বাইয়াত বলতে কী বুঝায়? খলীফা হযরত উমর (রা)- খলীফা হযরত আবু বকর (রা)-এর আমলে শূরার গুরুত্ব স¤পর্কে লিখুন।

নির্বাচন প্রক্রিয়া
নবী করীম সা. এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বদানের দায়িত্বভার এসে পড়ে খোলাফায়ে রাশেদূনের
ওপর। তাঁরা দু’ভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রথমতঃ জাতির গণ্যমান্য গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ প¯পর আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়ে একজন যোগ্য ও সৎ
ব্যক্তিকে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত করতেন।
দ্বিতীয়তঃ পূর্ববর্তী খলীফা দ্বারা মনোনিত হয়ে পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত হতেন। যে নির্বাচক মন্ডলী খলীফা
নির্বাচন করতেন তাঁদের আহলুল ইমামাহ, আহলুল ইখতিয়ার অথবা আহলুল হাল্ল ওয়া আল-আকদে বলা
হতো। তারা ছিলেন সমাজের গণ্যমান্য ন্যয়নিষ্ঠ যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাঁদের সিদ্ধান্ত সর্বসাধারণ ইবনা
বাক্যে মেনে নিতেন। তাঁরা নবী করীম (স)-এর সহচর ছিলেন। ইসলামী আইন সম্বন্ধে তাঁদের গভীর জ্ঞান ও
পান্ডিত্ব ছিল।
প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর মাত্র একজন নির্বাচক দ্বারা খলীফা নিযুক্ত হন। আর তিনি ছিলেন হযরত উমর
(রা)। পরবর্তীতে সর্বসাধারণ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে হযরত আবু বকর হযরত উমরকে
খলীফা মনোনীত করে যান এবং তিনি খলীফা নির্বাচিত হন। অতঃপর জনসাধারণ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ
করেন। হযরত উমর (র) মৃত্যুকালে ছয়জন নির্বাচক মন্ডলীর উপর খলীফা নির্বাচনের ভার দিয়ে যান। তাঁরা
হলেন হযরত উসমান, হযরত আলী, হযরত তালহা, হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম, সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস
ও আবদুর রাহমান ইবন আউফ (র)। তাঁরা আলোচনা করে হযরত উসমানকে খলীফা পদে নির্বাচনের ব্যাপারে
একমত হন। হযরত আলীর (রা) খলীফা নির্বাচন ছিল ভিন্ন ধরনের। যে প্রতিনিধিদল হযরত উসমানকে
হত্যোার জন্য দায়ী ছিলো তারাই হযরত উসমানকে হত্যোার পর হযরত আলীকে খলীফা পদে নিযুক্ত করে তাঁর
হাতে হাত দিয়ে শপথ গ্রহণ করে স্ব স্ব স্থানে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই কারণে পূর্ববর্তী খলীফাগণ যেরূপ গণঅভিনন্দন লাভ করেন সেরূপ গনঅভিনন্দন তিনি লাভ করতে পারেন নি। কিন্তু এই চার খলীফার মধ্যে কেউ
বংশীয় স্বার্থে উদ্বুদ্ধ হননি। এমনকি উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করতে অনুরোধ করা হলে তাঁরা তা অস্বীকার করেন।
বাইয়াতঃ খিলাফতের সঙ্গে শপথ গ্রহণ এবং বাইয়াত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। বাইয়াত গ্রহণ ছাড়া কারো
খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হতো না। নির্বাচক মন্ডলী আনুষ্ঠানিকভাবে বাইয়াত অনুষ্ঠান সমাপ্ত করার পর তা কেউ আর
প্রত্যাহার করতে পারতেন না। শপথ গ্রহণ বা বাইয়াত দু’ প্রকার। বাইয়াত আল-খাস বা বিশেষ শপথ যা
গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দ্বারা স¤পন্ন হতো। বাইয়াত আল-আম অর্থাৎ সর্বসাধারণ খলীফার হাতে বাইয়াত করে
তাঁকে মেনে নিতেন, আর এভাবে ইসলামী গণতšে র যাত্রা শুরু হয়।
মজলিস শূরা পদ্ধতি
নবী করীম (স.) কর্তৃক মদীনায় কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর গোত্রীয় পরিষদ বা মজলিসের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাসপায়। ফলে তা স্থানীয় এবং গোত্রীয় বিষয়াদির ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ থাকে তাঁর আমলে বিশেষ সভা ও সাধারণ
সভার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। নবী কারীম (স.) মক্কার সাবেক প্রথা কুরআনের (১৩ঃ৩৮) আয়াতের প্রেক্ষিতে
গণ্যমান্য মুহাজির ও আনসার নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রীয় কার্য সম্পন্ন করতেন। রাষ্ট্র বা জাতীয়
জীবন যখন জীবনমরণ সমস্যার সম্মুখীন হতো তখন তিনি সাধারণ সভা আহŸান করতেন।
পাঠ ঃ ৪মহানবী স্বাধীনতা প্রিয় আরবদের সাথে প্রচলিত রীতি অনুসারে আলোচনা না করে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন না। প্রয়োজন বোধে তিনি কখনোও কতিপয় বিশেষ ব্যক্তির সাথে এবং কখনও সমস্ত
নাগরিকের সাথে আলোচনা করে রাষ্ট্রীয় সমস্যাবলী সমাধান করতেন।
খলীফা হযরত আবু বকর (রা)-এর আমল ঃ মহানবীর (স) ইন্তিকালের পর খোলাফায়ে রাশেদূন আমলে
শূরার ক্রমোন্নতি অব্যাহতো থাকে। খলীফা আবু বকর (রা) মহানবীর আদর্শের পূর্ণ অনুসারী ছিলেন। তিনি
প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজে মহানবীর আদর্শ মেনে চলতেন এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শূরার পরামর্শ গ্রহণ
করতেন।
মহানবী শেষ জীবনে যায়েদ ইবন হারিছা নামক এক মুক্তিপ্রাপ্ত দাসকে সেনাপতি নিযুক্ত করে মুতা অভিযানে
প্রেরণ করেন। যায়েদের মৃত্যুর পর তার যুবক পুত্র উসামাকে তিনি উক্ত যুদ্ধের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। আবু
বকর ও উমরের মত প্রবীন সাহাবীগণও তাঁর সহগামী হতে আদিষ্ট হন। উক্ত সেনাবাহিনী মদীনা ত্যাগের পূর্বেই
মহানবী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরলোক গমন করেন। সে কারণে উক্ত অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত থাকে।
আবু বকর (রা) খলীফা নির্বাচিত হয়ে উসামাকে মুতা গমনের নির্দেশ প্রদান করেন। সে সময় রিদ্দা-বিদ্রোহ শুরু
হয়েছিল ও বিদ্রোহীরা যাকাত প্রদানে অস্বীকার করেছিল। সে সংকটজনক মুহূর্তে গণ্যমান্য সাহাবীদের মতামত
নিয়ে উমর (রা) খলীফাকে মুতায় অভিযান প্রেরণ না করতে পরামর্শ দেন।। আর যদি অভিযান একান্তই প্রেরণ
করতে হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ সেনানায়কের নেতৃত্বে প্রেরণের জন্যও পরামর্শ দেন। খলীফা আবু বকর
(রা) উক্ত প্রস্তাব অস্বীকার করেন এবং তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “যদি একপাল হিংস্র সিংহ মদীনা ঘিরে
ফেলে এবং আমি পরিত্যক্ত হই এবং একাকী থাকি তবুও অভিযান প্রেরিত হবেই। কারণ তা মহানবী কর্তৃক
প্রেরিত হয়েছিল।” উমর (রা) খলীফাকে বিদ্রোহীদের যাকাত সাময়িকভাবে মাফ করে দিবারও প্রস্তাব দেন। এ
প্রস্তাবে খলীফা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন এবং যাকাত মাফ করতে অস্বীকার করেন।
খলীফা হযরত উমর (রা)-এর আমল ঃ খলীফা উমর (রা) জোর দিয়ে ঘোষণা করেন, আলোচনা ছাড়া কোন
সরকারী কার্য চলতে পারে না। বস্তুতঃ তাঁর শাসনকালে শূরা গুরুত্বপূর্ণ রূপ লাভ করে। জানা যায় তাঁর আমলে
সাধারণ সভা দু’বার আহুত হতো। কাদেসীয়ার যুদ্ধের পূর্বে তিনি স্বয়ং নিজেই সৈন্য পরিচালনা করে যুদ্ধক্ষেত্রে
গমন করবেন কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য সাধারণ সভা আহŸান করেন। উক্ত সভা খলীফাকে স্বয়ং
সৈন্য পরিচালনা করার পক্ষে রায় প্রদান করায় তিনি হযরত আলীকে খিলাফতের ভার দিয়ে সেনাবাহিনীতে
যোগদান করেন। কিন্তু মদীনার তিন মাইল দূরে সিরার নামক জলাশয়ের নিকট আহল আল-রা’য় বা শূরার
প্রতিনিধিদের আহŸান করে উক্ত বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ চান। আহলুর রা’য় এর অধিকাংশ সদস্য তাঁকে মদীনায়
অবস্থান করে অন্য কোন সাহাবীকে সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণের পরামর্শ দেন। অতঃপর তিনি পুনরায়
সাধারণ সভা আহŸান করে সবাইকে জানান যে, যাঁরা সৎ পরামর্শ দেন তাদেরকে মান্য করা কর্তব্য। তিনি
ঘোষণা করেন, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গমনের জন্য সকল ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শে প্রতীয়মান
হচ্ছে যে, তাঁর রাজধানীতে অবস্থান করে কোন সাহাবীকে সেনাপতিত্ব প্রদান করা মঙ্গলজনক হবে। কেননা
স্বয়ং খলীফার পরাজয় হলে মুসলমানদের মনোবল ভেঙ্গে পড়তে পারে। বরং তিনি মদীনায় অবস্থান করে সৈন্য
সংগ্রহ করে পরপর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করলে মুসলমানদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে। সকলেই তাঁর যুক্তি অনুধাবন
করে তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি সা’দ ইবন আবু ওয়াক্কাসকে সেনাপতি হিসেবে কাদেসিয়ায় প্রেরণ
করেন এবং তিনি মদীনা প্রত্যাবর্তন করেন।
সিরিয়া ও ইরাক বিজয়ের পর উক্ত অঞ্চলের কৃষিভূমি সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দিবেন, না তার পূর্বতন
মালিকদের হাতেই রাখবেন এ বিষয়ের মীমাংসা করার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার সাধারণ সভা আহবান করেন।
খলীফা উমর ভূমির মূল মালিকদের বঞ্চিত করার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি দু’টি কারণে সাবেক অধিবাসীদের মধ্যে
ভূমি বন্টনের পক্ষপাতি ছিলেন।
প্রথমতঃ তিনি ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য তহবিল জমা করা প্রশাসনিক কর্মচারী ও সৈন্যবাহিনী নিয়মিত করার
জন্য রাষ্ট্রের নিয়মিত আয়ের পক্ষপাতি ছিলেন। মুসলমানদের মধ্যে উক্ত সম্পত্তি বন্টন করে দিলে রাষ্ট্র খারাজ
তথা কর হতে বঞ্চিত হবে।
দ্বিতীয়ত ঃ প্রকৃত কৃষকের নিকট হতে ভূমি কেড়ে নিয়ে আরবদের মধ্যে বন্টন করার অর্থ তাদেরকে অভাবের
মধ্যে ঠেলে দেওয়া। আর তা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এ ব্যাপারে তাঁর আরও একটি মহান উদ্দেশ্য ছিল
বলে জানা যায়। তিনি আরবদের বিশুদ্ধ সামরিক জাতি হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন। কৃষিভূমি
তাদের মধ্যে বন্টন করে দিলে তারা আরামপ্রিয় হয়ে পড়ত যা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য ক্ষতিকর হতো।
মহানবীর আমলে বিজিত অঞ্চলের ভূমির ব্যাপারে দু’ প্রকারের নীতি গ্রহণ করা হয়। বানু নায়ির ও বানু-কুরায়যা
গোত্রের যাবতীয় ভূসম্পত্তি তিনি বিজয়ী সেনাবাহিনীর মধ্যে বন্টন করে দেন। আবার খায়বারের সামান্য সম্পত্তি
নিজ হাতে রেখে অবশিষ্ট সমুদয় ভূমি তিনি খারাজের বিনিময়ে সাবেক ইহূদী কৃষকদেরকেই প্রদান করেন। এ
দু’টি প্রতিষ্ঠিত উদাহরণ সম্মুখে থাকা স্বত্তে¡ও খলীফা উমর ‘সাধারণ সভা’ আহŸান করেন। সিরিয়া ও ইরাকের
ভূমি ভবিষ্যৎ বংশধরের স্বার্থে সাবেক প্রজার হাতেই রাখা হবে কিনা এ বিষয়ে কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলে।
হযরত আলী, হযরত উসমান, তালহা প্রভৃতি সাহাবাগণ খলীফা উমরের মতামত সমর্থন করেন। কিন্তু আব্দুর
রহমান ইবন আউফ ও যুবায়ের (রা)-সহ কিছু সংখ্যক সেনানায়নক উক্ত ভূমি সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে
দেয়ার পক্ষে রায় দেন। তাঁরা যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, উক্ত সম্পত্তিতে জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরের কোন অধিকার
নেই। খলীফা তখন পবিত্র কুরআনের সূরা আল-হাশর হতে আয়াত উদ্ধৃত করে ঘোষণা করেন, “আল্লাহ
তা’য়ালা মহানবীর উপর যা অনুদান হিসেবে অর্পণ করেন তার মালিক যথাক্রমে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর
আত্মীয়স্বজন, এতিম, দরিদ্র এবং মুসাফিরগণ। তা ছাড়া মুহাজির, আনসার এবং যারা পরে হিজরত করেছে
তারাও উক্ত স¤পত্তির অধিকারী।” (সূরা হাশর-৭)
তিনি যুক্তি দিয়ে সকলকে বুঝাতে সমর্থ হন যে, ফাই-এ পরবর্তী বংশধরদের হক আছে। তাঁর যুক্তি সকলে গ্রহণ
করে নেন এবং বিজিত অঞ্চলের ভূমি সাবেক প্রজার মধ্যে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খলীফা হযরত উসমান (রা)-এর আমল ঃ খলীফা উসমান (রা)-এর শাসনকালে শ‚রার গুরুত্ব কমে যায়।
কারণ তাঁর আমলে দলগত রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করে। উমাইয়া এবং মাখয ম পরিবারের সদস্যবর্গ
বিত্তশালী ও প্রভাবশালী হয়ে উঠে এবং রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। আম্মার, বিলাল, আবুযর গিফারী
প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর সাহাবীগণও অবহেলিত হতে থাকেন। তা ছাড়া খলীফা উসমানের (রা) উদারতার জন্য
হযরত উমরের আমলে যে পরামর্শ সভা ছিল তা ইবনষ্ট হয়ে যায়। তদস্থলে হযরত উসমানের আত্মীয়-স্বজন
তাঁর পরামর্শ সভার সদস্য পদ লাভ করেন।
খলীফা হযরত আলী (রা)-এর আমলঃ হযরত আলী (র)-এর শাসনকাল পর্যন্ত অধিকাংশ সাহাবীই
পরলোকগমন করেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি প্রথম হতেই গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হন। সে কারণে তাঁর আমলেও পরামর্শ
সভার ভ‚মিকা সীমিত হয়ে পড়ে।
খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে শূরার সদস্যদের নির্বাচনের জন্য কোন নিয়ম-কানুন প্রণীত হয় নি। জ্ঞান ও গুণের
দিক দিয়ে খলীফা যাঁদেরকে যোগ্য মনে করতেন কেবল তাঁদেরকে ডেকেই পরামর্শ করতেন। তবে তাঁর
উপদেষ্টাগণ সমগ্র জনসাধারণ কর্তৃক সমাদৃত ছিলেন।
খলীফা উমর (রা) পরামর্শ ব্যতিরেকে রাজকার্য চালাতেন না। তাঁকে দৈনন্দিন রাষ্ট্রীয় কাজে যে সব সদস্য
পরামর্শ প্রদান করতেন তাঁরা হলেন আবদুর রহমান ইবন আউফ, তালহা, যুবায়ের, হযরত আলী (রা) প্রমুখ
ব্যক্তিগণ। খলীফা উমরের শাসনকালে এ সব ব্যক্তি ছিলেন সর্বজনমান্য। কোন নির্দিষ্ট নীতি অনুসারে তাদেরকে
মনোনয়ন করা হয় নি বরং তাদের ধর্মভীরুতা, সামাজিক প্রভাব, ইসলামের স্বার্থে সেবা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং
সামরিক কৃতিত্বের বিচারেই তাঁদেরকে মনোনয়ন করা হয়। সব দিক দিয়ে তাঁরা সবার নিকট গ্রহণযোগ্য
ছিলেন। ভোট দ্বারা নির্বাচিত না হলেও উমর (রা) শূরার সদস্যগণের সিদ্ধান্তকে সাধারণভাবে গণরায় হিসেবেই
ধরে নিতেন। মহানবী (স) যে সব ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রীয় বিষয় স¤পর্কে পরামর্শ করতেন তাঁরা হলেন আবু বকর,
উমর, মিকদাদ ইবন আমর, সা’দ ইবন মুয়ায, হুবাব ইবন আল-মুনযির, সালমান ফারসী প্রভৃতি সাহাবী (রা)।
খোলাফায়ে রাশেদূন জটিল জাতীয় সমস্যাবলী সমাধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সাধারণ সভা আহŸান
করতেন। এ সভা আহŸানের নিমিত্ত খলীফা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আহŸায়ক ’আসসালাতু লিল-জামায়াহ,
(নামাযের জন্য সমবেত হও) ধ্বনি দ্বারা নগরির মধ্যে ঘোষণা প্রচার করতেন। রাজধানীর লোকেরা সমবেত
হলে জামাতে‘ দু’রাকআত নামায’’ পড়ে সভার কার্য আরম্ভ হতো। উক্ত সভায় অংশ গ্রহণকারী সবার মতামতের
উপর গুরুত্ব দেয়া হতো। আনসার, মুহাজির, মদীনায় অবস্থানকারী বেদুঈন, গোত্রপ্রধানগণ সবাই উক্ত সভায়
যোগদান করে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে পারতেন। সভা সাধারণতঃ মদীনা মসজিদের সামনে মিলিত
হতো। ছোটখাট বিষয়গুলো একদিনের আলোচনা দ্বারা সমাপ্ত হতো। কিন্তু জটিল সমস্যাগুলো নিয়ে কয়েকদিন
ধরে আলোচনা চলত। ইরাক ও সিরিয়ার ভূমি বন্টনের ব্যাপারেও খলীফা উমর সাধারণ সভার অধিবেশন
ডাকেন যা কয়েকদিন চলে।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে খোলাফায়ে রাশেদূন আমলে রাষ্ট্রীয় সমস্যাদির ব্যাপারে জনসাধারণ
পরামর্শ দিতে পারত। খলীফাগণ ‘বিশেষ পরামর্শ সভা’ এবং ‘সাধারণ সভা’ নামক দু’টি পরিষদের সাহায্যে
রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনা করতেন। খলীফাগণ দৈনন্দিন রাষ্ট্রীয় কাজে কতিপয় বিশেষ সাহাবীর পরামর্শ গ্রহণ
করতেন। কিন্তু জটিল রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সাধারণ সভা আহবান করা হতো। বিশেষ সভার
সিদ্ধান্ত সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অপেক্ষা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ছিল। বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত বিভক্ত হলে সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত বলবৎ হতো।
১. খোলাফায়ে রাশেদূন দু’ভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তন্মধ্যে একটি হলক. পূর্ববর্তী খলীফা কর্তৃক মনোনীত হয়ে; খ. নিজ ক্ষমতা বলে;
গ. নবী (স) তাঁদের মনোনীত করে দিয়েছিলেন; ঘ. কোন উত্তরই সঠিক নয়;
২. প্রথম খলীফা আবু বকর (রা) একজন নির্বাচক দ্বারা খলীফা হয়েছিলেন তিনি হলেনক. হযরত উসমান (রা); খ. হযরত আলী (রা);
গ. হযরত উমর (রা); ঘ. হযরত সায়াদ (রা)।
৩. হযরত উমর (রা) মৃত্যুকালে পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত করার জন্য কি করেছিলেনক. নিজেই খলীফার নাম প্রস্তাব করে গেছেন; খ. কিছুই করে যাননি;
গ. কোন কিছু করার সময় পাননি; ঘ. ছয়জনের একটি নির্বাচক মন্ডলী গঠন করে যান।
৪. সিরিয়া ও ইরাক বিজয়ের পর ঐ অঞ্চলের ভ‚মি হযরত উমর (রা) -
ক. সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করেছিলেন; খ. রাষ্ট্রীয় আয় ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য মূল
মালিকদের হাতে ছেড়ে খারাজ নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন;
গ. নিজের জন্যই রেখেছিলেন; ঘ. বিশিষ্ট সাহাবীর মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিলেন।
৫. শূরার গুরুত্ব কোন খলীফার আমলে কমে যায়?
ক. হযরত উমর (রা)-এর আমলে; খ. হযরত উসমান (রা)-এর আমলে;
গ. হযরত আলী (রা)-এর আমলে; ঘ. হযরত আবু বকর (রা)-এর আমলে;
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. চার খলীফার নির্বাচন প্রক্রিয়া সংক্ষেপে লিখুন।
২. বাইয়াত বলতে কী বুঝায়? লিখুন।
৩. খলীফা হযরত উমর (রা)-এর আমলে শূরার গুরুত্ব স¤পর্কে লিখুন।
৪. খলীফা হযরত আবু বকর (রা)-এর আমলে শূরার গুরুত্ব স¤পর্কে লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. খোলাফায়ে রাশেদূনের আমলে শূরা পদ্ধতি স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন। খোলাফায়ে রাশেদূনের রাজস্ব ব্যবস্থা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]