ইসলামী রাষ্ট্রের জন ও সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা স¤পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ও সমাজব্যবস্থা। আধ্যাত্মিক ও জাগতিক অর্থাৎ মানব জীবনের সর্বদিকের সুষ্ঠু ও
সুন্দর সমন্বয় সাধন করে মানুষকে সুখ, শান্তি, প্রগতি ও পূর্ণতা অর্জনের দিকে এগিয়ে দেয়াই ইসলামের মূল
লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের রূপকার ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)।
মহানবী (স) এর আগমন ছিল সমগ্র সৃষ্টির পরিপূর্ণ কল্যাণ ও আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি ছিলেন জাতি, ধর্ম ও
বর্ণভেদে সবার পথপ্রদর্শক। তিনি সেবক হিসেবে বিশ্বমানবের কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। মানব কল্যাণই ছিল
তাঁর প্রচারিত ধর্মের বৈশিষ্ট্য। তিনি বলিষ্ঠভাবে ঘোষণা করেছেন, আল্লাহর চোখে সব মানুষ সমান।
বস্তুত মহানবী (স) একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন নি অথবা শুধু আরব সমাজের জন্য
তার আবির্ভাব হয়নি। তিনি ছিলেন শান্তির দূত। তিনি আজীবন মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাই
ইসলাম মানব কল্যাণের ধর্ম। ইসলামে মানব কল্যাণকে ইবাদাতের সাথে স¤পর্কিত করা হয়েছে। মহানবী (স)
-এর যুগ থেকেই মানব কল্যাণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে আসছে।
ইসলামের সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানাদি
ইসলাম সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সামগ্রিক মানব কল্যাণে বিশ্বাসী। ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও কল্যাণ শুধু তাত্তি¡ক নয়;
কার্যক্ষেত্রে তা প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধানও রয়েছে। সুশৃংখল ও সুখী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে
বাস্তবমুখী আর্থ-সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলাম প্রবর্তিত
বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যুগ যুগ ধরে বহুমুখী সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করেই খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে বিশ্বের প্রথম কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা
হয়েছিল। ইসলাম যেসব প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার কল্যাণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে সেগুলো নিæে আলোচনা করা হলোযাকাত ব্যবস্থা
ইসলামের অন্যতম সমাজ কল্যাণমূলক ব্যবস্থা হচ্ছে যাকাত। ইসলামী রাষ্ট্রের তথা বিশ্বের প্রথম সামাজিক
নিরাপত্তা এবং সমাজ সেবা ব্যবস্থা হচ্ছে যাকাত। যাকাত প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমেই দুঃস্থ, দরিদ্র ও অসহায়দের
কল্যাণকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকার করে নেয়া হয়। ইসলাম মানব কল্যাণকে ব্যক্তির ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়নি।
যাকাত স¤পর্কে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সু¯পষ্ট ঘোষণা: যাকাত দেয়া প্রতিটি সামর্থ সম্পন্ন মুসলমানের জন্য
যেমন একটি কর্তব্য ; তেমনি যাকাত প্রাপ্তদের পক্ষে এটি একটি অধিকার।
ইসলামী পরিভাষায় ঋণ ও যাবতীয় প্রয়োজন নির্বাহের পর শরীআত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ বা ধনস¤পদ কারো নিকট পূর্ণ এক বছর যাবত সঞ্চিত থাকলে তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ আল্লাহর নির্দেশিত পথে
ব্যয় করার প্রথাই যাকাত।
যাকাতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। যাকাতদানের মাধ্যমে পার¯পরিক
ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি, সহনশীলতা, মিতব্যয়িতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ, স¤পদের সুষম বন্টন প্রভৃতি গুণাবলী
অর্জনে মানুষ সক্ষম হয়। যাকাতের মাধ্যমে যেমন স¤পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়, তেমনি সামাজিক সংহতি,
প্রগতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
ইসলামী বিধান মোতাবেক যাকাত সংগ্রহ এবং বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশে দারিদ্র্য
সমস্যার সমধান দেয়া আজও সম্ভব। মূলত শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং
স¤পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ আনয়নের একমাত্র পথ হচ্ছে
যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন।
বায়তুলমাল ব্যবস্থা
ইসলামী রাষ্ট্রের রাজকোষকে বায়তুলমাল বলা হয়। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সময় বায়তুলমাল প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়তুলমালের কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় তত্ত¡াবধানে
জনগণের কল্যাণে বায়তুলমালই হচ্ছে বিশ্বের সর্বপ্রথম কার্যক্রম। বায়তুলমাল একদিকে যেমন দুঃস্থ, অসহায়
দরিদ্রদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করত, অন্যদিকে বায়তুলমাল হতে বিনা সুদে সাধারণ ঋণ ও উৎপাদনী
ঋণদানের ব্যবস্থা করা হতো।
বায়তুলমালের দর্শন ও কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা, দুঃস্থ অসহায়দের কল্যাণ এবং দরিদ্র আইন প্রণয়নের
নীতি-র্নিধারণে আধুনিক সমাজ কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওয়াকফ ব্যবস্থা
ইসলামী আইনে স্বীকৃত অন্যতম সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ওয়াকফ ব্যবস্থা। ইসলামী বিধান অনুযায়ী
কোন মুসলমান কর্তৃক ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে তার সমুদয় স¤পত্তি বা অংশবিশেষ স্থায়ীভাবে স্বত্বত্যাগ করে
দান করার প্রথাকেই ওয়াকফ বলা হয়।
সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে ওয়াকফের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাক-শিল্প যুগে ওয়াকফ প্রথার মাধ্যমেই সুসংগঠিত ও
প্রাতিষ্ঠানিক সমাজ সেবার সূত্রপাত হয়। বর্তমানেও সারা মুসলিম বিশ্বে এতিমখানা, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল,
কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ওয়াকফ স¤পত্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ওয়াকফ
প্রথায় যেমন ব্যক্তিগত কল্যাণ নিশ্চিত হয় তেমনি সমষ্টিগত কল্যাণও সাধিত হয়। বাংলাদেশে এতিম, দুঃস্থ ও
অসহায়দের রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ১,৫৫,৫৫৩টি ওয়াকফ স্টেট কর্মরত রয়েছে। (১৯৮৬
সালের ওয়াকফ প্রশাসকের জরিপ অনুযায়ী )
করযে হাসানা ব্যবস্থা
ইসলামের অন্যতম সমাজকল্যাণ প্রথা হচ্ছে করযে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণব্যবস্থা। ইসলাম অর্থনৈতিক শোষণের
হাতিয়ার সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে, অপরদিকে মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী বিনাসুদে ঋণদানের
চূড়ান্ত ও স্থায়ী ব্যবস্থা করেছে। বিনা সুদে ঋণদান প্রথমদিকে ব্যক্তিগতভাবে স¤পন্ন হতো। হযরত উমর (রা.)-
এর আমলে বিনা সুদে ঋণদান রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপকভাবে স¤পন্ন হতো। সরকারী কর্মচারীগণ তাদের চাকুরীর
আমানতে বায়তুলমাল হতে বিনাসুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারত। মূলত ঋণদান সমিতির ইতিহাসে ইসলামী
রাষ্ট্রের বায়তুলমালই বিশ্বের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠান।
করযে হাসানার মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করা এবং অথনৈতিক উন্নয়নের জন্য মূলধন
সরবরাহ করা। সুদমুক্ত ঋণের ধারণার উপর ভিত্তি করেই বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে।
সাদকাহ ব্যবস্থা
ইসলামের অন্যতম সমাজসেবা প্রথা হচ্ছে সাদকাহ্ বা দান। ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত বাধ্যতামূলকভাবে
স¤পদশালী মুসলমানদের আদায় করতে হয়। শুধু যাকাত প্রদান করেই কোন ব্যক্তি সামাজিক ও জাতীয় দায়িত্ব
পালন হতে স¤পূর্ণরূপে মুক্ত হতে পারে না। সমাজ ও জাতির প্রয়োজনে যাকাতদানের পরও স¤পদশালীদের
অর্থ ব্যয় করার দায়িত্ব রয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, তাদের (ধনীদের) ধনস¤পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের
অধিকার রয়েছে। সাদকাহ বা দান ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমাজকল্যাণ প্রথা হিসেবে
স্বীকৃত। সাদকাতুল ফিতর, কোরবানীর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থদান ইত্যাদি প্রথা বর্তমানেও দরিদ্র অভাবিদের
কল্যাণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।
এছাড়া ইসলাম সাধারণ দানের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছে। কুরআনের সূরা বাকারায় বলা হয়েছে,
‘‘কেবল পূর্ব পশ্চিম দিকে মুখ করাই সত্যিকার নেক কাজ নয়। বরং আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, কিতাব ও
নবীগণের প্রতি ঈমান আনা ও আল্লাহর ভালবাসার বশবর্তী হয়ে নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, নিঃস্ব
পথিক, অভাবগ্রস্ত ও কৃতদাসদের জন্য অর্থ ব্যয় করা এবং নামায পড়া ও যাকাত দেয়া হলো যথার্থ নেক
আমল। ’’(সূরা আল-বাকারা : ১৭৭))
সূতরাং দেখা যায় যে, ইসলাম প্রত্যক্ষ নির্দেশের মাধ্যমে যেমন মানবতার সেবা করার জন্য তাগিদ দিয়েছে,
তেমনি পরোক্ষভাবে সমাজ ও জাতির কল্যাণে স¤পদ ব্যয় করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
এছাড়া মসজিদ বিনির্মাণ, মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে শিক্ষার স¤প্রসারণ, রাস্তা ঘাট, পুল এবং
উত্তম সামাজিক কাজ করার জন্য ইসলাম উৎসাহ প্রদান করেছে। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য
একটি ঘর বানালো আল্লাহও তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করলে। ইয়াতিমকে লালন-পালন, আশ্রয়
প্রদান গৃহপরিচারিকাকে শিক্ষাপ্রদান ও বড় হলে তার বিবাহ ব্যবস্থার প্রতি ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। এসব হচেছ ইসলামী রাষ্ট্রে জনহিতকর কাজ।
১. ইসলাম কেমন ধর্ম?
ক. অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধর্ম; খ. মানব কল্যাণের ধর্ম;
গ. ব্যক্তিগত কল্যাণের ধমর্; ঘ. শুধু আরবদের কল্যাণের ধর্ম;
২. ইসলামী রাষ্ট্রের সমাজ কল্যাণমূলক ব্যবস্থা কোনটিক. ওয়াকফ ব্যবস্থা; খ. যাকাত ব্যবস্থা;
গ. রাস্তা-ঘাট নির্মাণ; ঘ.সবক’টি উত্তরই ঠিক।
৩. রাষ্ট্রীয় তত্ত¡াবধানে জনগণের কল্যাণে বায়তুলমালই হচেছ বিশ্বেরক. একমাত্র কার্যক্রম; খ. সর্বপ্রথম কার্যক্রম;
গ. দ্বিতীয় কার্যক্রম; ঘ. কোন উত্তরই সঠিক নয়।
৪. করযে হাসানা হলক. সুদ মুক্ত ঋণ; খ. লাভজনক ঋণ;
গ. সুদসহ ঋণ; ঘ. একটি দান।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী রাষ্ট্রের সমাজ কল্যাণ ব্যবস্থা হিসেবে যাকাত স¤পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২. ইসলামী রাষ্ট্রের সমাজ কল্যাণ ব্যবস্থা হিসেবে বায়তুলমাল স¤পর্কে বর্ণনা করুন।
৩. ইসলামী রাষ্ট্রের সমাজ কল্যাণ ব্যবস্থা হিসেবে ওয়াকফ স¤পর্কে লিখুন।
৪. ইসলামী রাষ্ট্রের সমাজ কল্যাণ ব্যবস্থা হিসেবে কর্জে হাসানা স¤পর্কে লিপিবদ্ধ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামী রাষ্ট্রের জন ও সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা স¤পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]