ইসলামি বাজারনীতিতে পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের তিনটি নীতি উল্লেখ করুন।

পশুÑপাখি মহান আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি জগতের অন্যতম অংশ। পশু-পাখি মানুষের জন্য অনেক বড় দুটি নিয়ামত।
জীবন ধারনের জন্য মানুষ যেসব খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে তন্মধ্যে পশু ও পাখির গোশত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে সুস্থ,
সুন্দর ও কর্মক্ষম রাখতে যেসব খাদ্য ভূমিকা পালন করে তার মাঝে গোশত অনন্য।
তাই চলমান জীবনকে গতিশীল করতে পশু-পাখির ক্রয়-বিক্রয় চলে আসছে। ইসলামি অর্থনীতি পশু-পাখি ক্রয়বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান সম্মত এবং যুগোপযোগী নীতিমালা পেশ করেছে। সেগুলো পালনের মধ্য দিয়ে সুস্থ সমাজ
গঠন সহজ হতে পারে।
পশু-পাখি দ্বারা উদ্দেশ্য
আমরা আমাদের চারপাশে হরেক রকম পশু-পাখি দেখি। সকল প্রকার পশু-পাখির বেচা-কেনার নীতি বর্ণনা
আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কারণ, ইসলামি শরীয়তে শুধুহালাল পশুর ও পাখির ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। হারাম পশু-পাখির
ক্রয়-বিক্রয় হারাম।
পশু ও পাখির মধ্যে সেসব পশু-পাখি হারাম যেগুলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ বলেন-
حُ رِّ مَ تْ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مُ ٱل᠔ مَ يْ تَ ةُ وَ ٱل᠔ دَّ مُ وَ ل᠐ حْ مُ ٱل᠔ خِ نْ ز᠒ ᗫر᠒ وَ مَ ቯ أ᠑ هِ لَّ لِ غَ يْ ر᠒ ٱللᡐ هِ ᗷ ِهِ
“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে- মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের মাংস এবং আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত
পশু।” (সূরা আল-মায়িদা : ৩)
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়- মৃত পশু ভক্ষণ করা হারাম। সুতরাং মৃত পশু ক্রয়-বিক্রয় করাও হারাম।
نهى رسـول الله صـلى الله علᘭه و سـلم عن ᛿ل ذىنات من السـماع و ᛿ل ذىলনবে) সা (লূরাস
مخلب من الطير
“রাসূল (সা) হিংস্র প্রাণী এবং নখরযুক্ত পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।”
এ হাদীসের আলোকে বাঘ, সিংহ, কুকুর, নেকড়ে বাঘ, বিড়াল ইত্যাদি পশুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ বা হারাম।
এমনিভাবে কাক, চিল, শকুন প্রভৃতি পাখির মাংস খাওয়া হারাম। এগুলো বেচা-কেনা করাও হারাম।
অতএব, যেসব পশু-পাখির গোশত ভক্ষণ করা হারাম সেগুলো ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। তবে এমন কিছু পশু বা
পাখি রয়েছে যেগুলোর মাংস ভক্ষণ করা হারাম তবে সেগুলোকে বশ করে বা প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষ সামাজিক,
অর্থনৈতিক ইত্যাদি কাজে উপকার লাভ করে আসছে।
উপকার গ্রহণ করা বৈধ হবার কারণে সেগুলো ক্রয়-বিক্রয় করাও বৈধ। যেমন শিকারী কুকুর, শিকারী পাখি ইত্যাদি।
আমরা জানি, বর্তমান বিশ্বে এক শ্রেণীর পোষা কুকুর বড় বড় অপরাধ চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা বিভাগকে বড় ধরনের
সহযোগিতা করতে পারে। এ কারণে বিভিন্ন দেশের পুলিশ বিভাগ ডগ স্কোয়াড নামে সুনির্দিষ্ট সেল গঠন করে।
জনকল্যাণের স্বার্থে এ ধরনের কুকুর / পশু কিংবা পাখি ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হবে।
ক্রয়-বিক্রয় নীতি পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা অনুসরণ করা দরকার তার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলক. পশু বা পাখিটি এমন হওয়া যার মাংস ভক্ষণ করা হালাল। যেসব পশুর মাংস ভক্ষণ করা হারাম তা ক্রয়-বিক্রয়
করাও হারাম। অবশ্য মানব কল্যাণে পোষ মানানো উপকারী পশু-পাখির মাংস ভক্ষণ হারাম হলেও ক্রয়-বিক্রয় বৈধ
হবে।
খ. মৃত পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়। কারণ হালাল পশু ইসলামি শরীয়ত স্বীকৃত কারণ ব্যতীত মারা গেলে
তা হারাম। এজন্যে এর ক্রয়-বিক্রয়ও বৈধ নয়।
মৃত পশু হারাম হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-
حُ رِّ مَ تْ عَ ل᠐ ᘭ ْ᠑ᝣ مُ ٱل᠔ مَ يْ تَ ةُ وَ ٱ ل᠔ دَّ مُ وَ ل᠐ حْ مُ ٱل᠔ خِ نْ ز᠒ ᗫر᠒ .
“তোমাদের জন্য মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের মাংস হারাম করা হয়েছে।” (সূরা আল-মায়িদা : ২)
গ. পশু কিংবা পাখি হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ নিজের পোষা কিংবা ক্রয়ের মাধ্যমে স্বীয় আয়ত্বাধীন থাকতে
হবে, যাতে বিক্রয় করলে তা ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করা যায়।
এ নীতির উপর ভিত্তি করে বন্য পশু বিক্রয় করা কিংবা ক্রয় করা বৈধ নয়। এমনিভাবে আকাশে উড়ন্তকোন পাখি
ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয়। এ ছাড়াও পশুর গর্ভের বাচ্চা বিক্রয় করা বা ক্রয় করা বৈধ নয়, কেননা সেটি তাৎক্ষণিক
হস্তান্তরযোগ্য নয়।
ঘ. এ ধরনের পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা)-এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তিনি বলেন-
قال نهى رسول الله صلى الله علᘭه و سلم عن بيع الغرر (مسلم)
‘‘হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী (সা) ক্ষতিকর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন।’’
(মুসলিম)
ঙ. পশু কিংবা পাখির অবস্থা অবগত থাকতে হবে। الحال مجهول বা অবস্থা অস্পষ্ট থাকতে পারবে না।
অর্থাৎ পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার অধিকার হচ্ছে পশুটি/পাখিটি ত্রæটিমুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা।
এমনিভাবে বিক্রেতার দায়িত্ব হল কোন ত্রæটি থাকলে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা।
এ নীতির উপর ভিত্তি করে যেসব প্রাণীর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না তা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয়। এ কারণে গর্ভবতী
পশুর পেটের বাচ্চা ক্রয় করা বা বিক্রি করা বৈধ নয়। জানা নেই বাচ্চাটি জীবিত নাকি মৃত। মোটা না চিকন।
তাছাড়া এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ে ক্ষতিপ্রস্তহওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় রাসূল (সা) নিষেধ করেছেন, তিনি বলেন-
نهى رسول الله صلى الله علᘭه و سلم عن بيع حᘘل الحᘘلة – (مسلم)
‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলেন- রাসূল (সা) গর্ভবতী পশুর বাচ্চাকে বিক্রিয় করতে নিষেধ করেছেন।’’
(মুসলিম)
উল্লেখ্য হাদীসটির এ ছাড়া ভিন্ন অর্থও করা হয়েছে। এটি অন্যতম একটি ব্যাখ্যা।
চ. ক্রয়-বিক্রয় প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে না। আমাদের সমাজে সাধারণত গৃহপালিত পশুর ক্রয়-বিক্রয় বেশী
হয়ে থাকে। অনেক বিক্রেতা গৃহপালিত পশু বিশেষ করে গরু, ছাগল বিক্রয় করার ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ
করে। যেমন- যেসব গৃহপালিত প্রাণীর দুধের পরিমাণ বেশী হলে ক্রেতা আকৃষ্ট হয় সেক্ষেত্রে বিক্রেতা দুগ্ধদানকারী
পশুকে ২/৩ দিন দুগ্ধ দোহন করে না, ফলে স্তন বড় দেখা যায়। ক্রেতা প্রথম দর্শনে পশুটিকে অধিক পরিমাণে
দুগ্ধ দানকারী মনে করে। তখন ক্রেতা প্রতারিত হয়ে তুলনামূলক বেশী দামে পশু ক্রয়ে আগ্রহী হয়। ইসলামের
বাজারনীতিতে এ ধরনের প্রতারণামূলক বিক্রয়কে المصراة بيع) বাইয়ে মুসাররাত) বলে।
আবার হালের বলদ বিক্রির সময় অনেক বিক্রেতা বলদটি হালে ভাল বুঝাতে লাঠির আগায় কাঁপিন লাগিয়ে তার
দ্বারা খোঁচায়, বলদটি লাফালাফি বা জোরে হাঁটে এবং ক্রেতাকে প্রতারণা করে।
এ ধরনের প্রতারণামূলক বিক্রয় ইসলামি বাজারনীতিতে অবৈধ / হারাম।
من ابتاع شـــاة مصـــراة فهو فيها ᗷالخᘭار ثلاثة اᘌام . ان شـــاء امســـكها و إنলনবে) সা (লূরাস
شاء ودها و رد معها صاعا من تمر. (مسلم)‘‘যে ব্যক্তি ক্রেতাকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দুগ্ধ দোহন ২/৩ দিন পরিহার করে বকরীর ওলান বড় করে বিক্রয় করল।
তিনি তিনদিন সময়ের জন্য এখতিয়ার পাবেন। এই তিন দিন পর্যবেক্ষণ করে ইচ্ছা করলে গ্রহণ করবেন, নতুবা
ফেরৎ দেবেন। অবশ্য ফেরৎ দিতে চাইলে এক সা (সাড়ে তিন সের) খেজুর সাথে ফেরৎ দিতে হবে।’’এ ধরনের
প্রতারণায় আশ্রয় নিয়ে কেউ যদি ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্নকরে ফেলে তার বিধান বর্ণনায় ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞগণ
মতবিরোধ করেছেন। কাজটি হারাম হলেও ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হবে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে নি¤œবর্ণিত দুটো কাজের যে
কোন একটি গ্রহণ করতে হবে।
১. তিনি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে তা মেনে নেবেন। কিংবা দুধের পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় বর্ণনা
অনুযায়ী যতটা ক্ষতিগ্রস্তহয়েছেন তত টাকা বিক্রেতার নিকট থেকে ফেরৎ নেবেন।
২. তিনি পশুটি মালিককে ফেরৎ দেবেন। আর তিনি দোহনকৃত দুধের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে তিন সের খেজুর
বিক্রেতাকে পশু ফেরৎ দেওয়ার সাথে ফিরিয়ে দেবেন।
বর্ণিত মূলনীতিগুলো ছাড়া অন্যান্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে যেসব নীতিমালা ক্রয়-বিক্রয়ে প্রচলিত সেসব সাধারণ বিধিমালা পশু-পাখির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
১. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় হারাম পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান কী ?
ক. হরাম পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয় বৈধ খ. হারাম পশু-পাখি ক্রয-বিক্রয় মাকরূহ
গ. হরাম পশু বিক্রি হারাম পাখি বিক্রি হালাল ঘ. মানব কল্যাণে ব্যবহৃত পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ।
২. মৃত পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয় করার বিধান হলক. মৃত পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয় হারাম খ. মৃত মুরগী হালাল, অন্যান্য প্রাণী হারাম
গ. হালাল পশু-পাখি মৃত হলেও হালাল ঘ. মাছ ব্যতীত কোন মৃত প্রাণী হালাল নয়।
৩. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের নীতিমালা ক’টি ?
ক. পাঁচটি খ. ছয়টি
গ. সাতটি ঘ. চারটি।
৪. গর্ভবতী পশুর বাচ্চা বিক্রি করার বিধান কী ?
ক. অবৈধ খ. বৈধ
গ. মাকরূহ ঘ. মুবাহ।
৫. বকরী বা গাভীকে ২/৩ দিন দোহন না করে ওলান বড় দেখিয়ে বিক্রি করাকেক. বাইয়ে মুসাররাত বলে খ. বাইয়ে সালাম বলে
গ. বাইয়ুল আইব বলে ঘ. বাইয়ুল খিয়ার বলে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. কী ধরনের পশু-পাখি ইসলামি শরীয়তে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য গণ্য করা হবে ?
২. ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হওয়ার জন্য পশু কিংবা পাখি হস্তান্তরযোগ্য হওয়া শর্ত-ব্যাখ্যা করুন।
৩. ইসলামি বাজারনীতিতে পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের তিনটি নীতি উল্লেখ করুন।
৪. বাইয়ে মুসাররাত কী ? বাই মুসাররাত-এর বিধান লিখুন।
৫. পশু-পাখির গর্ভকালীন বাচ্চা বিক্রয় করার বিধান বর্ণনা করুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. পশু-পাখি ক্রয়-বিক্রয়ের ইসলামি নীতিমালা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]