আব্বাসীয় খিলাফতের বৈশিষ্ট্যগুলো । আব্বাসীয় শাসনামলের সাথে উমাইয়া আমলের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে তুলনা করুন।

সুদীর্ঘ ৫শ’ বছরের খিলাফতকালে আব্বাসীয়দের দ্বারা অনেক রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে
তারা অত্যন্ত যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তাদের পক্ষ থেকে অনেক দুর্বলতাও প্রদর্শিত হয়েছে।
নি¤েœ আব্বাসীয় সরকারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হল।
১. রাজতন্ত্রের ধারক-বাহকঃ আব্বাসীয়রাও উমাইয়াদের ন্যায় রাজতন্ত্রের ধারক-বাহক ছিলেন। প্রকৃত
খিলাফত প্রথার বিলুপ্তি সাধন করেন। ফলে আব্বাসীয়গণ তাঁদের সরকারকে খিলাফতের পরিবর্তে দৌলাহ নামে
অভিহিত করেন। “দৌলাহ” শব্দের অর্থ “নব রাষ্ট্র”।
২. ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজধানী সিরিয়া থেকে বাগদাদে স্থানান্তরঃ প্রথম আব্বাসীয় খলীফা আবুল
আব্বাস আল-সাফফাহ কুফাবাসীদের বিশ্বাস করতে পারেন নি। সেই কারণে তিনি খুরাসানের “হাম্মাম আঈন”
নামক স্থানে তাঁর বাসস্থান স্থানান্তর করেন। সেখান হতে অল্পদিন পরেই তিনি ‘হিরা’ নামক স্থানে সদর দপ্তর
স্থাপন করেন। সেখান হতে তিনি পুনরায় “হাশিমিয়া” নামক স্থানে তাঁর আবাসস্থল স্থানান্তর করেন। তাঁর মৃত্যুর
পর তাঁর ভ্রাতা আবু জা’ফর আল-মানসূর বাগদাদকে স্থায়ী রাজধানীর মর্যাদা দান করেন। এভাবে উমাইয়া
শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত রাজধানী দামেস্ক থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আব্বাসীয়দের রাজধানী বাগদাদ হয়। ফলে
সিরিয়ার প্রাধান্য দিন দিন কমতে থাকে এবং বাগদাদের গৌরব দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩. সিরীয় প্রভুত্ব হতে ইরাকের মুক্তি লাভঃ উমাইয়া আমলে প্রায় শত বার প্রচেষ্টা চালিয়েও ইরাকীরা
সিরীয়ার প্রভ‚ত্ব থেকে মুক্তি পায়নি। বাগদাদ ইসলামী সাম্র্যাজ্যের রাজধানী হওয়ায় ইরাক সে প্রভুত্ব থেকে মুক্তি
লাভ করতে সক্ষম হয় এবং আব্বাসীয় সরকার ইরাকপক্ষীয় ও সিরীয় বিরোধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
৪. অনারবগণের প্রাধান্য বিস্তারঃ আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আরবদের প্রাধান্য এবং সুযোগসুবিধা খর্ব হয়ে পড়ে এবং এতদিনের বঞ্চিত অনারবগণ সরকারে প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
৫. ইসলামের আন্তর্জাতিকতার প্রকাশঃ আরব এবং অনারব বৈষম্য বিদূরিত হয়ে ইসলাম আন্তর্জাতিক রূপ
নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ইরানী ও খুরাসানীগণ, যাদের সাহায্যে আব্বাসীয়গণ ক্ষমতা লাভ করেছিলেন, তারাও
আরবদের মত সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণের সুযোগ পায়। প্রকৃতপক্ষে তারাই সাম্রাজ্যের সর্বেসর্বা
হয়ে উঠেন এবং আরবদের প্রভাব দিন দিন খর্ব হতে থাকে। এই বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে ওয়েলহাউযেন
মন্তব্য করেন, “আন্তর্জাতিক ইসলামের ছদ্মবেশে আরবদের উপর ইরানবাদ প্রভাব বিস্তার করে।”
৬. আব্বাসীয় সরকারের প্রকৃতি ছিল অনারবীয়ঃ আব্বাসীয় খলীফাগণ যে সরকার প্রতিষ্ঠা করেন তার
প্রকৃতি ছিল অনারবীয় ; পক্ষান্তরে উমাইয়া সরকারের প্রকৃতি ছিল আরবীয়। উমাইয়া যুগে বংশ পর¤পরার
যথেষ্ট মূল্য ছিল, কিন্তু আব্বাসীয় যুগে বংশ পর¤পরার তেমন কোন মূল্য ছিল না। আব্বাসীয় খলীফাগণ মনে
করতেন যে, মহানবীর উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁদের শাসন করার স্বর্গীয় অধিকার রয়েছে এবং সকল মুসলমানের
সঙ্গে তাঁদের একই স¤পর্ক।
৭. দরবারে মোসাহেবদের বাড়াবাড়িঃ পূর্বের তুলনায় আব্বাসীয়দের দরবারে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা
যায়। খলীফাগণ প্রায়শই মোসাহেব পরিবেষ্টিত অবস্থায় থাকতেন। দরবারে ক্রমানুসারে হাশেমী, খুরাসানী এবং
সামরিক প্রধানদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষভাবে মুক্তিপ্রাপ্ত দাস-দাসীদের প্রাধান্য ও প্রভাব রাজনীতির ধারা
অত্যন্ত জটিল করে তোলে।
পাঠ ঃ ৬৮. সরকারের মধ্যে প্রভাবশালী শ্রেণীর সৃষ্টিঃ আব্বাসীয় শাসনামলে সরকারী অফিসারগণ একটা স্থায়ী
প্রভাবশালী শ্রেণীতে পরিণত হয়। তাদের শিরোভাগে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই মন্ত্রীগণই পরবর্তীকালে খলীফার
হয়ে যাবতীয় সরকারী কার্য স¤পাদন করতেন ; খলীফা বেঁচে থাকতেন কেবল খুতবা ও বক্তৃতায়।
৯. খলীফার দরবারে অনারবীয় রীতির প্রচলনঃ কতিপয় আব্বাসীয় খলীফার দরবারে সুষ্ঠুভাবে ইরানী
প্রভাব পড়েছিল। খলীফার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছিল দরবারে জল্লাদ নিয়োগ করে। খলীফার হুকুমমাত্র আসামীর
শিরচ্ছেদ করে সে ঘাতক খলীফার ক্ষমতার প্রতাপ প্রদর্শন করত। তাছাড়া দরবারে গণক রাখা হতো ভবিষ্যৎ
বাণীদাতাগণ বিশেষভাবে সামরিক অভিযানে সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে অবস্থান করত।
১০. পোস্টমাস্টার নিযুক্তিঃ আব্বাসীয় দরবারের বড় বৈশিষ্ট্য ছিল পোস্টমাস্টার নিযুক্তিকরণ। পোস্ট
মাস্টারগণ একই সঙ্গে গোয়েন্দার কার্যও করত। এমনকি প্রাদেশিক গভর্নরদের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপের বিবরণও
তারা গোপনে খলীফার গোচরে আনত।
১১. ইসলামকে পুনঃ প্রতিষ্ঠাঃ আব্বাসীয় শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, আব্বাসীয় খলীফাগণ
মনে করতেন যে, তাঁরাই ইসলামকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা হাদীস বিশারদ পন্ডিতদের মদীনা হতে বাগদাদ
যেতে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁদের দ্বারা নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে নিতে প্রয়াসী হন। তাঁরা কুরআন ও হাদীস
উচ্চে তুলে ধরেন এবং সমস্যা ও বিচারাদি শরীয়াতের বিধান অনুসারে স¤পন্ন করার চেষ্টা করতেন।
১২. শী‘আদের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতাঃ প্রথম হতেই আব্বাসীয়গণ হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে।
তারা শী‘আ ইমামকে খিলাফতদানের প্রতিশ্রæতি দিয়ে শী‘আদের সাহায্য লাভ করে উমাইয়াদের পতন ঘটাতে
সক্ষম হয়; কিন্তু সিংহাসন লাভ করে সে প্রতিত্রæতি তারা আর রক্ষা করেনি, বরং সেই ইমামকে খলীফা মানসুর
হত্যা করে নিজেদের পথ নিষ্কন্টক করেছিলেন। আলী, আবু মুসলিম প্রভৃতি যে সকল সেনাপতির সাহায্যে তাঁরা
ক্ষমতা লাভ করেন, তাদের কাউকেই তারা জীবিত রাখেন নি। এমনকি খুরাসানীদের দমন করার জন্য তারা
তুর্কীদের প্রাধান্য দেন এবং খুরাসানীদের দমন করে নিজেদের পথ পরিস্কার করেন।
১৩. আব্বাসীয় খলীফা মানসুর মুসলমানদের উপর স্থায়ী প্রভাব বিস্তারের জন্য এবং ক্ষমতায় আব্বাসীয়
বংশকে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সেই কারণে তাঁরা ছিলেন পার্থিব ও আধ্যাত্মিক
নেতা। আব্বাসীয় আমলে খিলাফত অধিকতর আকর্ষণীয় হয় এবং খলীফাকে যিল্লুল্লাহ ‘আলাল আরদ’ বা
জমিনে আল্লাহর ছায়া বলা হতো।
১৪. সামরিক প্রতিভার লোভ এবং খিলাফতের অখন্ডতা নষ্টঃ আরব জাতি একটি সামরিক জাতি
হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং উমাইয়া যুগ পর্যন্ত আরবগণ এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিশাল অংশে
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে অখন্ড খিলাফতের অধিকারী হয়। কিন্তু আব্বাসীয় আমলে একদিকে যেমন আরবগণ
সামরিক প্রতিভা হারিয়েছিল, অপরদিকে তেমনি খিলাফতের অখন্ডতাও ইবনষ্ট হয়েছিল।
১৫. জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাঃ আব্বাসীয় শাসনকাল জ্ঞানবিজ্ঞানচর্চার দিক দিয়ে সর্বাধিক উন্নতিলাভ করে।
উমাইয়া শাসনকালে বিজয় অভিযান ও গৃহযুদ্ধের জন্য জ্ঞানানুশীলনের দিকে তত মনোযোগ দেয়া সম্ভবপর
হয়নি। উপরন্তু বুদ্ধিমান মাওয়ালীগণ সে যুগে অবহেলিত ছিলেন। কিন্তু আব্বাসীয় আমলে তাদের রাজনৈতিক
প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তিও লাভ করে এবং তারা শুধু তার ভিত্তিতে নয় বরং আরবদের অপেক্ষা
শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে জ্ঞানচর্চা শুরু করেন ও ইসলামী সভ্যতায় অনন্য অবদান রাখেন।
১৬. তুর্কীদের প্রভাবঃ পারসিকদের পাশাপাশি তুর্কীদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধিও আব্বাসীয় যুগের অন্যতম
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। পারসিক প্রভাব ক্ষুণœ করার ও পারসিক পরিবেষ্টন হতে মুক্তি লাভের জন্য আব্বাসীয়
খলীফা মুতাওয়াক্কিল তুর্কীদেহরক্ষী বাহিনী গঠন করে তাদের সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা দান করেন এবং বাগদাদ
হতে তুর্কিস্থানে রাজধানী স্থানান্তর করেন। এই তুর্কীগণই পরে খলীফার দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের
পর সেলজুক তুর্কীগণ আবার ক্ষমতাসীন হয় এবং দীর্ঘদিন যাবৎ আব্বাসীয় খলীফাদের উপর প্রভূত্ব বিস্তার করে রাখে।
১. প্রথম আব্বাসীয় খলীফা কে ছিলেন?
ক. আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ; খ. খলীফা মানসূর;
খ. খলীফা হারূন-অর রশীদ; ষ. হিশাম।
২. আব্বাসীয় খেলাফত কালেখ. আরবদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়; খ. কমে যায়;
গ. পূর্বের মত বহাল থাকে; ঘ. প্রথম দিকে কমে যায় পরে বৃদ্ধি পায়।
৩. আব্বাসীয় খেলাফতকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলক. দামেস্কে; খ. মদীনায়;
গ. কুফায়; ঘ. বাগদাদে।
৪. আব্বাসীয় যুগে সবচেয়ে উন্নতি লাভ করেক. সম্রাজ্য বিস্তারে; খ. জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়;
গ. সামরিক দিক থেকে; ঘ. আধ্যাত্বিক দিক থেকে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আব্বাসীয়দের উল্লেখযোগ্য ৫টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
২. আব্বাসীয়দের যে কোন এমন ৫টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন যা উমাইয়াদের স¤পূর্ণ বিপরিত।
৩. আব্বাসীয় আমলে অনারবদের পুনপ্রতিষ্ঠত হওয়া সম্পর্কে লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. আব্বাসীয় খিলাফতের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।
২. আব্বাসীয় শাসনামলের সাথে উমাইয়া আমলের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে তুলনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]