খোলাফায়ে রাশেদূন বলতে কী বুঝায় ? হযরত আবু বকর (রা.)এর জীবনী হযরত উমরের (র) জীবনী হযরত উসমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ইসলামে তাঁর অবদান

খোলাফায়ে রাশেদূন
খোলাফায়ে রাশেদূন ঃ ধর্মীয় দৃষ্টিতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রধান প্রশাসনিক কাঠমো হল খিলাফত। ইসলামী
সমাজে নবুয়তের পর খিলাফতের মর্যাদা। খলীফা শব্দটি একবচন, বহুবচনে খোলাফা (خلفاء , (এর উৎপত্তি
খিলাফত (خلافة (শব্দ থেকে। খিলাফত-এর শাব্দিক অর্থ প্রতিনিধিত্ব বা স্থলাভিষিক্ত।
রাসূল করীম (স.)-এর ইন্তিকালের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্রে তাঁর আদর্শ ও নীতি অনুযায়ী যিনি ধর্মীয় ও পার্থিব
ক্ষমতার অধিকারী হন তিনি, তার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, শাসনকার্য পরিচালনা করেন। নিজ
নিজ যুগে উম্মতের নেতৃত্ব দেন, তাঁকে খলীফা আর তাঁর দায়িত্বকে খিলাফত বলা হয়। এ স¤পর্কে নবী করীম
(স.) ইরশাদ করেন “তোমাদের আগে বনী ইস্রাঈলের নবী ও রাসূলগণ রাজ্য পরিচালনা করতেন। এক নবীর
ইন্তিকালের পর অন্য নবী তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতেন। কিন্তু এখন থেকে আর কোন নবী ও রাসূল আসবে না।
তাই আমার পরে খলীফাগণ তোমাদের নেতৃত্ব দিবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
মহানবীর খলীফাগণ বিচার সভায় ছিলেন ন্যায়বিচারক উপদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন উপযুক্ত উপদেশদাতা। সৎ
কৌশল অবলম্বনে অপ্রতিদ্ব›দ্বী কৌশলী ছিলেন, যুদ্ধের রণাঙ্গনে সুনিপুণ সেনাপতি ও সর্বগুণে গুণান্বিত ছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদূনের পরিচয়
নিæে সংক্ষিপ্তভাবে চার খলীফার পরিচয় পেশ করা হলমহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পর যে চারজন মহৎ ব্যক্তি তাঁর যথার্থ প্রতিনিধিরূপে ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজের
নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদূন হিসেবে পরিচিত। তাঁরা হলেন হযরত আবু
বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলী (রা.)। এ চারজন সাহাবী পরপর খলীফা
হিসেবে (৬৩২-৬৬১ খ্রিস্টাব্দ) প্রায় ত্রিশ বছর খিলাফতের আসন অলংকৃত করেন তাঁদের সম্বন্ধে রাসূলের বাণী :
“আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু হযরত আবু বকর (রা.), আল্লাহর নির্দেশ পালনে সবচেয়ে কঠোর
হযরত উমর (রা), অধিক লজ্জাবোধকারী হযরত উসমান (রা.) এবং সবচেয়ে বেশী ন্যায়বিচারক আলী (রা)।”
(আল-হাদীস)
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কোন কোন ঐতিহাসিক হযরত উমর ইবন আবদুল আযীযকে ইসলামের
পঞ্চম খলীফা বলে অভিহিতো করেছেন। তিনি উমাইয়া শাসন-নীতিকে বর্জন করে ইসলামী নীতিকে
পুনরুজ্জীবিত করেন। ইসলামী খিলাফতের নিয়ম অনুযায়ী খলীফা নির্বাচিত এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন।
তাই তিনিও খোলাফায়ে রাশেদারূপে গণ্য।
এক নজরে খোলাফায়ে রাশেদূন ও তাঁদের সময়কাল
খলীফা খেলাফতের সূচনা সমাপ্তি সময়কাল
হযরত আবু বকর (রা.) ১৩ রবিউল আউয়াল
১১ হিঃ
২২ জুমাদাল
উখরা ১৩ হিঃ
২ বছর ৩ মাস ৯
দিন
হযরত উমর (রা.) ২৩ জুমাদাল উখরা
১৩ হিজরী
২৬ যিলহজ্জ ২৩
হিজরী
১০ বছর ৬ মাস ৩
দিন
হযরত উসমান (রা.) ১ মুহাররাম ২৪
হিজরী
১৮ যিলহজ্জ ৩৫
হিজরী
১১ বছর ১১ মাস
১৭ দিন
হযরত আলী (রা.) ২৪ যিলহাজ্জ ৩৫
হিজরী
১৭ রমযান ৪০
হিজরী
৪ বছর ৮ মাস ২৩
দিন
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)
নাম ঃ নাম-আবদুল্লাহ, ডাকনাম-আবু বকর, উপাধি-সিদ্দীক ও আতীক। পিতার নাম-উসমান, আবু কোহাফা।
মাতার নাম- সালমা।
জন্ম ঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরায়শ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।
ইসলাম পূর্ব জীবন ঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বিরাট ব্যবসায়ী ও স¤পদশালী
ব্যক্তি ছিলেন। সততা, সরলতা ও বিশ্বস্ততায় তাঁর খ্যাতি ছিল। জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, সহনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার জন্য
মক্কাবাসী তাঁকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতো।
হযরত আবু বকর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও মূর্তি পুজা ও মদ্যপানকে ঘৃণা করতেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন ঃ
“জাহিলিয়াতের যুগেও হযরত আবু বকর (রা.) নিজের উপর মদ হারাম করেছিলেন।”
পাঠ ঃ ১
শৈশব থেকেই রাসূলে করীম (স.)-এর সাথে তাঁর গভীর ভালবাসা ও সদ্ভাব ছিল। তিনি রাসূলে করীম (স.)-
এর বিশিষ্ট বন্ধুগণের অন্যতম ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ ঃ নবী করীম (স.)-এর উপর যখন ওহী নাযিল হয়, তখন হযরত আবু বকর (রা.) বাণিজ্য
উপলক্ষে ইয়ামেনে ছিলেন। সফর থেকে ফেরার পর তিনি রাসূলে করীম (স.)-এর দরবারে হাযির হন এবং
ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে রাসূল (স.) বলেন, “আমি যার নিকটই ইসলামের দাওয়াত
পেশ করেছি সে এ ব্যাপারে কম বেশী চিন্তা ভাবনা করেছে। কিন্তু যখনই আমি আবু বকর-এর নিকট ইসলামের
দাওয়াত পেশ করি, সে কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা ছাড়া সাথে সাথে তা গ্রহণ করেছে।” বর্ণিত আছে বয়স্কদের
মাঝে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ।
সিদ্দীক উপাধি ঃ নবী করীম (স.)-এর মিরাজের ঘটনাকে যিনি সর্বপ্রথম সত্য বলে বিশ্বাস করেন তিনি হলেন
হযরত আবু বকর (রা.)। তাই তিনি “সিদ্দীক” উপাধিতে ভূষিত হন।
মদীনায় হিজরত
রাসূলের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্যলাভ ঃ মক্কার কাফির মুশরিকদের অত্যাচার দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
রাসূলে করীম (স.) আল্লাহর নির্দেশে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন এবং হযরত আবূ বকর (রা.) তাঁর সফর সঙ্গী
হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।
সাওর গুহায় অবস্থান ঃ রাসূলে করীম (স.) ও হযরত আবু বকর (রা.) -এর প্রথম মনযিল ছিল সাওর নামক
গুহা এবং সেখানে তাঁরা তিন দিন অবস্থান করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ
“যখন কাফেররা তাঁকে বহিস্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে
ছিল, তখন সে তার সঙ্গীকে বলল, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সাথে আছেন”। (সূরা আত-তাওবা :
৪০)
মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা ঃ হযরত আবু বকর (রা.) নবী করীম (স.)-এর পরামর্শে মদীনার মসজিদে
নবববীর জমির মূল্য পরিশোধ করেন এবং তাঁর দানের মধ্য দিয়েই মসজিদ নির্মাণ শুরু হয় এবং তিনি মসজিদ
তৈরির কাজে পরম উৎসাহ সহকারে দৈহিক পরিশ্রমে অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে গমন ঃ হযরত আবু বকর (রা.) হিজরতের পর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে গমন
করেন এবং তিনি একজন উপদেষ্টা ও সুকৌশলী উযীর হিসেবে নবী করীম (স.)-এর সঙ্গী ছিলেন।
স্বভাব চরিত্র
হযরত আবু বকর (রা.) ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন স্বল্পভাষী, সাহসী, ধৈর্যশীল, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী। সততা,
ধর্মভীরুতা ও বদান্যতার ক্ষেত্রে ছিলেন অদ্বিতীয়। দানশীলতা ও সত্যবাদিতার জন্য তিনি যথাক্রমে আতীক ও
সিদ্দীক উপাধিতে ভূষিত হন। ঈমানের দৃঢ়তা, কঠিন সংযম ও ন্যায়পরায়ণতা তাঁর চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
ছিল।
হযরত আবু বকর (রা.) অতীব ভদ্র ও নম্র-স্বভাবের ছিলেন। তিনি সাধারণ কাজ করতেও লজ্জাবোধ করতেন
না। অনেক সময় ভেড়া ছাগল চরাতেন, তিনি জনসেবামূলক কাজ থেকে কখনও বিরত থাকেননি।
হযরত আবু বকর (রা.) সাধারণ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা হয়েও
উষ্ট্রের চামড়া নির্মিত তাঁবুর গৃহে বাস করতেন এবং স্বীয় ব্যবসায়ের একমাত্র আয়ের দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ
করতেন।
তিনি একজন খাঁটি ধর্মভীরু মুসলমান হিসেবে সবার অগ্রে ছিলেন। দুঃস্থ মানবতার দুর্দশা লাঘব করার জন্য সর্ব
প্রথম ইসলামে ‘বায়তুলমাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় একজন
দৃঢ়চেতা রাষ্ট্র সংগঠক হিসেবে ইসলামকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন।
হযরত আবু বকর (রা.) পার্থিব ধন-স¤পদের প্রতি নিরাসক্ত ছিলেন। তিনি মুসলিম মিল্লাতকে বিশৃংখলা থেকে
রক্ষা করার জন্যই খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন ভাষণে বলেছিলেন যে, অন্য কেউ এ
দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিলে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হবেন।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অনুরাগ ঃ হযরত আবু বকর (রা.) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস ও
আনুগত ছিলেন। বংশ মর্যাদা, যোগ্যতা ও নৈতিক আদর্শের জন্য আরব সমাজে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র
ছিলেন। তিনি নবী করীম (স.)-এর সুখে দুঃখে, বিপদে-আপদে ও শান্তি-সংগ্রামে তাঁকে ছায়ার মত অনুসরণ
করেন এবং তাঁর প্রতি অবিচল বিশ্বাসের প্রমাণ পেশ করেন।
খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ
হযরত আবু বকর (রা.) ১১ হি. সালের ১৩ রবিউল আউয়াল খেলাফতর দায়িত্ব গ্রহণ করে। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক
প্রক্রিয়া সকীফা বানুসায়েদাতে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তাঁর আমলে ইসলামের গণতান্ত্রিক রূপ বাস্তবায়তি হয়। তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিত্ েখলীফা নির্বাচিত হন।
অনুরূপভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সকল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় বিশিষ্ট সাহাবাগণের সংগে পরামর্শ
করতেন।
ইতিহাসে স্থান ঃ নবী করীম (স.)-এর তিরোধানে ইসলামী রাষ্ট্রে যে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল হযরত আবু
বকর (রা.) তখন কিংকর্তব্য বিমূঢ় মুসলিম মিল্লাতকে সঠিক পথে পরিচালিত করে ইসলামকে ধ্বংস ও অবলুপ্তির
হাত থেকে উদ্ধার করেন। মাওলানা মুহাম্মদ আলী বলেন- “তাঁর নম্রতা এবং একনিষ্ঠ অনাড়ম্বর জীবন,
নীতিজ্ঞান, ই¯পাত কঠিন সংকল্প, অবিচল অধ্যবসায় এবং সর্বোপরি অটল বিশ্বাস প্রভৃতি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের
জন্য ইসলামের ইতিহাসে তাঁর স্থান মহানবীর পরেই।”
নবী করীম (স.)-এর ইনতিকালের সুযোগে সাজাহ, তুলায়হা, মুসায়লামা ও আসওয়াদ আনসিসহ কতিপয় ব্যক্তি
ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করেন। হযরত আবু বকর (রা.) উসামা এবং খালিদ প্রমুখ সেনাপতির মাধ্যমে
তাদেরকে পরাজিত করেন এবং তাদেরকে ইসলামের পতাকা তলে আসতে বাধ্য করেন। হিরার শাসনকর্তা
হরমুজ ও রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে পরাস্ত করে ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
হযরত উমর ফারূক (রা.)
নাম ও বংশ পরিচয় ঃ নাম- উমর (র); উপাধি-ফারূক। পিতার নাম- খাত্তাব। পরিচয়-উমর ইবনুল খাত্তাব।
অধিকাংশ ইতিহাসবিদদের মতে হযরত উমর (রা.) হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে ৫৮৩ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব ও যৌবন
হযরত উমর (রা.) যৌবনের প্রারম্ভেই যুদ্ধ বিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা ও বংশ তালিকা শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় আয়ত্ত
করেন।
তিনি আরবের ওকায মেলায় কুস্তিতে লড়তেন, কিতাবুল আশরাফ গ্রন্থে উল্লেখ আছে “হযরত উমর (রা.)
একজন মস্ত বড় পাহলোয়ান ছিলেন, অশ্বারোহী হিসেবে তাঁর পারদর্শিতা সর্বজনবিদিত।”
ঐতিহাসিক বালাযুরীর মতে “রাসূলে করীম (স.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির সময় সমগ্র কুরায়শ বংশে মাত্র সতের জন
ব্যক্তি লেখা পড়া জানতো। হযরত উমর (রা.) এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।”
তিনি যৌবনের এক পর্যায়ে জীবিকা অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক উন্নতি সাধন
করতে সমর্থ হন।
তিনি ব্যবসা উপলক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে গমন করেছিলেন। ফলে অনেক জ্ঞানী-গুণির সাথে মেলামেশার সুযোগ
পান। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর মধ্যে উন্নত ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদা, অভিজ্ঞতা এবং বিচার বুদ্ধি ইত্যাদি গুণের
সমাবেশ ছিল। আর তা ছিল তাঁর বিভিন্ন গুণীজনের সাথে মেলামেশার ফল।
ইসলাম গ্রহণ ঃ কুরাইশ সরদারদের মধ্যে হযরত উমর (রা.) ও আবু জাহল ইসলামের ঘোরতর শত্রæ ছিলেন।
রাসূলে করীম (স.) তাঁদের দু’জনের জন্য দোয়া করেন-
أللهم أعز الإسلام بإحد العمرين إما عمرابن هشام و إما عمر بن الخطاب .
“হে আল্লাহ ! ওমার ইবন হিশাম (আবু জেহেল) অথবা উমর ইবনুল খাত্তাব এ দু’জনের একজনকে ইসলামে
প্রবেশ করার তৌফিক দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী করুন।” আল্লাহ তা‘আলা হযরত উমর (রা.)-কে গ্রহণ
করেন।
বীর শ্রেষ্ঠ উমরের ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত করে। তখন পর্যন্ত মাত্র ৪০
জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল সাতাশ বছর। হযরত উমর ইসলাম গ্রহণ করার
পর প্রকাশ্যে মুসলমানগণ নামায পড়তে আরম্ভ করে। এ সময় মহানবী (স.) তাঁকে فاورق) ফারুক) উপাধিতে
ভূষিত করেন। (আল ফারুক- শিবলী নোমানী)
হযরত উমর (রা.) -এর ইসলাম গ্রহণের পর হতে ইসলাম প্রচারের গতি তীব্র হয়। তিনি কাফিরদের একত্র
করে স্বীয় ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। ফলে ইসলামের শক্তি ও মর্যাদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে
থাকে।
হযরত উমর (রা.) মুসলমান হওয়ার পর মুসলমানগণ অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে হিজরত করেন। উমর (রা.)
কাফেরদের কোন এক সভায় উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন- “আমি মদীনা যাচ্ছি, যে নিজের আপন মাতাকে কাঁদাতে
চাও, ঐ উপত্যকার নিকটে আমার সাথে মোকাবিলা করবে ; তবে মনে রাখবে তাঁকে ফিরাবার সাহস কারো
নেই।” হযরত উমর নিরাপদে মদীনায় পৌঁছে গেলেন।
ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, “হযরত উমরের মুসলমান হওয়া ইসলামের বিজয় স্বরূপ। তাঁর হিজরত ছিল
আল্লাহর সাহায্য স্বরূপ। তিনি ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। তাই তো আমরা তাঁকে হিজরতে, আযান
প্রচলনে, বদরে, উহুদে, বানূ নাযীরের নির্বাসনে, খন্দকের যুদ্ধে, হোদায়বিয়ার সন্ধিতে, খায়বরের যুদ্ধে, মক্কা
বিজয়ে, হোনায়েনের যুদ্ধে। তাবুক অভিযানে আবু বকরের খলীফা নির্বাচনে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে পাই।”
হযরত উমর (রা)-এর চরিত্র
হযরত উমর (রা.) ইসলামী জগতে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। মহাজ্ঞানী, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, উত্তম
ব্যবস্থাপনা, ন্যায়-বিচার, ধার্মিকতা, সরলতা, সত্যবাদিতা, সত্যেনিষ্ঠা পুজা, ধৈর্য ও সহনশীলতা ও
কোমলতাসহ বহুমুখি গুণের অধিকারী ছিলেন।
হযরত উমর (রা.) সহজ সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। ইবনয় ও নম্রতার সাথে সারা রাত আল্লাহর
ইবাদত করতেন। জাগতিক লোভ-লালসা ও জাঁক-জমক তাঁকে ¯পর্শ করতে পারেনি।
হযরত উমর (রা.) মদীনার শহর ও শহরতলীতে গভীর রাতে বের হতেন এবং রাজ্যে কোন গরীব-দুঃখী আছে
কিনা তা পরিদর্শন করতেন, প্রয়োজনে তিনি নিজের কাঁধে খাদ্য সামগ্রী বহন করে দীন-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ
করতেন। এগুলো ছিল তাঁর জনসেবার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত।
হযরত উমর (রা.) ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াত’ তথা নবী সা. এর পদ্ধতি আদর্শ ও বৈশিষ্ট্যগুলো
সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ ও সংরক্ষণ করতে যথেষ্ট যতœবান ছিলেন। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, ''হযরত উমর (রা.) -
এর জীবন চরিত্র অল্প কথায় বলা যায়, সরলতা ও কর্তব্য জ্ঞান ছিল তাঁর জীবনাদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা ও
একনিষ্ঠতা ছিল তাঁর শাসনের মূলনীতি।”
তিনি ছিলেন সঠিক অর্থেই ন্যায়বিচারক। তিনি বিচার বিভাগকে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য জ্ঞানীদের বিচারক
নিযুক্ত করতেন। তাঁর ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচারের খ্যাতি সর্বকালের জন্য উজ্জল দৃষ্টান্ত।
ইসলামী গণতন্ত্রের বীজ প্রথম অংকুরিত হয় হযরত মুহাম্মদ (স)-এর সময়ে। আর তা পুর্ণাঙ্গরূপ লাভ করে
হযরত উমরের সময়কালে। তাঁর বলিষ্ঠ শাসন নীতি এবং প্রশক্ষিণ কার্যক্রম গণতন্ত্রেরর আদর্শে সুন্দর ও স্বার্থক
হয়ে উঠেছিল।
এককথায় হযরত উমর (রা.) -এর মত বহুমুখী গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিত্ব পৃথিবীর ইতিহসে বিরল। ন্যায়পরায়ণতা, সত্য নিষ্ঠা, কোমলতা ও সংযমে তিনি ছিলেন নবী করীম (স.)-এর সার্থক প্রতিচ্ছবি।
হযরত উসমান (রা.)
নাম-উসমান, উপাধি- যুন্নূরাইন, পিতার নাম- আফফান, মাতার নাম- আরওয়া, যিনি রাসূল (স.)-এর আপন
ফুফী উম্মে হাকিম ইবনতে আবদুল মুত্তালিব-এর কন্যা ছিলেন।
হযরত উসমান (রা.) কুরায়শ বংশের একটি বিখ্যাত শাখা বনু উমাইয়া গোত্রে রাসূল (স.)-এর হিজরতের ৪৬
বছর পূর্বে ৫৭৩/৫৭৬ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণ ঃ রাসূল করীম (স.)-এর ইসলাম প্রচার কালীন সময়ে হযরত উসমান (রা.) -এর বয়স ছিল
চৌত্রিশ বছর। তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
যুন্নুরাইন উপাধি লাভ ঃ ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, তাঁর জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের সূচনা
হয়। তিনি রাসূল করীম (স.)-এর দু’ কন্যাকে বিবাহ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। প্রথমতঃ হযরত রুকাইয়া
(রা.) -কে বিবাহ করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর হযরত উম্মে কুলসূমকে বিবাহ করেন। এ জন্য তাঁকে যুন্নূরাইন
বা দু’টি আলোর অধিকারী’ খেতাব প্রদান করা হয়।
হযরত উসমানের অবদান
মদীনায় হিজরতের পরিবেশ সৃষ্টি হল এবং রাসূল করীম (স.) সকল সাহাবাকে মদীনায় হিজরতের ইংগিত
দিলেন। হযরত উসমান (রা.) ও তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে মদীনায় চলে গেলেন এবং তিনি হযরত আওস
ইবন সাবিত (রা.) -এর অতিথি হলেন। রাসূল করীম (স.) তাঁর ও হযরত আওস (রা.) -এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব
কায়েম করে দিলেন। এই ভ্রাতৃত্ব উভয় পরিবারকে এত বেশী ভালবাসা ও একাত্মতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল
যে, হযরত উসমানের ইন্তিকালে হযরত হাসসান ইবনে সাবিত (রা.) এক করুণ মর্সিয়া লিখেছেন।
সমাজ সংস্কারে তাঁর অবদান
রুমা কূপ ক্রয় ঃ মদীনা আগমনের পর মুহাজিরদের পানির কষ্ট দেখা দিল। সারা শহরে একমাত্র রুমা কূপের
পানি পানোপযোগী ছিল। কিন্তু জনৈক ইয়াহূদী এ কূপটির মালিক ছিল। সে এটিকে নিজের উপার্জনের উপায়
হিসেবে ব্যবহার করছিল। হযরত উসমান (রা.) ১৮ হাজার দিরহাম দিয়ে এই কূপটি ক্রয় করে মুসলমানদের
জন্য ওয়াকফ করে দেন এবং মুসলমানদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
মসজিদ স¤প্রসারণ ঃ তৎকালীন সময় মসজিদে নববী ছোট ছিল। হযরত উসমান (রা.) অনেক উচ্চ মূল্যে
উহার সংলগ্ন জমি ক্রয় করেন এবং মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। ওয়াকফকৃত জমির স্থানে রাসূল করীম
(স.) তাঁকে বেহেশতের শুভ সংবাদ প্রদান করেন।
যুদ্ধ তহবিলে দান ঃ হযরত উসমান (রা.) ইসলাম পূর্বকাল হতেই ছিলেন অত্যন্ত স¤পদশালী ও বিখ্যাত
ব্যবসায়ী। এ প্রাচুর্যের কারণে তাঁকে সকলে গণী (ধনী) নামে ডাকাতো। তিনি ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর
তাঁর অর্থ স¤পদকে আল্লাহর রাস্তায় অকাতরে ব্যয় করতেন। আরবের সকলে তাঁকে দানশীল হিসেবে জানত।
তাবুকের যুদ্ধে তিনি দশ হাজার সৈন্যের খরচ বহন করেন। তাছাড়া এক হাজার উট, সত্তরটি ঘোড়া, এক হাজার
দীনার রাসুল (স.)-এর দরবারে পেশ করেন। নবী করীম (স.) তাঁর উপর সন্তষ্ট হয়ে বলেন, “আজকের পরে
উসমান যদি এ জাতীয় কোন ভাল কাজ নাও করে, তাতে কোন ক্ষতি নেই।”
হযরত উসমান (রা.) -এর চরিত্র
বাল্যকাল হতেই তিনি নম্র। মহানুভবতা ও ন্যায় নিষ্ঠার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। সরলতা, কোমলতা, ধৈর্য, ইবনয়,
ধর্মভীরুতা, দানশীলতা ও সহনশীলতা তাঁর চরিত্রের ভূষণ ছিল।
হযরত উসমান (র) প্রায়ই আল্লাহর ভয়ে কাঁদতেন। মৃত্যু, কবর ও পরকালের চিন্তা ছিল তাঁর সব সময়ের
সাথী। তিনি জানাযা যেতে দেখলে দাঁড়িয়ে যেতেন আর তখন তাঁর চক্ষু থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অশ্রæ নির্গত
হতো। কবরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় কাঁদতে কাঁদতে তাঁর দাঁড়ি সিক্ত হয়ে যেত। এ সব গুণ ছির
তাঁর আল্লাহভীতির জ্বলন্ত প্রমাণ।
হযরত উসমান (রা.) ছিলেন অত্যন্ত ইবনয়ী, নম্র ও সহজ-সরল প্রকৃতির। আপন গৃহে বহু গোলাম ও বাঁদী
থাকা সত্তে¡ও নিজের কাজগুলো নিজের হাতে স¤পাদন করতেন। এজন্য অন্যকে কষ্ট দিতেন না। কেউ কঠোর
ব্যবহার করলে বা কটু কথা বললে তিনি কোমল স্বরে তার উত্তর দিতেন।
হযরত উসমান (রা) ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী। সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে দানশীলও
করেছিলেন। নিজের ধন-দৌলত দ্বারা ইসলামকে এমন এক সময় সাহায্য করেছেন যখন ইসলামের সবচেয়ে
বেশী প্রয়োজন ছিল উল্লেখ্য যে, তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের মধ্যে তাঁর সমকক্ষ কেউ ধনী ছিল না।
হযরত উসমান (রা.) ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি ছিলেন। বিপদে-আপদে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিতেন।
শাহাদাতের পূর্বে পরপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি অসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এ অবস্থা দেখে
হাজার হাজার সহযোগী ও আনসার প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য সদা সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্য ও পরম
সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি হয়ে রক্তপাতের অনুমতি দেন নি। তিনি নিজের মহান চরিত্রের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন দেখিয়ে
চির বিদায় নিলেন।
রাসূলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ঃ হযরত উসমান (রা.) রাসূল করীম (স.)-কে অত্যধিক সম্মান করতেন। নবী
করীম (স.)-এর পরিবারবর্গের ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণের প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন। নিজের খিলাফতকালে
রাসূল (স.)-এর পবিত্র স্ত্রীগণের ভাতা দ্বিগুণ করে দেন।
হযরত আলী (রা.)
নাম ও বংশ পরিচয় ঃ নাম- আলী, ডাকনাম- আবুল হাসান, আবু তুরাব, উপাধি- হায়দার, পিতার নাম আবু
তালেব ও মাতার নাম ফাতেমা।
বংশ পরিচয় ঃ বংশ পরিচয়ের দিক থেকে তিনি আলী ইবনে আবু তালেব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম
ইবনে আবদে মান্নাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কায়াব। হযরত আলী (রা.) নিজের
চাচাত বোন ফাতিমা ইবনতে মুহাম্মদকে (স) বিবাহ করেছিলেন। তাই হযরত আলী (রা.) পিতৃকুল মাতৃকূল
উভয় দিক থেকেই হাশেমী এবং তিনি নবী করীম (স.)-এর চাচাত ভাই।
জন্ম ঃ হযরত আলী (রা.) রাসূলে করীম (স.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে ৬০০ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা আবু তালিবের মৃত্যুর পর হযরত আলী (রা.) নবী করীম (স.)-এর হাতে লালিত-পালিত হন।
ইসলামে দীক্ষা ঃ হযরত আলী (রা.) বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল
দশ বছর। বাল্যকালেই লেখাপড়া শিখেন এবং যৌবনে পদার্পণেই অসি চালনা শিক্ষা করেন। তিনি ছিলেন
শিক্ষা-দীক্ষায় বড় আলেম ও যুদ্ধের ময়দানে কটীন যোদ্ধা। তিনি অসি ও মসী উভয়টি দিয়ে আজীবন ইসলামের
খেদমত করে গিয়েছেন।
মক্কী জীবন ঃ ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত আলী (রা.) জীবনের তেরটি বছর মক্কায় অতিবাহিতো করেন।
দিবা রাত্র রাসূলে করীম (স)-এর সাথে থাকতেন। এজন্য পরামর্শ সভায়, শিক্ষা ও অনুশীলনের মজলিসে,
কাফির ও মুশরিকদের সাথে বিতর্ক আলোচনায় এবং ইবাদত বন্দেগীসহ সর্বত্র তিনি শরীক থাকতেন।
হাজ্জের সময় নবী করীম (স.) হযরত আবু বকর ও হযরত আলী (রা.)-কে নিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।
কখনো কখনো রাসূল (স.)-এর সাথে কাবাগৃহে চলে যেতেন এবং মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে চুরে বিকৃত করে দিতেন।
রাসূল (স.)-এর প্রতি হিজরতের প্রত্যাদেশ হলে নবী করীম (স.) হযরত আলীকে নিজের বিছানায় শায়িত রেখে
আবু বকর (রা.) কে নিয়ে মদীনার পথে রওয়ানা হলেন। রাসূলে করীম (স.)-এর মক্কা ত্যাগের দু’তিন দিন
পর পর্যন্ত হযরত আলী মক্কায় অবস্থান করেন, অতঃপর তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে স্বদেশ ত্যাগ করে মদীনায়
হিজরত করেন।
শিক্ষা-দীক্ষা ঃ হযরত আলী (রা.) বড় মাপের শিক্ষিত ও পন্ডিত ছিলেন। রাসূল (স.) বলেছেন, “আমি
জ্ঞানের শহর আর আলী (রা.) -এ জ্ঞানের দরজা। তিনি যেমন ছিলেন বড় শিক্ষিত তেমন ছিলেন অসীম সাহসী ও তেজস্বী।”
যুদ্ধে অংশগ্রহণ ঃ হযরত আলী (রা.) ইসলামের প্রায় প্রত্যেকটি যুদ্ধেই অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে
অসীম বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। নবী করীম (স.) তাঁর বীরত্বে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে নিজের তলোয়ার
যুলফিকার প্রদান করেছিলেন। খায়বর বিজয়ে তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। তিনি খায়বর যুদ্ধে
খায়বরের কামূস দূর্গের দরজা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। হযরত আলী (রা.)-এর এ বীরত্ব চিরদিন
ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
বিবাহ ঃ হযরত আলী (রা.) ২৪ বছর বয়সে রাসূল (স.)-এর øেহের কন্যা বিবি ফাতিমাকে বিবাহ করেন।
তিনি একদিকে রাসূল (স.)-এর জামাতা আর অন্য দিকে চাচাত ভাই। হযরত ফাতিমা (রা.) -এর ঘরে তাঁর
তিন ছেলে হাসান, হুসাইন ও মুহসিন এবং দু’ মেয়ে যয়নব ও উম্মে কুলসূম জন্মগ্রহণ করেন।
হযরত আলী (রা.)-এর চরিত্র
হযরত আলী (রা.) ছিলেন অনাড়ম্বর, সরল ও আত্মত্যাগের মূর্ত প্রতীক। মুসলিম জাহানের খলীফা হয়েও
স্বহস্তে নিজের যাবতীয় কাজকর্ম স¤পাদন করতেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হৃদয়বান মুসলমান ছিলেন।
হযরত আলী (রা.) ছিলেন আরবের অন্যতম পন্ডিত ব্যক্তি। তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতা, সাহিত্যো ও আলংকারিক দিক
আরবী সাহিত্যো ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর বিভিন্ন ঐতিহাসিক চিঠিপত্র, কবিতা ইত্যাদি সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যের
আকর্ষণীয় নিদর্শন। তিনি কুরআন, হাদীস, কাব্য, দর্শন ও আইন শাস্ত্রে প্রগাঢ় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তাঁর
লিখিত “দীওয়ানে আলী” আজও আরবী সাহিত্যের অমূল্য স¤পদ। মুসলিম বিশ্বের শিক্ষানুরাগী ও কাব্যানুরাগী
সকলের কাছে এ কাব্য গ্রন্থ বহুল পরিচিত ও সমাদৃত। আরবী ব্যাকরণের ভিত্তি হযরত আলী (রা.) -ই স্থাপন
করেছিলেন। তিনি নিজের সাথীদের মধ্য থেকে আবুল আসওয়াদ দুয়াইলী নামক জনৈক ব্যক্তিকে একাজে
নিয়োগ করেছিলেন।
যুদ্ধে গমন ও আসাদুল্লাহ উপাধি ঃ হযরত আলী (রা.) একজন সাহসী যোদ্ধা ও বীর ছিলেন। তিনি বদর,
উহুদ, খন্দক, খাইবর ও হুনাইনের যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেন। রাসূল (স.) তাঁর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) উপাধিতে ভূষিত করেন।
১। হযরত আবু বকর (রা.) -এর উপাধি
ক. সিদ্দীক; খ. সিদ্দীক ও আতীক;
গ. আবু কোহাফা; ঘ. বিশ্বস্ত বন্ধু।
২। বয়স্কদের মাঝে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী
ক. হযরত খাদীজা (রা.); খ. হযরত আবু বকর (রা.);
গ. হযরত হামযা (রা.); ঘ. হযরত আব্বাস (রা.)।
৩। হযরত মুহাম্মদ (স.) হিজরতে সময় সাওর গুহায় কয়দিন অবস্থান করেন?
ক. ৫ দিন; খ. ৩ দিন;
গ. ৭ দিন; ঘ. ১ দিন।
৪। হযরত উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন
ক. ২৫ বছর বয়সে; খ. ২৭ বছর বয়সে;
গ. ১৮ বছর বয়সে; ঘ. ৩২ বছর বয়সে।
৫. তৃতীয় খলীফা ছিলেনক. হযরত উমার (রা.); খ. হযরত উসমান (রা.);
গ. হযরত আলী (রা.); ঘ. হযরত আবু বকর (রা.)।
এক কথায় উত্তর দিন
১। খোলাফায়ে রাশেদূনের শাসনামল কয় বছর ছিল ?
২। মদীনায় হিজরতে নবী করীম (স.)-এর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য কার হয়েছিল ?
৩। যিন্নুরাইন কাকে উপাধি দেয়া হয়েছিল ?
৪। আসাদুল্লাহ কার উপাধি ছিল ?
৫। বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন ?
৬। খোলাফায়ে রাশেদূনের প্রথম খলীফা কে ছিলেন ?
৭। ফারুক কার উপাধি ছিল?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১। হযরত আবু বকর (রা.) স¤পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
২। ইসলামের শক্তি বৃদ্ধিতে হযরত উমর (রা.)-এর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৩. হযরত উসমান (রা.) কে যিন্নূরাইন উপাধি কেন দেয়া হয়েছিল ? সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৪. হযরত আলী (রা.) -এর চারিত্রিক গুণাবলী সংক্ষেপে লিখুন।
বিশদ উত্তর প্রশ্ন
১। খোলাফায়ে রাশেদূন বলতে কী বুঝায় ? আলোচনা করুন।
২। হযরত আবু বকর (রা.)এর জীবনী আলোচনা করুন।
৩। হযরত উমরের (র) জীবনী আলোচনা করুন।
৪। হযরত উসমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ইসলামে তাঁর অবদান স¤পর্কে বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]