. ইসলামি অর্থনীতিতে ভূমিস্বত্বের স্বরূপ ও মালিকানা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় ভ‚মি হচেছ উৎপাদনের মৌলিক উপাদান। এটি মানুষের জীবিকা অর্জনের জন্য মহান
আল্লাহর অফুরন্তদান। কুরআন-সুন্নাহর নীতিমালা ও খুলাফাই রাশেদুনের কর্মনীতিতেই ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায়
ভ‚মির ব্যবহার, ভ‚মিতে রাষ্ট্র ও জনসাধারণের মালিকানা নির্ধারণ, অধিকার ও ভোগ-দখলের যাবতীয় নীতিমালা
প্রণীত হয়েছে। ফলে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় ভ‚মির অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরূত্ব সু¯পষ্টভাবে নির্দেশিত হয়েছে।
ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ভ‚মি ও ভ‚মি-স্বত্বের গুরূত্ব অপরিসীম। কেননা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যের ব্যবস্থা ভ‚মি
হতেই উৎপন্ন হয়। কতক ভ‚মি আবাদী আবার কতক ভ‚মি চাষের অযোগ্য। এ সকল ভ‚মির ব্যাপারেও ইসলামের
বিধান সু¯পষ্ট। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় হযরত উমরের ভ‚মি সংস্কার নীতিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ইসলামি
অর্থব্যবস্থায় জমিদারী প্রথা স্বীকার করা হয় না। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় কিছু কিছু ভ‚মির স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত আছে।
সর্বোপরি ভ‚মির সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর। রাষ্ট্র ও জনগণ খাদ্য উৎপাদন, শিল্প-কারখানার কাঁচামাল
সরবরাহ, আবাসস্থল নির্মাণ প্রভৃতি কাজে ভ‚মি ব্যবহার করে থাকেন। আলোচ্য ইউনিটে ইসলামে ভ‚মি স্বত্ব ও
মালিকানা, ইসলামের দৃষ্টিতে যৌথ চাষাবাদ, হযরত উমরের ভ‚মি সংস্কারনীতি, ইসলামের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের
ভ‚মি ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় স্থান পেয়েছে। ভূমিস্বত্বের সংজ্ঞা
উৎপাদনের অপরিহার্য উপকরণ হচ্ছে ভূমি। ভূমিই হচ্ছে উৎপাদনের মৌলিক উপাদান। এটি মানুষের জীবিকা
অর্জনের জন্য মহান আল্লাহর দান। যেসব রীতি-নীতি ও বিধি-বিধান দ্বারা ভূমি ব্যবহার, ভূমিতে রাষ্ট্র ও
জনসাধারণের মালিকানা, অধিকার ও ভোগ-দখল সংক্রান্তযাবতীয় স্বত্বাদি নির্ধারিত হয় সেগুলোর সমষ্টিকে
ভূমিস্বত্ব বলে। তাই একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ভূমিস্বত্ব কি হবে সে বিষয়ে ইসলাম নীরব থাকেনি।
কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের আমল ভ‚মি স্বত্ব স¤পর্কে কতগুলো ইতিবাচক নীতিমালা প্রদান করেছে। ফলে
ইসলামি অর্থনীতিতে ভূমির অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ভূমিস্বত্ত¡ সম্পর্কে সাধারণ তথা
আধুনিক ও ইসলামি অর্থনীতিবিগণ বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নি¤েœউল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা
হলআধুনিক অর্থনীতিতে ভ‚মির সংজ্ঞা
সাধারণত ভূমি বলতে পৃথিবীর স্থলভাগের অংশ বিশেষ তথা মাটিকে বুঝায়। আধুনিক তথা পাশ্চাত্য
অর্থনীতিবিদরা সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে ভূমি বলেন।
আলফ্রেড মার্শালের মতে ঃ প্রকৃতি যে সম্পদ জল, স্থল, বায়ু ও তাপের মাধ্যমে মানুষকে উপহার দেয় তাই
ভূমিস্বত্ব।
মার্শাল হ্যারীর মতে ঃ যে পদ্ধতিতে এবং যে সময়ের জন্য কৃষি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ভোগ-দখলের অধিকার
নিরূপিত হয়, তাকে ভূমিস্বত্ব বলা হয়।
ইসলামি অর্থনীতিতে ভ‚মিস্বত্বের সংজ্ঞা
পাশ্চাত্য তথা আধুনিক অর্থনীতি হতে ইসলামি অর্থনীতিতে ভূমিস্বত্বের সংজ্ঞা একটু ভিন্নতর। ইসলামি
অর্থনীতিতে ভূমিস্বত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইসলামি অর্থনীতিবিদ ডঃ সাদেক বলেন ঃ “ইসলামে ভূমি শব্দটি একটি
ভিন্ন প্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়। যেসব বস্তুগত সম্পদকে উৎপাদন কার্যে ইজারা বা ভাড়া খাটানো হয় এবং যা
উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ব্যবহারের সময় সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায় না, তাকেই ভূমিস্বত্ব বলে।”
ইসলামি অর্থনীতিবিদ ডঃ আব্দুল মান্নান ভূমিস্বত্বের সংজ্ঞায় বলেছেন, “ভূমিস্বত্ব বা ভূমির মালিকানা মহান
আল্লাহর। এর ব্যবহারিক মালিক হল জনসাধারণ ও রাষ্ট্র।”
সূতরাং ভূমির ওপর স্বত্বাধিকার এবং ভূমির ওপর সরকারি রাজস্ব আদায়ের বিধানকে ভূমিস্বত্ত¡ বলা হয়। ইসলামি
অর্থনীতিতে ভূমির কোন রূপান্তর না ঘটলেও অপচয় হতে পারে। ভূমি উৎপাদিত ও অনুৎপাদিত উভয়ই হতে
পারে। ইসলামি অর্থনীতিতে যে প্রাকৃতিক সম্পদের কোন ভাড়া বা ইজারা, খাজনা নেই তা ভূমি নয়।
ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার গুরুত্ব
পৃথিবীতে মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই আহার গ্রহণ করতে হবে। এ আহার উৎপন্নের উৎস হল ভূমি।
যেহেতু খাদ্যোৎপাদন ও নানাবিধ শিল্প-পণ্যের কাঁচামাল ভূমি বা যমীন হতে উৎপন্ন হয়। সেহেতু অর্থনীতিতে
ভূমিস্বত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। ভূমিস্বত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন ঃ
وَ ل᠐ قَ دْ مَ ᜻ᡐ نَّ ا᠑ᝏ مْ فِ ى ٱلأَ رْ ض᠒ وَ جَ عَ ل᠔ نَ ا ل᠐ ᠑ᝣ مْ فِ يهَ ا مَ عَ اᛒِشَ قَ لِ ᢿᘭ ًمَّ ا ᘻ َشْ ك᠑ رُ ونَ .
“আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং এতেই তোমাদের জন্য যাবতীয় জীবিকার ব্যবস্থাও রেখেছি।
তোমরা অতি অল্পই শোকর কর।” (সূরা আল-আ’রাফ : ১০)
মহান আল্লাহ আরো বলেন-
هُ وَ ٱلᡐ ذِ ى جَ عَ لَ ل᠐ ᠑ᝣ مُ ٱلأَ رْ ضَ ذَ ل᠑ وᢻ ًفَ ٱمْ شُ وا᠔ فِ ى مَ نَ اᜧ ِبِ هَ ا وَ ᝏ ل᠑ وا᠔ مِ ن رِّ زْ قِ هِ وَ ល ِل᠐ ᘭ ْهِ
ٱل ُّ شُ ورُ .
“তিনিই তো ভূ-পৃষ্ঠকে তোমাদের জীবিকা উপার্জনের জন্য সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা তার দিগদিগন্তেবিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার গ্রহণ কর। পুনরুন্থান তো তাঁরই নিকট।” (সূরা
আল-মুলক : ১৫)
এ মর্মে বহু আয়াত আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করেছেন, যাতে মানবজীবনে ভূমির গুরুত্ব
দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়। সূতরাং বৈধভাবে বিভিন্ন উপায়ে কৃষি কাজ করে এবং ভূমিকে নানাভাবে ব্যবহার
করে খাদ্যোৎপাদন করতে হবে এটাই ইসলামের মূলনীতি।
বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিস্বত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤েœভূমিস্বত্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে
ধরা হলো ঃ
কৃষির উন্নতি ঃ ভূমিস্বত্বের ওপর কৃষকের উন্নতি নির্ভর করে। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির
উন্নতি অপরিহার্য। কিন্তু কৃষকের উন্নতি ছাড়া কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি হয় না।
ভূমিহীনতা রোধ ঃ জমির মালিকানা রাষ্ট্রের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির হাতে অবরুদ্ধ হলে বিশাল আকারে ভূমিহীন
চাষীর উদ্ভব হবে। তখন ভূমিহীন চাষীরা ভূমির উন্নতিতে উৎসাহ্ পাবে না। একটি সুষ্ঠু ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাই
ভূমিহীনতা রোধ করতে পারে।
সামাজিক প্রতিপত্তি ঃ যাদের দখলে ভূমিস্বত্ব আছে তারা সমাজের প্রতিপত্তিশালী লোক। অপরপক্ষে যাদের কোন
ভূমি নেই বা যারা প্রান্তিক চাষী তাদের সমাজে কোন প্রতিপত্তি নেই। উভয় অবস্থাই অবাঞ্ছিত। ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাই
তা নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে।
রাজনৈতিক গুরুত্ব ঃ রাজনৈতিক জীবনে ও ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার গুরুত্ব কম নয়। একটি সুষ্ঠু ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থায়
জোতদার, ধনী কৃষক, ইত্যাদির অস্তিত্ব থাকে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে সাধারণ
কৃষকদের প্রাধান্য থাকে।
জমি খন্ডকরণ ও অসংলগ্নতা ঃ জমির খন্ডকরণ ও অসংলগ্নতার সাথে ভূমিস্বত্বের সংম্পর্ক আছে। সুষ্ঠু ভূমিস্বত্ব
ব্যবস্থাই এই অসুবিধা দূর করতে পারে।
ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার প্রকারভেদ
ভারবতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন ধরনের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ভূমির মালিকানা প্রকৃতি,
ভূমির মালিকের সাথে সরকারের সম্পর্ক ও রাজস্ব আদায়ের ভিত্তিতে প্রচলিত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাকে তিনভাগে ভাগ
করা যায়। যথা- ১. জমিদারী ব্যবস্থা ২. মহলওয়ারী ব্যবস্থা ৩. রায়তওয়ারী ব্যবস্থা। নি¤েœসেগুলো আলোচনা করা
হলজমিদারী ব্যবস্থা
এ ব্যবস্থায় জমির মালিক হলেন জমিদারগণ। তারা সরকারকে ভূমির রাজস্ব প্রদান করতেন। কিন্তু তারা সব জমি
চাষ করতেন না। জমি চাষ করত কৃষকরা অথচ তারা জমির প্রকৃত মালিক ছিল না। জমিদারী ব্যবস্থা দুশ্রেণীতে
বিভক্ত ছিল। স্থায়ী ও অস্থায়ী। অস্থায়ী জমিদারী প্রথা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে যেমন- পাঁচ অথবা দশ
বছরের জন্য বন্দোবস্তদেয়া হত। কিন্তু স্থায়ী জমিদারী প্রথায় জমিদাররা চিরদিনের জন্য জমির মালিক হতেন এবং
সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা প্রদান করতেন। বাংলাদেশে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থায় স্থায়ী জমিদারী ব্যবস্থা
১৭৯৩ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্তবহাল ছিল। এ ব্যবস্থাই “চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত” নামে পরিচিত।
মহলওয়ারী ব্যবস্থা
মহলওয়ারী ব্যবস্থায় মহল্লা বা গ্রামবাসী যৌথভাবে জমির মালিক হতেন, তারা যৌথভাবে সরকারকে ভূমি রাজস্ব
প্রদান করতেন। গ্রাম্য মাতব্বর গ্রামের চাষীগণের কাছ থেকে ভূমি রাজস্বের অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি ট্রেজারিতে
তা জমা দিতেন। এ ব্যবস্থায় সাধারণ জমি ৪০ বছরের জন্য পত্তনী দেয়া হতো। পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সীমান্ত
প্রদেশে এ প্রথা চালু ছিল।
রায়তওয়ারী ব্যবস্থা
এ ব্যবস্থায় জমির মালিক হল চাষী। চাষী সরকারকে ভূমি রাজস্ব প্রদান করে। এ ব্যবস্থায় সরকার ও চাষীর মধ্যে
মধ্যস্বত্বভোগী নেই। এরকম ব্যবস্থায় যৌথ মালিকানাও নেই। কৃষক জমি বিক্রয়, দান, ক্রয়, উইল, ওয়াক্ফ করা
প্রভৃতি বিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং প্রজাদের স্বার্থ সংরক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে উপরোক্ত তিন ধরনের
ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার মধ্যে রায়তী প্রথা সর্বোৎকৃষ্ট বলে মনে হয়। বর্তমানেও আমাদের দেশে এ প্রথা চালু আছে।
ভূমির মালিকানা
মানুষের মালিকানা সীমিত। মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের একক সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। এ বিশ্ব সংসারের অধিকার ও
নিয়ন্ত্রণ একমাত্র তাঁরই হাতে। এ বিশাল সৃষ্টির কোন উপাদানে বা এর সামান্য কিছুতেও মানুষের কোন হাত
নেই। এমনকি একটি ধূলিকণা, এক ফোঁটা পানি কিংবা একখন্ড শুকনো পাতা পর্যন্তসৃষ্টির ক্ষমতা মানুষের নেই।
বরং সব মৌলিক সৃষ্টিই মহান আল্লাহর এবং মানুষ তার সীমিত জ্ঞান ও শক্তির বলে সে সব মৌলিক উপাদান
বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারে মাত্র। আর তার জ্ঞান বা শক্তি ও তাঁর নিজস্ব নয়, তাও মহান আল্লাহর সৃষ্টি।
সূতরাং জগতে মানুষের মালিকানা বলতে কিছুই নেই। মালিকানার সবটুকু একমাত্র আল্লাহর। এ সম্পর্কে মহান
আল্লাহ বলেন ঃ
قَ الَ رَ ᗖُّ نَ ا ٱلᡐ ذِ يۤ أ᠐ عْ طَ ىٰ ᛿᠑ لَّ شَ يءٍ خَ ل᠔ قَ هُ ثُ مَّ هَ دَ ىٰ .
“মূসা বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অত:পর পথ নির্দেশ
করেছেন।” (সূরা ত্বা-হা ঃ ৫০)
তিনি আরো বলেন ঃ ᠒ضْ رَ ٱلأَ وِ اتَ اوَ ـم ٱلسَّ ـىِ ف ـاَ مُ ـه ᡐل “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সব
আল্লাহরই।” (সূরা আল-বাকারা : ১১৬)
কিছু যা তবেীথৃি“প هُ ـوَ ٱلᡐ ـذِ ى خَ ل᠐ ـقَ ل᠐ ᠑ᝣ ـمْ مَّ ـا فِ ـى ٱلأَ رْ ض᠒ جَ مِ ᘭعـا᠍ ঃ ছয়েহে বলা জায়গায়্য অন
আছে এর সবই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আল-বাকারা : ২৯)
পৃথিবীর মালিক নিরঙ্কুশভাবে মহান আল্লাহ যিনি বিশ্বের সৃষ্টি কর্তা ও পালন কর্তা। তিনি মানুষকে তাঁর
উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন। তাই মানুষ তাঁর বিধান অনুযায়ী ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন উপাদান, উৎপাদন শক্তি ও যাবতীয়
সম্পদ ভোগ-দখল করতে পারবে। এটাই ইসলামের মূলনীতি। এ নীতি অনুসারে মহান আল্লাহর মালিকানার
অধীনে মানুষের সীমিত মালিকানা স্বীকৃত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন ঃ
وَ ٱلأَ رْ ضَ وَ ضَ عَ هَ ا لِ لأَ نَ امِ . فِ يهَ ا فَ اᜧ ِهَ ةٌ وَ ٱلنَّ خْ لُ ذَ اتُ ٱلأَ ᠔ᝏ مَ امِ وَ ٱل᠔ حَ بُّ ذُ و ٱل᠔ عَ صْ فِ
وَ ٱلᖁَّ ᗫ ْحَ انُ
“ভূমিকে আল্লাহ সমগ্র প্রাণীর জন্য সৃষ্টি করেছেন, যাতে ফলমূল, ছড়াবিশিষ্ট খেজুর, গবাদি পশু, ভোজ্য শস্যাদি
এবং সুবাসিত পুষ্পরাজি উৎপন্ন হয়।” (সূরা আর-রাহমান ঃ ১০-১২)
বস্তুত মহান আল্লাহর দেয়া এ উত্তরাধিকার বলেই মানুষ সম্পত্তি হস্তান্তর, দান, ক্রয়-বিক্রয় ও উত্তরাধিকারের
ক্ষমতা লাভ করেছে। যদিও নিরঙ্কুশ মালিকানা সে কিছুতেই লাভ করতে পারে না। আর ইসলামি নীতি
অনুসারেই ব্যক্তি মালিকানার বিলোপ কিংবা সমুদয় সম্পত্তি রাষ্ট্রায়ত্তকরণ অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।
ভূমির উপর সমষ্টির মালিকানা
ভূমির উপর সমাজ ও সমষ্টির মালিকানা ইসলামে স্বীকৃত। কিন্তু সমাজ ও সমষ্টির এ মালিকানা সীমাহীন ও
সর্বগ্রাসী নয়, ব্যক্তিস্বার্থ বিরোধীও নয়। দেশের সমস্তভূমিই যদি ব্যক্তি মালিকানা ও ভোগাধিকারে ছেড়ে দেয়া
হয়, তাহলে সামাজিক প্রয়োজন পূরণকরা নানাভাবে ব্যাহত হতে পারে। এজন্য ইসলামি অর্থনীতি রাষ্ট্রের
তত্ত¡াবধানেও ভূমি রাখার অনুমতি দিয়েছে, যেন প্রয়োজনের সময় দেশের ভূমিহীন লোকদের মধ্যে তা বন্টন করে দেয়া সম্ভব হয়।
রাষ্ট্রের স্থায়ী মালিকানাধীন ভূমি
ইসলামি অর্থনীতি ভূমির রাষ্ট্রীয় মালিকানাও স্বীকার করে। সর্বজনীন রাষ্ট্রীয় কাজ তথা- অসংখ্য রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাকর্মচারির প্রয়োজনীয় কাজ, চাহিদা পূরণ করার জন্য রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ভূমি থাকা আবশ্যক। সরকারী
অফিসারদের অফিস আবাসন ব্যবস্থার স্থান, চারণ ভূমি, পার্ক, রাজপথ, পানিপথ, রেলপথ, স্টেডিয়াম এবং
জলাশয় প্রভৃতির ভূমি ইসলামি অর্থনীতিতে সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। এসব ভূমির ওপর কোন
নাগরিকেরই ব্যক্তিগত নিরংকুশ মালিকানা স্বীকৃত হতে পারে না।
ইসলামি অর্থনীতিতে ভ‚মিস্বত্বের স্বরূপ
ভূমির ওপর স্বত্বাধিকার এবং সরকারি ভূমির রাজস্ব আদায়ের বিধানকে ভূমিস্বত্ব বলা হয়। পবিত্র কুরআন, হাদীস
ও ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়, ইসলামি অর্থনীতিতে শুধু এক প্রকার ভূমিস্বত্বই
স্বীকৃত; তা হল ইসলামি ভূমিস্বত্ব। ভূমিস্বত্বের স্বরূপ সম্পর্কে উপমহাদেশের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা
আবদুর রহীম তাঁর লিখিত “ইসলামের অর্থনীতি” গ্রন্থে চমৎকার ধারণা দিয়েছেন। নি¤েœতা তুলে ধরা হল:
ইসলামেএকটি মাত্র ভ‚মিস্বত্ব স্বীকৃত
কুরআন-হাদীস ও ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামের ইতিহাসে একটি মাত্র ভূমিস্বত্বই
স্বীকৃত। জমিদারী, জায়গীরদারী, তালুকদারী, হাওলাদারী প্রভৃতি কর আদায়কারী মধ্যস্বত্বের স্থান ইসলামি
অর্থনীতিতে স্বীকৃত নয়। এসব স্বত্ব মূলত পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি।
নিছক খাজনা আদায়কারী মধ্যস্বত্ব ভোগী ইসলাম বিরোধী
খাজনা আদায়কারী মধ্যস্থত্বভোগীরা সরকারকে খুব-ই নি¤œহারে কর প্রদানের প্রতিশ্রæতিতে একটি বিশাল ভূমির
ওপর আধিপত্য বিস্তার করে বসে এবং জমির মালিক চাষীদের কাছ থেকে নিজেদের মনগড়া হারে কর আদায়
করে। জমির মালিক জমি হতে কোন ফসল না পেলেও বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভূমি ক্ষতিগ্রস্তহয়ে গেলেও জমিদার
বা মধ্যস্বত্বভোগী এবং সরকার বার্ষিক খাজনা ক্ষমা করেন না। তাই ইসলামি অর্থনীতি এরূপ জমিদারী বা নিছক
খাজনা আদায়কারী মধ্যস্বত্ব ভোগীদের ঘোর বিরোধিতা করে।
ভারসাম্যপূর্ণ ভূমি মালিকানা
ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ ভূমি মালিকানায় বিশ্বাসী। ইসলাম উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছে যে, কোন ব্যক্তি কিছু পরিমাণ
জমির মালিক হতে পারে তবে তার পরিমাণ বা সংখ্যা ইসলাম নির্ধারণ করেনি। বরং ভূমি মালিকের উপর ইসলাম
এতো কঠোরভাবে নীতি নির্ধারণ করেছে যে, তাতে কারো পক্ষেই এলাকার সমস্তবা অধিকাংশ ভূমি গ্রাস করে
নেয়া সম্ভব নয়। কাজেই ভূমির প্রান্তিক পরিমাণ নির্ধারণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে বাতুলতা মাত্র।
ভূমির ভোগ ও ব্যবহার
ইসলাম ভূমির মালিককে দুটি উপায়ে ভূমি ভোগ ও ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়।
এক. ভূমি মালিক নিজে চাষাবাদ করবে।
দুই. কোন কারণবশত নিজে চাষ করতে না পারলে অন্যের দ্বারা তা চাষ করাবে। অথবা চাষাবাদের কার্যে অন্যের
নিকট হতে সাহায্য গ্রহণ করবে। অন্যের দ্বারা চাষ-বাসের উপায়ও ইসলাম বাতলিয়ে দিয়েছে। যেমন-
 কোন খেটে খাওয়া লোক দ্বারা নিজ তত্ত¡াবধানে জমির চাষ করাবে।
 উৎপন্ন ফসলের নির্দিষ্ট অংশ দেয়ার শর্তে কাউকে দিয়ে ভূমি চাষ করাবে।
 প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ টাকার বিনিময়ে কাউকে বছর মেয়াদী
ভোগাধিকারের জন্য দিবে।
 নিজের ভোগ ও ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন না হলে বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূমি থাকলে সেটি কোন
ভূমিহীনকে চাষাবাদ বা ভোগদখল করতে দিবে।
 ওপরের আলোচনা হতে বুঝা যায়, ইসলামে ভূমিকে উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হিসেবে স্বীকৃতি
দিয়েছে।
 ব্যক্তিগত ভূমিস্বত্ব ও ভোগাধিকার লাভের নীতি:
অন্যান্য নীতির ন্যায় ইসলাম ব্যক্তিগত ভূ-সম্পত্তি বা জমি-জমায় মালিকানাস্বত্ব ও ভোগ-দখলের নীতি নির্ধারণ
করে দিয়েছে। ইসলামের ভূমিনীতিকে জমির মালিকানা লাভ ও ভোগ দখলের দৃষ্টিতে জমিকে মোটামুটিভাবে চার
ভাগে ভাগ করা যায়। যথাপ্রথমতঃ আবাদী মালিকানাধীন জমি
এ ধরনের ভূমিতে ব্যক্তিগত স্বত্ব বিদ্যমান। এতে মালিক ইচ্ছা মতো চাষাবাদ, উৎপাদন, বৃক্ষ রোপন, বাড়ি
নির্মাণ ইত্যাদি কাজ কিংবা অন্য যে কোনভাবে ব্যবহার করতে পারবে। এ জমি মালিকের অধিকারভুক্ত থাকবে।
এতে মালিকের বৈধ অনুমতি ছাড়া অপর কোন ব্যক্তির হস্তক্ষেপ, ব্যবহার বা কোনরূপ অধিকার থাকবে না।
দ্বিতীয়তঃ অনাবাদী মালিকানাধীন জমি
এ ধরনের জমি কারো মালিকানাধীন থাকা স্বত্তে¡ও পতিত অবস্থায় থাকে। এতে বসবাস করা, কৃষি কাজ করা,
কিংবা বন-জংগল থাকলেও তা পরিষ্কার করা হয় না, এরূপ পতিত অনাবাদী জমিতে ব্যক্তির মালিকানা থাকবে
এবং আবাদী জমির মতই এর বিক্রয়, হস্তান্তর, দান ইত্যাদি করতে পারবে ও এতে উত্তরাধিকার স্বত্ব বলবৎ থাকবে।
তৃতীয়তঃ জনকল্যাণের জন্য নির্দিষ্ট জমি
কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কিংবা কোন গ্রামবাসী কর্তৃক প্রদত্ত পশুপালন, পাঠশালা প্রতিষ্ঠা, ঈদগাহ্ বা কবরস্থানের
জন্য বা অন্য কোন জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য নির্দিষ্ট জমি এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ জমিতে কারো ব্যক্তি
মালিকানা থাকে না। কিংবা কোন ব্যক্তি বিশেষ নিজ স্বার্থে এ জমি ব্যবহার করার অনুমতি পায় না। অথবা এর
হস্তান্তর ও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না।
চতুর্থতঃ অনাবাদী ও পরিত্যক্ত জমি
অনাবাদী ও পরিত্যক্ত জমির মধ্যে এক শ্রেণীর জমি আছে, যেগুলোতে কারো ভোগ-দখলে নেই ও কারো
মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ শ্রেণীর জমিকে ইসলামি অর্থনীতির পরিভাষায় المـوت أرض বা মৃত জমি বলা
হয়। ইসলামি বিশেষজ্ঞগণ এই জমির পরিচয় প্রসঙ্গে বলেন ঃ
هى ارض خارجة الᘘلد لم تكن ملᝣا لاحد ولا حقاله خالصا.
অর্থাৎ “ইহা জনপদের বাইরে এমন জমি, যার কোন মালিক নেই, এর উপর কারো একচেটিয়া অধিকার স্বীকৃত
হবে না।”
এজাতীয় জমিতে দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী মানুষের অধিকার ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে এ রকম যত
অনাবাদি পতিত জমি থাকবে সরকারিভাবে সেগুলো কৃষি উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে এবং সরকার এগুলো
ভূমিহীন লোকদের মধ্যে এমনভাবে বন্টন করে দেবেন যাতে জনসাধারণের কল্যাণ সাধিত হয়। এরূপ প্রাপ্ত
জমিতে যে কৃষিকাজ করবে বা জমি আবাদ করবে, সে-ই উক্ত জমির মালিক হবে। এরূপ জমির মালিকানা
সম্পর্কে নবী করীম (সা) বলেছেন-
من عمر ارضا لᛳست لاحد فهىحق له.
“যে ব্যক্তি মালিকহীন ভ‚মি আবাদ করল সে-ই তার মালিকানায় অগ্রাধিকার পাবে।”
এ সম্পর্কে এক সাহাবী এ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে,
اشهد ان رسول الله قضى ان الارض لله و العᘘد عᘘاد الله فمن احى مواتها
فهو أحـق ᗷـهـا.
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এ মর্মে মীমাংসা করেছেন যে, জমি আল্লাহর, আর মানুষ তাঁর বান্দা।
অতঃপর যে একে কৃষি উপযোগী করে তুলবে, সেই-এর মালিক হবে।”
এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ) কিতাবুল খারাজ গ্রন্থে লিখেছেন ঃ
و ᗷالامام ان ᘌقطع ᛿ل موات و ᛿ل ما ᛿ان لᛳس لاحد فᘭه ملك و لᛳس احد
ᘌعمر فى ذلك ᗷالذى يرى انه خير للمسلمين و اعم نفعا.
“যেসব জমি অনাবাদি, পতিত, মালিকহীন এবং যাতে কেউ চাষাবাদ ও কৃষিকাজ করে না, তা রাষ্ট্র প্রধান
লোকদের মধ্যে এমনভাবে বণ্টন করে দেবেন যাতে মুসলমানদের কল্যাণ হয়।”
বস্তুত পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বিধান অনুযায়ী মানব সমাজের বৃহত্তম কল্যাণের স্বার্থে সকলকেই ভূমির অংশ
দিতে হবে। জনগণের যাতে কোনরূপ অমঙ্গল বা ক্ষতিসাধন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জমি বণ্টন করতে হবে।
ইসলামি অর্থনীতি জমিদারী, জোতদারী প্রথাকে মোটেই সমর্থন দেয় না বরং প্রকৃত চাষীদের মধ্যে ভূমির সুষম
বণ্টনই হচ্ছে ইসলামের মূল বিধান।
রাষ্ট্রীয় ভূমিস্বত্ব
ভূমিস্বত্ব ছাড়া রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হতে লাভ করতে পারে না। আবার সার্বভৌমত্ব ছাড়া রাষ্ট্র ও হতে পারে
না। কারণ রাষ্ট্রের প্রাণ হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। এছাড়া অন্যান্য উপাদানগুলো রাষ্ট্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে তুলনীয়। এ
ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ভূমিস্বত্ব বলতে সরকারি ভূমি বা খাস জমিকে বুঝায়। রাষ্ট্রীয় ভূমিস্বত্ব সম্পর্কে ইসলাম যে সুষ্ঠু
নীতিমালা গ্রহণ করেছে তা নি¤েœতুলে ধরা হলো:
বনাঞ্চল
যে ভূমিতে প্রকৃতিগতভাবেই বন ও বৃক্ষরাজি জন্মে, এগুলো জনস্বার্থে রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকবে। সামাজিক
সম্পদ হিসেবে এগুলো রাষ্ট্র সংরক্ষণ ও ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। তবে রাষ্ট্র প্রয়োজন বোধ করলে
বনাঞ্চলের সম্পদ আহরণের জন্য জনস্বার্থে ও নির্দিষ্ট শর্তে তা কোন ব্যক্তি বা সংগঠনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা দেবে।
চারণ ভূমি
সামাজিক স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার বৈশিষ্ট্য যে ভূমিতে বিদ্যমান অর্থাৎ যে ভূমিতে অনায়াসে পশু চরতে পারে তা
ব্যক্তি মালিকানায় প্রদান করা যায় না। এগুলো জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকবে। চারণ ভূমিতে সকল
নাগরিকের গৃহপালিত পশু বিচরণ ও আহার গ্রহণ করতে পারবে। এটি কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্য খাস নয়। এটি
সর্বসাধারণের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।
পাহাড়ী ভূমি
এ জাতীয় পরিত্যাক্ত ভূমিতে ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা উহ্য থাকে কেননা এটি মৃত জমির মত নয়। এ জাতীয়
ভূমির কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা থাকে না বলেই ব্যক্তিগতভাবে কেউ তা লাভ করার চেষ্টা করে না। তবে যদি
কেউ এ জাতীয় জমির মালিক হতে চায় তাহলে রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বত্ব লাভ করতে পারবে।
খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ ভূমি
দৃশ্যমান ভূমির উপরিভাগে যদি নির্ভেজাল খনিজ সম্পদ মওজুদ থাকে তাহলে তা সামাজিক সম্পত্তি হিসেবে গণ্য
হবে। সকল জনগণের তা থেকে উপকার লাভ করার অধিকার থাকবে। সামাজিক সম্পদ হিসেবে রাষ্ট্র এ জাতীয়
ভূমির সংরক্ষণ ও ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
যুদ্ধলব্ধ ভূমি
ইসলামের প্রাথমিক যুগে পেশাদার ও বেতনভোগী সৈন্যবাহিনী না থাকায় এবং মুসলমানদের মধ্যে দারিদ্র্য অবস্থা
বিরাজমান থাকায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক বৃহদাংশ মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টিত হত। তাদেরকে ভূমিও প্রদান করা
হত। হযরত ওমর (রা)-এর সময়ে মুসলমানদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তিনি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সৈনিকদের
মধ্যে বণ্টন করার নীতি পরিহার করেন। যার ফলে বিজিত দেশের ভূমিতে ইসলামি রাষ্ট্রের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফাই ঃ বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পত্তিকে ফাই বলে। এ সম্পদ ও ভূমি একান্তই রাষ্ট্রের মালিকানাধীন থাকবে, তবে
কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা থেকে কিয়দাংশ জনসাধারণকে দিতে পারবেন।
যুদ্ধে নিহত অমুসলিমদের সম্পত্তি
দেশ ত্যাগী বা যুদ্ধে নিহত অমুসলিমদের সম্পত্তির যদি কোন উত্তরাধিকারী না থাকে, তাহলে এ সম্পত্তির মালিক
হবে ইসলামি রাষ্ট্র।
ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি ঃ ওয়াকফকৃত সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায়। তবে সাধারণত রাষ্ট্র তা দখল করে না
বরং তা রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বিভাগ ওয়াকফের শর্তানুসারে জনসাধরণের উপকার ভোগ করা বা ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদান করে।
১. ‘ভূমিস্বত্ব আল্লাহর এর ব্যবহারিক মালিক রাষ্ট্র ও জনসাধারণ’- এ সংজ্ঞাটি কার ?
(১) আলফ্রেড মার্শালের (২) মার্শাল হ্যারীর
(৩) ড. সাদিক এর (৪) ড. আবদুল মান্নান-এর।
২. আলোচ্য পাঠে ভূমিস্বত্বের ক’টি দিক তুলে ধরা হয়েছে?
ক. সাতটি খ. চারটি
গ. পাঁচটি ঘ. তিনটি।
৩. ভারতীয় উপমহাদেশে ভূমিস্বত্ব ক’ভাগে বিভক্ত ?
ক. তিন ভাগে খ. পাঁচ ভাগে
গ. চার ভাগে ঘ. দুই ভাগে।
৪. ইসলামের দৃষ্টিতে ভূমি ভোগ ও ব্যবহারের ক’টি দিক আছে ?
ক. চারটি খ. দুইটি
গ. তিনটি ঘ. পাঁচটি।
৫. অনাবাদি ও পরিত্যক্ত ভূমি কোনটি ?
ক . রাষ্ট্রায়ত্ব ভূমি খ. নদ-নদী ও খাল-বিল
গ. ওয়াকফকৃত জমি ঘ. যে জমির কোন মালিক নেই এবং পরিত্যক্ত।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. ভূমিস্বত্ব সংক্রান্তচারটি সংজ্ঞা লিখুন।
২. ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার গুরুত্ব লিখুন।
৩. ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার প্রকারভেদ তুলে ধরুন।
৪. ভূমির মালিকানা ক’ভাগে নির্দিষ্ট হয় ? আলোচনা করুন।
৫. ইসলামি বিধানে ভূমিস্বত্বের স্বরূপ আলোচনা করুন।
৬. রাষ্ট্রীয় ভূমিস্বত্ব বলতে কি বুঝায় ? লিখুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. ইসলামি অর্থনীতিতে ভূমিস্বত্বের স্বরূপ ও মালিকানা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]