উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামি দৃষ্টিকোণ বিচার করুন।

ভূমির পরিচিতি
উৎপাদনের উপকরণসমূহের মধ্যে প্রধান উপকরণ হচেছ ভ‚মি। ভূমি বলতে সাধারণ অর্থে ভূপৃষ্ঠকে বুঝায়। কিন্তু
অর্থনীতিতে এর একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। সমস্তপ্রাকৃতিক সম্পদ এবং আলো, বাতাস, নদী, পর্বত, বনজঙ্গল, খনি, সমুদ্র ইত্যাদি যা সৃষ্টিতে মানুষ কোন শ্রম সাধনা ব্যায় করেনি। সব কিছু এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
অধ্যাপক মার্শালের মতে ঃ ভূমি বলতে সেই সমস্তসম্পদ ‘যা প্রকৃতি, পানি, আলো ও উত্তাপের মাধ্যমে মানুষকে
মুক্ত হস্তেউপহার দিয়েছে’।
আধুনিক অর্থনীতিবিদদের ভাষায়ঃ ভূমি বলা হয় ঐসব প্রাকৃতিক সম্পদকে যা মানুষ ব্যক্তি মালিকানায় এনে
উৎপাদন কাজে ব্যবহার করে।
ইসলামি অর্থনীতির দৃষ্টিতে ভূমি
সনাতন অর্থনীতি ও ইসলামি অর্থনীতিতে ভূমি পরিভাষা ও সংজ্ঞার ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান। সনাতন অর্থনীতিতে
জমিকে একটা উপকরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটা প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর যোগান সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক।
চাহিদার সাথে এর যোগান বাড়ানো বা কমানো যায় না। এরূপ ধারণা আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগে অকার্যকর। এক
খন্ড জমিতে উপযুক্ত পরিমাণ উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এ দৃষ্টিকোণ
থেকে জমির যোগান সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক নয়। অন্যদিকে সাধারণ অর্থনীতিতে মূলধনকে মোটামুটিভাবে
স্থিতিস্থাপক ধরে নেয়া যায় অর্থাৎ প্রয়োজনে এর যোগান হ্রাস-বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাস্তব ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে।
যদি মূলধনী দ্রব্যটি জটিল কলকব্জা দ্বারা সজ্জিত হয় তবে এর যোগান চাহিদার সাথে বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। এসব
সমস্যার প্রেক্ষাপটে ইসলামি অর্থনীতিতে উৎপাদনের উপকরণে ভূমির পরিবর্তে ভৌত সম্পত্তি পরিভাষাটি প্রবর্তন
করা হয়েছে। আর এই ভৌত সম্পত্তি বলতে ঐসব পূণঃ ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী যা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় লীজ বা
ভাড়ায় খাটানো যায়। ড. এ. এইচ. এম. সাদেকের ভাষায় :
তার মতানুযায়ী এ ভৌত সম্পত্তির যে বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে তা হল ঃ
১. এটা প্রাকৃতিক সম্পদ হতে পারে যেমন-জমি অথবা উৎপাদনের উৎপাদিত উপকরণ যা সনাতন অর্থনীতিতে মূলধন যেমন-কলকব্জা হতে পারে।
২. একে ভাড়ায় খাটানো যায় যেমন- দালান কোঠা
৩. উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এর অবচন হতে পারে।
মোটকথা ভৌত সম্পত্তি আসলে দু’রকম, সনাতন উপকরণের সামষ্টি, জমি ও ভৌত মূলধন। (এম. এ. হামিদ ঃ
ইসলামি অর্থনীতি)
অতএব ইসলামি অর্থনীতিতে ভৌত সম্পত্তি বলা হবে ঐসব সম্পদকে যা কোন রকম ব্যয় বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন
ছাড়া বারবার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়।
ভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মহান আল্লাহ মানুষকে এ পৃথিবীতে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং এ পার্থিব জীবন সুষ্ঠুভাবে
পরিচালনার জন্য অপরিহার্য সামগ্রীসমূহ এ পৃথিবীতেই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন ঃ
وَ ل᠐ قَ دْ مَ ᜻ᡐ نَّ ا᠑ᝏ مْ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ وَ جَ عَ ل᠔ نَ ا ل᠐ ᠑ᝣ مْ فِ يهَ ا مَ عَ اᛒِشَ قَ لِ ᢿᘭ ًمَّ ا ᘻ َشْ ك᠑ رُ ونَ .
“আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তাতেই তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। তোমরা খুব
অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর” (সূরা আল-আরাফ : ১০)
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মানুষের জীবনধারণের যাবতীয় উপায়-উপাদান ভূমি থেকে উৎপাদিত হয়।
খাদ্যের যোগান প্রদান
ভূমি খাদ্য উৎপাদন করে। আল্লাহ বলেন-
هُ وَ ٱلᡐ ذِ ى جَ عَ لَ ل᠐ ᠑ᝣ مُ ٱلأَ رْ ضَ ذَ ل᠑ وᢻ ًفَ ٱمْ شُ وا᠔ فِ ى مَ نَ اᜧ ِبِ هَ ا وَ ᝏ ل᠑ وا᠔ مِ ن رِّ زْ قِ هِ .
“তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকা সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা তার দিগ-দিগন্তেবিচরণ করো এবং
তাঁর প্রদত্ত রিযিক থেকে আহার করো।” (সূরা আল-মুলক : ১৫)
এ আয়াত দ্বারা জানা যায়, মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা ভূপৃষ্ট হতে লাভ করা যায়। কিন্তু এ জীবিকা
সংগ্রহের জন্য মানুষকে অশেষ শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়। মাটির পরতে পরতে সম্ভবনাময় জীবিকা অনুসন্ধান
করে নিতে হয়।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন ঃ
ᘌ ٰأ᠐ يُّ هَ ا ٱلᡐ ذِ ينَ آمَ نُ وۤ ا᠔ أ᠐ نْ فِ قُ وا᠔ مِ ن طَ يِّ ᘘ َاتِ مَ ا ك᠐ سَ ᙫ ْتُ مْ وَ مِ مَّ ቯ أ᠐ خْ رَ جْ نَ ا ل᠐ ᠑ᝣ م مِّ نَ ٱلأَ رْ ض᠒ .
“হে মুমিনগণ ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয়
কর।” (সূরা আল-বাকারা : ২৬৭)
খনিজ সম্পদ সরবরাহ
ভূমি খনিজ সম্পদ সরবরাহ করে। ভূমির অতল গভীরে অসংখ্য প্রকার মহামূল্যবান খনিজ দ্রব্যের স্তুপ
স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান রয়েছে। এ সবের অর্থনৈতিক মূল্যের প্রতি লক্ষ্য রেখেই রাসূল (সা) বলেছেন ঃ
اطلبوا الرزق فى خᘘاᘌا الارض.
“মাটির গভীর তলদেশে তোমরা জীবিকার সন্ধান কর।” (তাবরানী)
পরিবহন ব্যবস্থা
ভূমি পরিবহন ব্যবস্থার উপর বিস্তর প্রভাব বিস্তার করে। পণ্যদ্রব্য স্থানান্তর করার জন্য প্রধানত দু’টি পথই ব্যবহৃত
হয়ে থাকে- জলপথ ও স্থলপথ। জলপথে নৌকা ও জাহাজই প্রধান বাহন। বর্তমানে আকাশপথও এ কাজে
ব্যবহার হচ্ছে। আল্লাহ বলেন-
وَ ٱل᠔ فُ ل᠔ كِ ٱلᡐ تِ ى تَ جْ ر᠒ ى فِ ى ٱل᠔ ᘘ َحْ ر᠒ ᗷ ِمَ ا يَ نفَ عُ ٱلنَّ اسَ .
“এবং নৌযান মানুষের উপকারার্থে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে সমুদ্রের পথে চলাচল করে।” (সূরা আল-বাকারা
: ১৬৪)
স্থলপথে আমদানী রফতানী কাজে প্রাচীনকালে চতুষ্পদ জন্তুই ব্যাবহার করা হত। আল্লাহ বলেন ঃ
وَ ٱل᠔ خَ ᘭ ْلَ وَ ٱل᠔ ᘘ ِغَ الَ وَ ٱل᠔ حَ مِ يرَ لِ تَ رْ ᠐ᜧ بُ وهَ ا وَ ز᠒ ᗫنَ ةً .
“ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আন-নাহল:৮)
বর্তমান সময়ে মটর, ট্রাক, রেলগাড়ী প্রভৃতি বাষ্পচালিত যান এ কাজ অত্যন্তসহজ করে দিয়েছে। এসব
যানবাহনের সাহায্যে ভারী দ্রব্যাদি অল্প সময়ের মধ্যে দূরবর্তী স্থানসমূহের মধ্যে আমদানী রপ্তানি করা যায়।
এজন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন-
و تَ حْ مِ لُ أ᠐ ثْ قَ ال᠐ ᠑ᝣ مْ إِ ل᠐ ىٰ ᗷ َل᠐ دٍ لᡐ مْ تَ ᜻᠑ ونُ وا᠔ ᗷ َالِ غِ ᘭهِ إِ ᢻَّ ᚽ ِشِ قِّ ٱلأَ نفُ س᠒ إِ نَّ رَ ᗖَّ ᠑ᝣ مْ ل᠐ رَ ؤُ وفٌ
رَّ حِ ᘭمٌ .
“এসব তোমাদের দ্রব্য সামগ্রী দূরবর্তী এমন শহর ও স্থান পর্যন্তনিয়ে যায় যে পর্যন্তনিয়ে যাওয়া তোমাদের পক্ষে
কষ্টসাধ্য ছিল, কিন্তুু তোমাদের রব বড়ই অনুগ্রহশীল ও দয়াময়।” (সূরা আন-নাহল:৭)
শিল্পে কাঁচামাল যোগান
ভূমি শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যোগান দেয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
ثُ مَّ شَ قَ قْ نَ ا ٱلأَ رْ ضَ شَ قّ ا᠍ فَ أ᠐ نᙫ َتْ نَ ا فِ يهَ ا حَ ᘘ ّا᠍ وَ عِ نَ ᘘا᠍ وَ قَ ضْ ᘘا᠍ وَ زَ ᗫ ْتُ ونا᠍ و نَ خْ ᢿ ً
وَ حَ دَ آئِ قَ غُ ل᠔ ᘘا᠍ و فَ اᜧ ِهَ ةً وَ أ᠐ ᗷ ّا᠍ .
“অতঃপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, তারপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর,
ঘন উদ্যান ফল ও গবাদিখাদ্য।” (সূরা আবাসা : ২৬-৩১)
উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ভূমি বা ভৌতসম্পত্তির শ্রেণী বিভাজন সম্ভব। অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে তা নি¤œরূপঃ ভূমি বা ভূপৃষ্ট
উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে ভূপৃষ্টের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আল্লাহ বলেন-
فَ ٱدْ عُ ل᠐ نَ ا رَ ᗖَّ كَ ᘌ ُخْ ᠒ᖁ جْ ل᠐ نَ ا مِ مَّ ا تُ  ْ ᘘ ِتُ ٱلأَ رْ ضُ مِ ن ᗷ َقْ لِ هَ ا وَ قِ ثَّ ـቯئِ هَ ا وَ فُ ومِ هَ ا وَ عَ دَ سِ هَ ا
وَ ᗖ َصَ لِ هَ ا.
“অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্য এমন সামগ্রী
দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মুশরী, পেয়াজ প্রভৃতি।” (সূরা আল-বাকারা :৬১)
ثُ مَّ شَ قَ قْ نَ ا ٱلأَ رْ ضَ شَ قّ ا᠍ فَ أ᠐ نᙫ َتْ نَ ا فِ يهَ ا حَ ᘘ ّا᠍ وَ عِ نَ ᘘا᠍ وَ قَ ضْ ᘘا᠍ وَ زَ ᗫ ْتُ ونا᠍ و نَ خْ ᢿ ً
وَ حَ دَ آئِ قَ غُ ل᠔ ᘘا᠍ و فَ اᜧ ِهَ ةً وَ أ᠐ ᗷ ّا᠍ .
“অতঃপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, তারপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর,
ঘন উদ্যান ফল ও গবাদিখাদ্য।” (সূরা আবাসা : ২৬-৩১)
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের এসব ঘোষণা দ্বারা উৎপাাদনের উপকরণ হিসেবে ভূমির সতন্ত্রতা প্রমানিত হয়।
খনিজ সম্পদ
ভূপৃষ্ঠের সীমা সংখ্যাহীন উপাদান সামগ্রী ও কাঁচামাল ব্যতীত ভূগর্ভস্থ খনিজ সম্পদের অসামান্য গুরুত্ব
অনস্বীকার্য। মাটির অতল গভীরে অসংখ্য প্রকার মহামূল্যবান খনিজদ্রব্যের স্তুপ স্বাভাবিকভাবেই পুঞ্জীভূত হয়ে
আছে, এর পরিমাণ করা মানুষের সাধ্যাতীত। খনিজ পদার্থ মাটির সাথে মিশে আছে। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম,
ফসফরাস, গন্ধক, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন প্রভৃতি খনিজ পদার্থ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার পক্ষে
অপরিহার্য। কেননা মাটির এসব মৌলিক উপাদান দিয়েই মানব দেহের সৃষ্টি হয়েছে। (মাওঃ আব্দুর রহীম,
ইসলামের অর্থনীতি, পৃ-৪৪) বৃক্ষ, লতা-গুল্ম, সব্জি ইত্যাদি মাটি থেকে রস গ্রহণ করেই বেঁচে থাকে আর মাটির
রসের সঙ্গে এসব খনিজ দ্রব্য আহরণ করে থাকে। মানুষ এসব গাছ ও লতা ফল-মূল এবং শাক-সব্জি ইত্যাদি
খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে ফলে উল্লিখিত খনিজ পদার্থসমূহের সারাংশ মানব দেহে প্রবেশ করে।
মানব সভ্যতার পক্ষে অপরিহার্য লৌহ, তাম্র, পিতল, ইস্পাত, স্বর্ণ-রৌপ্য, হীরা-মানিক্য, পেট্রোল ও কেরোসিন
ইত্যাদি দ্রব্য মানুষ খণি থেকেই লাভ করে। এসব দ্রব্য উৎপাদনের স্বীকৃতি রাসূল (সা)-এর কথায় পাওয়া যায়:
اطلب الرزق فى خᘘاᘌا الارض.
“মাটির গভীর তলদেশে ভূপৃষ্ঠের পরতে পরতে জীবিকার সন্ধান কর।” (তাবরানী)
যে লৌহ বর্তমান বৈজ্ঞানিক সভ্যতার মেরুদন্ড এবং সকল প্রকার বৈজ্ঞানিক আবিস্কার, উদ্ভাবনী ও শৈল্পিক
যন্ত্রপাতির মূল সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
وَ أ᠐ نزْ ل᠔ نَ ا ٱل᠔ حَ دِ ᘌدَ فِ ᘭهِ ᗷ َأ᠔ سٌ شَ دِ ᘌدٌ وَ مَ نَ افِ عُ لِ لنَّ اس᠒ .
“আমি লৌহ সৃষ্টি করেছি, তাতে বিরাট শক্তি নিহিত রয়েছে এবং তাতে আছে মানুষের প্রভূত কল্যাণ।” (সূরা
আল-হাদীদ : ২৫)
প্রাকৃতিক বারিধারা
প্রাকৃতিক বারিধারা বলতে সাগর, নদ-নদী ও নালা বুঝায়। সৃষ্টির আদিকাল থেকে পৃথিবীর বহু দেশ ও দীপপুঞ্জ
সন্নিহিত সাগরের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে সমুদ্র গর্ভে অশেষ ও অসীম পরিমাণ খনিজ, উদ্ভিদ ও
প্রাণীজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে।
ভূভাগের শতকরা ৭১ ভাগ সমুদ্র পরিবেষ্টিত। বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, এই বিশাল সামুদ্রিক ভান্ডারে
৫ কোটি লক্ষ টন পরিমাণ দ্রবীভূত উপাদান বা লবন বর্তমান রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী প্রগতিশীল সমাজের খনিজ ও
ধাতব বস্তুর চাহিদা পূরণের জন্য এ পরিমাণই যথেষ্ট। (মাওঃ আব্দুর রহীম ঃ ইসলামের অর্থনীতি ঃ পৃ. ৪৫)
উর্বরতার দিক থেকে সমুদ্র যে কোন সুউর্বর জমির সাথে তুলনীয়। প্রকৃতপক্ষে প্রতি একর জমির উর্বরতার
তুলনায় সমুদ্র অধিক উর্বর। তাছাড়া ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের জমির বেলায় যেমন বন্যা, খরা, পোকা মাকড়
ইত্যাদির ভয় রয়েছে সমুদ্রে তা নেই।
সামুদ্রিক সম্পদের এই বিপুল সম্ভাবনার জন্যই আল্লাহ অশান্ততরঙ্গ, বিক্ষুদ্ধ ও সর্বগ্রাসী নদী-সমুদ্রকে মানুষের
আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন। মানুষ তার তলদেশে অবস্থিত সকল প্রকার সম্পদই আহরণ করতে পারে। আল্লাহ
বলেন ঃ
سَ خ َّ رَ ٱل᠔ ᘘ َحْ رَ لِ تَ أ᠔ ᝏ ل᠑ وا᠔ مِ نْ هُ ل᠐ حْ ما᠍ طَ ᠒ᖁ ᗫ ّا᠍ و ᘻ َسْ تَ خْ ر᠒ جُ وا᠔ مِ نْ هُ حِ ل᠔ ᘭ َةً تَ ل᠔ ᛞ َسُ ونَ هَ ا.
“তিনি সমুদ্রকে তোমাদের জন্য বাধ্য ও অধীন করে দিয়েছেন, যেন তা থেকে তোমরা তাজা মাছ আহার করতে
পার এবং রত্মাবলী যা তোমরা ভূষণরূপে পরিদান কর।” (সূরা আন-নাহল : ১৪)
৪. বায়ু, বৃষ্টি ও বিদ্যুত মানুষের প্রয়োজনীয় সম্পদ উৎপাদনের কাজে অপরিহার্য। বায়ু এবং বৃষ্টি না হলে প্রাণী ও
উদ্ভিদের জীবন রক্ষা পেতে পারে না। তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য খাদ্য-দ্রব্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়
সামগ্রীর উৎপাদনের জন্যও এর আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। আল্লাহ বলেন ঃ
و تَ صْ ر᠒ ᗫفِ ٱلᖁِّ ᗫ َاح᠒ وَ ٱلسَّ حَ ابِ ٱل᠔ مُ سَ خَّ ر᠒ بَ يْ نَ ٱلسَّ مَ ቯءِ وَ ٱلأَ رْ ض᠒ لآᘌ َاتٍ لᡒ قَ وْ مٍ
ᘌ َعْ قِ ل᠑ ونَ .
“বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও প্রথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
(সূরা আল-বাকারা : ১৬৪)
বিদ্যুত অতিপ্রয়োজনীয় বস্তু। কুরআনের ভাষায় বিদ্যুত মানুষের আশা ভরসার প্রধান কেন্দ্র এবং অপূর্ব সম্ভাবনার
উৎস। আল্লাহ বলেন ঃ
و َ مِ نْ آᘌ َاتِ هِ يُ ᠒ᖁ ᗫᜓ᠑ مُ ٱل᠔ بَ رْ قَ خَ وْ فا᠍ وَ طَ مَ عا᠍ وَ ᗫ ُنَ زِّ لُ مِ نَ ٱلسَّ مَ ቯءِ مَ ቯءً فَ ᘭ ُحْ يِ ى ᗷ ِهِ
ٱلأَ رْ ضَ ᗷ َعْ دَ مَ وْ تِ هَ ا إِ نَّ فِ ى ذ ٰ لِ كَ َلآᘌ َاتٍ لᡒ قَ وْ مٍ ᘌ َعْ قِ ل᠑ ونَ .
“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদেরকে বিদ্যুত প্রদর্শন করেন ভয় ও আতংকের জিনিস হিসেবে
এবং আশা ও আকাংখার উৎসরূপে, এবং তিনি উর্ধ্বলোক থেকে পানি বর্ষণ করেন, পরে তার সাহায্যে মৃতজমি
সঞ্জীবিত করেন।” (সূরা আর-রূম : ২৪)
একইভাবে বৃষ্টি উৎপাদনের ক্ষেত্রে অপরিসীম গুরুত্বের দাবীদার ঃ
هُ وَ ٱلᡐ ذِ ى أ᠐ نْ زَ لَ مِ نَ ٱلسَّ مَ اءِ مَ ቯءً لᡐ ᠑ᝣ م مَّ نْ هُ شَ رَ ابٌ وَ مِ نْ هُ شَ جَ رٌ فِ ᘭهِ ᘻ ُسِ ᘭمُ ونَ ،
يُ  ᘘ ِتُ ل᠐ ᠑ᝣ مْ ᗷ ِهِ ٱلزَّ رْ عَ وَ ٱلᖂَّ ᗫ ْتُ ونَ وَ ٱلنَّ خِ ᘭلَ وَ ٱلأَ عْ نَ ابَ وَ مِ ن ᛿᠑ لِّ ٱلثَّ مَ رَ اتِ إِ نَّ فِ ى
ذ ٰ لِ كَ لآَ ᘌ َةً لᡒ قَ وْ مٍ يَ تَ فَ ᜻ᡐ رُ ونَ
“তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। এতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন
হয়, যাতে তোমরা পশু চারণ কর। এ পানি দ্বারা তিনি তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর,
আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (আন আন-নাহল : ১০-১১)
প্রাকৃতিক উপাদানকে মানুষ আজ নানাভাবে ব্যবহার করে তা থেকে নানাবিধ শক্তি আহরণ করে অসংখ্য কাজে
লাগিয়ে থাকে। পানি ও আগুনের ব্যবহারে বাষ্প ও বিদ্যুত এবং ঝর্ণাধারা, তীব্র জলস্রোত ও বায়ুপ্রবাহ থেকে
বিরাট শক্তি উৎপন্ন হয়ে মানব সভ্যতাকে আজ অপূর্ব সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। সুর্যকিরণ, সমুদ্রের জোয়ারভাটা, আনবিক শক্তি প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি নানা দিক দিয়ে মানুষের জীবন ও সমাজকে উন্নত করেছে।
জন্তু-জানোয়ার ও পশু-পাখী
পশু-পাখী ও জন্তু-জানোয়ার অর্থোৎপাদনের এক প্রাচীনতম উপাদান। পশু শিকার করে আহার করা যায়, বিক্রয়
করে অর্থ লাভ করা যায়, লালন-পালন ও তার বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করে সম্পদ অর্জনের পথ সুগম করা যায়।
পশুর হাড়, পশম, চামড়া ও দুধ ইত্যাদি মানব সভ্যতার প্রয়োজনীয় উপাদান সম হের অন্যতম। বিশেষ পশুকে
যানবাহন ও ভারবহনের কাজেও ব্যবহার করা যায়। পশুর এ বিচিত্র ও বহুবিধ ব্যবহার কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে

وَ ٱلأَ نْ عَ امَ خَ ل᠐ قَ هَ ا ل᠐ ᠑ᝣ مْ فِ يهَ ا دِ فْ ءٌ وَ مَ نَ افِ عُ وَ مِ نْ هَ ا تَ أ᠔ ᝏ ل᠑ ونَ .
“তিনি চতুষ্পদ জন্তুসৃষ্টি করেছেন। তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও অনেক উপকার রয়েছে এবং
তোমরা তা আহার করে থাক।” (সূরা আন-নাহল : ৫)
وَ مِ نَ ٱلأَ نْ عَ امِ حَ مُ ول᠐ ةً و فَ رْ شا᠍ ᛿᠑ ل᠑ وا᠔ مِ مَّ ا رَ زَ قَ ᠑ᝣ مُ ٱللᡐ هُ .
“গবাদী পশুর মধ্যে কতক ভারবাহী ও কতক ছোট ছোট পশু সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ রিযিক হিসেবে
তোমাদেরকে তা দিয়েছেন।” (সূরা আল-আনয়াম : ১৪২)
وَ ٱل᠔ خَ ᘭ ْلَ وَ ٱل᠔ ᘘ ِغَ الَ وَ ٱل᠔ حَ مِ يرَ لِ تَ رْ ᠐ᜧ بُ وهَ ا وَ ز᠒ ᗫنَ ةً .
“ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা এজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এসবকে তোমরা যানবাহন কিংবা ভারবহনের কাজে ব্যবহার
করবে এবং তা তোমাদের জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।” (আন-নাহল ঃ ৮)
অর্থনৈতিক উৎপাদনের উপাদান হিসেবে পাখীরও যথেষ্ট মূল্য রয়েছে। এর গোশত ও ডিম উৎকৃষ্ট খাদ্য। হাঁসমুরগী, কবুতর প্রভৃতি পাখী লালন-পালন করে আজ মানুষ অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা লাভ করছে এবং জীবন-ধারণের
উপজীবিকা হিসেবে গুরুত্ব দিচেছ। পাখীর পালক দিয়েও বহু মূল্যবান জিনিস প্রস্তুত হতে পারে। পাখীর ব্যবসা
অপেক্ষাকৃত কম মূলধন সাপেক্ষ। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সা) সবল লোকদের পশু পালন ও অস্বচ্ছল লোকদের পাখী পালন ও ব্যবসার নির্দেশ দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ)
উত্তর সঠিক হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. ভূমি বলতে ঐসব প্রাকৃতিক স¤পদকে বুঝায় যা মানুষ ব্যক্তি মালিকানায় এনে উৎপাদন কাজে ব্যবহার
করে।
২. মানুষের জীবিকা নির্বাহের যাবতীয় উপাদান ভূমি থেকে সৃষ্ট।
৩. শিল্পায়নের কাঁচামাল ভূমি যোগান দিতে পারে না।
৪. শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর প্রভৃতি ফলের বাগান পৃথিবীতে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে।
৫. ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, গন্ধক, পটাসিয়াম, আয়োডিন মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য
উপাদান।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. ইসলামের দৃষ্টিতে ভূমি বলতে কী বুঝায় ? লিখুন।
২. ভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোকপাত করুন।
৩. ‘ভূমি খনিজ সম্পদ যোগান দেয়’- ব্যাখ্যা করুন।
৪. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বারিধারার গুরুত্ব লিখুন।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বায়ু, বৃষ্টি ও বিদ্যুতের গুরুত্ব আলোচনা করুন।
৬. অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে পশু-পাখির গুরুত্ব উল্লেখ করুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামি দৃষ্টিকোণ বিচার করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]