আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতা স¤পর্কে আল-কুরআনের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

আল-কুরআন মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর উপর
নাযিল হয়। আল-কুরআন মানব জাতির পথপ্রদর্শক। আল-কুরআনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা সব কিছু বর্ণনা করেছেন।
আল-কুরআন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর চিরন্তন মুজিযা। আল-কুরআনের অনুরূপ গ্রন্থ পৃথিবীবাসী আজ পর্যন্ত
দ্বিতীয়টি কল্পনাও করতে পারেনি। এতদসত্তে¡ও আল-কুরআন নিয়ে অবিশ্বাসীরা করে আসছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। আজও
ষড়যন্ত্রের শেষ হয়নি। আল-কুরআনের সংরক্ষণ আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্তকরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই
ষড়যন্ত্রকারীদের সীমাহীন ষড়যন্ত্রসত্তে¡ও আল-কুরআনের কোন বিকৃতি বা সংযোজন বা বিয়োজন তারা করতে পারেনি,
কোন দিন পারবেও না। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আল-কুরআনের সত্যতা প্রতিদিনই মানুষকে বিশ্বাসী করে তুলছে। আলকুরআন চির কল্যাণময় এক মহাগ্রন্থ। তাই তো আল-কুরআনের প্রশংসায় ফরাসী মণীষী বলেন-“কুরআন বিজ্ঞানীদের
জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা, ভাষাবিদদের জন্য শব্দকোষ, বৈয়াকরণের জন্য ব্যাকরণ গ্রন্থ এবং আইন বিধানের জন্য
একটি বিশ্বকোষ।” এ কুরআন বিশ্ব মানবের জন্য হিদায়াত গ্রন্থ। এ কুরআন অন্ধকার থেকে মানুষকে জ্ঞান ও আলোর
পথে নিয়ে আসে। আলোচ্য ইউনিটে আল-কুরআনের বিষয়ভিত্তিক কতিপয় আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এ কয়টি আয়াতের অনুসরণ করলেও মানবজাতি হিদায়াত পেতে পারে।  আল্লাহ তা‘আলার কতিপয় পূর্ণত্ববোধক গুণ সম্পর্কে বলতে পারবেন।
ق ُلِ ٱلل َّھ ُمَّ مَالِكَ ٱلْمُلْكِ تُؤْتِى ٱلْمُلْكَ مَن تَشَآءُ وَ تَنزِ عُ ٱلْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَ تُعِزُّ مَن
تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَن تَشَآءُ ب ِیَدِكَ ٱلْخَیْرُ إ ِنَّكَ عَل َىٰ كُلِّ شَيْ ءٍ قَѧدِیرٌ (سѧورة ال عمѧر
ان -٢٦ (
٠.١
ٱل َّذِى ل َھُ مُلْكُ ٱلسَّمَاوَ اتِ وَ ٱلأ َرْ ضِ وَ ل َمْ یَتَّخِ ذ ْ وَ ل َدا ً وَ ل َمْ یَكُن ل َّھُ شَرِ یكٌ فِى المُلْكِ
وَ خَل َقَ كُلَّ شَيْ ءٍ فَقَدَّرَ هُ تَقْدِیرا ً (سورة الفرقان-٢ (
٠.٢
ھُوَ ٱلل َّھُ ٱل َّذِى لاَ إ ِل َـٰھَ إ ِلا َّ ھُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْق ُѧدُّوسُ ٱلسَّѧلاَمُ ٱلْمُѧؤْ مِنُ ٱلْمُھَѧیْمِنُ ٱلْع َزِ یѧزُ
ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ ٱلل َّھِ عَمَّا یُشْرِ كُونَ (سورة الحشر-٢٣ (
٠.٣
অনুবাদ
১. বল, হে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা
ক্ষমতা কেড়ে নাও ; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর, আর যাকে ইচ্ছা তুমি অপমান কর। কল্যাণ তোমার
হাতেই। নিশ্চয় তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান : ২৬)
২. যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী, তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি ; সার্বভৌমত্বে তাঁর
কোন শরীক নেই। তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে। (সূরা
আল-ফুরকান : ২)
৩. তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তিদাতা, তিনিই
নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। তারা যাকে
শরীক স্থির করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র, মহান। (সূরা আল-হাশর : ২৩)
শব্দার্থ ও প্রয়োজনীয় টীকা
اللھم - মূলে ছিল اللھ یا তাশদীদযুক্ত মীম, الندا حرف - یا-এর স্থলাভিষিক্ত। অর্থ- হে আল্লাহ।
الملك مالك - مالك শব্দটি جنس اسم আল্লাহর গুণবাচক নাম। الملك مالك অর্থ সাম্রাজ্যের মালিক। কেউ
বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক। এখানে كѧمل অর্থ নবুওয়াত, কেউ বলেন, বিজয়, কেউ বলেন, সম্পদ ও
ক্রীতদাস-দাসী।
ؤتىѧت - অর্থ-আপনি দান করেন। এটা رѧحاض ذكرѧم دѧواح এর শব্দ, বহাছ ارعѧمض لѧفع اتѧاثب
।ারদমাছ فتح - معروف
زعѧتن - অর্থ কেড়ে নেন, পদচ্যুত করেন। এটা رѧحاض ذكرѧم دѧواح এর শব্দ। বহছ لѧفع اتѧاثب
معروف مضارع - বাবে ضرب , মাছদার النزع মূল অক্ষর (ع – ز – ن (জিনসে সহীহ।
تعز - অর্থ আপনি সম্মান দান করেন। এটা حاضر مذكر واحد এর শব্দ। বহছ ارعѧمض فعل اثبات
جنس مضاعف ثلاثى (ع – ز – ز) রক্ষঅ লূম اعزاز ,ারদমাছ - افعال ববো معروف
نفѧى جحѧد بلѧم فعѧل বহছ, শব্দ এর واحѧد مѧذكر غائѧب এটা। রননিকে গ্রহণ তিনির্থ অ - لѧم یتخѧذ
روفѧمع تقبلѧمس বাবে الѧافتع - মাছদার اذѧالاتخ - বাবে الѧافتع এর ةѧكلم اءѧف হামযা বর্ণ আসায়
ھمزةে ক تاء দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং تاءে ক اءѧت এর মধ্যে امѧادغ করা হয়েছে। اذѧالاتخ হয়েছে।
جنس مھموز (أ – خ – ذ) রক্ষঅ লূম
القدوس - এটা مبالغة فاعل اسم এর শব্দ ولѧفع এর ওজনে। আল্লাহর গুণবাচক নাম। এর অর্থ যিনি সকল
দোষমুক্ত।
السلام শব্দটি تفعیل باب এর মাছদার, অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা। তিন অর্থে আল্লাহকে সালাম বলা যেতে পারে। ১।
জুলম অত্যাচার হতে আল্লাহ স্বীয় সৃষ্টিকে নিরাপত্তা দান করেন।
২। সব ধরনের দুর্বলতা ও দোষ হতে তিনি নিরাপদ।
৩। যিনি স্বীয় বান্দাদেরকে জান্নাতে সালামদাতা, যেমন তিনি বলবেন رحیم رب من قولا سلامে কউ বলেন,
আল্লাহর সালাম অর্থ স্বীয় বান্দাদেরকে শান্তিদাতা।
সার্বভৌমত্বের অর্থ
ঝড়াবৎবরমহঃু বা সার্বভৌমত্ব শব্দটি উচ্চতর ক্ষমতা, নিরংকুশ কর্তৃত্ব ও আধিপত্বের অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর কোন
ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি কিংবা প্রতিষ্ঠানের সার্বভৌমত্বের অধিকারী হওয়ার অর্থ এই যে, তাঁর নির্দেশই আইন। আর এই
আইন রাষ্ট্রের নাগরিকদের উপর জারি করার সর্বময় কর্তৃত্ব তারই। নাগরিকরা তার শর্তহীন আনুগত্য করতে বাধ্য।
তা ইচ্ছায় হোক কিংবা বাধ্য হয়ে হোক। তার নিজের ইচ্ছা ব্যতীত বাইরের কোন শক্তি তার শাসন ক্ষমতাকে
বিন্দুমাত্র সীমাবদ্ধ ও সংকুচিত করতে পারে না। সার্বভৌমত্বের অধিকারীর ইচ্ছায়ই আইন অস্তিত্ব লাভ করে এবং তা
নাগরিকদেরকে আনুগত্যের রজ্জুতে বেঁধে দেয়। কিন্তু স্বয়ং কোন সার্বভৌমত্বের অধিকারীকে বাধ্য করার মত কোন
আইন নেই। সার্বভৌমত্বের অধিকারী তার নিজ সত্তায় নিরংকুশ ও সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক। তার বিধান সম্পর্কে ভাল
বা মন্দ, বিশুদ্ধ বা ভ্রান্তএ ধরনের কোন মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তিনি যা কিছু করবেন তা ভাল ও কল্যাণকর।
তাঁকে দোষত্রæটিমুক্ত এবং সকল প্রকার ভুলের উর্ধ্বে মেনে নিতে হবে, চাই তিনি এসব গুণের অধিকারী হোন বা না
হোন, এটাই হলো সার্বভৌমত্বের ধারণা বা তাৎপর্য। প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব কার
সার্বভৌমত্ব বাস্তবিক পক্ষে মানবীয় পরিমন্ডলে বিদ্যমান আছে কি ? যদি থেকে থাকে তবে তা কোথায় ? এ
সার্বভৌমত্বের প্রকৃত মালিক কাকে বলা যেতে পারে ? স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পন্ডিতগণ এর সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে চরমভাবে
দিশেহারা হয়ে পড়েন। সার্বভৌমত্বের যোগ্য কোন ক্ষমতাধর সত্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ মানবতার পরিসীমায়
বরং সত্যকথা এই যে, সমগ্র সৃষ্টি জগতের কোথাও সার্বভৌমত্বের প্রকৃত ধারক বিদ্যমান নেই। তাই পবিত্র কুরআনে
এ সত্যকে বার বার তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবিকপক্ষে সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক আল্লাহ, তিনি নিরংকুশ ক্ষমতার
অধিকারী। তিনি যা কিছু করতে চান তা সম্পূর্ণরূপে করতে পারেন। তিনি কারো নিকট দায়ী নন। কারো সম্মুখে
তাকে জবাবদিহি করতে হয় না। আল্লাহ বলেন, তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদকারী কেউ নেই (সূরা
আল-আম্বিয়া-২৩)। তিনি এমন এক সত্তা, যার ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে সীমাবদ্ধ করতে পারে এমন কোন শক্তি নেই।
তাঁর সত্তা সকল প্রকার দোষত্রæটি থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।
সার্বভৌমত্ব কার অধিকার
সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর অধিকার। তবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে যদি এ সার্বভৌমত্বের অধিকার প্রদান করা
হয় তার হুকুম বাস্তবিক পক্ষে আইন বলে বিবেচিত হবে না। তার উপর কোন অধিকার থাকবে না। তার শর্তহীন
আনুগত্য করতে হবে এমনটি নয়। বরং তার নির্দেশ সম্পর্কে ভাল মন্দ-ভুল ও নির্ভুল হওয়ার প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে।
সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, আল্লাহর সৃষ্টির উপর অন্য কোন সৃষ্টি প্রভুত্ব কায়েম করার এবং হুকুম চালাবার কোন
অধিকার নেই। এ অধিকার একমাত্র আল্লাহর এবং তার এ অধিকারের ভিত্তি এই যে, তিনি নিখিল বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা
তাই একে শাসন করার অধিকারও একমাত্র তারই।
সার্বভৌমত্ব কার হওয়া উচিত
সার্বভৌমত্বের এ অধিকার যদি কোন মানবশক্তিকে দেয়া হয়, তাতে মানুষের প্রকৃত কল্যাণ হতে পারে না। মানুষ- সে
যে কোন ব্যক্তি হোক, শ্রেণী হোক কিংবা কোন জাতি বা সমষ্টিই হোক। সার্বভৌমত্বের এতো বিরাট ক্ষমতা সামলানো
তার পক্ষে অসম্ভব। তথাপিও এরূপ অধিকার ও কর্তৃত্ব যদি কোন মানবীয় শক্তি লাভ করে তবে সেখানে যুলম,
নিপীড়ন ও নির্যাতন বেড়ে যাবে। সমাজের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। তার যুলমের দায়ভার প্রতিবেশী সমাজের উপর
পড়বে। মানুষ যখনই সার্বভৌমত্বের ক্ষমতাকে নিজের মনে করেছে, তখনি সমাজে ভাঙ্গন, বিপর্যয় ও অশান্তিসর্বগ্রাসী
হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ যার বাস্তবিক পক্ষে সার্বভৌমত্ত¡ নেই এবং যাকে সার্বভৌমত্বের অধিকারও প্রদান করা হয়নি,
তাকেই যদি কৃত্রিমভাবে সার্বভৌমত্বের অধিকার ও ক্ষমতা দান করা হয়, তবে সে কিছুতেই এপদের যাবতীয় ক্ষমতার
এখতিয়ার সঠিক পন্থায় ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না। সুতরাং সার্বভৌমত্বএকমাত্র আল্লাহর হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
আল্লাহর আইনগত ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্ব
আইনগত সার্বভৌমত্ব তাঁরই স্বীকার করতে হবে, যার বাস্তব সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা ও অধিকার নিখিল বিশ্ব ও গোটা
মানব জাতির উপর স্থাপিত হয়েছে। একথাটি কুরআন মাজীদে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
হুকুম দেবার ও প্রভূত্ব ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। তিনি আদেশ করেছেন, একমাত্র
তাঁরই দাসত্ব ও আনুগত্য করার জন্য। এটাই সঠিক পন্থা। (সূরা ইউসুফ : ৪০)
অন্যত্র বলেছেন, একমাত্র সে বিধানই অনুসরণ করবে যা তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে নাযিল করা
হয়েছে এবং তাঁকে ত্যাগ করে অন্য পৃষ্ঠপোষকদের অনুসরণ করো না। (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩)
আল্লাহর এ আইনগত সার্বভৌমত্বঅমান্য করাকে পরিস্কার কুফরী বলা হয়েছে।
আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে যারা ফয়সালা করে না, তারা কাফির। (সূরা আল-মায়িদা : ৪৪) এসকল আয়াত
থেকে পরিস্কারভাবে জানা যায় যে, আইনগত সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তাআলার। যারা একে স্বীকার করে তারা
ইসলাম ও ঈমানের দাবিদার, আর যারা অস্বীকার করে তারা নিরেট কুফরীতে লিপ্ত।
সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে রাসূলের পদমর্যাদা
দুনিয়াতে আল্লাহর এ আইনগত সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধি হচ্ছেন আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলগণ। অন্য কথায় আমাদের
আইন রচয়িতা ও সংবিধানদাতা আমাদের জন্য কি আইন এবং কি নির্দেশ দিয়েছেন তা জানাবার একমাত্র মাধ্যম
হচ্ছেন আম্বিয়ায়ে কিরাম। এ কারণে ইসলামে আল্লাহর হুকুমের অধীনে নির্দ্বিধায় তাদের অনুসরণ করার সুস্পষ্ট নির্দেশ
দেয়া হয়েছে। কুরআন মাজীদ থেকে পরিস্কারভাবে জানা যায় যে, আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবীই উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা
করেন, আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর।
আর কুরআন মাজীদ একথা সুনির্দিষ্ট ও যুগান্তকারী নীতি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবিক তাঁর অনুসরণ করার জন্যই তাকে পাঠিয়েছি। (সূরা আননিসা : ৬৪)
যে ব্যক্তি রাসূল (সা)-এর অনুসরণ করবে, সে মূলত আল্লাহরই অনুসরণ করল। (সূরা আন-নিসা : ৮০)
সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে আইনগত সার্বভৌমত্ব একান্তও নিরংকুশভাবে একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য
নির্দিষ্ট। অতঃপর আল্লাহর সার্বভৌমত্বও ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই।
রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা
এ পৃথিবীতে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব বা চড়ষরঃরপধষ ঝড়াবৎবরমহঃবু একমাত্র আল্লাহ তাআলার। কারণ আল্লাহ তাআলার
আইনগত সার্বভৌমত্ব মানব সমাজে যে প্রতিষ্ঠানই রাজনৈতিক শক্তি বলে কার্যকর করার জন্য প্রতিষ্ঠিত করবে, আইন
ও রাজনীতির পরিভাষায় তাকে কখনো সার্বভৌমত্বের মালিক বলা যায় না। যে শক্তির আইনগত সার্বভৌমত্ব নেই এবং
যার ক্ষমতা ও এখতিয়ার এক উচ্চতর আইন দ্বারা পূর্ব থেকেই সীমিত ও অনুগত বানিয়ে দিয়েছে এবং যার পরিবর্তন
করার কোন ক্ষমতা তার নেই সে কখনো সার্বভৌমত্বের ধারক হতে পারে না। বরং এ প্রতিষ্ঠানকে পবিত্র কুরআন
খিলাফত নামে আখ্যায়িত করেছে। অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠান স্বয়ং একচ্ছত্র শাসক নয় বরং একচ্ছত্র শাসকের প্রতিনিধি মাত্র।
সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতার অধিকারীও একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা
পবিত্র কুরআনে সকল প্রকার সার্বভৌমত্ব আল্লাহর জন্য সুনির্দিষ্ট এর বর্ণনা এসেছে। যেমন- সূরা আন-নাসে বলা
হয়েছেবল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রভু, মানুষের শাসক এবং মানুষের ইলাহের নিকট। (সূরা আন-নাস : ১-৩)
অন্যত্র বলেছেন, আল্লাহ তাআলাই শাসন কর্তৃত্বের মালিক এবং এ বিষয়ে তাঁর কোন অংশীদার নেই।
আল্লাহ বলেন, বল ঃ হে আল্লাহ ! শাসন কর্তৃত্বের মালিক, তুমি যাকে চাও শাসন কর্তৃত্ব দান কর এবং যার নিকট
থেকে চাও তা ছিনিয়ে নাও। (সূরা আলে ইমরান : ২৬)
রাজত্বের ব্যাপারে তাঁর কোন অংশীদার নেই। (সূরা বনী ইসরাইল : ১১১)
সাবধান ! সৃষ্টি তাঁরই এবং নির্দেশও চলবে তাঁর। (সূরা আল-আরাফ: ৫৪)
তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত জিনিসের অনুসরণ কর এবং তাকে ত্যাগ করে অন্যান্য অভিভাবকের অনুসরণ
করো না। (সূরা আল-আরাফ : ৩)
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত বিধান মোতাবেক ফয়সালা করে না সে কাফির। (সূরা আল-মায়িদা : ৪৪)
এসকল আয়াত থেকে আল্লাহ তাআলার সার্বভৌমত্বও ক্ষমতার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়।
আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতার বিষয়ে ইসলামী আইনবিদদের মতামত
ইসলামী আইনবিদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, হুকুম (ভিন্ন শব্দে সার্বভৌমত্ব) দেয়ার অধিকার আল্লাহর জন্য
নির্ধারিত। আল্লামা আমিদী উসূলে ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল-ইহকাম ফী উসূলীল আহকাম” এ লিখেছেন, জেনে
রেখ, আল্লাহ ছাড়া কোন হাকিম (শাসক) নেই এবং তিনি যে হুকুম (বিধান) দিয়েছেন তা-ই কেবল হুকুম (বিধান)
হিসেবে গণ্য।
শায়খ মুহাম্মাদ আল-খুদরী তাঁর উসূলুল ফিকহ গ্রন্থে এটাকে গোটা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ আকীদা বা বিশ্বাস বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্য। সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর অধিকার, অন্য কারো নয়। আল্লাহ
তাআলার ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্ব যেমন বিশ্বজনীন, তদ্রƒপ রাজনৈতিক, আইনগত, নৈতিক ও বিশ্বাসগত সব দিকেই
পরিব্যপ্ত। কুরআন মাজীদে বর্ণিত সর্বপ্রকারের সার্বভৌমত্ব আল্লাহ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট। আল্লাহ তাআলা মানুষের
প্রভু, মানুষের ইলাহ, মানুষের শাসক, শাসন কর্তৃত্বের মালিক। রাজত্বের ব্যাপারে তাঁর কোন অংশীদার নেই। নির্দেশ
প্রদানের অধিকার কেবল তাঁরই, কারণ তিনিই স্রষ্টা। তাই তো কুরআনে এসেছে, সাবধান ! সৃষ্টি তাঁরই এবং নির্দেশও
চলবে তাঁর। মোটকথা সার্বভৌমত্বও ক্ষমতা যে কোন অর্থে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই সংরক্ষিত। এটা তাঁর
অধিকার, কেবল তাঁকেই সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী স্বীকার করতে হবে, যা উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে।
১. সার্বভৌমত্ব শব্দের অর্থ কী?
ক. উচ্চতর ক্ষমতা; খ. নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব;
গ. আধিপত্য; ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
২. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অমান্য করাক. বিদআত; খ. কুফরী;
গ. ফাসিকী; ঘ. সব ক’টি উত্তরই ভুল।
৩. রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও অধিকার কার?
ক. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর; খ. একমাত্র আল্লাহ তাআলার;
গ. রাষ্ট্রপ্রধানের; ঘ. জনগণের।
৪. হুকুম দেয়ার একমাত্র অধিকার কার জন্য নির্ধারিত?
ক. আল্লাহ তাআলার; খ. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর;
গ. সেকুলার রাষ্ট্রের; ঘ. সকল নাগরিকের।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ততিনটি আয়াতের অনুবাদ লিখুন।
২. সার্বভৌমত্ব শব্দের অর্থ কী? লিখুন।
৩. প্রকৃত পক্ষে এ পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব কার? যুক্তিসহ লিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতা স¤পর্কে আল-কুরআনের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]