ইসলাম শ্রম ও শ্রমিকের যে মর্যাদা দিয়েছে তার বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিন।


ইসলামিক স্টাডিজ-৫: ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম শ্রমের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
ইসলামি অর্থনীতিতে শ্রমের সংজ্ঞা সাধারণ অর্থনীতি থেকে আলাদা নয়। উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে শারীরিক
ও মানসিক উভয় শ্রমই অন্তর্ভুক্ত। অর্থনীতির ভাষায় মুনাফা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বা সেবামূলক কাজে মানুষ যে চেষ্টাসাধনা বা পরিশ্রম ব্যয় করে তাকে শ্রম বলে। তাই এটা শারীরিক শ্রম (যেমন- দিনমজুর, কৃষক, মাঝি, জেলে)
বা বুদ্ধিভিত্তিক শ্রম (যেমন- শিক্ষাদান, ডাক্তারী) বা পরিচালনাগত শ্রম (যেমন- উকিল, সংগঠক) হোক। অর্থাৎ
এ মানব সেবার মধ্যে সাধারণ শ্রমজীবি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক স্টাফ উভয়ই থাকতে পারে।
অর্থনীতিবিদ মার্শাল শ্রমের সংজ্ঞায় বলেন-অর্থাৎ, মানসিক বা শারীরিক যে কোন প্রকারের পরিশ্রম যা আংশিকভাবে আনন্দ ছাড়া অন্য কোন
উপকারের নিমিত্তে করা হয় তাই শ্রম।
মানুষের শ্রম-শক্তি তিন প্রকার
ক. বুদ্ধিশক্তি- জ্ঞানপ্রতিভা ) যা আবার ৪ ভাগে বিভক্ত। (১) সাংবাদিক বিষয়ক
(২) গবেষণামূলক (৩) সাংগঠনিক কার্য সম্বন্ধীয় (৪) বিচার বিভাগীয়

খ. শৈল্পিক দক্ষতা ও কুশলতা এটা আবার তিন প্রকার (১) কৃষি কাজে
দক্ষতা ও কুশলতা (২) শিল্পকর্ম সম্পর্কিত , (৩) বাণিজ্য সম্বন্বীয়
গ. দৈহিক শ্রম (চযুংরপধষ চড়বিৎ)- দৈহিক বল কেবল মজুর ও শ্রমিক শ্রেণীর জন্যই একটি উৎপাদক উপায়।
তারা সাধারণতঃ এ একটি মাত্র শক্তির সাহায্যেই জীবিকা উপার্জন করে। তাদেরকেই মেহনতী জনতা বলা হয়।
(মাওঃ আব্দুর রহীমঃ ইসলামের অর্থনীতি ঃ ৩৮)
উদ্যোক্তা বা সংগঠককে শ্রমের পর্যায়ে নিয়ে আসলেও দুয়ের মধ্যে এক বিশেষ পার্থক্য বিদ্যমান থাকে। শ্রমিক
শ্রমের ক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত পারিতোষিক যেমন, ঘন্টা প্রতি, দিন প্রতি বা প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট বেতন বা মজুরী
পায়। কিন্তু উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কারণ উদ্যোক্তা তার প্রচেষ্টার ফল পূর্বাহ্নেই জানতে পারে না বরং তা অনিশ্চিত।
শ্রমের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য
শ্রমের বহুবিধ বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হচ্ছেপাঠ ঃ ২
১. শ্রম ও শ্রমিকের অভিন্নতা ঃ উপাদানের অন্যান্য উপকরণসমূহ এবং এর মালিককে আলাদা করা যায়।
যেমন- ভূমি এবং তার মালিক বা জমিদার সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। একইভাবে পূজি ও পূজিপতিও ভিন্ন। কিন্তু শ্রম
ও শ্রমিকের মধ্যে কোন পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কেননা শ্রম শব্দটি আসলেই শ্রমিকের বিষয়টি চলে আসে ।
আবার শ্রমিক শব্দ আসলেই শ্রম হতে আসে।
২. শ্রম বন্টন পরিবর্তনশীল ঃ বিশ্বস্ততা, বুদ্ধি-বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শ্রমের পরিসর পরিবর্তন যোগ্য।
শ্রমিক এ ব্যাপারে অগ্রগণ্য হলে তার শ্রমবন্টন উচ্চস্তরের হতে পারে। আবার এ ব্যাপারে সে অপরিপক্ক হলে তার
অবনতিও হতে পারে।
৩. শ্রমের সামর্থ্যরে দরকষাকষি সীমিত ঃ মালিক শ্রেণী শক্তিশালী ও শ্রমিক বা মজুর শ্রেণী দুর্বল হওয়ায়
শ্রমিকের মজুরী প্রদানের ক্ষেত্রে দরকষাকষি কম হয়ে থাকে। কেননা মজুর শ্রেণী তাদের জীবন চালানোর জন্য
উপর ওয়ালাদের নীতি মানতে বাধ্য থাকে। ফলে, তারা শ্রমের মূল্য আদায়ের ব্যাপারে বঞ্চিত থেকে যায় এবং
মালিকের দ্বারা শেষিত হতে থাকে।
৪. শ্রমিকের উপস্থিতি আবশ্যক ঃ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানে মালিকের উপস্থিতির
প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু শ্রম বা শ্রমিকের উপস্থিতি ছাড়া উৎপাদন কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।
ইসলামি অর্থনীতিতে শ্রম এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শ্রমের মৌলিক মূল্যবোধ, উৎস ও বিভিন্ন প্রকার
প্রকৃতি যেমন- চাষাবাদ, শিল্প, ব্যবসা, প্রসাশন বা মানুষ জীবন ধারণের জন্য যে শ্রম করে তা সবই শ্রমের
পর্যায়ভুক্ত।
ইসলাম শুধু শ্রম ব্যায় বা যথাযথ বন্টন ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে তার ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্তহয়নি বরং
শ্রমকে আমানতের পর্যায়ে নিয়ে তার যথার্থ প্রয়োগ ও হক আদায়ের গুরুত্ব প্রদান করে। রাসূল (সা) বলেন-
ان الله ᘌحب احد᛿م اذا عمل ان يتقن.
“তোমাদের যে কেউ কোন কাজ করলে এবং তা উত্তমরূপে স¤পাদন করলে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন।”
(বায়হাকী) এ উত্তমরূপে সম্পাদনকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ঃ
إِ نْ أ᠐ حْ سَ  ْ تُ مْ أ᠐ حْ سَ  ْ تُ مْ لأِ َ نْ فُ سِ ᜓ᠑ مْ وَ ល ِنْ أ᠐ سَ أ᠔ تُ مْ فَ ل᠐ هَ ا.
“তোমরা সৎকাজ করলে তোমাদের নিজেদের করবে এবং মন্দকাজ করলে তাও নিজেদের জন্যই করবে।” (সূরা
বণী ইসরাঈল : ৭)
উত্তমরূপে কাজ সম্পাদন করা একই সাথে দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রমকে শামিল করে। কেননা উৎপাদন ক্ষেত্রে
শ্রমিকের দৈহিক শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিভিত্তিক শ্রমের প্রভাব থাকে না। কিন্তু তার প্রভাব
উৎপাদন পদ্ধতি, শ্রমের ধরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য।
শ্রম ও শ্রমিকের ব্যাপারে আইয়ামে জাহেলিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি
শ্রম ও কর্মের ব্যাপারে ইসলাম ও আইয়ামে জাহিলিয়ার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তখনকার বর্বর
বেদুঈনরা তাদের জীবিকা নির্বাহে পশুচারণ, শিকার, লুটতরাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কাফেলার প্রহারাদান
ইত্যাদিকে নিজেদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করত। পক্ষান্তরে অন্য সকল প্রকার কাজ-কর্ম ও পেশাকে ঘৃণা করত।
যেমন- চাষাবাদ, কারিগরি, নৌচালনা, ব্যবসা ইত্যাদি। এসম্পর্কে মহাপন্ডিত এবং সমাজকল্যাণের জনক ইবনু
খালদুন বলেন ঃ “আরব বেদুঈনরা শ্রমজীবী যেমন- কারিগরী প্রথা ও অন্যান্য পেশাজীবী কাজকে ঘৃণা করত।
প্রকৃতপক্ষে শ্রম ও কাজকর্মই আয়ের উৎস। শ্রম ও কাজকর্ম না থাকলে মানুষের আয়-উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় ও
মানুষ বেকার হয়ে যায়।” (আল-মুকাদ্দামা ঃ ১৫০)
তৎকালীন শহরবাসীরা যেসব কাজ করত তা দেখে বেদুঈনরা নাক সিটকাত। তখকার শ্রমজীবীদের মধ্যে কেউ
ছিল কৃষিজীবী, যেমন- মদীনাবাসী, আবার কেউ ছিল ব্যবসায়ী যেমন- মক্কাবাসী, আবার কেউ ছিল নাবিক যেমনওমানবাসী। ১/৩৭৫)
এছাড়াও তৎকালে বিভিন্ন পেশার মানুষ পাওয়া যেত। যেমন- কারিগর, লৌহকার, করাতমিস্ত্র্রী। কিন্তু এসব
পেশাজীবিরা আরব বেদুঈন ও অন্যান্যদের কাছে অত্যন্তনি¤œমানের বলে পরিগণিত হত।
কোরাইশরা মদীনাবাসীদের ঘৃণা করত। কেননা তারা চাষাবাদ করে খেত। আবু জাহল যখন বদর যুদ্ধে নিহত হয়
তখন তার প্রাণবায়ু বের হওয়ার আগে সর্বশেষ কথা বলেছিল ; আমি আমার নিহত হওয়ার ব্যপারে যে আক্ষেপ
করছি, তার চেয়ে বেশী আক্ষেপ করছি এ জন্য যে, একটি চাষীর হাতে আমার ইহলীলা সাঙ্গ হল। অর্থাৎ বদর
যুদ্ধে তার নিহত হওয়ার চেয়ে মদীনাবাসীর হাতে তার নিহত হওয়ার জন্য বেশী আক্ষেপ করেছিল। কারণ
মদীনাবাসীরা ছিল কৃষিজীবী। তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে সে বলেছিল- قتلنى ارᝏا غير فلو হায়
আফসুস “! যদি কৃষক ছাড়া অন্য কোন লোক আমাকে হত্যা করত তবে কতই না ভাল হত।
অপরপক্ষে জাহেলী যুগে সম্মানিত মহিলারা দুগ্ধদানের বিনিময়ে অর্থাৎ ধাত্রীমাতার পেশা গ্রহণের বিনিময়ে
জীবিকার্জনকে অত্যন্তঘৃণার চোখে দেখত। যদিও তারা ক্ষুধায় কষ্ট পেত, তবুও তারা এ পেশা গ্রহণ করত না।
তারা জাতীয় পেশাকে খাদেমী বা গৃহভৃত্যের পেশা হিসেবে জ্ঞান করত। এভাবে তারা যে কোন প্রকার চাকরীবাকরী বিশেষ করে ধাত্রী পেশাকে ঘৃণা করত।
উল্লিখিত বর্ণনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শ্রম ও কাজকর্ম করে জীবিকার্জন জাহেলী যুগের লোকদের নিকট
কতই না অপমানকর ছিল। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, জাহিলী যুগে শ্রম ও শ্রমিকদের মর্যাদা বলতে
কিছুই ছিল না। (জামাল উদ্দীন ইয়াদ ঃ ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রম ও শ্রমিক ঃ ৯-১৩)
শ্রমের গুরুত্ব
এ কথায় কোন সন্দেহ নেই যে, শ্রমই হল জীবিকার্জনের সর্বোত্তম পন্থা। আর শ্রমই বয়ে আনে মানব সমাজে
নতুন জীবন। ইসলাম শ্রমের প্রতি মানুষকে উৎসাহ দান করেছে এবং শ্রমের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ
করেছে। আর শ্রমকেই দুনিয়া ও আখেরাতের হিসাব-নিকাশের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করেছে। মহান আল্লাহ
বলেন ঃ
وَ قُ لِ ٱعْ مَ ل᠑ وا᠔ فَ سَ يَ رَ ى ٱللᡐ هُ عَ مَ ل᠐ ᠑ᝣ مْ وَ رَ سُ ول᠑ هُ وَ ٱل᠔ مُ ؤْ مِ نُ ونَ .
“এবং বল, তোমরা কাজ করতে থাক; আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ অবলোকন করবেন। এবং তাঁর রাসূল ও
মুমিনগণ তোমাদের কাজ দেখবেন।” (সূরা আত্-তাওবাহ : ১০৫)
মহানবী (সা) শ্রমের প্রতি উৎসাহ দান করেছেন। তিনি বলেন ঃ
افضل ال᜻سب بيع مبرور و عمل الرجل بᘭدە.
“সর্বোত্তম আয় হল মাকবুল বা গৃহীত বেচা-কেনা অর্থাৎ যে বেচা-কেনায় ধোকাবাজী ইত্যাদি নেই এবং মানুষের
হাতের কামাই বা শ্রমলব্ধ উপার্জন।” (আস্সুয়ুতি ঃ আল জামেউস সগীর)
অন্য হাদীসে তিনি বলেন ঃ
ان الله ᘌحب المؤمن المتحرف.
“মহান আল্লাহ পেশাজীবী বা কর্মজীবী মানুষকে ভালবাসেন।” (আস্সুয়ুতি ঃ আল জামেউস সগীর)
অন্য হাদীসে তিনি বলেন ঃ
اعطوا الاجير اجرە قᘘل ان ᘌجف عرقه.
“শ্রমিককে তার মজুরি দাও তার ঘাম শুকাবার আগে।” (ইমাম সুয়ুতি ঃ আল জামেউস সগীর)
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা শ্রম ও শ্রমিকের বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে মূলধন ও প্রাকৃতিক স¤পদের পরই শ্রমকে উৎপাদনের উৎস হিসেবে ধরা হয়। অতি
প্রাচীনকালেই আল্লামা ইবনু খালদুন শ্রমের মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন ঃ “শ্রম হল উৎপাদনের
স্তম্ভ বা মূল এবং সকল প্রকার রিযক ও আয়ের উৎস। অনুরূপভাবে তিনি বলেন ঃ অধিক শ্রম অধিক স¤পদ
আহরণ, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও অধিক আবাদীর উপায়।” (আল-মুকাদ্দামাহ ঃ ৩২১)
কিছুকাল আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ২৩ ও ৩৪ ধারায় শ্রমকে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামাজিক স্বাধীনতায়
গণ্য কর হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তি ও সমাজ স্বাধীনভাবে তাদের কর্ম বেছে নিতে পারবে। উহার ২০ নং ধারায় বলা
হয়েছে শ্রমিক ও কর্মজীবিরা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। আর প্রতিটি মানুষ তাদের ইচ্ছামাফিক ঐ সংগঠনে
যোগ দিতে পারবে। অবশ্য ঐ সংগঠনটি হবে শান্তিপূর্ণ এবং কাউকে তাতে যোগ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা যাবে
না। (ড. সাঈদ মুহাম্মদ আহমদ বানাযাহ ঃ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ঘোষণা ও এতে ইসলামি শরীয়তের
ভূমিকা ঃ ৬৬)
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন মাত্র কিছুকাল আগে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা দিয়েছে,
কিন্তু ইসলাম এখন থেকে চৌদ্দশত বছর আগে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা
একমাত্র ইসলামই শ্রমের প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছে। এমন কি পার্থিব কাজকর্মকেও ইসলাম ইবাদতের মর্যাদায় উন্নীত
করেছে। শুধু তাই নয় বরং কাজকর্মকে জিহাদের সমপর্যায়ের বলে গণ্য করেছে। বর্ণিত আছে, কোন সাহাবী এক
শক্তিশালী যুবককে দ্রæতগতিতে তার কাজে যোগদান করতে যেতে দেখে বললেন, হায় ! যদি ঐ যুবকটি আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদের জন্য ঐভাবে গমন করত ! তখন রাসূল (সা) বললেন-
لا تقول هذا. ان ᛿ان خᖁج فᛳسعى على ولدە صغارا فهو فى سᘭᙫل الله , و
ان ᛿ان خᖁج فᛳسعى على نفسه ᘌعفها فهو فى سᘭᙫل الله , فان ᛿ان خᖁج
رᗫاء و مفاخرة فهو فى سᘭᙫل الشᘭطان.
“তুমি এ কথা বলো না। যদি যদি সে তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের জন্য রোজগারে বের হয়, তবে সে আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদের সওয়াব পাবে। আর যদি সে ভিক্ষা ও দারিদ্রতার গ- ানি থেকে বাঁচার জন্য নিজ নফসের নিমিত্ত
রোজগারে বের হয় তবুও সে জিহাদের সওয়াব পাবে। কিন্তু যদি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও গৌরবের জন্য বের
হয়, তবে তা হবে শয়তানের রাস্তায় বের হওয়ার শামিল।” (হাফেজ আল-মুনজিরী ঃ আত-তারগীব ওয়াততারহীব : হজ্জ)
উক্ত হাদীসে জীবিকার্জনের জন্য শ্রম ও কর্মকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সমপর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নামাযের সাথে শ্রমকে সম্পৃক্ত করেছেন। আল্লাহ বলেন-
فَ إِ ذَ ا قُ ضِ ᛳَ تِ ٱلصَّ ᢿ َةُ فَ ٱنᙬ َشِ رُ وا᠔ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ وَ ٱبْ تَ غُ وا᠔ مِ ن فَ ضْ لِ ٱللᡐ هِ .
“নামায শেষ হলে আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক সন্ধানের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।” (সূরা আল-জুমুআহ :১০)
অনুরূপভাবে আল্লহ শ্রমকে জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি বলেন-
وَ آخَ رُ ونَ ᘌ َضْ ر᠒ ᗖ ُونَ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ يَ ᙫ ْتَ غُ ونَ مِ ن فَ ضْ لِ ٱللᡐ هِ وَ آخَ رُ ونَ ᘌ ُقَ اتِ ل᠑ ونَ فِ ى
سَ ᙫ ِᘭلِ ٱللᡐ هِ .
“কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে।” (সূরা আলমুযযাম্মিল : ২০)
শ্রমের মাধ্যমে রিযক সন্ধানের জন্য আল্লাহ হজ্জের মৌসুমেও ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেন-
ل᠐ ْᛳ سَ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مْ جُ نَ احٌ أ᠐ ن تَ ᙫ ْتَ غُ وا᠔ فَ ضْ ᢿ ًمِّ ن رَّ ᗖِّ ᠑ᝣ مْ .
“যদি তোমরা (হজ্জের মৌসুমে) তোমাদের প্রভূর পক্ষ হতে দেয়া রিযক সন্ধান কর তাতে কোন প্রকার দোষ
নেই।” (সূরা আল-বাকারাহ : ১৯৮)
অত্র আয়াতের শানে নুযুলে ইবনু আব্বাস হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজ্জ মৌসুমে মুসলমানগণ ব্যবসাবাণিজ্য ও বেচা-কেনা থেকে বিরত থাকত। কেননা তারা বলত, হজ্জের দিনগুলো আল্লাহর জিকরের দিন। তখন
উল্লিখিত আয়াত অবতীর্ণ হয়।
মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা) ও যারা তাঁর অনুসরণ করে সেসব মুসলমানগণের জন্য সারা রাত জেগে ইবাদত
করার বিধানকে শিথিল করেছেন এ জন্য যে, যাতে দিনের বেলায় জীবিকান্বেষণে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। এ
ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِ نَّ رَ ᗖَّ كَ ᘌ َعْ ل᠐ مُ أ᠐ نَّ كَ تَ قُ ومُ أ᠐ دْ نَ ىٰ مِ ن ثُ ل᠑ ثَ ى᠒ ٱل᠔ لᡐ ᘭ ْلِ وَ نِ صْ فَ هُ وَ ثُ ل᠑ ثَ هُ وَ طَ ቯئِ فَ ةٌ مِّ نَ
ٱلᡐ ذِ ينَ مَ عَ كَ وَ ٱللᡐ هُ ᘌ ُقَ دِّ رُ ٱل᠔ لᡐ ᘭ ْلَ وَ ٱلنَّ هَ ارَ عَ لِ مَ أ᠐ لᡐ ن تُ حْ صُ وەُ فَ تَ ابَ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مْ فَ ٱقْ رَ ءُ وا᠔
مَ ا تَ ᛳَ سَّ رَ مِ نَ ٱل᠔ قُ رْ آ نِ عَ لِ مَ أ᠐ ن سَ ᘭ᜻ َ᠑ ونُ مِ نᜓ᠑ مْ مَّ رْ ضَ ىٰ وَ آخَ رُ ونَ ᘌ َضْ ر᠒ ᗖ ُونَ فِ ى
ٱلأَ رْ ض᠒ يَ ᙫ ْتَ غُ ونَ مِ ن فَ ضْ لِ ٱللᡐ هِ .
“তোমার প্রতিপালক জানেন, তুমি জাগরন কর কখনো রাতের প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ
এবং তোমার সঙ্গীদের একটা দলও তোমার সঙ্গে দন্ডায়মান হয়। আল্লাহই দিন ও রাত পরিমাপ করেন। তিনি
জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসেব রাখতে পারবে না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন।
কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। কারণ তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ
অসুস্থ হবে, তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহসন্ধানে দেশ-বিদেশে সফর করবে।” (সূরা আল-মুযযাম্মিল : ২০)
আল্লাহর বাণী “مᜓᘭعل فتاب” এর অর্থ হল, অত্র সূরার প্রথমে অধিক রাত জাগরণে যে নির্দেশ এসেছিল
তোমাদের উপর সে নির্দেশের শিথিলতা দেয়া হল। আর আয়াতের الارض فى ونᗖضرᘌ এর অর্থ-
ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদির জন্য ভ্রমণ করা। (আল খতীব শারবীনী ঃ তাফসীরুল কুরআন ঃ ৪/৪২২)
মানুষ নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে যেমন সওয়াবের অধিকারী হয় তেমনিভাবে শ্রম ও কাজকর্মের
মাধ্যমেও সওয়াবের অধিকারী হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন-
التاجر الصدوق الامين مع النᙫيين والصدᘌقين والشهداء يوم القᘭامة.
“সত্যবাদী-বিশ্বস্তব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের সাথে থাকবে।” (ইবনে মাজাহ :২/৭২০)
রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেন-
من امسى ᛿الا من عمله , ᗷات مغفورا له.
“যে ব্যক্তি সারাদিন কাজ করতে যেয়ে অবসাদগ্রস্তহয়ে সন্ধায় উপনিত হয় রাতে তাকে সমস্তগুনাহ ক্ষমা করা
হবে।” (আস্সুয়ুতীঃ জামে আছছাগীর ঃ ২/১৬২)
রাসূলুল্লাহ্ (সা) আরো বলেন ঃ
ما من مسلم ᘌغرس غرسا او يزرع زرعا فᘭأᝏل منه طير او اᙏسان او بهᘭمة
الا ᛿ان له صدقة.
“যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন বীজ বপন করে বা কোন শস্য উৎপাদন করে আর তা থেকে কোন পাখি বা
মানুষ অথবা কোন প্রাণী ভক্ষণ করে তখন তা তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।” (বুখারী, হাদীস নং ৬০১২)
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা শ্রম ও শ্রমিক, কৃষিকাজ ও কৃষিজীবি-বৃক্ষ রোপণকারীকে সুউচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
এমন কি মুসলিম ব্যক্তির রোপণকৃত গাছের ফল পশুপাখি, কীট পতঙ্গ ইত্যাদিতে খেলেও মুসলিম ব্যক্তি উহার
সওয়াব প্রাপ্ত হবে। শ্রমের মর্যাদা বর্ণনা দিতে গিয়ে এখানে আরো কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি দেওয়া হল১. রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে একজন সাহাবী তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে আসলেন, ঐ
সাহাবীর হাত খসখসে ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হাত এমন কেন ? সাহাবী বললেন, এটা রশী টানার
দাগ। আমি বাগানে কাজ করি, শ্রমলব্ধ অর্থ দ্বারা আমার সংসার চালাই। তখন তিনি ঐ লোকটির হাত চুম্বন
করলেন এবং বললেন-
هذە ᘌد ᘌحبها الله و رسوله.
“এটা এমন একটি হাত- যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।” (মুহাম্মদ আল-গাজালী ঃ ইসলাম ও
সমাজতন্ত্রবাদ ঃ ৮২)
উক্ত সাহাবীর হাতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চুম্বন দানের অর্থ হচ্ছে, তিনি এ শ্রমিককে তার শ্রমের ও উৎপাদনের
জন্য অধিক উৎসাহ দান করেন। শ্রমের উৎসাহ দানের অর্থ হল, অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন।
২. শ্রমের মাধ্যমে হালাল রিযক সন্ধান ইসলাম ওয়াজিব করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন-
طلب الحلال واجب على ᛿ل مسلم.
“শ্রমের মাধ্যমে হালাল রুযী সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব।” (আল-মুনজিরী ঃ আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ঃ ২/৫৪৬)
৩. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন-
طلب كسب الحلال فᗫᖁضة ᗷعد الفᗫᖁضة.
“হালাল রিযক সন্ধান করা ফরযের পর একটি ফরয।” (মিশকাতুল মাসাবীহ ঃ ২/৮৪৭)
অত্র হাদীসে হালাল রুযীর জন্য শ্রম ও কর্মকে ফরয বা অবশ্যকরণীয় বলা হয়েছে।
মহান হাদীস বিশারদ ইমাম মোল্লা আলী আল-ক্কারী অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন- হালাল খাদ্য উপার্জন করা
তাকওয়া বা আল্লাহভীতির চাবিকাঠি। (মিরকাতুল মাফাতিহ ঃ ৩/২৯৮)
হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ইমাম মুহ্মাদ ইবন হাসান আশ্শায়বানী বলেন ঃ আহলুস্সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের
অধিকাংশ ফকীর মতে প্রয়োজনীয় রিযক কামাই করা ফরয। (কিতাবুল কাসব ঃ ৪৪)
সূতরাং এ কথা পরিস্কার যে, মুসলিম সমাজে এমন স্তরের কোন লোক থাকবে না যারা বেকার অথবা যারা অন্যের
কাঁধে ভর দিয়ে খাবে এবং অন্যদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেন-
لان ᘌاخذ احد᛿م حᘘله ثم ᘌاتى الجᘘل فᘭاتى ᗷحزمة من حطب على ظهرە
فيᘘعها فᘭᜓلف الله وجهه خير له من ان ᛒسال الناس اعطوە او منعوە.
“তোমাদের কেউ হাতে রশি নিয়ে পাহাড়ে আসবে অতঃপর কাঠের আটি নিজ পিঠে বহন করবে। অতঃপর উহা
বাজারে বিক্রয় করে নিজ জীবিকা অর্জন করবে এটা তার মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করার চেয়ে অধিক শ্রেয়।
কেননা ভিক্ষা করতে গেলে কেউ তাকে ভিক্ষা দিবে আবার কেউ ফিরিয়ে দেবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২০৪৭)
২. একদা রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে প্রবেশ করে এক ব্যক্তিকে আলুথালু বেশে নামাযে রুকু-সিজদাহ করতে দেখে
জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটি কে ? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন ঃ এ লোকটি একজন আবেদ (যে বেশী বেশী
আল্লাহর ইবাদত করে) লোক। তখন রাসূল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটির ভরণপোষণ কে দেয় ? তারা
উত্তর করলেন, তার ভাই শ্রম করে এবং ঐ আবেদ ভাইয়ের ব্যয়ভার বহন করে। তখন রাসূল (সা) বললেনمنه دᘘاع اخوە - তার শ্রমিক ভাই তার চেয়ে অধিকতর আবেদ। (শায়খ মুহাম্মদ আবু যুহরাহ ঃ ইসলামি
সমাজ ব্যবস্থা ঃ ১৯৬)
মহানবী (সা) নিজ হাতে কাজ করতেন।
এখানে শ্রম ও শ্রমিকের অধিক মর্যাদার জন্য এ কথার চেয়ে বেশী কিছু নেই যে, মহানবী (সা) নিজেও বহু প্রকার
কর্মসাধন তথা বেতনভোগী হয়ে কাজ করেছেন। তিনি পাহাড়ে ছাগল চড়াতেন। এ স¤পর্কে রাসূল (সা) বলেন-
ما من نبى الا رعى الغنم.
“এমন কোন নবী নেই যিনি ছাগল চরান নি।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২২৬১)
অনুরূপভাবে নবী (সা) হযরত খাদীজা (রা)-এর একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসূল (সা) তাঁর মালামাল
নিয়ে শাম (বর্তমান সিরিয়া) দেশে যেয়ে ক্রয়-বিক্রয় করতেন। তিনি যে কোন কাজে মুসলমানদের সাথে অংশ
গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করতেন না। (মুহাম্মদ আলী হাবরাহ ঃ আত্তারবীয়াতুল ইকতেছাদীয়াহ ঃ ৫৩-৫৪)
এছাড়া রাসূল (সা) তাঁর খাদেমদের সাথে কাজে অংশ গ্রহণ করতেন তাদের শ্রম লাঘবের জন্য। তিনি তাঁর
পরিধেয় বস্ত্রে নিজ হাতে তালি দিতেন, জুতা সাফ করতেন, গৃহের আসবাবপত্র কিনে উহা নিজেই ঘরে ঢুকাতেন
এবং সাজিয়ে রাখতেন। মেহমানদের খিদমত করতেন। এমনকি তার খাদেমদেরও খেদমত করতেন। এ সম্পর্কে
তাঁর খাদেম, বিশিষ্ট সাহাবী আনাস (রা) বলেন-
خدمته نحوا من عشر سنين , فوالله ما صحبته فى سفر او حضر لاخدمه
الا و ᛿انت خدمته فى اᜧثر ما خدمت له.
“আমি প্রায় দশ বছর যাবত নবীর (সা) খিদমত করেছি। আল্লাহর শপথ! আমি যখনই নবীর সাথে কোন সফরে
যেতাম অথবা মুকিম অবস্থায় থাকতাম এবং তার খিদমতের ইচ্ছা করতাম তখন দেখতাম তাকে আমার খিদমতের
চেয়ে তিনি আমার বেশী খিদমত করতেন।”
এমনই ছিল নবী ও রাসূলগনের তরীকা। তাঁরা নিজ হাতে কাজ করে খেতেন। যেমন, দাউস (আ) যুদ্ধের বর্ম
তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَ عَ لᡐ مْ نَ اەُ صَ نْ ع ةَ ل᠐ بُ وس᠏ لᡐ ᠑ᝣ مْ لِ تُ حْ صِ نَ ᠑ᝣ مْ مِّ ن ᗷ َأ᠔ سِ ᜓ᠑ مْ فَ هَ لْ أ᠐ نتُ مْ شَ اᜧ ِرُ ونَ .
“আমি তাকে তোমাদের জন্য যুদ্ধের বর্ম তৈরি করতে শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদের রক্ষা করে।
সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না ?” অর্থাৎ তোমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮০)
ইমাম কুরতুবী বলেন, অত্র আয়াত শিল্প-কারখানা স্থাপন, কারিগরি বিদ্যা ও তার উপকরণ গ্রহণের একমাত্র
দলীল। মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবী দাউদ (আ) সম্পর্কে বলেন, তিনি যুদ্ধের বর্ম তৈরি করতেন এবং নিজের
হাতের কামাই খেতেন। বাবা আদম (আ) কৃষক ছিলেন, নূহ (আ) করাতী ছিলেন, লোকমান (আ) দর্জী
ছিলেন, তালুত (আ) চামড়া দাবাগাতের ব্যবসায়ী (চর্মকার) ছিলেন, কেউ কেউ বলেন, তিনি ভিস্তিওয়ালা
ছিলেন। (আহকামুল কুরআন ঃ ১১/২২১)
সাহাবীগণ প্রথম থেকেই শ্রমের মর্যাদা অনুধাবন করেন। সর্বপ্রথমে মুহাজির সাহাবীগণ মক্কা থেকে মদীনায়
আগমনের পরে শ্রম পেশা অবলম্বন করেন। তাঁরা মক্কায় তাদের ধন-সম্পদ ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে আসেন।
মদীনায় পৌঁছার পর আনসারগণ মুহাজিরদেরকে তাদের (আনসারদের) মালামাল বিনামূল্যে ভাগ করে দিতে
চাইলেন কিন্তু মুহাজিরগণ তা নিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। বরং তারা তাদের হাতের কামাই ও পরিশ্রমলব্ধ
আয়ের দ্বারা জীবিকার্জনের পথ বেছে নেন। সূতরাং মুহাজিরদের কেউ ব্যবসায়ের ময়দানে নেমে পড়েন, আবার
কেউ আনসারদের কৃষিক্ষেত্রে কাজ করতে শুরু করেন, এ শর্তে যে, আনসারদের ক্ষেত্রে আনসাররাই চাষাবাদের
আসবাবপত্র-সরঞ্জাম বহন করবেন এবং মুহাজিরগণ তাদের কাজের বিনিময় লব্ধ ফসলের একটি অংশ গ্রহণ
করবেন।
উমর ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি মানুষকে কর্ম ও শ্রমের প্রতি উৎসাহ দান করতে গিয়ে বলতেনঃ
“আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর রহম করবেন, যে বেশী বেশী কথা বলে না বরং বেশী বেশী কাজ করে। কর্মের শক্তি ঐ
সময়ই পূর্ণাঙ্গতা লাভ করবে, যখন দিনের কাজ ঐ দিনেই স¤পাদন করবে এবং তা আগামী দিনের জন্য ফেলে
রাখবে না। আর আল্লাহর উপর প্রকৃত ভরসাকারী ঐ ব্যক্তি যে মাটিতে বীজ বপন করে অতঃপর আল্লাহর উপর
ভরসা করে।” (ড. তম্মাভীঃ উমর বিন খাত্তাবঃ ৪৭২)
সূতরাং দেখা যাচ্ছে, ইসলাম মানুষকে কর্ম ও শ্রমের প্রতি আহবান করে এবং উৎসাহ দান করে। যার বর্ণনা
আমরা ইতিপূর্বে কুরআন, হাদীস এবং রাসূল (সা) ও সাহাবীগণের কার্যক্রম থেকে পেয়েছি। অতএব নিঃসংকোচে
এ কথা বলা চলে, ইসলাম কর্ম তৎপরতা ও সজীবতা তথা স্বয়ংসম্পূর্ণতার ধর্ম। ইহা বেকারত্ব ও স্থবিরতা তথা
অলসতার ধর্ম নয়।
তাওয়াক্কুল বা আল্লাহ নির্ভরশীলতা মানুষকে শ্রম থেকে দূরে ঠেলে দেয় না
ইসলাম মানুষকে তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার দিকে আহবান করেছে। কিন্তু তাওয়াক্কুল শ্রম বা কর্ম
স¤পাদনের ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। বরং তাওয়াক্কুল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কর্মস¤পাদনে আল্লাহর উপর
পূর্ণ আস্থা স্থাপন করা, যাতে ব্যক্তির শ্রম ও তার কাজ আল্লাহর নিকট গৃহীত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ
অথবা অন্য যে কোন পেশাই হোক না কেন, তাতে মানুষ লাভবান হতে পারে, আবার ক্ষতিগ্রস্তহতে পারে।
অবশ্য বান্দার সকল কাজ-কর্মে তার এ দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে যে, আল্লাহই একমাত্র রিযকদাতা, তিনি
বান্দাদের হতে কখনো বিচ্ছিন্ন নন। এ সম্পর্কে মহানবী (সা) বলেন-
لو انᜓم تو᛿لون على الله حق تو᛿له لرزقᜓم ᛿ما يرزق الطير تغدو خماصا و
تروح ᗷطانا.
“যদি তোমরা মহান আল্লাহর উপর যথাযথভাবে তাওয়াক্কুল করতে পার, তবে তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে রিযিক
প্রধান করবেন, যেমনভাবে পাখি ও বিহঙ্গকুল রিযকপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, উহারা খাদ্যের সন্ধানে প্রত্যুষে ক্ষুধার্ত
অবস্থায় বের হয় আর সন্ধ্যা বেলায় উদরপূর্তি অবস্থায় ফিরে আসে।” (তিরমিযী ঃ ৭/৯২)
হাদীসের ভাবার্থ হল, মানুষকে একইসাথে কাজও করতে হবে এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলও হতে হবে। রাসূল
(সা)-এর অমীয় বাণী এ কথার সরাসরি ইঙ্গিত বহন করে। এ উদ্দেশ্যে যখন এক সাহাবী তাকে বলেন, হে
আল্লাহর রাসূল ! আমি আমার সওয়ারীটি ছেড়ে দেব এবং আল্লাহর উপর ভরসা করব ? তদুত্তরে মহানবী (সা)
বললেন ঃ ل᛿تو و دهاᘭق لᗷ “তুমি উহাকে বেঁধে রাখ এবং আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (আল-হায়সামী ঃ
মাজমা’ আযযাওয়ায়েদ ঃ ১/২৯১)
এমনিভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তাওয়াক্কুলের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান বোধগম্য ও সু¯পষ্ট। যেমন-আলী
(রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ একদিন রাসূল (সা) উপবিষ্ট অবস্থায় ছিলেন আর তার হাতে ছিল একটি
কাঠদন্ড। তিনি উহা দ্বারা মাটিতে দাগ কাটছিলেন, অতঃপর তিনি তার মাথা উত্তোলন করে বললেন ঃ তোমাদের
মধ্যে কোন লোকই নেই, বরং প্রত্যেকের জন্য জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে স্থান নির্ধারিত হয়ে গেছে। এতদশ্রবণে
তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা) ! আমরা আমল করব না, বরং এর উপরেই নির্ভর করব। তিনি বললেন, না
বরং তোমরা আমল কর। আর প্রত্যেকের জন্য সে কাজই সহজ করে দেয়া হবে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা
হয়েছে। এরপর মহানবী (সা) পবিত্র কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করলেন-
فَ أ᠐ مَّ ا مَ نْ أ᠐ عْ طَ ىٰ وَ ٱتَّ قَ ىٰ . وَ صَ دَّ قَ ᗷ ِٱل᠔ حُ سْ نَ ىٰ . فَ سَ نُ ᛳَ سِّ رُ ەُ لِ ل᠔ ُᛳ سْ رَ ىٰ . وَ أ᠐ مَّ ا مَ ن ᗷ َخِ لَ
وَ ٱسْ تَ غْ نَ ىٰ . وَ ᠐ᜧ ذَّ بَ ᗷ ِٱل᠔ حُ سْ نَ ىٰ . فَ سَ نُ ᛳَ سِّ رُ ەُ لِ ل᠔ عُ سْ رَ ىٰ .
“সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা সভ্য বলে গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সহজ পথ সুগম
করে দেব। আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করে এবং নিজকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করে আর যা উত্তম তা অস্বীকার করে,
আমি তারজন্য কঠোর পথ সুগম করে দেব।” (সূরা আললাইল : ৫-১০)
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে জাহেলী যুগে কাজ-কর্ম বিশেষ করে চাষাবাদকে ঘৃণা করা হত। কোরেশরা
মদীনাবাসীদের ঘৃণা করত। কেননা তারা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু ইসলাম শ্রম বা আমলের
অধিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং মুসলমানদেরকে হালাল কার্যাবলীসম হকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ
দিয়েছে। যে ব্যক্তি যে স্তরের লোক তাকে তার দক্ষতা হিসেবে কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ইসলামে শ্রম ও কর্মের মর্যাদা দিতে গিয়ে মহানবী (সা) বলেন-
ما اᝏل احد طعاما قط خير امن عمل ᘌدᘌه وان نبى الله داؤد علᘭة السلام
᛿ان ᘌاᝏل من عمل ᘌد ᘌه.
“স্বীয় হস্তেউপার্জিত খাদ্য হতে অধিক উত্তম আর কোন খাদ্য নেই। আর আল্লাহর নবী দাউদ (আ) তাঁর নিজ
হাতের উপার্জিত খাদ্য গ্রহণ করতেন।” (সহীহ বুখারী ঃ হাদীস নং-২০৭২)
নবী দাউদ (্আ) একজন লৌহকার ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَ أ᠐ ل᠐ نَّ ا ل᠐ هُ ٱل᠔ حَ دِ ᘌدَ أ᠐ نِ ٱعْ مَ لْ سَ اᗷ ِغَ اتٍ
“আমি তার জন্য লৌহকে নমনীয় করে দিয়েছিলাম এবং তাকে বলেছিলাম, প্রশস্তবর্ম তৈরি কর।” (সূরা সাবা ঃ
১০-১১)
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে শ্রমের মর্যাদা অপরিসীম।
তাওয়াক্কুল (توكل (ও তাওয়াকুল (تواكل-(এর মধ্যে পার্থক্য
তাওয়াক্কুল ও তাওয়াকুল-এর মধ্যকার পার্থক্য আমাদের জানা প্রয়োজন। তাওয়াক্কুল হল শুধু আল্লাহর উপরই
হয়ে থাকে। তাওয়াকুল হল, আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদের উপর ভরস করা। আল্লাহ বলেন-
فَ ن تَ وَ لᡐ وْ ا᠔ فَ قُ لْ حَ سْ بِ ىَ ٱللᡐ هُ ᢻ ۤإِ ل᠐ ᅮ ٰهَ إِ ᢻَّ هُ وَ عَ ل᠐ ᘭ ْهِ تَ وَ ᡐᝏ ل᠔ تُ وَ هُ وَ رَ بُّ ٱل᠔ عَ رْ ش᠒
إِ
ٱل᠔ عَ ظِ ᘭمِ .
“অত:পর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তুমি বলে দিও, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য
কোন ইলাহ নেই। আমি তার উপরই ভরসা করলাম। আর তিনি মহান আরশের অধিপতি।” (সূরা আত-তাওবা :
১২৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
قُ لْ هُ وَ رَ بِّ ى ᢻ ۤإِ ل᠐ ᅮ ٰهَ إِ ᢻَّ هُ وَ عَ ل᠐ ᘭ ْهِ تَ وَ ᡐᝏ ل᠔ تُ وَ ល ِل᠐ ᘭ ْهِ مَ تَ ابِ .
“বল, তিনিই আমার প্রতিপালক ! তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তাঁর উপরই আমি নির্ভর করি। আর তাঁরই
নিকট আমার প্রত্যাবর্তন স্থল।” (সূরা আররা’দ : ৩০)
এমনিভাবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার মাধ্যমে মানুষ সকল প্রকার তাগুতী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। আর
আল্লাহর উপর ভরসার ফলে মানুষ আত্মার প্রশান্তিলাভ করতে পারে এবং বেশী বেশী নেক কাজ করতে পারে।
চাই সে কাজ দুনিয়ার হোক অথবা পরকালের হোক।
তাওয়াক্কুলের মানে এই নয় যে, মানুষ আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবে। বরং
তাওয়াক্কুল এর আসবাব গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে ঐ সাহাবীর কাহিনী উল্লেখযোগ্য যিনি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করেছিলেন, আমি কি আমার সওয়ারীটি বন্ধনমুক্ত করে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করব ? উত্তরে রাসূল (সা)
বলেছিলেন, উহাকে বেধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা কর। রাসূল (সা)-এর নির্দেশ মোতাবেক ঐ ব্যক্তি যদি
তার সওয়ারীটি না বেধে আল্লাহর উপর ভরসা করতেন, তবে তা হত তওয়াকুল।
রাসূল (সা) আসবাব বা অসীলা গ্রহণ না করলে তিনি তাঁর মাথায় যুদ্ধের টুপি পরিধান করতেন না। আর খন্দক
যুদ্ধে তিনি কাফিরদের প্রতিহত করার মানসে মদীনার চারপাশে পরিখা খনন করতেন না। বরং তিনি আল্লাহর
দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কোন পরিশ্রম না করে শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করেই বসে থাকতেন।
শ্রম ও শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব
ইসলাম মানুষকে কর্মের প্রতি আহবান করেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-
هُ وَ ٱلᡐ ذِ ى جَ عَ لَ ل᠐ ᠑ᝣ مُ ٱلأَ رْ ضَ ذَ ل᠑ وᢻ ًفَ ٱمْ شُ وا᠔ فِ ى مَ نَ اᜧ ِبِ هَ ا وَ ᝏ ل᠑ وا᠔ مِ ن رِّ زْ قِ هِ وَ ល ِل᠐ ᘭ ْهِ
ٱل ُّ شُ ورُ .
“তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা এর দিগ-দিগন্তেবিচরণ কর এবং
তাঁর দেওয়া রিযিক থেকে ভক্ষণ কর। পুনরুত্থান তো তাঁরই নিকট।” (সূরা আল-মূলক :১৫)
ইসলাম কর্ম ও উপার্জনের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে দু’ভাবেপ্রথমত: মানুষের জন্য কর্ম প্রচেষ্টায় অর্জিত মুনাফার ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা বিলুপ্ত করণের মাধ্যমে। এজন্য যে ব্যক্তি
পতিত জমি সংরক্ষণ করে, তা তার জন্য বৈধ করা হয়েছ্ েআর তার সে জমিতে মালিকানা লাভের উদ্দেশ্যে কেউ
প্রবেশ করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত: মুসলমানদেরকে অপর মুসলমান ভাইয়ের কাজকে তুচ্ছ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ইসলাম নিজ
হস্তেকর্ম সম্পাদনকে সর্বোত্তম আমল মনে করে।
রাসূল (সা) বলেনইসলাম কোন ব্যক্তির জন্য কর্মকে তার অধিকার বলে সাব্যস্তকরেছে। অতএব ইসলামি রাষ্ট্র সক্ষমদের জন্য
কাজের ব্যবস্থা করে এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে। রাসূল (সা) এ দায়িত্বে সদা সচেষ্ট ছিলেন। একদা
এক ব্যক্তি তার কাছে যাচনা করল, তিনি তাঁর লোহার আংটি বাজারে দুই দিরহামে বিক্রয় করে লোকটিকে তা
দিয়ে দিলেন এবং বললেন-
᛿ل ᗷاحدهما واشتر ᗷالاخر فأسا واعمل ᗷه.
“এ দুয়ের একটি থেকে কিছু কিনে খাও আর অপরটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে তার মাধ্যমে কাজ কর। অতপর
লোকটির অবস্থার উন্নতি হল।”
রাসূল (সা)-এর দৃষ্টিভঙ্গি এমনই ছিল। তিনি ছিলেন ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রত্যেক নাগরিকের শ্রম
ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীল ও তত্ত¡াবধায়ক। একইভাবে প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে জ্ঞানী, দক্ষ ও বৈষয়িক হিসেবে গড়ে
তোলা এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দায়িত্বও রাষ্ট্রের রয়েছে। যাতে তারা তাদের
দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট হতে পারে।
ইসলামের সোনালী দিনসমূহ এ সাক্ষ্য দেয় যে, ইসলামি রাষ্ট্র বিভিন্ন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। যেমনকাগজ শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প, খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও এ ব্যাপারে মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি। (আলমাকরীযী ঃ আল-খিতাত ঃ ১/৪১৭)
ইসলাম শুধু মাত্র কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করাকেই যথেষ্ট মনে করেনি বরং শ্রমের যথাযথ মূল্য প্রদান ও শ্রমের মজুরী
প্রদানে বিলম্ব না করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেন-
اعطوا الاجير اجرە قᘘل ان ᘌجف عرقه.
“শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার আগে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও।” (ইবনে মাযাহ ঃ ২/৮১৭)
প্রত্যেক শ্রমিক তার কাজের যথাযথ হক আদায়ের ব্যাপারে এবং প্রত্যেক মহাজন তার অধিনস্থ শ্রমিকদের
ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। রাসূল (সা) বলেন-
᛿لᝣم راع و ᛿لᝣم مسئول عن رعيته.
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেকেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।” (সহীহ বুখারী ঃ
হাদীস নং-২৫৫)
ইসলাম শ্রমিকের সহযোগিতা, তার অধিকার ও মর্যাদা হরণ না করা, মহাজনের পক্ষ থেকে তাকে অবহেলা না
করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। তার শক্তি-সামর্থ ও স্বাচ্ছন্দ অনুযায়ী কাজ করাতে এবং তার স্বাস্থ্য রক্ষার
বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন ঃ
ᢻ َᘌ ُ᠐ᝣ لᡒ فُ ٱللᡐ هُ نَ فْ سا᠍ إِ ᢻَّ وُ سْ عَ هَ ا.
“আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টসাধ্য বোঝা চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত।” (সূরা আল-বাকারাহ : ২৮৬)
শুধু তাই নয় বরং ইমাম গাজালী প্রশাসকের উপর শ্রমিকদের জন্য শ্রমের উপকরণ সরবরাহ করাকে আবশ্যকীয়
করেছেন। (ইয়াহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন ঃ ৯/১৭৪৬)
আল্লামা শাতেবী দেখিয়েছেন যে, সামষ্টিক কর্মকান্ড বাস্তবায়নে সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য ইসলামি রাষ্ট্র কর্তৃক
শ্রমিকদের প্রশিক্ষণদান ও তাদের রাষ্ট্রীয় তত্ত¡াবধান ৩টি পর্যায়ে হতে পারে। আর এর প্রত্যেক প্রকার জনসমষ্টির
স্বার্থে পালন করা আবশ্যক। (আল-মুয়াফাকাত ঃ ১১৯-১২৪)
ইমাম আবু যুহরাহ এ পর্যায়গুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন নি¤েœাক্তভাবে ঃ
প্রথম পর্যায়
এ পর্যায় হবে শিশু, কিশোর, যুবক সবার জন্য ব্যাপক। কেউ এ থেকে পিছু পড়ে থাকবে না। যে এ স্তর থেকে
ছুড়ে পড়বে সে দ্বিতীয় স্তরে উপনীত হতে পারবে না। অবশ্য এ স্তর সম্পর্কে পারদর্শী ব্যক্তিগণের ব্যাপার ভিন্ন।
যে এ প্রথম স্তরে অবস্থান করে সে জাতি কাংখিত সামষ্টিক দায়িত্ব পালনে রত থাকে। তারা হল শ্রমিক সমাজ বা
মেহনতী জনতা। জাতি তাদের কর্মের প্রতি বিশেষভাবে মুখাপেক্ষী। আর তারাই কর্ম বা শ্রমের মূল ভিত্তি।
দ্বিতীয় পর্যায়
এট হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বের স্তর। এটি এমন একটি স্বতন্তমর্যাদার স্তর যা শ্রম, উৎপাদন ও জ্ঞানের অনুশীলনকে
বিশেষভাবে বিশেষায়িত করে। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিচারক, আইজ্ঞ, শিক্ষক প্রমুখ যারা সমাজের প্রধান প্রধান
দায়িত্ব পালন করে থাকেন তারাই এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
এটাকেই ইমাম শাতেবী ব্যক্তিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যে পারদর্শী করে তোলা এবং তাদের দায়িত্ব
যথাযথভাবে পালন করার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (শাইখ আবু
যাহরাহ ঃ ইসলামি সমাজব্যবস্থা ঃ ৫৫)
ইসলাম ব্যক্তির শ্রমের সুযোগ সৃষ্টি ও তাদের তত্ত¡াবধান করেই ক্ষান্তহয় নি, বরং শ্রমের যথার্থ মজুরী প্রদানের
নির্দেশ প্রদান করে। আল্লাহ বলেন-
وَ لِ ᠑ᝣ لٍّ دَ رَ جَ اتٌ مِّ مَّ ا عَ مِ ل᠑ وا᠔ وَ لِ يُ وَ فِّ يَ هُ مْ أ᠐ عْ مَ ال᠐ هُ مْ وَ هُ مْ ᢻ َᘌ ُظ᠔ ل᠐ مُ ونَ .
“প্রত্যেকের মর্যাদা তার কর্মানুযায়ী, এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তার
প্রতি অবিচার করা হবেনা।” (সূরা আল-আহক্বাফ : ১৯)
রাসূল (সা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি শ্রমিকের মজুরী নির্ধারণ না করে তাকে কাজে খাটাতে নিষেধ করেছেন।
(সুনান নাসায়ী)
শরীয়তের বিধান হচ্ছে, কারো উপর সাধ্যাতীত কোন কাজ চাপানো যাবে না। বৃদ্ধ বা অতিশয় বয়স্ককে এমন
কাজে খাটানো যাবে না যাতে সে ক্লান্তহয়ে পড়্।ে একইভাবে নারীদের এমন দায়িত্ব দেয়া যাবে না যা তাদের
স্বভাবের সাথে সাংঘর্ষিক। রাসূল (সা) বলেন
علᘭᜓم ᗷالاعمال ᗷما تطᘭقون فان الله لا ᘌمل حتى تملوا.
“তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী কাজ কর। কেননা আল্লাহ কখনো বিরক্ত হবেন না, যতক্ষণ তোমরা বিরক্ত না
হবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৩)
মহানবী (স) আরো বলেন-
لا تᜓلفوهم ما لا ᘌطᘭقون.
“তাদের যা সাধ্যে কুলায় না তা তাদের উপর চাপিয়ে দিও না।”
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর প্রশ্ন১. মানুষের শ্রমশক্তি প্রধানত কয় প্রকার ?
ক. তিন প্রকার খ. চার প্রকর
গ. দুই প্রকার ঘ. পাঁচ প্রকার।
২. জাহেলী যুগে কোন পেশা ঘৃণিত ছিল?
ক. চাষাবাদ, কারিগরি, ও নৌ চালনা খ. কৃষি কাজ
গ. ধাত্রীমাতার পেশা ঘ. সকল উত্তরই সঠিক।
৩. শ্রম সম্পর্কে ইসলামের বিধান হলক. শরীরের ঘাম শুকানোর আগে শ্রমিকের মজুরী দিয়ে দাও।
খ. মানুষের হাতের দ্বারা পরিশ্রম লব্ধ উপার্জনই সর্বোত্তম উপার্জন।
গ. মহান আল্লাহ শ্রমজীবি মানুষকে ভালবাসেন।
ঘ. সকল উত্তরই সঠিক।
৪. ইসলামে শ্রমকে তুলনা করা হয়েছেক. সাওমের সাথে খ. ইবাদতের সাথে
গ. জিহাদের সাথে ঘ. সকল উত্তরই সঠিক।
৫. কোন্ যুদ্ধ হতে ফেরার পথে মহানবী (সা) সাহাবীর হাতে চুম্বন করলেন ?
ক. খায়বরের যুদ্ধ খ. তাবুকের যুদ্ধ
গ. উহুদের যুদ্ধ ঘ. খন্দকের যুদ্ধ।
৬. সকল নবী-রাসূল সাধারণত যে কাজটি করেছেন তা হচ্ছেক. ছাগল চড়ানো খ. উট চড়ানো
গ. ঘোড়-দৌঁড় শিক্ষা ঘ. কৃষি কাজ করা।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. শ্রম বলতে কী বুঝায় ? শ্রমের প্রকারভেদ উল্লেখ করুন।
২. শ্রমের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
৩. শ্রম ও শ্রমিকের ব্যাপারে আইয়ামে জাহিলিয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করুন।
৪. শ্রমের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৫. ইসলাম শ্রম ও শ্রমিকের কী মর্যাদা দিয়েছে ? সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৬. শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আলোচনা করুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. ইসলাম শ্রম ও শ্রমিকের যে মর্যাদা দিয়েছে তার বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]