বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তা ইসলামি অর্থনীতি আমদানীর ক্ষেত্রে যে সব নীতির প্রতি উৎসাহিত রপ্তানীর ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্রের করণীয় কী?

আমরা সকলেই ভালভাবে বেঁচে থাকতে চাই। অতীতে যারা ছিলেন তারাও চেয়েছেন। বেঁচে থাকতে চাইলে
জীবনের চাহিদাগুলো পুরণ করা প্রয়োজন। আদিমকালে মানুষ স্বীয় শ্রম বলে তার চাহিদা পূরণ করত। যখন যা
প্রয়োজন হত তা সংগ্রহ করতে ছুটে যেত এখানে-সেখানে। রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা তখন ছিল না। পরবর্তীতে মানুষ
আরো বেশি সভ্য হতে শেখে। সামাজিক হয়। জাতি ও অঞ্চলভেদে ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে বিভিন্ন দেশে বিভক্ত হয়
পৃথিবীর ভূখন্ড।
কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টির এ ভূখন্ড সর্বত্র এক ধরনের নয়। কোন দেশের ভূখন্ড হয়তো ধান চাষের উপযোগী আবার কোন
দেশের ভূখন্ড পাট চাষের জন্য অধিকতর উপযোগী। উপযোগিতা না থাকলে শতচেষ্টা করেও ধান চাষের জমিতে
উন্নত পাট চাষের আশা করা বৃথা। তাই দেশের জমির উপযোগিতা অনুযায়ী অল্প পরিশ্রমেও কম খরচে ফসল
উৎপাদনে ব্রতী হওয়া প্রতিটি দেশের কর্তব্য। দেশের মানুষের সকল চাহিদা পূরণ করার মত সকল প্রকার সম্পদ
একটি দেশে উৎপাদন করা অনেক সময় সম্ভব নয়। তাই তাকে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহের জন্য অন্য
দেশের মুখাপেক্ষী হতে হয়। অন্যথায় সেদেশ স্বীয় চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
এভাবে দেশের প্রয়োজন অনুসারে অন্য দেশ হতে প্রয়োজনীয় পণ্য আনার ব্যবস্থা করা এবং নিজ দেশের প্রয়োজন
অতিরিক্ত দ্রব্য অন্য দেশে বিক্রি করার নাম বৈদেশিক বাণিজ্য। আধুনিক সভ্যতার যুগে বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যতীত
কোন দেশই ভালভাবে চলতে পারে না।
ইসলামি অর্থনীতি বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রতি স্বাভাবিক কারণে গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলামি রাষ্ট্রের উন্নয়ন মানে
জনগণের উন্নয়ন। ইসলাম চায় তার জনগণ সবার উপর মর্যাদাবান হোক। রাসূল (সা) বলেন-
الاسلام ᘌعلوا ولا ᘌعلى علᘭه .
‘‘ইসলাম সবার উপর সুউচ্চ হতে চায় তার উপর কাউকে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন হতে দিতে চায় না।’’ এ মূলনীতির
আলোকে বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারেও ইসলামি অর্থনীতি এমন মূলনীতি অবলম্বন করে থাকে যার ফলে
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করা যায়।
উন্নয়নের চাবিকাঠি
একটি দেশের অর্থনীতির অধিক উন্নয়ন তখন হয়, যখন সে দেশে উৎপন্ন দ্রব্য বৈদেশিক বাজারে অধিক পরিমাণে
বিক্রি করতে পারে। অন্য দেশ হতে পণ্য কম আমদানী করে।
দেশের গার্হস্থ্য ও বৃহৎ শিল্পোৎপন্ন পণ্য হতে অধিক মুনাফা অর্জন করতে প্রত্যেক দেশের তিনটি বিষয়ে নজর দিতে হয়।
১. শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিজ দেশ হতে সংগ্রহ করতে হবে।
২. কাঁচামাল ব্যবহার করে উৎপাদন করার মত প্রয়োজনীয় কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩. বৈদেশিক পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে বৈদেশিক
পণ্য দেশের অভ্যন্তরে টিকতে না পারে।
আমদানী ও রপ্তানি
আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, বৈদেশিক বাণিজ্যের মূলকথা হচ্ছে আমদানী ও রপ্তানি করা।
কোন দেশের আমদানী অপেক্ষা রপ্তানী বেশী হলে সে দেশের মূলধন বৃদ্ধি পায়। সেদেশের বৈদেশিক মুদ্রার উদ্বৃত্তি
সম্ভব হয়। আর রপ্তানী অপেক্ষা আমদানী বেশী হলে সেদেশের ধনভান্ডার শূন্য হয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রা
মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এজন্য ইসলামি অর্থনীতি রপ্তানী ও আমদানীর ক্ষেত্রে এমন কিছু মূলনীতি অবলম্বনের
প্রতি ইঙ্গিত করে যাতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে।
রপ্তানী নীতি
একটা দেশ সাধারণত অন্য দেশের নিকট তিন ধরনের দ্রব্য বিক্রয় করতে পারে।
১. শিল্প পণ্য
২. কাঁচামাল
৩. বিলাস দ্রব্য।
এসব দ্রব্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে যেসব নীতি অবলম্বন করা দরকার তা হলশিল্প পণ্য
ক. দেশের চাহিদার তুলনায় বেশী পরিমাণ শিল্পপণ্য উৎপাদনে সর্বাÍক চেষ্টা করতে হবে। শিল্প পণ্য এত বেশী উন্নত
করতে হবে যাতে তা বৈদেশিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়।
খ. যতদিন পর্যন্তনিজে দেশের যাবতীয় প্রয়োজনীয় পণ্য দেশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন করা সম্ভব না হয়। ততদিন
বৈদেশিক পণ্য আমদানীর ব্যাপারে এমন নিয়ন্ত্রণ চালু করতে হবে যেন দেশী শিল্প প্রসারের অনুকুল পরিবেশ
তৈরি হয়।
গ. দেশের প্রয়োজনীয়াতিরিক্ত শিল্পপণ্য বৈদেশিক বাজারে বিক্রয় করার কার্যকরী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কাঁচামাল
কাঁচামাল রপ্তানীর ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্রের কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা কর্তব্য ঃ
ক. দেশের কাঁচামাল শিল্প পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া ইসলামি সরকারের দায়িত্ব। তাই
কাঁচামাল রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে দেশী শিল্পোৎপাদনের প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণ কাঁচামাল সংগ্রহ
করতে কোনরূপ অসুবিধা না হয় এবং যথাসম্ভব কম মূল্যে সংগ্রহ করা যায়।
কাঁচামাল রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ না করে যদি তা বিদেশে ব্যাপক হারে রপ্তানী করে বৈদেশিক পণ্য ক্রয় করতে হয় তবে
নিজ দেশের শিল্পের কখনও উন্নতি সাধিত হবে না।
উদাহরণ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের পাটের কথা বলতে পারি। বাংলাদেশ যদি উৎপন্ন পাটের শতকরা ৯০ ভাগ
বিদেশে রপ্তানী করে নিজ দেশে বস্তা, ছালার চট বা পাটজাতীয় দ্রব্য তৈরী না করে তবে এদেশের মানুষ বিদেশ
থেকে প্রস্তুতকৃত পাটজাত দ্রব্য ক্রয় করতে বাধ্য হবে। ফলে বিদেশীরা এর মাধ্যমে মুনাফা লুটবে অথচ বাংলাদেশ
কোন দিনই শিল্পের উন্নয়ণ করতে পারবেনা।
তাছাড়া অধিকহারে কাঁচামাল রপ্তানী করলে এবং বিদেশী পণ্য নিজ দেশে ব্যাপকহারে বিক্রয় হতে থাকলে দেশের
বিরাজমান শিল্প ধ্বংস হবে। দেশের কারিগর ও শ্রমিক মজুর বেকার সমস্যার সম্মুখীন হবে।
বিলাস দ্রব্য
বর্তমান যুগে কোন দেশে বিলাস দ্রব্য তৈরি করার প্রতি খুব বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। বিলাস দ্রব্য বিদেশে রপ্তানী
করে সহজে বেশী মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় বলে এত গুরুত্ব। অর্থনৈতিক উৎকর্ষ সাধণের জন্য বিলাসদ্রব্য
উৎপাদন করে রপ্তানী করা সবচেয়ে বড় মাধ্যম। এতে শ্রমিক, মজুর ও ব্যবসায়ীর প্রচুর মুনাফা হয়।
কিন্তু ইসলামি অর্থনীতি নিছক মুনাফাকে গুরুত্ব প্রদান করে না। ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের নৈতিক
চরিত্র, সর্বাধিক কল্যাণ ও মঙ্গলসাধণ করার প্রতি চেষ্টা করা হয়। এজন্যে বিলাসদ্রব্য উৎপাদন, রপ্তানী ও
আমদানীকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কোন বিলাসদ্রব্য সমাজের কল্যাণকর ও ইসলামি শরীয়ত সম্মত হয়
কেবল তাই উৎপাদন করে রপ্তানী করে মুনাফা অর্জনের সুযোগ ইসলামি অর্থনীতিতে রয়েছে। বিলাস দ্রব্য মানব
কল্যাণকর না হলে তা উৎপাদন ও রপ্তানী ইসলামি অর্থনীতিতে নিষিদ্ধ।
উদাহরণস্বরূপ মদ ও বিয়ার উৎপাদনের কথা বলা যায়। এগুলো লাভজনক হলেও শরীয়ত সম্মত না হওয়ায় এর
উৎপাদন বিপণন, রপ্তানী ও আমদানী ইসলামি অর্থনীতিতে অবৈধ।
আমদানী নীতি
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমদানী যত কম করা যায় ততই ভাল। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
আমদানী করতেই হয়। সাধারণত কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য এবং বিলাসদ্রব্য আমদানী করা
হয়। একটা ইসলামি রাষ্ট্র আমাদনীর ক্ষেত্রে নি¤œরূপ নীতি অবলম্বন করতে পারে।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য
আমদানী-নীতি নির্ধারণের সময় ইসলামি অর্থনীতিতে প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হয় অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের উপর। এ
ব্যাপারেও দেশের প্রকৃত অবস্থার উপর খুব কড়া নজর রাখা আবশ্যক। যে জিনিস যতখানি প্রয়োজন তা তত
পরিমাণে আমদানী করা সঙ্গত। আর যেসব জিনিস কিছু না কিছু নিজ দেশে উৎপন্ন হয়, সেসব জিনিসের নিজস্ব
উৎপাদন অনুপাতে কম আমদানী করা আবশ্যক- যেন দেশের উৎপন্ন পণ্য বিক্রয় হতে কোনরূপ অসুবিধার সৃষ্টি না
হয়। কারণ এরূপ ব্যবস্থা করা না হলে দেশীয় পণ্য বৈদেশিক পণ্যের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ী না হলে একদিকে
দেশী শিল্পপণ্যের মৃত্যু ঘটে, অন্যদিকে দেশের কারিগর ও মজুর-শ্রমিক বেকার-সমস্যার সম্মুখীন হতে বাধ্য হয়।
এই ভুল আমদানী নীতির ফলে দেশীয় কারিগর ও শ্রমিকদের মধ্যে বেকার সমস্যা সমগ্র দেশে কঠিন অর্থনৈতিক
বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। অতএব
(১) অপরিহার্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে শুধু তাই আমদানী করা আবশ্যক, যা দেশীয় কারখানায় প্রস্তুত হয় না।
দেশীয় কারখানায় যেসব দ্রব্য উৎপন্ন হয়, কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে হয় না, এর আমদানী সীমাবদ্ধ ও পরিমিত
হওয়া বাঞ্ছনীয়।
(২) এই পণ্যের উপর এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা উচিত যাতে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও উৎকর্ষ লাভের সম্ভাবনা
যথারীতি বজায় থাকে এবং
(৩)দেশীর কারখানায় যেসব দ্রব্য প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রস্তুত হয়, সে সবের আমদানী সম্পূর্ণরূপে
বন্ধ করা কর্তব্য।
যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল
যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমাদানীর ব্যাপারে ইসলামি অর্থনীতির দৃষ্টিতে সর্বপ্রথম সেসব যন্ত্রপাতি আমদানী চেষ্টা করা
উচিৎ যা দেশীয় কাঁচামাল হতে পণ্যোৎপাদনের জন্য একান্তঅপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। তাছাড়া নি¤œলিখিত
প্রকারের কাঁচামাল আমদানীর জন্যও উৎসাহ দান করা বাঞ্ছনীয়
(১) নিজ দেশে চালু কারখানাসমূহের জন্য যা অপরিহার্য,
(২) মৌলিক শিল্পোৎপাদনের জন্য যা প্রয়োজনীয়
(৩) এবং মৌলিক শিল্পে প্রতিনিয়ত যা প্রয়োজন, শিল্প ও কৃষিকার্যের উৎকর্ষ সাধন এবং এতদসংক্রান্তমূল বিষয়ের
বিশ্লেষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যা অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়।
বিলাস-দ্রব্যের আমদানী
বিলাস-দ্রব্য আমদানী করলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা হ্রাস পায়। তাই কোন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকারের বিলাস দ্রব্য
আমাদানীতে উৎসাহ যোগানো ঠিক নয়। কারণ বিলাস দ্রব্যের জন্য ব্যয়িত অর্থ দেশের জনস্বার্থের বিপরীত কাজ
করে। জনসাধারণ কখনও বিলাস-দ্রব্য অবাধ ব্যবহার উপযোগী অর্থের মালিক হয় না। যাদের নিকট
প্রয়োজনাতিরিক্ত মূলধন সঞ্চিত হয়, সাধারণত কেবল তারাই বিলাস-দ্রব্য ক্রয় করে থাকে। বর্তমান পুঁজিবাদী
গণতন্ত্রের যুগে শতকরা দুই কিংবা তিনজনের অধিকসংখ্যক লোক বিলাস দ্রব্য ব্যবহার করতে সমর্থ হয় না। কাজেই
যে দেশ এ ধরনের বিলাস-দ্রব্যের অবাধ আমদানীর অনুমতি দেয়, সে দেশ গণস্বার্থ উপেক্ষা করে শতকরা মাত্র
তিনজনের জন্যই দেশের মূলধন ব্যয় করে। অথচ এই অর্থ দেশের শিল্পোনয়নের জন্য অপরিহার্য যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল
ও নতুন নতুন আবিস্কার উদ্ভাবনীর কাজে এবং দেশের সাধারণ অর্থনৈতিক উন্নতি বিধানের জন্য ব্যবহৃত হতে
পারে। কিন্তু তা দেশের মুষ্টিমেয় বিলাসী লোকের বিলাস-ব্যসনের লিপ্সা পূরণের জন্য ব্যয়িত হওয়া দেশের পক্ষে মারাত্মক, এতে সন্দেহ নেই।
বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে ব্যবসায়ীর দায়িত্ব
বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে ব্যবসায়ীর গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসায়ী একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মনীতির
কার্যকারিতার জন্য যথেষ্টভাবে সহায়ক ও পৃষ্ঠপোষক হতে পারে। ব্যবসায়ী যদি নিজের ব্যবসায় সংক্রান্তলাভ-
ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অপরিহার্য প্রয়োজন, জনগণের প্রয়োজন ও মানুষের সাধারণ কল্যাণ সাধনের প্রতি বিশেষ
লক্ষ্য রাখে- জনগণের কল্যাণ সাধন নিজের ঈমানের অংশ মনে করে, তার নিজের স্বার্থের সাথে দেশের গণস্বার্থের
নিবিড় সম্পর্ক আছে বলে যদি প্রতিমুহূর্ত অনুভব করে, দেশের ব্যবসায়ী যদি নিজের প্রকৃত মর্যাদা বুঝে নেয় এবং
দেশে ইসলামি অর্থনীতি কার্যকর করার জন্য যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়, তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে
যথাযথভাবেই পালন করে চলে, তবেই একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়িত হতে পারে।
প্রত্যেকটি মানুষই নিজের প্রয়োজন ও আকাঙ্খা পূরণ করার উদ্দেশ্যে অর্থোৎপাদনের জন্য চেষ্টা ও শ্রম করে। বস্তুত
অর্থনৈতিক চেষ্টা সাধনার মূল উৎস এভাবেই নিহিত রয়েছে। ফলে প্রত্যেকেই কেবল নিজের স্বার্থ লক্ষ্য করে কাজ
করে, এটা অনস্বীকার্য সত্য। এমতাবস্থায় সঠিক কর্মনীতি এই যে, প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থ-লাভের জন্য চেষ্টা ও
সাধণা করবে, কিন্তু এই কাজে কেউই যেন অপরের স্বার্থের কোনরূপ ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে, সেদিকে তীক্ষè দৃষ্টি
রাখাও কর্তব্য। কারণ তার ব্যক্তিগত স্বার্থের সাথে গণস্বার্থেরও নিবিড় যোগ রয়েছে।
একজন কৃষক কেবল নিজের খাদ্যের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যই ভূমি চাষ করে না, উৎপন্ন যাবতীয় ফসলই সে
নিজের খাদ্য হিসেবে খরচও করে না ; অন্যান্য যেসব লোক খাদ্যোৎপাদনের পরিবর্তে জীবনযাত্রা নির্বাহের অন্যান্য
প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনে লিপ্ত রয়েছে, তাদের খাদ্যের প্রয়োজনও সে উদ্বৃত্ত শস্য হতে পূর্ণ করে। এজন্য সমাজের
এসব লোকের স্বার্থহানি করে কোন কাজ করার সুযোগ কিছুতেই কৃষককে দেওয়া যেতে পারে না।
পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার ব্যাপারে ব্যবসায়ীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে- যথেষ্ট মুনাফা লাভের সুযোগ দিতে হবে;
কিন্তু পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও মুনাফার পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় জনগণের প্রয়োজন, ক্রয়-ক্ষমতা এবং দেশের
সাধারণ অবস্থার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়। এসব কাজে সর্বতোভাবে দেশবাসীর কল্যাণই দেখা উচিত।
শোষণ করার কোন অবকাশ ব্যবসায়ীকে দেওয়া যাবে না। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় পণ্যদ্রব্যের পরিমাণ হ্রাস, কিংবা
সঞ্চয় করার ফলে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে জনগণের শ্রমলব্ধ অর্থ জোকের মত শুষে নেওয়ার কৌশল ইসলামি
অর্থনীতিতে মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
দেশের জন্য কোন প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য যদি বিদেশ হতে আমদানী করা অপরিহার্য হয়, তবে ইসলামি রাষ্ট্র তার
যথাযথ ব্যবস্থা করবে। হয় রাষ্ট্র সরকারী পর্যায়ে এই দ্রব্য আমদানী করবে, অন্যথায় দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য
যথাসম্ভব সুযোগ-সুবিধা করে দেবে। এমন ব্যবস্থা করবে যেন দেশের আইনের বিধিবন্ধন ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা
এর পথে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে না পারে। এরূপ করলে যদিও তার নিজের মুনাফার পরিমাণ
অনেকখানি হ্রাস পাবে- ব্যক্তিগতভাবে সে ক্ষতিগ্রস্তহবে; কিন্তু তার জন্য দেশের পক্ষে এটাই করা একমাত্র কল্যাণকর নীতি, ঈমানী দায়িত্ব।
বৈদেশিক বাণিজ্যের লেন-দেন পদ্ধতি
বর্তমান বিশ্বে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেন-দেনের ক্ষেত্রে দু ধরনের পদ্ধতি চালু আছে১. ব্যবসায়ীগণ বা সরকার যে দেশ থেকে দ্রব্য আমাদানী করেন সেদেশের বন্দরে দ্রব্যাদি বুঝে পেয়ে মূল্য পরিশোধ
করেন। অতপর আমদানীকারী নিজের দায়িত্বে জাহাজে বা বিমানে করে নিজের দেশের মাল এনে সরবরাহ
করেন।
২. আমাদানীকৃত পণ্য বিদেশ হতে ক্রেতার নিজের দেশের বন্দরে পৌঁছার পর মালামাল খালাস করে নেওয়ার সময়
মূল্য পরিশোধ করেন। তখন তারা পণ্যের মূল মূল্য, ভাড়া এবং পণ্যমূল্য বিলম্বে আদায়ের সুদও প্রদান করে
থাকেন।
বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ীগণ দ্বিতীয় প্রকারের লেন-দেনকে অপরিহার্য পদ্ধতি বলে মনে করেন। তাই তারা এ পদ্ধতির
বাস্তবায়ন করে আসছেন এবং বলেন যে, সুদ ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য সম্ভব নয়। কিন্তু ইসলামি অর্থনীতিতে সুদ
গ্রহণযোগ্য নয়। সুদ মানুষ শোষণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই ইসলামি অর্থনীতির আলোকে ইসলামি রাষ্ট্র ও
তার ব্যবসায়ীরা প্রথমোক্ত পদ্ধতিতে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করবেন।
নিজ দেশের বন্দরে মূল্য পরিশোধ করার ফলে ব্যবসায়ীরা মূল মূল্যের সাথে বিদেশ মূল্য পরিশোধের জন্য যে সুদ
প্রদান করেন তা মূলত জনগণের উপর বর্তায়। কারণ ব্যবসায়ী উক্ত সুদের টাকা তার মূলধনের অংশ হিসেবে ধরে
নিয়ে পণ্যের উপর মুনাফা যোগ করে ভোক্তাদের নিকট সরবরাহ করেন। এর ফলে জনগণ অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য
ক্রয় করতে বাধ্য হন।
বর্তমানে ধর্মবিমুখ ব্যবসায়ীরা দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বৈদেশিক পণ্য আমাদানীর ক্ষেত্রে দুটি কারণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ক. অতিরিক্ত সুদের জন্য তাঁর ব্যবসায়ের কোন ক্ষতি হয় না কারণ তিনি তা ভোক্তাদের উপর অতিরিক্ত মূল্য
চাপিয়ে দেন।
খ. বিলম্বে মূল্য পরিশোধ করলে তিনি উক্ত সময়ে তার মূলধন দেশীয় বাজারে খাটানোর ফলে এমন পরিমাণ মুনাফা
করতে পারেন যা তার প্রদেয় সুদের চেয়ে বেশী।
পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য
সুদের মাধ্যমে শোষণ ও নিপীড়ন থেকে জনগণকে মুক্তির জন্য ইসলামি রাষ্ট্র বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য
বিনিময় নীতি অবলম্বন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের নিকট দেশের প্রয়োজনাতিরিক্ত দুই কোটি টাকার
পাটজাত দ্রব্য মজুত আছে তা ইরানের নিকট রপ্তানী করে তার বিনিময়ে দুইকোটি টাকার তৈল আমদানী করল।
কিংবা তিনকোটি টাকার তৈল আমদানী করল বাকী ১কোটি টাকার স্বর্ণ তাদেরকে প্রদান করে বিনিময় সমান সমান
করল। এভাবে মুদ্রা ব্যতীতই বৈদেশিক বাণিজ্য সম্ভব। তবে এজন্য সমমনা রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক জোট গঠন করা প্রয়োজন হবে।
১. একটি দেশের উন্নয়ন কীভাবে হতে পারে?
ক. আমদানী-রপ্তানী উভয়টি বেশী করলে খ. আমদানী রপ্তান উভয়টি কম করলে
গ. আমদানী কম এবং রপ্তানী বেশী করলে ঘ. উপরের সবগুলো ঠিক।
২. একটি দেশ অন্য দেশের নিকট কোন দ্রব্য রপ্তানী করতে পারে?
ক. কাঁচামাল খ. শিল্পপণ্য
গ. বিলাসদ্রব্য ঘ. উপরোক্ত সবগুলো।
৩. কাঁচামাল রপ্তানীর ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি লাভবান?
ক. দেশের সব কাঁচামাল রপ্তানী করা খ. কাঁচামাল মোটেই রপ্তানী না করা
গ. কাঁচামাল রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ করা ঘ. উপরের কোনটাই সঠিক নয়।
৪. ইসলামি অর্থনীতিতে কী ধরনের বিলাসদ্রব্য উৎপাদন ও বিপনন করা বৈধ?
ক. যে কোন বিলাস দ্রব্য খ. জনকল্যাণকর বিলাসদ্রব্য
গ. শরীয়তসম্মত বিলাসদ্রব্য ঘ. হারাম বিলাসদ্রব্য।
৫. কয় প্রকারের কাঁচামাল আমদানীর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা উচিৎ?
ক. দুই প্রকার খ. তিন প্রকার
গ. চার প্রকার ঘ. পাঁচ প্রকার।
৬. সুদ পরিহার করে কোন পদ্ধতিতে বৈদেশিক বাণিজ্য করা সম্ভব?
ক. পণ্যের বিনেময়ে পণ্যের লেন-দেন করে খ. বিদেশের বন্দরে মূল্য পরিশোধ করে
গ. উপরোক্ত সব কটি পদ্ধতিতে। ঘ. উপরের সকল উত্তরই সঠিক।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. বৈদেশিক বাণিজ্য একটি দেশের জন্য প্রয়োজন কেন ? ব্যাখ্যা করুন।
২. একটি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি কী লিখুন।
৩. কাঁচামাল রপ্তানীর ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্রের কী ধরনের নীতি অবলম্বন করা উচিৎ? লিখুন।
৪. ইসলামি লর্থনীতিতেদ বিলাস দ্রব্য রপ্তানী নীতি উল্লেখ করুন।
৫. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানী নীতি কী হওয়া উচিৎ? লিখুন।
৬. ইসলামি অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিতে লেন-দেন হওয়া কর্তব্য আলোচনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করুন।
২. ইসলামি অর্থনীতি আমদানীর ক্ষেত্রে যে সব নীতির প্রতি উৎসাহিত করে তার বিশ্লেষণ করুন।
৩. রপ্তানীর ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্রের করণীয় কী? ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]