অর্থনীতির পরিচয় ও বিষয়বস্তু লিখুন। ইসলামি অর্থনীতির সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু নিরূপণ করুন।

ইসলামি অর্থনীতি ইসলামি সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসের
আলোকে ইসলামি শরীআ নির্দেশিত ব্যবস্থা। মুসলিম জীবন দর্শনের বাস্তবায়ন এ অর্থ ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত হয়।
এটি প্রগতিশীল বিষয় হিসেবে ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি জীবন দর্শন, কৃষ্টি ও সভ্যতা সবকিছু একই সূত্রে
গাঁথা। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী (স)
প্রদর্শিত জীবন-বিধান অনুযায়ী সার্বিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে পার্থিব স¤পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে
উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ ও ব্যবহারই ইসলামি অর্থনীতির মূল কথা। ইসলামি অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তুর মধ্যে
রাষ্ট্রীয় ও সমষ্টিগত উপার্জন, ব্যয়, বিনিয়োগ, ভোগ, বণ্টন, অর্থ লেনদেন, শ্রম, মূলধন, উৎপাদন, সংগঠন,
ভ‚মি, রাজস্ব, কর, ঋণদান ও গ্রহণ, যাকাত, সাদকাহ ও ভ‚মি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি যা কিছু জীবন উপকরণের
সাথে স¤পৃক্ত সে সকল বিষয় ইসলামি অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি হচেছ সকল ক্ষেত্রে
আমর বিল মারূফ এবং নাহি আনিল মুনকারের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাযকিয়া ও তাকওয়া অর্জন। ইসলামি
অর্থনীতি কুরআন-হাদীস নির্ভর বিধায় মানব রচিত অর্থ ব্যবস্থা হতে এটি অনন্য বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। এর উপার্জন
পদ্ধতি, বণ্টনরীতি, মালিকানা, উত্তরাধিকার-আইন, শ্রমনীতি, সুদবিহীন ব্যাংকিং পদ্ধতি, জনকল্যাণমূলক
কর্মকান্ড ববং ব্যবসা বাণিজ্যের স্বচ্ছতা প্রচলিত ব্যবস্থা হতে উন্নত ও স্বচছ। ধনতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক
অর্থব্যবস্থার সাথে এর যথেষ্ট ও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। সর্বোপরি ইসলামি অর্থব্যবস্থা মানুষের
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করেছে। আলোচ্য ইউনিটে এ বিষয়গুলোই আলোচিত হয়েছে। অর্থনীতির পরিচয়
অর্থনীতি সামাজিকবিজ্ঞানের একটি বৃহত্তম শাখা। এটা সমাজবদ্ধ মানুষের আর্থিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ঊপড়হড়সরপং। গ্রিক ঙরশড়হড়সর থেকে ঊপড়হড়সরপং শব্দটি এসেছে। যার
আভিধানিক অর্থ ‘আর্থিক বিষয়াদির ব্যবস্থাপনা’। তাই অর্থনীতি বলতে এমন এক বিষয় বুঝায় যা মানুষের
অর্থসংক্রান্তবিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এটি মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। সমাজবদ্ধ কেউ সয়ংসম্পূর্ণ নয়। তারা
পরস্পর পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা অপরিসীম। কিন্তু তাদের শক্তি ও সামর্থ্য সীমিত।
পারস্পরিক লেনদেনের মাধ্যমেই তারা নিজেদের অভাব-অনটন দূর করে থাকে। এজন্য মানব সমাজে বিনিময়
প্রথা উদ্ভব হয়েছে। প্রাথমিক যুগে দ্রব্য বিনিময় ব্যবস্থা চালু ছিল। পরে আস্তেআস্তেমুদ্রা বিনিময় প্রথা চালু হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মানব জাতির স¤প্রসারণ, ক্ষমতা ও লভ্য সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে ও অভাবের সূত্র
ধরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের উদ্ভব হয়েছে। অর্থনীতি একটি গতিশীল (উুহধসরপং) শাস্ত্র বলে বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের দেয়া বহু সংজ্ঞা আজ যথার্থতা ও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে।
অর্থনীতির সংজ্ঞা নিয়ে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। সময় ও সভ্যতার অগ্রযাত্রার সাথে সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে
পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যার ফলে অর্থনীতির সংজ্ঞায়ও নানা পরিবর্তন এসেছে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের
মতে, অর্থনীতি হচ্ছে- . অর্থনীতি হচ্ছে সংসার পরিচালনার
কলাকৌশল। কিন্তু আধুনিক যুগের অর্থনীতিবিদরা তাঁর এ সংজ্ঞা মানতে রাজী নন। তারা অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা
দিয়ে অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ ও স¤প্রসারণ করেছেন। নি¤েœঅর্থনীতির কতিপয় উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা
হল১. ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শালের ভাষায়, অর্থনীতি হচ্ছে মানব জীবনের
সাধারণ বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী একদিকে সম্পদ অন্যদিকে মানুষ ও তার মঙ্গল
অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। এ সংজ্ঞাটি অর্থনীতির বিষয়বস্তুকে অত্যন্তবিস্তৃত ও অনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। বলা
হয়, বৈজ্ঞানিক সূ²তা ও নির্দিষ্টতা মার্শালের সংজ্ঞায়ও নেই।
২. ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে নামক গ্রন্থে আলফ্রেড মার্শাল বলেন, “অর্থনীতি হচ্ছে মানব জীবনের সাধারণ
বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা।” মার্শারের সংজ্ঞায় মানব জীবনের সাধারণ মানবিক দিকের প্রতি লক্ষ্য রাখা
হয়েছে। ফলে সম্পদের সাথে অর্থনীতির লক্ষ্যবস্তু থাকল মানব কল্যাণমূলক। মার্শালের সংজ্ঞার সমালোচনায়
যেসব বিশেষ দিক ফুটে ওঠেছে তা হচ্ছে, সম্পদ ব্যবহারের অনুশীলন। এটা মানবকল্যাণ ধর্মী। এটা
মানুষকে সর্বদা স্বার্থবাদী বলে চিহ্নিত করে না। সর্বোপরি এটা একটি সামাজিক বিজ্ঞান।
৩. ১৭৭৬ সালে ব্রিটেনের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এ্যাডাম স্মিথ (অফধস ঝসরঃয) সর্বপ্রথম একটি অর্থ শাস্ত্র
হিসেবে অর্থনীতির সংজ্ঞা নিরূপণ করে বলেন- “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা জাতিগুলোর সম্পদের
প্রকৃতি ও কারণ অনুসন্ধান করে।”
তাঁর মতে, অর্থনীতি সম্পদের বিজ্ঞান। কিন্তু এ সংজ্ঞাটি
সীমিত ও অসম্পূর্ণ। এখানে সম্পদের প্রকৃত ব্যাখ্যা নেই। আর সম্পদই মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য
নয়। বরং এটি মানব কল্যাণের একটি উপায় মাত্র।
৪. অধ্যাপক লিওনেল রবিনসের মতে, “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান, যা অসীম চাহিদা
ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমাবদ্ধ উপায়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।” এ
সংজ্ঞায় সম্পদ বা কল্যাণ কোনটির উল্লেখ নেই। মানুষের প্রয়োজন মেটানোর এবং ব্যবহার্য উপকরণগুলোর
অপ্রাচুর্যের উল্লেখ রয়েছে।
৫. আলফ্রেড মার্শাল তাঁর গ্রন্থে অর্থনীতির যে সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন সে
বিষয়ে রবিনসের সমালোচনা ওপরে তুলে ধরা হয়েছে। বস্তুত ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে মার্শালের উক্ত পুস্তক রচনার
৪১ বছর পরে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে লিওনেল রবিনসের উক্ত সমালোচনা সুধী মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি
করেছে। অবশ্য ইসলামি চিন্তাবিদদের কাছে রবিনসের সমালোচনা অনেকখানিই গ্রহণযোগ্য নয়। যাহোক,
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবিনস মার্শালের সমালোচনা করে নিজেই অর্থনীতির একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন
যা পাশ্চাত্য জগতে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনীতি সম্পর্কে রবিনস নি¤œরূপ সংজ্ঞা দিয়েছেন।
অর্থাৎ বিকল্প ব্যবহারযোগ্য অপ্রতুল
উপকরণগুলোর ভেতরে যেগুলো মানুষের প্রয়োজনে লাগে সেগুলোর সাথে মানবের সম্পর্ক স্থাপনে মানবীয়
আচরণ পর্যালোচনার শাস্ত্রকে অর্থনীতি বলে।
৬. জে. এস. মিল বলেন, “অর্থনীতি হচ্ছে সম্পদ উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যবহারিক শাস্ত্র।”
৭. জে. বি. সে বলেন- “অর্থনীতি ধন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।”
এডউইন ক্যান্যান -এর মতে, “অর্থনীতি বৈষয়িক কল্যাণের উপায় সংক্রান্তআলোচনা।”

৮. পাশ্চাত্য জগতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাটি দিয়েছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ববার (ইড়নবৎ)। তাঁর মতে
“স্বল্প উপকরণসমূহের বিতরণ, কর্মসংস্থান ও আয়ের নির্ধারকসমূহের আলোচনাই হচ্ছে সংক্ষেপে অর্থনীতি।”
বিষয়বস্তু
অর্থনীতির বিষয়বস্তু নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তিগত ও আর্থ-সামাজিক
চাহিদার প্রকৃতি, পরিধি এবং পরিমাণের ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতির বিষয়বস্তুর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
অর্থনীতি সমাজবদ্ধ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে। সমাজবহির্ভূত, উদাসীন, বৈরাগ্যবাদী
জীবনে অভ্যস্তলোকের আচরণ অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় নয়। অর্থনীতি অর্থনৈতিক কার্যাবলীর কল্যাণকর এবং
অকল্যাণকর দিকও আলোচনা করে। যেমন- মাদক দ্রব্যাদি, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়াদির উৎপাদন, বণ্টন ও
ভোগ যে অকল্যাণকর তা অর্থনীতির পাঠ থেকে জানা যায়। অর্থনীতি শুধু সমস্যাই বিশ্লেষণ করে না, সমাধানের
অর্থনির্দেশও দান করে।
মানুষ কিভাবে সীমিত সম্পদ দ্বারা অসীম অভাব পূরণ করে সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করতে পারে অর্থনীতি তা নিয়ে
আলোচনা করে। সীমিত যোগানবিশিষ্ট উৎপাদনের উপকরণসমূহকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে অধিক উৎপাদন করা
যায় এবং কিভাবে সুষ্ঠু ও দক্ষ বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে জনমানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা যায় তা-ই অর্থনীতির
বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কিভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে
দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করা যায় তাও অর্থনীতির আলোচনার বিষয়বস্তু। এজন্য
অর্থনীতিকে ভবিষ্যতের আলোকদিশারী বলে আখ্যায়িত করা হয়।
অর্থশাস্ত্রের জনক বলে পরিচিত ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা চিন্তাবিদ এডাম স্মিথ সর্বপ্রথম ১৭৭৬ সালে অর্থশাস্ত্র সম্পর্কে
পৃথক আলোচনা করেন। তাঁর মতে, অর্থনীতি হচ্ছে সম্পদ বা অর্থ উপার্জনের পন্থা। আর তাই অর্থ উপার্জনের
পন্থা সম্পর্কে আলোচনাই অর্থনীতির বিষয়বস্তু। তাঁর এ ধারণা পরবর্তীকালে জে. বি. সে ওয়াকার,
জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ সমর্থন করেন।
আলফ্রেড মার্শালের মতে, “অর্থনীতির বিষয়বস্তু সম্পদ নয়, বরং অভাব মোচন সংক্রান্তমানুষের দৈনন্দিন
কার্যাবলী। সম্পদ অভাব মোচনের উপায় মাত্র।” মার্শাল আরো বলেন, “মানুষের বহু কাজ আছে কিন্তু তার সব
কাজই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় নয়। টাকা-পয়সা, আয়-ব্যয় অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় ।” সুতরাং অর্থশাস্ত্রের
আলোচ্য বিষয়ের একদিকে হলো সম্পদ অন্যদিকে মানুষ।
অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু অত্যন্তব্যাপক। তবে মানুষের অভাব মোচন সংক্রান্তকর্মকান্ড বিষয়ক আলোচনাই হলো অর্থনীতির মূল বিষয়বস্তু।
ইসলামি অর্থনীতির পরিচয়
ইসলামি অর্থনীতি কী ?
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তাঁর রাসূল (সা) প্রদত্ত জীবন বিধানই ইসলাম। যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ
জীবন বিধান সেহেতু এর অনুসারীদের জন্য রয়েছে ব্যক্তিজীবন, গোষ্ঠীজীবন তথা রাষ্ট্রীয় জীবনে দায়-দায়িত্ব ও
কর্তব্য পালনের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও উপযুক্ত নীতিমালা। এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, পরিবার সমাজ,
রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, আইন ও বিচার প্রভৃতি। অর্থনীতি যে কোন জাতি বা রাষ্ট্রের জন্য একটি অপরিহার্য
প্রসঙ্গ। ইসলামি জীবন বিধানের অনুসারীদের জন্যেও একথা সত্য। তাই ইসলামি অর্থনীতি বলতে ঐ
অর্থনীতিকেই বোঝায়- যার আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কর্মপদ্ধতি এবং পরিণাম ফল, ইসলামি আকিদা অনুযায়ী
নির্ধারিত হয়। এ অর্থনীতির মূলনীতি ও দিক-নির্দেশনা বিধৃত রয়েছে আল-কুরআন ও সুন্নাহতে।
ইসলামি অর্থনীতির ভিত্তি বা দর্শন
প্রত্যেক জাতি বা সমাজের একটি জীবনদর্শন থাকে। সেই জীবনদর্শন অনুসারেই তার জীবন তথা জাগতিক
কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। মুসলমানদের জীবনের সেই দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে তাওহিদ, রিসালাত ও
আখিরাত। পক্ষান্তরে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থনীতির দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে বস্তুবাদ তথা ভোগবাদ। অধুনা
ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত্তি ছিল দ্বা›িদ্বক বস্তুবাদ। মুসলিম উম্মাহর আকীদা হচ্ছে এ বিশ্বচরাচরের
একজন মহান স্রষ্টা আছেন। তিনি এক, অদ্বিতীয় ও সর্বশক্তিমান। একমাত্র তাঁরই নির্দেশিত পথে চললে মিলবে
কল্যাণ ও মুক্তি। এ নির্দেশিত পথটি কি এবং কেমন করে সেপথে চলতে হবে তা জানাবার জন্যে সেই বিশ্বস্রষ্টাই
আবার যুগে যুগে পাঠিয়েছেন নবী-রাসূলদের। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) সে ধারায় সর্বশেষ রাসূল এবং তাঁরই
মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা প্রদান করা হয়েছে।
মুসলমানদের সমগ্র জীবন ও কর্মকান্ড তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। অর্থনীতিতে
যেহেতুসেই জীবন ও কর্মকান্ডেরই এক বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে সেহেতু এ ক্ষেত্রেও তাওহীদ রিসালাত ও
আখিরাতের দাবি সমভাবে প্রযোজ্য। এ দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই আবর্তিত হয় মুসলমানদের জীবনের সার্বিক
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, গড়ে ওঠে সমৃদ্ধি ও গতিশীল অর্থনীতি।
ইসলামি জীবন দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ইসলামি অর্থনীতি। পবিত্র কুরআন ও হাদীস হচ্ছে এর মূল
ভিত্তি বা উৎস। একটি প্রগতিশীল বিষয় হিসেবে ইসলামি অর্থনীতি- ইসলামি জীবনদর্শন, কৃষ্টি ও সর্ভতার সাথে
একই সূতোয় গাঁথা। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত ও
মহানবী (সা) প্রদর্শিত জীবন-বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে আল্লাহর দেয়া
পার্থিব সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে তা থেকে শরীআতের বিধান অনুযায়ী উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগব্যবহার করার নামই হলো ইসলামি অর্থনীতি।
ইসলামি চিন্তাবিদ ও অর্থনীতিবিদগণ ইসলামি অর্থনীতিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নি¤েœ
ইসলামি অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো ঃ
১. মুহাম্মদ বিন হাসান তুসীর মতে, “ইসলামি অর্থনীতি হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতা, বৃত্তি ও বিজ্ঞান।”
[মুহাম্মদ বিন হাসান তুসী, (১২০১-১২৭৪ খ্রিস্টাব্দ), আখলাকে নাসিরী]।
২. তিউনিসিয়ার বিশ্ববিখ্যাত আরব মনীষী ইবনে খালদুন বলেন, “ইসলামি অর্থনীতি হচ্ছে জনসাধারণের
কল্যাণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।” [ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬ খ্রিস্টাব্দ),
আল-মুকাদ্দিমা]।
৩. এস.এম. হাসান জামানের মতে, “অর্থাৎ “ইসলামি অর্থনীতি হচ্ছে বস্তুগত সম্পদ আহরণ ও তা ব্যয় এবং বণ্টনের প্রক্রিয়ায় অবিচার, জুলুম
ইত্যাদি প্রতিরোধে আরোপিত ইসলামি বিধি-নিষেধ সম্বন্ধীয় জ্ঞান এবং বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ, যাতে করে
মানুষ আল্লাহ এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
৪. মুহাম্মদ আকরাম খানের মতে,
অর্থাৎ “সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জাগতিক সম্পদ সংগঠিত করার মাধ্যমে যে মানবীয় কল্যাণ
অর্জন করা যায়, সে সম্পর্কিত জ্ঞানই হচ্ছে ইসলামি অর্থনীতি।”
৫. মুহাম্মদ আকরাম খানের সংজ্ঞায় ফালাহ্ (ঋধষধয) বা কল্যাণ শব্দটি খুবই তাৎপর্যবহ। ফালাহ্ শব্দটি এসেছে
আফলাহ বা ইউফলিহ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে সমৃদ্ধি অর্জন করা, উন্নতি করা, সুখী হওয়া, কৃতকার্যতা লাভ
করা প্রভৃতি। পার্থিব জীবনে ফালাহ্ বা কল্যাণ বলতে বুঝায় বেঁচে থাকা (ঝঁৎারাধষ), অভাব থেকে মুক্তি
. অনন্তসমৃদ্ধি . চিরস্থায়ী সম্মান এবং
অজ্ঞতামুক্ত জ্ঞান ইসলামি অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব
কল্যাণ। মহান আল্লাহ বলেন, “এ বিশ্বজগতের সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।”
ইসলামি অর্থনীতিতে কল্যাণ বলতে কেবলমাত্র ইহজাগতিক কল্যাণকে বুঝায় না। ইহজগত ও পরজগত
উভয় জগতের সর্বাধিক কল্যাণ করাই হচ্ছে ইসলামি অর্থনীতির লক্ষ্য। পবিত্র কুরআন মজিদে ৪০ বার
‘ফালাহ্’ বা কল্যাণ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বুঝা যায়, ‘কল্যাণ’ শব্দটির গুরুত্ব ইসলামি অর্থনীতিতে
কতখানি।
৬. এস.এম. আবুল কালামের মতে- “ইসলামি অর্থনীতি একাধারে একটি বিজ্ঞান এবং কলা যার প্রতিপাদ্য বিষয়
হচ্ছে আল্লাহর অনুগত বান্দার দৈনন্দিন জীবনাচার ; অর্থাৎ সে কিভাবে আয় করে এবং কিভাবে তা ব্যয়
করে থাকে। ইসলামি অর্থনীতি একটি বিজ্ঞান এ অর্থে যে ইহা বস্তুগত উৎপাদন, পণ্য বণ্টন ও ভোগের
ক্ষেত্রে বহুবিধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সন্ধান দেয়।”
৭. প্রিন্স মুহাম্মদ আল ফয়সল আল সাউদ বলেন, অর্থাৎ “ইসলামি অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা আল্লাহ প্রদত্ত নীতিমালার আওতায় সম্পদ ও
উৎপাদনের উপকরণসমূহের ব্যবহার এবং মানুষের পার্থিব চাহিদা মেটানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা
প্রদান করে।”
৮. তুরস্কের অর্থনীতিবিদ সাবাহ্ ইলদিন জাইমের মতে- “ইসলামি আদর্শ পালনের ক্ষেত্রেও অর্থনীতি অবদান
রাখে। এর মাধ্যমে ইসলামি অর্থনীতি মানুষকে তার সার্বিক প্রয়োজন মেটানোসহ উচ্চতর আদর্শসমূহ
বাস্তবায়নে সহায়তা করে।”
৯. মনজের কাহফের মতে, অর্থাৎ “ইসলামি অর্থনীতি এমন একটি
ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে যেখানে ইসলামি আইন ও প্রতিষ্ঠানসমূহ বিদ্যমান থাকে এবং অধিকাংশ মানুষ
ইসলামি আদর্শে বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করে।”
১০. এম. ওমর চাপড়ার মতে- “ইসলামি অর্থনীতি হচ্ছে জ্ঞানের সে শাখা যা ব্যক্তি স্বাধীনতা, সামষ্টিক
অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর অযথা হস্তপেক্ষ না করে ইসলামি শিক্ষার সাথে সঙ্গতি
রেখে দু®প্রাপ্য সম্পদের বরাদ্দ ও বণ্টনের মাধ্যমে মানবীয় কল্যাণ অর্জনে সহায়তা করে।”
১১. এম. নেজাতুল্লাহ্ সিদ্দিকী বলেন, “
অর্থাৎ “সমকালীন সময়ের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় মুসলিম চিন্তাবিদদের কুরআন, সুন্নাহ এবং
যুক্তি ও অভিজ্ঞতার দ্বারা তৈরি (যা অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ) জবাবই হচ্ছে ইসলামি অর্থনীতি।”
১২. ড. এম. এ. মান্নানের মতে- “অর্থনীতি হচ্ছে একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা ইসলামি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত
মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। ইহা একটি সমন্বিত সমাজবিজ্ঞান যা বাজারজাত, বিনিময়
ও বাজার বহির্ভূত একতরফা বিনিময়ের সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের সমস্যাবলী
নিয়ে আলোচনা করে এবং ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে তাদের সামাজিক ও নৈতিক পরিণতিসমূহ
বিশ্লেষণ করে।”
ইসলামি অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু
ইসলামি অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তুর মধ্যে সমাজ তথা সামাজিক কল্যাণ, পারস্পরিক সম্পর্ক, মানবতা ও
বিশ্বভ্রাতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, মূলত ইসলামি অর্থনীতি মুসলিম মিল্লাতের অর্থনৈতিক আচরণ ও
প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করে।
ইসলামি অর্থনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তুর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ও সমষ্টিগত উপার্জন, ব্যয়, বিনিয়োগ, ভোগ, বণ্টন, অর্থ,
লেনদেন, শ্রম, মূলধন, উৎপাদন, সংগঠন, ভূমি, রাজস্ব, কর, ঋণদান ও গ্রহণ, যাকাত, সাদাকাহ ও ভূমি
ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি যা কিছু জীবন উপকরণের সাথে সম্পৃক্ত সেসব বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। জীবন উপকরণের এই
সম্পৃক্তি ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোন পর্যায়ের হতে পারে। সাধারণ অর্থশাস্ত্র নৈতিকতা
নিরপেক্ষ কিন্তু ইসলামি অর্থব্যবস্থাতে নৈতিকতা একটি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ফলে অর্থনীতির
বিষয়বস্তুর মধ্যে নৈতিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ অর্থনীতির তুলনায় ইসলামি অর্থনীতি
সীমিত। কারণ ইসলামি অর্থনীতি ঈমানদার লোকদের কার্যকলাপ নিয়েই আলোচনা করে। তবে এটা মু’মিনদের
জনহিতকর কার্যাবলী সংক্রান্তবিষয়সমূহের উপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে এটা একটি অনন্য সাধারণ শাস্ত্র।
অর্থোপার্জন ও অর্থ ব্যয় সংক্রান্তবিশ্লেষণ সাধারণ অর্থনীতির ন্যায় ইসলামি অর্থনীতিরও আলোচ্য বিষয় কিন্তু
এখানে কুরআন মাজীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এছাড়াও হালাল উপার্জনের জন্য ইসলাম সর্বাধিক তাকীদ
দিয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন-
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلنَّ اسُ ᛿᠑ ل᠑ وا᠔ مِ مَّ ا فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ حَ ᢿ َᢻ ًطَ يِّ ᘘا᠍ وَ ᢻ َتَ ᙬَّ ᘘ ِعُ وا᠔ خُ طُ وَ اتِ ٱلشَّ ᘭ ْطَ انِ إِ نَّ هُ
ل᠐ ᠑ᝣ مْ عَ دُ وٌّ مُّ بِ ينٌ .
“হে মানুষ ! পৃথিবীতে যা কিছু আছে, হালাল ও পবিত্র, তা থেকে খাও এবং কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ
করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ।” (সূরা আল-বাকারা : ১৬৮)
এ আয়াত থেকে স্পষ্টত বুঝা যায় অর্থোপার্জন ও ব্যয় প্রক্রিয়া কুরআনের শৃঙ্খলমুক্ত নয়। বস্তুত ইসলামি অর্থনীতি
কুরআনের বাণী নিয়ে আলোচনা করে।
উল্লেখ্য যে, বিগত সহস্রাধিক বছর ধরে ইসলামি পন্ডিতেরা ইসলামি অর্থনীতিতে মানব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত
বিষয়াবলী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
 এদের মধ্যে ইমাম ইবনে তাইমিয়া সমজাতীয় দ্রব্যের মূল্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
 ইমাম ইবনে খালদুন ইসলামি অর্থনীতিতে মানব কল্যাণ, শ্রমবিভাগ, মূল্যতত্ত¡, জনসংখ্যাতত্ত¡, সরকারি
অর্থব্যবস্থা, রাজস্বনীতি, বাণিজ্যচক্র ও বাজার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
 ইমাম আবু ইউসুফ (রহ) সরকারি আয়-ব্যয় এবং কৃষি উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
 তুসী মানুষের চাহিদা তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত বিষয় এবং শ্রমবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা
করেছেন।
 এতদ্ব্যতীত ইসলামি অর্থনীতিকে যারা সংজ্ঞায়িত করেছেন তাদের কাছেও ইসলামি অর্থনীতির বিষয়বস্তু
হিসেবে পৃথক পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ধরা পড়েছে।
 ডঃ এম. আকরাম খানের মতে, “সবার অংশ গ্রহণের মাধ্যমে জাতিগত সম্পদ সংগঠিতকরণ ও মানবকল্যাণ
সংক্রান্তজ্ঞানার্জনই ইসলামি অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়।
 অর্থনীতিবিদ শামসুল আলমের মতে, “অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানব কল্যাণ এর সাথে সংশ্লিষ্ট
উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ যা ইসলামি দৃষ্টিতে বিশ্লেষণমূলক।”
 অধ্যাপক খুরশীদ আহমদের মতে, “ইসলামি অর্থনীতির বিষয়বস্তু সেসব অর্থনৈতিক বিষয়াবলী যা কুরআন ও
সুন্নায় বর্ণিত মূল্যবোধের গভীরে নিহিত।”
 সময়ের প্রবাহে মানব জীবনের বুনিয়াদী প্রয়োজন পূরণ ও যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তি সত্তার বিকাশের সুযোগ
সৃষ্টি করাই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়।
বস্তুত ইসলামি অর্থনীতির বিষয়বস্তু হচ্ছে ইসলামি নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের অবকাঠামোর অধীনে সীমিত
সম্পদের ব্যবহারিক প্রশাসন। অর্থনীতি কেবল মানব কল্যাণের বস্তুগত কারণসমূহই আলোচনা করে না বরং ভোগ
ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-নিষেধসমূহ আলোচনা করে। ইসলামি অর্থনীতিতে ভোক্তা কিংবা
উৎপাদনকারী কেউ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। উভয় পক্ষের আচরণই শরীআত নির্ধারিত সামাজিক ও
ব্যক্তিগত কল্যাণমুখী ভাবধারায় পরিচালিত।
ইসলামি অর্থনীতির গুরুত্ব
১. এর নীতিমালা, তত্ত¡ ও সূত্র কুরআন ও সুন্নাহ হতে উৎসারিত।
২. ইসলাম বস্তুগত কল্যাণের চেয়ে রূহানী বা আধ্যাত্মিক কল্যাণের ওপর জোর দেয়।
৩. ইসলামি অর্থনীতিতে তাকওয়ার মূল্য অনেক বেশি। এটা আল্লাহর অনুমোদিত পথ।
৪. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় আখিরাত চিন্তা প্রাধান্য পায়।
৫. এতে হালাল-হারাম বেছে চলা হয়।
৬. ইসলামি অর্থনীতি ইসলাম ধর্মের মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
৭. কুরআন-সুন্নাহর নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে সকল প্রকার ভুল-ভ্রান্তির উর্ধ্বে উঠে মানবতার কল্যাণের জন্যই প্রতিষ্ঠিত।
৮. যা মানব কল্যাণ সাধন করে না এবং আল্লাহর পথের অন্তরায়, তা সম্পদ নয়। যেমন- হিরোইন, মদ, তাড়ি,
গাঁজা, বিয়ার, আফিম ইত্যাদি।
৯. ইসলাম মানুষকে ভোগের চেয়ে ত্যাগের নির্দেশ দেয়।
১০. ইসলামি অর্থনীতিতে সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ তাআলা। মানুষ সম্পদের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র।
আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীনে স¤পদের ওপর মানুষের আপেক্ষিক মালিকানা বলা যেতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র
স্থান-কাল-পাত্র ও অবস্থা ভেদে তা ব্যয়, ভোগ ও নিয়ন্ত্রণ করবে আল্লাহর আইনের আওতায়।
১. অর্থনীতি কোন বিজ্ঞানের একটি শাখা ?
২. অর্থনীতি কোন বিষয়ে আলোচনা করে ?
৩. অর্থনীতি হচ্ছে সংস্কার পরিচালনার কলাকৌশল- এটা কার অভিমত ?
৪. এ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত সংজ্ঞায় কোন দিকটি নেই ?
৫. লিওনেল রবিনস প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞায় কোন কোন দিকের উল্লেখ নেই ?
৬. পাশ্চাত্য জগতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অর্থনীতির সংজ্ঞা দিয়েছেন কে ?
৭. কোন ধরণের লোকদের আচরণ অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় নয় ?
৮. মুসলিম উম্মাহর আকীদা কী ?
৯. ইসলামি অর্থনীতি ইসলামি জীবন ধারণের কী ?
১০. ইসলামি অর্থনীতির উৎস কী ?
১১. ইসলামি অর্থনীতির লক্ষ্য কী ?
১২. ইসলামি অর্থনীতির নীতিমালা কোথা থেকে গৃহীত হয় ?
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. অর্থনীতির গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাটি লিখুন।
২. স্মিথ ও মার্শালের সংজ্ঞা দুটো বিশ্লেষণ করুন।
৩. রবিনসের সংজ্ঞাটি উল্লেখ করুন।
৪. অর্থনীতির বিষয়বস্তু কী ?
৫. ইসলামি অর্থনীতি কী ?
৬. ইসলামি অর্থনীতির দর্শন বা ভিত্তি কী ?
৭. ড. এম. ওমর চাপড়া ও ড. এম. এ মান্নানের মতে অর্থনীতির বিষয়বস্তু নিরূপণ করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. অর্থনীতির পরিচয় ও বিষয়বস্তু লিখুন।
২. ইসলামি অর্থনীতির সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তু নিরূপণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]