মজুতদারী কী ? মজুতদারী সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী ? দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত লিখুন।

সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সকল দিক থেকেই ইসলাম মানুষকে স্বাধীনতা প্রদান করেছে। তবে সে
স্বাধীনতা ভোগ করার পর্যায়টি যখন লাগামহীন অবস্থায় পৌছে যায়, কিংবা জনসাধারণের ক্ষতির কারণ হয়, তখন
তাতে হস্তক্ষেপ করেছে ইসলাম।
হালাল উপায়ে সম্পদ আহরণে ইসলামি অর্থনীতি মানুষকে উৎসাহিত করেছে। রাসূল (সা) বলেছেনالحلال كسب الله عند الاعمال احب ان
“হালাল পথে জীবিকা উপার্জন করা আল্লাহর নিকট অত্যন্তপ্রিয় কাজ।”
তাই সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। সম্পদ সঞ্চয় করার ক্ষেত্রেও ইসলাম মনুষকে স্বাধীনতা দান করেছে। তবে
সম্পদ সঞ্চয় বা জমা করার ক্ষেত্রে লাগামহীন হতে পারবে না। বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে।
যদি কারো নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বেশী পরিমাণ সঞ্চয় করার দ্বারা জনসাধারণের কষ্ট হয়, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি
হয় তবে তা এমন মজুতদারী যা ইসলামি অর্থনীতি সমর্থন করে না। ইসলাম মজুতদারীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মজুতদারীর স্বরূপ
আরবী ভাষায় মজুতদারীকে বলে الاحتكار ইহ্তিফার। ارᜓاحت) ইহ্তিফার) শব্দের অর্থ আটকে রাখা,
গুদামজাত করে রাখা, মজুদ বা জমা করে রাখা ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় যেমন সামান্য কিছু সম্পদ জমা করে
রাখলেই মজুতদারী বলা হয় না তেমনি ইসলামি শরীয়তেও কিছু সম্পদ গুদামজাত করার নাম احتكار নয়।
ইসলামি শরীয়ত মনে করে, কোন ব্যক্তি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাজারে কম থাকা অবস্থায় বেশী পরিমাণ
ক্রয করে গুদামজাত করে রাখা। উদ্দেশ্য এ হয় যে, বাজারে উক্ত পণ্যের যোগান কম হলে ঐ জাতীয় পণ্যের দাম
বেড়ে যাবে। তখন বেশী দামে বিক্রয় করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সহজ হবে।
মজুতদারীর শরয়ী বিধান
ইসলামি অর্থনীতিতে মজুতদারী করা হারাম, অবৈধ। ইসলামি অর্থনীতির প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন-
من احتكر فهو خاطئ (ابو داود و الترمزى)
‘‘যে ব্যক্তি মজুতদারী করল সে অপরাধী।’’ (আবু দাউদ ও তিরমিযী)
من احتكر الطعـام ارᗖعين لᘭلـة فقـد برئ من اللـه و برئ اللـه منـه. (رواەলনবে রাআে তিনি
احمد والحاᝏم)
“যে ব্যক্তি ৪০ রাত যাবৎ খাদ্য দ্রব্য গুদামজাত করল সে যেন আল্লাহর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করল আর আল্লাহ
তাআলাও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন।” (আহমদ ও হাকিম)
এ ধরনের আরো বেশ কটি হাদীসে রাসূল (সা) মজুতদারীর অবৈধতা ঘোষণা করেছেন।
পাঠ ঃ কখন এবং কি ধরনের মজুতদারী হারাম
ইসলামি অর্থনীতির প্রদত্ত সংজ্ঞা থেকেই আমরা জানতে পাই, নি¤œবর্ণিত তিনটি শর্ত পূর্ণ হলেই মজুতদারী হারাম
হবে। অন্যথায় গুদামজাত করণ বৈধ।
১. কোন ব্যক্তির নিজের বা তার পরিবারের জন্য এক বছরের প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশী সম্পদ গুদামজাত করে
রাখা।
২. বাজারে সংকট সৃষ্টি হলে দাম বৃদ্ধি করার আশায় গুদামজাত করা এবং উর্ধ্বমূল্যের সময় অধিক মুনাফায় তা
বিক্রি করার পরিকল্পনা করা।
৩. মজুতকৃত পণ্য মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় হওয়া।
এসব শর্তাবলী পর্যালোচনা করে বলা যায়নিজের পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য ১ বছরের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী গুদামজাত করা বৈধ। খোদ রাসূলুল্লাহ
(সা)ই এক বছরের প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত রেখেছেন।
কেউ যদি বাজারে সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া কিংবা মানুষকে দুঃখে-কষ্টে ফেলে অধিক মুনাফা করার উদ্দেশ্য ছাড়া
কোন পণ্য ক্রয় করে গুদামজাত করে রাখে তা অবৈধ নয়।
এবং মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন- চাল, ডাল, কাপড়, ঔষধ ইত্যাদি ছাড়া অন্যসব পণ্য মজুত করে
রাখলে যদি জনসাধারণের ক্ষতি না হয় তবে তা অবৈধ নয়।
মজুতদারী হারাম হবার কারণ
মজুতদারীর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে গরীব-দুঃখী এবং
মেহনতি মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। জিনিস-পত্র তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এতে ব্যক্তির দুশ্চরিত্রের
বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এসব কারণে মজুতদারীকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।
রাষ্ট্রীয় গুদামজাত করণ
বর্তমানে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি রাষ্ট্র খাদ্য, ঔষধ, কাপড় ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য লক্ষ লক্ষ টন
মজুত করে রাখে। এগুলো কি মজুতদারীর আওতায় পড়ে না?
কারণ সরকার বাজারে সংকট সৃষ্টির জন্য কিংবা বেশীদামে বিক্রির জন্য এ পণ্য ক্রয় বা মজুত করে না ; বরং সংকট
সৃষ্টি হলে তা মোকাবেলা করার জন্য জনগণের নিকট সংকটের সময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দিতে এ পণ্য গুদামজাত করা হয়।
সঠিক উত্তরে টিক (√) দিন
১. মজুতদারীকে আরবীতে বলা হয়ক. ارᜓالاحت খ. الاجتناب
الاᜧرام .ঘ الادخر .গ
২. কি ধরনের সম্পদে মজুতদারী অবৈধক. শুধুশষ্য খ. খনিজ সম্পদ
গ. ফলমূল ঘ. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।
৩. মজুতদারীর শরয়ী হুকুম কী ?
ক. মাকরূহ খ. হারাম
গ. মুস্তাহাব গ. মুবাহ।
৪. কত দিনের জন্য খাদ্য-দ্রব্য মজুত করে রাখা বৈধক. দুই বছর খ. ছয় মাস
গ. এক বছর ঘ. চল্লিশ দিন।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মজুতদারী বা ইহ্তিকারের শরঈ সংজ্ঞা কী ? লিখুন।
২. মজুতদারী হারাম হওয়ার পক্ষে দুটি হাদীস বর্ণনা করুন।
৩. কোন অবস্থায় কী ধরনের মজুতদারী হারাম, আলোচনা করুন।
৪. ইসলামি অর্থনীতিতে মজুতদারী হারাম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. মজুতদারী কী ? মজুতদারী সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী ? দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]