কুরআন-হাদীসের আলোকে বাজারনীতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

মহান আল্লাহ মানুষকে এমন প্রকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির
যাবতীয় প্রয়োজন এবং তা যোগাড় করা তার একার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। অন্যের নিকট থাকা জিনিস অনেক
সময় ব্যক্তির নিজের প্রয়োজন হয়। আবার নিজের কাছে এমনসব অতিরিক্ত জিনিস আছে যা অন্যের চাহিদা পূরণ
করতে পারে। ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমেই এ ধরনের পারস্পরিক চাহিদা নিবারণ করা সম্ভব। এজন্যে আল্লাহ তাআলা
ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন। তিনি বলেন-
ٱلـᡐ ذِ ينَ يُ نْ فِ قُ ونَ أ᠐ مْ وَ ال᠐ هُ مْ ᗷـِ ٱل لᡐ ᘭـْ لِ وَ ٱلنَّ هـَ ار᠒ ســــــــِ رّ ا᠍ وَ عَ ᢿ َنِ ᘭـَ ةً فَ ل᠐ هُ مْ أ᠐ جْ رُ هُ مْ عِ نـدَ رَ ᗖـِّ هِ مْ
وَ ᢻ َخَ وْ فٌ عَ ل᠐ يْ هِ مْ وَ ᢻ َهُ مْ ᘌ َحْ زَ نُ ونَ
“আল্লাহ ব্যবসায়কে করেছেন হালাল আর সুদকে করেছেন হারাম’। (সূরা আল-বাকারা : ২৭৫)
রাজারনীতি ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হতে পারে: পণ্য-সামগ্রীর সুবিধার জন্য সাধারণত নির্ধারিত
কোন স্থানে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। আমরা তাকেই বাজার বলি।
বাজার পরিচালনার ব্যাপারে একটা নিয়ম-কানুন থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় সেখানে ক্রেতার কিংবা বিক্রেতার
ক্ষতিগ্রস্তহবার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্তনা হয় সেজন্য ইসলামি অর্থনীতি বাজারকেন্দ্রিক
কিছু নীতি উপস্থাপন করেছে। সেগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি জনহিতকর বাজারনীতি বাস্তবায়িত হতে
পারে। নি¤েœজনহিতকর বাজারনীতির কতিপয় দিক উল্লেখ করা হলবাজার হবে স্বাধীন
ইসলামি অর্থনীতি বাজারের ব্যাপারে প্রথম যে মূলনীতি পেশ করে তা হল বাজার হবে স্বাধীন। বাজারে স্বাধীনভাবে
বিক্রেতা মালামাল নিয়ে আসবে এবং বিক্রি করবে আর ক্রেতা স্বাধীনভাবে ক্রয় করবে। এ ব্যাপারে কোন ধরনের
কৃত্রিম হস্তক্ষেপ চলবে না। তাই নি¤েœবর্ণিত কতগুলো কাজ ইসলামি বাজারনীতিতে হারাম।
ক. গ্রামবাসী বিক্রেতার পক্ষে শহরবাসী বিক্রেতার কাছে বিক্রয় করা ইসলামি বাজারনীতিতে অবৈধ। অর্থাৎ গ্রাম
থেকে কোন লোক পণ্যসামগ্রী নিয়ে এল শহরে তা চলতি দামে বিক্রে করার জন্য। কিন্তু শহরের ব্যবসায়ী লোক
তাকে বলল এ মাল আমার কাছে রেখে যাও, পরে আমি বেশীদামে বিক্রি করে তোমাকে মূল্য পরিশোধ করে দেব
অর্থাৎ পণ্য-সামগ্রী আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা। এ ধরনের কৃত্রিম অবস্থা সৃষ্টি করা ইসলামি অর্থনীতিতে
নিষেধ। জাহেলী যুগে এ ধরনের কেনা-বেচা হত। রাসূল (সা) তা নিষেধ করেছেন। হযরত আনাস (রা) বলেন-
نهينا ان بᙫيع حاضر لᘘاد و لو ᛿ان اخاە لا بᘭه و امه.
কোন শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রয় না করে- এ বিষয়ে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যদিও সে লোক তার
নিজের ভাই পিতা বা মাতাই হোক না কেন।
নবী করীম (সা) আরো বলেছেন ঃ
لا يᙫيع حاضر لᘘاد. دعو ا الناس يرزق الله ᗷعضهم من ᗷعض. مسلم.
কোন শহুরে লোক যেন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না করে। তোমরা লোকদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের কারোর
দ্বারা কাউকে রিযিক দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে, এ ধরনের বেচা-কেনার ফলে একদিকে মূল বিক্রেতা ন্যায্য মূল্য ও নগদ অর্থপ্রাপ্তি
থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে মূল বিক্রেতার কাছ থেকে শহরের ক্রেতারা কিনতে পারলে পণ্যটি তুলনামূলক
কমদামে পেত যা এ নিয়মে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, বাজারে পণ্য ও স্বাভাবিক পন্থায় বিনিময় প্রণালীকে নিজস্ব গতিতে চলার সুযোগ
দিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ না করা হলে স্বাভাবিক পন্থায়ই লোকজন প্রত্যেকে নিজের রিযিক লাভ
করতে সক্ষম হবে।
উপদেশ বা পরামর্শ দিতে বাধা নেই
অবশ্য গ্রাম থেকে বিক্রয়ের জন্য আসা কোন লোককে যদি কোন শহরবাসী একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
উপকারের উদ্দেশ্য ঠকবাজী থেকে মুক্তির জন্য জিনিসটির সঠিক মূল্য অবহিত করে, তাকে ভাল উপদেশ দেয়।
বাজারের পরিবেশের কাছে তাকে পরিচিত করিয়ে দেয় তবে তা বৈধ এবং উত্তম কাজ হিসেবে পরিণত হবে। রাসূল
(সা) বলেন- حةᘭالنصـــ الدين কল্যাণকামিতাই হচ্ছে দ্বীন। এ ধরনের উপদেশ দান দ্বীনের অংশ। তিনি
আরো বলেন-
اذا اسᙬنصح احد᛿م اخاە فلينصح له (احمد)
‘‘তোমাদের কেউ উপদেশ চাইলে তার ভাইকে উপদেশ দেওয়া তার কর্তব্য।’’ (আহমাদ)
দালালী জায়েয
ব্যবসায়ী কাজে দালালী করা হলে, তাতে কোন দোষ নেই। কেননা, তা একপ্রকার পথ প্রদর্শন, ক্রেতা-বিক্রেতার
মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন এবং মাধ্যম হওয়ার ব্যাপার। তার দরুন উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। উভয় পক্ষেরই নিজ
নিজ কাজে অনেক সুবিধা হয়। বর্তমানকালে আমদানী রফতানী ব্যবসায়ে এবং খুচরা বা পাইকারী ব্যবসায়ীদের
মধ্যস্থতার বড় প্রয়োজন দেখা দেয়। অতীতের যে কোন কালের বা যুগের তুলনায় একালেও এ যুগে এ প্রয়োজন
তীব্রতর। আর তাতে দালালের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
তাই দালাল যদি তার নির্দিষ্ট মজুরী নগদ গ্রহণ করে কিংবা মুনাফা থেকে হার মত কমিশন অথবা অন্য কোনভাবে
উভয় পক্ষ সম্মত হয়ে নেয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। ইমাম বুখারী লিখেছেন- ইবনে সিরীন, আতা ইবরাহীম,
হাসান প্রমুখ ফিকহবিদগণ মনে করেন, দালালির মজুরী গ্রহণে কোন দোষ নেই। ইমাম আহমদ বলেন, যদি কোন
লোক অন্য একজনকে বলে যে, এ কাপড়টা বিক্রি করে দাও। অতিরিক্ত যা পাওয়া যাবে তা তোমার তবে তা সম্পূর্ণ
জায়িয। এ ধরনের দালালী ব্যবসায় বা কমিশন এজেন্সী ধরনের কাজ সম্পূর্ণ বৈধ। রাসূল (সা) বলেন-
المسلمون عند شروطهم. ( ᗷخارى)
‘‘মুসলমান নিজেদের পারস্পরিক শর্ত মেনে চলতে বাধ্য।’’ (বুখারী)
ধোঁকাবাজী ও মুনাফাখোরী নিষিদ্ধ
বাজারে দ্রব্যমূল্যের স্বাভাবিক গতি স্থির রাখার জন্য ইসলামে ধোঁকাবাজিকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
মুনাফাখোরীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাজারের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে পণ্যকে বেশীদামে বিক্রি করার জন্য অনেকে
ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেয়। বিক্রেতারা একদল দালাল তেরী করেন- যারা সামান্য কিছু পয়সা পাবার লোভে
বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যের বুলি আওড়ায়। তাদের কিন্তু পণ্য কেনার উদ্দেশ্য থাকে
না। তাদের উদ্দেশ্য থাকে সাধারণ ক্রেতাদের বিভ্রান্তকরা। তারা যাতে মূল্য শুনে চিন্তা করে যে যেহেতু দ্রব্যটির
মূল্য এত টাকা বলা হয়েছে অথচ বিক্রেতা বিক্রয় করছে না তাতে বুঝা গেল দ্রব্যটির মূল্য আরো বেশী। তাই তারা
আরো বেশী মূল্যে ক্রয় করে। এ ধরনের কাজ ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। ইসলামি বাজারনীতিতে এটা
সম্পূর্ণরূপে হারাম।
বাজারে পণ্য পৌঁছতে বাধা প্রদান করা
বেচা-কেনাকে মুনাফাখোরী থেকে এবং দ্রব্যমূল্যকে ধোঁকাবাজি থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে নবী করীম
(সা) বাজারে পণ্য-সামগ্রী আসার পূর্বেই বাজারের বাইরে ক্রয় করতে নিষেধ করেছেন নতুবা মূল বাজারেই
পণ্যদ্রব্যের আমদানী ব্যাহত হয়ে পড়বে। আর তার ফলে সঠিক মূল্যও নির্ধারিত হতে পারবে না। কেননা সঠিক
মূল্য নির্ধারণ বাজারে পণ্যের আমদানী ও তার চাহিদা (ফবসধহফ) অনুপাতে সম্ভবপর হয়। কিন্তু উপরিউক্ত অবস্থায়
বিক্রেতা বাজারের দর-দাম কিছু জানতে পারে না। এ কারণেই নবী করীম (সা) বাজারে পণ্য পৌঁছার পর পূর্ববর্তী
ওয়াদা ভঙ্গ করার অধিকার বিক্রেতার আছে বলে ঘোষণা করেছেন।
নির্ভেজাল পণ্য-সামগ্রী বিক্রয় করা
ইসলামি বাজারনীতির আরেকটি মূলনীতি হলো বাজারে নির্ভেজাল পণ্য-সামগ্রী বিক্রি করতে হবে। ভেজাল বা
ত্রæটিযুক্ত মাল বিক্রি করলে তা ক্রেতার নিকট প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এটা মস্তবড় অন্যায় হিসেবে সাব্যস্ত
البᘭعان ᗷالخᘭار ما لم يتفرقا فان صــــدقا وᚏᗖنا بورك لهما فى بᘭعهما , و انলনবে) সা (লূরাস রােপ্যাব এ। বহে
كذᗷا
و كتما محقت بركة بᘭعهما.
“ক্রেতা-বিক্রেতার কথাবার্তা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে না, ততক্ষণে তাদের চুক্তি ভঙ্গ করার ইখতিয়ার থাকবে।
যদি তারা দুজনই সততা অবলম্বন করে ও পণ্যের দোষ-ত্রæটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের দুজনের এই ক্রয়বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা দুজন মিথ্যার আশ্রয় নেয় ও দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের এই ক্রয়বিক্রয়ের বরকত মূল্যহীন হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেছেন-
لاᘌحـل لاحـد يᙫيع بᘭعـا الا بين ما فᘭه و لا ᘌحل لمن ᘌعلم ذلك الا بᚏنه.
(حاᝏم , بيهقى)
‘‘কোন পণ্য বিক্রয়ে পণ্যের দোষত্রæটি বলে দেওয়া না হলে হালাল হবে না কারো জন্যেই। আর যে তা জানে, কিন্তু
জানা সত্তে¡ও যদি না বলে তবু তা তার জন্যে হালাল নয়।’’ (হাকিম ও বায়হাকী)
রাসূলে করীম (সা) বাজারে গিয়ে দেখলেন, এক ব্যক্তি শস্য বিক্রয় করছে। তা তাঁর খুব পছন্দ হল। পরে তিনি
স্তুপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। দেখলেন হাত ভিজে গেল। তখন তিনি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ হে শস্য
ব্যবসায়ী, এসব কি ? সে বলল ঃ বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। তখন নবী করীম (সা) বললেন ঃ
فهلا جعلته فوق الطعام حتى يراە الناس. من غشنا فلᛳس منا. (مسلم)
‘‘তাহলে তুমি এ ভেজা শস্যগুলো স্তুপের উপরিভাগে রাখলে না কেন, তাহলে ক্রেতরা তা দেখতে পেত ? --- এ
তো ধোঁকা। আর যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজি করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (মুসলিম)
অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে নবী করীম (সা) অপর এক খাদ্য বিক্রেতার কাছে গেলেন। সে খুব ভাল পণ্য নিয়ে
বসেছিল। তিনি তার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। দেখলেন খুব নিকৃষ্ট মানের খাদ্য নীচে রয়েছে। তখন তিনি
তাকে বললেন ঃ
بع هذا على حدة و هذا على حدة. من غشنا فلᛳس منا. احمد.
‘‘এ খারাপ আলাদা বিক্রয় কর আর এটা স্বতন্ত্রভাবে বিক্রি কর। জেনে রেখ। যে ব্যক্তি আমাদের সাথে ধোঁকাবাজি
করবে সে আমার দলের কেউ নয়।’’
উত্তমযুগের মুসলমানরা এ নীতি অনুসরণ করে চলতেন। তারা পণ্য বিক্রির সময় দোষত্রæটি স্পষ্ট করে বলে দিতেন।
ক্রয়-বিক্রয়ে সদা সত্য কথা বলতেন। মানুষের কল্যাণ চাইতেন, ধোঁকাবাজি করতেন না।
প্রখ্যাত ফিকহবিদ ইবনে সিরীন একটি ছাগী বিক্রয় করলেন। ক্রেতাকে তিনি বললেন, ছাগীটির দোষ আছে তা
তোমাকে বলে আমি দায়িত্ব মুক্ত হতে চাই। ওটি ঘাস পা দিয়ে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে দেয়।
পণ্য মজুদ করা হারাম
বাজারের গতি স্বাভাবিক রাখতে এবং দ্রব্যমূল্য জনগণের পক্ষে রাখতে ইসলাম অতিরিক্ত লাভের আশায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যকে গুদামজাত করে রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। রাসূল (সা) বলেন
من احتكر الطعام ارᗖعين لᘭلة فقد برى من الله و برئ الله منه.
‘‘যে লোক চল্লিশ রাত্রি কাল খাদ্যপণ্য মজুদ করে রাখল, সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল এবং আল্লাহও তার
থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন।’’
৪. একজনের ক্রেতাকে অন্য বিক্রেতা প্ররোচিত করা হারাম। অর্থাৎ একজন বিক্রেতা যখন কোন ক্রেতার নিকট
বিক্রি সম্পর্কে আলোচনা করে তখন দেখা যায় অন্য কোন বিক্রেতা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে উক্ত ক্রেতাকে বাগিয়ে
নেয়। ইসলামি বাজারনীতিতে এটা হারাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসূল (সা) এমনটি করতে নিষেধ করে বলেন-
لا يᙫيع احد᛿م على بيع اخᘭه.
‘‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের উপর বিক্রি না করে।’’
৫. ক্রয়-বিক্রয়ে সাক্ষ্য রাখা বা লিখে রাখা একটি সুন্নাত নীতি। বাজারে কোন দ্রব্য ক্রয় বা বিক্রিয় হলে তার জন্য
সাক্ষ্য রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। বর্তমানে প্রচলিত ক্যাশম্যামোয় স্বাক্ষর প্রতিনিধি
হিসেবে বলা যায়। এ নীতিটি সুন্নাত। এর ফলে অনেক ঝগড়া-বিবাধ ও ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচা সম্ভব হয়। মহান
আল্লাহ বলেন-
وَ أ᠐ شْ هِ دُ وۤ ا᠔ إِ ذَ ا تَ ᘘ َاᘌ َعْ تُ مْ وَ ᢻ َᘌ ُضَ ቯرَّ ᛿᠐ اتِبٌ وَ ᢻ َشَ هِ ᘭدٌ .
‘‘তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচা-কেনা কর তখন সাক্ষ রাখবে। লেখক এবং সাক্ষী ক্ষতিগ্রস্তনা হয় সেদিকে
লক্ষ্য রাখবে।’’ (সূরা আল-বাকারা : ২৮২)
দ্রব্যমূল্য সাধারণ গতিতে চলা
ইসলামি বাজারনীতির অন্যতম হচ্ছে স্বাভাবিক গতিতে বাজারে পণ্যের যোগান হবে আবার স্বাভাবিক গতিতে বিক্রি
হবে। চাহিদা কম বেশী হবার উপর দ্রব্যমূল্যের গতি ওঠানামা করবে। সাধারণত মূল্য নির্ধারণ করা রাষ্ট্রের জন্য
উচিৎ নয়। একদা রাসূল (সা)-এর সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে জনতা এসে রাসূল (সা)-এর কাছে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ
ان الله هو المســـــعر القاᗷض الᘘاســـــط الرازق و انى لا رجو ان القى الله وলনবেল) সা (লূরাস তখন। জানাল নদবআে তদিে রকে
لᛳس احد منᜓم ᘌطالبنى ᗷمظلمة فى دم ولا مال. احمد , ابوداؤد , ترمذى
, ابن ماجه.
প্রকৃতপক্ষে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণকারী হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তিনিই মূল্য বৃদ্ধি করেন, তিনি সস্তা করেন।
রিযিকদাতা তিনিই। আমি তো আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চাই এ অবস্থায় যে, কোনরূপ জুলম, রক্তপাত বা
ধন-মালের অপহরণ ইত্যাদির দিক দিয়ে আমার উপর দাবিদার কেউ থাকবে না।
নবী করীম (স)এ হাদীসের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর কোনরূপ প্রয়োজন ছাড়াই হস্তক্ষেপ বা
নিয়ন্ত্রণ আরোপ জুলম এবং সেই জুলম থেকে মুক্ত ও পবিত্র থেকেই তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চান।
অবশ্য, কোন কৃত্রিম পরিস্থিতির কারণে যেমন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করণের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে
এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী যদি মুনাফা অর্জন করার প্রতি আকৃষ্ট হয় আর সাধারণ মানুষ এর ফলে দুর্ভোগের
শিকার হয় এমতাবস্থায় ইসলামি রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর হস্তক্ষেপ করবে এবং দ্রব্যমূল্য
নির্ধারণ করে দেবে। এর ফলে অধিক মূল্য গ্রহণকারীর শোষণ থেকে জনগণকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
সকল অবস্থায়ই দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ নিষিদ্ধ নয়। ইসলামি অর্থনীতিবিদগণের মতে মূল্য নির্ধারণ দূ’ রকমের হয়। এক
প্রকারের মূল্য নির্ধারণে লোকদের উপর জুলম হয় এবং তা হারাম। আর এক অবস্থায় মূল্য নির্ধারণ সুবিচার ও
ন্যায়পরায়নতার দাবি তা অবশ্যই জায়িয এবং জরুরী।
অতএব অন্যায়ভাবে লোকদের উপর যদি এমন মূল্য চাপিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা রাযী নয় এবং মুবাহ জিনিস
থেকে জনগণকে বিরত রাখা হয়, তাহলে তা হবে হারাম। পক্ষান্তরে লোকদের মধ্যে সুবিচার ও ইনসাফ কার্যকর
করার উদ্দেশ্যে যদি মূল্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়- প্রচলিত দামে বিক্রয় করতে বাধ্য করাহয় কিংবা প্রচলিত বিনিময় মূল্যের অধিক গ্রহণ থেকে তাদের বিরত রাখা হয়, তাহলে তা করা শুধু জায়িযই নয়,
ওয়াজিবও বটে।
প্রথম অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমোক্ত হাদীসটি উদ্ধৃত। কাজেই লোকেরা যখন প্রচলিত নিয়মে কোনরূপ জুলম ও
বাড়াবাড়ি ব্যতীতই দ্রব্য বিক্রয় করে ও পণ্যদ্রব্যের স্বল্পতার বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে
গোটা ব্যাপারটাই আল্লাহর উপর সোপর্দ করা কর্তব্য। এরূপ অবস্থায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করতে
বাধ্য করা অকারণ বাড়াবাড়ি বৈ কিছু নয়।
আর দ্বিতীয় অবস্থায়-লোকদের প্রয়োজন থাকা সত্তে¡ও ব্যবসায়ীরা যদি পণ্যদ্রব্য বিক্রয় না করে অথবা চলতি মূল্যের
অধিক দাবি করে, এরূপ অবস্থায় প্রচলিত দামে দ্রব্য বিক্রয় করাও ওয়াজিব। এ সময় দ্রব্য মূল্য নির্ধারিত করে
দেয়ার অর্থ, প্রচলিত দাম লোকদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেয়া। এরূপ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের অর্থ, আল্লাহ
তাআলা যে ন্যায়বিচারকে জরুরী ও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, তা মেনে চলতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করা।
জুমুআর সময় কেনা-বেচা হারাম
ইসলামি বাজারনীতিতে সপ্তাহের যে কোন দিন যেকোন সময় ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে তবে জুমুআর সালাত চলাকালীন
সময় অর্থাৎ জুমুআর খুৎবা শুরুর প্রথমে প্রদত্ত আযানের পর থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্তবাজার কার্যক্রম বন্ধ
রাখা অবশ্য কর্তব্য। খোলা রাখা হারাম। মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ-
ᘌـٰ أ᠐ يُّ هـَ ا ٱلـᡐ ذِ ينَ آمَ نُ وۤ ا᠔ إِ ذَ ا نُ ودِ ىَ لِ لصــــــــَّ ᢿ َةِ مِ ن يَ وْ مِ ٱل᠔ جُ مُ عـَ ةِ فـَ ٱســــــــْ عَ وْ ا᠔ إِ ل᠐ ىٰ ذِ ك᠔ ر᠒ ٱللᡐ هِ
و ذَ رُ وا᠔ ٱل᠔ بَ يْ عَ .
‘‘হে মুমিনগণ ! যখন জুমুআর দিন যখন সালাতের জন্য আযান আহবান করা হয় তখনই তোমরা আল্লাহর স্মরণে
ধাবিত হও এবং বিক্রয় ত্যাগ করো।’’ (সূরা আল-জুমু’আ : ৯)
এভাবে ইসলামি অর্থনীতি জনহিতকর ও ভারসাম্যপূর্ণ বাজারনীতি গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য পেশ করেছে, যা আমাদের সুন্দর জীবন গড়তে সহায়তা করে।
সঠিক উত্তরে টিক () দিন
১. গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রি করা বৈধ নয় কেন ?
ক. বিক্রেতা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় খ. মূল বিক্রেতা ও সাধারণ ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্তহয়
গ. শহরবাসী বিক্রেতা লাভবান হয় ঘ. সাধারণ ক্রেতারা উপকৃত হয়।
২. পণ্যের দোষ-ত্রæটি থাকলে বিক্রেতার কর্তব্য কী ?
ক. দোষ গোপন করা খ. দোষ ক্রেতার নিকট প্রকাশ করা
গ. অন্য লোকের মাধ্যমে দোষ বলে দেওয়া ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
৩. অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পণ্য মজুদ করা।
ক. হারাম খ. জায়িয
গ. মোবাহ ঘ. মাকরূহ।
৪. কোন সময় কেনা-বেচা জায়েয নয়ক. আযানের সময় খ. সালাতের সময়
গ. জুমুআর সালাতের সময় ঘ. ঈদের দিন।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলাম স্বাধীন বাজারনীতি পেশ করেছে- আলোচনা করুন।
২. কোন ধরনের দালালী জায়েয আর কোন ধরনের দালালী জায়েয নয়? লিখুন।
৩. ভেজালদ্রব্য বিক্রয়ের পরিণতি কী ? লিখুন।
৪. দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করার বিধান কী ? বর্ণনা করুন।
৫. কোন সময় কেনা-বেচা বৈধ নয় ? লিখুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. কুরআন-হাদীসের আলোকে বাজারনীতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]