বাস্তব জীবনের চাহিদার সমন্বয় হওয়া দরকার।
উত্তর সঠিক হলে ‘‘স’’ মির্থ্যা হলে ‘‘মি’’ লিখুন।
১. বর্তমান যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি মুসলমানদের অবদানের ফসল।
২. মহানবী (স) এর স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা) একজন নিরক্ষর মানুষ ছিলেন।
৩. মহানবী (স) নিরক্ষরদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণের জন্য আমৃত্যু প্রচেষ্টা চালান।
৪. উমাইয়া খলীফা আবদুল মালেক, প্রথম ওয়ালিদ ও উমর ইবন আবদুল আযীয জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা দান
করেন।
৫. আব্বাসীয় যুগে শিক্ষার দু’টি স্তর ছিল।
৫. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই ইসলামী শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
নৈর্বাচনিক উত্তর-প্রশ্নঃ
১. আসহাবে সুফফার জন্য প্রতিষ্ঠিত মহানবী (স)-এর আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি কোথায় অবস্থিত?
ক. মদীনায়; খ. মদীনার মসজিদে নববীতে;
গ. মসজিদে কুবায়; ঘ. মক্কা শরীফে।
২. দারুল আরকাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়ক. হযরত মুহাম্মদ (স) -এর যুগে; খ. হযরত আবু বকর (রা)-এর যুগে;
গ. হযরত আলী (রা)-এর যুগে; ঘ. হযরত উমর ইবন আবদুল আযীয-এর যুগে।
৩. হযরত আলী (রা) কর্তৃক রচিত হাদীস গ্রন্থের নাম ছিলক. বুখারী শরীফ; খ সহিফা;
গ. মুআত্তা; ঘ. মিশকাত শরীফ।
৪. কোন আমলে বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক. উমাইয়া যুগে; খ. আব্বাসীয় যুগে;
গ. খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে; ঘ. কোনটিই ঠিক নয়।
৫. কার যুগে সরকারীভাবে হাদীস সংকলন শুরু হয়?
ক. হযরত উমর (রা.) -এর যুগে; খ. হযরত আলী (রা.) -এর যুগে;
গ. হযরত উমর ইবন আব্দুল আযীয (র). -এর যুগে; ঘ. হযরত উসমান (রা.) -এর যুগে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য স¤পর্কে আলোকপাত করুন।
২. ইসলামী শিক্ষার বৈশিষ্ট্য স¤পর্কে লিপিবদ্ধ করুন।
৩. ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৪. শিক্ষা বিস্তারে মহানবী (স) -এর কার্যক্রম সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে মহানবী (স) -এর অবদান আলোচনা করুন।
২. শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে খুলাফায়ে-রাশেদূনের অবদান বর্ণনা করুন।
৩. শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলীফাদের অবদান আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]