ইসলামি অর্থব্যবস্থায় মুদ্রা সংক্রান্তনীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন। লেনদেনে ক্রেতা-বিক্রেতার অধিকার

মুদ্রা প্রচলনের গোড়ার কথা
আমরা সবাই কম-বেশী জানি যে, এক সময় পৃথিবীর সব দেশে পৃথিবীর পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায়িক
লেন-দেন হত। মানুষ ধীরে ধীরে আরো বেশী সভ্য হতে লাগল। তারা উন্নতর পর্যায়ে পদার্পন করল। তারা অনুভব
করতে লাগল যে, এমন এক ধরনের মাধ্যমের ব্যবহার করা প্রয়োজন যার বিনিময়ে পণ্য ক্রয় কিংবা বিক্রয় করা
যায়।
ইসলামের প্রাথমিক যুগও অনেকটা পণ্যদ্রব্যের পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায় চলত। পরবর্তীতে পণ্য
বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ বা রৌপ্য নির্মিত মুদ্রার সাধারণ ব্যবহার শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তাম্র, দস্তা ও কাগজের
মুদ্রার প্রচলন ঘটে। কাগজের মুদ্রা বহন করতে সহজ বিধায় এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা গোটা পৃথিবী জুড়ে বিদ্যমান।
মুদ্রার পরিচয়
মুদ্রার পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে অধ্যাপক জিভেন্স বলেন- “মুদ্রা হচ্ছে ধাতু নির্মিত এমন কতগুলো টুকরা যার
ওজন এবং অকৃত্তিমতা তার উপর অঙ্কিত নকশা দ্বারাই প্রমাণিত হয়।
এ সংজ্ঞাটি যখন দেয়া হয় তখন হয়তোবা ধাতু নির্মিত মুদ্রা ব্যতীত কোন মুদ্রার প্রচলন ছিল না। বর্তমান সময়ে
প্রচলিত বিভিন্ন মুদ্রার সাথে সংগতি রেখে বলা যায়মুদ্রা হচ্ছে ধাতু বা কাগজ নির্মিত এমন কতগুলো টুকরা যার ওজন ও অকৃত্তিমতা তার উপর অঙ্কিত নকশা দ্বারাই
প্রমাণিত হয়।
بيع النقد ᗷالنقد ج ســـا ᗷالج س او ᗷغير ج س اى بيع الذهب ᗷالذهب اوবুঝায় তবেল বিনিময় ্রাদমু পরিভাষায় নীতিরর্থঅ ইসলামি
الفضة ᗷالفضة مصوغا او نقدا.
একই জাতীয় মুদ্রার বিনিময়ে কিংবা কোন মুদ্রাকে ভিন্ন কোন মুদ্রার বিনিময়ে নগদ ও সমপরিমাণ মুদ্রায় বিক্রয়
করাকে মুদ্রা বিনিময় বুঝায়। যেমন স্বর্ণের সাথে স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যের সাথে রৌপ্য কিংবা স্বর্ণের সাথে রৌপ্যের বিনিময়
করা।
পণ্যের পারস্পরিক বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় হলে অনেক ঝামেলাপূর্ণ কাজ। মুদ্রা বিনিময়ের ফলে এ কাজ অনেক সহজ
হয়। মানুষের জীবন যাত্রা সহজ করার উদ্দেশ্যে মুদ্রা বিনিময় শুরু হয়।
ইসলামি অর্থনীতিতে মুদ্রার গুরুত্ব
নবী করীম (সা)-এর অর্থনৈতিক কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি পণ্যদ্রব্যের পারস্পরিক
বিনিময়ের পরিবর্তে মুদ্রার মাধ্যমে বিনিময় কার্য সম্পাদনের প্রথা চালু করার পক্ষপাতী ছিলেন। ইসলামি অর্থনীতি
এবং শরীয়াতী বিধানে যাকাত, দেন-মহর প্রভৃতি যা কিছুর আদেশ করা হয়েছে, তা পণ্যের পরিবর্তে মুদ্রা দ্বারা
আদায় করা হয়। খারাজ, জিজিয়া ও শুল্ক ইত্যাদিও মুদ্রায় আদায় করা ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। এতদ্ব্যতীত মজুরী,
পারস্পরিক ব্যবসায় কিংবা একজনের মূলধনে অপরের ব্যবসায় পরিচালনাও এরই সাহায্যে সম্ভব। ইসলামি
অর্থনীতিতে মুদ্রার গুরুত্ব এ থেকে অনুধাবন করা যায়। উল্লেখ্য, এই মুদ্রা প্রস্তুত করা, এর মূল্য নির্ধারণ এবং
পাঠ ঃ ্রয়োজন অনুযায়ী এর প্রবর্তন করার অধিকার একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্রেরই রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সনদ ব্যতীত কোন মুদ্রাই
জনগণের মধ্যে চালু এবং পণ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না।
উপরন্তু প্রয়োজন অনুভূত হলে ধাতব মুদ্রার পরিবর্তে কাগজের নোটও ব্যবহার করা যেতে পারে। হযরত উমর
ফারূক (রা) প্রয়োজন দৃষ্টে চর্মনির্মিত নোট ব্যবহার করেছিলেন।
ইসলামের প্রথম অধ্যায়ে নোটের পরিবর্তে আর একটি জিনিস ব্যবহার করা হত। কোন ব্যক্তি বহুদূর পথে
ভ্রমণোদ্দেশ্যে যাত্রা করলে সে স্বর্ণ-রৌপ্যের ন্যায় ভারী মুদ্রা সঙ্গে না নিয়ে তা হতে অত্যধিক মূল্যে হীরা-জহরত
ক্রয় করে নিয়ে যেত এবং লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে তা বিক্রয় করে সে দেশে প্রচলিত নগদ মুদ্রা লাভ করত।
বর্তমান কালে মানুষ ব্যাংকের নোট বা চেক নিয়ে অনুরূপ সুবিধা লাভ করে থাকে।
মুদ্রা বিনিময় নীতি
মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে নি¤œবর্ণিত ৪টি শর্ত কার্যকর করতে হয়।
১. মুদ্রা লেন-দেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মাঝে বিচ্ছিন্ন হবার পূর্বে তা উভয়ের গ্রহণ করতে হবে। ক্রয়বিক্রয়ে সম্মতির পর যদি লেন-দেন না করে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তা কার্যকর করা যাবে না। রাসূল
(সা) বলেছেন-
الذهب ᗷالذهب ᗷمتل ᗷمتد ᘌدا بᘭد والفضة ᗷالفضة مثلا ᗷمثل ᘌدا بᘭد.
স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ লেন-দেনের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ হবে এবং নগদ হতে হবে এমনিভাবে রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য
আদান-প্রদানের বেলায় সমপরিমাণ হতে হবে এবং নগদ হতে হবে।
২. মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে এক জাতীয় মুদ্রা হলে তা অবশ্যই সমপরিমাণ হতে হবে। কম-বেশ করা যাবে না। তাই
একভরি স্বর্ণের বিনিময়ে একভরি স্বর্ণের বিনিময় হতে হবে। বেশী বা কম হতে পারবে না।
এক্ষেত্রে পরিমাণটাই মূল্য হিসেবে ধর্তব্য গুণ বিবেচ্য বিষয় নয়। তাই নতুন ১০০ টাকার নোটের বিনিময় পুরাতন
১০০ টাকা লেন-দেন বৈধ। অতিরিক্ত কোন টাকা দেয়া যাবে না।
বর্তমান যুগে বিভিন্ন মার্কেটে সচল ছেড়া টাকা কিংবা পুরাতন টাকার বিনিময়ে নতুন টাকার লেন-দেন করার প্রচলন
রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন টাকার মূল্যমানের চেয়ে পুরাতন টাকা বেশী দিয়ে লেন-দেন হয়। যেমন ছেড়া ১০৫ টাকার
বিনিময়ে নতুন ১০০ টাকার লেন-দেন করা।
বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী এ ধরনের মুদ্রা বিনিময় বৈধ নয়। তবে অতিরিক্ত টাকা যদি বিনিময়কারীর আনুষঙ্গিক খরচ ও
পারিশ্রমিক বাবদ হয় তবে তা বৈধ হবে। তাই বলা যায়, ব্যাংকের জন্য এ ধরনের লেন-দেন বৈধ হবে না কিন্তু
সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যক্তি / কোম্পানীর জন্য বৈধ হবে।
সমপরিমাণ হওয়ার প্রমাণ হচ্ছে রাসূল (সা)-এর বাণী- مثلᗷ مثلا الذهبᗷ الذهب^ে̄ র্ণর বিনিময়ে
স্বর্ণের লেন-দেন সমপরিমাণ হতে হবে।
পুরাতন ও নতুন মুদ্রার মান সমান হবার ব্যাপারে ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি হচ্ছেسواء رديئها و دهاᘭج মুদ্রার ভাল ও মন্দ উভয়ের মান সমান।
৩. মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্নহওয়ার পর শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করা কিংবা ফেরৎদানের বা ফেরৎ
নেয়ার এখতিয়ার থাকবে না। কারণ শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করা বা ফেরৎ দানের ইখতিয়ার থাকাকালে ক্রয়কৃত দ্রব্যে
মালিকানা সাব্যস্তহয় না।
অবশ্য ত্রæটিজনিত কারণে ফেরৎ দেয়ার ইখতিয়ার থাকতে পারে। মুদ্রা দেখেগ্রহণ করা না করার ইখতিয়ার থাকতে
দোষ নেই। কারণ এ ধরনের ইখতিয়ারের মালিকানা সাব্যস্তহয়।
৪. বাকীতে মুদ্রা বিনিময় করা যাবে না। কারণ বিক্রিত মুদ্রাও ক্রয়কৃত মুদ্রা বিক্রয় করার সময় ক্রেতা-বিক্রেতার
মধ্যে পার্থক্য হওয়ার পূর্বেই গ্রহণ করা জরুরী। অন্যথায় এতে সুদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে যদি বাকীতে মুদ্রা বিনিময়ের চুক্তি পাকাপোক্ত হয় এবং ব্যবসায় সম্পন্নহবার সময়ই সিদ্ধান্তপরিবর্তন করে
নগদ আদান-প্রদান করে তবে তা বৈধ হবে।
অর্থনীতিতে স্বর্ণ ও রৌপ্যই হচ্ছে প্রত্যেক দেশের মুদ্রার মাপকাঠি। যে অর্থ যে কোন দেশের মুদ্রার সাথেই স্বর্ণ বা
রৌপ্যের একটা নিকট সম্পর্ক রয়েছে। তবু কাগজের মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার বিনিময় বৈধ, যদিও কোন
কোন ইসলামি আইনবিদ একে না জায়িয বলেছেন।
কাগুজে মুদ্রার সাথে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার বিনিময় জায়িয হওয়ার ব্যপারে প্রমাণ হচ্ছে রাসূল (সা)-এর বাণী-
اذا اختلف الج سان فبᘭعوا كᘭف شᚊتم.
যখন ভিন্ন জাতীয় মুদ্রার মাঝে লেন-দেন হয় তখন যেমন ইচ্ছা ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ। এতে সুদ হওয়ার সম্ভাবনা
নেই।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময়নীতি
বর্তমানে ব্যবসায়ী পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার পারস্পরিক বিনিময় চলছে। যখন বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়,
তখন তারা মুদ্রা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে মুদ্রা গ্রহণ করে এবং সে জন্য তাদেরকে বাট্টা প্রদান করে।
কিন্তু ইসলামি অর্থনীতি এ ধরনের বিনিময় প্রথাকে অসংগত ঘোষণা করেছে এবং এরূপ বিনিময়ের মাধ্যমে বাট্টা
বাবদ যা কিছু নেওয়া হয়, তাকে সুদ বলে অভিহিত করেছে। কেবল ক্রেডিট এক্সচেঞ্জ-ই সুদ হয় না, নগদ আদানপ্রদানের সময়ও যা কিছু বাট্টা দেয়া-নেয়া হয় তাও সুদ।
নবী করীম (সা)-এর বাণী হতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, এক দেশের মুদ্রা মূল্য যদি অন্যান্য দেশের মুদ্রা-মূল্যের
সমান হয়, তবে এ উভয় দেশের মুদ্রার পারস্পরিক বিনিময় সমান পরিমাণে নগদ আদান-প্রদানেই হওয়া বাঞ্ছনীয়।
নবী করীম (সা) বলেছেন-
لا تᘭᙫعوا الدينار ᗷالدينارᗫن ولا الدرهم ᗷالدرهمين.
“একটি স্বর্ণ মুদ্রাকে দু’টি স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে এবং একটি ধাতব মুদ্রাকে দু’টি ধাতব মুদ্রার বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয়
করবে না।”
অন্য একটি হাদীসে আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময়-হার স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে এ ভাবে ঃ
الدينار ᗷالدينار والدرهم ᗷالدرهم لا فضل بᚏنهما.
স্বর্ণ-মুদ্রা স্বর্ণ-মুদ্রার সাথে এবং ধাতব মুদ্রা ধাতব মুদ্রার সাথে বিনিময় করা যেতে পারে ; কিন্তু তাতে কোনরূপ কম-
বেশী করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা-বিনিময়ের বর্তমান পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শী অর্থনীতিবিদগণই উল্লিখিত হাদীস দু’টির প্রকৃত
তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেন। মুদ্রা বর্তমানে এক দেশের মুদ্রার বিনিময়ে অপর দেশের মুদ্রা গ্রহণ করার জন্য
বাট্টা দিতে হয়। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা বাট্টা দেওয়ার বৈধ মনে করে না। ইসলামি অর্থনীতি সমগ্র দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক
মুদ্রার প্রচলন করার পক্ষপাতী। বস্তুত বর্তমান আন্তর্জাতিক মুদ্রা-বিনিময়ের সমস্যা সমাধানের জন্য ইসলামি বিধান
অপেক্ষা দ্বিতীয় কোন উত্তম পন্থা নেই। বিনিময় সমস্যা ও বিনিময়-গোলক ধাঁধার দরুন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়বাণিজ্য বর্তমান সময় অত্যন্তজটিল হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্বনবীর এই চির সত্য বাণীর ভিত্তিতে দুনিয়ার
সকল রাষ্ট্র যদি নিজ নিজ স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার মান ওজন সমান করে নিত এবং বাট্টা দেয়া-নেয়ার প্রথা চিরতরে বন্ধ
করে দিত, তবে বিশ্বের মানবসমাজ নানাবিধ অসুবিধা হতে রক্ষা পেত, ব্যবসায়-বাণিজ্য অবাধ হত ; প্রাচুর্য ও
দারিদ্রের সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব হত। অনুরূপভাবে একটি বিশ্ব-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথও অনেকখানি উন্মুক্ত ও সুগম
হত।
প্রতিশ্রæতি-পত্র
নগদ টাকার পরিবর্তে ক্রেডিট নোটের (প্রতিশ্রæতি পত্রের) মাধ্যমেও অনেক সময় পণ্য দ্রব্যের বিনিময় কিংবা শ্রমের
মজুরীর আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে। বর্তমান যুগে যখন ক্রেতা এক স্থানে এবং বিক্রেতা বহু দূরবর্তী অন্য এক
দেশে থেকেও পারস্পরিক ক্রয়-বিক্রয় করছে এবং ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাচ্ছে তখন এর গুরুত্ব
অনস্বীকার্য।
ক্রেডিটের সংজ্ঞা প্রদান করে অধ্যাপক লক বলেন- এক সীমাবদ্ধ সময়ে অর্থ আদায় করার আশাই হচ্ছে ক্রেডিটের
মূল কথা। ভবিষ্যতে টাকা আদায় করার প্রতিশ্রæতিতে হুন্ডি, চেক, সরকারী প্রমিসরী নোট, ব্যাংকের জারী করা
নোট এবং পোষ্টাল অর্ডার ও মানি অর্ডার ইত্যাদিই ক্রেডিটের বিভিন্ন রূপ। ডঃ থামস-এর কথায় ক্রেডিট নোট মূলত
নগদ টাকারই বিকল্প মাত্র। এর বৈশিষ্ট্য এই যে, এর সাহায্যে ব্যাপকভাবে বিনিময়কার্য সম্পন্ন করা সহজ এবং ঋণআদায় করায়ও প্রভূত সুবিধা হয়ে থাকে।
প্রমিসরি নোট ইস্যু করার প্রথা ইসলামের প্রথম যুগে প্রচলিত ছিল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা) মক্কা নগরে
ইরাকগামী লোকদের নিকট হতে টাকা গ্রহণ করতেন এবং সে সম্পর্কে তাঁর ভ্রাতা ইরাকের গভর্ণর মুদআর বিন
জুবাইর (রা)-কে লিখিত পাঠাতেন, লোকেরা তাঁর নিকট হতে এ টাকা আদায় করে নিত।
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা)-এক শহরে ব্যবসায়ীদেরকে পণ্য দিতেন এবং অন্য এক শহরে তার মূল্য গ্রহণ
করতেন। হযরত ইমাম হাসান (রা) হিজাজে লোকদের নিকট হতে টাকা গ্রহণ করতেন এবং ইরাকে তা আদায়
করতেন; কিংবা ইরাকে টাকা গ্রহণ করতেন এবং হিজাজে তা ফেরত দিতেন।
মোটকথা, হুন্ডীর মারফত উল্লিখিতরূপে টাকার আদান-প্রদান করা ইসলামি অর্থনীতির দৃষ্টিতে বৈধ ; তবে শর্ত
হচ্ছে এটা একই প্রশাসন স্বাধীন রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে হতে হবে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে হুন্ডি ব্যবসায় হলে
দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে, তখন তা চোরা চালানীর পর্যায় গণ্য করা হয় আর ইসলামে তা নিষিদ্ধ। হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-কে হুন্ডি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন ঃ এতে কোন দোষ নেই। হযরত
আলী (রা)-এর মতও এটাই ছিল।
ফকীহ ইবনে সিরীন সম্পর্কে বলা হয়েছে -
انه ᛿ان لا يرى ᗷالسفجات ᗷأسا اذا ᛿ان على الوجه المعروف.
হুন্ডি-ব্যবহারে তিনি কোনরূপ দোষ মনে করতেন না। অবশ্য যদি তা প্রচলিত নির্দোষ নিয়মে ব্যবহার করা হয়।
হযরত আলী (রা) বলেছেন-
لا ᗷأس ان ᘌعطى المال ᗷالمدينة و ᘌاخذ ᗷافᗫᖁقة. مصنف ابن ابى شᘘᚏة.
মদীনায় পণ্য দিয়ে আফ্রিকায় তা (বা এর মূল) গ্রহণ করায় কোনরূপ দোষ নেই।
বস্তুত এ কাজে কোনরূপ সুদ না নিয়ে কমিশন বা খরচ বাবদ কিছু গ্রহণ করলে তা না জায়িয হওয়ার কোন কারণ
নেই। ব্যাংক, পোষ্ট অফিস প্রভৃতি সরকারী সিকিউরিটি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের মারফতে এক শহর হতে অন্য শহরে
পণ্য-দ্রব্য কিংবা নগদ টাকা স্থানান্তর করা এবং প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক মজুরী (ঊংঃধনষরংযসবহঃ
ঊীঢ়বহফরঃঁৎব) বাবদ নির্দিষ্ট হারে কমিশন নেয়া কোনরূপেই অসঙ্গত হবে ন া। অবশ্য তাতে সুদের প্রথা থাকলে
কিংবা এক দেশ হতে অন্য দেশে প্রেরণ করার জন্য বাট্টা গ্রহণ করলে তা কোন মতেই জায়িয হবে না।
হাওয়ালা (ঘড়াধঃরড়হ)
হাওয়ালার বিষয়টি একটি উদাহরণের সাহায্যে এখানে উল্লেখ করা হল। যেমন ধরুন-‘ক’ টাকা পাওনা আছে ‘খ’এর
নিকট কিন্তু ‘ক’ নিজে ‘গ’এর নিকট ঋণী। এখন এই তিনজনই পরস্পর মিলে সিদ্ধান্তকরল যে, ‘গ’ ‘ক’এর নিকট
এবং ‘ক’ খ‘খ’এর নিকট হতে টাকা আদায় না করে ‘গ’ ‘খ’এর নিকট হতে টাকা আদায় করে নিবে। অর্থনীতির
পরিভাষায় হাওয়ালাহ বলা হয়।
একাধিক লোকের মধ্যে একই প্রকার বা একই পরিমাণের ঋণ-আদায় করার এটা অতি সহজ পন্থা, সে ন্দহ নেই।
এটা হুন্ডির একটি স্বতন্ত্ররূপ। জার্মান প্রাচ্যবিদ ফনক্রেমার বলেন- হাওয়ালা সম্পর্কে ইসলামি শাস্ত্রবিদগণ যে গভীর
আলোচনা করেছেন, তা মুসলমানদের উন্নত ব্যবসায়ী কার্যক্রমের পরিচয় দেয়। ইসলামি অর্থনীতিতে ঋণ-আদায়
করার ব্যাপারে এরূপ হাওয়ালা সম্পূর্ণরূপে সংগত।
বিশেষত আন্তর্জাতিক ব্যবসায়-সংক্রান্তঋণ-আদায় করার ব্যাপারে হাওয়ালার (ঘড়াধঃরড়হ) বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
এটা ফরেন বিল অব একচেঞ্জের স্থলাভিষিক্ত বা বিকল্প হতে পারে এবং শুধু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেই নয়, বহির্বাণিজ্যেও
এটা দ্বারা অনেক সুবিধা ও পারস্পরিক ঋণ আদায় অনেকখানি সহজ হয়।
চেক
প্রমিসরী নোট হিসেবে বর্তমান সময় চেক-এর যথেষ্ট প্রচলন হয়েছে। চেক মূলত ব্যাংক-মালিকদের নামে একটি
নির্দেশনামা মাত্র, তাতে লিখিত পরিমাণ টাকা চাহিবা-মাত্রই চেক-বাহককে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ থাকে।
কাজেই নগদ আদায় করার পরিবর্তে টাকা আদায়ের নির্দেশনামা বা চেকের সাহায্যে লেন-দেন করা বৈধ নয়।
ইসলামি অর্থনীতির প্রাথমিক যুগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে, সাহাবায়ে কিরামের যুগেই চেক-এর
ব্যবহার শুরু হয়েছিল । বস্তুত দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক (রা)-এর সময়ই এর ব্যাপক প্রচলন হয়।
মোটকথা চেক ব্যবহারে ইসলামি অর্থনীতিতে কোনরূপ আপত্তি নেই। এর সাহায্যে ধন-বিনিময় কার্য বিপুল পরিমাণে সম্পন্ন হওয়া খুবই সহজ হয়।
মুদ্রা জাল প্রতিরোধ
ইসলামে মুদ্রা জাল করা কঠিন অপরাধ বলে ঘোষিত হয়েছে। এটা সমাজ-শৃঙ্খলা ও সামাজিক অর্থনৈতিক বিনাশ
এবং রাষ্ট্র-ব্যবস্থা বানচাল করার চেষ্টার সমপর্যায়ভুক্ত অপরাধ। এ কারণে যে কোন প্রকার মুদ্রা চূর্ণ বা নষ্ট করা ও
নিষিদ্ধ করা হয়েছে-
نهى رسول الله صلى الله علᘭه وسلم ان تكسر سكة المسلمين.
মুসলমানের জাতীয় মুদ্রা জাল (বা নষ্ট) করতে নবী করীম (সা) নিষেধ করেছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর-প্রশ্ন
১. মুদ্রা আবিস্কারের পূর্বে মানুষ কীভাবে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতো ?
ক. স্বর্ণের মাধ্যমে খ. রৌপ্যের মাধ্যমে
গ. দিরহামের মাধ্যমে ঘ. পণ্যের পারস্পরিক বিনিময়ে।
২. কোন সংস্থা মুদ্রা প্রচলনের একমাত্র অধিকারী?
ক. রাষ্ট্র খ. অর্থ মন্ত্রণালয়
গ. ব্যাংক ঘ. জীবনবীমা।
৩.মুদ্রা বিনিময় নীতির মধ্যে পড়ে
ক. বাড়াবাড়ি না করা খ. বাকীতে হস্তান্তর করা
গ. কম-বেশী না করা ঘ. টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা।
৪. ইসলামের ইতিহাসে কোন খলীফার আমলে প্রমিসরি নোট প্রথা চালু করেন?
ক. হযরত উমর (রা) খ. হযরত উসমান (রা)
গ. আব্দুল্লাহ ইবন জুবাইর (রা) ঘ. হযরত যিয়াদ ইবন আব্দুল্লাহ (রা)।
৫. একই রাষ্ট্রের অধীন হুন্ডি ব্যবসায়-এর বিধান কী ?
ক. বৈধ খ. হারাম
গ. চোরাকারবারীর অনুরূপ ঘ. মাকরূহ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মুদ্রা কাকে বলে ?
২. ইসলামি অর্থনীতিতে মুদ্রার গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
৩. মুদ্রা বিনিময় নীতিগুলো আলোচনা করুন।
৪. আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময়ের নীতি কী ? লিখুন।
৫. প্রতিশ্রæতি পত্র কাকে বলে ? এর ভিত্তি কতটুকু বৈধ লিখুন।
৬. ইসলামি অর্থনীতিতে চেক প্রথার বিধান কী ? বর্ণনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় মুদ্রা সংক্রান্তনীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।লেনদেনে ক্রেতা-বিক্রেতার অধিকার

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]