মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রয়োজনীয়াতা ও গুরুত্ব বর্ণনা করুন।

মহানবী (স)-এর মদীনা ইসলামী রাষ্ট্র
রাষ্ট্র ও সরকার মানব জীবনের দু’টি অপরিহার্য বিষয়। পৃথিবীতে মানুষের স্থিতি, বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্যে রাষ্ট্র ও
সরকারের অস্তিত্ব একান্ত আবশ্যক। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, রাষ্ট্র ও সরকার ছাড়া চলতে পারে না এ বিষয়ে প্রাচীন ও
আধুনিক কালের মনীষীগণ প্রায় সকলেই একমত। তবে কোন ধরনের রাষ্ট্র ও সরকার মানুষের জন্যে সত্যিকারভাবে
কল্যাণকর, সে বিষয়ে মনীষীদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ রয়েছে।
ইসলাম মানুষের জন্যে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা। রাষ্ট্র ও সরকার-এ জীবনব্যবস্থারই দু’টি অবিচ্ছেদ্য
অংশ। ইসলামের প্রধান উৎস আল-কুরআন মানুষকে শুধু কতিপয় নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত থাকে নি,
বরং মানুষের সমাজবদ্ধ জীবনের জন্যও দিয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। এই দিকনির্দেশনাতেই ¯পষ্ট প্রতিভাত হয়ে
উঠেছে দেশ-কাল-নির্বিশেষে মানুষের জন্যে কল্যাণকর এবং গতিশীল রাষ্ট্র ও সরকারের এক অনবদ্য চিত্র। ইসলামনির্দেশিত এই রাষ্ট্র ও সরকার কোন অবাস্তব কল্পনা-বিলাস নয়। বিশ্ববাসী এর বাস্তব নমুনা প্রত্যক্ষ করেছে সুদীর্ঘকাল
ধরে। প্রকৃতপক্ষে এই রাষ্ট্র ও সরকারই যে মানব জাতির জন্যে অফুরন্ত আশীর্বাদ বয়ে আনতে সক্ষম। ইতিহাসের পৃষ্ঠায়
তারও সাক্ষ্য-প্রমাণ লিপিবদ্ধ রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে।
আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলগণ মানব জীবনের প্রতিটি বিভাগকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা-সংগ্রাম করেছেন, যাতে
আল্লাহর যমীনে তাঁর দীন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাঁর আইন ও বিধান চালু এবং কার্যকর হয়। তাঁদের এই প্রাণান্তকর চেষ্টা
সংগ্রাম ছিলো পূর্ণাংগ জীবনের সংশোধনের জন্য। আর রাষ্ট্র ছিল সেই সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কুরআন
অধ্যয়ন থেকে জানা যায়, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম, হযরত মুসা আলাহিস সালাম, হযরত দাউদ আলআহিস
সালাম, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এবং মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করেছিলন এবং তা আদর্শিক মানে পরিচালনা করেছিলেন। ওল্ড এবং নিউ টেস্টমেন্টের অধ্যয়ন থেকে এই সাক্ষ্য
পাওয়া যায় যে, বনী ইসরাইলের অন্যান্য নবীগণও রাষ্ট্র সংস্থার সংশোধনের চেষ্টা করেছেন এবং ভ্রান্ত নেতৃত্বের অবাধ
সমালোচনা করেছেন। ইসলামী চিন্তাধারায় রাষ্ট্র যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আল্লাহ তা‘আলার নি¤েœাক্ত বাণী থেকে অনুমান
করা যায়। হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন মক্কায় ইসলামের মিশন প্রচার করে নির্যাতিত হচ্ছিলেন তখন তিনি আল্লাহর পক্ষ
থেকে শিখিয়ে দেয়া যে দোয়াটি পড়তেন তা হল-
“বল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং আমাকে নিস্ক্রান্ত করাও কল্যাণের সাথে এবং
তোমার নিকট থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।” (সূরা বনী ইসরাইল : ৮০)
ইমাম হাসান আল-বসরী, কাতাদা, ইবনে কাসীর, ইবনে জারীর আততাবারী উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “প্রভু হয়
আমাকেই রাষ্ট্র ক্ষমতা দান কর, আর না হয় অপর কোন রাষ্ট্রকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যেন আমি তার শক্তি ও
ক্ষমতার মাধ্যমে পৃথিবীর এই মহাভাংগন ও বিপর্যয়কে সংশোধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও নাফরমানীর এই মহাপ্লাবনকে
প্রতিরোধ করতে পারি এবং তোমার সুষম আইন ও বিধানকে চালু ও কার্যকর করতে পারি।”
আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করতে, সঠিক প্রচার প্রসার ও প্রয়োগ করতে রাষ্ট্র শক্তির যে কোন বিকল্প নেই তা অনুধাবন
করেই হযরত মুহাম্মদ (স.) হিজরত করে মদীনায় এসে একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। মদীনা সনদ তার
পরিকল্পনার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত বহন করে।
তিনি তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলেন। মুখোমুখি হলেন বিরোধী শক্তির। তবুও দীর্ঘ সংগ্রামের পর মদীনা নামক
ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করে তিনি সফল হলেন। ইসলামী রাষ্ট্রের অনাবিল শান্তি ছড়িয়ে দিলেন গোটা বিশ্বে। যে
কল্যাণকর রাষ্ট্রের নমুনা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ইউনিটে মহানবী (স.)-এর রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে। মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন কিভাবে হয়েছিল তার বর্ণনা দিতে পারবেন;
রাসূল (স)-এর যুগে এ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো কেমন ছিল তা আলোচনা করতে পারবেন;
মজলিসে শূরা কিভাবে আইন প্রণয়ন করত তা বলতে পারবেন;
নির্বাহি বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা কতটুকু তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন;
বিচার বিভাগ কতটা কল্যাণকর ছিল তা উপস্থাপন করতে পারবেন।
রাসূল (স) নবুয়ত লাভের পর ইসলামের দাওয়াতের পাশাপাশি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে
কাজ শুরু করেন। তাঁর আদর্শের পক্ষে মানুষ তৈরির জন্য দাওয়াতী কার্যক্রম জোরদার করেন। তাই তো
তখনকার রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী আবু জাহল ও আবু লাহাবদের বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত হন তিনি ও তাঁর
সমর্থকরা। এক পর্যায়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন তাঁরা। তখনকার হাবশা সরকারের সহায়তা পেলেন বটে
কিন্তু সেখানেও শান্তি পেলেন না মুসলমানগণ। অতপর তাঁরা মদীনায় হিজরত করলেন। পরিবেশ তৈরী হল
মুসলমানদের পক্ষে। তাঁরা তাদের আদর্শকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করলেন যার নাম
“মদীনা ইসলামী রাষ্ট্র। ৬২৪ খৃষ্টাব্দের এ রাষ্ট্রটি বিশ্বের ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
মদীনা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো
বর্তমান দুনিয়ায় সাধারুত সকল রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি বিভাগ নিয়ে গঠিত। এ তিনটি বিভাগের
ভারসাম্যপূর্ণ সক্রিয়তা ও সমন্বয়ের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র।
প্রশাসনের এ তিনটি বিভাগেরই নিজস্ব দায়দায়িত্ব, ক্ষমতা ও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
বিভাগ তিনটি হচ্ছে১. আইন বিভাগ
২. নির্বাহী বিভাগ এবং
৩. বিচার বিভাগ
এ ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো শুধু আধুনিক রাষ্ট্রের বর্তমান আছে তা নয় বরং এখন থেকে দেড় হাজার বছর
পূর্বে রাসূল (স) মদীনা নামক যে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন তারও প্রশাসনিক কাঠামো অনুরূপই ছিল।
পার্থক্য এতটুকু যে, বর্তমান কালে রাষ্ট্রের উল্লিখিত বিভাগগুলোর কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা সু¯পষ্টভাবেই পৃথক
করা হয়েছে, কিন্তু মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের উল্লেখিত কাঠামোর কার্যক্রম আধুনিক রাষ্ট্রের মত স¤পূর্ণ পৃথক পৃথক
ছিল না।
মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রে বিরাজমান তিনটি বিভাগেরই প্রধান ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা)। তিনি প্রত্যেক বিভাগের
জন্য প্রধান দায়িত্বশীল নিয়োগ করেন নি। তবে যখনই যাকে যে কাজের জন্য উপযুক্ত মনে করেছেন তাকে
তৎক্ষণাৎ দায়িত্ব প্রদান করে প্রশাসনের তিনটি বিভাগেরই কাজ স¤পাদন করতেন।
আইন প্রণয়ন বিভাগ
ইসলামে আইনদাতা হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। সে আইন তাঁরই মনোনীত প্রতিনিধি ও রাসূল হযরত
মুহ্ম্মাদ (স.) এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিল হয়েছে। তিনি যে আইন নিজে পালন করেছেন তা জনগণকে
জানিয়ে দিয়েছেন এবং শিক্ষা দিয়েছেন। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ, অনুমতি ও
শিক্ষানুযায়ী উপবিধি (ইু-ষধংি) তৈরি করেছেন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে তা কার্যকর করেছেন এবং তা
জনগণের উপর জারি করেছেন। কাজেই মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রে আইন প্রণয়নের (খবমরংষধঃরড়হ) আলাদা কোন
পাঠ ঃ ১
ধারুা ছিল না। আল্লাহর দেয়া আইনকে রাসূলে করীম (স) সূক্ষè অধ্যয়ন, অনুধাবন, গবেষণা করে সমাজে ও
পরিবেশে বাস্তবায়ন করেছেন।
পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মানুষই মানুষের জন্য আইন রচনা করে। আইন রচনার জন্য যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়,
তা পার্লামেন্ট নামে পরিচিত।
রাসূল (স.) মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের জরুরী বিষয় যে ব্যাপারে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনা নেই- সে ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত নিতে সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করতেন। তাঁর একটি পরামর্শ সভা ছিল। একেই আরবীতে বলে
“মজলিসে শূরা।”
রাসূল (স.) বিভিন্ন জরুরী মুহূর্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য দূরদর্শী জ্ঞান স¤পন্ন সাহাবীদের সাথে পরামর্শ
করতেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দক যুদ্ধসহ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার পূর্বে করুীয় স¤পর্কে সাহাবীদের সাথে
পরমর্শ করতেন।
হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, যায়দ ইবন সাবিতসহ প্রখ্যাত সাহাবিগণ তাকে পরামর্শ দিতেন। এছাড়া
কখনও কখনও আনসার মুহাজিরদের সাধারু অধিবেশনেও তিনি পরামর্শ গ্রহণ করতেন।
মজলিসে শূরা গঠন
মুসলমানদের দেশ ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে সকল বিষয়ে আল্লাহর সু¯পষ্ট নির্দেশ নেই সে সকল বিষয়ে
সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (স.)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
“এবং কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।” (সূরা আলে-ইমরান : ১৫৯)
“তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।” (সূরা আশ-শূরা : ৩৮)
নির্বাহী বিভাগ
নির্বাহী বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের ঐ বিভাগকে বুঝায় যে বিভাগ মজলিসে শূরা বা পার্লামেন্টে কর্তৃক রচিত ও স্বীকৃত
আইনকে দেশের সর্বত্র কার্যকর করে থাকে।
আধুনিক নিয়মে মজলিসে শূরা বা পার্লামেন্টে ধারাবদ্ধ আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর তাতে রাষ্ট্রপ্রধানের
সম্মতিসূচক স্বাক্ষর হতে হয় অন্যথায় তা ‘আইন’ হিসেবে গণ্য হয় না। নির্বাহী বিভাগ বা আইন-প্রয়োগকারী
“অথোরিটি’ (অঁঃযড়ৎরঃু) আধুনিক কালের প্রত্যেকটি সরকারের একটি অপরিহার্য এবং সম্ভবত সবচাইতে বেশী
গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ।
বর্তমান কালের প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার হলে প্রেসিডেন্ট ও তার মন্ত্রীসভা (ঈধনরহবঃ)
আর পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার হলে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীদের সমন্বয়েই এ নির্বাহী বিভাগ গঠিত হয়।
রাসূল (স.)-এর শাসন আমলে বর্তমান কালের মত বিভাজনকৃত নির্বাহী বিভাগ ছিল না। তবে কুরআন-সুন্নাহর
আইন দেশের সর্বত্র বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে দায়িত্ব প্রদান করতেন। তারা বিধানগুলো অত্যন্ত
সতর্কতার সাথে বাস্তবায়ন করতেন।
নির্বাহী বিভাগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
বস্তুত কুরআন ও সুন্নাহ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক ও ব্যবহারিক জীবনে বাস্তবভাবে প্রয়োগ ও অনুসরণের জন্য।
মজলিসে শূরা এ দু’টি উৎস থেকে চিন্তা-গবেষণা এবং আলোচনা পর্যালোচনা করে আইনসমূহ ধারাবদ্ধ করে
দেন। যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি বিভাগকে অবশ্যই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর তা হল নির্বাহী
বিভাগ।
আইনকে অন্ধ নির্বিচারে রাষ্ট্রশক্তির সাহায্যে শুধু জারি করাই তো একমাত্র কাজ নয়, ইসলামের দিক দিয়ে
আসল লক্ষ্য হচ্ছে, সে আইনের ভিত্তিতে ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবার গঠন এবং লালন। সে জন্য পূর্ণ সতর্কতা,
ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করা একান্ত প্রয়োজন। তাহলেই সে রকম আদর্শ ব্যক্তি
পরিবার ও সমাজ গড়ে উঠতে পারে, যা গড়ার জন্য পৃথিবীতে ইসলামের আগমন ঘটেছে।
আল্লাহর আইন জারি ও যথাযথভাবে কার্যকর করার ব্যাপারে কোনরূপ অনীহা বা দুর্বলতা প্রদর্শন করা যাবে না
বরং এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক যন্ত্রকে অত্যন্ত শক্ত ও অনমনীয় হতে হবে।
প্রশাসনিক দুর্বলতা গোটা রাষ্ট্রকেই দুর্বল করে। জনগণের মনে রাষ্ট্র শক্তির প্রতি আনুগত্যমূলক ভাবধারা নিঃশেষ
করে দেয়। এ কারণে আল্লাহর আইন জারি ও কার্যকর করার ব্যাপারে একবিন্দু দুর্বলতা কিংবা দয়া-সহানুভূমি
প্রদর্শন তো দূরের কথা, তার উদ্রেক হওয়াও কুরআনের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। ব্যভিচারীদ্বয়ের দন্ড কার্যকর প্রসঙ্গে
“আল্লাহর বিধান কার্যকরকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবিত না করে যদি তোমরা আল্লাহ ও
পরকালে বিশ্বাসী হও।” (সূরা আন-নূর : ২)
এ আয়াত থেকে ¯পষ্ট বোঝা যায় যে, প্রশাসনিক শক্তিকে আল্লাহর আইন জারি করতে হবে এবং আল্লাহর
আইন জারি ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোন রূপ দয়া প্রদর্শন করা যাবে না। দয়ার উদ্রেক হওয়া ঈমানের
পরিপন্থী। দয়া দেখানো হলে প্রমাণিত হবে যে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান নেই।
প্রশাসনিক কর্মদক্ষতার প্রতীক ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স)। তিনি যেমন আল্লাহর আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে
কোনরূপ দুর্বলতা দেখান নি, এ স¤পর্কে তিনি কোনরূপ সুপারিশ ¯পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করেছেন। শুধু
অস্বীকার নয়, আল্লাহর আইন জারি করার ব্যাপারে সুপারিশের কথা শুনে তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ করেছেন।
মাখযূমী বংশের একটি মেয়েলোক চুরির অপরাধে অভিযুক্ত হয়। রাসূলে করীম (স)-এর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র
উসামা ইবনে যায়দ (রা)-তাঁর নিকট দন্ডাদেশ মওকুফ করার ব্যাপারে সুপারিশ করার ইচ্ছা করেছিলেন। নবী
করীম (স) তাঁর কথা শুনে অত্যন্ত ধমকের সুরে বলেন ঃ
أتشفع فى حد من حدود االله ؟
“আল্লাহ ঘোষিত একটি দন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে তুমি সুপারিশ করছ ?”
অতঃপর তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেনঃ
أيها الناس إنما هلك الذين من قبلكم إم كانوا إذا سرق فيهم الشريف تركوا و إذا سرق فيهم
الضعيف أقاموا عليه الحد
“হে জনগণ ! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে শুধু এ কারণে যে, তাদের মধ্য থেকে কোন
অভিজাত ব্যক্তি চুরি করলে তাকে তারা অব্যাহতি দিত। আর কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করলে তার উপর দন্ড
কার্যকর করতো।” (মুসলিম)
আল্লাহর আইন-বিধান প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই সমাজের উপর কার্যকর করতে হবে। ‘হদ্দ’ দন্ডসমূহ
জারি করতে হবে। এ কাজ যেমন একান্ত জরুরী, তেমনি তা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই-নির্বাহী শক্তির
সাহায্যেই আঞ্জাম দিতে হবে। এ কাজের দায়িত্ব তো আর সাধারু মানুষের উপর ছেড়ে দেয়া যায় না, সাধারু
মানুষকে কোন প্রকারেই আইন হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ দেয়া যায় না। অন্যথায় চরম অরাজকতা ও
উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেয়া অবধারিত। মানুষের উপর নির্বিচারে জুলুম হওয়া, মানুষের মর্যাদা বিনষ্ট হওয়া এবং
মানুষের মানবিক অধিকারও হরু হওয়া নিশ্চিত। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও নির্বাহী সংস্থা এ জন্যই একটি অপরিহার্য
বিভাগ। এই বিভাগটিই হবে এ কাজের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তৃত্বশীল।
রাসূলে করীম (স)-এর যুগে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ
রাসূলে করীম (স) যখনই কোন সাহাবীকে কোন অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্বশীল নিযুক্ত করে পাঠাতেন, তখনই
তাকে ইসলামী আদর্শানুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা ও অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয়
প্রশিক্ষণ দিতেন।
নবী করীম (স.) হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা)-কে ইয়ামেনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কর্মস্থলে যাওয়ার
পূর্বেই দীর্ঘ ভাষণের মাধ্যমে তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেন।
রাসূলে করীম (স) তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে যাঁকে যে কাজের যোগ্য মনে করতেন, তাঁকে সেই কাজে নিয়োগ
করতেন এবং সেই কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ও দিতেন। আর শুধু নিয়োগপত্র দিয়েই তাঁকে
পাঠিয়ে দিতেন না, তাঁকে কাজ স¤পর্কে পূর্ণ প্রশিক্ষণও দিতেন। তাঁর কাজের প্রকৃতি কি, কি মনোভাব নিয়ে
কাজ আঞ্জাম দিতে হবে, কি নিয়ম-নীতি তাঁকে মেনে চলতে হবে, জনগণের সাথে তাঁকে কিরূপ আচরু করতে
হবে, সব কথা-ই তিনি তাঁকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিতেন। আর এ ভাবেই তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সমগ্র ইসলামী
রাজ্যে একটি সুসংঘবদ্ধ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি ডাক যোগাযোগ রক্ষার জন্যও দায়িত্বশীল কর্মচারী নিয়োগ করেছিলেন এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয়
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। তখনকার সময় চিঠি-পত্রের আদান প্রদান সাধারুত সরকারী পর্যায়েই হতো এবং
লোক মারফত সে পত্রাদি প্রেরু করা হতো। এই কারণে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন ঃ
إذا أبردتم إلى بريد فأبردوه حسن الوجه حسن الاسم
“তোমরা যখন আমার নিকট কোন পত্রবাহক পাঠাবে, তখন তোমরা অবশ্যই ভাল চেহারার ও ভাল নামের
ব্যক্তিকে পাঠাবে।”
আর এই সবের মাধ্যমেই তখনকার সময় প্রয়োজন উপযোগী এক পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ গড়ে
তোলা হয়েছিল এবং তার দ্বারা যাবতীয় সরকারী সিদ্ধান্ত ও আদেশ-ফরমান কার্যকর করা হতো।
প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত লোকদের জরুরী গুণাবলী
বস্তুত প্রশাসনিক বিভাগ-ই রাষ্ট্রের প্রকৃত আদর্শ, রীতি-নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ কার্যকর করার প্রধান মাধ্যম। এই
বিভাগের পূর্ণ দক্ষতা ও কার্যকারিতার উপর শুধু যে রাষ্ট্রীয় আদর্শের যথার্থ বাস্তবায়ন নির্ভরশীল তা-ই নয়,
রাষ্ট্রের সাফল্য স্থিতিও এরই উপর নির্ভর করে। কেননা জনগণকে সঠিক পথে পরিচালনা, আদর্শের দিক দিয়ে
তাদের মধ্যে কোন বিচ্যুতি দেখা গেলে তা থেকে তাদের বিরত রাখা এবং তাদের সংশোধন ইত্যাদি যাবতীয়
কাজ প্রশাসনিক বিভাগকেই আঞ্জাম দিতে হয়। গোটা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা (খধি ধহফ ড়ৎফবৎ) রক্ষা করা ও
জনগণের অধিকার আদায় করা এই বিভাগেরই কর্তব্য। এই বিভাগের যাবতীয় কাজ যথার্থভাবে পরিচালিত
হওয়া এই বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল ছিলো।
নি¤েœ কতিপয় প্রয়োজনীয় গুণের উল্লেখ করা হলো-
দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞতা
যে লোককে যে কাজে নিয়োগ করা হবে বা যে লোকের উপর যে কাজের দায়িত্ব অর্পিত হবে, সে কাজটি
নিখুঁতভাবে করার যোগ্যতা রাখতে হবে, তা না হলে সবকিছুই নিষ্ফল হয়ে যাওয়া অবধারিত। মহান আল্লাহ
বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেনونَ
“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞেস কর।” (সূরা আন-নাহল : ৪৩)
এ নির্দেশে প্রত্যেক ব্যাপারে দক্ষ-অভিজ্ঞ লোকদের নিকট থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয় জ্ঞান লাভের উৎসাহ দেয়া
হয়েছে। যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে নবী করীম (স.) ইরশাদ করেছেন ঃ
إن الرياسة لا تصلح إلا لأهلها
“কোন কাজের দায়িত্ব ও নেতৃত্ব কেবল সেই ব্যক্তির জন্যই শোভা পায়, যে তার যোগ্যতা রাখে।”
ইসলামিক স্টাডিজ-৪ : ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম
ইউনিট-৫ : মহানবী (স)-এর মদীনা-ইসলামী রাষ্ট্র পৃষ্ঠা-১১৮
তিনি আরও বলেছেন ঃ
من عمل على غير علم كان ما يفسد أكثر مما يصلح
“যে লোক না জেনে কাজ করে সে ভাল করার তুলনা বেশী বিনষ্ট করে।”
বিশ্বস্ততা ও নিভৃরযোগ্যতা
কর্মের যোগ্যতা-দক্ষতার পর প্রয়োজনীয় বিশেষ গুণ হচ্ছে বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা সরকারী দায়িত্বশীলের
অবশ্যই আমানতদার হতে হবে। কেননা সরকারী পর্যায়ে যত সমস্যা ও জন-জীবনে যত দুঃখ দুর্দশা তার
অধিকাংশটাই হয়ে থাকে অবিশ্বস্ততা, অ-নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং আমানতের খিয়ানত করার
কারণে। এ জন্যই নবী (স.) বলেছেন-
إذا ضيعت الأمانة فانتظر الساعة
“আমানতদারী বিনষ্ট হলে কিয়ামত তথা ধ্বংসের অপেক্ষা কর।’’ (বুখারী),
“তোমার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।” (সূর আল-কাসাস : ২৬)
অন্যায় ও দুর্নীতি পরিহার
যে লোক বৈষয়িক সুখ-শান্তি অন্যায়ভাবে লাভ করার প্রতি আগ্রহী নয়, যে লোক অল্প পেলেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়।
যে সৎ ও চরিত্রবান, সরকারী ও প্রশাসনিক দায়িত্বে এই গুণের লোকদের নিয়োগ করা হলে প্রশাসনিক যন্ত্রে
কোনরূপ সমস্যা প্রবেশ করতে পারে না। সে পদাধিকারের সুযোগে দুর্নীতির মাধ্যমে যেমন অর্থোপার্জন করতে
সচেষ্ট হবে না, তেমনি কোন অন্যায় সুযোগ গ্রহণ করা থেকেও পূর্ণ সতর্কতার সাথে দূরে সরে থাকেব। তার
দ্বারা যেমন সরকারের কোনরূপ ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না, তেমনি জনগণের অধিকার হরণের মত
কোন কাজ হওয়ার সম্ভাবনাও নিঃশেষ হয়ে যাবে । এ পর্যায়ে হযরত আলী (রা)-এর এ কথাটি অধিক
গুরুত্বপূর্ণঃ
إن االله فرض على أئمة العدل أن يقدروا معيشتهم على قدر ضعف الناس
‘‘ন্যায়বাদী রাষ্ট্র নেতাদের জন্য আল্লাহ ফরয করে দিয়েছেন যে, তারা যেন জনগণের দুর্বলতা অনুপাতে
নিজেদের জীবিকার পরিমাণ নির্ধারু করে।’’
শুধু তা-ই নয়, সরকারী দায়িত্বশীল লোকদের উচ্চতর ও পবিত্রতম নৈতিক চরিত্রের গুণে ভূষিত হওয়াও
আবশ্যক। তার মধ্যে ধৈর্য ও সহনশীলতাও থাকতে হবে। স¤পদের প্রতি হতে হবে নির্মোহ। পুরোপুরি
ইসলামী আদর্শবাদে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং মহৎ গুণের অধিকারী হবে।
বিচার বিভাগ
বিচার কার্য ও জনগণের মধ্যকার পার¯পরিক ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করা দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তা মানবতার সেবায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কেননা এ কাজটি সুষ্ঠূষ্ঠরূপে সুস¤পন্ন
হওয়ার উপরই গোটা সমাজের নিরাপত্তা, সমাজের লোকদের জীবনে শান্তি স¤পূর্ণরূপে নির্ভর করে। বস্তুত যে
সমাজে বিচার নেই, জনগণের ফরিয়াদ পেশ করার কোন স্থান নেই এবং তার প্রতিকার করারও কোন সুষ্ঠু
ব্যবস্থা নেই, তা বন্য সমাজ হতে পারে, পাশবিক সমাজ হতে পারে, তা কখনই মানুষের বাসোপযোগী সমাজ
হতে পারে না।
এ দৃষ্টিতে বিশ্বের ইতিহাসে একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে, রাসূল (স.)-এর বিচার ব্যবস্থা ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও তুলনাহীন।
যেখানে শুধু নামে মাত্র বিচার ছিল না, ছিল সর্বতোভাবে ন্যায়সঙ্গত নিরপেক্ষ ও আদর্শ ভিত্তিক সুবিচার। এ
সুবিচার ও ইনসাফ তখনকার সমাজের মানুষকে পূর্ণ মানবীয় মর্যাদা নিয়ে নির্বিঘেœ বসবাস করার সুযোগ
দিয়েছিল। দিয়েছিল পূর্ণ শান্তি ও শৃঙ্খলা। প্রতিষ্ঠিত করেছিল স্থিতিশীলতা। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিশ্চিত
করেছিল তার মানবীয় অধিকার ও মর্যাদা, তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। পরিুামে গোটা সমাজই হয়ে উঠেছিল
সর্বদিক দিয়ে পুরোপুরিভাবে ভারসাম্যপূর্ণ।
বিচারের সাথে সুবিচারের স¤পর্ক গভীর ও ওতপ্রোত। বিচার যদি শুধু বিচার না হয়ে পরিপূর্ণ সুবিচার হয়,
তাহলেই সমগ্র সমাজ হতে পারে ন্যায়পরায়ণতায় পরিপূর্ণ। সমাজকে ভরে দিতে পারে অভিনব শন্তি-শৃঙ্খলা,
সাহসিকতা ও কর্মোদ্দীপনা। মানুষ তখন তার নিজের প্রাণ, ধন-স¤পদ ও ইযযত-আবরুর দিক দিয়ে হতে পারে
স¤পূর্ণ নিশ্চিত। আর তার ফলে গোটা রাষ্ট্রই হতে পারে সমৃদ্ধশালী ও কল্যাণময়। কিন্তু তা যদি না হয়, যদি
বিচারের নামে চলে জুলুম-শোষণ-নির্যাতন, সুবিচার বলতে কোথাও কিছু খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে চতুর্দিকে
অরাজকতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, মারামারি, অপহরু, ছিনতাই, হত্যা, নারী ধর্ষণ, বলাৎকার ও চুরি-ডাকাতি-লুণ্ঠন দেখা
দেয়া অবধারিত। সমগ্র সমাজটাই হয় চরমভাবে বিপর্যস্ত। আর তার ফলে রাষ্ট্র তার সমস্ত মর্যাদা হারিয়ে
ফেলে। শাসনকার্য স¤পূর্ণরূপে ব্যাহত ও বিঘিœত হয়ে পড়ে, সার্বভৌমত্ব হয়ে পড়ে বিপন্ন। তাই রাসূল (স.)-এর
বিচার বিভাগ ছিল সুবিচারপূর্ণ। তিনি এমনই একটি বিচার বিভাগের নমুনা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করেছিলেন।
বিচারকের যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা
বিচার বিভাগ সমাজে তার গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি বিচারকের প্রকৃত যোগ্যতা-কর্মক্ষমতা
থাকে। তাঁর মধ্যে প্রয়োজনীয় গুণাবলী পূর্ণমাত্রায় বর্তমান থাকে। বিচারকার্যের যোগ্যতার জন্য জরুরী শর্তসমূহ
তার মধ্যে পুরাপুরি পাওয়া যায়।
ইসলাম বিচারকের কতিপয় গুণ ও শর্তের উল্লেখ করেছে। বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে ইসলাম-ই সর্ব প্রথম এসব
গুণ ও শর্তের উল্লেখ করেছে।
নি¤েœ এগুণগুলো বর্ণনা করা হল।
১. ঈমানদার হওয়া
২. পূর্ণবয়স্ক হওয়া
৩. বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা
৪. ন্যায়নিষ্ঠতা ও পক্ষপাতহীনতা
৫. আইন স¤পর্কে পূর্ণমাত্রায় জ্ঞান ও বিচক্ষণতা
৬. তী² স্মরুশক্তি, মেধা ও প্রতিভা স¤পন্ন হওয়া
কেননা বিচারক বিস্মৃতির শিকার হলে তার দ্বারা সঠিকভাবে বিচার কার্য স¤পাদন হতে পারে না।
রাসূলে করীম (স.) বিচারকের মর্যাদা ও তার দায়িত্বের জবাবদিহিতা স¤পর্কে অত্যন্ত কঠোরতা আরোপ
করেছেন। তিনি বলেছেন ঃ
القضاة ثلثة واحد فى الجنة واثنان فى النار فأما الذى فى الجنة فرجل عرف الحق وقضى به و رجل
عرف الحق فجار فى الحكم فهو فى النار و رجل قضى للناس على جهله فهو فى النار
“বিচারকরা তিন ধরনের হয়। এক ধরনের বিচারক জান্নাতে যাবে, আর অপর দুই ধরনের বিচারক জাহান্নামে
যাবে। জান্নাতে যাবে সেই বিচারক, যে প্রকৃত সত্য অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেই
অনুযায়ী বিচার করেছে। পক্ষান্তরে যে বিচারক প্রকৃত সত্য জানতে ও বুঝতে পেরেও রায়দানে জুলুম করেছে,
সে জাহান্নামে যাবে। আর যে বিচারকে অজ্ঞতা থাকা সত্তে¡ও লোকদের উপর বিচার চাপিয়ে দিয়েছে সেও জাহান্নামে যাবে।”
এই হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম জাফর সাদেক (র) বলেছেন ঃ চার ধরনের বিচারক দেখা যায়। তন্মধ্যে তিন
ধরনের বিচারকই জাহান্নামে যাবে, আর মাত্র এক ধরনের বিচারক জান্নাতে যাবে। যে ব্যক্তি সজ্ঞানে অবিচার
করে সে জাহান্নামে যাবে। যে ব্যক্তি না জেনে অবিচার করে সেও জাহান্নামে যাবে। যে ব্যক্তি না জেনেও সঠিক
বিচার করে, সেও জাহান্নামে যাবে। আর যে জেনে-বুঝে সুবিচার করে, কেবল সে-ই জান্নাতে যাবে।
বিচারককে ন্যায়নিষ্ঠ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেনلِدْ
“তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে।” (সূরা
আন-নিসা : ৫৮)
বিচারককে পক্ষপাতহীন হতে হবে। বিচারের রায় যদি নিজের আপনজনদের বিরুদ্ধেও যায় তাহলেও ন্যায়
বিচার করতে হবে। মহানবী (স) এ ব্যাপারে বলেন“ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে যদিও নিজের বিপক্ষে যাক না কেন।” (বুখারী)
সারসংক্ষেপ
ইসলামের ইতিহাসে মদীনা ইসলামী রাষ্ট্র হচ্ছে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম
রাষ্ট্র। আধুনিক কালের রাষ্ট্রসমূহে, বিধি-বিধান প্রণয়ন, তার বাস্তবায়ন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার যে সকল কার্যক্রম
পারিচালিত হচ্ছে রাসূল (স.)-এর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে ও সকল বিভাগের সঠিক বাস্তবায়ন ছিল। পার্থক্য এটতুকু যে,
তখন বিভাগগুলোকে পৃথক করা হয়নি।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১. কয়টি বিভাগের সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় ?
ক. ২টি; খ. ৩টি;
গ. ৪টি; ঘ. ৫টি।
২. আইন প্রণয়নের কাজ রাষ্ট্রের কোন বিভাগ পালন করে ?
ক. বিচার বিভাগ; খ. নির্বাহী বিভাগ;
গ. আইন বিভাগ; ঘ. পুলিশ বিভাগ।
৩. ইসলামী রাষ্ট্রের যে বিভাগ আইন প্রণয়ন করে তার নাম কি ?
ক. পার্লামেন্ট; খ. মজলিসে শূরা;
গ. সংসদ; ঘ. নিরাপত্তা বিভাগ।
৪. মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের আইনের মূল প্রণেতা কে ছিলেন ?
ক. আল্লাহ; খ. রাসূল (সা.);
গ. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) ঘ. আবু বকর (রাঃ)।
৫. মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি কে ছিলেন ?
ক. হযরত আবু বকর (রা); খ. স্বয়ং রাসূল (স);
গ. হযরত আবু উবায়দা (রা); ঘ. হযরত মায়াজ (রা)।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. একটি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো কয়টি ও কী কী ? সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২. মজলিসে শূরা কী ? তার কাজ কী লিখুন।
৩. শূরা গঠনে আল্লহর নির্দেশ কী ? বর্ণনা করুন।
৪. রাসূল (স.) কীভাবে প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ দিতেন ? আলোচনা করুন।
৫. রাসূল (স.)-এর বিচার বিভাগ কেমন ছিল ? লিখুন।
বিষদ উত্তর-প্রশ্ন
১. মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রয়োজনীয়াতা ও গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
২. মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]