হযরত উমরের খলীফা নির্বাচন ইসলাম একটি শূরা ভিত্তিক সরকার ইসলামী সরকার ব্যবস্থায় অবাধে মত প্রকাশের সুযোগ খলীফা উসমানের কৃত অঙ্গীকারগুলো

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর খিলাফত হ’তে শুরু করে হযরত আলী (রা)-এর খিলাফত পর্যন্ত এ সময়
কালকে (৬৩২ খ্রীঃ হতে ৬৬১ খ্রীঃ) ইসলামের ইতিহাসে খিলাফতে রাশেদা বলে। আর যাঁরা এ সময় পর্যন্ত
মুসলিম জাহানের রাষ্ট্রনেতা ছিলেন তারা হলেন ‘খোলাফা রাশেদূন’। নবী করীম (স) এর জীবদ্দশায় ইসলামের
যে সকল শাসন নীতি চালু ছিল। তাঁর পরে সেসব মূলনীতির উপর খোলাফা রাশেদূনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
মহানবী (সা) এর প্রত্যক্ষ শিক্ষা-দিক্ষা ও কার্যকর নেতৃত্বের ভিত্তিতে যে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার প্রত্যেক
সদস্যই জানতো, ইসলামের বিধি-বিধান ও প্রাণসত্তা অনুযায়ী কোন্ ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়া
উচিত। ইসলাম একটি শূরাভিত্তিক সরকার কামনা করে। তাই খোলাফায়ে রাশেদূনের আমলে কোন
বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বল প্রয়োগ করে কোন ব্যক্তি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি। খেলাফত লাভ
করার জন্য কেউ নিজের তরফ থেকে চেষ্টা-তদবীর ও করেনি, কোন প্রকার প্রচেষ্টাও চালায়নি। বরং জনসাধারণ
তাদের স্বাধীন মর্জী মতো পর পর চারজন সাহাবীকে তাদের খলীফা মনোনীত করেছে। মুসলিম মিল্লাত এ
খেলাফতকে সত্যাশ্রয়ী খেলাফত বলে গ্রহণ করেছে। তাই মুসলমানদের দৃষ্টিতে এটি হচ্ছে খেলাফতের
সাত্যিকার পদ্ধতি। নিæে খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হল।
নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন
চার খলীফাই তৎকালীন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের নির্বাচিত হওয়ার প্রক্রিয়া নি¤œরূপ।
হযরত আবু বকর (রা) এর খলীফা নির্বাচন
খলীফা হওয়ার জন্য হযরত উমর (রা) হযরত আবূ বকর (রা)-এর নাম প্রস্তাব করেন। মদীনার সকলেই কোন
প্রকার চাপ-প্রভাব এবং প্রলোভন ব্যতীত সন্তুষ্টচিত্তে তাঁকে গ্রহণ করে নেয় এবং তাঁর হাতে বায়আত করে।
হযরত উমর (রা)-এর খলীফা নির্বাচন
হযরত আবু বকর (রা) তাঁর ওফাতকালে হযরত উমর (রা) কে খলীফার জন্য মনোনীত করেন। অতঃপর
জনগণকে মসজিদে নববীতে সমবেত করে বলেন ঃ
“আমি যাকে স্থলাভিষিক্ত করছি তোমরা কি তার উপর সন্তুষ্ট ? আল্লাহর শপথ ! সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বুদ্ধি-
বিবেক প্রয়োগে আমি বিন্দুমাত্র ও ত্রুটি করিনি। আমার কোন আত্মীয়-স্বজনকে নয়, বরং উমর ইবনুল খাত্তাবকে
আমার স্থলাভিষিক্ত করেছি। সুতরাং তোমরা তাঁর নির্দেশ মানবে এবং আনুগত্য করবে।” সবাই সমস্বরে বলে
উঠে ঃ আমরা তাঁর নির্দেশ শুনবো এবং মানবো। তাঁর মৃত্যুর পর হযরত উমর (রা) খলীফা হিসেবে নির্বাচিত
হন এবং লোকেরা তাঁর হাতে বাইয়াত করেন।
হযরত উসমান (রা) খলীফা নির্বাচন
অনুরূপভাবে হযরত উমর (রা) তাঁর ওফাতকালে খলীফা নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচন কমিটি গঠন করে
বলেন ঃ ‘মুসলমানদের পরামর্শ ব্যতীত যে ব্যক্তি জোর করে আমীর হওয়ার চেষ্টা করবে, তাকে প্রতিরোধ
পাঠ ঃ ২করো” খেলাফত যাতে বংশানুক্রমিক পদাধিকারে পরিণত না হয়, সেজন্য তিনি খেলাফত লাভের যোগ্য
ব্যক্তিদের তালিকা থেকে নিজের ছেলের নাম সু¯পষ্টভাবে বাদ দিয়ে দেন। যাদেরকে নিয়ে এ নির্বাচনী কমিটি
গঠিত হয়, হযরত উমরের মতে তারা ছিলেন জাতির মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয়।
কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আবদূর রহমান ইবনে আওফকে কমিটি শেষ পর্যন্ত খলীফার নাম প্রস্তাব করার
ইখতিয়ার দান করে। সাধারণ লোকদের মধ্যে ঘোরা ফেরা করে তিনি জানতে চেষ্টা করেন। কে সবচেয়ে বেশী
জনপ্রিয়। পবিত্র হজ্জ শেষ করে সে সব লোক বিভিন্ন এলাকায় ফিরে যাচ্ছিল, তিনি তাদের সাথেও আলোচনা
করেন। এ জনমত যাচাইয়ের ফলে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অধিকাংশ লোকই হযরত উসমান (রা)
এর পক্ষে। তাই তাঁকেই খেলাফতের জন্য নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ জন সমাবেশে তাঁর বায়আত করেন।
হযরত আলী (রা)-এর খলীফা নির্বাচন
হযরত উসমান (রা) এর শাহাদাতের পর কিছু লোক হযরত আলী (রা)-কে খলীফা করতে চাইলে হযরত
আবদুর রহমান ইবনে আওফ বলেন ঃ ‘তোমাদের কার এমন ইখতিয়ার নেই।’ এটাতো শূরার সদস্য এবং বদর
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের কাজ। তাঁরা যাঁকে খলীফা করতে চান। তিনিই খলীফা হবেন। আমরা মিলিত হবো
এবং এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবো।” ইমাম তাবারী হযরত আলী (রা)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন”
“গোপনে আমার বায়আত অনুষ্ঠিত হতে পারে না, তা হতে হবে মুসলমানদের মর্জী অনুযায়ী।”
হযরত আলী (রা) তাঁর ওফাতকালে যখন আপন পুত্রদেরকে শেষ ওসিয়ত করেছিলেন ঠিক সে সময় জনৈক
ব্যক্তি আরয করলো, আমীরুল মোমিনীন ! আপনি আপনার উত্তরসূরী মনোনয়ন করছেন না কেন ? জবাবে তিনি
বলেন ঃ আমি মুসলমানদেরকে সে অবস্থায় ছেড়ে যেতে চাই, যে অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিলেন রাসূল (স)”। (এ
ইউনিটের ৩য় পাঠের শুরুতে এ স¤পর্কে আলোচিত হয়েছে সেখানেও দেখা যেতে পারে)।
এসব ঘটনা থেকে ¯পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, খেলাফত স¤পর্কে খোলাফায়ে রাশেদূন এবং রাসূল (স)-এর
সাহাবীদের সর্বসম্মত মত এই ছিল যে, খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারে পদ্ধতি তথা খেলাফত একটা নির্বাচন
ভিত্তিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত, মুসলমানদের পার¯পরিক পরামর্শ এবং তাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের মাধ্যমেই
তা কায়েম করতে হবে। বংশানুক্রমিক বা বল প্রয়োগের দ্বারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া এবং কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব
তাঁদের মতে খেলাফত নয় ; বরং তা রাজতন্ত্র। খেলাফত ও রাজতন্ত্রের যে সু¯পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা সাহাবা
কেরাম পোষণ করতেন, হযরত আবু মুসা আল-আশআরী (রা) তা ব্যক্ত করে বলেন“এমারত (অর্থাৎ খেলাফত) হচ্ছে তাই যা প্রতিষ্ঠা করতে পরামর্শ নেয়া হয়ে থাকে, আর তরবারীর জোরে যা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা হচ্ছে রাজতন্ত্র।”
শূরা ভিত্তিক সরকার
খোলাফায়ে রাশেদূন তাঁদের সরকারের কার্যাবলী সমাধান এবং আইন প্রণয়নের ব্যাপারে জাতির বলিষ্ঠ
সিদ্ধান্তের অধিকারী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ না করে কোন কিছুই করতেন না। সুনানে দারামীতে মায়মুন ইবনে
মিহরান থেকে বর্ণিত। “হযরত আবু বকর (রা)-এর নীতি ছিল, তাঁর সামনে কোন বিষয় উত্থাপিত হলে তিনি
প্রথমে দেখতেন এ ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব কী বলে, সেখানে কোন নিদের্শনা না পেলে এ ধরনের ব্যাপারে
রাসূল (সঃ) কী ফয়সালা দিয়েছেন তা জানতে চেষ্টা করতেন। রাসূলে করীম সা. এর সুন্নায়ও কোন নির্দেশ না
পেলে জাতির নেতৃত্ব স্থানীয় এবং সৎ ব্যক্তিদের সমবেত করে পরামর্শ করতেন। সকলের পরামর্শক্রমে যে মতই
স্থির হতো, তদানুযায়ী ফয়সালা করতেন। হযরত উমর (রা)-এর কর্মনীতিও এরূপ ছিল।
পরামর্শের ব্যাপারে খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, শূরার সদস্যদের স¤পূর্ণ স্বাধীন মতামত ব্যক্ত
করার অধিকার রয়েছে। এব্যাপারে হযরত উমর (রা) এক পরামর্শ সভার উদ্বোধনী ভাষণে খেলাফতের এরূপ
পলিসি ব্যক্ত করেছেন ঃ
“আমি আপনাদেরকে যে জন্য কষ্ট দিয়েছি তা হচ্ছ এই যে, আপনাদের কার্যাবলির যে ভার আমার উপর ন্যস্ত
হয়েছে তা বহন করার কাজে আপনারা ও আমার সঙ্গে শরীক হবেন। আমি আপনাদের মধ্য হতে একজন।
আর আপনারাই সত্যের স্বীকৃতি দানকারী। আপনাদের মধ্য থেকে যাদের ইচ্ছা, আমার সাথে দ্বিমত পোষণ
করতে পারেন ; আবার যাদের ইচ্ছা আমার সাথে একমতও হতে পারেন। আপনাদের কে, আমার মতামত
সমর্থন করতে হবে- এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই এবং আমি তা চাইও না।”
বায়তুলমালকে আল্লাহ ও জনগণ প্রদত্ত একটি আমানত হিসেবে বিশ্বাস করা
খোলাফায়ে রাশেদূন বায়তুলমালকে আল্লাহ ও জনগণের আমানত মনে করতেন। বেআইনীভাবে বায়তুলমালের
মধ্যে কিছু প্রবেশ করা ও বেআইনীভাবে তা থেকে কিছু চলে যাওয়াকে তারা বৈধ মনে করতেন না। শাসক
শ্রেণীর ব্যক্তিগত স্বার্থে বায়তুলমাল ব্যবহার তাঁদের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ছিল। খোলাফায়ে রাশেদূনের প্রত্যেক
সরকার বায়তুলমালকে আল্লাহ এবং জনগণের আমানত মনে করে সত্য-ন্যয়-নীতি মোতাবেক এক একটি পাই
পয়সা উসূল করতেন। আর তা ব্যয়ও করতেন সত্য-ন্যায়-নীতি অনুসারে। হযরত উমর (রা) একদা হযরত
সালমান ফারসীকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ আমি রাজা না, খলীফা ? তিনি তৎক্ষণাৎ জবাব দেন ; “মুসলমানদের
ভূমি থেকে আপনি যদি এক দেরহামও অন্যায়ভাবে উসূল এবং অন্যায়ভাবে ব্যয় করেন তাহলে আপনি খলীফা
নন বরং আপনি রাজা।”
অপর এক প্রসঙ্গে একদা হযরত উমর (রা) স্বীয় মজলিসে বলেন ঃ ‘আল্লাহর কসম, আমি এখনও বুঝে উঠতে
পারছি না যে, আমি রাজা, না খলীফা, আমি যদি রাজা হয়ে গিয়ে থাকি, তবে তাতো এক জঘন্য ব্যাপার।”
এতে জনৈক ব্যক্তি বললো ঃ “আমীরুল মুমিনীন ! এতদুভয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে”। হযরত উমর (রা)
জিজ্ঞেস করলেন কি পার্থক্য ? তিনি বললেন ঃ খলীফা অন্যায়ভাবে কিছুই গ্রহণ করেন না। অন্যায়ভাবে কিছু
ব্যয়ও করেন না। আল্লাহর অনুগ্রহে আপনিও অনুরূপ। আর রাজা তো মানুষের উপর যুলুম করে, অন্যায়ভাবে
এক জনের কাছ থেকে উসুল করে ; আর অনায়ভাবে অপরজনকে দান করে”।
বায়তুলমালে খলীফার অধিকার কতটুকু এ প্রসঙ্গে খলীফা উমর (রা) একদা তাঁর এক ভাষণে বলেন ঃ
“গ্রীষ্মকালে এক জোড়া কাপড়, শীতকালে একজোড়া কাপড়। কুরাইশ বংশের একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তির
সমপরিমাণ অর্থ আপন পরিবার-পরিজনের জন্য, এছাড়া আল্লাহর স¤পদের মধ্যে আর কিছুই আমার জন্য
হালাল নয়। আমি তো মুসলমানদের একজন সাধারণ ব্যক্তি বৈ আর কিছুই নই”।
হযরত আবু বকর (রা) এবং হযরত উমর (রা)-এর বেতনের মান যা ছিল হযরত আলী (রা) ও তাঁর বেতনের
মান তাই রাখলেন। তিনি পায়ের হাঁটু এবং গোড়ালীর মাঝ বরাবর পর্যন্ত উঁচু তহবন্দ পরতেন। সারা জীবন
একটু আরামে কাটাবার সুযোগ হয়নি। একবার জনৈক ব্যক্তি শীতের মওসুমে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান।
দেখেন, তিনি একখানা সাধারণ কাপড় পরে বসে আছেন। শাহাদাতের পর তাঁর পরিত্যক্ত স¤পত্তির হিসাব
নিয়ে দেখা গেল মাত্র ৭ শত দিরহাম। তাও তিনি এক পয়সা এক পয়সা করে সঞ্চয় করেছেন একজন ক্রীতদাস
খরিদ করার জন্য। আমিরুল মুমিনীন বলে চিনতে পেরে তাঁর কাছ থেকে যাতে কম মূল্যে কেউ গ্রহণ না করে এ
ভয়ে কোন পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে বাজারে কখনো কোন জিনিস কিনতেন না। যখন হযরত মুয়াবিয়ার
সাথে তার মতবিরোধ চলছিল, কেউ কেউ তাঁকে পরামর্শ দেন, আপনিও তেমন বায়তুলমালের ভাণ্ডার উজাড়
করে টাকার বন্যা বইয়ে দিয়ে সমর্থক সংগ্রহ করুন। কিন্তু তিনি এ বলে তা প্রত্যাখ্যান করলেন “তোমরা কি
চাও, আমি অন্যায়ভাবে সফল হই”? তাঁর আপন ভাই হযরত আকীল (রা) তাঁর কাছে টাকা দাবী করেন
বায়তুলমাল থেকে। কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করে বলেন ঃ “তুমি কি চাও তোমার ভাই মুসলমানদের
টাকা তোমাকে দিয়ে জাহান্নামে যাক”?
খলীফারা ছিলেন জনসাধারণের সেবক
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিজেদের মর্যাদা এবং কর্তব্য স¤পর্কে খোলাফায়ে রাশেদূন কি ধারণা পোষণ করতেন, স্বীয়
রাষ্ট্রে তাঁরা কোন্ কোন্ নীতি মেনে চলতেন ? খেলাফতের মঞ্চ থেকে ভাষণ দিতে গিয়ে তাঁরা নিজেরাই প্রকাশ্যে
এসব বিষয় ব্যক্ত করেছেন। মসজিদে নববীতে গণ বায়আত ও শপথের পর হযরত আবু বকর (রা) যে ভাষণ
দান করেন তাতে তিনি বলেছিলেন ঃ
“আমাকে আপনাদের শাসক নিযুক্ত করা হয়েছে, অথচ আমি আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। আল্লাহর
শপথ, আমি নিজে ইচ্ছা করে এ পদ গ্রহণ করিনি। অন্যের পরিবর্তে আমি নিজে এ পদ লাভের চেষ্টাও করিনি।
এজন্য আমি কখনো আল্লাহর নিকট প্রার্থনাও করিনি। মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ এবং আরবদের মধ্যে ধর্ম
ত্যাগের সূচনা হবে এ আশংকায় আমি অনিচ্ছা সত্তে¡ও এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এ পদে আমার কোন শান্তি
নেই। বরং এটা এক বিরাট বোঝা, যা আমার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আমার ইচ্ছা ছিল অন্য কেউ এ গুরু
দায়িত্বভার বহন করুক। এখনো আপনারা ইচ্ছা করলে নবী করীম (স)-এর সাহাবীদের মধ্য হতে কাউকে এ
কাজের জন্য বাছাই করে নিতে পারেন। আমার বায়আত এ ব্যাপারে আপনাদের প্রতিবন্ধক হবে না। ”
রাষ্ট্রীয় স¤পদের আমানত রক্ষা করা
এ প্রসঙ্গে হযরত উমর (রা) তাঁর এক ভাষণে বলেন“হে লোক সকল ! আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো আনুগত্য করতে হবে- নিজের স¤পর্কে এমন অধিকারের দাবী
কেউ করতে পারে না। লোক সকল ! আমার উপর আপনাদের যে অধিকার রয়েছে, আমি তা ব্যক্ত করেছি।
এসব অধিকারের জন্য আপনারা আমাকে পাকড়াও করতে পারবেন। খারাজ বা আল্লাহ প্রদত্ত ফাই (ইবনা যুদ্ধে
বা রক্তপাত ছাড়াই যে গণীমতের মাল লব্ধ হয়) থেকে বেআইনীভাবে কোন কিছুই গ্রহণ করবো না এবং
এভাবে যে অর্থ আমার হাতে আসে অন্যায়ভাবে তার কোন অংশও আমি ব্যয় করবো না।”
হযরত উমর (রা) শাসনকর্তাদের কোন এলাকায় প্রেরণকালে সম্বোধন করে বলতেন ঃ
“মানুষের দন্ড-মুন্ডের মালিক হওয়ার জন্য আমি তোমাদেরকে মুহাম্মদ (স)-এর উম্মাতের উপর শাসনকর্তা
নিয়োগ করছি না। বরং আমি তোমাদেরকে এ জন্য নিয়োগ করছি যে, তোমরা সালাত কায়েম করবে, মানুষের
মধ্যে ইনসাফের ফয়সালা করবে, ন্যায়ের সাথে তাদের অধিকার বন্টন করবে”।
বায়আতের পর হযরত উসমান (রা) প্রথম যে ভাষণ দান করেন তাতে তিনি বলেন“শোন ! আমি হলাম আনুগত্যকারী, নতুন পথের উদ্ভাবক নই। জেনে রেখো, আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল (স)
এর সুন্নাহ মেনে চলার পর আমি তোমাদের নিকট তিনটি বিষয় মেনে চলার অঙ্গীকার করছি।
একঃ আমার খেলাফতের পূর্বে তোমরা পার¯পরিক সম্মতিক্রমে যে নীতি নির্ধারণ করেছো, আমি তা মেনে চলবো।
দূইঃ যেসব ব্যাপারে পূর্বে কোন নীতি-পন্থা নির্ধারিত হয়নি, সেসব ব্যাপারে সকলের সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করব।
তিনঃ আইনের দৃষ্টিতে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে না পড়া পর্যন্ত তোমাদের ওপর হস্তক্ষেপ
থেকে বিরত থাকবো।
হযরত আলী (রা) হযরত কায়েস ইবনে সাদকে মিশরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠাবার কালে মিসরবাসীদের
নামে যে ফরমান দান করেন, তাতে তিনি বলেন“সাবধান ! আমি আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূল এর সুন্নাহ মুতাবিক আমল করবো। আল্লাহর নির্ধারিত
বিধান অনুযায়ী আমি তোমাদের কাজ-কারবার পরিচালনা করবো এবং রাসূল (স)-এর সুন্নাহ কার্যকর করবো।
তোমাদর আগোচরে তোমাদের কল্যাণ কামনা করবো।”
এ ছিল রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারের কর্তব্য, মর্যাদা, ধারণা ও পদ্ধতি যা তাঁরা অনুসরণ
করেছেন এবং নীতি হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
খোলাফায়ে রাশেদূন আইনের উর্দ্ধে নয় এ নীতির প্রতি শ্রদ্ধা
খোলাফায়ে রাশেদ‚ন নিজেরা নিজেদেরকে আইনের উর্ধে মনে করতেন না। বরং আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেকেই
নিজেকে এবং দেশের একজন সাধারণ নাগরিককে (সে মুসলমান হোক বা অমুসলিম হউক) সমান মনে
করতেন। রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে তাঁরা নিজেরা বিচারপতি (কাযী) নিযুক্ত করলেও খলীফাদের বিরুদ্ধে রায়দানে
তারা ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাধীন, যেমন তাঁরা স্বাধীন একজন সাধারণ নাগরিকের ব্যাপারে। একদা হযরত উমর (রা)
এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা) এর মধ্যে কোন এক ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়। উভয়ই হযরত
যায়েদ ইবনে সাবেত (রা)-কে শালিস নিযুক্ত করেন। বাদী-দিবাদী উভয়ে যায়েদ (রা)-এর নিকট উপস্থিত
হলেন। যায়েদ (রা) দাঁড়িয়ে হযরত উমর (রা) কে তাঁর আসনে বসাতে চাইলেন ; কিন্তু তিনি উবাই (রা)-এর
সাথে বসলেন। অতঃপর হযরত উবাই (রা) তাঁর আর্যী পেশ করলেন, হযরত উমর (রা) অভিযোগ অস্বীকার
করলেন। নিয়ম অনুযায়ী যায়েদ (রা) এর উচিত ছিল হযরত উমররের কাছ থেকে কসম আদায় করা। কিন্তু
তিনি তা করতে ইতস্তত করলেন। হযরত উমর নিজে কসম খেয়ে মজলিস সমাপ্তির পর বললেন ঃ “যতক্ষণ
যায়েদের কাছে একজন সাধারণ মুসলমান এবং উমর সমান না হয়, ততক্ষণ সে বিচারক হতে পারে না।”
এমনি একটি ঘটনা ঘটে জনৈক খৃষ্টানের সাথে হযরত আলী (রা)-এর। কুফার বাজারে হযরত আলী (রা)
দেখতে পেলেন, জনৈক খৃষ্টান তাঁর হারানো লৌহবর্ম বিক্রি করছে। আমীরুল মুমিনীন হিসেবে তিনি সে ব্যক্তির
নিকট থেকে বর্ম ছিনিয়ে নেননি বরং কাযীর দরবারে ফরিয়াদ করলেন। তিনি সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করতে না পারায় কাযী তাঁর বিরুদ্ধে রায় দান করলেন।
ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লিকান বর্ণনা করেন যে, একবার হযরত আলী (রা) এবং জনৈক অমুসলিম বাদী-বিবাদী
হিসেবে কাযী শোরাইহ-এর আদালতে উপস্থিত হন। কাযী দাঁড়িয়ে হযরত আলী (রা)-কে অভ্যর্থনা জানান।
এতে তিনি (হযরত আলী) বলেন, “এটা তোমার প্রথম বে-ইনসাফী”।
বংশ ও গোত্রের পক্ষপাতহীন শাসন
খোলাফায়ে রাশেদূন যুগের আর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, ইসলামের নীতি এবং অনুযায়ী তাঁরা বংশ-গোত্র
এবং দেশের পক্ষপাতের উর্ধে উঠে সকল মানুষের সাথে সমান আচরণ করতেন- কারো প্রতি কোন রকম
পক্ষপাতিত্ব করা হতো না।
মদীনায় যখন হযরত আবু বকর (রা) এর হাতে বায়আত অনুষ্ঠিত হয়, তখন গোত্রবাদের ভিত্তিতে হযরত সাদ
ইবনে উবাদা (রা) তাঁর খেলাফত স্বীকার করা থেকে বিরত ছিলেন। এমনি করে গোত্রবাদের ভিত্তিতেই আবু
সুফিয়ানের নিকট তাঁর খেলাফত ছিল অপসন্দনীয়। তিনি হযরত আলী (রা)-এর নিকট গিয়ে বলেছিলেন ঃ
“কুরাইশের সবচেয়ে ছোট গোত্রের লোক কি করে খলীফা হয়ে গেল ? তুমি নিজেকে প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে দাঁড়
করাতে প্রস্তুত হলে আমি তোমাকে সহযোগিতা করব।’’ কিন্তু হযরত আলী (রা) কড়া জবাব দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ
করে দেন। তিনি বলেন ঃ তোমার এ কথা ইসলাম এবং মুসলমানদের সাথে শত্রুতা প্রমাণ করে। মুসলমানরা
পর¯পরের কল্যাণকামী। তারা একে অপরকে ভালবাসে। অবশ্য মুনাফিক একে অন্যের সাথে স¤পর্ক
ছিন্নকারী। আমরা আবু বকর (রা)-কে এ পদের যোগ্য মনে করি। তিনি এ পদের যোগ্য না হলে আমরা কখনো
তাঁকে এ পদে নিয়োজিত হতে দিতাম না।”
হযরত উমর (রা) জীবনের শেষ অধ্যায়ে আশংকাবোধ করলেন, তাঁর পরে আরবের গোত্রবাদ পুনরায় মাথাচাড়া
দিয়ে উঠবে এবং তার ফলে ইসলামের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তাই শেষ সময়ে তিনি হযরত আলী (রাঃ),
হযরত উসমান (রা) এবং হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা) কে ডেকে বলেন ঃ “আমার পরে তোমরা
খলীফা হলে স্ব-স্ব গোত্রের লোকদেরকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেবে না। উপরন্তু ছয় সদস্যের নির্বাচনী শূরার জন্য তিনি হেদায়াত দিয়ে যান।”
গণতন্ত্রের চর্চা
সমালোচনা ও মতামত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতাই এ খেলাফতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম।
খলীফাগণ সর্বক্ষণ জনগণের নাগালের মধ্যে থাকতেন। তাঁরা নিজেরা শূরার অধিবেশনে বসতেন এবং
আলোচনায় অংগ্রহণ করতেন। তাঁদের কোন সরকারী দল ছিল না। তাঁদের বিরুদ্ধেও কোন দলের অস্তিত্ব ছিল
না। মুক্ত পরিবেশে সকল সদস্য নিজ নিজ ঈমান এবং জ্ঞানের ভিত্তিতে যোগ্যতাস¤পন্ন ব্যক্তিদের সামনে সকল
বিষয় যথাযথভাবে উপস্থাপন করতেন। কোন কিছুই গোপন করা হতো না। ফায়সালা হতো দলীল-প্রমাণের
ভিত্তিতে, কারোর দাপট, প্রভাব-প্রতিপত্তি, স্বার্থ সংরক্ষণ বা দলাদলির ভিত্তিতে নয়। কেবল শূরার মাধ্যমেই
খলীফারা জতির সম্মুখে উপস্থিত হতেন না; বরং দৈনিক পাঁচবার সালাতের জামায়াতে, সপ্তাহে একবার জুময়ার
জামায়াতে এবং বৎসরে দূ’বার ঈদের জামাআতে ও হজ্জ-এর সম্মেলনে তাঁরা জাতির সামনে উপস্থিত হতেন।
অন্যদিকে সর্বদা জাতির লোকেরাও তাঁদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেতো। তাঁদের নিবাস ছিল জনগণের
মধ্যেই। কোন দারোয়ান ছিল না তাঁদের গৃহে। সকল সময়ে সকলের জন্য তাঁদের দ্বার খোলা থাকতো। তাঁরা
হাট-বাজারে জনগণের মধ্যে চলাফেরা করতেন। তাঁদের কোন দেহরক্ষী ছিল না। এ সুযোগে যে কোন ব্যক্তি
তাঁদেরকে প্রশ্ন করতে, সমালোচনা করতে ও তাঁদের নিকট থেকে হিসাব চাইতে পারতো। তাঁদের নিকট থেকে
কৈফিয়ত তলব করার স্বাধীনতা ছিল সকলেরই। এ স্বাধীনতা ব্যবহারে তাঁরা কেবল অনুমতিই দিতেন না ; বরং
এ জন্য লোকদেরকে উৎসাহিতোও করতেন। ইত:পূর্বে বলা হয়েছে যে, হযরত আবু বকর (রা) তাঁর
খেলাফতের প্রথম ভাষণেই প্রকাশ্যে বলে দিয়েছিলেন, “আমি সোজা পথে চললে আমার সাহায্য করবে, বাঁকা
পথে চললে আমাকে সোজা করে দেবে।”
একদা হযরত উমর (রা) জুমআর খোতবায় বলেন, “কোন ব্যক্তি যেন বিবাহে চারশ’ দেরহামের বেশী মোহর
ধার্য না করে। জনৈক্য মহিলা তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলেন, আপনার এমন নির্দেশ দেয়ার কোন
অধিকার নেই। কুরআন স্তুপিকৃত স¤পদ (কেনতার) মোহর হিসেবে দান করার অনুমতি দিচ্ছে। আপনি কে
তার সীমা নির্ধারণকারী ? হযরত উমর (রা) তৎক্ষণাৎ তাঁর মত প্রত্যাহার করেন।” একদা তিনি মজলিসে
উপস্থিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করলেন ঃ “আমি যদি কোন ব্যাপারে শৈথিল্য দেখাই তাহলে তোমরা কি করবে ?
হযরত বিশর ইবনে সাদ (রা) বললেন, এমন করলে আমরা আপনাকে তীরের মতো সোজা করে দেবো। হযরত
উমর (রা) বললেন, তবেই তো তোমরা কাজের মানুষ।”
হযরত উসমান (রা) সবচেয়ে বেশী সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি কখনো জোরপূর্বক মুখ বন্ধ করার
চেষ্টা করেন নি; বরং সব সময় অভিযোগ এবং সমালোচনার জবাবে প্রকাশ্যে নিজের কথা বলে গেছেন। হযরত
আলী (রা) তাঁর খেলাফত কালে খারেজীদের অত্যন্ত কটু উক্তিকেও শান্ত মনে বরদাশত করেছেন। “একদা
পাঁচজন খারেজীকে গ্রেফতার করে তাঁর সামনে হাযির করা হলো। এরা সকলেই প্রকাশ্যে তাঁকে গালি
দিচ্ছিলো। তাদের একজন প্রকাশ্যেই বলছিল- আল্লাহর শপথ আমি আলীকে হত্যোা করবো। কিন্তু হযরত আলী
(রা) এদের সকলকেই ছেড়ে দেন এবং বলেন, কার্যত কোন বিদ্রোহাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত নিছক
মৌখিক বিরোধিতা এমন কোন অপরাধ নয়, যার জন্য তাদেরকে শাস্তি দেয়া যেতে পারে।”
পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহই আইন রচনার ভিত্তি
পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহই আইন রচনার ভিত্তি ছিল। যে বিষয়ে তাতে কোন সু¯পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যেত না, সে
বিষয়ে ইজতিহাদ (গবেষণা) পদ্ধতিতে রাসূলের আমলের বাস্তব দৃষ্টান্ত ও অনুরূপ ঘটনাবলীর সামঞ্জস্যের প্রতি
লক্ষ্য রেখে এর সমাধান বের করা হতো এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীস পারদর্শী প্রতিটি নাগরিকেরই রায়
প্রকাশের সমান অধিকার স্বীকৃত ছিল। কোন বিষয়ে সকলের মতৈক্যের সৃষ্টি হলেই সে স¤পর্কে সর্বসম্মত
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতো। ফিকাহ-শাস্ত্রের পরিভাষায় একেই বলে ‘ইজ্মা’। ইসলামী শরীয়াতে এটা সর্বজনমান্য
মূলনীতি বিশেষ। আর কোন বিষয়ে মতবৈষম্যের সৃষ্টি হলে খলীফা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে নিজস্ব রায়
প্রকাশ করতেন এবং তদনুযায়ী কার্য স¤পাদন করতেন।
অবাধে মতামত প্রকাশের সুযোগ
খোলাফায়ে রাশেদূনের আমলে রাজকীয় জাঁক-জমক ও শান-শওকাতের কোন স্থান ছিল না। সাধারণ
নাগরিকদের ন্যায় অতি সাধারণ ছিল খলীফাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। তাঁরা প্রকাশ্য রাজপথে একাকী চলাফেরা
করতেন ; কোন দেহরক্ষী তো দূরের কথা, নামে মাত্র পাহারাদারও কেউ ছিল না। তাদের ঘরবাড়ী ও
সাজসরঞ্জাম ছিল সাধারণ পর্যায়ের। জনগণ নিজেদের অভিযোগ ও সমস্যা প্রকাশ করতে পারত। মতামত
জানাতে সক্ষম হতো। প্রতিটি মানুষই অবাধে খলীফার নিকট উপস্থিত হতে পারত। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা
উল্লেখ করা যেতে পারেধর্মীয় নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মধ্যে পার্থক্য করা হতো না
তারা নিজেদেরকে জনগণের খাদেম মনে করতেন। কোন ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজদেরকে সাধারণ লোকদের অপেক্ষা
শ্রেষ্ঠ ধারণা করতেন না। তাঁরা কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই জননেতা ছিলেন না, নামায ও হজ্জ প্রভৃতি ধর্মীয়
ব্যাপারেও যথারীতি তাঁরাই নেতৃত্ব দিতেন।
খিলাফতে রাশেদার আমলে ধর্মীয় নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা হতো না; বরং এ উভয় প্রকার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বই একজন খলীফার ব্যক্তি সত্তায় কেন্দ্রীভূত ও সমন্বিত হয়েছিল। বস্তুতঃ ধর্ম ও রাজনীতির
পৃথিকীকরণ এবং ধর্মীয় কাজ ও রাষ্ট্রীয় কাজে দ্বৈতবাদ পরিহার করা হতো। অনুরূপভাবে এতদুভয় একত্রীকরণ
ও সর্বতোভাবে একমুখীকরণই ছিল খিলাফতে রাশেদার বৈশিষ্ট্য।
সঠিক উত্তরেরে টিক দিন।
১. খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারক. আধুনিক গণতান্ত্রিক সরকার; খ. শূরা ভিত্তিক সরকার;
গ. রাজতন্ত্র ভিত্তিক সরকার; ঘ. গোত্র ভিত্তিক সরকার।
২. খোলাফায়ে রাশেদূনের আইন রচনার মূল ভিত্তি ছিল
ক. কুরআন ও সুন্নাহ খ. ইজমা ও কিয়াস;
গ. সাহাবীদের ঐক্যমত; ঘ. সব কটি উত্তরই ঠিক।
৩. সিরিয়া ও ফিলিস্তিন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেনক. হযরত উমর (রা) খ. হযরত আবু বকর (রা)
গ. হযরত উসমান (রা) ঘ. হযরত আলী (রা)
৪. কুফার বাজারে বিক্রির লৌহবর্মের প্রকৃত মালিক কে?
ক. জনৈক ইয়াহূদী; খ. জনৈক খ্রিষ্টান;
গ. জনৈক মুসলমান; ঘ. কোনটি সঠিক নয়।
এক কথায় উত্তর দিন
১. কিসের ভিত্তিতে হযরত আবু বকর (র) খলীফা নির্বাচিত হন?
২. ইসলামী শরীআতের মূলনীতি কয়টি?
৩. ‘‘আল্লাহর শপথ আমি এখনও বুঝে উঠতে পারছি না যে, আমি রাজা না খলীফা, আমি যদি রাজা হয়ে থাকি,
তবে তা এক সাংঘাতিক কথা’’ এ উক্তিটি কার?
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. হযরত উমরের খলীফা নির্বাচন স¤পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২. ‘‘ইসলাম গণতন্ত্রের প্রাণ শক্তি’’ এ উক্তিটির সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দিন।
৩. ইসলাম একটি শূরা ভিত্তিক সরকার সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৪. ইসলামী সরকার ব্যবস্থায় অবাধে মত প্রকাশের সুযোগ স¤পর্কে আলোচনা করুন।
৫. খলীফা উসমানের কৃত অঙ্গীকারগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারের বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত আলোচনা করুন। খোলাফায়ে রাশেদূন সরকারের প্রশাসনিক

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]