সংগঠন কী ? সংগঠন সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের মতামত উল্লেখ করুন। উদ্যোক্তা হিসেবে সংগঠনের কার্যাবলি ইসলামি অর্থনীতিতে সংগঠনের গুরুত্ব আলোচনা করুন।

সংগঠনের সংজ্ঞা
সংগঠন এক প্রকার মানসিক শ্রম। কাজ সম্পাদনের যোগ্যতা বা সাংগঠনিক শক্তি ব্যতীত
কোন ক্রমেই ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব নয়। আর এ কারণেই অর্থনীতিবিদগণ সংগঠনকেও স্বতন্ত্রভাবে উৎপাদনের
উপকরণ হিসেবে দেখেছেন। সংগঠন বলা হয়, ভূমি, শ্রম ও মূলধনের মধ্যে সমন্বয় সাধনকেগ. এধঁং কযধহ বলেন ঃ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজ ও দায়িত্ব বন্টনের মাধ্যমে শ্রমের ব্যবস্থাপনাই
সংগঠন।
আধুনিক অর্থনীতিতে সংগঠনকে উদ্যোক্তাও বলা হয়। আর উদ্যোক্তা শব্দটি ফারসী ৎ থেকে
উদ্ভুত। এর অর্থ ঐ ব্যক্তি যে কাজের ভার বহন করে।
অর্থনীতিবিদ লিপনের মতে ঃ একজন উদ্যোক্তা ঐ ব্যক্তি যে নতুন ধরণের দ্রব্য অথবা দ্রব্য উৎপাদনের ঝুকি
নেয়। একজন উদ্যোক্তা জমি, শ্রম ও মূলধনের ব্যবস্থা করে এবং এগুলো ব্যবহারে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন
করে বলে ধরে নেয়া হয়।
উদ্যোক্তা হিসেবে সংগঠনের কার্যাবলী
১. উদ্যোগ গ্রহণঃ উদ্যোক্তা বা সংগঠনের প্রধান ও প্রথম কাজ হল, উৎপাদনের বা ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ।
লাভ-ক্ষতি সংক্রান্তসকল দিক বিবেচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করা সংগঠনের প্রধান দায়িত্ব।
২. উৎপাদনের উপকরণসমূহের সমন্বয় সাধন ঃ উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ যেমন- ভূমি, শ্রম ও মূলধনের
সমন্বয় সাধন করা উদ্যোক্তার দায়িত্ব। কেননা ভূমি ও মূলধন নির্জীব এবং শ্রমিক ব্যবস্থাপক ছাড়া শ্রম প্রয়োগে
অক্ষম।
৩. ব্যবস্থাপনাঃ কৃষি, ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব উদ্যোক্তার। শ্রম প্রয়োগ, শ্রমিক
নিয়োগ, তাদের মজুরী প্রদান ইত্যাদিসহ উৎপাদন সংক্রান্তসবকিছুর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত¡াবধায়ন করা
উদ্যোক্তার কাজ।
৪. দায়িত্ববহন ঃ সংগঠক বা উদ্যোক্তা উৎপাদনের লাভ, লোকসানের দায়-দায়িত্ব বহন করে। কিন্তু মূলধন,
ভূমি, শ্রমিক এ দায়-দায়িত্ব বহন করে না। উৎপাদনের এসব উপকরণ শুধুমাত্র তাদের বিনিময় পারিতোষিক
নিয়েই ক্ষান্তহয়।
৫. নতুনত্ব প্রবর্তন ঃ অর্থনীতিবিদ জে. বি. ক্লার্কের মতে, সংগঠনের অন্যতম কাজ হল, নতুনত্ব প্রবর্তন করা।
গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদনের উন্নততর পদ্ধতি আবিষ্কার করে উৎপাদন বৃদ্ধি তার দায়িত্ব। কেননা নতুন পদ্ধতি
আবিষ্কার করলে উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে ব্যয় কমে যায়।
৬. বাজারজাতকরণ ঃ বাজারজাতকরণ সংগঠকের অন্যতম কাজ। সর্বাধিক লাভের জন্য তার দ্রব্যগুলো দেশের
দূর-দূরান্তে, সর্বত্র পৌঁছাতে হবে। এছাড়া মালামাল বিদেশে রপ্তানী করার জন্য বিজ্ঞাপন ও প্রচারের আশ্রয় নিতে
হয়।
৭. দ্রব্যের মান নির্ণয় ও নীতি নির্ধারণ ঃ সংগঠন কোন দ্রব্য কি পরিমাণে উৎপাদন করবে এবং তার গুণগত
মান কিভাবে রক্ষা করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তনেবে এবং এতদ সংক্রান্তনীতি নির্ধারণ করবে।
ইসলামি অর্থনীতিতে সংগঠন
ইসলামি অর্থনীতিতে উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে সংগঠনের স্বতন্ত্র্য নিয়ে ইসলামি অর্থনীতিবিদগণ এ সিদ্ধান্তে
উপনীত হয়েছেন যে, ইসলামি অর্থনীতিতে উৎপাদনের উপাদান হিসেবে সংগঠন বা উদ্যোক্তার গুরুত্ব স্বীকার্য।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে এ সংগঠন শক্তি হিসেবে কাজ করে, যখন মিশরাধিপতি রাজ্যের সর্বময় কর্তৃত্বভার ইউসুফ
(আ)-এর উপর অর্পণ করার প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলেন ঃ
إِ نَّ كَ ٱل᠔ يَ وْ مَ ل᠐ دَ يْ نَ ا مَ ᜻ِ ينٌ أ᠐ مِ ينٌ .
“আজ তুমি তো আমাদের নিকট মর্যাদাশীল, বিশ্বাসভাজন হলে।” (সূরা ইউসুফ : ৫৪) ইউসুফ তখন বললেন :
قَ الَ ٱجْ عَ ل᠔ نِ ى عَ ل᠐ ىٰ خَ زَ ᕧئِ ن᠒ ٱلأَ رْ ض᠒ إِ نِّ ى حَ فِ ᘭظ᠎ عَ لِ ᘭمٌ .
“ইউসুফ বলল, আমাকে দেশের ধনভান্ডারের কর্তৃত্ব প্রদান করুন; আমি তো উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ।” (সূরা
ইউসুফ ঃ ৫৫)
বস্তুত এখানে দৈহিক শক্তির কথা না বলে মানসিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা এবং সংগঠন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার
যোগ্যতার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংগঠন সম্পর্কে চিন্তা করলে বোঝা যায়, মূলত ইসলামি জীবনব্যবস্থায় সংগঠন এক নিগূঢ় সত্য।
ইসলাম আগাগোড়াই এক অখন্ড সংগঠন। ইসলামের প্রত্যেকটি কাজ সংগঠনের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হয়।
সাধারণভাবে সমাজ জীবনে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নবী করীম (সা) সংগঠনকে অপরিহার্য বলে ঘোষণা করেছেন।
ইসলামি রাষ্ট্রের খলীফাকে রাজনৈতিক সংগঠনকারী হিসেবেই প্রয়োজন পরিমাণ বেতন দেয়া সংগত বলে ঘোষণা
করা হয়েছে।
ইসলামি অর্থনীতিতে সংগঠন বা উদ্যোক্তার সনাতন অর্থ মোটামুটিভাবে গ্রহণ করা যায়। তবে এখানে একটা
মৌলিক পার্থক্য অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। বিষয়টি উদ্যোক্তা ও মূলধনের মালিকানার সাথে জড়িত। যেখানে
উদ্যোক্তা ও মূলধনের মালিক এক নয়, সেখানেই এর তাৎপর্য নিহিত। ইসলামি অর্থনীতিতে দু’ধরনের পদ্ধতি
খুবই সনাতন, মুদারাবা ও মুশারাকা। মুদারাবা অর্থ অংশীদারী ব্যবসা। এ ব্যবস্থায় এক অংশীদার সম্পূর্ণ মূলধন
যোগান দেয় (যেমন, ব্যাংক) অন্য অংশীদার (উদ্যোক্তা) প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ (যেমন- শ্রম) যোগান
দেয়। পূর্বনির্ধারিত অনুপাত অনুযায়ী তারা লাভ ভাগ করে নেয়। আর যদি কোন লোকসান হয় তবে মূলধন
যোগানদাতা (ব্যাংক) তা সম্পূর্ণ বহন করে, উদ্যোক্তা এর কোন অংশ বহন করে না। মুশারাকা ব্যবস্থাপনায়
উভয় অংশীদারই মূলধনের যোগান দেয় এবং পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে লাভ ও লোকসান ভাগ করে নেয়। অতএব
ইসলামি অর্থনীতিতে একজন উদ্যোক্তার আয় পূর্বনির্ধারিত নয়, যদিও অংশীদারিত্ব ব্যবসার ক্ষেত্রে তার লাভের অংশ পূর্বেই অবহিত। (্এম.এ. হামিদ,পৃ-৮০)
১. সংগঠন কী ?
ক. এক প্রকার মানসিক শ্রম খ. কাজ ও দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যম
গ. কোন কাজের সমষ্টি ঘ. কোন কাজের কৌশল অবলম্বন।
২. উদ্যোক্তা হিসেবে সংগঠনের কাজ ক’টি ?
ক. চারটি খ. পাঁচটি
গ. সাতটি ঘ. ছয়টি।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. সংগঠন কী ? সংগঠন সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের মতামত উল্লেখ করুন।
২. উদ্যোক্তা হিসেবে সংগঠনের কার্যাবলি আলোচনা করুন।
৩. ইসলামি অর্থনীতিতে সংগঠনের গুরুত্ব আলোচনা করুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. সংগঠন বলতে কী বুঝায় ? সংগঠনের কার্যাবলী ও গুরুত্ব আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]