উমাইয়া আমলের বৈশিষ্ট্যগুলো খোলাফায়ে রাশেদূন ও উমাইয়া শাসনকালের মধ্যে তুলনা করুন।

উমাইয়া খিলাফতের বৈশিষ্ট্য
উমাইয়া শাসনামলে তাদের রাজত্বে ভাল-মন্দের সংমিশ্রণ ছিল। সকল বৈশিষ্ট্য যেমন ভাল ছিল না অনুরূপ
সকল বৈশিষ্ট্য মন্দও ছিল না। নি¤েœ ইতিবাচক ও নেতিবাচক সকল বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচিত হল-
১. উমাইয়া আমলের প্রধান এবং প্রথম বৈশিষ্ট্য ছিল রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। আমীর মুআবিয়া (রা) এবং
মারওয়ান সাসানী ও রোমান সম্রাটদের ন্যায় নিজ নিজ পুত্রকে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে মনোয়ন দান করে
রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। উমাইয়া খলীফাদের মধ্যে কেবল দ্বিতীয় উমর, হযরত উমর ইবন আব্দুল আযীয
খোলাফায়ে রাশেদুনের মত উত্তম শাসক ছিলেন।
২. উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁরা হাশেমী এবং
শীয়াদেরকে সকল প্রকার দায়িত্ব হতে দূরে সরিয়ে দেন।
৩. উমাইয়া শাসনকালের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল শাসন বিভাগ থেকে রাজস্ব বিভাগ পৃথক করা। অর্থ হাতে
পেয়ে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ যাতে বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ না পায় সেই উদ্দেশ্যে মু’য়াবিয়া (রা) রাজস্ব
বিভাগকে প্রদেশের কর্তৃত্বমুক্ত করে সরাসরি কেন্দ্রের অধীন করেছেন।
৪. উমাইয়া শাসকগণ প্রকৃতপক্ষে আরব সভ্যতার ধারক ও বাহক ছিলেন। সে যুগে আরবীকে রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং কেবল আরব জাতিকেই সরকারী কার্যে নিয়োগের নীতি অবলম্বন করা হয়।
উমাইয়া শাসনকে প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধ আরবীয় শাসন বলা যায়।
৫. উমাইয়া আমলে ধর্মকে কিছুটা রাজনীতি হতে পৃথক করে রাখা হয়। রাজনীতির জন্যই কেবল রাজনীতি
করা হতো। তাই বলে তাঁরা ইসলামকে তাঁদের ধর্ম হিসেবে অস্বীকার করতেন না। শাসকবর্গ নামাযের
ইমামতি করতেন বা প্রতিনিধি দ্বারা ইমামতি করিয়ে নিতেন। আর এটি ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়ম।
৬. উমাইয়া খলীফাগণ রোমানদের ন্যায় দামেস্কে জাঁকজমকপূর্ণ দরবারে বসে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
তাঁদের জীবন-যাত্রাও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল।
৭. বায়তুলমালকে উমাইয়া খলীফাগণ রাজ স¤পত্তিতে পরিণত করেন এবং সেখান হতে যথেচ্ছ খরচ
করতেন।
৮. আল-ফাই বা সরকারী ভূ-স¤পত্তিকে তাঁরা ব্যক্তিগত স¤পত্তিতে পরিণত করেন। তাঁদের স¤পদ এবং
স¤পত্তি এতদূর বৃদ্ধি পায় যে, খলীফা হিশাম রাষ্ট্রের ভূ-স¤পত্তির মালিক ছিলেন।
৯. উমাইয়া শাসকবর্গ নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য দেহরক্ষী নিয়োগ প্রথা চালু করেন। খলীফা আবদুল মালিক
জনসাধারণকে খলীফার সামনে কথা বলতে নিষেধ করতেন।
১০. তারা জনসাধারণের বাক-স্বাধীনতা রহিত করেন এবং ধর্মীয় পন্ডিতদের সাহচর্য পরিহার করেন। কেবল
রণজয়ী সেনাপতি এবং দলীয় নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমেই তাঁরা রাজ্য শাসন করতেন।
১১. উমাইয়া আমলে মাওয়ালী নীতি অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়েছিল। মুসলমান হওয়া সত্তে¡ও তারা আরব
মুসলমানদের সঙ্গে সমমর্যাদা পেত না। তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অধিকার ভীষণভাবে খর্ব করা হয় এবং
অমুসলমান প্রজার ন্যায় তাদের নিকট হতে জিযিয়া ও খারাজ আদায় করা হতো।
১২. উমাইয়া আমলে সামরিক শাসনব্যবস্থা ছিল গোত্রভিত্তিক। খলীফার দেহরক্ষী বাহিনী কেবল সরাসরি
কেন্দ্রের অধীন ছিল। অবশিষ্ট সৈন্য গোত্রপতিদের অধীন থাকত। যুদ্ধের সময় তারা স্ব স্ব গোত্রীয় পতাকা
সহ যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করত এবং প্রধান সেনাপতির ফরমান অনুসারে গোত্রপতিগণ সরকার হতে নিয়মিত
অর্থ পেতেন।
পাঠ ঃ ৩১৩. উমাইয়া সাম্রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় শাসন কাজের সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে কতকগুলো প্রদেশে
বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়। বড় বড় প্রদেশের সবগুলোকেই স্বায়ত্ত-শাসনের সুবিধা
দেয়া হয়। স্বায়ত্ত-শাসনের সুবিধা ছিল বলে প্রদেশগুলো কেন্দ্র কর্তৃক শোষিত হত না।
১৪. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে যেরূপ মজলিসের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তাঁরা তা পরিহার করেন এবং নিজ দল
ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সভাসদ নির্বাচিত করেন। যোগ্যতার প্রশ্ন তাঁদের কাছে নগণ্য ছিল।
১৫. এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে সাম্রাজ্য বিস্তারের দিক দিয়ে উমাইয়া যুগ গৌরবজনক ভূমিকা পালন
করে। খলীফা ওয়ালীদের আমলে বিখ্যাত সেনাপতিগণ আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার বিশাল
এলাকা মুসলিম পতাকাতলে আনয়ন করতে সক্ষম হন।
১৬. উমাইয়া যুগে রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র প্রভাব বিস্তার করে। উক্ত ষড়যন্ত্রে খিলাফতের
অনেক দাবিদার এবং যোগ্য ব্যক্তিবর্গ প্রাণ হারান।
১৭. উমাইয়া আমলে সাসানী রাজাদের দরবারের বহু কুপ্রথা দামেস্কের রাজ দরবারে প্রবেশ করে। বেশীরভাগ
খলীফাই বিলাস ও প্রমোদে মত্ত থাকতেন।
১৮. উমাইয়া আমলে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক শাসনের সুবিধার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দীওয়ান ও বিভাগ প্রতিষ্ঠা
করা হয়।
খোলাফায়ে রাশেদূন ও উমাইয়া খলীফাদের শাসনকালের মধ্যে তুলনা
১. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে পবিত্র কুরআন, হাদীস ও ইজমার উপর ভিত্তি করে শাসনকার্য পরিচালিত
হতো। উমাইয়া আমলে শাসন কার্যপরিচালনার ব্যাপারে খলীফাদের হুকুমের প্রাধান্য থাকত।
২. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে খলীফাগণ নিজেদেরকে জনসাধারণের সেবকমাত্র মনে করতেন। উমাইয়া
খলীফাগণ নিজেদেরকে শাসক হিসেবে দাবি করতেন।
৩. খোলাফায়ে রাশেদূনের আমলে জনসাধারণের আস্থার উপর খলীফাকে নির্ভর করতে হত, কিন্তু উমাইয়া
যুগে বল প্রয়োগের নীতি অনুকরণ করা হতো।
৪. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে খিলাফতে কোন বংশের স্থায়ী অধিকার স্বীকৃত ছিল না। কিন্তু উমাইয়া যুগে
খিলাফতে কেবল উমাইয়াদেরই প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। উমাইয়া যুগে স্বৈরতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের
প্রতিষ্ঠা হয়।
৬. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে জনগণের বাক-স্বাধীনতা ছিল ; কিন্তু উমাইয়া আমলে তাদের বাক-স্বাধীনতা
হরণ করা হয়।
৭. খোলাফায়ে রাশেদূনের আমলে রাজকোষে খলীফার ব্যক্তিগত কোন অধিকার ছিল না। উমাইয়া আমলের
খলীফাগণ রাজকোষের অর্থ যথেচ্ছা ব্যয় করতেন।
৮. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে জাহেলী যুগের গোত্রীয় প্রভাব লোপ পেয়েছিল। কিন্তু উমাইয়া আমলে তা
পুনঃ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৯. খোলাফায়ে রাশেদূনের আমলে খলীফাগণ অনাড়ম্বরপূর্ণ দরবারে বসাতেন এবং সাধারণভাবে জীবন যাপন
পছন্দ করতেন কিন্তু উমাইয়া শাসকগণ আড়ম্বরপূর্ণ দরবারে বসতেন এবং জাঁকজমকপূর্ণ জীবন যাপন
করতেন।
১০. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে ফরিয়াদীগণ সরাসরি খলীফার সামনে উপস্থিত হয়ে আরজী পেশ করতে পারত,
কিন্তু উমাইয়া আমলে সে সুযোগ ছিল না। খলীফাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়।
১১. খোলাফায়ে রাশেদূনের যুগে খলীফাগণ নিজেরাই আইনবিদ, শাস্ত্রবিশারদ এবং পন্ডিত ছিলেন। উমাইয়া
যুগে উলামা স¤প্রদায় রাজনীতি হতে অবসর গ্রহণ করেন এবং সরকারী প্রভাব হতে দূরে থেকে ইজমা ও
কিয়াস এবং জ্ঞান চর্চা করতেন।
১২. খোলাফায়ে রাশেদূনের শাসনতান্ত্রিক মর্যাদা শরী‘আত কর্তৃক সীমাবদ্ধ ছিল। উমাইয়া খলীফাগণের
অনেকেই স্বৈরাচারী ছিলেন।
তবে উমাইয়া খলীফা উমর ইবন আবদুল আযীয (র) উমাইয়া আমলের মন্দ বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রভাব মুক্ত ছিলেন।
তিনি স¤পূর্ণভাবে খোলাফায়ে রাশেদূনের নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তাই তাঁকে খোলাফায়ে রাশেদূনের পঞ্চম খলীফা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এছাড়া উমাইয়া আমলের প্রশাসনিক দক্ষতা, রাষ্ট্র পরিচালনা প্রশংসার দাবি দার।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক দিন
১. উমাইয়া খিলাফতের প্রধান এবং প্রথম বৈশিষ্ট্য ছিল-
ক. সাম্রাজ্য বিস্তার;
খ পরামর্শ ভিত্তিক শাসনকার্য পরিচালনা;
গ. স্বৈরতন্ত্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা;
ঘ. জনমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
২. উমাইয়া শাসন আমলে রাষ্ট্রব্যবস্থায়-
ক. আরব-অনারব সবার ভ‚মিকা ছিল সমান;
খ. একমাত্র আরবদের প্রভাব ও ব্যাপক ভ‚মিকা ছিল;
গ. হাশেমীদের গুরুত্ব ছিল;
ঘ. উত্তর কোনটিই সঠিক নয়।
৩. কোনটি উমাইয়া আমলের বৈশিষ্ট্য-
ক. উমাইয়া শাসকগণ আরব সভ্যতার ধারক ছিলেন;
খ. শাসন বিভাগ থেকে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করেন;
গ. রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন;
ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
৪. উমাইয়া আমলে জনসাধারণের বাকস্বাধীনতা
ক. রহিত করা হয়নি;
খ. স্বীয় মত প্রকাশ করার ব্যাপক সুযোগ দেয়া হয়;
গ. রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে তাদের কথা বলার অধিকার ছিল;
ঘ. কোনটিই সঠিক নয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. উমাইয়া আমলের উল্লেখযোগ্য ৫টি বৈশিষ্ট্য লিখুন।
২. ‘‘উমাইয়া আমলের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল স্বৈরতন্ত্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’’ ব্যাখ্যা করুন।
৩. খোলাফায়ে রাশেদূনের সঙ্গে উমাইয়া সরকার পদ্ধতির ৫টি পার্থক্য উল্লেখ করুন।
৪. উমাইয়া শাসনকে প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধ-আরবীয় শাসন বলা যায়-বিশ্লেষণ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. উমাইয়া আমলের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।
২. খোলাফায়ে রাশেদূন ও উমাইয়া শাসনকালের মধ্যে তুলনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]