ইসলামী দর্শনে নেতার আনুগত্য করা কি বাধ্যতামূলক? ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নেতার কী কী গুণাবলী থাকা

 ইসলামী জীবনব্যবস্থায় একজন নেতার কী কী গুণাবলী থাকা আবশ্যক তা বলতে পারবেন।
یَا أ َیُّھَا ٱل َّذِینَ آمَنُوا ْ أ َ طِ یعُوا ْ ٱلل َّھَ وَ أ َطِ یعُوا ْ ٱلرَّ سُولَ وَ أ ُوْ لِى ٱلأ َمْرِ مِنْكُمْ –
(سورة النساء-٥٩ (
অনুবাদ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার
অধিকারী। (সূরা আন-নিসা : ৫৯)
টীকা
( أولي الامر) আমর উলিল
‘উলিল আমর’ আভিধানিক অর্থে-সে সমস্তলোককে বলা হয় যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত
থাকে। সে কারণেই হযরত ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ ও হাসান বসরী (রা.) প্রমুখ মুফাসসির, ওলামা ও ফোকাহা
স¤প্রদায়কে ‘উলিল আমর’ সাব্যস্তকরেছেন। তাঁরাই হচ্ছেন মহানবী (সা)-এর প্রতিনিধি। তাঁদের হাতেই অর্পিত ছিল
দীনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব।
কতিপয় মুফাসসির বলেন, ‘উলিল আমর’ -এর অর্থ হচ্ছে, সে সমস্তলোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব
ন্যস্ত।
কারো কারো মতে, ‘উলিল আমর’ বলতে ওলামা, শাসক ও নেতৃস্থানীয় লোকদের বোঝায়। কারণ নির্দেশদানের
বিষয়টি তাদের সাথেই সম্পর্কত। (তাফসীরে মাযহারী ও রূহুল মা’আনী)
ইসলামে নেতার আনুগত্য
ইসলামী জীবনব্যবস্থায় প্রকৃত আনুগত্য লাভের অধিকারী হলেন আল্লাহ, অতঃপর আনুগত্য হচ্ছে রাসূলের, আর
তাঁদের অধীনে তৃতীয় আনুগত্য হচ্ছে মুসলমানদের মধ্য থেকে ‘উলিল আমর’ তথা নেতা বা নেতৃস্থানীয় দায়িত্ব ও
ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে, “হে ঈমানদারগণ ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য
করো রাসূলের আর সে সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও ক্ষমতার অধিকারী।” (সূরা আন-নিসা : ৫৯)
সুতরাং নেতার আনুগত্য করা মুসলমানদের উপর ফরয। আর নেতার অবাধ্য হওয়া অবৈধ। রাসূল (সা) বলেন, “যে
ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি নেতার অবাধ্য হল সে আমারই অবাধ্য
হল।” (বুখারী)
মুসলিম নেতৃবৃন্দ কারা
মুসলমানদের সামাজিক ও সামষ্টিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে দায়িত্ব সম্পন্ন ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি মাত্রই উলিল আমর
এর অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা মুসলমানদের মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তাগত ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী উলামায়ে কিরাম বা
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হতে পারেন। আবার দেশের শাসনকার্য পরিচালনাকারী প্রশাসক হতে পারেন। অথবা আদালতে
বিচারের রায় প্রদানকারী বিচারপতি বা তামাদ্দুনিক ও সামাজিক বিষয়ে গোত্র, মহল্লা ও জনবসতির নেতৃত্বদানকারী
শেখ- সরদার, প্রধানও হতে পারেন।
মোটকথা কোন ব্যক্তি যে কোন পর্যায়েই মুসলমানদের নেতৃত্বদানকারী হবেন তিনি অবশ্যই আনুগত্য লাভের অধিকারী
হবেন। তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, তাকে মুসলিম দলভুক্ত হতে হবে এবং
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)-এর অনুগত হতে হবে। এ আনুগত্যের জন্য এ শর্ত দুটি হচ্ছে অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক।
নবী করীম (সা)ও পরিপূর্ণ ব্যাপকতার সাথে দ্ব্যর্থহীনভাবে হাদীসের এটা বর্ণনা করেছেন। যেমন নিæোক্ত হাদীসগুলো
দেখা যেতে পারে- নেতার কথা শোনা ও মেনে চলা মুসলমাদের জন্য অপরিহার্য, তা তার পছন্দ হোক বা না হোক, যে
পর্যন্তনা তাকে আল্লাহর অবাধ্য হবার হুকুম দেয়া হয়। আর যখন তাকে আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার হুকুম দেয়া হয় তখন
তার কিছু শোনা ও আনুগত্য করা উচিৎ নয়। (বুখারী ও মুসিলম)
আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হতে হবে এমন কোন বিষয়ে আনুগত্য নেই, আনুগত্য করতে হবে শুধু মারূফ বা বৈধ ও
সৎ কাজে। (বুখারী ও মুসলিম)
স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা চলবে না।
গুনাহের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্তনেতার নির্দেশ শ্রবণ ও পালন করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। গুনাহের নির্দেশ
দেয়া হলে আনুগত্য পাওয়ার অধিকার তার নেই।
ইসলামী জীবনব্যবস্থায় নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। নেতার নেতৃত্বের গুণাবলীই তার অধীনস্থদের উপর প্রতিবিম্বিত
হয়। সুতরাং যে নেতার আনুগত্য করা হবে তার নিæোক্ত গুণাবলী থাকা বাঞ্ছনীয়জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব
নেতাকে ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে হবে। ইসলামী জীবন দর্শন ও জীবন বিধান সম্পর্কে তাঁর
ব্যাপক জ্ঞান থাকতে হবে। সাথে-সাথে ইবলীসী চিন্তা প্রসূত যেসব মতবাদ দুনিয়ার মানুষকে বিভ্রান্তকরে জীবন ও
জগৎ স¤পর্কে ধারণা দেয়, মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও কর্তব্য সম্পর্কে সেই মতবাদগুলোর বক্তব্য এবং সেগুলো সমাজ
জীবনে প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে মানবগোষ্ঠী কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন- এসব কিছু সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা
থাকতে হবে।
উন্নত আমল
নেতাকে হতে হবে ইসলামের মূর্ত প্রতীক এবং উন্নত আমলের অধিকারী। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, কথাবার্তা, আচারআচরণ এবং যাবতীয় কাজ কর্মে ইসলামের সঠিক রূপ প্রতিফলিত হওয়া একান্তপ্রয়োজন।
নম্র ব্যবহার
রুক্ষ ভাষা এবং রুঢ় আচরণ মানুষকে আহত করে। রুঢ় আচরণে অভ্যস্তব্যক্তি কখনো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে
নিতে পারে না। ইসলামী নেতার পক্ষে রূঢ় আচরণ তাঁর আনুগত্যের পথে বিরাট বাঁধা। তাই নেতার আনুগত্য পেতে
হলে নম্র-ভদ্র ব্যবহারের অধিকারী হতে হবে।
সাহসিকতা
ইসলামী সমাজের নেতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না, প্রকৃত পক্ষে তাকওয়ার দাবিও তাই। যে হৃদয়ে
আল্লাহর ভয় থাকবে, সে হৃদয় অন্য কাউকে ভয় করবে না। রাসূল (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে,
দুনিয়ার সব কিছু তাকে ভয় করে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করে না দুনিয়ার সব কিছু তাকে ভয়
দেখায়।” তাই ইসলামী সমাজের নেতাকে সৎ, সাহসী ও নির্ভীক হতে হবে।
সময়ানুবর্তিতা
ইসলামী সমাজে যিনি নেতা হবেন তাঁকে সময়ানুবর্তি হতে হবে। সময় সম্পর্কে সদা সচেতন থাকতে হবে। প্রতিটি
কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করতে হবে। নেতাকে দিনের শুরুতেই প্রতিটি করণীয় কাজের জন্য তালিকা তৈরি করে
সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যদানের অধিকারী
ইসলামী সমাজের নেতাকে সুবক্তা হতে হবে। কম কথায় বেশী ভাব প্রকাশ উত্তম ভাষণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বক্তৃতা
পয়েন্ট ভিত্তিক হলে শ্রোতার পক্ষে বুঝা সহজ হয়। বক্তৃতার ভাষা সহজ হওয়া দরকার। রাসূল (সা) বলেন, “আমি
ব্যাপক অর্থবোধক অথচ সংক্ষিপ্ত ভাষণের যোগ্যতাসহ আবির্ভূত হয়েছি।” আল্লাহর রাসূল (সা) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তা।
তাঁর বক্তব্য ছিল প্রাঞ্জল ও সাবলীল।
নথিপত্র সংরক্ষণে পারদর্শিতা
ইসলামী সমাজের নেতাকে হতে হবে নথিপত্র সংরক্ষণে পারদর্শী। নথিপত্রের সঠিক নামকরণ, যথাযথভাবে
নাম্বারিংকরণ এবং ভেতরে সঠিকভাবে কাগজ পত্র সন্নিবেশকরণের যোগ্যতা তাঁর অন্য সকলের চেয়ে বেশী থাকতে
হবে। নিজে পারদর্শী না হলে অন্যদের দ্বারা এগুলো ভালভাবে করিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। তাই ইসলামী সমাজের
নেতাকে নথিপত্র সংরক্ষণে পারদর্শী হতে হবে।
হিসাব সংরক্ষণে পারদর্শিতা
ইসলামী সমাজের নেতা হবেন দক্ষ হিসাবরক্ষক। সংগঠনের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের রেকর্ড ও হিসাব সঠিকভাবে রক্ষণের
দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নেতার অতি বড় এক অযোগ্যতা প্রমাণ করে।
ইসলামী জীবনব্যবস্থায় শৃংখলার মূল উপাদান হচ্ছে আনুগত্য, যেখানে নেতার আনুগত্য নেই সেখানে শান্তি-শৃংখলা
কিছুই নেই। অতএব ইসলামের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন পরিপূর্ণ ও সফলভাবে
বাস্তবায়নের জন্য নেতার আনুগত্য অপরিহার্য।
সারকথা
ইসলামী জীবনব্যবস্থায় নেতার আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য। সে নেতা হাবশী গোলাম হোক না কেন- এজন্য রাসূল
(সা) বলেছেন “তোমরা শ্রবণ কর ও আনুগত্য কর যদিও তোমাদের উপর কোন হাবশী গোলামকে কর্মকর্তা নিয়োগ
করা হয়।” তবে খেয়াল রাখতে হবে-আনুগত্য হবে মারূফ কাজে, কারণ স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য
করা যাবে না। প্রকৃত আনুগত্য হবে স্রষ্টার ও স্রষ্টার নির্দেশের আর অন্য সব আনুগত্য হবে মূল আনুগত্য অনুযায়ী।
সত্য হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. ইসলামের দৃষ্টিতে নেতার আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক নয়।
২. ‘উলিল আমর’ হচ্ছেন-আলিম-উলামা, ফকীহ্ ও মহানবী (সা.)-এর প্রতিনিধি এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
৩. ‘যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করল সে যেন আমারই আনুগত্য করল’- উদ্বৃতিটি হযরত ইবরাহীম (আ)-এর।
৪. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়ে জালিম শাসকের আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক।
৫. ইসলামী সমাজের নেতাকে হতে হবে ইসলামের প্রতীক এবং উন্নত আমলের অধিকারী।
৬. ইসলামী সমাজের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিকে ফাসিক এবং শরীআতের অনুসারী না হলেও চলবে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. নেতার আনুগত্য সংক্রান্তআয়াতটির অনুবাদ করুন।
২. আল্লাহর বাণী منكم الأمر اولى و- এর ব্যাখ্যা করুন।
৩. ইসলামের দৃষ্টিতে নেতার আনুগত্য করার গুরুত্ব লিখুন।
৪. মুসলিম নেতৃবৃন্দ কারা? লিখুন।
৫. ইসলামে নেতৃত্বদানকারীর কতিপয় গুণাবলী বর্ণনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১.ইসলামী দর্শনে নেতার আনুগত্য করা কি বাধ্যতামূলক? ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নেতার কী কী গুণাবলী থাকা আবশ্যক? বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]