সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা ঃ ‘এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা’র সংজ্ঞানুসারে- “সাম্যবাদী ব্যবস্থার লক্ষ্যে বর্তমান
ব্যবস্থার তুলনায় অধিকতর সুষ্ঠু উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কোন কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষ
জনগণের যথাযথ আনুগত্যের ওপর ভিত্তিশীল যে পলিসি অবলম্বন করে, তা-ই সমাজতন্ত্র।”
তবে বলা যেতে পারে, পুঁজিবাদের ব্যর্থতা ও কুফলের ফলে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব। এ অর্থ ব্যবস্থার মূল হলো, ধনসম্পদের যাবতীয় উপায়-উপাদান সমাজের ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত মালিকানাধীন থাকবে। কার্যত সমাজতান্ত্রিক অর্থ
ব্যবস্থা রাশিয়াসহ বহুদেশে একটা বড় রকমের ডিগবাজী খেয়েছে এবং ব্যর্থ হয়ে পুঁজিবাদের দিকে প্রত্যাবর্তন
করেছে। বস্তুত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ- ানিসহ মানুষের চিন্তা, মত ও কর্মের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। আর্থ-
সামাজিক স্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকে না।
ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা ঃ ইসলামি অর্থনীতিবিদগণ ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার সংজ্ঞা নিরূপণ করে বলেন- “যে সমাজ
বিজ্ঞান ইসলামি দর্শনের আলোকে মুসলিম অনুপ্রাণিত জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সমস্যা পর্যালোচনা করে, তা-ই
ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা।”
ব্যাপক অর্থে বলা যায়- “সৃষ্টিকর্তা ও বিশ্বনিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ প্রদত্ত সত্য দ্বীন আরোপিত আদর্শিক বিশ্বাসগত ও
নৈতিক বিধি-নিষেধ রক্ষা করে উৎপাদন, উপার্জন, বণ্টন, ভোগ ও ব্যবহার সংক্রান্তযাবতীয় তৎপরতা
পরিচালনার জ্ঞান ও বাস্তাব কার্যক্রম গ্রহণ করে যে অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় তা-ই ইসলামি অথীনিতি।”
ইসলামি ও সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা
সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেকের কাছ থেকে যোগ্যতানুসারে এবং প্রত্যেককে তার প্রয়োজন অনুসারে বণ্টনের
নীতিতে বিশ্বাসী। এ উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদনের উপকরণসমূহ রাষ্ট্রায়ত্ত করে ব্যক্তি
মালিকানার উচ্ছেদ এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা রহিত করে। কিন্তু ইসলাম এমন এক সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী, যা
বহির্কাঠামোর দিক থেকে পুঁজিবাদের সদৃশ মনে হলেও আদর্শ ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত। নি¤েœ
সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা ও ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য-নিরূপণ করা হল১. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত নয়। এ অর্থ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত।
পক্ষান্তরে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা সুবিচার এবং ভারসাম্যপূর্ণ তথা ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত এবং নিয়ন্ত্রিকত। তবে
ব্যক্তির সম্পদে রাষ্ট্র ও সমাজের অধিকার রয়েছে।
২. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় অর্থোপার্জন ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র। ব্যক্তি রাষ্ট্রের ইচ্ছানুযায়ী কর্মে নিয়োজিত
হয়। পক্ষান্তরে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় অর্থোপার্জন করার অধিকার ব্যক্তির জন্য স্বীকৃত। অর্থের ভোগ-ব্যবহার
ও ব্যয়ের জন্য ইসলামি বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
৩. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি সরাসরি পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে না। তা সত্তে¡ও এ ব্যবস্থায় সুদকে
উৎসাহিত করা হয়। কেননা, ব্যাংক, বীমা ও সরকার সুদকে চালু রেখেছে। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি
সরাসরি পুঁজি বিনিয়োগ করার অধিকার রাখে। এ ব্যবস্থায় সুদ চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সুদখোরের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামি অর্থ
ব্যবস্থায় ব্যবসাকে বৈধতা দান করা হয়েেেছ এবং যাকাত, ফিতরা, সাদাকা ও দানের মাধ্যমে বিনা সুদে
অর্থনীনদের সাহায্য করার বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৪. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি শ্রম এবং সম্পদ সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ব্যক্তি নিজে কোন
সম্পদের মালিক নয়। শ্রম ব্যবহারের মাধ্যমে সে রাষ্ট্র থেকে রেশন ও ভাতাদি পেয়ে থাকে। ইসলামি অর্থ
ব্যবস্থায় সম্পদের প্রকৃত মালিক হচ্ছেন বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা মহান আল্লাহ তা‘আলা। এ ভূ-
পৃষ্ঠে মানুষ শুধু তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। সে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সম্পদ ব্যয় ও সংরক্ষণ করে
মাত্র।
৫. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক মুক্তির উপর জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক
স্বাধীনতা সেখানে খর্ব করা হয়েছে। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, আত্মিক স্বাধীনতা
এবং মুক্তির সমান সুযোগ রয়েছে।
৬. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তির মঙ্গল চিন্তার সুযোগ নেই। সে যন্ত্রের মত শ্রম দেয়, বিনিময়ে খাদ্য ও বস্ত্র
পেয়ে থাকে। অপরের মঙ্গল চিন্তা করার সুযোগ এখানে নেই। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় নিজের মঙ্গল চিন্তা করে
অপরের মঙ্গল চিন্তা করারও সুযোগ রয়েছে। এখানে ব্যক্তি তার প্রয়োজন মেটানোর পর সম্পদ উদ্ধৃত্ত থাকলে
এমন কতকগুলো বিধানের আওতায় এসে যায়, যার ফলে সে অপর ব্যক্তির প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা,
সহানুভূতি এবং আর্থিক অনুদান দিতে আগ্রহী হয়ে থাকে।
৭. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। বরং রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই
ব্যক্তিকে ব্যবহার করা হয়। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তির অভাব ও প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করা হয়
ইসলামি চেতনাবোধ ও নৈতিকতার বিকাশের দ্বারা। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার খেয়াল ও খুশিমত সম্পদ ভোগ
না করে আল্লাহর বিধান মুতাবিক ভোগ ও বণ্টন করে।
৮. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় মানুষকে সমাজ বা রাষ্ট্রের গোলাম হিসেবে মনে করা হয়। এতে মনে হয় মানুষ
যেন রাষ্ট্রীয় গোলামী করার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে। পক্ষান্তরে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় মানুষকে রাষ্ট্রীয় গোলাম
হিসেবে চিন্তা করা হয় না। এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃত। তাই, ইসলাম মানুষকে শুধু সামাজিক জীবন
হিসেবেই নয় বরং আদর্শিক ও নৈতিক জীবন হিসেবে সৃষ্টির সেরা বলে স্বীকৃতি দেয়।
৯. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার নিজস্ব প্রয়োজনের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক প্রয়োজনে কাজ করে
থাকে। এ অর্থ ব্যবস্থায় শ্রমিককে যন্ত্রের মত ব্যবস্থা করা হয়। শ্রম এবং উৎপাদন অনুসারে ভোগ করার
অধিকার এখানে অনুপস্থিত। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার নিজ প্রয়োজন, সমাজ, রাষ্ট্র, অপরাপর মানুষ
এমনকি অন্যান্য প্রাণীকূলের কল্যাণের জন্য ও কাজ করে থাকে।
১০. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় শ্রেণীহীন সমাজ গড়ে তোলার জন্য ব্যক্তির স্বাতন্ত্র মূল্যায়ণ করা হয় না। ব্যক্তি
রাষ্ট্রের কাছে তার সত্তাকে সঁপে দেয়, ফলে ব্যক্তি-স্বাধীনতা খর্ব হয়। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় মানুষ আল্লাহর
বান্দাহ এর তাঁর খলিফা হিসেবে অপরাপর মানুষ, সমাজ রাষ্ট্র এবং সৃষ্টিকূলের কল্যাণের জন্য কাজ করে।
কাজের ব্যাপারে ব্যক্তি স্বাধীন। তবে ইসলাম এ স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
১১. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় শ্রেণী বৈষম্যহীন ব্যবস্থার কথা বলা হলেও তা শ্লোগান ছাড়া আর কিছু নয়।
বস্তাবে তাদের মধ্যেও শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারা উদার অর্থ ব্যবস্থার দিকে যাত্রা শুরু করেছে।
ইমলামে শ্রমিক, মালিক, প্রভূ-ভৃত্য, কর্মকর্তা, কর্মচারী হিসেবে কোন শ্রেণী বৈষ্যম নেই। কেননা ইসলাম
সকল মানুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখে এবং সকলের পেশা ও কর্মকে শ্রদ্ধা করে। এখানে একজন আরেকজনের
পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
১২. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে অর্থ উপার্জনের কোন চিন্তাই করতে পারে না। সে অধিক শ্রম ব্যয়
করলেও তা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অপর দিকে ইসলাম সম্পদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতা ক্ষুন্ন করে না এবং ব্যক্তি অধিকার হরণ করে না। তবে এখানে
সম্পদ এককেন্দ্রিক না করে সুসম বণ্টনের ব্যবস্থা করে। ফলে সকলে সম্পদের ভোগ ও ব্যবহার করতে
পারে।
১৩. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় বাজার চাহিদা ও রাষ্ট্রযন্ত্র মজুরি নির্ধারণ করে। এতে নূন্যতম মজুরির গ্যারান্টি
দেওয়ার কথা বলা হয়। পক্ষান্তরে, ইসলামে বাজার চাহিদা ও মৌলিক প্রয়োজন পূরণের দিকে খেয়াল রেখে
উৎপাদন ও মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
১৪. সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদ উৎপাদনে কোন নৈতিক মূল্যবোধের দিকে লক্ষ রাখা হয়না। জনগণের
চাহিদানুযায়ী বস্তুবাদী মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে এখানে উৎপাদন করা হয়। পক্ষান্তরে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায়
নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। জনগণের খেয়াল খুমিত ভোগ-বিলাসের জন্য এখানে উৎপাদন করা
হয় না। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় হারাম দ্রব্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
উত্তর সঠিক হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. পুঁজিবাদের ব্যর্থতা ও কুফলের উপর সমাজতন্ত্রের উৎপত্তি হয়েছে।
২. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মানুষের চিন্তা, মত ও কর্মের স্বাধীনতা রয়েছে।
৩. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, উপার্জন, বণ্টন ও ব্যবহারসহ সবকিছু ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিমত
নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি সরাসরি পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে না।
৫. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজনের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে।
৬. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদ উৎপাদনে নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার পরিচয় দিন।
২. ইসলামি অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে সামান্য ধারণা দিন।
৩. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সাথে ইসলামি অর্থব্যবস্থার পাঁচটি পার্থক্য তুলে ধরুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সাথে ইসলামি অর্থব্যবস্থার পার্থক্য নিরূপণ করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত